#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩
নদীর তীর থেকে রাস্তায় আসতে গিয়ে কাঁটায় বেঁধে পা কেটে,মুচড়েও গিয়েছে অর্ষার।রুশান দ্রুত এগিয়ে আসে।রুশান অর্ষার কাছে এসে ওর পা দেখতে দেখতে বলে,,,
—“তুই কি মানুষ হবি না কখনো এইভাবে কেউ না দেখে শুনে হাঁটে।বেয়াদপ মাইয়া”
অর্ষা পা চেপে ধরে বসে আছে।ভীষণ ব্যাথা করছে।ফুলে গিয়েছে সাথে কাটা জায়গা থেকে রক্ত বের হচ্ছে।ইরহাম টাকা মিটিয়ে এসে দেখে এই অবস্থা দ্রুত অর্ষার কাছে আসে।রুশান অর্ষাকে কোলে তুলতে গিয়েও তুললো না কারণ সে জানে তার বোনের জীবনে একজন আছে যে তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে হোক সেটা দায়িত্ব থেকে।
ইরহাম এসে অর্ষার পা দেখে বলে উঠে,,,
—“ইডিয়ট দেখেশুনে চলতে পারো না”
—“তুমি ভাবিমনিকে বকছো কেনো ভাবিমনি তো আর দেখে করেনি তাই না”
ইরহাম কোলে তুলে নেয় অর্ষাকে।অর্ষা হকচকিয়ে উঠে গলা জড়িয়ে ধরে ইরহামের।মুহিব নাইম তো সিটি বাজাতে শুরু করে।ইরহামের এতো কাছাকাছি আসাতে অর্ষার বুকের ভেতর মনে হয় কেউ ড্রাম বাজাচ্ছে মনে হচ্ছে।অর্ষা সেগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বলে,,,
—“কোলে তুললেন কেনো আপনি আমায়।আমি তো হেঁটেই যেতে পারতাম”
—“চুপ করো তুমি! কত যে যেতে পারতে তা খুব ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে।”
—“হুহ ভালো হয়েছে।আমি হাঁটতে পারতাম।”
ইয়াদ তাকিয়ে রয় একদৃষ্টিতে অর্ষার দিকে।তার অধিকার নেই কোনো অর্ষার কাছে যাওয়ার সাহায্য করার।অর্ষার ছটফটানি দেখেও তাকে সব সময় চুপ থাকতে হবে।
২৯.
ড্রয়িংরুমের সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে অর্ষা।ইরহাম তার পায়ে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে।তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সবাই।সবাই বলে যাচ্ছে কেনো ঠিকমতো দেখে শুনে চলতে পারিস না।বকাবকি করে যাচ্ছে।অর্ষা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।
—“এই যে তোর কাণ্ডজ্ঞান কবে হবে হ্যা এক জায়গায় গিয়েছিস সেখানেও একটা কান্ড ঘটিয়ে এসেছিস”
—“আম্মু প্লিজ আপনি ওকে বকা দিবেন না।যা হবার তা হয়েছে।”
ইরিনা আর কিছু বলে না।একটু আগেই সবাই বাড়ি ফিরেছে।আর অর্ষাকে কোলে তুলে ইরহাম ঢুকতেই সবাই অর্ষাকে চেপে ধরেছে।আর ইরিনা বেগম তো তাকে একাধারে বকেই যাচ্ছে।
—“বাবা তুমি এই মেয়ের পক্ষ নেবে না।এতো ফাজলামি করে কেউ।দু মিনিট শান্ত হয়ে বসতে পারে না এই মেয়ে।”
ইরহাম মৃদু হেসে বলল,,,
—“সমস্যা নেই আম্মু আপনার মেয়েকে আমি সোজা বানিয়ে ফেলবো।দেখবেন মোটেও আর দুষ্টমি করবে না”
