#শুকনো_বকুলের_মালা_গাঁথিব
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_১১
ইরহাম যে মনে মনে নুরকে পছন্দ করে এটা নুর আগেই বুজতে পেরেছিল। একটা ছেলে চোখের সামনে দিয়ে ঘুরবে, আড়চোখে দেখবে আর তার মনে কি চলতে পারে এতটুকু বুজতে না পারার মতো বোকা নুর নয়। তবে এই মুহুর্তে নিজের লাইফ এর সাথে আর কারো জীবন জড়িয়ে নষ্ট করার কোনো ইচ্ছে নেই নুরের। তাই পাশ কা’টিয়ে চলে আসতে নেয় কিন্তু ইরহাম সেই সুযোগ না দিয়ে নুর এর এক হাত চেপে ধরে।
– ক কি করছেন ছাড়ুন।
– আমি শুধু উত্তর টা জানতে চাই নুর।
– দেখুন আমি কোন অবস্থায় এখানে আছি সেটা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। এরকম একটা পরিস্থিতিতে এসব করা আমার দ্বারা পসিবল না।
– যদি বলি আমি তোমার জন্য ওয়েট করব।
– সেটা আপনার ইচ্ছে।
– তুমি জানো আমি চাইলে জোর করেও ভালোবাসা আদায় করতে পারি।
– জোর করে ভালোবাসা হয় না। আপনি হাত ছাড়ুন।
ইরহাম নুর এর হাত ছেড়ে দেয়।
।
।
।
।
।
।
এরপর কে’টে গেছে বেশ অনেক দিন। ইরহাম এখন পারতে সাধ্য আর নুরের সামনে পড়ে না। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলে। সামনে পড়লেও কথা বলে না। নুর ভার্সিটি ট্রান্সফার করে চট্টগ্রাম চলে আসছে। তো একদিন ভার্সিটি থেকে আসার পর দেখতে পেল গেস্ট রুমে চার পাচজন লোক বসা। তারা কোন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। নুর ফ্রেশ না হয়েই ইরহাম এর আম্মুর কাছে চলে আসে।
– আন্টি কারা আসছে বাসায়।
– পাত্রপক্ষ আসছে মেয়ে দেখতে।
– এ্যা
– আরে হ্যা। তুমি রুমে যাও ফ্রেশ হও।
পাত্রপক্ষ মেয়ে দেখতে আসছে শুনে নুর এর বুক ধ্বক করে ওঠে। এ বাসায় মেয়ে কে। ইরাম তো ঢাকায়। আর মেয়ে বলতে ওই আছে।আন্টির কাছে তো জিজ্ঞেস করতেও পারতেছে না। চিন্তা করতে করতে রুমে আসে নুর। এসে আরেক দফা অবাক হয় নুর। রুমে এরিম বসে আছে। এরিম শাড়ী পড়া। তার মানে এরিমকে…
খুশি হয়ে যায় নুর। ব্যাগ রেখে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসে। এসে এরিমকে সাজাতে থাকে।
এরিম দেখতে মোটামুটি সুন্দরী। পাত্রপক্ষের ও এরিমকে পছন্দ হয়। বিয়ের ডেট ও ওইদিন ই ফিক্সড করা হয়। এক সপ্তাহ পরেই তারা মেয়েকে তাদের ঘরে নিয়ে যেতে চান।
বাড়িতে মোটামুটি বিয়ের আয়োজন শুরু হশে গেছে। কিন্তু এরিম এর খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ক্লাসের জন্য ঢাকায় যেতেই হবে। এরিমের মা এখন এরিমকে একা যেতে দিবে না। তাই মাহফুজ খান বলেন নুর আর এরিম দুইজন যাবে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নুর আর এরিম ঢাকায় আসে। এরিম তার ক্লাস শেষ করে। ক্লাস শেষ করতে করতে দুজনেরই ক্ষুধা লাগে। তাই ওরা দুজন একটা রেস্টুরেন্টে ঢোকে। দুজন কথা বলতে বলতে খাচ্ছিল তখন সেখানে খালিদা বেগমকে ঢুকতে দেখে। নুর তাকে দেখে খানিকটা ভশ পায়। তবে ওর মনে সন্দেহ জাগে এই অসময়ে তাকে রেস্টুরেন্টে দেখে। নুর তাকে ফলো করতে থাকে। খালিদা বেগম কিছু খাবার প্যাক করে নিয়ে নেয়। খালিদা বেগম বেরিয়ে গেলে নুর ও তার পিছনে যেতে শুরু করে। এরিম জানতে চায় নুর কোথায় যাচ্ছে।