ফেরারি প্রেম পর্ব-৫২+৫৩+৫৪

0
308

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫২
#নিশাত_জাহান_নিশি

নীহারিকা যখন বুঝতে পারল রূপল তাকে ব্লক লিস্টে ফেলে দিয়েছে তখন অজান্তেই তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল! লেহেঙ্গাটি গাঁ থেকে খুলে ফেলল সে। রূপলকে দেখানোর জন্যই সে লেহেঙ্গাটি পরেছিল! ভেবেছিল কলটি রিসিভ সে রূপলকে বলবে ভিডিও কলে আসতে। লেহেঙ্গাটি তাকে কেমন মানিয়েছে রূপলের কাছ থেকে জানতে চাইবে!

মাঝখানে কেটে গেল প্রায় চারদিন। নিয়ম অনুযায়ী আজ নিহাল ও পিয়াসার বৌভাত। গতকাল থেকেই নীহারিকাদের বাড়িতে বৌভাতের তোরজোড় শুরু হয়ে গেছে। আত্নীয়-স্বজনদের হৈ-হট্টগোল, হাসি ঠাট্টা, জমকালো অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে জমজমাট পরিবেশ। বাড়ির মেইন গেইট থেকে শুরু করে পুরো বাড়ি আজ তাজা ও সুগন্ধি ফুলে সেজে উঠেছে। ঘ্রাণে ম ম করছে পুরো বাড়ি। নানা রঙের লাইটিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। রাতের বেলায় বৌভাতের অনুষ্ঠান রেখেছে নিহাল। ব্যস্ততা কাটিয়ে যেন তার অফিসের কলিগরাও এটেন্ড করতে পারে সেইজন্যে।

বিকেল পাঁচটা বাজতেই মেকাপ আর্টিস্ট পিয়াসাকে সাজাতে চলে এসেছেন। গাঢ় নীল রঙের একটি লেহেঙ্গা পরেছে পিয়াসা! পুরো লেহেঙ্গাটিতে সাদা পাথরের কাজ করা। তার চকচকে ফর্সা গাঁয়ের রঙের উপর সুনিপুণভাবে ফুটে উঠছে লেহেঙ্গাটি। সাজগোজ ছাড়াই পিয়াসাকে দেখতে খুব প্রিটি দেখাচ্ছে। সাজলে যে কী পরিমাণ প্রিটি দেখাবে তা নিয়েই ভাবনায় পড়ে গেছেন মেকাপ আর্টিস্ট!

নীহারিকা এতক্ষণ যাবত পিয়াসার রুমেই ছিল। শরীরটা একটু ম্যাচম্যাচ করে উঠতেই সে তার রুমে চলে এলো। গতকাল থেকেই তার উপর দিয়ে বেশ ধকল যাচ্ছে। মেহমানদের আদর, অ্যাপায়ন, ঘর দোর গুছিয়ে রাখা সবদিকই তাকে একা সামলাতে হয়েছে। এখন রুমটা একটু খালি পেতেই সে তার রুমের দরজা আটকে চিৎপটাং হয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। বালিশের তলা থেকে ফোনটি হাতে নিতেই দেখল রূপলের নতুন সিম থেকে প্রায় ১০০+ মিসড কল! কোনোরূপ ভাবান্তর ছাড়াই নীহারিকা এই নাম্বারটিও ব্লকলিস্টে ফেলে দিলো! নাক ফুলিয়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করে বলল,

“বেহায়া, নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ কোথাকার! পাঁচ পাঁচটা নাম্বার থেকে ব্লক করলাম এরপরেও একের পর এক কল করেই চলছে! কোনো বিরতি টিরতি নেই তার। আমার সাথে কথা না বলে যেহেতু থাকতেই পারবিনা তাহলে আমাকে ব্লক করলি কেন? হোয়াই ম্যান হোয়াই? তখন খুউউব ভাব দেখিয়ে এখন আবার হ্যাংলামো করা হচ্ছে? এভাবেই ঝুলে থাকবি তুই! না তোকে ফেসবুকে অ্যাড করব না তোর সিমের ব্লক খুলব!”

রূপলের উপর ক্ষোভ ঝেরে সে ফোনটা আবারও বালিশের তলায় রেখে নাক টেনে লম্বা এক ঘুম দিলো! সেই ঘুম ভাঙল তার দরজার খটখটানির শব্দে। কেউ বিরামহীনভাবে তার রুমের দরজায় টোকা মারছে। বিরক্ত হয়ে নীহারিকা ঘুম জড়ানো চোখে দরজার দিকে আলুথালু পায়ে এগিয়ে এলো। দরজা খুলতে খুলতে বিব্রতকর গলায় বলল,

“এই কে রে? কোনো হাক ডাক ছাড়াই দরজা ধাক্কাচ্ছে কে?”

শক্ত হাতে নীহারিকা দরজার খিলটা খুলে দিতেই ঝড়ের বেগে কেউ যেন তার রুমে প্রবেশ করে রুমের দরজাটি ভেতর থেকে আটকে দিলো! বেকুব হয়ে নীহারিকা মুখটা হা করে দাড়িয়ে রইল। কী হলো না হলো সব তার মাথার দুই ফুট উপর দিয়ে গেল। তখনি অপ্রত্যাশিতভাবে পিছু ফিরে তাকালো রূপল। পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে সে রুদ্রাক্ষ রূপ নিয়ে নীহারিকার দিকে এগিয়ে এলো। কোনো রূপ কথাবার্তা ছাড়াই সে ধাক্কা মেরে নীহারিকাকে সোজা বিছানার উপর বসিয়ে দিলো! স্নিগ্ধতায় নীহারিকার চোখ দুটি শিথিল হয়ে এলো! মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পরেছে আজ রূপল! নীহারিকার লেহেঙ্গার রঙের সাথে মিলে গেছে সেই রঙ! রূপলের গাঁয়ের রঙের সাথে পাঞ্জাবির রঙটা যেন তার বাহ্যিক সৌন্দর্য আরও দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে৷ মন্ত্রমুগ্ধের মত টানছিল রূপল তাকে।

নীহারিকার বেপরোয়া চাহনির দিকে তাকানোর সময় নেই রূপলের। মাত্রাতিরিক্ত রাগে হাত-পা কাঁপছে রূপলের। শীঘ্রই নীহারিকার ডান হাতটি বিছানার সাথে চেপে ধরল সে। চোয়াল উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“ফোন কোথায় রাখছ?”

এই পর্যায়ে এসে নীহারিকার স্নিগ্ধ দৃষ্টি ভয়ে পরিণত হলো। ভীতিকর দৃষ্টিতে সে রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল। শুকনো ঢোঁক গিলে কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কেকেকেন?”

“কথা না বাড়িয়ে আমার কোয়েশ্চনের আনসার দাও। বেশিক্ষণ আমি এখানে থাকতে পারবনা। রিস্ক আছে। ফোন কোথায় বলো?”

“তাহলে এত রিস্ক নিয়ে আমার রুমে আসার দরকারটা ছিল কী?”

“আমার রাতের ঘুম হারাম করে এখন আমার রিস্কের কথা চিন্তা করছ? চারদিন ধরে চোখে ঘুম নেই আমার। গলা দিয়ে খাবারও নামছেনা। একটা বার খোঁজ নিয়েছ আমার? এখন তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে দাও। হারি আপ।”

“না দিব না! আমি বুঝছি তো কেন আপনি আমার ফোন খুঁজতেছেন!”

“দিবা না তাই তো?”

“নাহ্!”

“ওকে ফাইন। এবার যা হবে তার জন্য তুমি আমাকে দায়ী করতে পারবা না!”

“কীকীকী করবেন?”

ব্যগ্র হাসল রূপল! রক্তিম মুখশ্রীতে তার দুষ্টু ভাব ফুটে উঠল। রূপ বদলাতে সময় লাগলনা তার। উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য সে সব করতে পারে। ভয়ে কাঁপতে থাকা নীহারিকার দুই ঠোঁটের দিকে তাকালো সে। ডানপিটে গলায় বলল,

“করার পর বলছি! মাঝপথে থামাতে গেলে কিন্তু তোমারই কষ্ট হবে!”

মিছেমিছি নীহারিকার ঠোঁটের দিকে রূপল ঝুঁকে আসতেই নীহারিকা তার ডান হাত দিয়ে রূপলের ঘাড়টা চেপে ধরল! ঝট করে রূপলকে তার থেকে সরিয়ে নিলো। তাড়াহুড়ো করে বালিশের তলা থেকে তার ফোনটি বের করে রূপলের হাতে ধরিয়ে দিলো! ঠোঁট দুটো চেপে ধরে অস্ফুটে গলায় বলল,

“ফোন!”

ক্রুর হাসল রূপল! নাক ঘঁষে সে ফোনটি হাতে নিলো। কোনো লক নেই নীহারিকার ফোনে। তাই সে অনায়াসেই কললিস্টে গিয়ে পুনরায় ফোনটি নীহারিকার হাতে তুলে দিলো! রাগী রূপে ফিরে এসে নীহারিকাকে বলল,

“নাও। সবগুলা সিমের ব্লক খুলে দাও!”

