#ওয়ান_ফোর_থ্রি
২৬.
ডোরবেল বাজছে৷ রানু এসে দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে স্নেহা৷ বিস্ময়ে আশ্চর্য হয়ে যায় রানু। অসন্তুষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন করে,” তুমি এইখানে কি করছো?”
স্নেহা হিংস্র বাঘিনীর মতো শ্বাস নেয়। ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলে,” ওরা কোথায়?”
রানু সাবধানে জিজ্ঞেস করল,” কারা?”
” কারা আপনি জানেন না?” ক্রোধে চেঁচিয়ে ওঠে স্নেহা। গলার শিরা কাঁপতে থাকে তার। রানু নির্বিকার কণ্ঠে বলল,” অভদ্রের মতো চিৎকার করবে না৷ তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য না। এখনি বের হয়ে যাও এই বাড়ি থেকে। ”
” আর যদি না বের হই?” স্নেহা ঘাড়ত্যাড়ামি করে। রানু হুমকি দিয়ে বলল,” তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো।”
স্নেহা হাসে। হাসিতে তাচ্ছিল্য। ধপ করে কাউচের উপর বসে পড়ে বলল,” আমীর না আসা পর্যন্ত আমি এখান থেকে কোথাও যাচ্ছি না। দেখি কি করতে পারেন আপনি!”
রানু কোনো জবাব দেয় না। এই অভদ্র মেয়ের সাথে তর্ক করেই বা কি লাভ! স্নেহা ক্রোধসিক্ত কণ্ঠে বলল,” এসব ইচ্ছে করে করছেন আপনি, তাই না? ওই মেয়ের সাথে আপনি আমীরের বিয়ের কথা ভাবছেন? কি ভেবেছেন এসব করলেই আমি আমীরের জীবন থেকে চলে যাবো?”
রানু মৃদু হেসে বলল,” আমি কিছুই করিনি। আবির নিজে তোহাকে পছন্দ করেছে। এতোটাই পছন্দ করেছে যে তোহাকে না দেখে একটা দিনও থাকতে পারছে না ও।”
স্নেহার মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করে। আক্রোশে কাঁপে দুই ঠোঁট। রানু আগুনে ঘি ঢালতে বলল,” তুমিই চিন্তা করো, যখন তোমাদের নতুন বিয়ে হলো তখন প্রথম কিছুদিন তুমি এই বাড়িতেই ছিলে। আবির একবারও তোমার সাথে দেখা করতে আসেনি। কিন্তু তোহা এই বাড়িতে এসেছে মাত্র দুইদিন হলো। আর আবির এই দুইদিন ধরে এখানেই আছে। একবারও নিজের বাড়িতে যায়নি।”
স্নেহা চোখ বড় করে তাকায়। ধারালো হয় তার চোয়াল। হিংসাত্মক কণ্ঠে বলল,” এতে মনে হয় আপনি অনেক খুশি হয়েছেন?”
” আমি খুশি হয়েছি কি হইনি তাতে কিছু যায়-আসে না স্নেহা। আসল কথা হলো আমীরকে তুমি আটকাতে পারবে না।” অবিচল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রানু কথাটি বলে।
স্নেহা উঠে দাঁড়িয়ে হাত ভাঁজ করে বলল,” আপনি নিজের হাতে আমীরের সর্বনাশ ডেকে আনছেন। সেটা কি আপনি জানেন?”
ভ্রু কুচকায় রানু। বিভ্রান্ত হয়ে বলল,” মানে?”
“আমি আমীরের ভালো চাই বলেই ওকে তোহার থেকে দূরে রাখতে চাই। কিন্তু আপনিই তোহার দিকে ওকে এপ্রোচ করে বিপদে ঠেলে দিচ্ছেন।”
” ফালতু কথা বন্ধ করো। তোহার দিকে এপ্রোচ করলে আবির বিপদে কেন পড়বে? উল্টা তুমিই ওর জন্য বিপজ্জনক। ”
স্নেহার হাসি আরও চওড়া হয়। চোখে-মুখে আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক খেলে যায়। হেঁটে হেঁটে জানালার কাছে গিয়ে বলল,” আমি আর যাই করি, কখনও আমার জন্য আমীর কষ্ট পাবে না। কিন্তু তোহা যদি ওর জীবনে আসে তাহলে ওর জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশ্বাস করুন, তোহার জায়গায় আমি অন্য যে কাউকে মেনে নিতাম। কিন্তু তোহাকে মেনে নেওয়া অসম্ভব।”
রানুর মুখ চুপসে যায়। সামান্য ভড়কে গিয়ে বলল,” কি বলতে চাও? আবির এই প্রথম কাউকে নিজে থেকে পছন্দ করেছে। তোহা ছাড়া আবিরের জন্য উপযুক্ত আর কে হতে পারে?”
স্নেহা এক ভ্রু উঁচু করে বলল,” আপনি কি ভেবেছেন? আমীর এমনি এমনি তোহার প্রেমে পড়ে গেছে? ওর মতো মানুষের পক্ষে কাউকে ভালোবাসা এতো সহজ না। তোহার প্রতি ওর যে অনুভূতি সেটা ভালোবাসা না, অপরাধবোধ।”
” কিসের অপরাধবোধ?” হতবিহ্বল হয়ে তাকায় রানু। স্নেহা বাঁকা হাসি ঠোঁটে এঁটে বলল,” কারণ আমীর তোহার বাবাকে নিজের হাতে খু-ন করেছিল।”
রানু এতোটা অবাক হয় যে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। মাথা ঘুরে উঠে তার। হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করল,” এসব কি বলছো তুমি? ”
” ঠিকই বলছি। আমীর নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতেই তোহার প্রতি অতিরিক্ত অবসেশন দেখাচ্ছে। তার দূর্বলতার একমাত্র কারণ এটাই।”
” অসম্ভব! আমি তোমার কথা কেন বিশ্বাস করব?”
স্নেহা এগিয়ে এসে বলল,” আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই। আপনি বরং আমীরকেই প্রশ্নটা করবেন। আশা করি উত্তর পেয়ে যাবেন।”
রানু বিড়বিড় করে বলল,” তোহা এই কথা শুনলে মরেই যাবে। ”
স্নেহা হেসে উঠল,” এজন্যই তো তার প্রতি সিমপ্যাথি কাজ করছে আমীরের। এটাকে ভালোবাসা বলে না মিস রানু। এটা জাস্ট একটা সিমপ্যাথি। আমীরের অপরাধবোধ কেটে গেলে এই সিমপ্যাথিও কেটে যাবে।”
আগুন ঝরা দৃষ্টিতে তাকাল রানু,” খবরদার, আর একটা ফালতু কথা বললে থাপ্পড় মেরে তোমার দাঁত আমি ফেলে দিবো।”
স্নেহা আচমকা মুচড়ে ধরল রানুর হাত। ব্যথায় আর্তনাদ করে ওঠে রানু। চোখ দিয়ে অশ্রু বেরিয়ে যায়। স্নেহা আক্রোশ নিয়ে বলল,” কালকের চড়ের হিসাবটা এখনও বাকি আছে। আপনার আবার কিভাবে সাহস হলো আমার গায়ে হাত তোলার? ডন্ট ডেয়ার! আপনার এই হাত আমি ভেঙে ফেলব!”
ধাক্কা মেরে রানুকে সরিয়ে দেয় স্নেহা। কাউচের উপর আছড়ে পড়ল রানু। বামহাতটা যেন অবশ হয়ে গেছে। কিছুতেই নাড়ানো যাচ্ছে না। তীক্ষ্ণ ব্যথায় চোখ বুজে এলো। স্নেহা রানুকে ওই অবস্থায় রেখেই ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
________________
” আমার সাথে সাথে হাঁটবে। আর একদম চোখের আড়াল হওয়ার চেষ্টা করবে না। নাহলে কিন্তু…”
তোহা আমীরের মুঠো থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,” নাহলে কি করবেন আপনি? আপনার সঙ্গে এসেছি বলে কি মাথা কিনে নিয়েছেন আমার? যেখানে খুশি আমি যাবো। দেখি আপনি কি করতে পারেন!”
তোহা দায়সারা। আমীর একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,” আমি কি করতে পারি সেটা তুমি জানো।”
” মানে? কি করবেন?”
” বুঝে নাও। আমার মতো অভদ্র মানুষ অভদ্রতা ছাড়া আর কি করতে পারে?”
তোহার মুখ আলতারাঙা হয়ে উঠল। লজ্জায় হতভম্ব কণ্ঠে বলল,” আরেকবার সেরকম কিছু করলে আমি আপনাকে খু-ন করে ফেলব এবার।”
আমীর হেসে উঠল। তোহা বিড়বিড় করে বলল,” বেশরম!” সে একটা ক্যাজুয়াল শপে ঢোকে। সেলসম্যান তাকে দেখেই হাসিমুখে এগিয়ে আসে। আন্তরিকভাবে জিজ্ঞেস করল,” কি লাগবে ম্যাডাম?”
