#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব :শেষ
#লেখিকা_নুসরাত_শেখ
পাঁচ মাস পর
সিজার কেন করতে হবে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা?(ঐশানী রাগ করে)
কম্পিকেশন হয়েছে সোনাপাখি একটু।আচ্ছা শোন প্লিজ ভয় পেওনা আমরা আছিতো।(ইফরাজ ঐশানীর গাল ধরেই)
হুযাইফার সময়ে তো নরমাল ডেলেভারি হলো।আর এই প্রেগনেনসির সময় তো কোন সমস্যাই নেই।তাও কিসের কম্পিকেশন বলো আমাকে?(ঐশানী)
প্লিজ সোনাপাখি আমার এত্ত পেনিক হয়ো না।সব ঠিকঠাক এই হবে।তুমি একটু প্রে করো শুধু।
হসপিটাল এ ভর্তি করানোর এক ঘন্টার পর ডাক্তার সিজার এর কথা বলেন তার কারণ এক সাথে টিউমার এর অপারেশন করবেন।ঐশানীর এ সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই।আমি মামমাম আর ডাক্তার ছাড়া কেউ জানে না এই ব্যাপার এ।আম্মু ও নারাজ হয়েছেন যেহেতু এখন ও টাইম আছে নরমাল এ ওতো হতে পারতো।এত্ত জলদি হসপিটাল আনার কি দরকার ছিল?আমার হাতে কিছুই নেই।অটিতে নেওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমার সোনাপাখি আমাকে ধরে সে কি কান্না।ওর কান্না দেখে আমার প্রিন্সেস ও কেদে কেটে শেষ।মায়ের নেউটা বলে কথা।আমি ওর সামনে চুপচাপ থাকলেও ওকে অটিতে নিতেই আগের বারের মতো অবস্থা হলো।
এমনে সিজার করতে আধা ঘন্টার থেকে এক ঘন্টার মতো লাগে।কিন্ত দুইটা অপারেশন এর জন্য সময় লাগল পুরো তিন ঘন্টার মতো।বেবিকে দিয়েছিলো এক ঘন্টার মাথায়।ছোট্ট ছেলেটাকে কোলে নিতে আমার হাত কাপছিলো।তাও আমি বসে ওর কানে আজান দিয়ে দিলাম।আমি অল্প কিছুক্ষণ রেখেই ওকে দিয়ে দেই মামমাম এর কাছে।এই দিকে আব্বু,আম্মু-আব্বু, দাদা-দিদা ও অনেক পেনিক করছে এত্ত টাইম কেন লাগছে?আব্বু আমাকে নিয়ে অন্য একটা খালি জায়গাতে আসল।তারপর জিজ্ঞেস করল আসল কারণ কি?আমি চুপচাপ এই থাকলাম। বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও যখন উত্তর দিলাম না আব্বু চলে গেলেন ভেতরে।আমি সেখানেই দাড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়েই থাকলাম।
তিন ঘন্টার অপারেশন এর পর ডাক্তার রা বের হলেন।
আমার ঐশানীর কি খবর ডাক্তার মারিয়া?(ইফরাজ)
অপারেশন সাকসেসফুল মিস্টার ইফরাজ।কয়েকদিন একটু অসুস্থ বোধ করবেন।তবে ধীরে ধীরে ভেতরের ঘা শুখালে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর বাকি কথা আমার কেভিন এ আসুন বলে দিবো।(ডাক্তার মারিয়া)
ওকে কেভিন এ দিবেন কখন?(ইফরাজ)
কিছুক্ষণ এর মধ্যেই। তবে হাইজেন মেনটেইন করবেন এইবার প্লিজ।(ডাক্তার মারিয়া বলেই চলে গেল)
_______
পরের দিন সকালে
তুমি খুব খারাপ মানুষ ইফরাজ। (ঐশানী ধীরে ইফরাজ এর উদ্দেশ্য)