অমনি নীহারিকা বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। রূপলের মুখোমুখি দাড়ালো সে। এক রোখা গলায় তেতে ওঠে বলল,

“মানে কী? আমি কী ব্লক করছি ব্লক খোলার জন্য?”

তিরিক্ষিপূর্ণ ভাব নিলো রূপল। বেশ তাড়না দেখিয়ে বলল,

“ব্লক তো আমিও করেছিলাম তাইনা? কিছুক্ষণ পরেই কিন্তু ব্লকটা আবার খুলে দিয়েছিলাম! আমি খুলতে পারলে তুমি পারবা না কেন? কুইকলি ব্লকগুলো খোলো বলছি।”

“না খুললে কী করবেন?”

ক্রুর হাসল রূপল। নীহারিকার দিকে এক কদম এগিয়ে এলো সে। হুট করে নীহারিকার কোমর জড়িয়ে ধরল! ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে থাকা নীহারিকার ঠোঁটের দিকে বেশরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“তার মানে তুমি চাইছ আমি ভুল করি? ইনডিরেক্টলি বুঝানোর কী দরকার বলো? ডিরেক্টলি বললেই তো হয়!”

এবার আর ভয় পেলো না নীহারিকা! ধাক্কা মেরে রূপলকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিলো সে। এই ধাক্কাটির জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা রূপল! ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা দূরে ছিটকে গেল সে। তেজী ভাব নিয়ে নীহারিকা রূপলের দিকে এগিয়ে এলো! রূপলের শার্টের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ব্লক খুলব না আমি কিছুতেই! আমাকে মেরে ফেললেও না। কী পেয়েছেন আপনি আমাকে? যখন যা ইচ্ছে হবে তাই আমার উপর চাপিয়ে দিবেন? এতই সোজা সব?”

নীহারিকার রাগকে প্রশ্রয় দিলোনা রূপল। রাগ বেশিদিন জমিয়ে রাখলে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছুতেই নীহারিকার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়না রূপল৷ নীহারিকাকে ছেড়ে থাকা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব! এই কয়েকদিনে তা বেশ ভালোভাবেই টের পেয়ে গেছে সে। কিছু ব্যক্তিগত ও বিশেষ মানুষদের সাথে চাইলেও রাগ দেখানো যায়না। তাদের ছেড়ে থাকাও যায়না। পাষাণ হৃদয়ের মানুষরাও তখন নত হতে বাধ্য হয়! দুর্বলতা গ্রাস করে তাদের। একটুখানি ভালো থাকার লোভে মানুষ নিজের স্বভাব বদলাতেও দু’বার ভাবেনা। রূপলের ক্ষেত্রেও ঘটল ঠিক তাই!

সঙ্গে সঙ্গেই নীহারিকাকে রূপল তার বুকের মাঝে চেপে ধরল! শক্ত করে বুকের বাঁ পাশে ধরে রাখল নীহারিকাকে। অশান্ত বুকটা তার শান্ত হয়ে এলো। প্রশান্তিতে চোখ জোড়া বুজে নিলো। নিবিড় গলায় নীহারিকাকে বলল,

“উজ্জ্বলের সাথে সেদিন তোমার ফ্রেন্ডলি বিহেভ আমি মানতে পারিনি নীহু! দেট’স হোয়াই একটু বেশিই রেগে গিয়েছিলাম সেদিন। আর রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা। যা তা করে বসি।”

স্থির হয়ে এলো নীহারিকা! ভেতরটায় সুখ সুখ অনুভূত হলো তার। মন তো চাইছিল রূপলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে তবে কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য সে নিজেকে সামলে রেখে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। গম্ভীর গলায় বলল,

“তার মানে রেগে গেলে আপনি মানুষও খুন করতে পারেন? কোনো দয়ামায়া নেই আপনার মধ্যে? এতই পাষাণ পুরুষ আপনি?”

বিপরীতে রূপল মৌন রইল! নীহারিকাকে জড়িয়ে ধরার মধ্যে যে সুখ নিহিত রয়েছে সেই সুখ সে সর্বাঙ্গে মাখতে লাগল! বেশিক্ষণ নীহারিকাকে জড়িয়ে ধরার সেই সুখ উপলব্ধি করতে পারলনা রূপল! দরজার ঐ পাশ থেকে খটখট আওয়াজ ভেসে এলো। শাকিল মিনমিনে গলায় রূপলকে ডেকে বলল,

“ভাই শুনছ? কেউ আসছে এদিকে। তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসো।”

সঙ্গে সঙ্গেই রূপলকে গাঁ ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো নীহারিকা! রূপলকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রুম থেকে বের করে দিলো। দ্রুত গলায় বলল,

“দাফা হয়ে যান এখান থেকে।”

পিছু হটতে হটতে রূপল উদাস গলায় বলল,

“ব্লক খুলবে না তাইতো?”

“খু’ন তো সেদিনই করে দিয়েছেন আমাকে! মৃত ব্যক্তির সাথে আবার কীসের কথা?”

রূপলের মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো নীহারিকা! আহত মন নিয়ে পিছু ঘুরে গেল রূপল। অমনি মারজিনা বেগমের মুখোমুখি হয়ে গেল সে। তাড়াহুড়ো করে তিনি নীহারিকার রুমের দিকে এগিয়ে আসছিলেন। রূপলকে দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। মৃদু হেসে বললেন,

“আরে রূপল যে। কখন এলে তুমি?”

ম্লান হেসে রূপল নিচু স্বরে বলল,

“এইতো আন্টি। কিছুক্ষণ আগে।”

“বেয়াই বেয়াইন কখন আসবে? তোমাদের ওখান থেকে তো এখনও কেউ এলো না বাবা।”

“আসছে আন্টি। এত ব্যস্ত হবেন না। কুল থাকুন।”

“ওকে বাবা ঠিক আছে৷ পিয়াসার সাথে দেখা হয়েছে?”

“না আন্টি। এখনও তার সাজ কমপ্লিট হয়নি।”

“পার্লারের মেয়েরা কী যে সাজাচ্ছে তাকে আল্লাহ্ই জানে। এদিকে নীহারিকারও খোঁজ পাচ্ছিনা। বাড়িতে এত বড়ো অনুষ্ঠান অথচ মেয়েটার কোনো পাত্তাই নেই। তোমাদেরও এখনও নাশতা দেওয়া হলো না। মেয়েটা রেডি হলো কী-না তা ও তো জানতে পারলাম না।”

“নীহারিকা মেবি রুমে আছে আন্টি। প্লিজ গো।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা যাচ্ছি। তোমরা বরং নিচে গিয়ে একটু বসো। আমি নীহারিকাকে ডেকে আনছি।”

“ওকে আন্টি।”

শাকিল ও সজলকে নিয়ে রূপল নিচে চলে গেল। রূপলের গম্ভীরতা দেখে সজল ও শাকিল রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল। সন্দেহজনক গলায় সজল রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“ভাই? তুমি কী এখনও অস্বীকার করবা যে নীহারিকা আপুকে তুমি ভালোবাসো না?”

প্রত্যত্তুরে রূপল অকপট গলায় সজলকে বলল,

“গম্ভাট কোথাকার! আপু বলছিস কেন? ভাবি বল ভাবি!”

টাশকি খেয়ে গেল সজল ও শাকিল! দুজনই তাজ্জব দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল। তার মানে এই কয়েকদিন যাবত এসবই চলছিল রূপলের মনে? যা তারা আন্দাজ করেছিল কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারেনি?

বাড়ির উঠোনে করা স্টেজের দিকে এগিয়ে যেতেই রূপল একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো! ফুলের ডালা হাতে নিয়ে মেয়েটি বাড়ির ভেতরেই ঢুকছিল। এরমধ্যেই ঘটে গেল এই কাণ্ড। মেয়েটির দিকে না তাকিয়েই রূপল সরি সরি বলে স্টেজের ভেতরে ঢুকে গেল। তবে মেয়েটির চোখ যেন কিছুতেই সরছিলনা রূপলের দিক থেকে! নিষ্পলক দৃষ্টিতে সে রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। ঘোরে ডুবে থেকে বিড়বিড় করে বলল,

“হু ইজ হি? এত হ্যান্ডসাম ছেলে আমি পৃথিবীতে দুটো দেখেছি বলে তো মনে হয়না! খোঁজে বের করতে হবে সে কে।”

এই বলে মেয়েটি মনের খুশিতে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল! ফুলের ডালা হাতে নিয়ে সে সোজা হেঁটে দু’তলায় ওঠে গেল। নীহারিকার রুমে ঢুকে পরল সে। নীহারিকাকে রেডি হতে বলে মারজিনা বেগম তখন রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আর তখনি মেয়েটি নীহারিকার রুমে ঢুকল। লেহেঙ্গাটি মাত্র গাঁয়ে পরেছে নীহারিকা। এরমধ্যেই মেয়েটি ফুলের ডালাটি টেবিলের উপর রেখে অস্থির গলায় নীহারিকাকে বলল,

“এই নীহা শুনছিস? একটা ইনফরমেশন দিতে পারবি আমাকে?”

লেহেঙ্গার ফিতা গুলো ঠিক করতে করতে নীহারিকা বেশ ব্যস্ত স্বরে মেয়েটিকে বলল,

“কী ইনফরমেশন আপু?”

