#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১৭
#Mishmi_muntaha_moon
উপমা দরজা খুলতেই হাসিমাখা মুখ মিলিয়ে গেলো।সেহরিশের বাবাকে দেখে উপমা ঘাবড়ায়।দ্রুত সড়ে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়।সেহরিশের বাবা ভিতরে আসে।আশেপাশে তাকিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।উপমা একা বড়িতে কি রেখে কি করবে বুঝতে পারছে।থতমত খেয়ে বলল
‘আংকেল আপনি এইসময়।’
বলে আবারও দ্রুত কন্ঠে বলে
‘আপনি বসুন আমি চা বানিয়ে আনছি।’
বলে জেতে নিবে সেহরিশের বাবা থামায়।পাশে এসে বসতে বলে উপমার কলিজার পানি যেনো শুকিয়ে গেলো।কোনো অজানা কারনে সেহরিশের বাবাকে উপমার প্রচুর ভয় লাগে।অনেকটা গম্ভীর আর কম কথা বলে তাই হয়তো। আর বললেও তো সুন্দর করে বলে না কর্কশ গলায় ধমকে কথা বলে।
উপমা নিজের ভয়কে সাইডে রেখে সেহরিশের বাবা থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলো।আগ বাড়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলল
‘উনি তো বাড়িতে না অফিসে গেছে। ‘
সেহরিশের বাবা হাসলো। মাথা নাড়িয়ে বলল
‘হুম তাই তো আসলাম তোমার কাছে।তোমার সাথেই কিছু কথা ছিলো।’
উপমা অবাক হলো তার সাথে কিসের কথা।বিনয়ী ভংগী তে বলল
‘জ্বী আংকেল বলুন।’
সেহরিশের বাবা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলল
‘আমার ছেলেটা আজ অফিসে যাচ্ছে আমি যেমনটা চেয়েছিলাম তেমন ভাবে ওকে দেখছি ভাবি নি ওকে এভাবে দেখবো। অবশ্য আমার সাথে এখনো কথা বলে না।কিন্তু যতটুকুই বদলেছে তোমার জন্য।সেহরিশের জন্য হয়তো তুমিই ঠিক।যাই হয়েছে আমি যা করেছি বলেছি তুমি ভুলে যাও আর সেহরিশকে বুঝিয়ে আমাদের সাথে থাকার কথা বলো।রাবেয়া একদম মন মরা হয়ে থাকে ছেলেটার জন্য। আর সাদাত ও আসছে।সেহরিশ নিশ্চয়ই তোমার কথা শুনবে। সেহরিশকে তুমি যদি বুঝাতে পারো খুবই উপকার হতো। ‘
উপমা মনোযোগ দিয়ে সেহরিশের বাবার কথা শুনলো।রাবেয়া বেগমের কথা শুনে খুবই কষ্ট পেলো।মুচকি হেসে বলল
‘জ্বী আংকেল আমি বলে দেখবো সেহরিশকে।আপনি টেনশন নিয়েন না।’
বলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল
‘আপনি বসুন আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি। এভাবে খালি মুখে বসে থাকাটা ভালো দেখায় না।’
বলে রান্নাঘরে গেলো।রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো দুধ নেই।পড়লো অস্বস্তিতে। বাহিরে সেহরিশের বাবা তো নিশ্চিত ভাবছে চা বানাচ্ছি। কি করবে ভাবতে ভাবতে রান্নাঘর থেকে বের হতেই দেখেতে পেলো সেহরিশের বাবা হেটে হেটে আশেপাশে দেখছে।উপমা হতাশ হয়ে সেহরিশের বাবার দিকে পা বাড়ালো।উপমাকে দেখে সেহরিশের বাবা হেসে বলল
‘আমি আসি আজ। তুমি সেহরিশের সাথে কথা বলো।ও এসে আমাকে দেখলে আবার রাগ করবে।’
বলে গেটের দিকে পা বাড়ালো।গেট খোলায় ছিলো। সেহরিশের বাবা চলে গেলেন। উপমা বড় করে নিশ্বাস ফেলল।
গেট বন্ধ করতে যাবে তখনি সেহরিশের আগমন।উপমা হাসি মুখে সেহরিশের কাছে গেলো।সেহরিশের মুখে হাসি নেই।গেট সেহরিশ নিজে বন্ধ করে হাতের ল্যাপটপ টা টেবিলে রেখে সোফায় গা এলিয়ে দিলো।
উপমা সেহরিশের ক্লান্ত মুখপানে তাকিয়ে পানি গ্লাসে ঢেলে সেহরিশ কে দিলো।সেহরিশ পানি পান করে উপমার হাত টেনে কোলে বোসালো।উপমা ছটফট করলো না।একটুও নড়লো না।বরফ হয়ে বসে রইলো।
সেহরিশ উপমা কাধে ঠোঁট ছোয়ালো।পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল
‘বাবা এসেছিলো কেনো?’