সবার সাথে কিছু কথা বলে ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে উপরে যেতে থাকে।অর্ষা রাগি চোখে তাকায়।আসিফ আহমেদের দৃশ্যটা দেখে চোখ জুড়ায়।নাহ সে নিজের মেয়ের জন্য একেবারে উপযুক্ত ছেলে খুঁজেছে।সারাজীবন আগলে রাখবে তার মেয়েকে।
—“কি করছেন টা কি ছাড়ুন সবাই দেখছে।আমি একা যেতে পারবো”
—“দেখছে তো কি হয়েছে আমি কি কোনো অন্যায় করেছি নাকি আশ্চর্য।”
—“আমার লজ্জা লাগছে নামিয়ে দিন বাবা ছোট চাচ্চু সবাই এখানে আছে।”
ইরহাম অবাক হওয়ার ভান করে বলে,,,
—“তোমার লজ্জাও লাগে নাকি।আল্লাহ আমি তো জানতাম নাহ”
অর্ষা রেগে ইরহামের বুকে কিল থাপ্পড় বসালো।অর্ষাকে থামাতে হাতের বাধন হালকা করতে অর্ষা ভয় পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলে,,,
—“কি করছেন কি আপনি আমার কোমড় ভাঙার ধান্দায় আছেন তাই না।প্লিজ আমার ফেলে দিয়ে কোমড় ভাঙবেন না আমার নাতি নাতনী ভাঙা কোমড় ওয়ালা দাদী বলে ডাকবে তাহলে”
ইরহাম বিরক্ত হয়ে বলল,,,”তোমার ভাঙা টেপরেকর্ডার থামাবা তুমি।ফালতু বকবক করেই যাচ্ছো।”
অর্ষা ইরহামের কথায় রেগে গেলেও কিছু বলে না।ইরহাম অর্ষাকে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে দেয়।অর্ষা তত তাও ভার না হওয়ায় ইরহামের বেশি কষ্ট হয়নি।অর্ষা ভনিতা না করেই বলল,,,
—“বের হন রুম থেকে”[লেখিকা ইশা আহমেদ]
অর্ষার কথায় ইরহামের ভ্রু কুচকে যায়।বুঝতে না পেরে বলে,,,”হোয়াট?”
অর্ষা বিরক্ত হয়ে বলে,,,”সোজা কথা বোঝেন না বের হন রুম থেকে”
—“বের কেনো হবো আমি রুম থেকে আগে তাই বলো”
—“আমি শাড়ি চেঞ্জ করবো।আপনি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি বের হবেন রুম থেকে”
ইরহাম বাঁকা হাসে অর্ষার দিকে তাকিয়ে।অর্ষার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলল,,,
—“তুমি কিন্তু চাইলেই আমার সামনে চেঞ্জ করতে পারো।আমি কিছু মনে করবো না”
অর্ষা রসগোল্লার মতো চোখ বড়বড় করে তাকায় ইরহামের দিকে।ইরহাম এই কথা বলছে!অর্ষা ভাবে ইরহামের মাথা গিয়েছে।সে রাগে ফোসফাস করতে করতে বলে,,,
—“বের হন রুম থেকে অসভ্য পুরুষ মানুষ।মুখে কিছু আটকায় না।অন্য মেয়েকে ভালোবেসে আমায় এসব বলছে ফালতু লোক”
ইরহাম বেরিয়ে আসে।ইরহাম জানে না সে অর্ষাকে এখনো ভালোবাসে কিনা।কারণ ভালোবাসা হুট করে হয় না।হুট করে হয় ভালো লাগা।তারপর ধীরে ধীরে তা ভালোবাসায় পরিনত হয়।আর সে যদি অর্ষাকে ভালোবেসে ফেলে তাহলে কি অর্ষা তাকে সামলাতে পারবে।তার ভালোবাসা যে সবার মতো নাহ।
ইরহাম অর্ষার চোখ দেখে প্রেমে পরেছিলো।ভালো লেগেছিলো ওই চোখ বারবার দেখার জন্য ছটফট করছিলো।সেদিন চোখে কাজল দিয়েছিলো অর্ষা কপালে টিপ,হাতে চুড়ি সব মিলিয়ে ইরহামের মনের প্রেয়সী।
৩০.