” একদম ক্যাজুয়াল টি-শার্ট হবে? ”
” জ্বী হবে। ল্যাডিস টি-শার্ট ওইদিকে। আসুন আমি আপনাকে নিয়ে যাই।”
তোহা হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল,” আচ্ছা আপনাদের এখানে কটনের স্কার্ট পাওয়া যাবে?”
” স্কার্ট সেকশন নিচে আছে ম্যাডাম। আপনার কোমড়ের সাইজ কত?”
” কোমড়ের সাইজ কেন জানতে হবে? আমি ট্রায়াল দিয়ে নিবো।”
” তবুও সাইজটা জানলে ভালো হতো। আপনি না বলতে পারলে আমি মেপে দিচ্ছি।”
” না, কোনো দরকার নেই।”
” দরকার আছে ম্যাডাম। একটু ওয়েট করুন।”
তোহা রেগে বলল,” আমি বলছি তো, লাগবে না।”
সেলসম্যান তবুও ফিতা বের করতেই আমীর তেড়ে এসে লোকটির কলার চেপে ধরে বলল,” ও বলেছে না লাগবে না? তবু তোর সাইজ মাপতে হবে কেন? সাইজ মাপার এতো শখ?”
তোহা আৎকে উঠল। বিচলিত গলায় বলল,” কি করছেন? ছাড়ুন উনাকে!”
” তুমি এখান থেকে সরো।”
” না আমি সরবো না। আপনি আগে উনাকে ছাড়ুন। ”
লোকটি অসহায় কণ্ঠে বলল,” স্যার আমি তো শুধু আমার কাজ করছিলাম।”
” তোর কাজ কি জোর করে মেয়েদের ধরে কোমড়ের সাইজ মাপা?”
সজোরে ছেলেটির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আমীর। তোহা দুইহাতে মাথা চেপে ধরে বলল,” হে আল্লাহ, এসব কি হচ্ছে!” মুহূর্তেই ভীড় জমে গেল দোকানটিতে। সবাই চেঁচামেচি করছে। কেউ সেলসম্যানের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে আবার কেউ আমীরের পক্ষ নিচ্ছে। আমীরের মূল লক্ষ্য হলো ছেলেটার চাকরি খাওয়া। সে ম্যানেজারকে ডাকতে বলে। তোহা এসব দেখে রেগে-মেগে দোকান থেকে বের হয়ে যায়। তাকে যেতে দেখে আমীরও বাধ্য হয়ে বের হয়।
তোহা হন্তদন্ত হয়ে হাঁটছে। আমীর দৌড়ে এসে তার হাত ধরে বলল,” কোথায় যাচ্ছো? থামো।”
তোহা ঝারি মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয়। তীব্র কণ্ঠে বলল,” খবরদার আমাকে ধরবেন না আপনি। যা সিন ক্রিয়েট করলেন এরপর আপনার সাথে কথা বলতেও আমার রাগ লাগছে।”
” ওই লফারটা তোমার দিকে কিভাবে তাকাচ্ছিল সেটা কি দেখেছো? কিছু বোঝার মতো বুদ্ধি আছে তোমার?”
” তাকালেও কি? আপনি কেন তাকে চড় মা-রবেন?”
” আমি যে এখনও ওর চাকরি খাইনি সেটাই ওর ভাগ্য। চড় তো খুব সামান্য ব্যাপার। এরকম আরও দশটা চড় ওর পাওনা ছিল।”
” খুব শখ না মানুষের চাকরি খাওয়ার? হিটলার যেন কোথাকার! আপনাকে নিয়ে দোকানে ঢোকাই আমার ভুল হয়েছে। শুনুন, এখন থেকে শুধু আমি দোকানে ঢুকব। আপনি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন।”
” অসম্ভব। আগে আমি ঢুকব। আর তুমি আমার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে।”
” মানে কি? তাহলে এক কাজ করুন। আপনিই সব কিনে আনুন। আমার যাওয়ারই দরকার নেই। আমি বরং গাড়িতে গিয়ে বসে থাকি।”
” গুড আইডিয়া। এই নাও চাবি। গাড়ি থেকে একদম বের হওয়ার দরকার নেই। এমনিও শাড়ি পরে তোমার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। ”
তোহা বাকরুদ্ধ হয়ে তাকাল। স্তিমিত কণ্ঠে বলল,” আমি তো মজা করে বলছিলাম।”
” কিন্তু আমি মজা করছি না।” আমীরের চেহারা গম্ভীর। তোহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চাবিটি হাতে নিতে নিতে বলল,” ঠিকাছে।”
আমীর তোহাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে আবার শপিংমলে ঢুকল। সেই ক্যাজুয়াল শপেই গেল। সেখান থেকেই সব জিনিস কিনল। কিছুক্ষণ পর আমীর ফিরে এলো। তোহা অবাক হয়ে বলল,” এতো তাড়াতাড়ি শপিং হয়ে গেল?”
” দেখো সব ঠিকাছে কি-না!”
” আরে বাহ, আপনি ওই দোকান থেকেই সব কিনেছেন? কিন্তু ওই সেলসম্যানের সাথে আবার কিছু করেননি তো?”
” না, কি করব?”
তোহা সন্দেহী কণ্ঠে বলল,” আমি বিশ্বাস করি না। নাহলে আপনি ওই দোকানে কেন গিয়েছেন? আমি এখনি গিয়ে দেখব।”
” মায়া, দাঁড়াও। তুমি নামবে না।”
” আমি অবশ্যই নামব। আমাকে দেখতে হবে আপনি কি করেছেন!”
” বললাম তো, কিছু করিনি। বিশ্বাস কেন করছো না?”
” তবুও আমি দেখব।”
তোহা কোনো কথা না শুনেই নেমে গেল। আমীর বাধ্য হয়ে তার পেছন পেছন গেল। তোহা ওই শপে ঢুকতেই সেলসম্যান ভয়ে শিউরে ওঠে। দুই হাত জড়ো করে প্রাণপণে বলতে লাগল,” ম্যাডাম, আই এম স্যরি। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দিন।”
তোহা বিস্মিত গলায় বলল,” আপনার চেহারার এই অবস্থা কেন? উনি কি আপনাকে মে-রেছে?”
পেছন থেকে আমীর ইশারা করতেই সেলসম্যান তুমুল গতিতে ঘাড় নেড়ে বলল,” একদম না ম্যাডাম। স্যারের মতো ভদ্রলোক আমাকে কেন মা-রবেন? ”
তোহা আঁড়চোখে আমীরের দিকে তাকায়। আমীর সাথে সাথেই অন্যদিকে ঘুরে যায়। তোহা বলল,” তাহলে আপনি ব্যথা পেলেন কিভাবে?”
” আমি এস্কেলেটর থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছি।”
” এস্কেলেটর থেকে কেউ আবার কিভাবে পড়ে? আপনি মিথ্যা বলছেন।”
” সত্যি বলছি ম্যাডাম। প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস করুন। আমাকে মাফ করে দিন।”
তোহা শপ থেকে বের হয়ে এলো। রাগান্বিত দৃষ্টিতে আমীরের দিকে চেয়ে বলল,” কাজটা আপনি একদম ঠিক করেননি।”
আমীর নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল,” সাবধানে মেরেছি। দেখলে তো তেমন কিছুই হয়নি।”
” সাবধানে আবার কেউ কাউকে কিভাবে মা-রে?” তোহা আশ্চর্য হলো।
আমীর বলল,” আমি অসাবধানে মা-রলে ও ম-রে যেতো।”
তোহা এই কথা শুনে আরও গরম দৃষ্টিতে তাকাল। আমীর নরম গলায় বলল,” আচ্ছা.. স্যরি।”
চলবে
®Sidratul মুন্তায
#ওয়ান_ফোর_থ্রি
২৭.
হাত ভাঁজ করে গাড়ি পর্যন্ত হেঁটে যায় তোহা। আমীর মাথা নিচু করে তার পেছন পেছন নিঃশব্দে যায়। তোহা গাড়িতে উঠে বসতেই আমীর ইতস্তত করে বলল,”আইসক্রিম?”
” আমি আইসক্রিম খাই না৷” তোহার কণ্ঠ রসকষহীন। আমীর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ি চালু করল। সম্পূর্ণ রাস্তা তোহা আর একটাও কথা বলেনি। আমীর বলার মতো কিছু খুঁজে পায়নি। কিন্তু তার ইচ্ছে করছিল তোহার সাথে কথা বলতে। তার মিষ্টি কণ্ঠের বকবকানি শুনতে। তার অভিমানী মুখটাও কি ভীষণ সুন্দর! সে যখন রেগে তাকায় তখন বড্ড দারুণ লাগে দেখতে। ঝগড়ায় তো তার জুড়ি নেই। তর্ক করে যায় চমৎকারভাবে। আমীর হয়তো সারাজীবন তোহার অপ্রয়োজনীয় তর্ক শুনেই কাটিয়ে দিতে পারবে। বেঁচে থাকার জন্য এর থেকে বেশি কিছু নিষ্প্রয়োজন। সত্যিই নিষ্প্রয়োজন!
হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষায় সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল তোহা। ভয়ে একটু থতমত খেয়ে বলল,” কি ব্যাপার?”
আমীর নির্বিকার কণ্ঠে জানায়,”মনে হয় পেট্রোল শেষ হয়ে গেছে। ”
” কি? এখন কি হবে?”
” এখানেই অপেক্ষা করতে হবে। আমি সরবকে ফোন করে বলে দিচ্ছি এই লোকেশনে যেন আরেকটা গাড়ি পাঠিয়ে দেয়।”
তোহা চারপাশে চোখ বুলায় একবার। প্রশ্ন করে,” কতক্ষণ লাগবে?”
” এইতো…. ঘণ্টাখানেক!” অনুমান করে উত্তর দেয় আমীর। তোহা অবাক হয়ে বলে,” তাহলে এতোক্ষণ আমরা কি করব?”
” যা ইচ্ছা। দেখো জায়গাটা তো সুন্দর। চাইলে আমরা হাঁটতেও পারি।”
” এইরকম নির্জন জায়গায় হাঁটা তো খুব রিস্কি ব্যাপার। যদি কোনো ছিনতাইকারী হামলা করে?”
আমীর হেসে ফেলল। তোহা ভ্রু কুটি করে তাকাল,”হাসছেন কেন?”
” আমাকে দেখে কি মনে হয়? আমি থাকতে কেউ তোমার উপর হালমা করে নিস্তার পাবে?”
আমীর একদম চোখের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে কথাটা বলল যে তোহা লজ্জা পেয়ে যায়। সে পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে তোহার কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। মাথা নিচু করে গাড়ি থেকে নামে তোহা। আমীরও নামল। অনেক বাতাস বইছে চারদিকে। গতরাতে ঝড় হওয়ার কারণে কিছু জায়গায় পানিও জমে আছে। তোহা খুব চঞ্চল হয়ে উঠল হঠাৎ। নীরব রাস্তায় খেয়াল-খুশিমতো দৌড়াতে লাগল। অনেক দূরে গিয়ে সে থামে। আমীর তার পেছনে ঠিক বডিগার্ডের মতো পকেটে হাত গুঁজে ধীরপায়ে হেঁটে আসে। তোহা হাঁপাতে হাঁপাতে পেছনে তাকায়। আমীর মৃদু হাসে তার দিকে চেয়ে। তোহা দাঁড়িয়ে বলল,” আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
” হুম।”
তোহা ভাবতে লাগল কথাটা জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে কি-না! গতরাতে সে জেগে থেকে ফীহার ডায়েরীটা সম্পূর্ণ শেষ করেছে। কিন্তু তার মনের একটা প্রশ্ন এখনও পরিষ্কার হয়নি৷ ফীহা এখন কোথায়? তার কি হয়েছিল শেষমেষ? সে বেঁচে আছে নাকি ম-রে গেছে? উত্তরটা জানার জন্য হাসফাঁস লাগছে খুব। আবার আমীরকে প্রশ্ন করতেও ভয় লাগছে। যদি সে রেগে যায়? অনেক ভেবে-চিন্তে তোহা বলল,” রাগবেন না তো?”
” কথাটা কি রাগার মতো? ”
” আমি জানি না। হতেও পারে।” তোহা দুই কাঁধ ঝাঁকালো। আমীর এক ভ্রু উঁচু করে বলল,” আগে শুনে দেখি!”
রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট ঝিল। সেই ঝিলের স্বচ্ছ পানির দিকে চেয়ে তোহা একটু অন্যরকম কণ্ঠে জানতে চাইল,” ফীহা কি বেঁচে আছে?”
ফীহার প্রসঙ্গ শুনে আমীরের মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলল,” মানে? কোন ফীহা?”
” স্নেহার ছোটবোন ফীহার কথাই বলছি। আমি আসলে ওর ডায়েরীটা পড়েছি। সেখানে ওর ব্যাপারে, স্নেহার ব্যাপারে… এমনকি আপনার অতীতের ব্যাপারেও অনেক কিছু লেখা ছিল। আমি সব বুঝতে পারলেও একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না৷ ফীহা এখন কোথায়?”
” ও বেঁচে নেই।”
” কিহ!”
আমীর নিশ্চুপ হয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ সে নিশ্চুপই থাকে। তোহাও কোনো কথা বলার তাগিদ অনুভব করল না। তাদের দু’জনকেই কেমন একটা উদাস ভাব চারিপাশ থেকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। অনেকটা সময় পর আমীর প্রশ্ন করল,” তুমি ওই ডায়েরী কোথায় পেয়েছো?”
” যেই রুমে স্নেহা আমাকে বন্দী করে রেখেছিল সেখানেই। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ওটা বুঝি স্নেহার ডায়েরী। কিন্তু পড়ার পর বুঝতে পারলাম… ডায়েরীটা অন্যকারো মানে ফীহার।”
” ফীহার ডায়েরী ওইখানে গেল কি করে?”
” স্নেহাই ওই ডায়েরীটা ওখানে রেখেছিল।”
আমীর অবাক হয়ে তাকায়,” কি বলছো? সিরিয়াসলি? স্নেহা?”
” হুম৷ এটাই তো স্নেহা আমাকে বলেছিল কাল। যখন ওর সাথে আমার ঝগড়া হচ্ছিল আর ওই এক্সিডেন্ট…”
তোহা থেমে যায়। আমীর চিন্তায় পড়ে গেল। কিছু একটা ভেবে বলল,” স্নেহা অকারণে এই কাজ করবে না। নিশ্চয়ই ও চায় তুমি ডায়েরীটা পড়ো। কিন্তু কেন চায়? আচ্ছা আমি কি ডায়েরীটা দেখতে পারি?”
” এখন তো ডায়েরী আমার সাথে নেই। বাড়ি গেলে দেখাতে পারব।”
” ঠিকাছে।”
তোহা ইতস্তত মন নিয়ে আরও একটা প্রশ্ন করে ফেলল,” আচ্ছা, আমি কি জানতে পারি আপনি স্নেহাকে কেন বিয়ে করেছিলেন? ”
আমীর ভ্রু কুচকে তাকাতেই তোহা হড়বড় করে বলল,” মানে ফীহাও এই প্রশ্নের উত্তর জানার অনেক চেষ্টা করেছিল। প্রথমে তো ও ভেবেছিল আপনি অনন্যা আন্টি মানে আপনার মাকে খুঁজে পেতে বিয়েটা করেছেন। কিন্তু পরে জানা গেল এটা সত্যি না। আপনি বিয়ের আগেই জানতেন অনন্যা আন্টি আপনার মা। তাহলে আপনি কি কারণে স্নেহাকে বিয়ে করলেন? কিছু তো একটা রহস্য আছেই। রানু আন্টিও বলে আপনি নাকি কোনো কারণে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছেন। আই এম স্যরি এমন পারসোনাল প্রশ্ন করছি তাই। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে আমি অনেক কিউরিয়াস হয়ে আছি।”
আমীর নির্লিপ্ত গলায় বলল,”আমি নিজের ইচ্ছাতেই স্নেহাকে বিয়ে করেছি, বাধ্য হয়ে না।”
তোহার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে উঠল। অজান্তেই চোখে জমল অশ্রু। বুকের ভেতরটা জ্বালা করল। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,” এর মানে কি আপনি ওকে ভালোবাসেন?”
” বিয়ে করার জন্য কি ভালোবাসা জরুরী? ভালোবাসা ছাড়াও বিয়ে করা যায়!”
তোহা ঘুরে তাকাল। চোখেমুখে ঘোর বিভ্রান্তি নিয়ে জানতে চাইল,” ভালোবাসা নেই, ভ্যালিড কোনো রিজনও নেই… তাহলে বিয়েটা কেন করলেন?”
” ভ্যালিড রিজন নেই এই কথা আমি একবারও বলিনি।”
তোহা ধৈর্য্যহারা কণ্ঠে শুধালো,” আমি কিন্তু সেই ভ্যালিড রিজনটাই শুনতে চাইছি!”