“খয়েরি রঙের পাঞ্জাবি পরা একটি ছেলেকে দেখলাম তোদের বাড়িতে! ছেলেটি কে নীহা?”

অমনি নীহারিকা থতমত খেয়ে মেয়েটির দিকে তাকালো। মনে ভয় নিয়ে অস্থির গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কেন আপু? তাকে দিয়ে তুমি কী করবে?”

“আরে বল না ছেলেটি কে? প্লিজ প্লিজ প্লিজ!”

মেয়েটির বেহায়াপনা দেখে ভ্রু যুগল কুঁচকালো নীহারিকা। সন্দেহের স্বরে বলল,

“কেন আপু? ছেলেটি কী কোনোভাবে তোমাকে ডিস্টার্ব করেছে?”

লজ্জায় রাঙা হয়ে মেয়েটি বলল,

“আরে না। একচুয়েলি প্রথম দেখাতেই তাকে আমার খুব ভালো লেগে গেছে!”

অমনি ঠাস করে মেয়েটির গালে সপাটে চড় বসিয়ে দিলো নীহারিকা! শুধু তাই নয় মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে মেয়েটিকে আচ্ছেমত দেয়ালের সাথে বারি মারতে লাগল! তবে এসব নিছকই তার কল্পনা ছিল! যদি সম্ভব হত সে বাস্তবেও তাই করত। মনের জ্বালা মনে চেপে রেখে নীহারিকা জোরপূর্বক হাসল। নরম স্বরে মেয়েটিকে বলল,

“আপু এখন তুমি যাও! আমি রেডি হয়ে আসছি। ছেলেটির সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দিব!”

নীহারিকার গাল টেনে মেয়েটি আহ্লাদি গলায় বলল,

“থ্যাংকস রে নীহা! একটু আর্লি রেডি হয়ে আয় প্লিজ।”

এই বলে মেয়েটি বেশ চনমনে ভাব নিয়ে নীহারিকার রুম থেকে বের হয়ে গেল। মেয়েটির যাওয়ার পথে তাকিয়ে নীহারিকা কোমরে হাত গুজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। চোখের সামনে পরে থাকা বেসামাল চুল গুলো সে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলো। রাগ ঝেড়ে বলল,

“রূপলের বাচ্চা রূপল! বিয়ে কী তোর লাগছে না তোর বোনের লাগছে? কে বলেছিল তোকে আজ নায়ক সেজে আসতে? মেয়েদের বদনজর এখন তোর উপর পরবে! কীভাবে আড়াল রাখব তোকে আমি?”

রাগে রি রি করে নীহারিকা নিজের মত করে রেডি হতে লাগল! আধঘণ্টার মধ্যে কোনো রকমে রেডি হয়ে সে ভারি লেহেঙ্গাটি সামলাতে সামলাতে আলুথালু পায়ে হেঁটে স্টেজেের দিকে চলে এলো। পুরো স্টেজ নীহারিকা চোখ দ্বারা চুষে ফেলল রূপলকে খুঁজতে খুঁজতে। একটু হেঁটে স্টেজের পেছনের দিকে যেতেই মৃদু অন্ধকারে পেছন থেকে রূপলকে দেখতে পেল সে। লেহেঙ্গার জন্য দ্রুত পায়ে হাঁটতে পারছেনা সে। তবুও লেহেঙ্গার ওজন সামলে সে রূপলের দিকে এগুতে এগুতে বলল,

“রাগী ভীমরুলটা এখানে কী করছে? স্টেজ রেখে স্টেজের পেছনে কাকে খুঁজতে এসেছে?”

রূপলের ঠিক পেছনটায় দাড়ালো নীহারিকা। সিগারেটের গন্ধে তার হঠাৎ বমির উদ্বেগ হচ্ছিল! সকাল থেকেই অভুক্ত সে। যার কারণে সিগারেটের বিদঘুটে গন্ধে তার গাঁ গোলাচ্ছে। নাক টিপে ধরে নীহারিকাকে রূপলের পিঠে আলতো করে হাত ছুয়ালো। তিক্ত সুরে বলল,

“এই রূপল? আপনি এখানে কী করছেন?”

নীহারিকার গলার আওয়াজ পেয়ে রূপল তড়িঘড়ি করে পিছু ফিরে তাকালো। অজান্তেই হাত থেকে সিগারেটটি ফেলে দিলো সে। নাক মুখ থেকে ধোঁয়া বের করতে লাগল। সেই ধোঁয়া আবার হাত দিয়ে সরিয়ে ও দিলো। নীহারিকার দিকে এক পলক তাকাতেই রূপল সম্মোহিত হয়ে গেল!

কী সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার। এই মায়াবতী মেয়েটা আজ আবার এত সুন্দর করে সেজেছে কেন? এত নিঁখুতভাবে চোখে কাজল পরতে কে বলেছে তাকে? কেনই বা ঠোঁটে এত গাঢ় করে লিপস্টিক পরল? নাকে কী নত পরেছে ওটা? হ্যাঁ এমনই তো মনে হচ্ছে। কপালের মাঝখানে ঘটা করে আবার টিপ? ভালোই হলো কেউ নজর লাগাতে পারবেনা তাকে! তবে চুলে খোঁপা কেন করল মেয়েটা আজ? খোলা চুলে তো বেশ মানাত তাকে। আমি সত্যিই দিন দিন আনরোমান্টিক হয়ে যাচ্ছি! হাতে করে একটা গোলাপ আনা প্রয়োজন ছিল আমার! কানের পেছনে গুজে দিতাম। আচ্ছা? আমার কী তাকে একটু ছুঁয়ে দেখা উচিৎ? আলতো করে তার পুরো মুখশ্রীটা ছুঁয়ে দিব একবার?

নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল রূপল। নীহারিকার গাঁয়ের সাথে ঘেঁষে দাড়ালো সে। হুট করে নীহারিকার চুলে হাত দিয়ে সে চুলের কাঠিটা ফেলে দিলো! সঙ্গে সঙ্গেই নীহারিকার দীঘল কালো চুলগুলো ছড়িয়ে পরল সমস্ত পিঠে। কোমর অবধি ছড়িয়ে গেল সেই চুল। নিবিষ্ট দৃষ্টিতে নীহারিকা রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুতেই রূপলকে থামাতে পারছিল না সে। নীহারিকার চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ রূপলের নাকে ঠেঁকতেই রূপল বেপরোয়া হয়ে উঠল! আগ পাছ না ভেবে তাৎক্ষণিক নীহারিকাকে জড়িয়ে ধরল সে! চোখ বুজে নীহারিকার চুলের ঘ্রাণ নিতে লাগল। ঘোর জড়ানো গলায় বলল,

“এই মায়াবী মেয়ে? এত মিষ্টি কেন তোমার চুলের ঘ্রাণ?”

লজ্জা পেয়ে গেল নীহারিকা! যদিও রূপলকে সরাতে ইচ্ছে করলনা তার তবুও সে রূপলকে সরানোর চেষ্টা করে বলল,

“ছাড়ুন। আপনার মুখ থেকে সিগারেটের বিশ্রী গন্ধ আসছে! বিয়ে বাড়িতে এসেও আপনার সিগারেট খেতে হবে?”

“খেতে তো চাইনি। তবে পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে!”

“কেন? কী হয়েছে?”

“উজ্জ্বল এসেছে!”

অবাক হলো নীহারিকা। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“সিরিয়াসলি? কই? তাকে তো কোথাও দেখলাম না!”

“দেখতে হবেনা! আমি চাই উজ্জ্বল কখনও তোমার চোখে না পরুক।”

“কেন কেন? এমন চাওয়ার কারণটা কী? উজ্জ্বলকে নিয়ে এত হিংসা কেন আপনার?”

“সত্যিই কিছু বুঝো না তুমি?”

“বুঝিয়ে বলুন না! শুনি?”

অমনি নীহারিকার কানের লতিতে আস্তে করে একটি কামড় বসিয়ে দিলো রূপল! নীহারিকাকে তার বশে এনে নীহারিকার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

“কারণ। কারণ আমি তোমাকে……

এতটুকু বলেই নীহারিকাকে ছেড়ে দিলো রূপল! নীহারিকাকে ধাঁধায় ফেলে দিয়ে সে হঠাৎই জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! যেতে যেতে আচ্ছন্ন গলায় বলল,

“আজই উজ্জ্বলের দ্যা ইন্ড হবে নীহু! উজ্জ্বলের দুর্বল জায়গা আমি পেয়ে গেছি। এরপর তুমি শুধু আমার হবে নীহু! শুধু আমার!”

#চলবে….?

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

“আজই উজ্জ্বলের দ্যা ইন্ড হবে নীহু! উজ্জ্বলের দুর্বল জায়গা আমি পেয়ে গেছি। এরপর তুমি শুধু আমার হবে নীহু! শুধু আমার!”

দুই কদমে স্টেজের ভেতর ঢুকে গেল রূপল। তড়িঘড়ি করে পায়জামার পকেট থেকে সাইলেন্ট মোডে বাজতে থাকা ফোনটি বের করল সে! ব্যস্ত গলায় ফোনের ঐ প্রান্তে থাকা মানুষটিকে বলল,

“ওয়েট অ্যা ফাইভ মিনিটস আপু। আমি আসছি!”