হুম জানিতো।উঠো এখন ডাক্তার তোমাকে খাইয়ে দিতে বলছে।তারপর ঔষধ আছে খেতে হবে।আর মেবি কিছু ইঞ্জেকশন ও দিবে।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)
আমাকে জানাও নি কেন ব্যাপার টা?(ঐশানী বসে)
কোন ব্যাপার টা?(ইফরাজ)
টিউমার এর ব্যাপার টা?(ঐশানী)
তুমি কিভাবে জানলে?(ইফরাজ অবাক হয়ে)
নার্স এর থেকে জেনেছি।ডাক্তার কে বলতে বারণ করেছ।আর সবাই কি তোমার কথা শুনবে।হঠাৎই সিজার এর কারণ জিজ্ঞেস করাতেই তো জানতে পারলাম আমার এত্ত বড় রোগের কথা।কেন বলোনাই বলো?(ইফরাজ এর হাত ধরেই ঐশানী)
আমি চাইনা আমার সোনাপাখির কষ্ট হোক এমন কোন কথা সে জানুক।কি হতো না জানলে।এইযে এখন জেনে আরো কষ্ট পাচ্ছ।আমি চাইনা আমার ভালোবাসার মানুষদের কষ্টে দেখতে তাই জানাইনি।আর বাবু কে এত্ত জলদি এই জন্য এই নিয়েছিলাম সোনাপাখি।হুযাইফার কষ্ট হবে জানলে আমি সত্যি নিতাম না।তবে তখন তোমাকে জানিয়ে অপারেশন করা লাগতো এইযা।এখন আগের কথা বলে লাভ নেই।এই সুপটা খাও ঔষধ খেতে হবে।(ইফরাজ)
আই লাভ ইউ ইফরাজ।তোমার মত কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারতো না।থ্যাঙ্কস আমার লাইফে আসার জন্য।আমার বাচ্চাদের বাবাই সত্যি করে বলছি আই রেলি ভেরি লাভ ইউ সো মাস।(ইফরাজ কে জড়িয়ে ধরেই ঐশানী)
আই লাভ ইউ টু সোনাপাখি।আমার হুযাইফা ও ইয়ামান এর মামমাম।(ইফরাজ ঐশানীকে ধরেই)
ইয়ামান কে?(ঐশানী ইফরাজ এর দিকে তাকিয়েই)
ছেলের নাম রাখলাম সুন্দর না?(ইফরাজ)
হুম অনেক সুন্দর।হুযাইফার বাবাই আমি সুপ খাবনা।(ঐশানী মুখ গোমরা করে)
কি ভাবে সোনাপাখি?(ইফরাজ)
ভাত খাব।(ঐশানী)
দুপুর থেকে খেতে দিব।এখন সুপ এই খেতে হবে।প্লিজ সোনাপাখি।(ইফরাজ)
হুযাইফা আর বেবি কোই?(ঐশানী)
হুযাইফা ওর দিদার সাথে বাসায় গেছে দুপুর এর খাবার রান্নার জন্য। আর আম্মু ইয়ামান কে নিয়ে শিশু ওয়ার্ড এ আছে চেকাপ এর জন্য সাথে তোমার শশুর আব্বু ও আছে।আর তোমার আব্বু আর দাদা-দিদা কে মামমাম এর সাথে বাসায় পাঠায় দিছি।সারারাত সবাই ঝেগে ছিল।একটু রেস্ট দরকার সবার এই। (ইফরাজ)
বেবির কি হয়েছে চেকাপ কেন করাবে?(ঐশানী উদ্বিগ্ন হয়ে)
এমনিতেই সিজার এর বেবিতো তাই আব্বু নিয়ে গেলো চেকাপ এর জন্য।আচ্ছা এখন খেয়ে নাও।(ইফরাজ)
ভাল লাগে না সুপ।(ঐশানী)
একটু কষ্ট করে খাও।(ইফরাজ)
হুম। (ঐশানীর ঠোঁট উল্টে)
সোনাপাখি আদর আদর পাইছে একটু আদর করি?(ইফরাজ)
না।(ঐশানী)
অসভ্য পুরুষ বললা না কেন?(ইফরাজ ঐশানীর গাল ধরে)
অমা অসভ্য পুরুষ শুনতে খুব ভালো লাগে নাকি?(ঐশানী ব্রু কুচকেই)
হুম কত্ত সুন্দর করে বল অসভ্য পুরুষ।আমার শুনতে ও তোমার মুখের ভঙ্গি দেখতে তখন খুব ভালো লাগে।(ইফরাজ)
