অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব-১৭+১৮

0
597

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ১৭
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

“চো*রের মতো আলোর রুমে লুকিয়ে আছো কেনো? তুমি এতটাই দায়িত্বশীল বউ যে বরকে ঘর মোছার পানি দিয়ে গোসল করিয়েছো!তোমার মতো দায়িত্বশীল বউকে আমি পুরস্কার হিসেবে ড্রেনের পানিতে চোবা*বো। জাস্ট একবার রুম থেকে বের হও তুমি। তোমার বউগিরির ভু*ত আজকে আমি নামিয়ে ছাড়বো। ”

আমি একটু শব্দ ও করলাম না।এখানে আমার দো*ষ কোথায়। আমি তো উনার উপকার করছিলাম। নিচে যে উনি আছেন তা কি আমি দেখেছি নাকি। এবার তো রুম থেকে চোরের মতোকরে বের হতে হবে। আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। আর প্রতি*শোধ নিবো না বাবা।বেশিই করছি আমি।অতিরিক্ত ছ্যা*চড়ামি হয়ে যাচ্ছে।

⭐⭐

বিকেলের দিকে আমার চাচী শাশুড়ী আর ফুফু শাশুড়ীরা সবাই এসেছেন।বাবা,মা, আপু আর আমার বর মশাই তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন।আমিও সেখানে গিয়ে বর মশাইয়ের পাশে গিয়ে দাড়ালাম। দেখলাম অনেক মানুষ। আমি ভেবেছিলাম হয়তো তারা সংখ্যায় তিন চার জন হবে কিন্তু এখানে তো তাদের দু পরিবারের লোকজন মিলিয়ে এগারো জন।ফুফাজী আর চাচা ঈদের পর আসবেন। এখানে ফুফুমনির এক মেয়ে রোজা আর এক ছেলে বউসহ এসেছেন। আর চাচী তার এক মেয়ে কলি ও জমজ ছেলে কে নিয়ে এসেছেন।জমজ ছেলে দুইটা ভিন্ন কোষী জমজ তাই এক জনের সাথে আরেক জনের কোনো মিল নাই।তারা নাকি আমার ব্যাচমেট।রোজা আপু ল’ নিয়ে নিয়ে পড়ছে আর কলি আপু আলো আপুর ব্যাচমেট হয়।আমি যখন সবাই কে পর্যবেক্ষণ করছিলাম তখন কলি আপুর দৃষ্টি লক্ষ্য করলাম। মনে হচ্ছে তিনি আমাকে দেখে অনেক বিরক্ত ফিল করছেন।কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন! তার এমনভাবে তাকানোর কারণ বুঝতে পারলাম না আমি।

এরমধ্যেই রোজা আপু আমায় এসে জড়িয়ে ধরলেন। আমার গাল টেনে দিয়ে বললেন,

_ভাবী তুমি পিচ্চি শুনেছিলাম কিন্তু একেবারে বাচ্চা টাইপের পিচ্চি তা ভাবি নি।এসো বাকিদেরও দেখতে দাও তোমার আদর আদর চেহারা টা।

আমার সামনে দুজন ভদ্রমহিলা আছেন কিন্তু এদের মধ্যে কে ফুফু শাশুড়ী আর কে যে চাচী শাশুড়ী বুঝলাম না।তাই উভয় কেই একসঙ্গে সালাম দিলাম।একদম সুন্দর মহিলা টা আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। মাথায় হাত রেখে বললেন

_এই ড্যাবড্যাব চোখের মেয়েটা বুঝি ধ্রুবর বউ!একদম আমার মায়ের চোখের মতো! একে কোথায় পেয়েছো গো দাদাভাই।

উনার কথায় বুঝতে পারলাম উনি আমার বর মশাইয়ের ফুফু। তার কথায় বাবা মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,

_আমার বন্ধুর মেয়ে।তোকে বলেছিলাম না আমি আমার মায়ের প্রতিবিম্ব পেয়েছি তাই তো দেরি না করে ধ্রুব এর সাথে বিয়ে করিয়ে পারমানেন্ট আমার ছোট আম্মা বানিয়ে এ বাড়িতে নিয়ে এসেছি।

