অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু তুমি পর্ব-৩৭+৩৮

0
642

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ৩৭
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

ভিডিওটা প্লে করতেই দেখলাম একটা বা*জে দৃশ্য। একটা পুরুষ আর একটা মেয়ের ঘ*নিষ্ঠ কিছু মুহূর্ত। চোখ মুখ কুচকে এলো আমার।ফোনটা আঁধারের সামনে ধরে বললাম,

_ছি,কিসব আজেবা*জে জিনিস দেখাচ্ছেন!এগুলো দেখে আমি কি করবো! ছি!ছি!কিসব বা*জে জিনিসপত্র আপনার ফোনে!!আমার চোখটাই নাপা*ক করে দিয়েছেন।

আমার নাক মুখ কুচকাতে দেখে আঁধার বলল,

_ঐশী, আমি জাস্ট একটা কুয়েশ্চন করবো, মন আর মস্তিষ্ক দুটো ব্যবহার করেই উত্তর দেবে। কিছু মুহুর্তের জন্য মনে করো,এই ভিডিও যেই পুরুষটা আছে সেটা তোমার বর।

আমার মুখের বিস্ময়কর রুপ দেখে সে বলল,

_আমি কিন্তু বলি নি যে এখানের পুরুষ টা সত্যিকারের আমি। আমি জাস্ট মনে করতে বলেছি।ধরো এই ভিডিও ফুটেজ টা তোমার কাছে তোমার আর তোমার বরের বিয়ের দিন বিয়ের সকল কার্যাবলী শেষে পাঠানো হয়েছে। তুমি দেখছো তোমার সদ্য বিবাহিত বর কিভাবে অন্য নারীর সঙ্গে ঘনি*ষ্ঠতায় মক্ত রয়েছে।এসব দেখার পরওও কি তুমি সেই রাতে তোমার বরের সাথে বাসর করবে??বলো?এতকিছু জানার পর ওও কিছু বলবে না তোমার বরকে??

ভিডিও দেখেই আমার গা ঘি*ন ঘি*ন করে উঠেছে। তার উপর আবার উনার এরকম প্রশ্নে গা গুলা*চ্ছে।কিভাবে নিজের বরকে এ অবস্থায় দেখার পর আবার এর সাথে সংসার করবো।আমি তো একে জুতা পে*টা করবো।আবার বাসর!তীক্ষ্ণ মেজাজ নিয়েই বললাম,

_ছি!আমি তো জুতা পে*টা করবো। তাকে সাথে সাথেই তালা*ক দিয়ে দিবো।জে*লের ভাত খাইয়ে ছাড়বো আমি।তার মুখ আর ইহজন্মেও দর্শন করবো না। আবার বাসর!

__কি বলেছো তা মনে রেখো কিন্তু! পরে আবার উল্টে যেওনা।

এ কথা বলে আঁধার পুনরায় ফোনটা আমার সামনে বরাবর ধরে বললেন,

_ এবার ভিডিওটা কত তারিখে সেন্ড করা হয়েছে আর এখানে যেই মেয়েটা আছে তার চেহারাটা কষ্ট করে দেখো।

মেয়েটির চেহেরা খেয়াল করতেই সেই চেহারায় নিজেকে দেখে আমি চমকই উঠলাম। এটা কীভাবে সম্ভব! আমি এই অবস্থায় একটা পুরুষের সাথে কিভাবে কি!যেখানে আমি আজ পর্যন্ত কোনো রিলেশন ই করিনি সেখানে এগুলো কি!আমি অবিশ্বাসের সাথে বললাম,

_এখানে মেয়েটার চেহারা তো পুরো আমার চেহারার মতো। এটা আআমি না। বিশ্বাস করুন।এখানে আমি! এটা কীভাবে সম্ভব! আর এটা তো আপনাকে আরোও প্রায় তিন মাস আগে পাঠিয়েছে! কিন্তু এরকম একটা বিশ্রী ভিডিও আমি! বিশ্বাস করুন আঁধার, এখানে মেয়েটার চেহারা আমার মতো হলেও আমি এটা নই।

নিজেকে এরকম বাজে ভাবে দেখে একপ্রকার কান্না করতে করতেই বললাম।

আমার কথা শুনে আঁধার কিছুই বলে নি।ফোন টা তার কাছে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘেটে তারপর আবারও আমার সামনে ধরলেন। অন্য আরেকটা নাম্বার থেকে সেইম দিন আরোও একটা ভিডিও ফুটেজ পাঠান রয়েছে। এখানে আমার ভিডিও। এটা অন্য আরেকটা ছেলের সাথে ক্লাবে ডান্স করছি।সাথে অনেক মেসেজ।যেখানে লেখা আছে আমি নাকি আঁধার কে টাকার জন্য বিয়ে করছি।আমি এসব প্রতারণা মূলক কাজ আরও অনেকের সাথে করেছি।আরও অনেক বাজে মন্তব্য!

