অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব-৩৩+৩৪

0
580

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী
#পর্বঃ৩৩

_কিরে, স্বামী থেকে কি প*রপু*রুষ ভালো লাগে যে সব ছেড়ে এখানে পরে আছিস? নাকি সবার চোখে ফাকি দিয়ে তলে তলে পর*কীয়া করতেছোস?তোর স্ব*ভাব তো ভালো না।ছোট বেলা থেকেই আলিফ এর পিছনে ঘুরঘুর করতি,এখন আবার তার সংসার এ আগুন জ্বা*লানোর জন্য এখানে আসছোস।মুখ পু*ড়ি তুই কি আমাদের কে শান্তিতে বাড়ি ঘরে ও থাকতে দিবি না?

আপন মায়ের মুখে এসব নে*তিবাচক কথা শুনে নিজের প্রতি নিজেরই ঘে*ন্না হচ্ছে। আলিফ ভাইয়া কে আমি সবসময় নিজের আপন ভাইয়ের চোখে দেখতাম। আর ভাইয়া তো আমাকে তার ছোট বোন ই বলতেন। চাচী মা কখনো আমায় এই ব্যাপার নিয়ে কথা শুনান নি আর আমার আপন মা!!!

যেখানে প্রতিটা মেয়ের কাছের বন্ধু মা হয়। সেখানে উনি মনে হয় আমার নিকটতম শত্রু।তারপর ও মা। মানতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। এমন মা যে নিজের মেয়েকে এসব নিকৃ*ষ্ট কথা শুনাতে ও দমেন না

নিজের চোখের জল গড়াতে দেই নি মুছে ফেলেছি নয়তো এ নিয়েও কথা শুনাতে ছাড় দিবেন না। নিজেকে যথেষ্ট শক্ত করে বললাম,

_চিন্তা করো না মা, আমি পরশু দিনই হোস্টেল এ উঠবো। ভাইয়া ভাবির আর কোনো সমস্যা হবে না। আমি তোমার বাসায় ও উঠবো না তাই এতো প্রেশার নিয়ো না।

_এখন কার মেয়েদের এক বে*ডা*য় হয় না। আমার বাড়ির ত্রিসীমানায় যাতে তোমায় না দেখি কখনো। অনেক অন্ন বস্ত্র দিয়েছি আর দিতে পারবো না।নিজের পথ নিজে বেছে চলো।আমাদের বিয়ে পর্যন্ত দায়িত্ব ছিলো। পালন করেছি।এবার আমাদের মুক্ত কর।

এ কথা বলে মা চলে গেলেন। এখানে এসেছেন একটু আগে। এখানে আসার একটাই যে কারণ তা এখন কার কথাবার্তা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন। যাবো না তার বাড়িতে।

কিছু মূহুর্ত, কিছু ব্যাথা, কিছু অনুভূতি,কিছু কিছু অদৃশ্য আ*ঘাত কখনো কাউকে বুঝানো হয়ে উঠে না, কেবল ধোঁ’য়া’শা’য় মনের গহীন এ জমে থাকে।



রাত ১১:১৮ মিনিট,

বাহিরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।আঁধার এখনো আলিফের বাসার সামনে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার বারান্দায় একপলক মায়াদেবীকে দেখার অবাধ্য ইচ্ছা। সে রা*গের বশে প্রথম থেকেই মেয়েটার সাথে একের পর এক অন্যায় করেই চলেছে। মেয়েটা মুখ ফুটে খুব কমই প্রতিবাদ করেছে।এবার তো তার অভিমান আকাশ সমান।

“এই এক আকাশ পরিমাণ অভিমান এর ভার সে কি করে বইবে!”