দূর হোও অসভ্য পুরুষ। (ঐশানী অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে)
_______
দশ বছর পর
ইফরাজ সাহেব কেমন আছেন?(ফারাজ)
আরে মিস্টার ফারাজ যে?আমার শোরুম এ হঠাৎই কি মনে করে?(ইফরাজ)
আমেরিকার থেকে ফিরলাম দুইদিন হলো।আপনি জদি কিছু মনে না করেন একটা আবদার করতে পারি?(ফারাজ)
আগে বলেন কিছু মনে জদি না করার মতো হয় তাহলে মনে করবনা।আর মনে করার মতো হলে বলার দরকার নেই।(ইফরাজ)
প্লিজ ইফরাজ সাহেব আমার একটা আবদার রাখুন প্লিজ। (ইফরাজ এর হাত ধরে অনুনয়ের সুরে ফারাজ)
বলুন। (ইফরাজ হাত ছাড়িয়ে)
ঐশানীর সাথে একটু কথা বলতে চাই।প্লিজ একবার ওকে ডেকে দিবেন প্লিজ!(ফারাজ)
আপনার সাথে কথা বলার জন্য অকে জদি ডাকি ও আমাকে মেরেই ফেলবে।আর তার চেয়েও বড় কথা আমার অমূল্য সম্পদ কে আমি কারো সামনে আনিনা।আর ও পর্দা করে চলে।পর পুরুষের সাথে কথা বলেনা।(ইফরাজ)
প্লিজ ইফরাজ।(ফারাজ)
দাঁত থাকিতে দাঁতের মর্ম দিতে না জানলে পরে আফসোস করেও কোন লাভ নেই মিস্টার ফারাজ। আর আমি চাইনা আমার সোনাপাখি আপনাকে দেখে কষ্ট পাক।প্লিজ আমার অনেক কাজ আছে।আপনি আসতে পারেন। (ইফরাজ)
প্লিজ। (ফারাজ)
আপনি প্লিজ যেতে পারেন। (ইফরাজ রুঢলি)
______
জেবা আমার মানিব্যাগ টা দিয়ে যাও।(নাজমুল চিৎকার করেই)
চোখের সামনে সব রেখে একটু পর পর চিৎকার করা লাগে আপনার?(জেবা নাজমুল এর সামনে এসে)
তুমি নিজে না আসলে এভাবেই তো আনতে হয়।ছেলে রেডি হয়েছে?(নাজমুল জেবার হাত ধরেই)
হুম। ছাড়েন ফারাবির স্কুল এর জন্য দেরি হচ্ছে আর আপনার দোকান এর জন্য ও। (জেবা)
বিয়ের আগেই ভালো ছিল অন্তত নাজমুল ভাই বলে তুমি তো বলতা।এখন আপনি বলো কেন?(নাজমুল)
এখন আপনি আমাকে তুমি বলেন যে সেই জন্য। দুর আমার তরকারি পুরে যাচ্ছে আমি গেলাম আপনি রেডি হয়ে আসেন।(জেবা)
হুম ।
কথাটা বলেই সে ঝড়ের গতিতে স্থান ত্যাগ করল।বিয়ের পাচঁ বছরে পড়ল কিছুদিন হলো।মায়ের মৃত্যুর কিছুদিন আগেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম আমার মানিক টার সাথে।ওকে এই বাড়িতে আনার পাচঁটা বছর বিয়ের জন্য বলে বলে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।কিন্ত সে কিছুতেই মানলোনা।মায়ের অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ফারাবির কথা চিন্তা করতে বলে মা।অনেক বুঝিয়েছেন মা ওকে।নিতু ও ফোন করে বুঝাতো।নোমান ও পড়ালেখার জন্য বিদেশ চলে গেছিল।ও ফোন করতো জেবাকে প্রায় যেন আমাকে বিয়ের জন্য রাজি হয়।ছেলেটার কথা ভেবেও যেন রাজি হয়।মা প্রথম দ্বিমত করলেও যখন দেখল আমি বিয়ে করবনা অন্য মেয়েকে।