_ভাবি আমার ছোট মায়ের যেন এখানে কোনো ত্রুটি না হয়। মনে রাখবা।আমার আম্মাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে কথা টা বললেন ফুফুমনি।

তাদের আলাপের মাঝেই আঁধার বললেন,

_তোমাদের সবার রেস্টের প্রয়োজন। ইফতারের সময় হতে এখনো দেরি আছে সবাই ফ্রেশ হয়ে আসো। পরে আলাপ করতে পারবে।

তার কথা বলতে দেরি অথচ সবার যেতে দেরি হলো না।বুঝি না এনারে সবাই এতো ভয় কেনো পায়।রোজা আর কলি আপুরা আলো আপুর রুমে থাকবে। হিমেল আর পবন দুই জমজ নীল ভাইয়ার সাথে থাকবেন। আর চাচী,ফুফু গেস্টরুমে থাকবেন।

রাতে আলো আপুর রুমে নীল ভাইয়া সহ সবাই বসে গল্প করছে। আঁধার ভাইয়া নেই হয়তো বেরিয়েছেন। আমিও তাদের মাঝে চেয়ার টেনে বসলাম। তাদের কথা বলার বিষয় হচ্ছে রোজা আপু। রোজা আপুর বিয়ের জন্য দেখতে আসে পাত্রপক্ষ কিন্তু আপু রাজি নন বিয়ে করতে।সবার মাঝে থেকেই নীল ভাইয়া বলে উঠলেন,

_রোজা তুই কি কাউকে ভালোটালো বাসোস নাকি যে বিয়ে তে রাজি হচ্ছিস না?এবারের পাত্র তো অনেক ভালো।বিসিএস ক্যাডার তাহলে রাজি হতে সমস্যা কোথায়? নাকি তলে তলে তুমি প্রেম করছো!

_তোদের মতো বিন্দাস লাইফ নাই আমার যে প্রেম করবো।পড়তে পড়তে আমার অবস্থা টাই*ট হয়ে যায়।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে বইয়ের পাতা গুলো চায়ে চুবিয়ে খেয়ে ফেলি।লয়ার হওয়া এতো সহজ না ভাই।আগে ক্যারিয়ার গড়ি তারপর বিয়েশাদির চিন্তা করবো। খুব বিরসতা নিয়ে বললো রোজা আপু।

_আপু তুমি তো বিয়ের পরেও স্টাডি করতে পারবে। আমি তো কখনো ভাবি নি যে বিয়ের পর আর পড়াশোনা করা হবে কিন্তু দেখো আমিও করছি। রোজা আপুকে উদ্দেশ্য করে আমি বললাম।

আমার কথার উত্তরে রোজা আপু কিছু বলবে তার পূর্বেই কলি আপু বললেন,

_সবার শশুড় বাড়ি তো তোমার মতো নয়।সবার ভাগ্য তোমার মতো হবে এমন কোনো নিয়ম নেই।দেখো তুমি দেখতে শ্যামলা তারপরও আঁধার ভাইয়ার মতো হ্যান্ডসাম ডাক্তার বর পেয়েছো।অথচ ভাইয়া তোমার থেকে সুন্দর, হাই লেভেল এর স্টাইলিশ একটা মেয়ে বউ হিসেবে ডির্সাভ করে।তোমার মতো হাটুর বয়সী মেয়েকে নয়।

_কলি…বেশি কথা বলছো!সব জায়গায় তোমার নাক গলাতেই হয় দেখছি। ও তোমার বয়সে ছোট হলেও বড় ভাইয়ের বউ এটা মনে রাখবা। সম্মান দিয়ে কথা বলবা।আলো আপু ধম*কে কথাটা বললেন।