নীহারিকা নির্বোধ দৃষ্টিতে রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। সেকেন্ডের মধ্যেই যেন রূপল কোথাও উধাও হয়ে গেল। কোমরে হাত গুজে নীহারিকা বেশ চিন্তিত সুরে বলল,

“কী বলে গেল ঐ ফিরিঙ্গি লোকটি? উজ্জ্বলের দুর্বল জায়গা খুঁজে পেয়েছে মানে? ভেতরে ভেতরে কী দুষ্টু বুদ্ধি এটেছে এই লোক? গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছে না-কী?”

প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে নীহারিকা ছুটল রূপলের পিছু পিছু। কী চলছে রূপলের মধ্যে তা এখনি জানতে হবে তার। দ্রুত পায়ে হেঁটে স্টেজের ভেতর ঢুকতেই নীহারিকার আকস্মিক দৃষ্টি পরল স্টেজের ভেতর দাড়িয়ে থাকা উজ্জ্বলের দিকে। নিহালের সাথে দাড়িয়ে সে বেশ হেসে হেসে কথা বলছে। দুজনই দুজনের খেয়ালে ব্যস্ত প্রায়। চোরের মত লুকিয়ে নীহারিকা উজ্জ্বলকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল! তবে লাভ কিছু হলো না এতে! উজ্জ্বলের শকুনের নজর তার উপর পরতেই হলো। মুখ ঢেকে নীহারিকা আল্লাহ্’র নাম জপ করতে করতে উজ্জ্বলের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার পূর্বেই উজ্জ্বল পেছন থেকে নীহারিকাকে ব্যাকুল স্বরে ডেকে উঠল! বলল,

“হেই নীহারিকা। কাম হেয়ার।”

শীঘ্রই থেমে গেল নীহারিকা! জিভ কেটে সে নিজেই নিজের মাথায় গাড্ডা মারল। বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

“ধ্যাত। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। তোর চোখের পাওয়ার যেহেতু এতই হাই তাহলে চশমা পরার কী দরকার ভাই? নিশ্চয়ই ফ্যাশন করার জন্য এই লোক চশমা ইউজ করে! নাটক যত্তসব।”

বাইরে তিক্ততা প্রকাশ করলনা নীহারিকা। জোরপূর্বক হেসে পিছু ঘুরে তাকালো। চোখের সামনে পরে থাকা চুলগুলোকে হাত দ্বারা ঠেলে সে মাথা নুইয়ে হেঁটে উজ্জ্বলের দিকে এগিয়ে এলো। সংকুচিত দৃষ্টিতে উজ্জ্বলের দিকে তাকালো। আড়ষ্ট গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“জি বলুন?”

নীহারিকা ও উজ্জ্বলের মাঝে নিহাল নিজেকে বিরিয়ানিতে থাকা এলাচ মনে করল! গলা ঝাঁকিয়ে সে ইতস্তত গলায় উজ্জ্বলকে বলল,

“আচ্ছা তোমরা কথা বলো। আমি একটু আসছি।”

তাদের মাঝখান থেকে বিদায় নিলো নিহাল। এতে করে নীহারিকা আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেল। মাথা নুইয়ে সে নখ কামড়াতে লাগল। কীভাবে এই অসহ্যকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে তা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। নীহারিকার এহেন লজ্জা ও জড়তাগ্রস্ত অবস্থা দেখে উজ্জ্বল মিটিমিটি হাসল! বুকের উপর হাত গুজে সে ঈষৎ ঝুকে এলো নীহারিকার দিকে। নাক ঘঁষে মন্থর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“লজ্জা পেলে বুঝি আপনি এভাবেই নখ কামড়ান?”

উজ্জ্বলের উস্কানিমূলক কথাতেও নীহারিকা তার নখ কামড়ানোর বদঅভ্যাস ছাড়লনা! বরং নখ কামড়ানো বহাল রেখেই সে প্রসঙ্গ পাল্টে হেয়ালি গলায় শুধালো,

“কখন এলেন আপনি?”

“কেন? আমি এসেছি বলে আপনি খুশি হননি?”

“না তা নয়। ভাইয়ার রিসিপশনে আপনার আসাটাই তো স্বাভাবিক।”

“হ্যাঁ। তবে আমি ভেবেছিলাম আসব না। যার জন্য আমি আসব ভেবেছিলাম, তার-ই তো গত চারদিন যাবত কোনো খোঁজ খবর নেই। ফোনই তুলছিলনা আমার। একবার বললও না ভাইয়ার রিসিপশনে আসুন!”

মাথা নুইয়ে মুখটা বাঁকালো নীহারিকা! উজ্জ্বল যে নীহারিকার সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে তা বুঝতে বেশী বেগ পেতে হলোনা তার! উজ্জ্বলকে ব্যঙ্গ করে সে বিড়বিড় করে বলল,

“তোকে আসতে বলতে আমার বয়ে গেছে! আমিতো জানতাম ও না তুই আজ আসবি। জানলে তো সাবধানেই থাকতাম। তোর সামনে পরতাম না-কী? ধ্যাত, লোকটা আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলো।”

মুখ মধু অন্তরে বিষ রেখে নীহারিকা স্বচ্ছ দৃষ্টিতে উজ্জ্বলের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বেশ উৎফুল্ল গলায় বলল,

“আরে কী বলছেন এসব আপনি এসব? আমিতো জানতাম আজ আপনি আসবেন। ভাইয়ার অফিসের সব কলিগরা যেহেতু আজ ইনভাইটেড সেই জায়গায় আপনিও ইনভাইট থাকবেন তা জানা কথা। তাই আর নতুন করে আপনাকে কিছু বলা হয়নি। তাছাড়া আপনার ফোন নাম্বারটা তো আমার ফোনে সেইভ করা নেই তাই বুঝতে পারিনি আপনি কখন কল করলেন! প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড ওকে?”

নীহারিকার কথায় ফিক করে হেসে দিলো উজ্জ্বল। স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। মুগ্ধ স্বরে বলল,

“বাই দ্যা ওয়ে নীহারিকা। ইউ আর লুকিং সো প্রিটি, সো গর্জিয়াস এন্ড সো বিউটিফুল!”

বেকুবের মত হাসতে হাসতে নীহারিকা প্রত্যত্তুরে উজ্জ্বলকে বলল,

“ওহ্, ইয়াহ্, থ্যাংকস থ্যাংকস। আমি এবার আসছি তাহলে হ্যাঁ?

উজ্জ্বলকে হতবাক করে দিয়ে নীহারিকা দ্রুত পায়ে হেঁটে উজ্জ্বলের সামনে থেকে প্রস্থান নিলো। বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে সে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। মনে মনে আল্লাহ্’র কাছে শুকরিয়া আদায় করতে লাগল। নীহারিকার আচরণে অবাক হওয়ার চেয়ে অধিক রুষ্ট হলো উজ্জ্বল! রূঢ় গলায় সে বলল,

“স্ট্রেঞ্জ তো। নীহারিকার ভাব হাব দেখে মনে হলো সে আমাকে সহ্য করতে পারেনা! কেমন অসভ্যের মত ব্যবহার করে গেল। হাউ ডিজগাস্টিং।”

তখনি পিয়াসার পরিবার থেকে পিয়াসার মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনরা দলে দলে আসতে শুরু করল। চারটি মাইক্রো কার এলো তাদের সাথে। নিহাল ও তার পরিবার ব্যস্ত হয়ে গেল তাদের নিয়ে। নীহারিকা ও তার মা গেল পিয়াসার মা-বাবাকে এগিয়ে আনতে। সবাইকে স্টেজে বসিয়ে কোল্ড ড্রিংকস ও হালকা নাশতা পরিবেশন করতে লাগল নীহারিকা। নিহালের অফিস সব কলিগরাও তখন আসতে শুরু করল। উজ্জ্বলও নীহারিকার থেকে পাওয়া অবহেলা ভুলে সবার সাথে মিশে গেল।

এত ব্যস্ততার মাঝেও নীহারিকাকে একরত্তি শান্তি দিচ্ছেনা নীহারিকার সেই প্রতিবেশী মেয়ে লামিয়া! যার সাথে কী-না একটু আগে রূপলের ধাক্কা লেগেছিল। বার বার নীহারিকাকে খুঁচিয়ে বলছে রূপলের সাথে তাকে একটিবার পরিচয় করিয়ে দিতে। নীহারিকার বিরক্তি ও বুঝতে চেষ্টা করছেনা লামিয়া। হ্যাংলার মত তার পিছু পিছু ঘুরছে। অথচ এই মেয়ের পেছনে কত ছেলে পাগল! পুরো মহল্লার ছেলেকে একা পাগল করে রেখেছে এই মেয়ে। তার রূপের গুনে ছেলেরা তার জন্য পাগল প্রায়। সে যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় তখন তার পেছনে ছেলেদের লাইন পরে যায়! তবে এদের মধ্যে লামিয়া নিজের মনমত কাউকে খুঁজে পাচ্ছেনা। এই প্রথম কোনো ছেলেকে লামিয়ার বেশ লাগল! তাইতো রূপলের সান্নিধ্য পেতে সে বেহায়া হতেও পিছপা হলোনা!