তখন তিনিও লেগে পড়েন জেবাকে বোঝানোর জন্য।ফারাবি ও আমি বলতে পাগল। আমাকে আব্বু এই বলে।অনেক বোঝানোর পর পাচঁ বছর আগে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোই।কিন্ত আমার মানিক এর মনের চিলেকোঠায় আমার জায়গা হয়েছে মাত্র।সে এখন ও ফারাবির বাবাই এর প্রেমে মত্ত।ফারাবির জন্মদিন এ ও সারাদিন কারো সাথেই কথা বলেনা।চুপচাপ এক রুমে নিজেকে আটকে রাখে।স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক টা হয়েছে ঠিকই কিন্ত কোন না কোন ভাবে সে এখন ও তার প্রথম পুরুষ কে ভুলতে পারেনি।
এসব ভাবনা সর্বদাই মাথায় আসে।আমি রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিল এ বসলাম।ফারাবি এসে বসে খাচ্ছে আর বই পড়ছে।খুব বুদ্ধিমান ছেলে আমার।খাওয়ার পর ওকে নিয়ে চললাম স্কুলে দিতে তারপর দোকানে যেতে হবে।(নাজমুল)
_________
রাত বারোটার দিকে
আপনার সাথে একটা কথা ছিলো ।(জেবা নাজমুল এর পাশে বসে)
হ্যা বলো মানিক।(নাজমুল)
আপনি আমাকে মানিক বলবেন না কত্তবার বলব?(জেবা কপট রাগ দেখিয়ে)
আচ্ছা রাগ করোনা।আর বলবনা।এখন বলো কি বলবে?(নাজমুল)
ফারাজ দেশে ফিরেছে।(জেবা মাথা নিচু করে)
প্লিজ এমন কিছু বলোনা যেটা শুনলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবনা।(নাজমুল কান্না সিক্ত নয়নে জেবার হাত ধরেই)
না আপনি ভয় পাবেন না।আসলে আমার একটা পুরানো ফ্রেন্ড বলল ওর আসার খবর টা।তাই বললাম।আসলে আমি বলতে চাইছিলাম কি আপনি না ইন্ডিয়াতে চলে যেতে চাইছিলেন আমাদের নিয়ে।প্লিজ জলদি যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন?(জেবা)
তুমি ভয় পাচ্ছ জেবা?(নাজমুল)
হুম। (কান্না করে জেবা)
আমার মানিক আমি আমার ছেলেকে দূরে যেতে দিবোনা।তুমি চিন্তা করোনা।(নাজমুল জেবাকে জড়িয়ে ধরেই)
প্লিজ তাও আমি রিস্ক নিতে চাইনা ফারাবিকে নিয়ে। আপনি আমাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করুন প্লিজ। (জেবা নাজমুল এর শার্ট খামচে ধরে)
ঠিক আছে মানিক।তুমি টেনশন করোনা শান্ত হও। নাহলে ছেলে যদি দেখে ওর মা কান্না করছে তাহলে আমার সাথে আবার রাগ করবে।দিনদিন তোমার মতো ঘ্যার ত্যারা হয়ে যাচ্ছে। মাত্র সিক্স এ পড়ে তার কি রাগ বাবা?(নাজমুল জেবাকে রাগাতে)
আপনার মতো ঘ্যার ত্যারা আপনার ছেলে।কোন কথাই শুনেনা।সারাদিন দুই বাপ ছেলে আমার পেছনে পরে থাকেন আবার আমার দোষ দেন।সরেন তো সরেন।(জেবা নাজমুল কে ধাক্কা দিয়ে)
থাকনা জেবা অনেক দিন হলো একটু ভালোবাসিনা তোকে।সারাদিন তো ছেলের কাছেই থাকিস।ছেলের আব্বু এর কি একটু ভালোবাসা পেতে মন চায়না বল।(নাজমুল জেবার হাত ধরেই)