আমি এসব দেখে রীতিমতো কাপছি।

ভিডিও টি অফ করে এবার আঁধার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

__এগুলো আমাকে বিয়ের দিন রাতে পাঠানো হয়েছিল। এমনিতেই আমার বিয়েতে মত ছিলো না সেটা তো তুমি জানতেই। তোমাকে তো আমি কল দিয়ে জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।

আঁধার এর শেষের কথাটায় কেনো যেন আমার হৃদয়ে অদৃশ্য রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে।আসলে স্বামীর মুখ অন্য কে ভালোবাসার কথা শুনা যেকোনো স্ত্রীর জন্য বেদনাদায়ক।আমি নিরুপায় ছিলাম নয়তো কখনোই জানার পর ও তাকে বিয়ে করতাম না।

আঁধার কিছুক্ষন থেমে পুনরায় বলা শুরু করলো,

__বাবার উপর কথা বলার স্পর্ধা কারোই নেই। তাই আমি তোমাকে বলেছিলাম বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কথা। এরপর ও আমাদের বিয়েটা হয়েছিল। তারপর আবার এইসব ভিডিও,মেসেজ । কিছুতেই মানতে পারছিলাম না।কোনোভাবেই তোমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারছিলাম না।আর যাই হোক কোনো চরিত্র খারাপ মেয়ের সাথে তো জীবন পরিচালনা করা যাবে না।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দিবো। তাই তোমাকে সেদিন রাতেই জানিয়ে দেই।
তবে তোমার সাথে অনেক রুডলি কথা বলেছিলাম এই জন্য আমি দুঃখিত। সেদিন আমার বিচ্ছুদল ফ্রেন্ড গুলো আমার অজান্তেই এলকোহল সার্ভ করেছিলো। I was drank that time.নয়তো ওরকম ব্যবহার করার কোনো উদ্দেশ্যই আমার ছিলো না।
আর পরেরদিন সকালে বারান্দায় তোমাকে নিজের সামনে কফি হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল আমার।যেখানে আমার বারান্দায় সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ সেখানে তোমাকে দেখে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি। তাই মগটা ফেলে দিয়েছিলাম।কিন্তু দূর্ঘটনাবসত হাতের ধাক্কায় কিছু অংশ তোমার হাতেও পড়েছিল।
পরবর্তী তে মনে হয়েছিলো তোমার সাথে অন্যায় করছি।তোমার ব্যক্তিগত জীবন। সেখানে তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো। এমনিতেই তো ডিভোর্স হয়েই যাবে। তুমি হয়তো নেতিবাচক ভাবে চলছো তাতে আমার কি!
তবে আমি সকালের দূর্ঘটনার জন্য তোমাকে সরি বলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে পুরোপুরি ভাবে ইগনোর করেছো।

এবার তুমি বলো আমার জায়গায় তুমি থাকলে কি করতে?আমি চরিত্রহীন যেনেও সব কিছু মেনে নিয়ে আমার সাথে সংসার করতে?

তার সব কথা শুনে মনে হলো এসব এর পেছনে কেঊ আছে।কিন্তু এই ভিডিও গুলো!এসব চিন্তার মাঝেই আমি বললাম,

