#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব১৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সাজ্জাদ আর রূপা বাড়িতে প্রবেশ করলো।
ওদের পেছন পেছন সোহা,আরিফ, মাহতিম, সুমাইয়া।
ওদের এতো জলদি আসতে দেখে সবাই একটু অবাক হলো৷
সাজ্জাদ ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে রূপার হাত ধরে উপরে চলে গেলো।
রূপা আড়চোখে টেবিলের দিকে তাকালো। আহনাফ বসে খাবার খাচ্ছে নিজ মনে।
ওর পাশেই সুন্দর করে বসে আছে মৌ।
রূপা হাসলো।
সাজ্জাদ রুমে এসেও রূপার হাত ছাড়লো না।
মাহতিম ব্যাগ নিয়ে এসে সাজ্জাদের রুমে রেখে গেলো।
সাজ্জাদ রূপাকে বিছানায় বসিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ওর হাতে শাড়ি ধরিয়ে ফ্রেশ হতে পাঠালো।
রূপা ফ্রেশ হয়ে আসতেই সাজ্জাদ ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’ খুব সাবধানে থাকবে। আহনাফ এর আশেপাশে যাবে না। মৌ কে কখনো বিশ্বাস করবে না। প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে যাওয়ার দরকার নাই। ‘
রূপা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ আপনি টেনশন করবেন না। শান্ত হয়ে বসুন।’
সাজ্জাদ রূপাকে নিজের কাছে নিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তোমার কোনো ক্ষতি হোক তা কখনো চাই না। তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না। আমার বেঁচে থাকা মৃত মানুষের মতোই হয়ে যাবে।’
রূপাঃ আমার কিছু হবে না।
সাজ্জাদঃ তারপর ও সাবধানে থাকা প্রয়োজন আমি মৌ কে খুব ভালো করে চিনি।
রূপা নিচে গিয়ে সবার সাথে দেখা করলো।
আমেনা বেগম কাল রাতে দরজা বন্ধ করেছেন এখনো রুম থেকে বের হচ্ছেন না।
রূপা আমেনা বেগম এর রুমে গিয়ে কয়েক বার কড়া নারলো।
রূপা কন্ঠ শুনে উনি দরজা খুলে দিলেন। সবাই অবাক হলো৷
রূপা হেঁসে উনার কাছে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ নিচে চলুন। ‘.
আমেনা বেগমঃ ওই কালনাগিনী মেয়ে যেনো আমার সামনে কখনো না আসে।
রূপা আমেনা বেগম এর দিকে তাকালো, ‘ চোখ মুখ অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে। হয়তো সারা রাত কান্না করার জন্য। খুব বেশি কষ্ট পেয়েছেন।
রূপা আমেনা বেগম কে মানিয়ে নিচে নিয়ে আসলেন। নিজে খাবার নিয়ে আসলো।
আমেনা বেগম কে সোফায় বসিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে বসতেই মৌ ওর হাত থেকে খাবার প্লেট নিয়ে গেলো এক ঝটকায়।
রূপা রেগে তাকাতেই মৌ একটা ঘাঁ জ্বালানো হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ বাহ্ নিজের আয়াতে নিয়ে নিচ্ছিস সবাই কে!! নিজের দিকে খেয়াল দাও আমার জিনিস আমি দেখে নিতে পারি।
রূপা রেগে বলে উঠলো, ‘ সারা রাত কোথায় ছিলে..? এখন সরে দাঁড়াও। মেঝো আম্মু তোমার মুখও দেখতে চাচ্ছে না।
মৌঃ এতোই যদি এই মহিলার প্রতি ভালোবাসা থাকে তাহলে সাজ্জাদকে কেনো বিয়ে করলে..?! আহনাফ কে করে নিতে পারতে!
রূপা মৌ এর হাত থেকে প্লেট নিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তোমাদের মতো নির্লজ্জ নই।’
দূর থেকে সুবর্ণা বেগম সবটা খেয়াল করলেন।
মৌ সাপের মতো ফুসফুস করতে করতে রূপার পিছু গেলো।
রূপা নিজ হাতে আমেনা বেগম কে খাইয়ে দিলেন।
সুবর্ণা বেগম এসে রূপার মাথায় হাত বুলিয়ে আমেনা বেগম এর হাতে হাত রেখে বুঝালেন সবটা কষ্ট হলেও মেনে নিতে।
বাড়ির কেউ এই বিয়েতে রাজি নয়৷
তাতে আহনাফ এর কিছু যায় আশে না।
সোহা আর রূপা মিলে দুপুরের রান্না করছে।
সাজ্জাদ বার কয়েক রান্না ঘরে উঁকি মারলো।
মাহতিম সোফায় বসে ছিলো। হেসে বলে উঠলো, ‘ কি ভাই বাহির থেকে এসেই রান্না ঘরে উঁকি ঝুঁকি কেনো মারছো..??