আমীর পা দিয়ে একটা ছোট্ট পাথর লাথি মেরে ঝিলের পানিতে ফেলল। তারপর কয়েক কদম এগিয়ে বসল একটা সিমেন্টের আসনে। তোহাও তার পাশে বসল। গালে হাত রেখে প্রতীক্ষা করতে লাগল উত্তরের। আমীর বিষণ্ণ কণ্ঠে জানাল,” মৃ-ত্যুর আগে মায়ের ইচ্ছা ছিল এটা। আমি যেন স্নেহাকে বিয়ে করি। আমি শুধু আমার মায়ের ইচ্ছা পূরণ করেছি। আর কিছুই না।”
তোহা এতো বিস্মিত হলো যে ওর গাল থেকে হাতটা অনায়াসে সরে গেল। মুখে চড়ুইপাখির মতো ছোট্ট হা সৃষ্টি হলো৷ আমীর তোহার দিকে তাকিয়ে বলল,” আমার মা ম-রে যাওয়ার আগে বেশ কিছু চিঠি রেখে গিয়েছিল আমার জন্য। সেই সব চিঠি স্নেহার কাছে সংরক্ষিত ছিল। আমি মায়ের সব ইচ্ছা পূরণ করার শপথ নিয়েছি। তাই এই ইচ্ছাটাও অপূর্ণ রাখিনি। ”
আমীর কথা শেষ করে শান্ত দৃষ্টিতে ঝিলের পানির দিকে তাকাল। তার মুখভঙ্গি অত্যন্ত করুণ, ভাবলেশহীন। তোহা হতভম্ব হয়ে বলল,” কিন্তু আপনার মায়ের চিঠি স্নেহার কাছে কি করে থাকবে? মানে এটা কিভাবে সম্ভব? আপনি যখন অনেক ছোট তখনি তো উনি মা*রা গেছিলেন!”
আমীর মুচকি হেসে বলল,” তুমি তো তাহলে অনেক কিছুই জানো না। বলোতো আমি স্নেহাদের গ্রামে কেন গিয়েছিলাম?”
” স্নেহার জন্য গিয়েছিলেন। কারণ আপনার সাথে স্নেহার ঢাকায় একবার দেখা হয়েছিল।”
“এই কথা সত্যি না। ফীহা ভুল জানতো। ওর ডায়েরী পড়ে তুমিও ভুলটাই জেনেছো। আমি ওই গ্রামে গিয়েছিলাম মায়ের পরিবারকে খোঁজার জন্য। আমার মা ভায়োলিন বাজাতে ভালোবাসতো। আর ওটাই একমাত্র গ্রাম ছিল যেখানে ব্রিটিশ মিউজিক স্কুল আছে। আমি ওখানের মিউজিক স্কুলে জয়েন করেছিলাম যেন মায়ের পরিবারের কারো সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। তারপর আমি ফীহাকে পেলাম। ওর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ওর বাবা ওমান চৌধুরী। আমার মায়ের আপন ভাই তিনি। আমি স্নেহাদের বাড়িতে ছদ্মবেশে ঢুকেছিলাম ওমান চৌধুরীকে খু-ন করার উদ্দেশ্য নিয়ে।”
তোহা আৎকে উঠল। বিমূঢ় হয়ে গেল। তার সবকিছু উলোটপালোট মনে হলো।
” ডায়েরীতে তো এসব কিছুই লেখা ছিল না। ফীহা যে আপনার কাজিন এই ব্যাপারটাও সে ডায়েরীতে লিখেনি।”
” কারণ ও জানতো না। স্নেহা ছাড়া ওই কথা কেউই জানতো না। স্নেহা খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে৷ তাই প্রথমেই ওর কাছে আমি ধরা খেয়ে যাই। ও বুঝে ফেলে আমি ওর বাবাকে খু-ন করতেই এখানে এসেছি। ও আমাকে ব্লেকমেইল শুরু করে। সবাইকে জানিয়ে দিতে চায় যে আমি একজন সিরিয়াল কিলার। তারপর আমাদের মধ্যে একটা ডিল হয়। স্নেহা ওর বাবাকে খু-ন করতে আমাকে হেল্প করবে। বিনিময়ে যাতে ওকে আমি বিয়ে করি।”
তোহার বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো। কোনো মেয়ে কিভাবে পারে নিজের বাবার খু-নিকে সাহায্য করতে! এও কি সম্ভব? তোহা তো ম-রে গেলেও পারতো না!
” আপনি স্নেহার বাবাকে কেন মা-রতে চেয়েছিলেন?”
” কারণ তার জন্যই আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছিল৷ তুমি যদি আমার অতীতের ব্যাপারে জেনে থাকো তাহলে তোমার এটাও জানার কথা যে আমার বাবার সাথে মায়ের বিয়ে কখনও হয়নি। মা ছিল বাবার টাকায় কেনা দাসী। আর মাকে টাকার বিনিময়ে যে বিক্রি করেছিল সে ওমান চৌধুরী।”
তোহা চোখের জল মুছল। আমীর কাঁদছে না কিন্তু সে কাঁদছে। অসম্ভব কষ্টে তার বুক ভার হয়ে আসছে! সে খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছে আমীরের ভেতরকার রক্ত-ক্ষরণ। সে যতই স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা বলুক, ভেতর থেকে ঠিকই রক্তা-ক্ত, ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে।
আমীর তার কথা বলে গেল,” আমি প্রথমে স্নেহার সাথে ডিল করতে রাজি হইনি। খু-ন করার জন্য আমার কোনো সাহায্যের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু স্নেহা যখন আমার একমাত্র ইমোশন, আমার মায়ের চিঠিগুলো আমাকে দিল তখন ওর কাছে আমি ঋণী হয়ে গেলাম। ও যদি আমাকে না জানাতো তাহলে চিঠিগুলো হয়তো আমি কখনোই পেতাম না। কারণ স্নেহা ছাড়া এ কথা কেউই জানতো যে মায়ের একটা ছেলে আছে! স্নেহার বাবাও না, ফীহাও না৷ মায়ের যেকোনো কিছুই আমার কাছে অনেক মূল্যবান। আর চিঠিগুলো তো মায়ের শেষ স্মৃতি।”
” কিন্তু ওই চিঠিগুলো স্নেহার কাছে কিভাবে গেল? আপনার মায়ের সাথে তো তার পরিবারের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা।”
” বাবা একবার মাকে আমার থেকে দূর করার জন্য আবার গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। মা ভেবেছিল হয়তো আর কখনও আমাদের দেখা হবে না। তাই সে চিঠিগুলো লিখে স্নেহার কাছে দিয়ে যায়। আমি যদি কখনও মায়ের খোঁজে গ্রামে আসি তাহলে চিঠিগুলো অন্তত পাবো।”
” ও। তার মানে চিঠি পেয়ে কৃতজ্ঞতার খাতিরে বিয়ে করেছেন স্নেহাকে?”
” বলতে পারো… তাছাড়া এটাই তো মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল।”
তোহা হঠাৎ খুব উত্তেজিত হয়ে বলল,” আচ্ছা আপনি স্নেহার কথা কি করে বিশ্বাস করলেন? ”
” মানে?”
“মানে চিঠির ব্যাপারটা তো মিথ্যাও হতে পারে। হয়তো ওই চিঠি আপনার মা লিখেননি। স্নেহা নিজেই লিখেছে যাতে আপনি ওকে বিয়ে করেন।”
আমীর তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল। অসন্তুষ্ট গলায় বলল,” কি অদ্ভুত কথা বলছো! আমি আমার মায়ের লেখা, মায়ের ভাষা চিনবো না কেন?”
” স্নেহা হাতের লেখা নকল করতে পারে। আর অন্যের হয়ে মিথ্যামিথ্যি চিঠি লেখার অভ্যাসও ওর আছে। আপনি কি জানেন ফীহাকেও যে আপনার নাম করে ও চিঠি লিখেছিল? আপনি ফীহার টিচার ছিলেন তাও ফীহা আপনার হাতের লেখা চিনতে পারেনি।”
আমীর ভীষণ অবাক হয়। তড়াক করে উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে,”কি বলছো? ফীহাকে চিঠি লিখেছিল মানে? কেমন চিঠি?”
তোহাও উঠে দাঁড়ায়,” সত্যিই বলছি। একটা প্রেমের চিঠি ছিল। বাসায় গিয়ে আমি আপনাকে দেখাবো ফীহার ডায়েরীটা। ওই ডায়েরী না পড়লে এই ঘটনা আমিও এতো সহজে বুঝতাম না।”
আমীর বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। স্নেহা এতোবড় চালাকি করতে পারে না! যদি সত্যিই করে থাকে তাহলে আমীর ওকে মে-রেই ফেলবে। অবশ্যই মে-রে ফেলবে।
আমীর হন্তদন্ত হয়ে গাড়িতে উঠে বসে। তোহাও বসে। আমীর গাড়ি চালু করতেই তোহা বিস্মিত কণ্ঠে বলে,” একি, গাড়ির না পেট্রোল শেষ? তাহলে এখন কিভাবে চলছে?”
আমীর সামান্য হাসে। তোহা বুঝতে পারে যে আমীর এতোক্ষণ তাকে বোকা বানিয়েছে! মুখ গোমরা করে তাকায় সে। পরমুহূর্তেই বলল,” আচ্ছা, স্নেহা মানুষের চোখ দেখেই অতীত বুঝে ফেলে। এই কথাটা কতটুকু সত্যি? আপনার কি মনে হয়?”