নুর বলে খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজে যাচ্ছে। এরিম চাইলে ওর সাথে যেতে পারে। এরিম আর নুর খালিদা বেগমের পিছনে যেতে থাকে। তিনি বাসার দিকে না গিয়ে অন্য দিকে যাওয়ায় নুরের আগ্রহ যেন আরো বেড়ে যায়। খালিদা বেগম যেতে যেতে একদম শহরের শেষ প্রান্তে চলে আসছে। খালিদা বেগম একটা বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। নুর আর এরিম ঢুকতে গেলে বাধা দেয় দারোয়ান। কিন্তু নুর আর এরিম দারোয়ানকে কোন মতে বুঝিয়ে ঢুকে পড়ে বাসার ভিতর। দোতলার উপর আসতেই নুরের চোখ চড়কগাছ। খালিদা বেগম একটা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। আর তার সামনে দাড়িয়ে আছে ঝর্না বেগম।এমন একটা বিষয় দেখার জন্য নুর মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ওর চাচ্চুর এত কিছু বলার পরও কেন যেন খালিদা বেগমের উপর একটু হলেও বিশ্বাস ছিল নুরের। তবে এটা কোন খালিদা বেগমকে দেখছে ও। নুর একবার ভাবল ওর চাচ্চুকে ফোন করবে। তবে এমন একটা মুহুর্তে নিজের স্ত্রী এর পক্ষ নেয় যদি চাচ্চু তবে কিছুই করতে পারবে না। আমিনুল আঙ্কেলের নাম্বার নুরের ফোনোই সেইভ করা ছিল। তাই সরাসরি আমিনুলকেই ফোন করে নুর।
এতদিন ধরে যাকে খুজছে সে এই ঢাকায়ই আছে আর তারা খুজে পায়নি ব্যাপারটা কেমন না। আমিনুল ফোর্স নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সেখানে আসে। নুর আর এরিম সেখানেই বসা ছিল। খালিদা বেগম সেই যে ভিতরে ঢুকছেন এখনো বেরুন নি। এরিম এর মধ্যে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করে ফেলেছে কি হয়েছে এখানে, ওরা কেন বসে আছে তবে নুর তার জবাব দেয় নি। বলছে অপেক্ষা কর লাইভ দেখবি একটু পর। তখনই বুজবি। কি আর করার। নুরের কথা মতো এরিম ও বসে আছে ওর সাথে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আমিনুল ফোর্স নিয়ে সেখানে চলে আসে। সাথে রায়হান সিকদারকেও ফোন দিয়ে লোকেশন জানিয়ে দিয়েছে। তিনিও প্রায় চলে এসেছেন।