সাজ্জাদ ধরা খাওয়া চোরের মতো এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কই বেশি দেখিস তুই। আমি তো কফি নিতে এসেছি।
মাহতিম রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বললো,’ বড় ভাবি ভাই আপনাকে বলেছে রুমে যেতে। ‘
সোহা একবার সব কিছুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কিভাবে যাবো এখনো তো কিছুই করা হয়নি। ‘
মাহতিম হাত দিয়ে চুল গুলো পেছনে ঠেলে ভাব নিয়ে বললো,’ দেবর আছে কিসের জন্য আপনি যান আমি আর রূপ ভাবি মিলে সবটা দেখে নিচ্ছি।’
সোহা একবার রূপার দিকে তাকালো। রূপা তো রান্নার কিছুই পারে না তাও মাথা নেড়ে বললো যাও আমি পারবো।
সম্পর্কে সোহা বড় হলেও বয়সে রূপার থেকে দুই বছরের ছোটো। এই কয়েক দিনে সোহা রান্না খুব ভালো শিখে গেছে।
সোহা চলে যেতেই মাহতিম সাজ্জাদ কে ডাক দিয়ে নিজে কেটে পরলো।
সোফায় গিয়ে বসতেই ওর মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো কয়েকটা ছবিও।
মাহতিম দেখে নাদিম ওর আর মাহির এক সাথে অনেক গুলো ছবি পাঠিয়েছে।
যেখানে মাহতিম মাহি কে ছাঁদে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আবার গ্রামের বাড়িতে হাত ধরে নামাচ্ছে। একজন আরেক জনের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা ছবি মাহতিম দেখে হাসলো মাহি মুগ্ধ হয়ে মাহতিম এর দিকে তাকিয়ে আছে আর মাহতিম হাসছে।
মাহতিম ছবি গুলো কেটে দিতে গিয়েও কাটলো না। নাদিম এর কাছে ফোন দিলো।
রূপা সাজ্জাদ কে দেখে বললো, ‘ আপনি এখানে কেনো..?’
সাজ্জাদ রূপার কথায় পিঠে বলে উঠলো, ‘ কফি নিতে এসেছি..
রূপাঃ ওহ্হ..
সাজ্জাদ আঁড়চোখে রূপার দিকে তাকালো বেচারি কিছুই রান্না করতে পারছে না।
মুরগী একদম পুড়ে ফেলেছে। গরুর মাংস লাগিয়ে ফেলেছে।
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তুমি কি এর আগে কখনো রান্না করোনি..?
রূপা মন খারাপ করে বললো,’ না…’
সাজ্জাদ রূপার কথা শুনে অবাক হয়ে বললো, ‘ তারপর ও রান্না ঘরে কেনো এসেছো..?’