কলি আপুর কথাটা তী*রের মতো বিধ*লো আমার গায়ে

।আসলে,,,”কিছু মানুষ কখনোই বুঝবে নাহ!আর কখনো বুঝার চেষ্টা ও করবে না যে,
তাদের ব্যবহৃত শব্দ ধ্বনি ধা*রালো অ*স্ত্রের চাইতেও বেশি আ*ঘাত দিয়ে থাকে আমাদের মন-মস্তিষ্কে “।।
সত্যি বলতে একটা কথা আছে না—
“পৃথিবী যখন ঠে*স মারা লোকে ভর্তি তখন অতিরিক্ত আত্মসম্মানবোধের মতো প্যা*রা আর কিছুতে নেই!”

কলি আপু কথাটা সত্যিই বলেছে আসলেই ভাইয়া আমাকে ডির্জাভ করে না। তাই তো ভাইয়া নিজেও আমাকে বিয়ের দিন মানতে পারেনি।থাক ভাইয়া পরবর্তীতে নাহয় better কাউকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিবেন।

কলি আপু আলো আপুর কথায় রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। রোজা আপু তখন আমায় উদ্দেশ্য করে বলেন,

_ওর কথায় কিছু মনে করো না পিচ্চি ভাবী। কলির একটু বেশি প্যাক প্যাক করার অভ্যাস।

_আমি কিছু মনে করিনি আপু।আসলে “নিজের সমালোচনা সহ্য করতে পারাটা সবচেয়ে বড় যোগ্যতা।সবার হৃদয়ে স্থান পেতে হলে নিজের সমালোচনা সহ্য করে যেতে হয়।এটাই নিয়ম। ”

এ কথা বলে রুমে চলে আসলাম।রুমে যে যম*দূত ভয় তা ভুলেই গেলাম।অবশ্য রুমে এসে আঁধার কে দেখিনি। ভালো লাগছে না কিছুই
আমার তো এসব খো*চামার্কা কথা ও বাড়িতে নিত্য শোনা হতো তারপরও কলি আপুর কথাটায় এতো মন খারা*প হচ্ছে কেন! কিছু দিনের অতিথি আমি এই বাড়িতে তাই কলি আপুর কথাটা এতো গায়ে লাগানো ঠিক না।রুমে হেটেও শান্তি পাচ্ছিলাম না তাই বারান্দায় চলে এলাম।উনি এসে যদি বকা দেয় তার বারান্দায় আসার জন্য, দেক।এটাও সহ্য করে যাবো। একটু বিশুদ্ধ শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। রুমের বাতাস বিষাক্ত লাগছে।

আমি গিয়ে দোলনায় বসলাম। আকাশ পানে লক্ষ্য করলাম। চিকন এক ফালি চাঁদ রয়েছে আকাশে। আর তার নিকটেই রয়েছে শুকতারা। এই তারাটাই হয়তো চাঁদের সৌন্দর্য টা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই মনোরম সৌন্দর্য দেখেও আমার ভালো লাগছে না। ভীষণ কান্না পাচ্ছে। মানুষের যখন মন খারাপ থাকে মায়ের কাছে কিছুটা হলেও শান্তি পায়।আমি তো সবসময় মায়ের কাছে বি*ষাক্ত বাণী শুনেছি। এ কথা ভাবতেই ফোটা ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে।
এতোটা দিন পর দেখলাম;
যতই হাসিখুশি থাকতে চাই, তারপর ও মনের মধ্যে জমানো বলতে আমার কেবল দুঃখগুলোই আছে…!