অর্ষা কাবার্ড থেকে কোনো মতে একটা কমলা রঙের থ্রি পিস বের করে পরে নিলো।চুলগুলো হাত খোপা করে দরজা খুললো।দরজা খুলে ইরহামকে না দেখে ধীরে ধীরে সিড়ির দিকে এগোয়।সিড়ির কাছাকাছি আসার সময় পা পিছলে পরে যেতে নেয় ইরহাম কোথা থেকে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে বাঁচিয়ে নেয়।
অর্ষা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।কোমরে শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে ইরহামের রাগি মুখটা দেখতেই কিছুটা ভয় পায়।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক দেখায়।ইরহাম অর্ষাকে কিছু না বলে কোলে তুলে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দরজা আটকে দেয়।
—“সমস্যা কি তোমার একা একা কেনো বাইরে গিয়েছিলে আমি যদি সময় মতো না আসতাম কি হতো কি হ্যা”
অর্ষা মাথা নিচু করে বসে আছে।আসলেই তো পরে গেলে তার কোমড় ভেঙে যেত।সবাই তাকে তখন ভাঙা কোমড় অর্ষা বলে ডাকতো।অর্ষার উত্তর না দেওয়ায় রাগ তড়তড় করে বেড়ে যায় ইরহামের।ইরহাম অর্ষার কাছে এসে ওর বাহু চেপে ধরে বলে,,,
—“উত্তর দিচ্ছো না কেনো স্টুপিড”
অর্ষার নিজেরও এবার ইরহামের ব্যবহারে বিরক্ত লাগে।নিজেকে ইরহামের কাছ থেকে ছাড়িয়ে বলে,,,
—“ঠিক করেছি গিয়েছি আমি তাতে আপনার কি।পরলে আমার কোমড় ভাঙতো আপনার না”
ইরহাম অর্ষার দিকে তাকালে দু’জনের চোখাচোখি হয়।অর্ষা চোখ সরিয়ে নেয়।লোকটা এমন কেনো করছে বুঝতে পারছে না।পাগল টাগল হলো নাকি।ইরহাম একটা টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অর্ষা ঘুমিয়ে পরেছে।ইরহাম সোফায় বসে পরে।অর্ষার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,
—“যখন আমি বুঝতে পারবো আমি তোমায় সম্পূর্ণ ভাবে ভালোবাসি তখনই আমার ভালোবাসা প্রকাশ করবো তার আগে নয় সুখপাখি।তত দিন না হয় আমাদের মাঝে ঝগড়াটাই থাক।”
৩১.
অর্ষার ঘুম ভাঙলো নয়টার দিকে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টাইম দেখে অবাক অর্ষা এতো সময় ঘুমালো কেউ তাকে ডাকারও প্রয়োজন মনে করলো না।আশেপাশে তাকিয়ে ইরহামের উপস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলো।ইরহাম নেই রুমে।
অর্ষা ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে বের হয়ে ওড়না পেচিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে রুম থেকে বের হলো।সিড়ির কাছে আসতেই আহিনকে দেখলো অর্ষা।আহিন অর্ষার কাছে এসে বলে,,
—“কিরে মা তুই এই অসুস্থতা নিয়ে বের হয়েছিস কেনো?কাউকে ডাকতে পারতি”
—“কাকে ডাকবো চাচ্চু কেউ তো নেই আশেপাশে আর রুমেও একা একা ভালো লাগছিলো না।”
—“আচ্ছা আয় আমি নিচে নামতে সাহায্য করছি”
আহিন আহমেদ অর্ষাকে ধরে নিচে নামায়।অর্ষা নিচে আসতেই অবাক সবাই বসে লুডু খেলছে।রুশান,আরিশা,ইলমা আর ইয়াদ।অর্ষা বেশ খুশি হলো ইয়াদ ইলমার না যাওয়ায়।ইরহাম পাশে বসে ফোন ঘাটছে।
অর্ষা ইরহামকে দেখে মুখ বাঁকায়।সারাদিন ফোন নিয়ে কি করে ভেবে পায় না অর্ষা।আহিন অর্ষাকে ইরহামের পাশে বসিয়ে দিয়ে চলে যায়।ড্রয়িংরুমে এখন ছোটদের মেলা বসেছে বড় খেয়ে অলরেডি রুমে চলে গিয়েছে।
ইরিনা বেগম এসে বলে,,,
—“খেতে আয় সবাই এখন রাক এগুলো।অনেক খেলেছিস”
ইরিনা বেগমের কথায় রুশান বলে,,,
—“বড় আম্মু আরেকটু খেলি না প্লিজ”
—“এখন না উঠলে কিন্তু খেতে দেবো না”
সবাই দৌড়ে খাবার টেবিলে যায়।ইয়াদ অর্ষার দিকে তাকিয়ে হাসে।সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখবে এখন থেকে।আরিশা ইয়াদের পাশে বসে।অর্ষা রুশানকে ডাকতে যাবে তার আগে ইরহাম ওকে দাঁড় করিয়ে ধরে নিয়ে যেতে লাগে।
চলবে~