তবে এই মুহূর্তে রূপলকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছেনা নীহারিকা। পুরো বাড়ি চুষে ফেলেছে সে তার সূক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্বারা। তবে রূপলের দেখা মিলল না কোথাও। মন খারাপ করে লামিয়া স্টেজ ছেড়ে চলে গেল! আর তখনি নাজনীন বেগম নীহারিকার হাত টেনে ধরে তাকে পাশে বসালেন। মিষ্টি হেসে প্রশ্ন ছুড়লেন,

“পিয়াসার সাজগোজ কী এখনও শেষ হয়নি নীহারিকা?”

“আমি তো এখনও ভাবির কাছে যাইনি আন্টি। কাজে আটকে যাচ্ছি বার বার। তবে এখন যাচ্ছি। দেখে আসছি সাজ কতদূর এগোলো ভাবির।”

“হ্যাঁ। আর তোমার সাথে করে হৃদিকেও একটু নিয়ে এসো তো। পিয়াসার রুমেই আছে হৃদি!”

“এমা কী বলেন আন্টি? কখন এলো হৃদি? আর কার সাথেই বা এলো?”

“রূপলের সাথে এসেছিল! পিয়াসা তখন তার রুমে হৃদিকে রেখে দিয়েছিল। ফোন করে এসব বলল রূপল আমাকে। ছেলেটা যে কোথায় গেল তা জিজ্ঞেস করার সুযোগটাও দিলোনা! ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলো।”

“চিন্তা করবেন না আন্টি। আছে হয়ত আশেপাশেই। আচ্ছা আন্টি আপনি বসুন। আমি বরং হৃদিকে ডেকে আনছি।”

তড়িঘড়ি করে নীহারিকা চেয়ার থেকে উঠতে যাবে অমনি নাজনীন বেগম নীহারিকার হাত টেনে ধরে নীহারিকাকে আবারও জায়গায় বসিয়ে দিলেন! উচ্ছ্বল গলায় তিনি নীহারিকার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন,

“তোমার সাথে যে ঐ সময় মেয়েটাকে দেখলাম মেয়েটা কে?”

“আমাদের প্রতিবেশী হয় আন্টি৷ কেন?”

“রূপলের সাথে মেয়েটাকে খুব মানাবে তাইনা?”

মুহূর্তেই নীহারিকার হাসিমুখে আঁধার নেমে এলো! বুকটা কেঁপে উঠল তার। মাথাটাও কেমন ঘুরে এলো। অস্থিরতায় ঘাম ছুটে গেল তার। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও সে নিচু গলায় বলল,

“অনেক ভালো মানাবে আন্টি।”

গলাটা ধরে এলো নীহারিকার! চোখ দুটোও ঝাপসা হয়ে এলো। ঝড়ের বেগে জায়গা থেকে ছুটে পালালো সে। দুঃখ নিবারণ করা সম্ভব হচ্ছিল না তার পক্ষে। উদগ্রীব হয়ে নীহারিকা যেইনা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে যাবে অমনি সে খেয়াল করল রূপল মেইন ধরে হেঁটে স্টেজের দিকে এগিয়ে আসছে। তার একপাশে শাকিল ও সজল এবং অন্যপাশে অপরিচিত একটি মেয়ে! মেয়েটির সাথে একাগ্রচিত্তে কথা বলতে বলতে রূপল হেঁটে আসছে। সেই মেয়েকে দেখে তৎক্ষনাৎ মাথা গরম হয়ে গেল নীহারিকার। একে তো নাজনীন বেগমের কথার প্রেক্ষিতে পাওয়া কষ্ট অন্যদিকে রূপলের সাথে অন্য এক অপরিচিত মেয়ে। সব মিলিয়ে তার ক্ষোভ বেড়ে গেল রূপলের প্রতি। চ্যালচ্যালিয়ে হেঁটে সে রূপলের মুখোমুখি দাড়ালো। চলতি পথে রূপলকে থামিয়ে দিলো। হতবাক রূপলের দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“আপনারা সবাই মিলে আমাকে পেয়েছেনটা কী? আপনার সাথে কে ইনি? কাকে নিয়ে এসেছেন সাথে করে?”

নীহারিকার দুর্ব্যবহারে অবাক হলো রূপল। এমন অশোভন আচরণ তো নীহারিকার থেকে প্রত্যাশিত নয়। নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটেছে তার সাথে। তাই তো এমন অশোভন আচরণ। রূপলের পাশে থাকা মেয়েটি হঠাৎ মুখ টিপে হেসে দিলো! ধীর গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“ইনিই কী মিস নীহারিকা?”

প্রত্যত্তুরে রূপল উদাস গলায় বলল,

“হ্যাঁ আপু।”

এতটুকু বলেই রূপল নীহারিকার হাত চেপে ধরে নীহারিকাকে নিয়ে নির্জন জায়গায় চলে এলো। লোকজনের সমাগম এখানে নেই বললেই চলে। সবাই স্টেজের ভেতরে ঢুকে গেছে। সেই সুযোগে রূপল নীহারিকার সাথে একান্তে কথা বলতে এসেছে। উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে নীহারিকার দু’চোখে তাকালো রূপল। প্রশ্নবিদ্ধ গলায় বলল,

“কী হইছে তোমার? চোখে পানি কেন?”

রূপলের প্রশ্নের জবাব তো দিলোই না নীহারিকা পাল্টা ভরাট গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“আগে বলুন মেয়েটি কে?”

“আগে আমার কুয়েশ্চনের আনসার দাও? উজ্জ্বল কিছু করেছে তোমার সাথে? এত এগ্রেসিভ দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?”

আবেগ ধরে রাখতে পারলনা নীহারিকা! হুট করে সে রূপলকে জড়িয়ে ধরল! ডুকরে কেঁদে বলল,

“আন্টি আপনার জন্য মেয়ে দেখছেন রূপল! লামিয়া আপুকে পছন্দ করেছে আপনার জন্য।”

“আজব তো! হু ইজ লামিয়া?”

“অনেক সুন্দর দেখতে। ধবধবে ফর্সা। আপনার গাঁয়ের রঙের মত ফর্সা! আপনার সাথে মানাবেও ভালো।”

রাগে গজগজ করে উঠল রূপল। নীহারিকাকে তার বুক থেকে উঠালো! নীহারিকার অশ্রুসিক্ত দু’চোখে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ঝাঁজালো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছি মেয়ে কেমন দেখতে? আমার সাথে মানাবে কী-না জানতে চেয়েছি? আগ বাড়িয়ে এত বাড়তি কথা বলতে যাও কেন তুমি? হোয়াট ইজ ইউর প্রবলেম নীহু?”

“এটাই তো সত্যি রূপল! লামিয়া আপু সত্যিই দেখতে খুব সুন্দরী। আন্টি এক দেখাতেই লামিয়া আপুকে পছন্দ করে ফেলেছে।”

“সো হোয়াট? এমন কত শত মেয়েকেই তো আমার মা রোজ আমার জন্য পছন্দ করে। তাই বলে কী আমি সবাইকে বিয়ে করে বসে আছি? আগামী এক ঘণ্টা তুমি আমার চোখের সামনে আসবা না! যাও দূর হও আমার চোখের সামনে থেকে! গেট লস্ট।”

নীহারিকাকে বড্ড রাগিয়ে দিলো রূপল। হুমকি ধমকি মোটেও পছন্দ নয় তার। আর এক সেকেণ্ড ও বিলম্ব করলনা নীহারিকা। রূপলের সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিলো। সোজা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। নীহারিকা চলে যেতেই রূপল তার মাথার চুলগুলো টেনে ধরে রুদ্ধকর শ্বাস ফেলল। উত্তেজিত গলায় বিড়বিড় করে বলল,

“ফালতু একটা বিষয় নিয়ে নিজেও প্যারা খাচ্ছে, আমাকেও প্যারা দিচ্ছে। বোকা মেয়ে এটাই বুঝেনা আমি যদি ঠিক থাকি তো পৃথিবীর কেউ আমাকে আমার জায়গা থেকে টলাতে পারবেনা। ধ্যাত মাথাটাই গরম করে দিলো আমার। আর আমার মায়ের কথাই বা কী বলব। যেখানে যাও সেখানেই শুধু আমার জন্য বউ খুঁজো। এছাড়া বোধ হয় আর কোনো কাজ নেই তার।”

মেজাজ ঠিক করে রূপল ধীরস্থির ভাবে এগিয়ে এলো মেয়েটির দিকে। শাকিল ও সজল ততক্ষণে স্টেজের দিকে যাচ্ছিল। দুজনই হঠাৎ উজ্জ্বলের মুখোমুখি পরে গেল! তবে উজ্জ্বল যাচ্ছিল নীহারিকার পেছনে! হম্বিতম্বি হয়ে নীহারিকা কেন বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল তা জানার আগ্রহ থেকে উজ্জ্বল নীহারিকার পিছু নিচ্ছিল। উজ্জ্বলকে দেখে সজল ও শাকিল ব্যগ্র হাসল। দুজনই সমস্বরে উজ্জ্বলকে বলল,

“ভাইয়া। ওখানে কেউ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। প্লিজ গো।”

উৎসুক হয়ে উজ্জ্বল বাড়ির মেইন গেইটের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই হঠাৎ থমকে গেল! আবছা আলোতে সেই চিরচেনা মেয়েটিকে দেখে সে ভড়কে উঠল। শাকিল ও সজলকে উপেক্ষা করে সে ছুটে গেল মেয়েটির দিকে। দূরে দাড়িয়ে রূপল তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা সব ক্যাপচার করছিল! সামনে গেলে উজ্জ্বল মেয়েটির সাথে মন খুলে কথা বলবেনা! ভয়ে ভয়ে থাকবে। কোনো সত্য কথাই তার মুখ থেকে শোনা হবেনা। তাই রূপল উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে গাছের আড়ালে গিয়ে দাড়াল। কান পেতে সব শুনতে থাকল।

ঘাবড়ে ওঠে মেয়েটির মুখোমুখি দাড়ালো উজ্জ্বল! কড়া গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“এই তুমি এখানে কী করছ?”