উপমা চুপ।সেহরিশ উপমাকে কোল থেকে তুলে পাশে বসায়। উপমার পায়ে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। উপমার হাতজোড়া আপনাআপনি সেহরিশের চুলে চলে যায়।
‘কি বলেছে বলো। ‘
উপমা সেহরিশের মাথায় হাত বুলাতে বুলায়ে আমতা আমতা করে বলে
‘চলুন না বাড়িতে ফিরে যাই।এখানে একা একা ভালো লাগে না।ওখানে আন্টিও তো একা।আর আংকেল শুধু এই কথাই বলতে এসেছিলো।উনি উপকার হিসেবে করতে বলেছে খারাপ তো বলেনি।’
সেহরিশ চোখ জোড়া বন্ধ করলো।নিজের আঙুল উপমার আঙুলে মিলিয়ে বলে
‘উন এমনই উপকার প্রয়োজন হলেই কাউকে মনে পড়ে আমি যেতে চাই না।উনি তোমায় পছন্দ করে না শুধুই তোমাকে ভুলিয়েভালিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।তার আত্বসম্মানে লাগছে তো তাই।’
উপমা হাসলো।সেহরিশের হাত থেকে নিজের হাত ছুটিয়ে সেহরিশকে টেনে বসালো।হেসে বলল
‘উনার আত্বসম্মান আর আপনার আত্বসম্মান কি ভিন্ন নাকি।আর সাদাত ভাই ও আসছে আমাদের যাওয়া উচিত।’
সেহরিশ চুপ করে রইলো।উটগে দাঁড়িয়ে বলল
‘আমি ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছি।খেয়েছো তুমি?’
উপমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল
‘নাহ আপনার জন্য ওয়েট করছিলাম।’
__
রাত ১১ টা বাজে।উপমা বিছানা ঠিক করে ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।সেহরিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপমাকে দেখছে।উপমা কাজ শেষ করে সেহরিশের কাছে যায়।সেহরিশ কে হেসে জড়িয়ে ধরে।
উপমার কান্ডে সেহরিশ অবাক হয়।উপমাকে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে বলে
‘বাব্বাহ এতো ভালোবাসা কেনো?আমাকে তো ওইদিন বিয়েও করতে চাইছিলে না।’
‘আপনি বারবার ওইকথা নিয়ে আসেন কেনো তখন তো,,,’
উপমার কথায় সেহরিশ হাসলো।উপমা চুপ করে থেকে আবারও বলল
‘আচ্ছা আপনি এভাবেই রাজনৈতিক কিভাবে ছেড়ে দিলে। চাইলেই ছেড়ে দেয়া যায় নাকি?’
‘একেবারে ছেড়ে দেই নি। আমার জায়গাটা ইউসুফ কে দিয়েছি খুবই ভালো ও এইসব রাজনীতিবিদ এ।আর ওর প্রয়োজনে আমি সবসময়ই পাশে আছি।’
উপমা মাথা তুলে সেহরিশের দিকে তাকালো।ঠোঁট উল্টিয়ে বলল
‘আচ্ছা আমদের কি এইটাই ফাইনাল বিয়ে মানে কোনো অনুষ্ঠান করা হবে না।’
সেহরিশ উপমাকে বিছানায় বসায়।নিজেও বসে বলে
‘এখন মাত্র এই রাজনীতি থেকে বেকআপ করেছি।তাই আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু করি নি ইউ নো আনসেফ হতে পারতো।আর কি হবে অনুষ্ঠান করে, তুমি আমার হলেই হলো আর কি চাই।’
__
শুক্রবার আজকে।উপমা সেহরিশকে বলেছে বাড়িতে নিয়ে যেতে। তার বড় বোন ও এসেছে।বিয়েতে আসতে পারে নি তার শ্বশুর অসুস্ত ছিলো তাই।
উপমা নামাজ পড়ে তারাতারি রেডি হয়ে বসে আছে।সেহরিশ বলেছে নামাজ পড়ে এসে নিয়ে যাবে।
কাল কল করে উপমা তার বাবাকে সেহরিশের বাবার বলা কথা গুলো বলেছে।সেহরিশ কে যেনো উপমার বাবা বোঝায় সেই সুবাদে।
সেহরিশ নামাজ পড়ে এসে দেখে উপমা তার পাঞ্জাবীর সাথে মেচিং করে সাদা শাড়ি পড়েছে অবশ্য পুরো সাদা না গোলাপির কম্বিনেশনের।সেহরিশ ভ্রু কুচকে ঠোঁট কামড়ে হেসে উপমার দিকে পা বাড়ালো।উপমা ঝুকে খাটে কিছু খুচ্ছিলো।
সেহরিশ গিয়ে উপমার পিছে দাড়ালো।উপমা বিছানা থেকে মোবাইল খুজে পেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পিছে ঘুরতে নিতেই সেহরিশের সাথে ধাক্কা খায়।বিরক্ত হয়ে বলল
‘এভাবে পিছে এসে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেনো।আজব!’