আমীর রুক্ষ গলায় বলল,” এটা সম্পূর্ণ ফালতু একটা কথা। পৃথিবীতে কারো এমন সাধ্য নেই যে চোখ দেখেই অতীত বুঝে ফেলবে! সে শুধু মানুষকে দেখলে আন্দাজে কিছু কথা বলতো যেটা সত্যি হয়ে যেতো। সেসবেই মানুষ ভয় পেতো আর ওকে বিশ্বাস করে ফেলতো। ফীহাও এই ব্যাপারটা বিশ্বাস করতো বলেই স্নেহাকে খুব ভয় পেতো। আমার মনে হয় স্নেহা তোমাকেও ভয় দেখাতে চেয়েছিল। তাই ও ফীহার ডায়েরীটা ওই ঘরে রেখেছে। দেখো, ডায়েরী পড়ে ফীহার ভয়ের একটা রিফ্লেকশন তোমার মধ্যেও তৈরী হয়ে গেছে।”
তোহা চোখ কুচকে বলল,” মোটেও না। আমি স্নেহাকে একদম ভয় পাইনি।”
তোহা এই মাত্র মিথ্যা বলল। সে স্নেহাকে ভীষণ ভয় পায়। স্নেহার মতো ডেঞ্জারাস মেয়েকে ভয় না পেয়ে উপায় নেই। তবে এই মুহূর্তে তোহার একদম ভয় লাগছে না। কারণ আমীর তার পাশে আছে৷ আমীর যদি পাশে থাকে তাহলে সে এভারেস্ট জয় করে ফেলতে পারবে। আর স্নেহা তো কোন ছাড়!
_____________
বাড়ি ফিরে তোহা সবার আগে ডায়েরীটা আনতে দুইতলায় গেল। আমীর লাউঞ্জরুমে বসে অপেক্ষা করছিল। এমন সময় গম্ভীরমুখে রানু ঢুকল। শান্ত গলায় বলল,” স্নেহা এসেছিল।”
আমীরের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,” কোথায় সে? কেন এসেছিল?”
রানু পাথরের মতো শক্ত গলায় বলল,” এদিকে আয়। তোর সাথে আমার জরুরী কথা আছে।”
আমীর উপরের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,” মায়া এখনি নিচে আসবে। ও আগে আসুক তারপর যাই?”
” এই কথা ওর সামনে বলা যাবে না।”
আমীর একটু বিচলিত হয়। কি এমন কথা? নিশ্চয়ই সেন্সিটিভ কিছু! রানুর সাথে একটা ঘরে যায় আমীর। রানু খট করে দরজাটা আটকেই প্রশ্ন করল,” তোহার বাবাকে তুই মে-রেছিস?”
সহসা এমন প্রশ্নে আমীর ভড়কে গেল। অনেকক্ষণ কোনো কথা বলতে না পেরে স্থিরচিত্র হয়ে তাকিয়ে রইল। রানু চোখ বড় করে আবার জানতে চায়,” বল, তুই মে-রেছিস তোহার বাবাকে?”
আমীর এবারও নিরুত্তর থাকলে রানু এগিয়ে এসে বলে,” স্নেহা আমাকে শুধু শুধু এই কথা কেন বলবে? এতোবড় মিথ্যা বলার সাহস ওর নেই। ও বলেছে আমি যেন তোকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। আমাকে সত্যিটা বল আবির। এতোক্ষণ ধরে এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমাকে সত্যি কথা বলে দে। তুই মে-রেছিস তোহার বাবাকে?”
বার-বার এই বিষাক্ত প্রশ্নটা আমীরের কানে বজ্রপাতের মতো লাগে। হৃদয়ে যেন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। ক্ষতের জায়গায় খঞ্জর খুঁচিয়ে আঘাত বাড়িয়ে দিলে যতটা ব্যথা হয় তার চেয়েও দশগুণ ব্যথায় কাতর হয়ে উঠল সে।
ধপ করে বিছানায় বসে দুইহাত মাথায় ঠেঁকালো। দিশেহারার মতো বলল,” আমি জানতাম না রানু আন্টি৷ একটা ভুল আমার জীবনের সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। আমি নিজেকেই ক্ষমা করতে পারছি না, তার কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবো? আগে যদি বুঝতাম আমার একমাত্র সুখের উৎস আমারই ভুলে দুঃখের সমুদ্রে তলিয়ে যাবে তাহলে এই সর্বনাশা ভুলটা আমি কোনোদিন করতাম না!”
রানু আমীরের দিকে ঝুঁকে এসে জানতে চায়,” কি বলতে চাইছিস তুই?”
আমীর মাথা তুলে তাকায়। তার চোখেমুখে রক্তিম আভা। রূঢ় কণ্ঠে বলে,” হ্যাঁ আমিই সেই অধম। খু-নটা আমি করেছি।”
সশব্দে আমীরের গালে চপোটাঘাত করল রানু। আমীর স্তব্ধীভূত হয়ে যায়। রানু চোখমুখ বিকৃত করে বলল,” লজ্জা করে না তোর এই কথা বলতে? এটা তুই কি সর্বনাশ করলি মেয়েটার? কিভাবে করলি? এরপরেও ওর সামনে তুই কিভাবে দাঁড়াস? ওর চোখে চোখ রেখে কিভাবে কথা বলিস? তোর কি বুক কাঁপে না?”
আমীরের বাম চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা উত্তপ্ত অশ্রু নির্গত হলো। বুক কাঁপে না কে বলল? সে তো প্রতিনিয়ত মৃ-ত্যুযন্ত্রণা অনুভব করছে। তোহা যতবার তার বাবাকে নিয়ে হাহাকার করে ততবার আমীর অপরাধবোধের তীব্র উত্তাপে ছাড়খাড় হয়ে যায়!
রানু কপালে হাত দিয়ে কাঁদতে লাগল। আর্তনাদের স্বরে বলল,” ছি! এতোবড় পাষাণ তুই! তোকে নিয়ে কত গর্ব ছিল আমার আর সেই তুই এমন জালিমের মতো কাজ করতে পারলি? ছি!”
বাইরে থেকে দরজায় করাঘাত করল তোহা। তার শীতল স্বর ভেসে এলো,” রানু আন্টি, দরজা খুলুন।”
রানুর কান্না সাথে সাথে থেমে যায়। আমীরের বুকে তুমুল অস্থিরতা শুরু হয়। চূড়ান্ত বিপদের আভাস টের পেয়েই হৃৎযন্ত্রের স্পন্দনশীলতা থেমে আসে। রানু দরজা খুলতেই থমথমে মুখে আমীরের দিকে তাকায় তোহা। সে দরজার বাইরে কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে ছিল?
চলবে
® Sidratul মুন্তায
#ওয়ান_ফোর_থ্রি
২৮.
কিছুক্ষণের পিনপতন নীরবতা। আমীরের হার্টবিট সেকেন্ডের সাথে পাল্লা দিয়ে গতি বাড়াচ্ছে। সে বিহ্বল, বিমূঢ় হয়ে তোহার দিকে চেয়ে আছে। রানু স্থানুবৎ হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। তোহা তার থমথমে মুখ নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই আমীর শুকনো ঢোক গিলল। আতঙ্কে তার মুখটা একদম সাদা কাগজের মতো দেখাচ্ছে। তোহা ঠিক কতটা শুনেছে? কি শুনেছে? প্রশ্ন করার সাহসটুকুও হয় না তার। তোহা একবার রানুর দিকে তাকিয়ে বলল,” আপনি কেন কাঁদছেন রানু আন্টি? কি হয়েছে?”
রানু কোনো জবাব দিতে পারল না। আমীর উঠে দাঁড়ালো। সেও কোনো কথা বলতে পারছে না। সকল শব্দ গলার কাছে এসে আটকে গেছে যেনো।
রানুই প্রথম বলল,” তোমার বাবার খু-নি সম্পর্কে একটা তথ্য কানে এসেছে তোহা। সেই ব্যাপারেই আমি আবিরের সাথে কথা বলছিলাম। তাই না আবির?”
আমীরের চেহারা পুরোপুরি রক্তহীন হয়ে যায়। তোহা বিস্মিত হয়ে তাকায়। চোখ বড় বড় করে উদগ্রীব কণ্ঠে শুধালো,” মানে? কি রকম তথ্য? আমার বাবার খু°নি সম্পর্কে কিছু? তার নাম কি জানা গেছে?”
তোহা প্রশ্নগুলো করতে করতে আমীরের দিকেও তাকায়। আমীরকে হতাশাগ্রস্ত দেখায়। সে একহাত কপাল রাখে। তোহা ক্রোধে চিৎকার দিয়ে বলল,” আমার বাবার হ°ত্যাকারী কে? কে সেই জালিম লোক? বলুন! আমি শুনেছি রানু আন্টি হয়তো এই বিষয়েই কথা বলছিলেন। আমীর আপনি সব জানেন তাই না? নাহলে আমাকে দেখেই চুপ হয়ে গেলেন কেন? কি লুকাচ্ছেন আমার থেকে? প্লিজ বলুন, কে সেই নরাধম যে আমার বাবাকে খু°ন করেছে? আমার বাবা তার কি এমন ক্ষতি করেছিল যে মানুষটাকে এতো নির্মমভাবে মা-রল? কে সেই নির্দয়?কেন সে আমার জীবনটা এমন শূন্য করে দিল?”