#চলবে

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ১৮
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

_এই মেয়েকে সবাই নিচে ডাকতে ডাকতে কা*হিল হয়ে যাচ্ছে আর সে রুমে বসে কানে তুলো গুঁজে বসে আছে নাকি!আশ্চর্য

আঁধার বিরবির করে বলতে বলতেই রুমে গেল কিন্তু রুমে গিয়ে সে ঐশী কে পেলনা। আঁধার ভেবেই পাচ্ছে না এই রাতের বেলায় ও এই মেয়ে বারান্দা পরিষ্কার এর কাজ চালাচ্ছে নাকি। একজনের উপর ময়লা পানি ফেলে তার শান্তি হয় নি!এবার কার উপর অ*ত্যাচার চালাবে!এসব ভাবনার মাঝেই সে বারান্দায় প্রবেশ করলো।রেলিঙের ধারেও পেলো না। দোলনার দিক টায় যেতেই আঁধার থমকে দাঁড়ালো।তার সময় টা যেন এখানেই থ*মকে গেছে। ভেবেছিল এখানে এসে মেয়েটাকে আচ্ছা ভাবে বকে দেবে।কিন্তু সে স্তব্ধ!

“পৃথিবীতে মায়ার চেয়ে চর*ম দু*র্বলতা আর কিছুই নেই, আর এই মায়াদেবী দোলনায় দুলে তার মায়া বিলাচ্ছে।”
শ্যামবর্ণ চামড়ার মাঝে মায়াদেবী অদ্ভুত রকমের সুন্দর।সে মায়াময়, সে মুগ্ধতা, সে কল্পনার সমাহার। সে মায়াদেবী একান্তই তার তুলনা।চোখ তার যেন সদ্য লেখা কবিতার কথা জমা পদ্ম, তবে তা নীলপদ্ম
মায়াদেবীর নীরবতা ভাষা হলে সে ভাষাই হবে সদ্য লিখিত প্রেমপদ্য!

আঁধারের মধ্যে কি কাজ করছে তা তার জানা নেই, তবে পুরনো এক অনুভূতি তাকে ভীষণ ভাবে পী*ড়া দিচ্ছে।সে এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে নিচে বসেই মায়াদেবীর মুখের কাছেই নিজের হাতের উপর মুখ রেখে নি*রীক্ষণ করছে সেই মায়া কন্যাকে

অ*ভিমানে ভরা বুনোফুলের ন্যায় মুখখানা সেই মায়াকন্যার,যেন রাগিনী। চোখের আ*ঙিনায় ঝরে আছে অনর্থক কিছু অবাধ্য অশ্রুকণা
সেই অ*শ্রুসিক্ত নয়নে শুকোতে চাইছে এক পুরুষ, দাবানলে জ্ব*লে ভ*স্ম হয়ে যেতে চাইছে সে,,মায়াদেবীর কি সে খবর আছে!
সেই অনুভূতি না দেখেই পেয়ে গেলো মায়াকন্যা, আজ*ন্মকালের রেহাই।

আঁধার তার এই অনুভূতির কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা। যতবারই খুজেছে ততবারই ফলাফল শূ*ন্য।রাতের আঁধারে কেনো এই মায়াদেবী এভাবে মায়া বিলাচ্ছে।আবছা নীল রঙের ওড়নার অর্ধেক পড়ে আছে নিচে।কোমড় অব্দি কালো কেশে ঢেকে আছে পুরো শরীর। অগোছালো কিছু চুল মুখে এসে পড়েছে। অথচ তার হু*শ নেই।বেহু*শে ঘুমিয়ে অন্যকে মাতাল করছে সে।আঁধার এক দৃষ্টিতে চেয়ে ভাবছে”সরলতার প্রতিমা” গানটা এই মায়াদেবীর জন্যই গাওয়া উচিত।
“তোমাকে যখন দেখি; তার চাইতেও বেশি দেখি যখন দেখিনা!”
লাইনটা তার জন্যে উৎসর্গ করা প্রয়োজন !
রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ’র ‘খুব কাছে এসোনা’ কবিতা-টাও তারই প্রাপ্য।
কিংবা রবীন্দ্রনাথ এর ‘নয়ন তোমায় পায়না দেখিতে’ তার জন্যে ।
কিছু গান, কিছু কবিতা, কিছু অনুভূতি শুধু নির্দিষ্ট একজন মানুষের জন্যে হওয়া উচিত,তবে কি আঁধার মারাত্মক ভাবে এই মানুষটার প্রতি আসক্ত হচ্ছে!

ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে আমায় কেউ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমি চোখ খুললাম। ভীষণ অবাক হলাম আমি। আঁধার আমারই মুখোমুখি বসে আছে তাও আবার আমার দিকে তাকিয়ে। আমি ঠিক হয়ে বসলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম

_এখানে এভাবে বসে আছেন যে?কিছু দরকার?

_মায়াদেবীকে ভী*ষণ দরকার (মিনমিন করে)

_মুখে রেখে কি কথা বলছেন! কিছু দরকার আপনার?

আমার প্রশ্নে তার ধ্যা*ন ভাঙ*লো। তিনি দ্রুত উঠে দাড়ালেন। গম্ভীর গলায় বললেন,

_খাবার টেবিলে খেতে ডেকেছে মা।বাড়িতে মেহমান আছে তা ভুলে গেছো!নিচে সবাই খুজছে আর মহারানী এখানে বেহু*শ হয়ে পরে ঘুমোচ্ছে।

বাড়ির মেহমানের কথা একদম ই ভুলে গেছি আমি।তখন ভাবতে ভাবতে চোখ যে কখন লেগে গেছে টেরই পাইনি আমি

_sorry,আসলে আমার এখানে চোখ লেগে গিয়েছিল। আর হবে না।

একথা বলে আমি তার পাশ কাটিয়ে নিচে চলে এলাম।

ঐশী নিচে চলে আসার পর আধার নিজেই নিজেকে শুধালো,

_এর আবার কি হলো! সকাল থেকে তো উ*ল্টো পা*ল্টা কাজ করছিলো এখন এতো চুপচাপ! মূহুর্তেই এতো ভালো!বউগিরির ভু*ত তাহলে মাথা থেকে নামছে মহারাণীর।

আঁধার দোলনায় বসে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ভাবছে।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। সে তো বিয়ে টাকে মানতে চায় নি তাহলে কেনো মেয়েটাকে ছাড়া তার এক মূহুর্ত চলে না! কেনো এই মেয়েটার মায়ায় পড়ছে। কেনো মেয়েটাকে নিয়ে এতো ভাবনা তার।মেয়েটার কাছেই থাকলে কেনো তার অদ্ভুত অনুভূতি হয়!

⭐⭐

ডাইনিং টেবিলে সবাই বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।মানুষ যেহেতু বেশি তাই খাবার পার্ট একটু আগেই সারবেন বড়োরা। এরপর সবাই মিলে গল্পগুজব করবেন যেহেতু এতোদিন পর বেড়াতে এসেছেন তারা।ডাইনিং টা বেশ বড় হওয়ার কারণে কারোই বসার অসুবিধা হয়নি।
আমি আর আলো আপু সারভেন্টদের টেবিলে জিনিস আনতে সাহায্য করছিলাম এরই মাঝেই আঁধার এসে বসলেন। আলো আপু ও তার নিজের চেয়ারে বসলেন।তারপর আগমন ঘটলো কলি আপুর।তাকে দেখে রোজা আপু, রোহান ভাইয়া(ফুপির ছেলে), ভাবি প্রায় সবার মুখে বিরক্তির ছাপ দেখা গেলো। মুখে ফেইসপ্যাক লাগানো তার।তা দেখে নীল ভাইয়া আলো আপুকে ফিসফিস করে বললেন,

_গরুর গোবর মুখে নিয়েই আসতে হবে এরে!খাবার খাওয়ার মুডটাই নষ্ট করে দিচ্ছে এই মেয়ে।

কলি আপু এসেই আঁধার এর পাশের চেয়ারটায় বসতে গেলেই আলো আপু বললো,

_কলি,ঐ চেয়ারটা ঐশীর। তুই আমার পাশে বস।

_চেয়ারের গায়ে কি নাম লিখা আছে নাকি, আশ্চর্য!চেয়ার তো সবগুলোই একই। ঐশী কে আজ তোমার পাশেই বসতে বলো।(থম থম গলায় কলি আপু বললেন)