__কিন্তু এগুলো তো আমার ছিল না। এখানে আমি কিভাবে!!

আমার কথার মাঝেই আঁধার বললো,

_ ভিডিওগুলো এডিট করা। প্রথম দিন আমিও বিশ্বাস করিনি।কিন্তু রিসিপশনের দিন রাতে তোমার রুমে কিছু একটা দেখার কারণে কারণে আমার সন্দেহ হয় যার প্রমাণ পেতে একমাস দেরি হয়ে ছিল। এছাড়াও আরাফের বার্থডে পার্টির দিনও কিছু ছবি তোমার আর নিশান এর অন্য আরেকটা নাম্বার থেকে আমার কাছে এসেছিলো। সেদিন ছবি গুলো দেখে মনে হয়েছিল আমার এগুলো ঐ ভিডিও পাঠানো ব্যক্তি পাঠিয়েছে।রাগ লাগছিলো সেই ব্যক্তি কে খুঁজে বের করে খুন করতে ইচ্ছে করছিলো। তোমাকে দেখলাম পার্টিতে নিশানের সাথে হাসাহাসি করছিলে। তার উপর আবার নিশান তোমাকে স্পর্শ করতে দেখে মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছে। সহ্য করতে পারিনি নিশান এর সাথে তোমাকে। এরপর ও নিজের রাগ কন্ট্রোল করে জাস্ট তোমাকে বকেছি।কিন্তু তুমি শেষ কথাটা কি বলেছিলে!তুমি অন্য ছেলের সাথে!! এটা নিতে পারিনি আমি তাই গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হয়েছি।যেখানে তোমার গায়ে একটা মশাকে সহ্য হয় না আমার সেখানে তোমার সাথে অন্য ছেলে!! এই ব্যাপার এ কোনো ছাড় দিতে পারবো না আমি।এরকম কথা আর মুখে আনতে শুনলে মুখে আগুন জ্বালিয়ে দিবো আমি।

তার কথায় এবার আমি কনফিউজড! তাই বললাম,

__আপনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসতেন আমায় না,তাছাড়া আমার সাথে সংসার করতেও ইচ্ছুক ছিলেন না তাহলে কেনো আমি খারাপ জেনেও ইনফরমেশন গুলো ফেইক তার প্রমাণ খুজতে গেলেন কেনো?আপনি চাইলে এখনো আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আপনার সেই ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে পারেন।কিন্তু আপনি আমাকে কেন একটু আগে ভালোবাসি বললেন? আপনি তাকে কেমন ভালোবাসতেন যে আমায় পেয়ে তাকে ভুলে গেছেন?

আমার প্রশ্নে সে মুচকি হেসে আমার কোমড় জড়িয়ে তার কাছে টেনে নিলেন। তার বাহুডোর এ আবদ্ধ করে বললেন,

__আমি তাকে তো ভুলিনি। তুমি তো তাকে তোমার মাঝে নিত্যনতুন করে সাজিয়ে তুলেছো।তোমার প্রতিটি কদম তার উপস্থিতি আমার সামনে তুলে ধরেছে। না চাইতেও সেই পুরনো অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছে।তোমার ছায়াতে আমি তার পূর্ণ রুপ খুঁজে পেয়েছি। সে যদি আমার অবিছিন্ন অনুভূতি হয় তবে সে #অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি। তোমার মাঝের তুমিটাকে ভুলি কি করে বলো তো?তুমি তো সেই পুরনো অনুভূতি। তোমাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। ভালোবাসি তোমায়, আজীবন বাসবো।

আমি স্তব্ধ। তার থেকে সরতে গেলে সে বাহুবন্ধনী জোরালো করে বললো,

__আমি তোমাকে ভুলি নি,আমার হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি সত্যিই জানতাম না তুমিই আমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা। আর ছেড়ে যেওনা। তোমাকে ভুলে থাকা অসম্ভব। আমি কীভাবে আমার হৃদয়ের স্পন্দন ছাড়া থাকবো বলো।এক বার হারিয়ে জীবিত লাশ হয়ে ছিলাম। আর আর হারাতে চাই না।ভীষণ ভালোবাসস,,,

আর শুনতে পেলাম না তার আগেই লুটিয়ে পড়লাম তার গায়ে।




আঁধার আমার জোর করেই গোবরের আইসক্রিম খাওয়ানোর চেষ্টা করছিলো,

__প্লিজ আঁধার বিশ্বাস করুন আমি আর জীবনেও পালানোর চিন্তা করবো না। তাও এই বিচ্ছিরি জিনিস আমাকে দিয়েন না।আমার ভুল হইছে আর পালাবো না। তাও এটা সরান সামনে থেকে। প্লিজ

__না,প্রাণপাখি আমি আর বিশ্বাস করতে পারবো না।দোষ যখন করেছো তখন শাস্তি তো পেতেই হবে তোমায়

এ কথা বলেই গন্ধযুক্ত গোবরের সেই বিচ্ছিরি জিনিস জোর করেই আমার মুখে দিয়ে দিলেন

_ওয়াক থু!ছি!!থু থু!

জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি।নিজেকে বিছানায় দেখে বুঝলাম স্বপ্ন দেখছিলাম। বাবা এরকম ভয়ানক স্বপ্নও মানুষ দেখে।ছি!কি বিদঘুটে!!! পাশে তাকাতেই আমার আত্মা কেপে উঠলো।আঁধার আমার দিকে হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে।তার টিশার্ট ভর্তি থুথু।আমি তার দিকে তাকাতেই তিনি বলে উঠলো,

_ঘুমের মধ্যে থুথুর বৃষ্টি ঝড়াচ্ছো কেনো তুমি? আর গোবর কোথায় পেয়েছো?
তার প্রশ্নের উত্তর এ আমি কি বলবো! ।এরকম সাংঘাতিক একটা কাজ কীভাবে করলাম আমি! এবার তো এইলোক আমাকে সত্যি সত্যিই গোবরের আস্তানায় ফালাই আসবে!উনার দিকে আর না তাকিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম।

ওয়াশরুম থেকে বেশ কিছুক্ষন পর বের হলাম। রুমে বেরিয়ে যা দেখলাম তাতে আমি হতবাক। যেই মানুষকে আলো আপু দেখতে পারে না তাকে সাথে করেই সে সোফায় হাসতে হাসতে রীতিমতো গড়াগড়ি খাচ্ছে।আঁধার কে দেখতে পেলাম না আমি।

_আলো আর নিদ্রা আপু তোমরা দুজন একসাথে! তাও আবার এখানে?

আমার প্রশ্নে আলো আপু আমার কাছে এসে আমার মুখ টেনে দিয়ে বললো,

_কি! সকাল সকাল কেমন দিলাম সারপ্রাইজ, পাটকাঠি?আমাদের কে একসাথে দেখে অবাক হচ্ছো তাই না?আসলে নিদ্রা আপু কালই চলে যাবে তাই তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে।

নিদ্রা আপু এরপর অনেক সময় আমাদের সাথে কাটিয়ে বিদায় নিলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন,

_তোমাকে তোমার অজান্তে আমি ভীষণ জালিয়েছি ঐশী।তবে আমার আর আলোর উদ্দেশ্য কিন্তু খারাপ ছিলো না। মাঝখানে তুমি বারোটা বাজিয়েছো।তাই আমাদের পরিকল্পনা পুরোটাই পানিতে গেলো। আলো তোমাকে আমার নামে যা যা বলেছে পুরোটা কিন্তু সাজানো।তোমার বর কিন্তু আমার বেস্টফ্রেন্ড হলেও সে আমাকে আলোর মতো বোনের চোখেই দেখে। আলো তোমাকে একটু মিথ্যে বাড়িয়ে বলেছে।আচ্ছা আমি আসি। ফোনে পরে আলাপ করবো। মন্দিরে পুজো দিতে যাবো।মানত রয়েছে। ফাইজ নিচে অপেক্ষা করছে।bye girls.take care.

নিদ্রা আপু যেতেই আমি আলো আপুর দিকে রাগী ফেইসে তাকিয়ে বললাম,

_নিদ্রা আপু সনাতন ধর্মাবলম্বী তুমি একথাও লুকিয়েছো?তুমি আর কথা বলবা আমার সাথে যাও বের হও রুম থেকে। তোমরা ভাইবোন দুটোই হিটলার। তুমি না সেদিন বলেছিলে,নিদ্রা আপুকে তুমি দেখতে পারি না,নিদ্রা আপু নাকি আমার সতীন!তোমার ভাইয়ের আগের প্রেমিকা! বাটপার মহিলা!তোমার এতগুলো মিথ্যার কারণে আমি নিদ্রা আপুকে কতটা খারাপ ভেবেছিলাম?তুমি,,,,তো,,,,ধুর ভাই যাও তোমার সাথে কোনো কথা নাই আমার।

আলো আপু আমার কাছে এসে গাল টেনে দিতেই আমি তার দিকে গরম দৃষ্টিতে তাকালাম

_দেখ এইভাবে তাকাইস না,জানটুস।আমি তো তোর ভালোর জন্যই মিথ্যা বলছি।আমি তো ভাবছি তুই নিদ্রা আপুর উপর জেলাসি ফিল করে আঁধার ভাইয়ের সাথে দূরত্ব মিটিয়ে ফেলবি।তাই তো নিদ্রা আপুর সহায়তা নিয়েছিলাম। কিন্তু তোদের মাঝে গন্ডগোল বাড়বে এটা কে জানতো!