তোমার ভালোবাসার সময় তুই করে বলতে হয় কেন নাজমুল ভাই?(জেবা মাথা উচু করে)
কারণ এই সময়ই শুধু তুই আমাকে তুমি করে বলিস।তাই আমিও তুই এতে চলে যাই।(নাজমুল)
ছাড়ো।(জেবা)
থেকে যা আজকে আমার কাছে প্লিজ।(নাজমুল)
কেনো?(জেবা)
ভালোবাসতে চাই তাই।প্লিজ থেকে যা।(নাজমুল)
হুম। (জেবা নাজমুল এর বুকে মুখ গুজে)
ভালোবাসি আমার জেবা ফুল।(নাজমুল)
আমিও।(জেবা)
হুম। তোমায় যতোটা নিজের করে পেতে চাই,তার চেয়েও অনেক বেশি চাই তুমি অন্য কারো না হোও।অবসরে নয় অভ্যাসে তুই আমার হয়ে থেকে যা জেবা ফুল।(নাজমুল মুচকি হেসেই)
হুম থাকবতো সারাজীবন।(জেবা নাজমুল এর বুকে মুখ গুজে)
_________
আমি বলে দিচ্ছি মামমাম তোমার নাতি নাতনি যদি এখন খেতে না বসে ওদের মেরে পিঠের ছাল তুলে দিবো।(ঐশানী চিৎকার করেই)
বালাই সাট এটা কেমন কথা?আমার ঐশানী মায়ের আজকে এত্ত রাগ কেন ?(মামমাম ঐশানীর সামনে এসে)
রাগ করবোনা তো কি করব মামমাম ?দিনদিন দুইটা আমার জীবন তেজপাতা বানায় দিলো।বাপের মতো অসভ্য হয়েছে দুইটায়।এই নিয়ে তিনটা স্কুল থেকে ছাড়ানো হলো।এত্ত অসভ্য কেউ হয় মামমাম?মাত্র ক্লাস পাইভে পড়ে আর তিন তিনটা স্কুল থেকে ওদের বরখাস্ত করা হয়েছে।স্যার,স্টুডেন্ট ইভেন কেন্টিন থেকেও এই দুইটার জন্য কথা শোনা লাগে।বোনের ভাই এত্ত প্রক্টেটিভ তার বোনকে কেউ কিছু বললেই তাকে ধরে মারতে যায়।ওদের বাপ আজকে আসুক অসভ্য মানুষটার লাই পেয়ে এই দুইটার অসভ্যতামি বেড়েই চলেছে।(ঐশানী দাঁতে দাঁত চেপেই)
ছোট্ট মানুষ ঠিক হয়ে যাবে।আর ইয়ামান এর কি দোষ হুযাইফার প্রতি কেউ রুঢ হলে তা ও নিতে পারে না।আর তাইতো প্রতিবাদ করে।কিন্ত ওকি আর বুঝে পড়া না পড়লে স্যার বকবেই এখানে প্রতিবাদ করা তো অন্যায়।বড় বোনের প্রতি ছোট ভাইয়ের এমন ভালোবাসা কোথায় পাবে তুমি?(মামমাম)
এইযে তোমরা এসব বলে এদের লাই দেও আর এগুলো বিগরে যায়।দূর কথা নাই তোমাদের কারো সাথে আমি উপরে গেলাম।আর এইযে ইফরাজ এর গুনোধর ছেলে-মেয়ে দুইটা উপরে জদি তোদের দেখি আজকে তোদের ঠ্যাং ভাঙ্গব আমি।
বলেই উপরে চলে আসলাম। ইফরাজ অসভ্য পুরুষ এর থেকে বেশি অসভ্য হয়েছে ঐ দুইজন।ছেলেটার টা মানলাম।তাই বলে মেয়েও এমন।আমার গুনোধর ছেলে বোনের প্রতি কেউ রুঢ হতে দেড়ি তাদের উপর হামলে পড়তে দেড়ি করে না।দশ বছরের ছেলে সাড়ে এগারো বছরের মেয়ের যত্ন এমন ভাবে নেয় যেনো বোন ছোট্ট ভাই বড়।বোন ও ভাই বলতে পাগল। আর এদের এই দুইজন ও এদের বাপের কান্ডে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।(ঐশানী বিরবির করে)
ভাই মামমাম আজকে অনেক রেগে গেছে।(হুযাইফা)
হুম দেখলাম তো আপু।কিছুক্ষণ পর বাবাই আসবে নিশ্চিত আজকে আমার পিঠে পড়বে কিছুমিছু।(ইয়ামান পিঠে হাত দিয়ে)