তখন ঐশী রেগে বলেছিল,

_আমি যাবো না। আপনি ফিরে যান। বার বার নিজের আত্মসম্মান কে আ*ঘাত করতে পারবো না আমি। আপনার করা প্রতিটি আচরণ,হোক তা ভালো অথবা মন্দ, আমার মনে গেথে গেছে। কিন্তু সেদিন রাতের আচরণ আমার মনে ক্ষত তৈরি করেছে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে আমি চেয়েও থামাতে পারছি না। তাই ফিরে যান।

একথা বলে ঐশী চলে যেতে চাইলে আঁধার তার হাত ধরে ফেলে,

_ঐশী,,তুমি আমার কথা না শুনা পর্যন্ত আমি যাবো না এখান থেকে আমি। প্লিজ, আমায় একটা বার পুরোটা এক্সপ্লেইন করার সুযোগ তো,,,

আর বলতে না দিয়ে ঐশী নিজের হাত ছাড়িয়ে রুমে গিয়ে দরজা অফ করে দিলো।

তারপর থেকেই আঁধার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। ঐশীর মাকে এ বাড়িতে আসতে আবার যেতেও দেখেছে। তার সাথে এসে উনি কথা বলে গেছে।কিন্তু আঁধার কোনো উত্তর ই দেয় নি।

তখন থেকেই এখন পর্যন্ত আঁধার তার প্রেয়সীর অপেক্ষায়। তার মন বলছে সে একবারের জন্য হলেও আসবে। অবশেষে সে দেখা পেল তার প্রেয়সীর,তার দিকে চেয়ে উচ্চ স্বরে বলল,

“তোমায় দেখার তৃষ্ণানায় ক্লান্ত হয়ে অপেক্ষারত দুচোখ, অপেক্ষার এবার অবসান ”

..

বাহিরে বৃষ্টি দেখে মনে পড়লো, আমার কাপড় গুলো বিকেলে বারান্দা থেকে আনি নি, পানির ঝাপ্টায় ভিজে যাবে।কাপড় নেওয়ার সময় খেয়াল করলাম উনি বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে এদিক ফিরে দাঁড়িয়ে আছে।

তাকে এভাবে দেখে ভীষণ মায়া হলো। শত হলেও আমি তাকে একতরফা ভালোবেসেছিলাম।তার প্রতিটি আচরণ এ আমার মনে অনুভূতি সৃষ্টি হতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। উনি তো নিদ্রা আপুকে ভালোবাসেন।

ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। উনার এখন কার আচরণ আমার একদম ভালো লাগছে না। উনি তো চেয়েছেন আমি যেন উনার লাইফ থেকে চলে যাই তাহলে এখন কেন তামাশা করছেন! এসব করে নিজে অসুস্থ হবেন আর দোষ পড়বে আমার।

এই বৃষ্টিতে ছাতা হাতেই গেটের সামনে তার সসম্মুখীন হতে বাধ্য হলাম। বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে ফর্সা চেহারা নীল আবরণ ধারণ করেছে।

_এভাবে বৃষ্টি তে একজন মানুষের গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকলে নিশ্চয়ই মানুষজন আমাকেই মন্দ ভাববে।

সে আমার কথায় ক্ষীণ হাসলো। তার এই অহেতুক হাসি যে আমায় মারাত্মক ভাবে ঘায়েল করে তা কি বুঝেন না তিনি? এই মুহূর্তে এই হাসিরটার কি খুব প্রয়োজন ছিলো। আমার দিকে দুপা এগিয়ে আসলেন, বললেন

_ফিরে গেলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?

আমি তার কথায় তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম,

_দায়িত্বের বেড়াজালে এসব আর করতে হবে না।মনে আছে বিয়ের রাতে আমি কথা দিয়েছিলাম,চলে যাবো! আপনার কথা অনুযায়ী আমাদের ডিভোর্স ছ’মাস পর তো হতোই। আমি না হয় আড়াই মাস আগেই আপনার বাসা থেকে বিদায় নিলাম।
ছ’মাস পর বিদায় হওয়া আর এখন নিজ থেকেই বিদায় নেওয়া একই কথা ডাক্তার সাহেব। তাহলে এই কয়েক দিনের জন্য কেন আবার আপনার সাথে আমাকে জড়াচ্ছেন।আপনি তো আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে দিব্যি আছেন। দুদিন পর বিয়ে করে সুখেই থাকবেন। তাহলে আমায় মাঝখানে কেন আনছেন? আমার লাইফ টা নিয়ে খেলে কি মজা পাচ্ছেন?