#চলবে

#অনুভূতির_কেন্দ্রবিন্দু_তুমি
#পর্বঃ৩৮
#সুমাইয়া_সানজুম_ঐশী

_কিন্তু এরকম বা*জে এম এম এস গুলো আঁধার ভাইয়ার কাছে পাঠালো টা কে!তাছাড়া যেদিন তোকে ভাইয়া থা*প্পড় মেরেছে ওইদিন ও নিশান আর তোর কতগুলো চিপ*কে থাকা ছবি ভাইয়ার কাছে আসে। হয়তো ভাইয়া সেগুলো দেখে রে*গে গেছিলো। পরে ভাইয়া আমার কাছ থেকে জানতে পারে তুই ওই জামা পরে আমার সঙ্গেই শপিং এ গিয়েছিলি।কিন্তু এডিট করে ভিডিও আর ছবি এগুলো ভাইয়ার কাছে পাঠাচ্ছে কে?

আলো আপুর প্রশ্নে আমিও চিন্তায় আছি।আমার সাথে তো কারো তেমন গভীর শ*ত্রুতা নেই।তাহলে কে করবে!আমার ভাবনার মাঝেই আলো আপু আবার বলল,

_দেখ পাটকাঠি,আমি সরি।আমি চেয়েছিলাম ভাই আর তোর মাঝে সব ভুল বুঝা বুঝি দূর করতে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে এটা ধারণা ছিলো না।আমাকে মাফ করে দিস।আর নিদ্রা আপুর ও দো*ষ নেই।উনি তো আমার সাথে তাল মিলিয়েছে।প্লিজ ক্ষমা করে দে। আমি না ননদিনী! এতটুকু তো করতেই পারিস!প্লিজ, বিশ্বাস কর এরপর আর মিথ্যা বলবো না।নোরা ফাতেহির কসম!

আপুর লাস্ট কথায় আমি ফিক করে হেসে দিলাম। নীল ভাই আর আপু একই রকম। হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

_তো তুমি এখানে এলে যে?

__ভাই বলেছে আসতে। তুই একা। তাই তোর সঙ্গ দেওয়ার জন্য।

_তোমার ভাই আমাকে এভাবে আ*টকে রেখেছে কেনো বলতে পারো?আর কতদিন এই নাটক দেখাবে সে?

আমার কথায় আলো আপু আমার হাত ধরে বললেন,

__তুই তো জানিস ভাইয়ের রা*গ সম্পর্কে। রাগের বসে একটু ভুল করেই ফেলেছে।তাছাড়া তুই যদি নিজের সম্পর্কে ফাল*তু শব্দ ইউজ না করতি তাহলে ভাই চ*ড় দিতো না।তোর জায়গায় আমি কথাটা বললে ভাই আমাকে আরও বেশি শাসন করতো। আর তুই তো বউ, তুই ভুল করলে রাইট আছে ভাইয়ের শাসন করার। ঐশী, দেখ ভাই তোকে ভীষণ ভালোবাসে।আমি দেখেছি তার চোখে তোর জন্য অনুভূতি। তাহলে তুই কেন বুঝছিস না?এবার ক্ষমা করে দে ভাইকে।একটা চান্স তো দিতেই পারিস।

আপুর কথা গুলো আমাকে ভাবাচ্ছে।তাকে ক্ষ*মা করে দিবো!কিন্তু আমি তো দো*ষী ছিলাম না।তাহলে কেন আমিই শুধু ভুক্ত*ভোগী হয়েছি!!সত্যিই কি সে আমায় ভালোবাসে??নাকি অভিনয় করছেন! আঁধার নিজেও বলেছেন সে নাকি আমায় ভালোবাসেন। আবার,আমিই নাকি তার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা। কিন্তু কিভাবে সম্ভব! আমি তো উনাকে আগে কখনো দেখি নি।চিনিও না।এই প্রশ্ন গুলোর দরকার!

_তুমি আবারও পালানোর চেষ্টা করছিলে? গতকালের ঘটনা তোমার মনে নেই? এভাবে নিজের ক্ষ*তি করে আমাকে শাস্তি দিতে চাইছো তুমি?