আমীরের চোখ টলমল হয়ে আসে। অসহায় কণ্ঠে বলে,” মায়া শোনো…”
আলতো করে দুই হাত তোহার কাঁধের উপর রাখতে নিতেই তোহা ঝারি মে-রে সরিয়ে দেয় আমীরের হাত। উচ্চস্বরে বলে,” আমাকে আগে সত্যিটা বলুন।”
পেছন থেকে রানু বলল,” তোহা, তুমি কি শুনেছো আমি জানি না। কিন্তু আমরা তোমার কাছ থেকে কিছু লুকাবো না। যতটা তোমার জানা উচিৎ ততটা তোমাকে জানতেই হবে।”
আমীর তৎক্ষণাৎ রানুর দিকে তাকালো। রানুর চোখমুখ ইস্পাতের মতো শক্ত। কঠিন গলায় বলল,” তুমি তোমার বাবার খু°নি কে জানতে চাও?”
তোহা ঘুরে তাকাল। তীব্র কৌতুহল নিয়ে বলল,” নিশ্চয়ই চাই। আমার বাবাকে কেন মা-রা হলো? কোন জানোয়ার এই কাজ করল আমি জানতে চাই রানু আন্টি, প্লিজ আমাকে বলুন।”
তোহা রানুর কাছে এগিয়ে আসে। অনুনয়ের দৃষ্টিতে রানুর উত্তরের প্রতীক্ষা করে। পেছন থেকে আমীর হাত জোড় করল। তার দুই চোখ নিদারুণ হাহাকারে সিক্ত। ঠোঁটজোড়া নিঃশব্দ আর্তনাদে থরথর করে কাঁপছে। সেই আকুতিভরা মুখটির দিকে চেয়ে রানু খুব বেশি নিষ্ঠুরতা করতে পারল না। শুধু শান্ত গলায় বলল,”এই ব্যাপারে আবিরই তোমাকে ভালো বলতে পারবে। ওর কাছেই জিজ্ঞেস করো। ”
এটুকু বলেই রানু চুপচাপ বের হয়ে যায়। আমীরের গলার কাছে থমকে থাকা নিঃশ্বাসটা মুক্ত হয় এতোক্ষণে। রক্তহীন সাদা চেহারাটা স্বাভাবিক দেখায়। সে যেন প্রাণ ফিরে পায়। স্বস্তিভরা শ্বাস নেয়। তোহা সহসা আমীরের দিকে ধেঁয়ে এসে তার কলার চেপে ধরে প্রশ্ন করল,” বলুন, কে? আপনি জানেন তাই না?”
আমীর বিভ্রম নিয়ে তাকায় তোহার ক্রোধপরায়ণ লালচে মুখটির দিকে। বড় বড় চোখ দু’টো থেকে যেন ঠিকরে বের হচ্ছে আগুন। এই উত্তাপে পুড়ে ছাই হতেও কোনো দ্বিধা নেই আমীরের। সে তোহার হাত দু’টি চেপে ধরে বলল,” আমি তোমাকে সব বলব। তার আগে তুমি রিল্যাক্স হও। চোখ মোছো। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শোনো।”
আমীর তোহার চোখের জল মুছে দেয়। তাকে ধরে বিছানার উপর বসায়। নিজে বসে ঠিক তোহার বরাবর, মেঝেতে হাঁটু গেঁড়ে। তোহা অস্থিরচিত্তে বলল,” আমি শান্ত হতে পারছি না। প্লিজ আমাকে আগে সত্যি কথাটা বলুন। শাদীদ নামের ওই লোকটিকে তো আপনিই মে°রেছিলেন তাই না? সে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছিল বলে? তার ওই ভুল ইনফরমেশনের কারণেই আমার বাবা ম°রে যায়। হাসান সাহেব আমাকে বলেছিলেন এইসব৷ কিন্তু শাদীদ কার হয়ে কাজ করতো? কাকে সে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছিল? আমি হাসান সাহেবকে ব্যাপারটা নিয়ে ইনভেস্টিগেশন করতে বলেছি। কিন্তু তারপর তিনি যেন কোথায় পালিয়ে গেলেন৷ কিছুই জানা হলো না আমার। এখন কি আপনি সব জানতে পেরেছেন, বলুন না!”
আমীর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল। এই ব্যাপারে সে কিছুই জানতো না। তোহা যে তার বাবার মৃ°ত্যুর জন্য হাসানকে ইনভেস্টিগেশন করতে বলেছিল তা তো হাসান আমীরকে জানায়নি কখনও! এর মানে সেদিন আমীর সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিল। যদি সে হাসানকে ফায়ার না করতো তাহলে হয়তো এতোদিনে হাসান তোহাকে সবকিছু জানিয়ে দিতো।ভাগ্যিস তেমন কিছু হয়নি। ভাগ্যিস আমীর আগেই সতর্ক হতে পেরেছিল। নিজের সিদ্ধান্তের উপর গর্ব হলো তার। সে হৃষ্টচিত্তে বলল,
” হাসান এই ব্যাপারে কিছুই করতে পারতো না মায়া। তোমার উচিৎ ছিল সবার আগে আমাকে জানানো। যাইহোক, হাসান যতটুকু বলেছে ততটুকু সত্যি। শাদীদ ভুল ইনফরমেশন দিয়েছিল। কারণ সে তোমার বাবার শত্রু। কিন্তু সে কার হয়ে কাজ করতো সেটা এখনও জানা যায়নি। তবে আমি প্রমিস করছি, খুব শীঘ্রই তোমার বাবার খু°নিকে তোমার সামনে হাজির করব। তুমি নিজহাতে তাকে শাস্তি দিবে। আই প্রমিস ইউ।”
তোহাকে আশাহত দেখালো। ভ্রু কুচকে বলল, ” তাহলে রানু আন্টি কেন বললেন যে আপনি সব জানেন?”
” রানু আন্টি ভুল ভেবেছে।”
” কেন ভুল ভাবল?”
” স্নেহার জন্য। আমরা যখন এখানে ছিলাম না তখন স্নেহা এসেছিল। সে রানু আন্টিকে কিছু মিথ্যা কথা বলেছে। সেসব শুনেই রানু আন্টি আমাকে ভুল বুঝেছে।”
” আমার বাবার খু°নের সাথে স্নেহার কি সম্পর্ক? ও এই বিষয়ে কতটুকু জানে?”
” আমি যতটুকু জানি সেও ততটুকুই জানে। তুমি চিন্তা কোরো না।”
” চিন্তা করব না কেন? আসল খু°নির ব্যাপারে কি কেউই জানে না? তাকে কি কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না?”
” আমার উপর ভরসা রাখো, নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে! আমি কথা দিচ্ছি তো।”
তোহা সহজেই আমীরের উপর ভরসা করে ফেলল। কারণ আমীর শাদীদকেও শাস্তি দিয়েছে। তাই আশা করা যায় শাদীদের পেছনে যারা আছে তারাও শাস্তি পাবে। আমীর নিশ্চয়ই তাদেরকে খুঁজে বের করবে। তোহা মৃদু হেসে মাথা নাড়ল। বলল,” ঠিকাছে।”
আমীর প্রসঙ্গ বদলানোর চেষ্টা করল,” আচ্ছা, তুমি না ডায়েরী আনতে গিয়েছিলে? ডায়েরীটা পেয়েছো?”
তোহার যেন সম্বিৎ ফিরল। মাথায় হাত রেখে হঠাৎ মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল,” হ্যাঁ… কিন্তু ডায়েরীটা আমি খুঁজে পাচ্ছি না।”
” মানে? ঘরে নেই?”
” আমি বালিশের নিচে রেখেছিলাম। পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও পেলাম না।”
আমীর উঠে দাঁড়ায়। আফসোস নিয়ে বলে,” ড্যাম! স্নেহা হয়তো এজন্যই এসেছিল এখানে। ও ডায়েরীটা নিয়ে যায়নি তো?”
তোহা মাথা নিচু করে বলল,” জানি না। আই এম স্যরি। আমি আপনাকে ডায়েরীটা দেখাতে পারলাম না।”
আমীর ঝুঁকে এসে তোহার গালে হাত রেখে বলল,” ডন্ট বি স্যরি। ডায়েরী আমি খুঁজে বের করব। আর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি তোমার সব কথা বিশ্বাস করেছি। যদি তোমার ধারণা সত্যি হয় তাহলে স্নেহা ওর উপযুক্ত শাস্তি পাবে। তারপর তোমার বাবার খু°নিকেও আমরা খুঁজে বের করব।”
তোহা মুখ তুলে আমীরের দিকে তাকায়। গভীর, রহস্যময় চোখ দু’টো বরাবরের মতোই গা ছমছমে অনুভূতি দেয়। কেমন ঘোর লেগে যায়। তোহা আচ্ছন্নের মতো চেয়ে রইল। আমীর তোহার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতেই মৃদু কেঁপে উঠল সে। শরীর বেয়ে প্রবাহিত হলো তীক্ষ্ণ একটা স্রোত। বড় বড় চোখ করে চাইতেই আমীর ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তোহা স্থবির হয়ে বসে থাকে অনেকটা ক্ষণ।
____________________
রানু লাউঞ্জরুমে পায়চারী করছিল। কোনোভাবেই স্থির হয়ে বসতে পারছে না। তার এখনও মাথাটা ঘুরছে। বার-বার মনে হচ্ছে, এটা কোনো দুঃস্বপ্ন হোক। স্বপ্নটা ভেঙে যাক! আমীরকে বের হতে দেখে চোয়াল শক্ত করে প্রশ্ন করল,” মিথ্যাবাদী কেন বানালি আমাকে? তুই কি চাস?”
