অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব-১৯+২০

0
601

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ১৯
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

_কাকীমনি,বউকে যদি সারাদিন সারভেন্টদের কাজ করতে হয় তাহলে বিয়ে না করে একটা এক্সট্রা সারভেন্ট রাখতেই পারতাম। এতো কষ্ট করে বিয়ে করার কি দরকার ছিল!আর বউয়ের রুপ ধুয়ে কি সবাই পানি খাবে যে বউকে ভীষণ রূপবতী হতে হবে! বউয়ের রুপ-গুণ নিয়ে যদি শশুড়-শাশুড়ীর আর বরের কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে তৃতীয় পক্ষের এতো মাথা ব্য*থার কারণ টা ঠিক বুঝতে পারছি না। তাদের তো কোনো সমস্যা থাকার কথাই না।কারন আমার বউ হয়তো তার জামাইয়ের টাকার খাচ্ছে নয়তো তার শ্বশুর মশাইয়ের টাকার খাচ্ছে, আপনারা তো আমার বউকে ভাত, কাপড় দিচ্ছেন না।তাহলে আপনাদের এতো মাথাব্যথা কেনো আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার এ??
আর রইলো বউয়ের জব করার ব্যাপার,, আচ্ছা কাকীমনি,আপনার মেয়ে তো জব করে তাইনা? তাহলে সে কতোবার অফিস স্টাফদের সাথে ভেগে গেছে,, বলুন তো??কি হলো চুপ করে আছেন কেনো, বলুন কলি কতোবার স্টাফদের সাথে পালিয়েছে?

আঁধারের কড়া কথাগুলো এবং প্রশ্নে কাকীমনির মুখ অপমানে মিয়িয়ে গেল। তিনি মুখ কাচুমাচু করে বললেন,

_আমি তো তোমাদের ভালোর জন্যই বলছিলাম, ধ্রুব। বউ মানুষদের কাজে পটু থাকা ভালো। বউ যদি সাংসারিক হয় তাহলে বাহিরের কাজ করার কি প্রয়োজন আছে। আম,,মি

_আর বলবেন না কাকীমনি, আমাদের ভালো আমরা আপনার চাইতে বেশি বুঝি।আপনাদের মতো মানুষরা কীভাবে একটা মেয়ের সম্মুখে তাকে অসম্মান করতে পারেন আমি বুঝি না।এতো নিচু মন-মানসিকতা কেনো আপনাদের।আপনি এতো শোনালেন অথচ ঐশী চুপচাপ সহ্য করেছে কেনো জানেন, কারণ আপনি গুরুজন। সে যদি কিছু উত্তর দেয় অথবা প্রতিবাদ করে তাহলে আপনারই অসম্মান হবে।মেয়েটা আপনার সম্মানের কথা ভেবেছে আর আপনি তার সম্মানের ফালুদা বানিয়ে দিয়েছেন। আবার বলছেন আমাদের ভালো ভেবেছেন!
কাকীমা শুনুন, বেড়াতে এসেছেন, বেড়িয়ে চলে যান।আমার তাতে বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই কিন্তু অযথাই আমার বউয়ের পিছনে লাগবেন না,তাকে অসম্মান করবেন না।

আঁধার তার খাবারে আবার মনোযোগ দিলেন। কাকীমনি আর টেবিলে বসলেন না। দাড়ানো থাকা অবস্থায় মাকে বললেন,

_ভাবী তোমার ছেলে নিজের বউয়ের জন্য এভাবে আমায় কথা শুনিয়েছে আর চুপচাপ শুনলে?

_তুমিও তো ঐশীকে অনেক শুনিয়েছো। ধ্রুব তো তোমার ভাষায় উত্তর দিয়েছে।আমি তোমাকে যা বলতাম তা ধ্রুবই বলে দিয়েছে।এখানে আমি আর কি বলবো, ছোট!একথা বলে মা ড্রইং রুমে চলে গেলেন।
কাকীমনিও মায়ের পিছু পিছু গেল।টেবিলের বাকিরা অবাক। আলো আপু তো আমায় চিমটি কেটেই বললো,

_বাহহ,কি ভালোবাসা তোমার প্রতি ভাইয়ের। আহা!দেখেই প্রাণ জুড়িয়ে গেল!