চল ভাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।তাহলে বাবাই তোকে বকতে বা মারতে পারবেনা।(হুযাইফা)
সেটাই ভালো চলো।দিদা খেতে দাও তোমার অসভ্য থুড়ি গুনোধর সন্তান অরফে আমার বাপ আসার পূর্বে খেয়ে ঘুমাতে হবে।(ইয়ামান হুযাইফার হাত ধরেই)
আসো আমার গুনোধর অসভ্য ছেলের গুনোধর সন্তানেরা।(মামমাম তুবা বেগম)
দিদা তুমিও। (হুযাইফা ও ইয়ামান একসাথে)
হুম আমিও।(হাসতে হাসতে মামমাম তুবা বেগম)
______
নিস্তব্ধ রাত।সারা শহরের মানুষ গুলো ঘুমে বিভোর।কেউ একলা তার ভালোবাসার মানুষটির কথা ভেবে আনন্দে ঘুমাচ্ছে তো কোথাও বিচ্ছেদের সুর এ বিভোর হচ্ছে।তবে অসভ্য পুরুষটা ঠিকি তার সোনাপাখিকে নিয়ে সুখ দুঃখের গল্প করছে।
সারাদিন এর ক্লান্তি যেন সোনাপাখির মুখ দেখলেই শেষ হয়ে যায়।সারাদিন পর এসে সোনাপাখির ক্লান্তি মাখা আলাপ শুনলে নিজের কান্তি ভুলে তাকেই নিজের বক্ষে নিয়ে সান্তনা দেওয়া লাগে।ছেলে মেয়ের অত্যাচার এ অতিষ্ঠ মানুষ টাও অধির আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে তার অসভ্য পুরুষটার।
এই যেমন ইফরাজ এর আগমন এর কিছুক্ষণ পর এই সারাদিন এর বিচার জুড়ে অপেক্ষা করছে অসভ্য পুরুষটার বিচার এর আশায়।
বলো কি করবা ওদের?(ঐশানী ইফরাজ এর হাত ধরেই)
ফ্রেস হয়ে আসি তারপর ওদের পেটাব।আমার সোনাপাখির কথা অমান্য করা বের করব ঠিক আছে।(ইফরাজ)
আমি বলেছি ওদের বিচার করতে মারতে না।আমার ছেলে মেয়ের গায়ে হাত দিবা না বলে দিলাম। (ঐশানী সরে বসে)
ফ্রেস হয়ে আসি তারপর সব হবে।
বলেই ফ্রেস হতে গেলাম। ফ্রেস হয়ে এসে নিচে খেতে আসলাম।হুযাইফা আর ইয়ামান খেয়ে ঘুমাতে গেছে।এটা মামমাম বলল।বাট এটা বিশ্বাস করার মতো কথা না।দুইটা আমার থেকে দুই ডিগ্রি উপরের লেভেল এর অসভ্য হয়েছে।কি চাইলাম আর কি হলো।আমার বউটার জীবন তেজপাতা করে ছাড়ল।এদের বকতে গেলেও ঐশানীর রাগ লাগে।ও এই বকবে আর কেউ বকলে ও কান্না করে আর বলে সবাই বকলে ওদের আদর কে করবে।এই হলো আমার অবস্থা।ফাটা বাশের চিপায় আছি আরকি।ওদের দুষ্টামীর জন্য আমি দুষ্টামী ছেড়ে দিয়েছি।নাহলে আমার সোনাপাখি বউ টা টিকতে পারবেনা।খাবার খাওয়ার পর উপরে আসলাম ঐশানীর খাবার নিয়ে।আজকে সে রাগ নিচে যায়নি সেই জন্য উপরেই খাবার নিয়ে আসা।অনেকক্ষণ বলার পর ও খাচ্ছিল না।তাই জোর করে কোলে বসিয়ে খাইয়েছি।খাওয়ার পর ওকে কোলে নিয়ে বারান্দার উদ্দেশ্য পা বাড়াতেই ও আমার গলা জড়িয়ে ধরল।ওকে নিয়ে দোলনাতে বসে পড়লাম।
সোনাপাখি আই লাভ ইউ বউ। (ইফরাজ)
আই লাভ ইউ টু অসভ্য পুরুষ। (ইফরাজ এর গলা ধরেই ঐশানী)