রূপাঃ শিখতে তো হবে।
সাজ্জাদঃ কিভাবে শিখবে শুনি..? এখন তো সব পুড়ে যেতো। আর তোমার ওড়না সামলাও আগুন ধরে যাবে। ‘
প্রথম রান্না করতে এসেছে সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
সাজ্জাদ রূপার দিকে রেগে তাকাতেই রূপা বলে উঠলো, ‘ সোহার কাছ থেকে শিখে নিতাম। কিন্তু সোহা তো দরকারি কাজে রুমে গেছে।
সাজ্জাদ রূপার কাছে গিয়ে গ্যাস কমিয়ে দিলো।
রূপাকে সামনে দাঁড় করিয়ে সাজ্জাদ সব রান্না করছে আর রূপাকে বুঝাচ্ছে।
রূপার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। কেমন এক অজানা অনুভূতি হচ্ছে। সাজ্জাদের বুকে ওর মাথা বার বার লেগে যাচ্ছে রূপা দূরে যেতে নিলে সাজ্জাদ হাত ধরে টেনে আরও কাছে নিয়ে আসছে আর বুঝাচ্ছে। রূপা চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিলো।
আহনাফ বাহির থেকে এসে রান্না ঘরে সাজ্জাদের আওয়াজ শুনে অবাক হলো।
রান্না ঘরে না চাইতেও উঁকি দিয়ে ওর মাথা গরম হয়ে গেলো।
রূপার পেছনে সাজ্জাদ।
সাজ্জাদ তরকারি রান্না করছে কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে সাজ্জাদ রূপাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
আহনাফ রেগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।
সামনে যা পাচ্ছে তাই ভাঙা শুরু করলো। সারা রুমে কাঁচ ভাঙ্গা।
ভয়ে মৌ এক কোনায় চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
সব কিছু ভেঙে ক্লাসের হয়ে ধপ করে মাথায় হাত চেপে বসে পরলো ।
মৌ এক পা এগিয়ে দিতেই কাঁচের টুকরো ঢুকে গেলো ওর পায়ে। পা ধরে দেখে রক্ত আসছে। মৌ ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো।
আহনাফ ফিরেও তাকালো না।
মৌ পা থেকে কাঁচ চোখ বন্ধ করে বের করে নিলো। ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।
আহনাফ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ এতো টুকু ব্যাথায় এতো যন্ত্রণা হচ্ছে…? আর আমার যে মন পুড়ছে। হৃদয়ে রক্তক্ষরন হচ্ছে। অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে।
মৌ রেগে বলে উঠলো, ‘ এইটা তোমার কাছে এতো টুকু ব্যথা মনে হচ্ছে। তুমি জানো কতো রক্ত বের হচ্ছে!! আর বাহিরে এমন কি হয়েছে যে রুমটা একদম শেষ করে দিলে..?
আহনাফ মৌ এর হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
মৌ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সুমাইয়ার রুমে গেলো।
সুমাইয়া মৌ কে দেখে খুবি বিরক্ত হলো।
সুমাইয়াঃ এখানে কি..?
মৌঃ এভাবে কেনো বলছো সুমাইয়া আমি তোমার ভাবি।
সুমাইয়া তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ এখন কি খুশিতে কোলে নিয়ে বসে থাকবো!!..
মৌঃ তুমি রেগে যাচ্ছো কেনো..?
সুমাইয়াঃ আপনার এই বেশি বুঝা স্বভাবটা ঠিক করে নেন। আর আমার রুমের আশে পাশে না আসলে খুশি হবো।
মৌঃ কিন্তু আমি তো ভেবে নিয়েছি এখন এই রুমেই থাকবো।
সুমাইয়া রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সবার খাবার খাওয়ার জন্য টেবিলে বসে আছে। আজ রূপা রান্না করেছে শুনে সুবর্ণা বেগম খুব খুশি হলেন আদি চৌধুরী ও।
আহনাফ এর আব্বু চুপচাপ বসে আছে। আমেনা বেগম আসেন নি। আরিয়ান চাচ্চু সাজ্জাদ এর সাথে অফিসের বিষয় কথা বলছে।
সোহা আর রূপা সব বেরে দিচ্ছে।
আহনাফ মৌ কে নিয়ে নেমে আসলো। মৌ এর সাথে কেউ সহজে কথা বলে না।
আহনাফ নিজের পাশে মৌ কে বসালো।
রূপা আঁড়চোখে তাকালো।
আদি চৌধুরী রূপা আর সোহা কেও বললো বসে পড়তে।
সোহা আরিফের পাশে বসলো আর রূপা মাহতিম এর পাশে। সাজ্জাদের পাশে বসে আছে ওর আম্মু। আরেক পাশে আরিয়ান।
আহনাফ রূপাকে দেখিয়ে দেখিয়ে মৌ কে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে। মাছের কাটা বেছে দিচ্ছে । পানি এগিয়ে দিচ্ছে।
মাহতিম ইচ্ছে করে পানি নিতে গিয়ে মৌ এর প্লেটে পানি ফেলে দিলো।
মাহতিমঃ সরি! সরি ইসস একদম বুঝতে পারিনি।
মৌ রেগে বলে উঠলো, ‘ দেখো টা কি তুমি ইচ্ছে করে ফেলেছো তাই না…!?