তার কথায় আমার হাত থেকে গিট দেওয়া পর্দা দুইটা পড়ে গেলো।উনি আবার উল্টো কিছু ভাবছেন নাকি!আমি আমতাআমতা করে বললাম,

_নাহ,আপনার ভুল হচ্ছে।আমি ত,,তো

আমাকে বলতে না দিয়েই সে বলল,

_মিথ্যে বলছো!একবার রাস্তায় বোকা বানিয়েছিলে।আবার ও তাই করার চেষ্টা করছো!

_আপনি শুধু শুধু ভুল ভাবছেন! আমি তো তেমন কিছুই করছি না।

আমার কথায় সে শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন

__শাস্তি দিতে চাইছো। এতো বার বলেছি আমার ভুল হয়েছে তারপরও শাস্তি দিতে চাইছো। তোমার প্রতি দুর্বল তাই বারবার সেই সুযোগ টা কাজে লাগাচ্ছো!চ*ড় মেরেছি তাই দূরে সরে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছো তাই না।ওকে ফাইন,আমি অপরাধ করেছি তাই শাস্তি আমার প্রাপ্য। কিন্তু তুমি নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কি দরকার! এই হাত দিয়ে মেরেছি না তোমায়?

তার কথায় আমি তার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে পাশের ড্রেসিংটেবিল এর আয়নার সেই হাত দিয়ে ঘুশি দিলো।আমি ভয়ে কেপে উঠলাম কি করছেন উনি!

_এই হাতের শাস্তি পাওয়া উচিত। কঠিন শাস্তি পাওয়া দরকার।

একথা বলে তৃতীয় বার হাত নিবার আগেই আমি ধরে ফেললাম। কিন্তু তার শক্তির সাথে টিকে থাকতে পারছিলাম না।আমার হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিতেই আমি তাকে জরিয়ে ধরে কেদে দিলাম। কেনো করলাম জানি না।তবে তার হাতের রক্ত একদম সহ্য হচ্ছিল না আমার। তাকে থামানো প্রয়োজন।কান্না মিশ্রিত স্বরে বললাম,

_থামুন প্লিজ, আমি সত্যিই পালাচ্ছিলাম না।আপনার এই অতিরিক্ত রাগের কারণেই আমি আপনার থেকে পালানোর চেষ্টা করি।আপনি না থামলে আমি এবার সত্যি সত্যিই চলে যাবো

আমার কথায় যেন কাজ হলো। আঁধার একেবারে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে ছেড়ে দাড়ালাম। তার হাতের পিঠ চুয়ে রক্ত ফ্লোরে ঝরছে। এরই মাঝে সারভেন্ট আন্টি আসলো,

__একি আম্মা আপনে পর্দা গুলোসব নামাই ফেলছেন।ধন্যবাদ আম্মা,অনেক উপকার করলেন।

আন্টি সেগুলো নিয়ে যাওয়ার সময় ফ্লোর খেয়াল করে বললো,

_আল্লাহ,হাত কাটসেন কেমনে বড় বাবা!কত্ত র*ক্ত পড়তাছে।

তার কথার মাঝেই আমি বললাম,

_আন্টি,হাতের ওগুলো রাখুন ,তাড়াতাড়ি আমাকে ফাস্ট এইড বক্স টা খুঁজে এনে দিন।এখানে কোন জিনিস কোথায় আছে তা তো আমি জানিনা। কষ্ট করে একটু দ্রুত এনে দিন আর শেফালীকে বলুন দ্রুত এখনের কাচ গুলো পরিষ্কার করে ফেলতে।

আমার কথায় আন্টি দ্রুত গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

_নেন আম্মা, আমি শেফালী রে পরে পাঠামু নে।

আন্টি চলে যাওয়ার পর আমি তার হাত টেনে তুলো দিয়ে পরিষ্কার করতে নিলেই সে হাত সরিয়ে নিতে চাইলো। কিন্তু আমার অ*গ্নিদৃষ্টি দেখে আর কিছু না করে চুপচাপ আমার কান্ড দেখতে লাগলেন। তার হাত বেধে দিয়ে বললাম,

__এবার বিশ্বাস হয়েছে।বলছিলাম যে আমি পালাচ্ছিলাম না,তাও রাগ ঝাড়তেই হবে।

_এই হাত শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। আরো আগে করা উচিত ছিলো কাজটা করা ।এই হাত দিয়েই তো আমার প্রেয়সীকে আঘাত করেছি।