আমি তোমার দিকে তাকিয়েই আমার চোখের সামনে আমার বাকীজীবন দেখতে পাই।আমি সবসময়ই তোমাকে খুশি দেখতে চাই কারণ তুমিই আমার খুশির কারণ।সোনাপাখি।(ইফরাজ)
আমার জীবন তোমাকে দিয়ে শুরু হয়নি
তবে আমি চাই আমার জীবন তোমার সাথেই শেষ হোক।ভয় পেওনা আমি তোমার হয়েই থাকব আমার অসভ্য পুরুষ। (ঐশানী)
সে ফিরে এসেছে।(ইফরাজ)
থাকুন সে তার মতো।আমি এখানে অনেক ভালোবাসায় মুড়ে আছি।আমি চাইনা তার ছায়া ও আমার সামনে আসুক।(ঐশানী)
তোমার অসভ্য পুরুষ থাকতে তোমার ইচ্ছা অপূর্ণ হবেনা।তার ছায়া ও তোমার সামনে আসতে দিবোনা।(ইফরাজ ঐশানীকে জড়িয়ে ধরেই)
_______
কেউ প্রতিশ্রুতি দিয়েও ছেড়ে যায়,
আবার কেউ ঝগড়া করেও ,
শেষ অবধি থেকে যায়।
ভাগ্য দুটো মানুষকে কাছে আনে আবার
ভাগ্যটাই একে অপরকে দূরে সরিয়ে দেয়
যে মানুষটা যার ভাগ্যেই নেই
শুধু শুধু তাকে জীবনে এনে কষ্ট দেওয়ার
এক অদ্ভুত খেলা খেলে এই ভাগ্য।
আর যার সাথে ভাগ্যটা মিলবে না
তার সাথে পরিচয়
আর যার সাথে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
ভাগ্যটা জুড়ে থাকে
সে অপরিচিত এই থেকে যায়।
ভাগ্য গড়ে দেয়
আবার ভাগ্য এই ভাঙ্গে
আর এই গড়া আর ভাঙ্গার
মধ্যেই শুধু আমরা তীর মাত্র।
যে নিশানা কোথায় গিয়ে পড়বে
তা ঠিক করেন একজনি আর
তিনি হলেন উপরওয়ালা।
তোমার আমার #দেওয়া_নেওয়া_সানাই এ কার কি প্রাপ্তি রইল তা একমাত্র উনি এই নির্ধারণ করেছিলেন।
_________
তোমার সাথে দেখা হয়না
ছোঁয়া হয়না
দূরত্ব অনেক
তবে অনুভূতি আর স্বপ্ন গুলো
রয়েছে খুব কাছাকাছি।
জীবন নিয়ে গল্প লেখাটা
খুব সহজ।
কিন্ত গল্পের মতো জীবন
সাজানো খুব কঠিন।
তোমাকে পেয়ে ও হাড়িয়ে
ফেলাটা
আমার জীবনের সবচেয়ে
বড় ব্যর্থতা।
ঐশানীর ছবি নিয়ে বসে এসব কথা ভাবতে ভাবতেই পাশের টেবিল এ জেবার ছবির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ফারাজ। এমন একজন মানুষ যার এইকুল ঐকুল সব হারিয়ে সে নিস্ব। না পেলো ভালোবাসার মানুষটিকে না পারল নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা উপভোগ করতে।পেরেছে শুধু নিজের ভুল সুধরানোর নামে আরও হাজার ভুল করতে।নাহলে আমার মতে ফারাজ এর থেকে অভাগা আর কেউ নেই।সে এটাও জানতে পারল না তার নিজের একটা পুত্র সন্তান আছে।যাকে আগলে রেখে জেবা বেচে থাকার অবলম্বন পেয়েছিল।ভাগ্য ভাল জেবার সে তাকে ভালোবাসা ও আগলে রাখার মতো একজন কে পেয়েছে তো অবশেষে।
এখন এই গল্পের সমাপ্তি এর সাথে প্রশ্ন হলো কে এই তিন জনের মধ্যেই সুখি?
1:ঐশানী,2:ফারাজ & 3:জেবা
কে জিতেছে?
1:ঐশানী-ইফরাজ,2:জেবা-নাজমুল & 3:ফারাজ(ঐশানী,জেবা)
***********(সমাপ্ত )*************