মাহতিমঃ একদম না। ভাই এতো এতো এগিয়ে দেওয়ার কি আছে খাইয়ে দে তাহলেই হয়।
আহনাফ একবার রূপার দিকে তাকালো।
মাহতিম এটা সেটা রূপা প্লেটে দিচ্ছে আর বলছে, ‘ বেশি করে খান ভাবি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছেন। ‘
সাজ্জাদ একবার মাহতিম এর দিকে তাকিয়ে আবার আহনাফ এর দিকে তাকালো।
সাজ্জাদ মাহতিম এর কাহিনি দেখে হাসলো।
আরিয়ানঃ এই মাহতিমের মাথায় আসলে কি ঘুরছে.?
সাজ্জাদঃ দেখো..
আরিয়ানঃ রান্না তুই করেছিস তাই না..?
সাজ্জাদ কিছু না বলে হাসলো৷
মৌ কে রাগে ফুঁসতে দেখে মাহতিম বলে উঠলো, ‘ ঘরে সাপ ঢুকেছে।
সুমাইয়া ভয়ে পা উপরে তুলে নিলো।
~ মাহতিম এটা কেমন ধরনের বেয়াদবি!!
মাহতিমঃ সত্যি আব্বু।দেখো ফুসফুস শব্দ শুনা যাচ্ছে…
মাহতিম এর এই কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো আর মৌ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো। সবার সামনে ওর এতো বড় অপমান!! আগে এই মাহতিম কে দেখে নিবে তারপর রূপা কে।
সবাই খাবারের অনেক প্রসংশা করলো তা দেখে মৌ এর রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।সবাই খাবার শেষ করে যেতেই। সোহা আর রূপা সব গুছিয়ে নিলো।
রূপা কাপড় আনার জন্য ছাঁদে আসতেই পেছন থেকে দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।
রূপা ভয়ে পেছন ফিরে দেখে আহনাফ ছাঁদের দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে।
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_১৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
আহনাফ কে দেখেই ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নিলো রূপা।
কাপড় হাতে নিয়ে আহনাফ কে পাশ কাটিয়ে দরজার কাছে আসতেই রেগে বলে উঠলো ,’ ছাঁদের দরজা তালা কেনো..? এটা কেমন ধরনের অসভ্যতামি চাবি দাও…
আহনাফ বাঁকা হেঁসে চাবি হাতের আঙ্গুলে নিয়ে বললো,’ তোমাদের মতো মেয়েরা কতোটা নিচে নামতে পারে। এক ভাই থেকে প্রতিশোধ নিতে আরেক ভাই কে বিয়ে করে নিলে৷ ভাই ভাই এর মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে দিলে৷ তোমাদের মতো মেয়েদের থেকে আর কি এই বা আশা করতে পারি। পারলে চাবি কাছে এসে নিয়ে নাও।
রূপা রেগে আহনাফ এর সামনে এসে বললো, ‘ চাবি দাও..
আহনাফঃ এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।
রূপাঃ এটা আমার স্বামীর বাড়ি। বাড়ির লোকজন দেখলে বিষয়টা খারাপ দেখাবে চাবি দাও বলছি।
আহনাফ রূপার গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ আজ এই সব কিছুর জন্য তুই দায়ী। তোর জন্য আমার ভাই নেই তাও ক্ষমা করে আপন করে নিতে চেয়ে ছিলাম। আর তুই আমার সব থেকে প্রিয় ভাইকে বিয়ে করে শত্রু বানিয়ে দিলি!! তোর জন্য আমার আম্মু আমার দিকে তাকায় না। সব তোর জন্য হয়েছে! আমি তোকে ছাড়বো না।
ব্যথায় রূপার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।
রাগে আহনাফ কে ধাক্কা দিয়ে নিজ থেকে সরিয়ে আহনাফ এর গালে পর পর চার পাঁচটা থাপ্পড় বসিয়ে রাগে আহনাফ এর কলার চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। তোমার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য তোমার ভাই নিজেই দায়ী। যদি সে এতোই মানসম্মান বুঝতো তাহলে রাস্তায়, কলেজের গেইটে মেয়েদের বিরক্ত করতো না, বাজে ভাবে গায়ে হাত দিতে চাইতো না। মেয়েদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতো না। তোমার নিজের বোনের দিকে যদি কোনো ছেলে বাজে ভাবে তাকায়, বাজে কথা বলে, নোংরা ভাবে হাত দেয় তুমি কি করতে..? আমি কাকে কি বলি! তুমি নিজেও একজন নোংরা মানুষিকতার লোক।আর আমার প্রতিশোধের ইচ্ছে থাকলে প্রতিশোধ নেওয়ার অনেক মাধ্যম ছিলো। তোমার মায়ের সাথে তুমি নিজেই সম্পর্ক নষ্ট করেছো।
আহনাফ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে গেলেই। রূপা বলে উঠলো, ‘ চাবি দিবে নাকি হাত পা ভেঙে কাঁধে ঝুলিয়ে দিবো!!তুমি আমার রাগ সম্পর্কে ভালো করেই জানো।
আহনাফ রূপার দিকে চাবি এগিয়ে দিলো।
রূপা চাবি নিয়ে আহনাফ এর সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ লজ্জা থাকলে আমার সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলবে না। সম্পর্কে আমি তোমার বড় ভাবি। সম্মান দিলে সম্মান পাবে।
আহনাফঃ কতো দিন এই সম্পর্ক টিকে থাকে দেখবো।
রূপাঃ সবাই তোমার মতো না।
রূপা দরজা খোলতেই সাজ্জাদ কে দেখে অবাক হলো।
রূপাঃ আপনি..?