আমীর সাবধানে রানুকে নিয়ে অনেকটা দূরে বাগানের কাছাকাছি একটা জায়গায় এসে দাঁড়ালো। মাথা নিচু করে বলল,” স্যরি রানু আন্টি। আমি চাইনি আমার জন্য তুমি মিথ্যা বলো। কিন্তু এখানে আমিই বা কি করতে পারি বলো? নিরুপায় আমি!”
” মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়েও কি একটু মায়া হচ্ছে না তোর?”
আমীর হাসল। হতাশ সুরে বলল,” এই মায়াই তো শেষ করল আমাকে!”
” তোর আর কোনো এক্সকিউজ আমি শুনবো না। তোহার সত্যিটা জানা দরকার। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দিনের পর দিন মিথ্যা বলতে পারব না। আমি কোনো প্রতারক হতে চাই না।”
আমীর অনুরোধ করে বলল,” মাত্র কিছুদিনের ব্যাপার রানু আন্টি… প্লিজ আমার দিকটা একবার ভেবে দেখো!”
” আমি তোর কথায় কোনো অন্যায় করতে পারব না। এমনিও মেয়েটার সাথে যথেষ্ট অন্যায় হয়েছে। হয় তুই এর একটা ব্যবস্থা করবি নাহলে আমি তোহাকে সব সত্যি বলে দিবো।”
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আমীর। মনমরা হয়ে বলল,” ঠিকাছে। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আগামীকাল তোহা এখান থেকে চলে যাবে।”
” কই যাবে?”
” ইটালি। যেখানে ওর যাওয়ার কথা ছিল।” আমীরের কণ্ঠ ভারাক্রান্ত শোনায়।
রানু বেপরোয়া ভাবে বলল,” সেই ভালো। ওর এখান থেকে চলে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো। ”
যাওয়ার আগে তোহার ঘরে আরেকবার উঁকি দিল আমীর। কেমন শক্ত হয়ে বসে আছে মেয়েটা। বেশিক্ষণ ওদিকে চেয়ে থাকলেই বুক চিনচিনে ব্যথাটা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সে আর মায়া বাড়াতে চায় না। দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। কি হবে এতো মায়া দিয়ে কোনোকিছুই যখন আর সম্ভব না! মেইন গেইট খোলার শব্দ কানে আসতেই বাগানের দিকে দৌড়ে যায় তোহা। রানু বাঁধা দিয়ে বলল,” কোথায় যাচ্ছো?”
তোহা অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিল,” আমীর সাহেবকে একটা কথা বলার ছিল।”
” কি কথা? আমাকে বলো।”
” না। উনাকেই বলতে হবে।”
” শোনো তোহা, কাল তুমি ইটালি যাচ্ছো।”
ইটালি যাওয়ার কথা শুনে যেন তোহার মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়। সে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল,” এর মানে?”
” এমনই তো কথা ছিল। তোমাকে ইটালি পাঠানোর সব ব্যবস্থা আবির করে রেখেছে। কাল সকালে তোমার ফ্লাইট। তৈরী হয়ে থাকো। জিনিসপত্র সব গুছিয়ে নাও।”
তোহা দিশেহারা বোধ করল। বিপন্ন কণ্ঠে বলল,” আজ সকালেও আপনি অন্যরকম কথা বলছিলেন রানু আন্টি। তাহলে হঠাৎ কি হলো?”
রানু যেন আচমকা রেগে গেল। কটমট করে বলল,” হঠাৎ কি হলো মানে? এটা তো আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তুমি এখানে দুইদিনের মেহমান হয়ে এসেছো। জনম জনম ধরে থাকতে আসোনি। একদিন না একদিন তো তোমাকে যেতেই হতো।”
তোহা ভীষণ আহত হলো এই কথা শুনে। চোখে মুখে পড়ল মনখারাপের মেদুর ছায়া। এই রানু আন্টিকে সে চেনে না! সকালেও তিনি চাইছিলেন তোহা আর আমীর যেন এক হয়। আর এখন তিনি সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলছেন। তার ব্যবহারও বদলে গেছে। স্নেহময়ী দৃষ্টিতে ভর করেছে রুক্ষতা! এই সবকিছুর পেছনে কি স্নেহার কোনো হাত আছে? তোহা একছুটে বাগানের সীমানা পেরিয়ে মেইন গেইটের কাছে গেল।আমীরের নাম ধরে ডাকতে লাগল,” আমীরসাহেব শুনুন, যাবেন না প্লিজ।”
আমীর গাড়িতে উঠতেই নিচ্ছিল। তোহার চিৎকারে থামল। অবাক হয়ে তোহার দৌড়ে আসা দেখল। শাড়ি পরে দৌড়াতে তোহার বেশ কষ্ট হচ্ছে। আমীরের মনে পড়ে যায় তার সুন্দর স্বপ্নের দৃশ্যটা। যে স্বপ্ন আজ-কাল সে রোজ দেখে। স্বপ্নে তাদের সম্পর্কটা হয় স্বামী-স্ত্রীর। তোহা এতো দূরে দাঁড়িয়ে থাকে না। খুব কাছে এসে ঝড় তুলে দেয়। ভালোবাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। আদুরে কণ্ঠে কথা বলে। আমীরের তখন মনে হয় বাস্তব জীবনের চেয়েও স্বপ্নময় জীবনটা অনেক সুন্দর, অনেক মধুর!
আমীর জিজ্ঞেস করল,” কিছু বলতে চাও?”
তোহা রাগান্বিত কণ্ঠে শুধালো,” রানু আন্টি বলল, কাল নাকি আমি ইটালি যাচ্ছি?”
আমীরের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে,” হুম।”
” আমাকে তো এই ব্যাপারে কিছুই জানালেন না।”
” হঠাৎ আমার মনে হয়েছে, তোমার এইখানে থাকাটা সেইফ না। ইটালি চলে যাওয়াই ভালো। ”
” আমি কোথাও যেতে চাই না।” তোহা জেদ ধরল। আমীর বলল,” এটা তোমার বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল।”
” হোক। আমি তবুও যাবো না। ওখানে আমার কেউ নেই।”
” এইখানে তোমার কে আছে?”
আমীরের পাল্টা প্রশ্নে তোহা থমকে যায়। কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। আসলেই তো, কিসের টানে সে থাকতে চাইছে এই দেশে? তার তো আপন বলতে শুধু ইটালির ওই রেশমী ফুপুই আছেন। যিনি বাবার মৃ-ত্যুর পর একবারও তোহার সাথে যোগাযোগ করেননি। অবশ্য, মৃত্যুর খবর তিনি পেয়েছেন কি-না সেটাও তোহা জানে না!
” আমি বুঝি আপনার কাছে খুব বোঝা হয়ে গেছি যে এতো দ্রুত তাড়াতে চাইছেন!”
” এইখানে বোঝা হওয়ার প্রসঙ্গ কেন এলো? তোমাকে ইটালি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাকেই দিয়ে গেছিলেন তোমার বাবা। সেটা পূরণ হয়ে গেলেই আমি দায়মুক্ত হবো।”
” ও। আমি বুঝি শুধু আপনার কাছে দায়ভার? অন্যকিছু না?”
আমীর এই প্রশ্নের উত্তর দিল না। ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে বলল,” তোমার বাবার খু°নির হদিশ পেলে তোমার সাথে যোগাযোগ করব। এসব নিয়ে টেনশন কোরো না।”
তোহা মুচকি হাসল। খুব মলিন দেখালো তার হাসিটা।
” আপনার কি মনে হয় আমি এইজন্য ছুটে এসেছি? আপনার সাথে কি শুধু আমার লেন-দেনের সম্পর্ক? তাহলে কালরাতে, কিছুক্ষণ আগে… এসব কি ছিল? আপনি আমার সাথে এসব কেন করলেন? আমার মন নিয়ে খেলা করছেন নাকি আপনি? আমি কি আপনার হাতের খেলনা যে যখন ইচ্ছা হবে কিস করবেন, ভালোবাসা দেখাবেন, আর যখন ইচ্ছা হবে দূরে পাঠিয়ে দায়মুক্ত হতে চাইবেন? এতোই সহজ আপনার কাছে সবকিছু?”