তার কথায় আমি সরে আসলাম। উনি প্রতিনিয়ত আমাকে তার প্রতি দুর্বল করে যাচ্ছেন।



ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছে আমি হাওয়ায় ভাসছি।ঘুম হালকা হতেই চোখ খুললাম। তাকিয়ে আমি হতবাক! আমি উনার কোলে! এটা দেখেই আমি নড়েচড়ে উঠলাম,

__আরে আমাকে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? নামান,,দ্রুত।

আমার কথায় সে তো আমার দিকে তাকালোই না বরং তার পায়ের কদম বাড়িয়ে দিয়েছে।

_আরে ভাই নামান? কই নিয়ে যাচ্ছেন?

বলেই আমি ছটপট করতে লাগলাম।

_আর একবার সাপের মতো মোচড়ালে এখুনি নিচে ফেলে দিবো।

এ কথা বলেই হাত আলগা করতেই আমি তার গলা ভালো ভাবে জড়িয়ে ধরি।সে আমাকে ছাদে এনে নামিয়ে দেয়

এরকম অন্ধকারে এতো রাতে উনি আমাকে ছাদে কি ভুতের কাছে পাচার করার জন্য এনেছে। উনি আমার কাছ থেকে সরে যেতে নিলেই আমি তার হাত চেপে ধরি,

_আরে আমাকে এভাবে ভুতের আস্তানায় রেখে আপনি চলে যাচ্ছেন যে!

উনি তার ব্যান্ডেজ করা হাত দিয়ে আমার হাত ধরেই সুইচের কাছে গিয়ে লাইট জ্বালানেল।

পিছনে ফিরতেই আমি চমকে উঠলাম। পুরো ছাদ লাইটিং করা।ছাদের মাঝ বরাবর অনেক গুলো লাভ সেইপের বেলুন। এখন এইসব আজাইরা কাজ কেনো করছেন সে।আমার ভাবনার মাঝেই সে আমার কাধে থুতনি রেখে বললেন,

মায়াদেবী

সবাই তো সুখ হয়!
তুমি আমার এক বুক কষ্ট হবে?
হৃদয়ের রক্তক্ষয়ী কষ্ট?
শেষ রক্তবিন্দু অব্দি আগলে রাখবো,
কি? হবে আমার কষ্ট?
হৃদয়ক্ষয়ী বিষন্নতা বিহীন সেই অমূল্য কষ্ট?

তার বলা প্রতিটা শব্দে আমি যেন ঘোরের মধ্যে আছি। আমার ঘোর কাটিয়ে সে বলল

__Happy birthday, sweetheart 💙

তার কথায় আমি এবার হুশে ফিরলাম।তারিখ মনে করলাম । বললাম

_আপনার ভুল হচ্ছে। আমার জন্মদিন জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে আজ নয়।

_তুমি এতদিন ভুল জানতে।তুমি আজকের এই দিনেই জন্ম নিয়েছিলে।

কি বলছে উনি!আমি আজকে কেমনে কি! হাত কেটেছে, মাথায় তো কিছু হয় নি।তাহলে এরকম আবোলতাবোল বকছে কেনো!!
এরই মাঝে সামনে তাকিয়ে দেখি আমার শশুর বাড়ির সব লোকজন, সাথে আব্বু -আম্মুও আছে।কিন্তু আম্মু আসলো!এতেই আমি ভীষণ অবাক হলাম।হঠাৎ উদয় আর আরাফ ভাইয়া এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। এবার আমি হত-বিহবল। এবার তো আঁধার আমাকে থাপ্পড় এর ঝুড়ি সহ মারবেন। কিন্তু তিনি নিশ্চুপ, মুখে মুচকি হাসি। কোনো রিয়্যাকশন নেই।অথচ সেদিন নিশান এর সাথে দেখে কি পরিমাণ রাগ দেখালেন। গিরগিটি,লেজঝুলা বান্দর,হিটলার।

__ happy birthday, পিচ্চি।ফাইনালি তোকে পেয়ে গেলাম। আমার পিচ্চি ফুল।

উদয় ভাইয়া চোখের জল মুছে বললেন কথাটা। তাদের এই কথা গুলো পুরোপুরি আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।মেঝো মারও চোখে পানি।আমার সামনে এসে আমার কপালে চুমু খেলেন, জরিয়ে ধরেই শব্দ করে কেদে উঠলেন,