আমায় কথায় তিনি নিশ্চুপ। খুব মনোযোগ সহকারে কথা শুনছেন।কিন্তু কোনো উত্তর নেই তার কাছে।তাই আমি আবার বললাম,

_ভাববেন না অভিমান করে বেড়িয়েছি। ” যেখানে আমাদের সম্পর্ক টাই নড়বড়ে সেখানে অভিমান করা টা বড্ড হাস্যকর দেখায়।”এই জোরালো বৃষ্টিতে বাহিরে আপনি,মা নিশ্চয়ই আপনার জন্য চিন্তা করছে ।সে তো আপনার জন্য আপনার জন্মদায়িনী নারীর থেকে ও বেশি করেছে। তার কথা ভেবে বাসায় চলে যান।বেশি ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

এ কথা বলে আমি নিজের হাতের ছাতা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে এলাম।তার কোনো উত্তর এর অপেক্ষা করলাম না। ভালো থাকুক সে অন্য কারো সাথে।

আঁধার ঐশীর যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো। নিজের দোষেই তার কাছে ঐশীর বলা কথাগুলোর উত্তর নেই। বিয়ের রাতের কথা গুলো ধরে এই মেয়ে তাকে এখনো ভুল বুঝে আছে। এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়া দরকার। নিদ্রা কে নিয়েও মেয়েটা তাকে ভুল বুঝেছে।সব কিছুর ই অবসানের প্রয়োজন। অনেক কিছু আছে যা তার প্রেয়সীর অজানা তা জানানোর সময় হয়েছে। আঁধার ছাতাটা বন্ধ করে বুকে চেপে ধরলো।বললো,

_জানি,অপ্রকাশিত ভাবেই ভালোবাসো আমায়। চোখের ভাষা জানান দিয়েছে আমায়। জানো তো মায়াকন্যা,

বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে ছিলো খুব তোমার সাথে,
আজ তা পূর্ণ হয়েও অপূর্ণ রয়েছে কিছু ইচ্ছে
একদিন, সারাদিনের ঝুম বৃষ্টির মাঝে
তুমি-আমি; কাক ভেজা হয়ে ভিজবো।

জানও তো প্রেয়সী,
বৃষ্টি হলেই তোমায় ভাবি খুব করে।
তোমায় ভেবে ভেবে আমি খুন হয়ে যাই;
প্রতিটা মুহূর্ত।

আজ যদি তুমি আমার হতে,
তোমায় নিয়ে বৃষ্টির মাঝে হারিয়ে যেতাম;
খুব করে।
ভালোবাসতাম; খুব করে।

ভালোবাসি,
বড় বেশি ভালোবাসি।
দ্বিতীয় বারের মতো হারাতে দেবো না তোমায়।
খুব শীগ্রই মন পিঞ্জিরায় বন্দী করে নেবো তোমায়,
চেয়েও মুক্ত হতে পারবে না তুমি,,,

….

আঁধার কে ছাতা বুকে জড়াতে দেখে কেন যেন মনে জ্বা লা সৃষ্টি হলো,এমনিতেই অনেকক্ষণ ভিজেছে।তার উপর রাগ লাগলো ,,

_ছাতা দিসি বৃষ্টি থেকে বাচার জন্য আর বনমোরগ ছাতা কে বউ বানিয়ে রোমান্স করছে।বৃষ্টি ভিজে নিজেকে শাস্তি দিচ্ছে নাকি আমাকে!!

রুমে এসে নিজের ভেজা কাপড় পাল্টে নিলাম। মাথা ব্যথা করছে। রাতে জ্বর আসবে হয়তো। উনার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে গেছে টের পাইনি ।



মিসেস রেজোয়ান এর হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ার কারণে আলো কল করে তার ভাইকে তাই আঁধার কে তখনই যেতে হয়।

সকালে সায়মার ডেকে ঘুম থেকে জাগালো। আমি আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলাম। মাথাটা ঘুরতেছে।মনে একটাই প্রশ্ন সে কি এখনো আছে!!

_জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দিবি কিভাবে? তুই জানিস না বৃষ্টি তে ভিজলে তোর জ্বর আসে তাও দুলাভাই কে ছাতাটা দিতে গেলি কেন!জামাইয়ের জন্য এতো দরদ তো তাড়াই দিসোস কেন! তার সাথে সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতি।

_সম্ভব না।তুই আমার জায়গায় থাকলে বুঝতি। আমি তো শুধু আমার দেয়া কথা রাখছি।

এ কথা বলে আমি ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

পরীক্ষা কোনো রকমে দিয়ে হল থেকে বের হলাম।

_কিরে সুন্দরী, পরীক্ষা কেমন হইছে?আর এইরকম মরা মাইনসের মতো হাটতেছোস কেন?

মিমের প্রশ্নের উত্তর এ বললাম,

_আর বলিস না, সকালে তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে জ্বরের মেডিসিন নেই নি। এখন পরীক্ষা দিতে খবর হই গেছে,ভাই।

_আরে আস্তে,, ” বইন” বল।মানুষ তোর ভাই কওয়া শুনলে আমারে মেয়ে না, অন্য কিছু ভাববে।

মিমের কথা শুনে বেলা হেসেই বলল,

_আমরা কিন্তু তোরে অন্য কিছুই ভাবি, আন্ডা।

_আমি অন্যকিছু হইলে তুই হিজরা। তুই তো মানুষের দরজায় গিয়ে বলোছ,”এই টাকা দিবে,নাকি খুলে ফেলবো”।

_আন্ডার বাচ্চা ডিম, তোর বাপের ডিম, তোর আটাশ গুষ্টি হিজরা।

ব্যাস শুরু এই শয়তান কোম্পানির ম্যানেজার দুই টার প্যানপ্যানানি। আমার আর কি করার এদের প্যাকপ্যাক শুনতে শুনতেই চকবাজার পর্যন্ত আসলাম। কিন্তু এদের থামার কোনো নাম নাই।আমি বেলার পাশেই ছিলাম। হঠাৎ নাকের মধ্যে কেউ কিছু চেপে ধরলো। অনেক ছোটার চেষ্টা করলাম। লাভ হয় নি। তারপর চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে এলো আর মনে নেই।

#চলবে

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী
#পর্বঃ৩৪

_এভাবে আমাকে কি*ডন্যাপ করে আনার মানে কি, ডাক্তারসাহেব?

আমি যখন চোখ খুললাম দেখলাম কপালে জলপট্টি। পাশে তাকিয়ে দেখি আঁধার ফোনে কথা বলছে। ফোন রাখতেই তাকে জিজ্ঞেস করলাম কথাটা

_নিজের বউকে কেউ কি*ডন্যাপ করে নাকি!ষ্টু*পিড !বউ অসু*স্থ তাই সেবা করে সু*স্থ করার জন্য নিজের কাছে এনেছি।

তার ধমকে আমি ভ্যা*বাচেকা খেলাম। একে তো এখানে এভাবে এনেছে আবার মেজাজ দেখাচ্ছে! তারপর সে জ্বর চেক করে দেখলো,

_আগের তুলনায় এখন অনেক কমেছে।উঠো ফ্রেশ হও দ্রুত।এরপর খাবার খেয়ে মেডিসিন নিবে।

উনি গম্ভী*র গলায় বললেন। এবার আমার রাগ লাগলো। আমি বিছানা থেকে নেমে দাড়ালাম। বললাম

_আপনি আমাকে এটা কোন জায়গায় এনেছেন? আমি বাসায় যাবো। ভাইয়া চিন্তা করছে আমার জন্য।

সে আমার কো*মড় জড়িয়ে তার দিকে টেনে নিলেন,

_আমার বউ এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে, তোমার ভাইয়া আমি জানিয়ে দিয়েছি।তাই চিন্তা মুক্ত থাকবে সে।

আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,

_বউ তাও আবার ছ’মাস এর তাইনা, ডক্টর এ.আর.সি?দেখি ছাড়ুন,, কেন করছেন এসব!কি লাভ পাচ্ছেন? আপনি তো চেয়েছেন আমি যেন চলে যাই তাহলে?ছাড়ুন আমাকে।নতুন করে আর কি চান আপনি!এখুনি আমি চলে যাবো এখান থেকে। আটকে রাখতে পারবেন না আপনি।

সে তো ছাড়লোই না বরং আরও তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগী স্বরে বললেন,

_তুমি বুঝো না আমি কী চাই?নাকি বুঝেও না বোঝার অভিনয় করছো?বিয়ের রাতের বলা কথাগুলোর প্রতিশোধ নিচ্ছো তুমি?আমার অনুভূতির কোনো মুল্য নেই তোমার কাছে?