আমি একটুও অবাক হলাম না।কারণ, আমি তাকে আমার বাবার বাড়িতে আমার জন্য এর আগেও প্রতি*বাদ করতে দেখেছি।দরজার বাহিরে থাকায় উনি আমায় সেদিন দেখে নি।আমার মা’কেও তিনি কথা শুনাতে ছাড় দেন নি।আমি এসব ভাবতে ভাবতে উনি দাঁড়িয়ে বললেন,

_প্লেটের একটা খাবারও যেন অপ*চয় না হয়।অন্যের রা*গ খাবারের প্রতি দেখালে থা*পড়াবো।অন্য সময় তো মুখ দিয়ে খই ফুটে আর একটু আগে মুখে কি সুপার গ্লু লাগিয়ে রেখেছিলে,ষ্টুপি*ড। প্রতিবাদ করতে পারো নি।আরেকজন উনাকে নিয়ে আজাইরা বিশ্লেষণ করছে আর উনি বসে বসে চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে মহৎ উপাধি অর্জন করছে!ইডি*য়ট কোথাকার বলেই তিনি গটগট করে উপরে চলে গেলেন।

_পিচ্চি ভাবী,ভাই তোমায় নিয়ে ভীষণ possessive তাই আমাদের এখন থেকে সচেতন ভাবে কথা বলতে হবে নয়তো ভাই মে*রে গুম করে দিবে।বলেই আলো আপু সহ হাসাহাসি করলেন।
আমি কোনোমতে খেয়ে এদের পাশ কাটিয়ে রুমে চলে আসলাম।এদের সাথে ফাইজলামিতে জড়ানোর মোটেও ইচ্ছে নেই।

……

ঈদ পেরিয়ে গেছে অনেক ১০ দিন হবে। মেহমানদের মধ্যে বড়রা চলে গেছেন। বাকিরা আরও সপ্তাহক্ষানেক পরে যাবেন। বিকেল বেলায় সবাই মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো।আমি কাপড় নামাতে গেলে রোজা আপু আমাকেও বসিয়ে দিলেন সেখানে। দেখলাম পাশের বিল্ডিং থেকে চারজন এসেছেন আড্ডা দেয়ার জন্য। নীল ভাইয়া গিটার নিয়ে সুর তুলছেন। আর সবাই তাই নিয়ে হাসতে হাসতে রীতিমতো গড়াগড়ি খাচ্ছে।রোজা আপু তারপর বললেন চলো সবাই গানের কলি খেলি।নীল, হিমেল আর পবন এক দল আর আমি, পিচ্চি, আলো, কলি আর বাকিরা সহ একদলে, ঠিক আছে?

_না ঠিক নেই।তোরা অনেক কিন্তু আমাদের সংখ্যা কম তাই আমরা পিচ্চি ভাবীকে আমাদের দলে নিবো।ভাবী তুমি আমার পাশের চেয়ারটায় এসে বসো তো।খরগোশ এর মতো দাত বের করে নীল ভাইয়া বললেন।

এরমাঝেই কলি আপু বললেন,

_তোমাদের এইসব বাচ্চামো খেলায় আমার থাকার ইচ্ছে নেই।আমি গেলাম।

_এবার ঠিক আছে।ডা*ইনি মুক্ত পরিবেশ। বলেই নীল ভাইয়া দাত কেলিয়ে হাসলেন।

_দেখি তোরা আগে গান কর।এরপর শেষ অক্ষর দিয়ে আমরা শুরু করবো। রোজা আপু বললো।এরপর নীল ভাইয়া তার ভ*য়ংকর কন্ঠে গান শুরু করলেন,

“চলে গেছো তাতে কি, নতুন একটা পেয়েছি
তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী,

_ভাই তুই থাম, আর খেলতে হবে না গানের কলি। তুই একেবারে মুডটাই খা*রাপ করে দিছোস।

এরপর তারা ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলা শুরু করেছে। আমিও ছিলাম তাদের মাঝে। ক্রমে সবার পালাই পরেছে। ট্রুথই বেশি নিচ্ছে সবাই।আমার পালা পরায় আমি ডেয়ার নিলাম। কারন এদের বিশ্বাস নেই ট্রুথ নিলে কি থেকে কি জিজ্ঞেস করে বসবে।আলো আপু আমার কাধে হাত রেখে বললো,

_পাটকাঠি তোমার গানের গলা নাকি ভীষণ সুন্দর, তোমার বোন থেকে শুনেছি। তাই তুমি একটা গান শুনাও।নীলের গান শুনতে শুনতে কান পেকে গেছে। ডেয়ার কিন্তু না বলতে পারবানা। আমি পরলাম বিপাকে। ট্রুথ নেওয়া উচিত ছিলো। যদিও স্কুলের অনুষ্ঠানে অনেক গেয়েছি।তাই আর কোনো চিন্তা না করে কয়েক লাইন গাইলাম