বাহিরে যে এত কিছু হয়ে গেছে মোটেই টের পান নি খালিদা বা ঝর্ণা কেউই। হঠাৎ বাসার কলিং বেল বাজায় দুইজনই ভয় পান। এই বাসার ঠিকানা আরিফ নামে একটা ছেলে জানে। যে ছেলেটা প্রতিদিন বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়ে যায়। ঝর্ণা সেই যে এসে গা ঢাকা দিয়েছে আর বাসা থেকে বের হয় নি। সবার আগে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন ছিল। আজ হঠাৎ কে এল এই ভেবেই দুজনের কলিজার পানি শুকাইয়া গেছে। তবুও খালিদা বেগম ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দেন। দরজা খুলতেই খালিদা বেগমের নজর যায় রায়হান সিকদার এর দিকে। তবে তিনি কেমন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন যেন এমনটা হওয়ারই ছিল।
মহিলা পুলিশ এতক্ষণে ভিতর থেকে ঝর্না বেগমকেও নিয়ে আসছেন। খু’নের অপরাধে ও খু’ন করতে সাহায্য করার অপরাধে দুজনকেই নিয়ে যাওয়া হয়।
নুর ওর চাচ্চুর কাছে জানতে চায় ওর চাচির কাছে কি এমন ছিল যাতে নুরের ক্ষতি হতো? জবাবে রায়হান সিকদার বলেন ঝর্ণা আর খালিদা মিলে যে এমনটা করেছে তা তিনি আগেই ধরতে পেরেছিলেন। তবে ঝর্ণা বিয়ের সময় কাবিনের পেপারের সাথে দলিলেও সিগনেচার করিয়েছিল। যেখানে রশিদ সিকদার এর অবর্তমানে সমস্ত সম্পত্তি ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ারে দুজনের নামে চলে যাবে। সেই কাগজ পত্রই খালিদার কাছে ছিল। এটা উদ্ধার করতে না পারলে নুর এগুলা কিছুই পেত না। অন্যথায় রশিদ সিকদার উইল করে গিয়েছেন যে তার অবর্তমানে তার সমস্ত কিছুর মালিক হবে নুর এর যে প্রথম সন্তান হবে সে। এখন সব কাগজ পত্রই রায়হান সিকদার এর হাতে রয়েছে। তিনি এগুলো এখন পুলিশের কাছে তুলে দিবেন।
নিয়ে যাওয়ার পর জেরীন আসছিল দেখা করতে। দূর থেকে এক নজর দেখেই চলে যাচ্ছে মায়ের সাথে একবার কথাও বলেনি। ঝর্ণা বেগম পেছন থেকে জেরীনকে ডাকলেন কিন্তু জেরিন বুকে পাথর চেপে মায়ের সাথে কথা না বলেই চলে আসে। ওর মা নিচে নামছে তাই বলে এত যে ুকজন মানুষ এর জীবন নিয়ে নিবে।
।
।
।
।
।
এরিম নুরকে না নিয়ে যাবে না। এরিম এর একটাই কথা। ওর বিয়ের সময় নুরকে ওখানে থাকতেই হবে। নুরকে বাধ্য হয়েই যেতে হয়।
এরিম এর বিয়েটা খুব ভালো ভাবেই হয়ে যায়। সবাই মোটামুটি ইনজয় করলেও ইরহাম বরাবরের মতোই নুরের সাথে কথা বলে না। দেখেও কথা না বলে চলে যায়।
সেদিন রাতে নুর ছাদে গেলে দেখতে পায় ইরহাম আগে থেকেই সেখানে ছিল। নুর ধীর পায়ে গিয়ে ইরহাম এর পাশে দাড়ায়। নুরকে দেখে ইরহাম অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শার্ট এর হাতার ভাজে চোখের জল মুছে নেয়।
– বোনকে মিস করছেন? ( নুর)
নুর এর কথায় ইরহাম মাথা নাড়িয়ে হ্যা বোঝায়।
ভাইবোন এর সম্পর্ক অনেক মিষ্টি একটা সম্পর্ক। বোন যখন ভাইকে ছেড়ে যায় তখন ভাই হয়ত চিতকার করে কাদতে পারেনা তবে তারও তো কষ্ট হয়। এই যে ইরহাম একা একা এখন কষ্ট পাচ্ছে। ইরহাম নুরকে দেখে সেখান থেকে চলে যেতে নেয়।নুর পেছন থেকে জিজ্ঞেস করে
– আপনি কি কোন কারনে আমার উপর রাগ করে আছেন?
– রা’গ করে কেন থাকব।
– কথা বলেন না যে?