শুনো মেয়ে,, আমার তোমাকে চাই। তোমায় সারাজীবন এর জন্য নিজের করে রাখতে চাই।পারছি না তোমার অনুপস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে।তাই তোমাকে লাগবেই আমার।তুমি আমার কাছে থাকতে না চাইলে বেধে রাখবো। আজীবন ব*ন্দী করে রাখবো।

তার কথায় আমি অবাকের চূড়ান্ত পযার্য়ে। কি বলছেন উনি!উনি তো নিদ্রা আপুকে ভালোবাসেন তাহলে আমি দরকার কেন!

_বললেই হলো বন্দী করে রাখবো! আমি থাকলে তো রাখবেন! এখান থেকে এখুনি চলে যাবো।কোনো ইচ্ছে নেই এমন রাগী কন্ট্রোল লেস মানুষের সাথে থাকার। থাকবোনা আপনার মতো মানুষ এর কাছে। আর আপনি তো নিদ্রা আপুকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে আবার কেন দরকার! কয়টা লাগবে আপনার!

আমার কথায় সে চোখ মুখ শক্ত করে বললেন,

_তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। এতে তোমার ইচ্ছা থাক বা না থাক আই ডোন্ট কেয়ার।আর হ্যাঁ, আমার শুধু তোমাকেই লাগবে।আর কাউকে না। কিন্তু তুমি তা বুঝবা কিভাবে! তোমার তো মাথায় সব কাদা।কিছুটা গোবর থাকলে তাও কাজে লাগানো যেত।

এ কথা বলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। আমি আহাম্মক এর মতো দাড়িয়ে আছি।উনি কি আমাকে ভালোবাসে!আমি এবার সত্যিই কনফিউজড!!




আলো নিজের রুম গোছাচ্ছিল। এতক্ষণ বেকার সমাজ তার রুমের বেহাল অবস্থা বানাই ফেলছে।তার মা ঠিকই ছিল। আধারকে বাসায় আনার জন্য মিথ্যে বলেছিল সে। হঠাৎ দরজা লক করার শব্দে সে পিছনে ফিরে তাকালো।ভোর মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

_আরে তুমি এখন এলে যে?তোমার তো কাল আসার কথা ছিল!

ভোর আলোর কাছে এসে তার কাধে হাত রেখে বলল,

_তোমায় ভীষণ মিস করছিলাম তাই একপলক দেখতে চলে এলাম। তোমায় কিন্তু লাল জামায় ওড়না ছাড়া ভীষণ গরম সুন্দরী লাগছে!

ভোরের কথা আলোর বোধগম্য হতেই সে চোখ বড় বড় করে ফেললো।এক ধাক্কায় তাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো

_ছি!কথার কি ছিরি তোমার!বিদেশের হাওয়া গায়ে লাগলে এমনই হয়।দূরে থাকো

_আশ্চর্য, ছি বলছো কেন? আমি বউকেই বলছি। অন্য মেয়েদের তো নয়!

_অন্য কাউকে বলে দেখো শুধু একটা বার,তোমায় খুন করে ফেলবো আমি।

ভোর এবার আলোর কাছে এসে তাকে নিজের কাছে একদম টেনে নিলো।আলো তার এই আচরণে কিছুটা নড়েচড়ে উঠে ।ভোরের স্পর্শ যেন তাকে শিউরে তুলছে।ভোর আলোর নাকে নিজের নাক ঘসে দিয়ে বলল,

তোর এতটা মায়াভরা হাসির মাঝে কি আমি আছি?
নাকি পুরোটা জুড়েই কেবল মাদকতা?
যদি ছুঁয়ে দিই তোর ঠোঁট?
চোখ ভাঙা ঘুমে ভালোবাসবি? প্রচন্ড?
নাকি কেবল ভালোবাসার অবরোধ?