_আমার মেয়ে,আমার ফুল।তুই জানিস তোকে ছাড়া আমাদের দিন কীভাবে কেটেছে?আমরা তো তোকে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছি।আমরা কীভাবে তোকে হারিয়ে ফেললাম, ফুল। আমার দোষে তুই হারিয়ে গেলি।আমি তোর কাছে দোষী রে মা।আমাকে ক্ষমা করে দে।

মেঝো মা আমার ছেড়ে দাড়াতেই মেঝো কাকা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। আমি আমার আব্বুর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে কান্না জড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

_আব্বু উনারা কি বলছেন? আমি কি তোমার মেয়ে নই!

আব্বু আমার কথায় মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

__তুমি আজীবন আমার মেয়ে হয়েই থাকবে মা।কিন্তু এটা সত্যি আমি আর তোমার আম্মু তোমার প্রকৃত বাবা মা নই।উনারা ঠিক বলেছেন। তুমি তোমার মেজো মায়ের মেয়ে।উনারা তোমার আসল বাবা মা।তোমাকে ছোট বেলায় আমরা পেয়েছিলাম। যেটা এতদিন পর্যন্ত বাড়ির সবাই গোপন করেছিলো তোমার কাছে।তোমার গলায় ছোট বেলা থেকে যেই লকেট টা ছিল তা আমি দেই নি।ওটা আগে থেকেই তোমার গলায় ছিলো। সেটা দেখেই ধ্রুব আমার কাছ থেকে তোমার ছোট বেলার ছবি সহ বাকি ইনফরমেশন নেয়।

আব্বুর কথায় আমি অবাক হলাম। তাহলে এই কারণে মেজো মা আমার দিকে সেদিন একধ্যানে তাকিয়ে ছিলেন।

__আরে তোমরা আজকেই ফুল কে সব সারপ্রাইজ একসাথে দিয়ে দেবে নাকি!আগে ওকে কেকটা কাটতে দাও।ফুল কে পেয়েই গেছো।বাকি ইতিহাস বাসায় গিয়ে বোলো।নয়তো তোমাদের ইতিহাস শুনতে শুনতে কেক বাসি হয়ে যাবে।

দাত কেলিয়ে রোজা আপু কথা টা বললেন।

বেকার সমাজ কেক টেবিলে রেখে আমাকে ওখানে টেনে নিয়ে গেল।
কেক কাটার পর্ব শেষ করেই আব্বু আর আম্মু বিদায় নিচ্ছিলেন। আমি আব্বুকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। আমার আসল বাবা না হলেও ছোট থেকে উনাকে আমি আমার আব্বু-আম্মু দুটোই জেনেছি। আম্মু অবহেলা করলেও আব্বু কখনোই তা করেনি।যতক্ষণ পেরেছে আমায় সময় দিয়েছে।

_মা, এখন তোর সুখের দিন।ও বাড়ির মতো কেঊ তোকে আর এখানে অবহেলা করবে না।এতদিন এই বাড়ির মানুষ সব তোর নিজের ছিল আর এখন পুরোপুরি তোর আপন তারা।এর চেয়ে বেশি আর কি হতে পারে বল!সামথ্য থাকার পরও তুই কষ্টে মানুষ হয়েছিস।আমাকে ক্ষমা করে দিস, মা।

আম্মু আব্বুকে আমার থেকে ছাড়িয়ে নিজে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন,আমি এবার অবাকের চূড়ান্ত পযার্য়ে আছি।আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরলেন! যিনি আজ পর্যন্ত আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন নি।আমাকে দেখলে গা ঘিন ঘিন করে দূরে সরে দাড়াতেন।দুইদিন আগেও নিচুস্তরের নিকৃষ্ট বাক্য শুনাতেও পিছপা হননি। আর আজ উনি!তবে কি আম্মু বদলে গেছেন।

__ঐশী মা, আমার। নতুন বাবা মা পেয়ে আমাদের ভুলে যাইস না।আমি তোকে ছোট বেলা থেকে কত কষ্ট করে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি।নিশু আর তোর মাঝে কখনোই বিভেদ তৈরি করিনি।সবসময় তোকে আগলে রেখেছি।তোকে নিজের মেয়ে থেকেও বেশি ভালোবেসেছি।

#চলবে