মাধবীলতা আমি, আমি কাননবালা
তোমার গানের সুর আমি,আমি গলার মালা
দীঘির জলের রোদ আমি,আমি সাঝের বেলা
মাধবীলতা আমি, আমি কাননবালা(ভুল থাকতে পারে)

সবাই গানের ভীষণ প্রশংসা করলো।নীল ভাইয়া তো হাতে তালি দিয়েই যাচ্ছেন।

_হাজার বছরের পুরনো গান, এসব লেম মার্কা বাংলা গান পাগলেও গায় না। আধুনিক যুগের মানুষ এখন ইংলিশ, হিন্দি গানের আসর বসায়।

পিছন থেকে কলি আপুর ভয়েস শুনে তার দিকে তাকালাম। দেখি পাশে আঁধার ও দাড়িয়ে আছেন। তিনি এখনো তার মোবাইলে ব্যস্ত। এই মেয়েটা দিন দিন বেশিই করতেছে। ইচ্ছে তো করছে কানের নিচে একটা দিতে।সারাদিন মা আর মাইয়া দুটো মানুষের পিছে পড়ে থাকে।তাই আমি বললাম,

_আসলে কি আপু, রুচি বলেও মানুষের একটা কথা আছে। সবার রুচিবোধ তো সমান নয়। দেখো এখানের প্রত্যেকটা মেয়ের পোশাকের কতো শালীনতা অথচ তোমার পড়নে উ*গ্র পোশাক। তোমার রুচি সত্যিই আমাদের থেকে আলাদা। আর আমরা যেহেতু বাঙালি তাই আমাদের পছন্দের শীর্ষে অবশ্যই বাংলা থাকবে।

আমার কথা কলি আপুর যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।

_তুমি কিন্তু বেশি বলছো।অপ*মান করছো আমায়।

_আপনি তো বেশি শুনার মতোই বলেছেন। আপনি যেমন বলেছেন আমিও আপনায় মান দিয়েছে। এটা অপ*মান নয় যোগ্য জবাব।

_wow,,পিচ্চি ভাবী তুমি তো ফাটিয়ে দিলে।এই কলি তুই না নিচে গেসোস তাহলে আবার এখানে কি চাই। থাকলে মুখ অফ রাখ। সারাদিন অন্যের পিছনে লাগিস না।গাইজ,,দেখো অনেক দিন পর আমরা ধ্রুব ভাইকে পেয়েছি সো ভাই এখন আমাদের তাহসানের এক খানা গান শোনাবে।

একথা বলে উনাকে টেনে বসিয়ে দিলেন নীল ভাইয়া। তিনি গাইতে নারাজ। সবাই রিকোয়েস্ট করছে।পবন আর হিমেল তো তার গলায় গিটার ঝুলিয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি রাজি হচ্ছে না।বুঝি না উনি এতো ডং কেনো করছেন। তাহসান এর “আলো” গান টা গাইলেই তো পারছেন। অতঃপর পাশের বিল্ডিং থেকে আসা একজন আপু বললেন,

_ধ্রুব তুই তো আগে প্রত্যেক আড্ডায় গান গাইতি।তাহলে আজকে কেনো না বলছিস!মানলাম সব ফ্রেন্ডরা নেই তো কি হয়েছে! আমার রিকোয়েস্ট টা রাখ। প্লিজ।।

#চলবে

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ২০
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

হারিয়ে গিয়েছো কোথায় কখন,
একটুকু টেরও পাইনি
হারিয়ে যাওয়া প্রহরগুলো তোমার কাছে চাইনি(২)

কাছের তোমায় ঝাপসা দেখি
দূরের তুমি অদৃশ্য
আঁধার কালো মেঘের পাড়ে নির্বাসিত আমি(বাকিটা কাইন্ডলি নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

মনোমুগ্ধকর সুর। মনে হচ্ছে আমি তাহসানের গলায় গানটি শুনছি।কি সুন্দর করে গাইলেন তিনি। ঠিক ধরেছেন, গানটি আঁধারই গেয়েছেন। তার ফ্রেন্ড এর রিকোয়েস্ট তিনি ফেলতে পারেন নি। পুরো টা গান তিনি আমার দিকে চেয়ে গাইলেন।তার দুটি চোখে হয়তো কিছু লেখা ছিল কিন্তু তার সেই চোখের ভাষা পড়তে ব্য*র্থ হয়েছি আমি। হটাৎ সবাই নিচ থেকে চেচামেচির আওয়াজ শোনা গেল। সবাই দ্রুত নিচে নেমে গেল। গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমরা সবাই হতবিহ্বল। বাসার নতুন কাজের আন্টি কোমড়ে হাত রেখে পাশের বাড়ির নীচ তলার ভাড়াটিয়াদের সাথে কোমড় বেধে ঝগ*ড়া করছে।