উজ্জ্বলের হুমকি ধমকিতে ভয় পেলোনা মেয়েটি। বুকে সাহস রাখল সে। এই সময় ভয় পাওয়ার সময় নয়। বরং নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার সময়। তীক্ষ্ণ গলায় মেয়েটি পাল্টা উজ্জ্বলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,

“তোকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসেছি! কী ভেবেছিস তুই? আমাকে ঠকানো বুঝি এতই সহজ? আমাকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করবি আর আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কলা চুষব? এমনই দুর্দিন চলে এলো আমার?”

মেয়েটির অকপট কথায় অবাক হলো উজ্জ্বল! আরও একটু এগিয়ে গেল সে মেয়েটির দিকে। বিস্মিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“বিহেভিয়ারের এই হাল অবস্থা কেন তোমার? কার সাথে দাড়িয়ে কথা বলছ তুমি ভুলে যাচ্ছ?”

“না! ভুলব কেন? আমার উডবি হাসবেন্ডের সামনে দাড়িয়ে আমি কথা বলছি! যার সাথে কী-না একমাস আগে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল!”

“হ্যাঁ কথা ছিল! কিন্তু শেষ অবধি বিয়েটা হয়নি। কেন হয়নি বলো তো? তোমার বেপরোয়া চালচলনের জন্য! তোমার চরিত্রের সমস্যার জন্য!”

“শাট ইউর মাউথ উজ্জ্বল! সামান্য সন্দেহ থেকে তুমি আমার চরিত্রে প্রশ্ন তুলতে পারোনা। তোমার সমস্যাটা কী জানো? তোমার সমস্যা হলো আমার গাঁয়ের চামড়া নিয়ে! তুমি ভাবছ মেয়েটা সুন্দর তাই হয়ত তার অনেক পুরুষের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে! তার অনেক বেড হেবিটসও থাকতে পারে। মেয়েটা জব করে তার মানে মেয়েটার সিদ্ধান্তই সবসময় উপরে থাকবে! তার মতামতের গুরুত্ব থাকবে। তোমার বুঝি কোনো গুরুত্বই থাকবেনা তখন! এই ম্যান্টালিটি থেকে বের হয়ে এসো উজ্জ্বল। যদি এসব চিন্তাধারাই তুমি মাথায় গেঁথে রাখো তো আমি কেন? পৃথিবীর কোনো মেয়েই তোমার সাথে সুখি হবেনা! সবার জীবনেই একটা পার্সোনাল স্পেস থাকা দরকার। কেউ সবসময় বন্ধি হয়ে থাকতে চাইবেনা। ফ্রিডম সবারই প্রয়োজন। লিসেন উজ্জ্বল? তোমাকে এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি আমি! এই এক সপ্তাহের মধ্যে তুমি হয় আমাকে গ্রহণ করবে নয় আমাকে নিজের হাতে খু’ন করবে! দুটোর একটা করবে। ফ্যামিলিতে মুখ দেখাতে পারছিনা আমি! নিজের পছন্দ মতো তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম আমি এখন সেই তুমিই আমার সাথে পল্টি নিচ্ছ! এই এক সপ্তাহের মধ্যেই তুমি যা করার করবে। আমি তোমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব। বায়!”

উজ্জ্বলকে কিছু বলার সুযোগ দিলোনা মেয়েটি। হনহনিয়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। ঘাম ছুটে গেল উজ্জ্বলের। অস্থিরতা কাজ করতে লাগল তার মধ্যে। অমনি রূপল লুকানো অবস্থা থেকে বের হয়ে এলো! ক্রুর হেসে সে উজ্জ্বলের মুখোমুখি দাড়ালো। রূপলকে দেখে দাঁতে দাঁত চাপল উজ্জ্বল। বেশ ভাব দেখিয়ে সে পিছু ঘুরতেই রূপল শ্লেষাত্মক গলায় উজ্জ্বলকে ডেকে বলল,

“কী মিস্টার উজ্জ্বল? বেশ চিন্তায় পরে গেছেন তাইনা? দুই নৌকোয় পা দিয়ে চলতে পারছেন না আর?”

উজ্জ্বলের মাথায় এতক্ষণে সব ঢুকল! দেরিতে হলেও সে বুঝতে পারল এসব রূপলের চাল! তৎক্ষনাৎ আগ্রাসী দৃষ্টিতে পিছু ঘুরে তাকালো উজ্জ্বল। রূপল তখনই ব্যগ্র হেসে তার ফোনটা হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,

“পল্টি খাওয়ার কোনো অপশন নেই। কজ ফোনে সব রেকর্ড করা আছে! বিয়ে ভাঙতে বেশী সময় লাগবেনা আমার! তবে আমি চাই আপনি নিজ থেকেই বিয়েটা ভাঙুন। নীহুকে ছাড়ুন!”

রূপলের দিকে তেড়ে এলো উজ্জ্বল! রাগী দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকালো। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,

“আমি প্রথম থেকেই আন্দাজ করেছিলাম নীহারিকার সাথে কোন ইন্টু পিন্টু আছে। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে কোনো লাভ নেই ওকে? বিয়েটা আমি নীহারিকাকেই করব! প্রয়োজনে তোকে খু’ন করব!”

উজ্জ্বলের সস্তা হুমকিতে হু হা করে হেসে দিলো রূপল। পেটে খিল ধরে গেল তার। হাসতে হাসতেই সে মেজাজ চওড়া করে বলল,

“ওহ্ মাই গড। ভয় পেয়ে গেছি আমি! আমার ভালোবাসা তোর মত এতই সস্তা যে নিজের জান যাওয়ার ভয়ে আমি নীহুকে ছেড়ে দিব? হাউ চিপ ইউর ম্যান্টালিটি ইয়ার। আমিতো বলব, পৃথিবীর কোনো মেয়েরই উচিৎ হবেনা তোকে বিয়ে করার! যে কী-না অন্যকে দমিয়ে রেখে নিজেকে উপরে রাখতে চায় সে তো মানুষ হিসেবেই গণ্য না। স্বামী হিসেবে কী গণ্য হবে? তাছাড়া তুই কী ভেবেছিস? আমার নীহু কালো বলে এটাই তার দুর্বলতা? তার দুর্বল জায়গা দেখিয়ে তুই সবসময় তাকে তোর পায়ের তলায় পিষে রাখতে পারবি? আর সেজন্যই তুই কালো মেয়ে খুঁজছিস বিয়ে করার জন্য? তো আমিও চ্যালেঞ্জ করে বলছি আমার দেহে শেষ রক্ত বিন্দুটুকু অবশিষ্ট থাকতে নীহুকে আমি ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো পুরুষ ছুঁতে পারবেনা! তাকে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করতে পারবেনা। নীহুর দায়িত্ব শুধু আমার। একান্তই আমার।”

গটগটিয়ে হেঁটে উজ্জ্বলের সম্মুখ থেকে প্রস্থান নিলো রূপল। রাগে মাথা গরম হয়ে গেল উজ্জ্বলের। কাউকে কিছু না বলেই সে বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল! নীহারিকাকে খুঁজতে খুঁজতে রূপল দু’তলায় ওঠে গেল। নীহারিকা তখন কোল্ড ড্রিংকস হাতে নিয়ে নিচের দিকেই নেমে আসছিল। নীহারিকাকে দেখামাত্রই রূপল চনমনে হয়ে ছুটে গেল নীহারিকার দিকে। রূপলকে দেখে মুহূর্তেই মুখটা পিছনে ঘুরিয়ে নিলো নীহারিকা। রাগে রঙ্গিন হয়ে বলল,

“সরে যান সামনে থেকে!”

নীহারিকার রাগের কারণ বুঝতে পারল রূপল। তবুও নীহারিকাকে রাগাতে ছাড়লনা সে। গরমে পাঞ্জাবির কলারটা ঝাড়ল সে। গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে ঘুরে এসে নীহারিকার মুখোমুখি দাড়ালো। ট্রে থেকে একটি কোল্ড ড্রিংকস হাতে নিয়ে সে ভাব শূণ্য গলায় শুধালো,

“ওহ্। একঘণ্টা হয়নি এখনও?”

“একঘণ্টা কেন? এক যুগ পরেও আপনি আমার মুখ দর্শন করতে পারবেননা!”

এই বলে নীহারিকা পুনরায় পিছু ঘুরে গেল। রাগে বোম হয়ে যেইনা সামনের দিকে পা বাড়ালো অমনি রূপল ক্রুর হেসে নীহারিকার লেহেঙ্গার ওড়না টেনে ধরল। ঠোঁট কাটা গলায় বলল,

“ইশ! রাগলে তো তোমাকে আরও হট দেখায়! মনে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। আর কত জ্বালাতে চাও আমাকে বলো?”