সেহরিশ উপমার কথায় পাত্তা না দিয়ে শাড়ির ভিতর দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে।ঠোঁটের কাছে বাড়তে বাড়তে বলে
‘একেবারে রেডি হয়ে আছো দেখছি, বাবার বাড়ি যাওয়ার এতো তাড়া?’
উপমা হেসে মাথা নিচু করলো।সেহরিশের দিকে তাকিয়ে তার হাসিমাখা মুখ দেখে নিজ উদ্যোগে সেহরিশের ঠোটে হাল্কাভাবে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সড়িয়ে বাহিরে যেতে যেতে বলে।
‘দেরি হচ্ছে চলুন তারাতারি।’
উপমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সেহরিশ মুচকি হেসে উপমার পিছু পিছু যায়।
__
ভোজনবিলাস শেষ করে উপমার আব্বু উপমার বোনজামাই আর সেহরিশ তার বাবার রুমে বসে আছে।কথাবার্তা বলছে আরকি।উপমা আর তার বড় বোন লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছে কথা।
জাফর সাহেব খুবই গম্ভীরভাবে সেহরিশকে বাড়ি ফেরার কথা বুজাচ্ছে।রাবেয়া বেগমের করুন অবস্থার কথা বলছে।তার বাবার অনুতপ্তের কথাও বলছে।জাফর সাহেবের এখন একমাত্র কাজ সেহরিশ কে বাড়ি ফিরানো।মাঝে মধ্যে উপমার বোনের জামাই ও বুজাচ্ছে শ্বশুরের সাথে তাল মেলাচ্ছে।
সেহরিশের ভ্রু কুঞ্চিত মুখটা দেখে উপমার কিছুটা হাসি পেলো।উপমাকে হাসতে দেখে তার বড় বোন আরিয়ে পিঠে আস্তে থাপ্পড় দিলো।উপমা মুখ চেপে হাসি আটকিয়ে রুমের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।আরিয়াও উপমার সাথে সড়ে দাঁড়ায়।
‘তুই এভাবে হাসছিস বরের করুন অবস্থা দেখে।’
উপমা হাসি থামিয়ে মুখটাকে গম্ভীর করলো।চিন্তিত হয়ে বলল
‘হুম উনি নিশ্চয়ই রাগবে আমার উপর।আর আমি যে আব্বুকে বলেছি আংকেলের কথা সেইটা তো এতোক্ষনে বুঝেই গেছে।’
‘কিরে তুই সেহরিশের বাবা মাকে মনে হয় আংকেল আন্টি বলিস?’
উপমা চোখ কিছুটা বড় করে তাকালো আরিয়ের দিকে। ঠোঁট প্রসারিত করে বলল
‘তুমি জানলে কি করে?’
‘মাত্রই তো বললি আচ্ছা শোন এখন থেকে বাবা মা অথমা আব্বু আম্মু যেই কোনো কিছু বলার অভ্যাস কর।নাহলে আম্মু শুনলে তোকে দিবে এক থাপ্পড়।’
আরিয়া চলে গেলো রান্নাঘরে।উপমাও ঠোঁট বাকিয়ে রুমে চলে গেলো।
__
উপমার আব্বু আম্মু অনেক বলার পরেও সেহরিশ থাকে নি রাত সাড়ে ১০টার দিকেই বেড়িয়ে পড়েছে।
বাড়িতে পৌছে সেহরিশ গম্ভীর মুখে রকিং চেয়ারে বসে আছে বারান্দায়।উপমা সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।কিছু বলে নি এতক্ষণ। আর থাকতে না পেরে মলিন কন্ঠে বলল
‘কি হয়েছে আমার উপর রেগে আছেন নাকি?’
সেহরিশ মাথা তুলে উপমার দিকে তাকালো।উপমাকে টেনে কোলে বসিয়ে গালে গাল স্লাইড করতে করতে বলল
‘রেগে থাকবো কেনো?’
‘ওইযে আমি আপনার বাবার কথা আমার আব্বুকে বলেছি যে।’
সেহরিশ কিছু বলল।কিছুক্ষণ চুপ থেকে উপমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে যেতে যেতে বলল
‘এইসব বাদ দাও চলো আমরা আমাদের ফিউচার বেবির প্লেনিং করি কি বলো।’
উপমা সেহরিশের কথায় থতমত খেলো।সেহরিশের মুড বোঝা দায় মনে হলো উপমার।মুহূর্তে মুডই চেঞ্জ হয়ে গেলো।উপমা লজ্জায় মিইয়ে গিয়ে বলল
‘ আহা আপনিও না।কোন কথা থেকে কোন কথায় এসে পড়লেন?এখন তো অন্য মুডে ছিলেন!”
‘আমার মুড সর্বদা পরিবর্তনশীল বুঝলে।’
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)