আলো অস্পষ্ট স্বরে বলল,

_এখন অবরোধ,,

_আমি এই অবরোধ আজ মানতে পারলাম না, প্রিয়তমা।

একথা বলে ভোর তার প্রিয়তমার শুষ্ক অধর যুগল তার অধরের মাঝে মিলিয়ে দিলো।

।।
।।
।।

আমি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখি আঁধার রুমে খাবার নিয়ে এসেছে।আমাকে দেখে বললো,

_এসো, বসে দ্রুত খাবার কমপ্লিট করো।

_আমি খাবো না।বাসায় যাবো। আমাকে ওই বাসায় দিয়ে আসুন।

আমার কথায় সে বসা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। যা দেখে আমি কিছুটা ভরকে গেলাম। সে আমার বরাবর দাড়িয়ে বললো,

_ত্যাড়ামী করছো!ওকে ফাইন।খাবার খেতে হবে না। আসো আমার আদর খাও। তাতেই পেট ভরে যাবে।

একথা বলেই আমার গায়ের ওড়না ধরতেই আমি হকচকিয়ে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম,

_লাগবেনননা।আমি খাবার খাবো। আমার খিদে পেয়েছে।

বলেই আমি দ্রুত সোফায় বসে প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।এই মানুষ ভীষণ ভয়ংকর হয়ে গেছে। সাংঘাতিক রকমের কথাবার্তা বলতেছে।আমার দ্রুত খাওয়া দেখে সে বলে উঠলো,

_আজকাল ভালো মানুষের দাম নেই।চেয়েছি তোমায় বুঝিয়ে ভাইয়ের বাসা থেকে নিয়ে আসবো কিন্তু তুমি তো ঘাড় ত্যাড়া। তোমার মতো ত্যাড়া কে কিভাবে লাইনে আনতে হয় তা ভালো করেই জানা আছে আমার।এবার এই মেডিসিন গুলো খাও।

তার কথা শুনে আমার গা জ্বলে উঠলো। ব্যাটা শয়তান, আমাকে একা পেয়ে খুব হুকুম চালাচ্ছে।একবার এখান থেকে পালাতে পারি তারপর তোর ত্রিসীমাও আর ঘেঁষবো না। শালা লেজ কাটা বাদর, পরীমনির আট নাম্বার জামাই,মিথিলার তিন নাম্বার প্রেমিক। দুনিয়ায় সব গালি তোর।

খাবার শেষে উনি সব জিনিসপত্র নিয়ে রুম ত্যাগ করলেন। আমি দরজায় গিয়ে দেখি লক করা। কেমন লাগে এভাবে বন্দী করে রাখার মানে কি!আশ্চর্য!!

….

বিকেলের দিকে আঁধার রুমের দরজার লক খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। বিছানায় তাকিয়ে দেখলো ঐশী গুটিসুটি হয়ে ঘুমোচ্ছে।এতো বড় বিছানায় তাকে নিতান্তই ক্ষুদ্র মানবীর মতো লাগছে।একদম ছোট্ট একটা বাচ্চার মতো। সে এসে তার মুখ বরাবর বসলো, কপালের অবাধ্য ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে কানের পাশে গুজে দিলো।তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,

মায়াদেবী,
তুমি তো জানো না,,সেই কবেই আমার হৃদয় জুড়ে নিজের অজান্তেই অধিপত্য বিস্তার করছো তুমি!
মায়াকন্যা,
আমি তোমার ঠিক ততটাই কাছে থাকতে চাই। যতটা কাছ থেকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তোমায় আমি আজীবন দেখতে পারি।
বাতাসে তোমার ঠোঁটের উপর আছড়ে পড়া অবাধ্য কুন্তল সরিয়ে তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে পারি।

কোমললতা,
নেবে অতটা কাছে; তোমার?
আমার যে প্রচন্ড ইচ্ছে হয়; তোমায় ভীষণ ভাবে ভালোবাসার।

প্রেয়সী
ভালোবাসি; বলে দিলাম আরো একবার।

#চলবে