#চলবে…?

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

“ইশ! রাগলে তো তোমাকে আরও হট দেখায়! মনে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। আর কত জ্বালাতে চাও আমাকে বলো?”

রূপলের ঠোঁট কাটা কথায় রাগ শান্ত হওয়ার বদলে রাগ যেন আরও তিনগুন বেড়ে গেল নীহারিকার! রি রি করে উঠল সে। ক্ষেপে ওঠে লেহেঙ্গার ওড়নাটা একটানে রূপলের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো। গটগট করে হেঁটে তেড়ে এলো রূপলের দিকে। কোল্ড ড্রিংকসে চুমুক দিয়ে রূপল ভ্রু নাচালো। ট্যারা চাহনিতে নীহারিকার দিকে তাকিয়ে রইল! মুহূর্তের মধ্যেই রূপলের মুখ থেকে নীহারিকা কোল্ড ড্রিংকসের গ্লাসটি কেড়ে নিয়ে এলো! দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

“বেশ ভালোই ফ্লার্ট করা শিখে গেছেন তাইনা? আমার সাথেও ফ্লার্ট করছেন?”

মুহূর্তেই নীহারিকার কোমর জড়িয়ে ধরল রূপল। নীহারিকাকে তার গাঁয়ের সাথে পুরোপুরি মিশিয়ে নিলো। হেঁচকা টানের ফলে নীহারিকার হাতটা অবিলম্বেই ঢিলে হয়ে এলো। অমনি হাত থেকে কোল্ড ড্রিংকসের ট্রে-টি সশব্দে নিচে পরে গেল! গ্লাসগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। হতভম্ব দৃষ্টিতে নীহারিকা নিচে পরে থাকা ভাঙা গ্লাসগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। তখন কোমরে কিঞ্চিৎ ব্যথারও অনুভব হলো তার! রূপলের পাঁচ আঙুলের দাগ অতি নির্মমভাবে গেঁথে যাচ্ছিল তার কোমরে। সূক্ষ্ণ ব্যথায় নিঃশব্দে চোখ বুজে নিলো নীহারিকা। রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে রূপল দাঁতে দাঁত চাপল! নীহারিকা গালে নাক ঘঁষে মন্থর গলায় বলল,

“এবার নিজেকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে দেখাও! আমার ভালোবাসাও তোমার কাছে ফ্লার্ট মনে হয় তাইনা? আমার ভালোবাসাকে যতবার তুমি এইভাবে অপমান করবে ঠিক ততবারই আমি এইভাবে তোমাকে শাস্তি দিব!”

রূপলের শক্তি ও কথার দাপট বেশিক্ষণ টিকল না। পূর্বের তুলনায় আরও অধিক রুষ্ট হয়ে উঠল নীহারিকা। কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই সে রূপলের নাক বরাবর জোরে এক কামড় বসিয়ে দিলো! সঙ্গে সঙ্গেই রূপল নীহারিকাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। নাকে হাত ঠেকিয়ে সে উহ্ করে শব্দ করে তাজ্জব দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। দাঁতের দাগ বসে গেল রূপলের নাকে।কালসিটে দাগ পরে গেল। রূপলের ধরাশায়ী অবস্থা দেখে নীহারিকা মুখ টিপে হাসল। নাক ঘঁষে বুকের উপর হাত গুটালো। বেশ ভাব নিয়ে বলল,

“শাস্তি একে বলে বুঝেছেন? কোমর ধরে চাপাচাপি করা কখনও শাস্তি হতে পারেনা। শাস্তি হতে হয় এমন, যেমনটা এখন আমি আপনাকে দিলাম!”

এই বলে নীহারিকা হাসতে হাসতে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। রূপলের মুখটা দেখার মত ছিল। দাঁতের কামড় খুব বিষাক্ত হয়। আর যদি তা নাকের হাড্ডিতে হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। ফর্সা মুখটা রূপলের ধীরে ধীরে লাল হয়ে এলো। ব্যথাটা সত্যিই তার রুহ তে গিয়ে লাগল! তাড়াহুড়ো করে পায়জামার পকেট থেকে ফোনটি বের করল রূপল। সেলফি ক্যামেরাটি তার মুখের সামনে ধরতেই মুখে তার হাত চলে গেল! দেখল নাকে নীহারিকার দাঁতের দাগ পরে গেছে! এই অবস্থায় কোথাও যেতে পারবেনা সে! প্রেস্টিজের দফারফা হয়ে যাবে তার। এসব ভাবতেই রাগে ফোঁস করে উঠল রূপল। তেঁতে ওঠে বলল,

“শাস্তি কাকে বলে তুমিও এবার টের পাবা ব’জ্জা’ত মেয়ে! আমাকে ঘাঁটানো তাইনা? জাস্ট সামনে পড়ো একবার। ব্যথা কাকে বলে তখন বুঝাব। বজ্জাতগিরি বের হয়ে যাবে তখন। রূপলের লেজে পা দিয়ে কাজটা মোটেও ভালো করোনি তুমি।”

কয়েক দফা রুদ্ধশ্বাস ফেলে রূপল নিজেকে সীমিত সময়ের জন্য স্থির করল। তিক্ত গলায় পুনরায় বলল,

“ধ্যাত! এই চেহারা সুরুত নিয়ে আমি বাইরে যাবটা কীভাবে? কী ভাববে সবাই আমাকে? মেয়েটার উদ্দেশ্যই যেন ছিল আমাকে কট খাওয়ানো! পাঁজি মেয়ে কোথাকার। সামান্য কোমড়ই তো ধরেছিলাম ভাই! এতে এত ক্ষেপে যাওয়ার কী আছে? আমি তো জানি তুমি সাহসী। এটা আবার বার বার প্রমাণ করা লাগে?”

জেদের চোটে রূপল হঠাৎই পিছু ঘুরতে খেয়াল করল মুখে আঙুল চেপে চুপটি করে দাড়িয়ে আছে হৃদি! রূপলের চোখে চোখ পরতেই সে পেটে হাত রেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল! রূপলের নাকের দিকে আঙুল দ্বারা ইশারা করে বিদ্রুপের স্বরে বলল,

“হেহ্ হেহ্ হেহ্! রূপল বাবা লুজার! নীহা আন্টি উইনার। হেরো ভূত তুমি বাবা। নীহা আন্টি তোমার নাক কামড়ে দিয়েছে!”

অস্থির হয়ে উঠল রূপল! হঠকারিতায় মাথায় হাত চলে গেল তার। উদ্বিগ্ন গলায় বলল,

“আইলা! এই পাকা বুড়িটা কী এতক্ষণ এখানেই দাড়িয়ে ছিল? শেষ রূপল তুই শেষ। তোর প্রেস্টিজ আজ শেষ।”

ছুটে গেল রূপল হৃদির দিকে। হাঁটু মুড়ে বসে হৃদির মুখ চেপে ধরল সে। অধীর গলায় বলল,

“চুপ হৃদি চুপ। এসব কথা এভাবে বলতে নেই মা! বাচ্চাদের মুখে এসব পঁচা কথা মানায় না। লোকে তোমাকে পঁচা বলবে। এতক্ষণ তুমি যা দেখছ এবং শুনেছ সব ভুলে যাও। ইমেজিন করো যে এটা একটা কল্পনা ছিল!”

“উঁহু! আমি তো পঁচা না। পঁচা তো তুমি বাবা! পঁচা বলেই তো নীহা আন্টি তোমার নাকে কামড়ে দিয়েছে। আমি বাস্তবেই এসব দেখেছি! কল্পনা হতে যাবে কেন?”

কাঁদো কাঁদো মুখ হয়ে গেল রূপলের! অসহায় ভঙ্গিতে হাত জোর করে সে হৃদিকে বলল,

“আরে আমার মা চুপ কর প্লিজ! আমার প্রেস্টিজের বারোটা বাজাস না! আমি না তোর বাবা? বাবার মান ইজ্জত নিয়ে এভাবে খেলতে হয়? কী খাবি বল তুই? চকলেট, আইসক্রীম, চিপস? কোনটা?”

ভাবনায় পরে গেল হৃদি। বেশ ভেবেচিন্তে সে জ্ঞানী সুরে রূপলকে বলল,

“তুমি কী আমাকে এসবের লোভ দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে চাইছ বাবা? ভেবেছ আমি খাবারের লোভে সব ভুলে যাব?”

দাঁতে দাঁত চেপে রূপল হম্বিতম্বি হয়ে হৃদিকে তার কোলে তুলে নিলো। খিটখিটে মেজাজে বিড়বিড় করে বলল,

“পাকা বুড়ি হয়েছে একটা। ওর মত বয়সে থাকতে আমরা ললিচপ চুষতাম! নাক দিয়ে লেটা পড়ত তখন। সেই লেটা আবার হাত দিয়ে মুছে ফেলতাম! মায়ের আঁচল ধরে ধরে হাঁটতাম। উঠতে বলতে উঠতাম, বসতে বললে বসতাম, কোথাও যেতে বারণ করলে সেদিকে ফিরেও তাকাতাম না। বোকার হদ্দ ছিলাম! আর এই মেয়ে কী-না এই বয়সে এসে এত স্মার্ট? ক্লাস নিচ্ছে আমার?”