_তোয়ারার হত্তো বড় সাহস,গেটের দেয়ালের উফর উডিয়েরে অন্যের গাছের আম আর লেবু চু*রি হরোর,গাছ ইডিন তোয়ারার বাফের দিন্না না?জিগিন জিগিন চুরি হোরিও ফেরত দন লাগিবো নয়ত তোয়ারার বাড়ির জমিদারোর কাছে বিচার দিউম দে।

_আরে আমার ছেলেটা বাচ্চা। দু’একটা আম পেড়েছে তাতে এমন কি হয়েছে! আর ও তো প্রায়ই পাড়ে তাতে গাছের মালিকদের কোনো সম*স্যা হয় না। তারা তো ডাক দেয় না। তাহলে আপনি এমন করছেন কেনো? পাশের বাসার ভাড়াটিয়া মহিলা বললেন। তার কথা শুনে কাজের আন্টি যেন আরও ক্ষেপে উঠলেন। কড়াকড়ি ভাবে বললেন,

_তোয়ারা বাজি ভালা হতার মানুষ ন। পোলাপাইনরে লেহাপড়া না শিখাইয়েনে চু*রির শিক্কা দেওর। আবার বড়াই ওও করোর। আই বুজি গেয়ি তোয়ারার জমিদারের তুন বিচার দন লাগিবো অন।

এবার পাশের বাসার ভাড়াটিয়া মহিলা একটা ঝুড়িতে ৬টা লেবু আর ১০-১২টা আম হবে কাজের নতুন আন্টির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

_তুমি অনেক খারা*প মানুষ, তোমার আগের কাজের মহিলাটা অনেক ভালো ছিল

_উচিত হইলে ব্যাক হা*রাপ।

আন্টিটা একথা বলে ঝুড়ি এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

_তুমি নতুন বউ মানুষ তাই তোমার এখন এগুলো দরকার। নেও এগুলো নিয়া যাও(আমি আন্টির চট্টগ্রামের ভাষা বুঝি না তাই তিনি আমার সাথে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন)

তার কথা শুনে সবাই মিটিমিটি হাসছেন। আশ্চর্য এখানে হাসাহাসির করার কি আছে!তাই তাড়াতাড়ি ঝুড়ি টা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগুলাম।

⭐⭐

পরের দিন,,আমি রুমের জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলাম।তখনই উনার ফোনের রিংটোন বেজে উঠল।উনি ওয়াশরুমএ। রিসিভ করবো কি করবো না তা ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেলো। পরবর্তী বার আবার রিংটোন বাজতেই আমি রিসিভ করলাম।

_আসসালামু আলাইকুম

_হ্যালো ম্যাম,আমি Chowdhury & Group company থেকে ম্যানেজার বলছি।মিস আলো রেজোয়ান চৌধুরী এখানের third floor এ প্রচুর ভাং*চুর করছে। দুইজন অলরেডি ইনজু*রড।অনুগ্রহ করে আপনারা উনাকে বাসায় নিয়ে যান।

আমি কিছু বলবো তার আগেই আঁধার বেড়িয়ে আসলো।

_কে কল দিয়েছে?

আমি কিছু না বলে তার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলাম।

_হ্যালো, কে বলছেন?

-…(ওপাশ থেকে কি বললো শুনতে পাইনি)

_ওকে আমি আসছি, আপনারা খেয়াল রাখুন ওর।এ কথা বলে তিনি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতেই আমি বললাম,

_আমিও যাবো আপনার সাথে।

_তুমি সেখানে গিয়ে কি করবে?আমি আলোকে নিয়েই চলে আসবো।তাছাড়া তোমার তৈরি হতেও সময় লাগবে। এতো সময় নেই।

_না প্লিজ আমি যাবো, আমার চিন্তা হচ্ছে আপুর জন্য।আমি ওখানে কিচ্ছু উল্টা পাল্টা করবো না।দয়া করে আমায় নিয়ে চলুন। আমি এভাবেই ঠিক আছি। তৈরি হওয়া লাগবে না। প্লিজ।