” তুমি রেগে যাচ্ছো মায়া, কাম ডাউন।”
” শাট আপ। আমাকে মায়া বলে ডাকবেন না আপনি। এই নামে শুধু আমার বাবা ডাকতেন।”
” স্যরি।”
” আপনি একটা জঘন্য লোক! আপনার থেকে কোনো স্যরি শুনতে চাই না আমি। দয়া করে আমার সামনে আসবেন না আর।”
তোহা অন্যদিকে ঘুরে চোখের জল মুছল। আমীর আক্ষেপ নিয়ে বলল,” ঠিকাছে। আর এই জঘন্য লোকের সাথে তোমার দেখা হবে না। এটাই আমাদের শেষ দেখা।”
আমীরের এমন কথা শুনে তোহার বুকে উথাল-পাথাল শুরু হয়। কিছু বলার আগেই আমীর দ্রুত প্রস্থান করল। গাড়িতে বসে একবারও পেছন ফিরে দেখল না। কিন্তু সে জানতো, পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি মেয়েটা এই মুহূর্তে সমস্ত মনখারাপকে সঙ্গী করে একা দাঁড়িয়ে আছে।
_______________
মুখে বিউটি মাস্ক লাগিয়ে ইজিচেয়ারে রিল্যাক্স মুডে বসে আছে স্নেহা। তার হাতের নখ পরিষ্কার করে তাতে নেইল পলিশ লাগাচ্ছে নূরজাহান। স্নেহা গুণগুণিয়ে গান গাইছে। চোখে শসার টুকরো থাকায় সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না। বন্ধ চোখেই নূরজাহানকে প্রশ্ন করল,” আমার রুহ আফজার শরবত কোথায় নূর?”
” পাশের টেবিলেই আছে ম্যাম। হাত দিলেই পাবেন।”
স্নেহা টেবিল হাতড়ে গ্লাস খুঁজছিল। এমন সময় আমীর প্রবেশ করে ভেতরে। রুহ আফজার গ্লাসটা নিয়ে স্নেহার হাতে তুলে দেয়। স্নেহা মৃদু হেসে বলল,” থ্যাংকস নূর।”
নূরজাহান সাথে সাথেই আমীরের উপস্থিতির কথা জানাতে নিচ্ছিল তখন আমীর ইশারায় তাকে চুপ হতে বলে। নূরজাহান ভয়ে চুপ করে যায়। আমীর তাকে ঘর থেকে বের করে নিজে তার জায়গায় বসে। স্নেহা কয়েক সিপ শরবত খেয়ে বলল,” থামলে কেন নূর? দ্রুত করো। আমার ফেইসও তো ক্লিন করতে হবে। পঁচিশ মিনিট হয়ে গেছে অলরেডি!”
আমীর নখ পরিষ্কার করার যন্ত্র তুলে নেয়। স্নেহার হাতটা হঠাৎ চেপে ধরে নখের মধ্যে সজোরে গেঁথে দেয় সুচালো অংশটা। ফিনকি দিয়ে র-ক্ত বেরিয়ে আসে নখের ভেতর থেকে। তীব্র কষ্টে চেঁচিয়ে ওঠে স্নেহা। তার শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কেঁপে ওঠার দরুন চোখের উপর থেকে শসার টুকরো পড়ে যায়। সে চোখ মেলে আমীরকে দেখেই বিস্মিত হয়।
আমীর শীতল এবং স্পষ্ট কণ্ঠে জানতে চাইল,” ডায়েরীটা কোথায়?”
স্নেহা নিজের হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ব্যথায় তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। মিনতির স্বরে বলল,” আমার হাত ছাড়ো আমীর। এটা কেমন অসভ্যতা! প্লিজ, আমি ব্যথা পাচ্ছি।”
মৃদু হাসল আমীর,” তোমাকে আরাম দেওয়ার জন্য আমি ধরিনি। ডায়েরী কোথায় বলে দাও, ছেড়ে দিচ্ছি।”
” কিসের ডায়েরী? আমি কোনো ডায়েরীর কথা জানি না!”
মুখের উপর মিথ্যা কথা শুনে আমীর আরও রেগে যায়। ক্ষতের জায়গায় শক্ত করে টিপে ধরে। রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়। স্নেহা আকাশচুম্বী চিৎকার দিয়ে উঠল। তাড়াহুড়ো করে এক নিঃশ্বাসে বলল,” আলমারিতে আছে ডায়েরী। চাবি আমার ড্রেসিংটেবিলের সেকেন্ড ড্রয়ারে পাবে।”
আমীর স্নেহার হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। সাথে সাথে অন্যহাত দিয়ে আঙুলটা চেপে ধরল স্নেহা। মনে হচ্ছে তার এই আঙুল অবশ হয়ে যাচ্ছে। কতটা র-ক্ত বেরিয়ে গেছে! তীক্ষ্ণ ব্যথায় শিরশির করছে হাত। আমীর আলমারী খুলে ডায়েরী বের করে। দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে প্রথম কিছু পাতায় চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,” তার মানে তুমি আসলেই ফীহার কাছে আমার নাম করে চিঠি লিখতে?”
স্নেহা চোখমুখ কুচকে বলল,” শুধু একবারই লিখেছিলাম। তাতে কি এমন হয়েছে?”
” মায়ের চিঠিগুলোও যে তুমি লেখোনি তার গ্যারান্টি কি? তোমাকে আর কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না স্নেহা!”
” মানে কি? এই সব কুবুদ্ধি তোমাকে ওই মেয়ে দিয়েছে তাই না?তোহার কথা শুনে আমাকে সন্দেহ করলে তুমি বিরাট ভুল করবে। আমি তোমার পাশে সারাজীবন থাকব আমীর। কিন্তু তোহা ক্ষণস্থায়ী। যেদিন ও তোমার আসল সত্যি জানতে পারবে সেদিন থেকে তোমার মুখও আর দেখতে চাইবে না।”
আমীর গম্ভীর স্বরে বলল,” সেটা আমার ব্যাপার। আমি বুঝে নিবো। তোমার এসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। ”
” ব্যাপারটা আর তোমার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। মিস রানুও এখন সব জানে। দেখো, কখন সে তোহাকে বলে দেয় আর…”
” রানু আন্টি কিছুই বলবে না। তুমি কি মনে করেছো এভাবে তাকে সব জানিয়ে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে?”
” রানু আন্টি যদি না বলে তাহলে আমি বলব।”
” তুমি জানো এটা তোমার জন্য ঠিক হবে না। আশা করি এই বোকামিটা তুমি করবে না। তোমাকে আমি অনেক বুদ্ধিমতী মেয়ে বলেই জানি।”
আমীর ডায়েরীটা হাতে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। পেছন থেকে স্নেহা উৎক্ষীপ্ত কণ্ঠে বলল,” আমি ওই মেয়েটাকে ছাড়ব না। ওর কি অবস্থা করি তুমি নিজের চোখেই দেখবে।”
আমীর পেছনে না তাকিয়েই বলল,” আফসোস, সেই সুযোগটা তুমি আর পাচ্ছো না। কাল সকালের ফ্লাইটে ওকে আমি ইটালি পাঠাচ্ছি।”
স্নেহা এই কথা শুনে বোকা বনে গেল। সে ভাবেনি আমীর এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলবে! অবশ্য স্নেহাও তো এটাই চেয়েছিল। কিন্তু তবুও তার কেমন খটকা লাগল। সে যা চায় তা আমীর এতো সহজে কেন করবে?
____________
ঠিক রাত দশটায় রানু আমীরকে ফোন করে অস্থির কণ্ঠে জানায়,” তোহাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আবির! তুই দ্রুত এখানে আয়।”
” মানে? ও বাড়ি থেকে বের হলো কিভাবে গার্ডরা কি করছিল?”
” আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে বসেছিল। রাতে আমি ডিনারের জন্য ডাকতে এসে দেখলাম ঘরে নেই। সারাবাড়ি খুঁজেও কোথাও পেলাম না।”
” থাকো আমি আসছি।”
ফোনটা রাখা মাত্রই আমীর বেসামাল হয়ে পড়ে। তার চোখের ঘুম উঁবে যায়। ঢিপঢিপ করতে থাকা বুক নিয়ে ত্বরিত গতিতে গাড়ির চাবি হাতে বেরিয়ে পড়ে। নিচে লিভিংরুমের কাউচে বসে মনের সুখে টিভি দেখছিল স্নেহা। তার একটা আঙুলে ব্যান্ডেজ লাগানো। আমীরকে হন্তদন্ত হয়ে বের হতে দেখে খুব শান্ত গলায় প্রশ্ন করল সে,” কই যাও?”
আমীর চোখ গরম করে তাকাল একবার। চোয়াল শক্ত করে বলল,” এসবের পেছনে যদি তোমার হাত থাকে, তাহলে আই সুয়্যার আই উইল কিল ইউ।”
চলবে
®Sidratul Muntaz