আমি আঁধার কে লক্ষ্য করলাম এক্ষেত্রে তিনি ভ্রুক্ষেপহীন। তিনি তার মতোই ফোন চালাচ্ছেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে ফোন চালানোই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই আমি কলি আপুকে বললাম,

_আপু সমস্যা নেই। তুমি আমার টায় বসো।একথা বলে আমি নীল ভাইয়া আর আলো আপুর মাঝখানের চেয়ারটা টেনে বসে পড়লাম।নীল ভাইয়া আমার সামনে প্লেট এগিয়ে দিতে বললেন,

_এভাবে নিজের অধিকার অন্য কে দিতে নেই, পিচ্ছি ভাবী। আমাদের তোমার জায়গায় ডা*ইনিকে দেখতে কষ্ট হচ্ছে।

ভাইয়ার কথায় আমি আর আলো আপু দুজনেই হেসে দিলাম। নীল ভাইয়া অনেক মজার মানুষ। তার কথা মিনিটেই মানুষের মন ভালো করে দিতে পারে।হাসতে হাসতেই খেয়াল করলাম হিটলার টা রা*গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি এখন কোনো ভুল করছি বলে মনে তো হচ্ছে না তাহলে এভাবে হিং*স্র বিলাইয়ের মতো তাকাই আছে কেনো,আজব!

আমি এক মাত্র খাবার মুখে তুলবো ঠিক ঐ সময়ই হিটলার নীল ভাইয়ার কাছে প্লেট সহ দাঁড়িয়ে বলল,

_নীল, তুই আমার চেয়ারে যা তো।ওখানে ঠিকমতো ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না আমি।আরলি যা,,

নীল ভাইয়া মাত্রই খাওয়া শুরু করেছিলেন। বেচারা বিরস মুখে প্লেট নিয়ে চেয়ার ছাড়তে ছাড়তে বললেন,

_ভাই,তোমার গা থেকে পো*ড়া পো*ড়া স্মেল পাচ্ছি! আমি।তোমার কি কোথাও পুড়*ছে…আর বলতে পারেনি হিটলারের চোখ রাঙা*নির কারনে।কলি আপু বাদে সবাই মিটিমিটি হাসছে।

ফুপি আর বাবার খাওয়া শেষ তাই ড্রইং রুমে দুই ভাই বোন গল্পের আসর জমিয়েছেন। মা ও শেষ করে উঠে যাচ্ছিলেন তখনই চাচী বললেন,

_ভাবী,তোমাদের বাড়ির সবকাজই তো সারভেন্টরা করে তাহলে বউ আর এনেছো কেনো?বউ আমাদের কলির মতো সুন্দর হলে নাহয় ভাবা যেত।এমন রূপহীন -গুণহীন মেয়েকে কি শোপিস হিসেবে সাজিয়ে রাখবে নাকি!

চাচীর কথা শুনে টেবিলের সবাই তার দিকে দৃষ্টি রাখলেন। কলি আপু কে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ খুশি। আমি প্লেটের বাকি খাবার গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। এমনিতেই খেতে ইচ্ছে করছিল না। আর এখন তো চাচীর কথায় পেটের বাকি অংশ ভরে গেছে।মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি আবার বললেন,

_শুনেছি তোমার ছেলের বউ নাকি জবও করে। দেখো আবার অফিসের স্টাফ এর সাথে আবার ভে*গে না যায়।

এতক্ষণ যা চোখের পানি ক*ন্ট্রোল করতে পেরেছিলাম।এবার গড়িয়ে পড়লো দুফোঁটা। মেয়ে আর ঘরের বউতে মানুষ এতো তফাৎ খোঁজ করে কেনো!আরও আগেই উঠে যেতাম টেবিল থেকে কিন্তু এই আলো আপুটা হাত ধরে আছে।কি করবো নিজে প্র*তিবাদ করলে ও বলবে, বউ বড়ো দের সাথে বেয়া*দপি করছে। বাপ-মা সঠিক শিক্ষা দিতে পারেনি,আদব শেখায়নি।

#চলবে