সাজ্জাদঃ অনেকক্ষন হলো ছাঁদে এসেছো রুমে যাচ্ছো না তাই দেখতে আসলাম।
রূপাঃ একটু কাজ ছিলো তাই।
সাজ্জাদঃ হাতে তালা চাবি..?
রূপা জোর পূর্বক হেঁসে বললো, ‘ ছাঁদ তালা দেওয়ার জন্য।’
সাজ্জাদঃ ছাঁদ তো আমরা তালা দেই না।
রূপাঃ আসলে আমি তো জানতাম না। সমস্যা নেই নিয়ে যাচ্ছি।
সাজ্জাদঃ আজ না হয় তালা দিয়ে যাই।
রূপা বাঁকা হেঁসে বললো, ‘ দেন তাহলে আপনি নিজ হাতে।
বিনিময়ে সাজ্জাদ ও হেঁসে ছাঁদ তালা দিয়ে রূপা কে নিয়ে নেমে গেলো।
রাপা হেঁসে ছাঁদের দিকে তাকালো। আহনাফ এখনো ছাঁদে।
রূপা মনে মনে বলে উঠলো, ‘ ছাঁদে বসে বসে হাওয়া খাও। অনেক সখ জেগে ছিলো সখ মিটাও।’
মৌ হাতে কিছু একটা নিয়ে এদিকে ওদিকে তাকালো।
তারপর রূপা রুমের সামনে ডেলে দিলো।
দূর থেকে সবটা দেখলো সুমাইয়া।
সুমাইয়াঃ এই শয়তান মেয়ে আর ভালো হলো না।
মৌ এদিক ওদিক তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেলো।
রূপা, সোহা আমেনা বেগম এর রুমে বসে গল্প করছে।
মৌ ড্রয়িং রুমে বসে বসে অপেক্ষা করছে রূপার চিৎকার শুনার আশায়।
সুমাইয়া মন খারাপ করে মৌ এর পাশে গিয়ে বসলো।
মৌঃ মন খারাপ কেনো সুমাইয়া..?
সুমাইয়াঃ আর বলবেন না ভাবি আহনাফ ভাই কে দেখলাম.
মৌঃ কি দেখেছো..?
সুমাইয়াঃ থাক ভাবি..
মৌঃ কি দেখেছো বলো..?
সুমাইয়াঃ আমি চাইনা আপনার মন খারাপ হোক।
মৌঃ বলো আহনাফ এর কি হয়েছে..?!!
সুমাইয়াঃ আহনাফ ভাই কে দেখলাম রূপা ভাবির রুমে একসাথে। বলেই থেমে বলে উঠলো, ‘ আমি আর কিছু বলতে চাই না ভাবি।
মৌএর রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো। আহনাফ এর পাশে ওর কাউকে সহ্য হয়না। আজ এই রূপার অবস্থা এমন করবে আহনাফ এর কাছে যাওয়ার আগে একশো বার ভেবে নিবে।
বসা থেকে দাঁড়িয়ে রেগে হাঁটা ধরলো রূপার রুমের দিকে।
পেছন থেকে সুমাইয়া হেঁসে তাকালো মৌ এর যাওয়ার দিকে।
সুমাইয়া বসে বসে গুণলো এক, দুই, তিন ঠাসসস
উপর থেকে এক চিৎকারে সবাই চমকে ছুটে আসলো রূপার রুমের কাছে।
মৌ কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছে প্রচুর।
সুবর্ণা বেগমঃ এমনটা কিভাবে হলো..?