টিস্যু দ্বারা রূপল তার নাকটা চেপে ধরল! যেন কারো দৃষ্টি তার নাকের দিকে না পরে তাই। হৃদিকে কোলে নিয়ে সে সোজা স্টেজে চলে এলো। পিয়াসা ও নিহালকে তখন স্টেজে বসানো হলো। সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল পিয়াসা ও নিহালের ছবি তোলার জন্য। তাদের এত সুন্দর মুহূর্তের ভিডিও করার জন্য। নিহাল যেন আজ কিছুতেই পিয়াসার থেকে চোখ সরাতে পারছেনা! নীল রঙের লেহেঙ্গাতে পিয়াসাকে নীলাঞ্জনা লাগছে। পিয়াসার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে নিহালও পড়েছে আজ নীল পাঞ্জাবি। চোখ ধাঁধানো সুন্দর দেখাচ্ছে দুজনকে। এর ফাঁকে নাজনীন বেগম গেলেন পিয়াসার সাথে ছবি তুলতে। তখন পিয়াসা হঠাৎ তার মায়ের কানে বিড়বিড় করে বলল,

“ভাইয়াকে চোখে চোখে রাখো মা! ভাইয়ার হাবভাব ঠিক মনে হচ্ছেনা আমার!”

অমনি ভ্রু কুঁচকে নিলেন নাজনীন বেগম। চিন্তিত সুরে তিনি প্রশ্ন ছুড়লেন,

“মানে? কী বলতে চাইছিস তুই?”

“আমি কী বুঝাতে চাইছি বুঝতে পারছনা তুমি? ভাইয়ার পাঞ্জাবির দিকে খেয়াল করেছ? নীহারিকার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে মেরুন কালার পাঞ্জাবি পরেছে ভাইয়া! কিছু আন্দাজ করতে পারছ?”

“হ্যাঁ তাই তো! আমিতো এই বিষয়টা খেয়ালও করিনি। তবে এর ফাঁকে আমি একটা মহান কাজ করেছি!”

“কী এমন মহান কাজ করে ফেললে তুমি শুনি?”

“রূপলের জন্য তোদের প্রতিবেশী একটা মেয়েকে পছন্দ করেছি আমি! আর সেই কথা নীহারিকাকে ও বলেছি! তখন তার মুখটা যা হয়েছিলনা! দেখার মত ছিল। তার মুখের দিকে তাকিয়ে পাশবিক আনন্দ পেয়েছি আমি!”

“এসব করে কোনো লাভ নেই মা! সুন্দর দেখতে একটা মেয়ে খুঁজে ভাইয়াকে ডিরেক্টলি বিয়ে দিয়ে দাও। তাছাড়া নীহারিকারও তো কয়েকদিন পরে বিয়ে! আপদটা যে কবে বিদায় হবে!”

এরমধ্যেই পিয়াসার হঠাৎ উজ্জ্বলের কথা মনে পরে গেল! এদিক ওদিক দৃষ্টি ফেলে দেখল উজ্জ্বল কোথায় নেই। পেরেশান হয়ে পিয়াসা পাশ ফিরে নিহালের দিকে তাকালো। নিহালের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

“এই? উজ্জ্বল কোথায়? তাকে তো কোথাও দেখতে পারছিনা। কোথায় গেল সে?”

এতক্ষণে টনক নড়ল নিহালের। অস্থির দৃষ্টিতে উজ্জ্বলকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল সে। উত্তেজিত গলায় বলল,

“ঠিকই তো। উজ্জ্বল কোথায় গেল? অনেকক্ষণ যাবত তাকে দেখছিনা।”

ঠিক তখনই উজ্জ্বলের নাম্বার থেকে নিহালের নাম্বারে মেসেজ এলো! মেসেজটিতে লিখা ছিল,

“সরি নিহাল ভাইয়া। আপনাকে না বলেই বাড়ি ফিরে আসতে হলো। আসলে শরীরটা খুব খারাপ করছিল তো তাই বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরতে হলো। প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড ওকে? আপনাদের নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল। সবসময় হাসিখুশি থাকুন আপনারা।”

মেসেজটি পড়ে নিহাল অধীর শ্বাস ফেলল। পিয়াসার দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বলল,

“উজ্জ্বল বাড়ি চলে গেছে পিয়াসা! শরীর না-কী খারাপ করছিল তার।”

চিন্তায় ডুবে গেল পিয়াসা। সন্দেহপ্রবন হয়ে উঠল সে। কপাল কুঁচকে বিড়বিড় করে বলল,

“আসলেই কী উজ্জ্বল অসুস্থ হলো না-কী অন্য কোনো কাহিনী আছে এর মধ্যে?”

হৃদির মুখ বন্ধ করে রাখার জন্য রূপল তাকে চকোলেট, আইসক্রীম, চিপস সব খাওয়ালো! তবুও যেন কিছুতেই হৃদির মুখ বন্ধ করে রাখা যাচ্ছিলনা! রূপলের মুখে মাস্ক পরা দেখে শাকিল ও সজলের জিজ্ঞাসার যেন অন্ত নেই! তারা ক্ষণে ক্ষণে রূপলের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে ফিরে তাকাচ্ছে। রূপল বার বার তাদের চাহনি উপেক্ষা করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে! কিছুতেই তাদের প্রশ্নের মুখে পরতে চাইছেনা সে। শাকিল তো এবার কৌতূহলী গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়েই দিলো,

“ভাই? তুমি মেয়েদের মত মুখে এভাবে মাস্ক পরে রাখছ কেন? কী হইছে হঠাৎ বলো তো?”

শাকিলের করা প্রশ্নকে উপেক্ষা করতে চাইল রূপল। তাড়াহুড়ো করে সে পেছনের দিকে ফিরে গেল। জায়গা থেকে প্রস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। অমনি হৃদি রূপলের কোলে থেকে মুখ টিপে হাসতে হাসতে শাকিলকে বলল,

“রূপল বাবার নাকে একটা দুষ্টু ভীমরুল কামড় দিয়েছে শাকিল চাচ্চু!”

জিজ্ঞাসু হয়ে শাকিল বলল,

“কীহ্? ভীমরুল কোথা থেকে এলো?”

অমনি রূপল দিশা খুঁজে না পেয়ে হৃদির মুখ চেপে ধরল! দ্রুত পায়ে হেঁটে সে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। যেতে যেতে দাঁতে দাঁত চেপে শাকিলকে বলল,

“একবার কামড় খেলে বুঝবি! এর আগে বুঝবিনা! বেছে বেছে ভীমরুলটার প্রেমেই পরতে হলো আমার!”

শাকিল ও সজলকে ধাঁধায় রেখে প্রস্থান নিলো রূপল। বেশ অনেকক্ষণ যাবত লামিয়া রূপলের পিছু নিচ্ছিল! রূপলের পিছু নিতে নিতে সে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। হুট করে ছুটে এসে সে রূপলের মুখোমুখি দাঁড়ালো। মাথা নুইয়ে সে লাজুক ভাব নিলো। নেচে নেচে বলল,

“হায়। আমি লামিয়া।”

নির্বোধ ভাব নিলো রূপল। লামিয়ার দিকে সে উজবুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। রগচটা গলায় বলল,

“হ্যাঁ তো? আমি কী করব? আমি কী আপনার নাম জানতে চেয়েছি?”

রূপলের ত্যাড়া কথায় ঠোঁট উল্টে নিলো লামিয়া। ব্যথিত দৃষ্টিতে সে রূপলের দিকে তাকালো। অমনি নীহারিকা কোথা থেকে যেন ছুটে এসে লামিয়ার পাশে দাঁড়ালো! হাসি হাসি মুখে সে লামিয়ার পক্ষ নিয়ে রূপলকে বলল,

“জানতে চাননি তো কী হয়েছে? আপু আপনার সাথে পরিচিত হতে চায় দেট’স হোয়াই আপু তার নামটা আপনাকে জানালো। এখন যদি আপুর প্রতি আপনার কোনো ইন্টারেস্ট না থাকে সে অন্য ব্যাপার!”

নীহারিকা তার কথার মাধ্যমে লামিয়াকেও খোঁচা দিলো! উজবুক দৃষ্টিতে লামিয়া নীহারিকার দিকে তাকালো। বিড়বিড় করে বলল,

“নীহা কী আমার পক্ষ নিলো না-কী ইনডিরেক্টলি আমাকে অপমান করল? বোকা পেল নাকী নীহা আমাকে?”

ইতোমধ্যেই উত্তেজিত হয়ে রূপল হঠাৎ হৃদিকে নীহারিকার কোলে তুলে দিলো! লামিয়াকে বিদায় করতে চাইল সে! লামিয়ার উপস্থিতি তার কাছে বিষের মত লাগছে। হাঁসফাঁস করে রূপল তীক্ষ্ণ গলায় নীহারিকাকে বলল,

“নাও। তোমার দুষ্টু মেয়েকে সামলাও! সবসময় আমার ঘাঁড়েই মেয়েকে চাপিয়ে দিবেনা! মা হিসেবে তোমারও কিছু কর্তব্য আছে!”

#চলবে..?