– কই এই যে বলতেছি।
– কথা ঘুরাচ্ছেন কেন?
– আমি তো তোমাকে তোমার মতো ভালো থাকতে দিয়েছি নুর।
– আমি যদি বলি আমি আপনার সাথে ভালো থাকতে চাই।
নুর এর কথা শুনে ইরহাম অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ঠোট কামড়ে হাসে। ও জানত নুর ও ওর প্রতি উইক। তবুও এই মুহুর্তে কঠোর হওয়ার চেষ্টা করে ইরহাম।
– নুর তোমাকে চোখের সামনে দেখতে দেখতে কখন যেন তোমার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। তাই তখন তোমাকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু এই মুহুর্তে তোমাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
– কারনটা কি কোন থার্ড পারসোন?
– না।
– তবে?
– সত্যিটা বলব?
– অবশ্যই।
– নুর তোমার বাবার যে অনেক সম্পত্তি তোমার প্রথম সন্তানের নামে করে দিয়ে গিয়েছে যেটার জন্য তোমার চাচি তার বোনের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সেই সম্পত্তির জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না।
– হোয়াট?
– হুম। এখন তোমাকে বিয়ে করতে চেয়ে আমি তো তোমার চাচ্চুর কাছে লোভী হতে পারি না তাই না। এখন তোমাকে বিয়ে করতে চাইলে রায়হান আঙ্কেল যদি খারাপ কিছু ভাবে।
– ছি ছি ছি। আমি কিনা শেষ অবধি এমন কাউকে ভালোবাসতে চাইলাম যার ভালোবাসা একদম ঠুনকো। সামান্য একটু কথার ভয়ে ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে চলে যেতে চায়। আমি একে বিয়ে করলে না জানি কোনদিন হাত ছেড়ে দিত। ভাগ্যিস আগেই জানতে পেরেছি।
নুর এভাবে বলছিল যাতে ইরহাম এর জেদ বাড়ে। আর মনের কথা গুলো বলে দেয়। নুর এর টেকনিক কাজেও লাগে। ইরহাম রেগে নির এর হাত চেপে ধরে। ছাদের রেলিং এর সাথে নুরকে ঠেস দিয়ে তার দুই পাশে হাত দিয়ে দাড়ায় ইরহাম। তার চোখ দুটো এই মুহুর্তে লাল হয়ে আছে। যেন রক্ত ঝড়ছে। ইরহাম যে ভীষন চটেছে এটা কনফার্ম। ইরহাম রেগে নুর এর ঠোটে ঠোট চেপে ধরে। অনেকক্ষন যাবত ডিপলি একটা কিস করে। এরপর গলায়।
ছেড়ে দিতেই হাপাতে থাকে নুর।
– আপনি তো আস্ত বজ্জাত।
– আমার ভালোবাসার গভীরত্ব কতটা সেটা বোঝার ক্ষমতা তোমার হয়নি মেয়ে। শোন আমি আব্বুকে দিয়ে অনেক আগেই রায়হান আঙ্কেলের সাথে কথা বলিয়ে রেখেছি। তিনি শর্ত দিয়েছেন আগে তেমার মন জয় করতে হবে। তাই আমি একটু দেখছিলাম তুমি কতদিন ওয়েট করাও। তবে পাখি যে এত তাড়াতাড়ি খাচায় ধরা দিবে সেটা তো বুঝিনি।
– কিহ। চাচ্চু জানে
-জি ম্যাডাম। চাচ্চুর শর্ত ও পূরন হলো। এখন তো তোমাকে এ বাসায় পার্মানেন্টলি আনার ব্যবস্থা করতেছি। আমার ভালোবাসা কতটা ডিপ তার ট্রেইলর তো আজ দেখলা বাকিটা নাহয় তখনই দেখাব কি বল।
এই বলে নুরকে চোখ টিপ মে’রে দেয়। নুর বুজতে পারে ইরহাম কি ইঙ্গিত করছে। লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে দৌড় দেয় নুর।
#সমাপ্ত