উনি কিছু একটা ভেবে বললেন,

_চলো

আমিও দ্রুত তার পিছু পিছু গাড়িতে উঠে বসলাম । আমার আলো আপুর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে।যতদূর জানি ওই কোম্পানিতে আলো আপুর উডবি রবিন জব করেন। কিন্তু আলো আপু সেখানে ভাং*চুর কেনো করবেন! আবার শুনলাম সেখানে কয়েকজন নাকি injured। আলো আপু কেনো এমন করছে।রবিন ভাইয়া ঠিক আছে তো!এসব চিন্তার মাঝেই আমরা সেখানে পৌঁছে যাই।

আমি কোম্পানির নাম দেখেই বুঝেছি তাই উনি নামার আগেই তাড়াতাড়ি নেমে ভিতরে গেলাম।উনি পেছনে ডাকছিলেন। আমি না শুনেই তাড়াতাড়ি লিফটে যাবো তখনই দেখি কারেন্ট নেই তাই লিফট বন্ধ। তাই সিড়ি দিয়েই দ্রুত সেখানে পৌছালাম। সেখানে গিয়ে আমি স্তব্ধ!

রবিন ভাইয়ার মাথা থেকে র*ক্ত ঝরছে, পাশে আরো একজন মেয়ে আছে তার সেইম অবস্থা। আলো আপুকে আঁধারের বয়সি একজন পুরুষ ধরে রেখেছে। আপুর হাতে ফুলদানি রয়েছে।চোখ মুখ ফুলে আছে হয়তো কান্না করেছে।খুব বি*ধস্ত দেখাচ্ছে আপুকে। আমি গিয়ে আপুর সামনে দাড়ালাম। আপুকে ধরে রাখা লোকটা কে বললাম,

,_আপনি আপুকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেনো, ছাড়ুন আপুকে।

লোকটি আমায় বললো,

_আপনি আলোর হাত থেকে ফুলদানি টা নিন।তারপর ছাড়ছি।

আমি আপুর হাত থেকে ফুলদানিটা নিয়ে নিলাম। এবার ওই লোকটা আপুকে ছেড়ে দিলো।আপু ছাড়া পাওয়া মাত্রই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন।

ততক্ষণে আঁধার ও আপুর কাছে এসেছেন। তিনি দাড়িয়েই সামনে থাকা লোকটাকে বললেন,

_ভোর! তুই এভাবে আলোকে আটকে রেখেছিলি কেন? আর তুই বিডিতে কখন এলি!!

লোকটা মুচকি হেসে বললেন,

_গত রোববার এসেছিলাম। আর হ্যাঁ তোর গুনধর বোনকে ধরে না রাখলে সে মি.রবিন আর মোনালিসা কে খু*ন করে নিজের জেলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতো।ওকে সামলা।আই থিংক ও মানসিক ভাবে খুব হার্ট হয়েছে। সামলাতেই পারছিলো না কেঊ। আমি নিজেও হাপিয়ে গেছি। তাই বাধ্য হয়েই ধরে রেখেছিলাম এতক্ষণ।

তাদের কথাবার্তায় বুঝলাম এনারা একে অপরকে আগে থেকেই চিনে।এরমাঝেই খেয়াল করলাম আলো আপু গা ছেড়ে দিয়েছে। আমি তার ভার ধরে রাখতে পারছিলাম না। তাই আওয়াজ দিলাম,

_আপুউউ,,আঁধার দেখুন না,আপু সেন্সলেস হয়ে গেছে। ধরুন আপুকে।

আঁধার তাড়াতাড়ি আপুকে ধরলেন। ওই ভাইয়াটা আপুকে নিয়ে তার কেবিনে যেতে বললেন। আঁধার আপুকে কোলে তুলে নিয়ে কেবিনের ভিতরের সাইড সোফায় শুয়িয়ে দিলেন।আমি গ্লাস থেকে আপুর মুখে পানি ছিটাচ্ছি। কয়েকবার ছিটানোর পর আপুর জ্ঞান ফিরলো।আপু এবার আবারও আমায় জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলেন। আঁধার অনেক জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে জানার জন্য কিন্তু আপুর কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি তাই সামনে থাকা রবিন কলার ধরে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,

_আমার বোনের কি হয়েছে? ও এরকম কা*দছে কেন?তোমাদের মধ্যে কি নিয়ে ঝা*মেলা হয়েছে যে ও এভাবে কাদছে?বলো,

রবিন ভাইয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছেন। কোনো উত্তর দিচ্ছেন না

#চলবে