সাজ্জাদঃ আগে ডাক্তার ডাকা দরকার।
রুমে শুয়ে আছে মৌ। ডাক্তার মাত্র বের হলো।
মাথা অনেকটা কেটে গেছে, অনেক আঘাত খেয়েছে, পা মচকে গেছে। কোমরেও ব্যথা পেয়েছে। অনেকদিন রেস্টে থাকতে হবে।
ঘুমের ঔষধ দেওয়া তে মৌ এখম ঘুমাচ্ছে।
সে না উঠলে ঠিক জানা যাবে না বেচারি কিভাবে পড়লো।
তাই সবাই নিজেদের রুমে চলে গেলো৷
সুমাইয়া তো নিজের রুমে এসে হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পরলো। কথায় আছে অন্যের জন্য গর্ত খুরলে সেই গর্তে নিজেই পরতে হয়।
রূপা রুমে এসে ভালো করে নিজের দরজার সামন টা দেখলো না কিছুই নেই। থাকবে কিভাবে সুমাইয়া তো খুব সুন্দর করে সব পরিস্কার করে নিয়েছে।
রূপা ফ্রেশ হয়ে আসতেই সাজ্জাদ রূপার সামনে একটা বেলীফুলের মালা বাড়িয়ে দিলো।
রূপা সাজ্জাদের দিকে তাকাতে সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ আসার সময় একটা বাচ্চার হাতে দেখলাম ভালো লাগলো তোমার কথা মনে হলো। আমার মনে হলো এটা তোমাকে খুব ভালো মানাবে তাই নিয়ে আসলাম।
রূপাঃ আসলেই খুব সুন্দর।
সাজ্জাদঃ তোমার পছন্দ হয়েছে..?
রূপাঃ হুম খুব।
সাজ্জাদঃ রূপা কাল আমার সাথে একটু ঘুরতে যাবে..?
রূপা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ঠিক আছে। ‘
সাজ্জাদঃ ধন্যবাদ।
রূপাঃ দরজার সামনে তো কিছুই নেই মৌ এর এমন অবস্থা কিভাবে হলো.?
সাজ্জাদঃ সে টা আমিও ভাবছি। কাল ও সুস্থ হোক জিজ্ঞেস করে জানা জাবে।
রূপা বেলীফুলের মালা খুব যত্ন করে ডাইরীর বাজে রেখে দিলো।
আহনাফের মশার কামড়ে অবস্থা খুব খারাপ। সাথে মোবাইল ও নেই কাউকে কল দিয়ে আসতে বলবে।
পকেট থেকে সিগারেট ধরিয়ে নিচে বসে পরলো। আজ রাত এখানেই থাকতে হবে।
রূপা পাশ ফিরে দেখলো সাজ্জাদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
রূপাঃ ঘুমান না কেনো..?
সাজ্জাদঃ ঘুম আসছে না। আমি কি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারি রূপা।বলেই ভয়ে ভয়ে রূপার দিকে তাকালো।
রূপা সাথে সাথে অন্য দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে নিলো।
সাজ্জাদ হেঁসে চোখ বন্ধ করে নিলো। একদিন তুমি নিজ থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরবে রূপা আমি জানি আর সেটা খুব বেশি দেরী নয়।
রাত দুইটা আরিয়ান মাহিকে কল দিলো।
~ আসসালামু আলাইকুম।
আরিয়ান সালামের উত্তর দিয়ে নিজের পরিচয় দিলো৷
মাহি খুব অবাক হলো এতো রাতে আরিয়ান চাচ্চু কেনো ওকে কল দিলো..?
আরিয়ানঃ নিশ্চয়ই ভাবছেন কেনো কল দিয়েছি তাও এতো রাতে..
মাহিঃ জ্বি..
আরিয়ানঃ আপনি কি কাল একটু দেখা করবেন আমার সাথে। বেশি না দুই ঘন্টা সময় দিলেই হবে..’
মাহি কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে গেলো৷
আরিয়ান ফোন রেখে আকাশের দিকে তাকালো।চোখে জল চিকচিক করছে । পুরুষ মানুষের কাঁদতে নিষেধ।
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।