অন্যরকম ভালোবাসা পর্ব-১০

0
387

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পর্ব ১০
#মৌমিতা_শবনাম

রাদ আর তন্নির বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজকে গায়ে হলুদ কালকে বিয়ে চারদিকে হৈ-হুল্লোড়। তুষার সাহেব এদিক ওদিক ছুটছেন। বিয়েটা তাড়াহুড়ো করে হচ্ছে। এখন সন্ধ্যা ৬ টা বাজে রিধি এসেছে কিছুক্ষণ আগে সেই তন্নিকে সাজাচ্ছে। তন্নি আর রাদের গায়ে হলুদ কমিউনিটি সেন্টারে একসাথে হবে।

তন্নিকে সাজিয়ে রিধি চলে যেতেই একটু পর দরজা টেলে রাদ রুমে ঢুকে। রাদ ঢুকে তন্নির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে হালকা সাজে তন্নিকে দারুণ লাগছে তারউপর সে নার্ভাস। এই নার্ভাস মুখটা দেখেই তো সে গায়েল হয়েছিল তন্নির প্রেমে। রাদ এগিয়ে এসে তন্নির পিঠে আলতো করে ছুয়ে দেয়। তন্নি ভয়ে লাফ দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে রাদ। রাদকে দেখে সে শস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। রাদ হালকা হেসে বলে, –” ভয় পেয়ে গেলেন মিস তন্নি? ভয় কিসের আমি তো আছি।”

তন্নির কানে কথাটা বাজতে লাগলো ‘ ভয় কিসের আমি তো আছি’। তন্নিকে চুপ দেখে রাদ আবার বলল,–” কি হলো হবু মিসেস রাদ চুপ কেন?”

রাদের কথায় তন্নি হালকা হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল কিছু না। রাদ বলল,–” যে আসছে তার জন্য রেডি তো?”

তন্নি মুচকি হেসে বলে, –” অবশ্যই।”

রাদ আর কিছু না বলে চলে গেল। তন্নির মুখের হাসি আবারও মলিন হয়ে গেল। জীবনে এতো ঝামেলা কেন আসে সে বুঝতে পারে না। জীবনটা সহজ ও সুন্দর হলে কি এমন ক্ষতি হতো?

——————–
নিরব চারদিকে খোজে যাচ্ছে কিভাবে রাদ আর তন্নির বিয়ে ভাঙবে। তন্নির সাইড দিয়ে সব রকম চেষ্টা সে করে ফেলেছে কিন্তু রাদ নাচড় বান্দা সে তন্নিকেই বিয়ে করবে। রুনা তার পাশে বসে ছিলেন। নিরব তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে–” মা কি করবো বলো?”

রুনা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,–” কি করবি এবার রাদের সাইড দিয়ে চেষ্টা কর। ”

মায়ের কথায় নিরবের মাথায় বুদ্ধি আসে। তার মায়ের গাল টেনে থ্যাংকু বলে কপালে চুমু খেয়ে চলে যায় নিরব। রুনা ছেলের কান্ডে হাসে। তার ছেলে সুখে থাকুক এটায় সে চায়।

———–
আড়াল থেকে বৃষ্টি সব শুনছিল। চোখে তর পানি টলমল তার করা পাপের শাস্তি যে সে পাচ্ছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে। তার হাতটা আপনা আপনি পেটে চলে যায়। সে বুঝতে পারছে না তার কি উচিত নিরবকে বলা যে সে বাবা হতে চলছে।

নিরব বাহিরে বের হয়ে দেখে বৃষ্টি বাহিরে দাড়িয়ে আছে। নিরব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে, –” তুমি এখানে! আমাদের কথা শুনছিলে দাড়িয়ে দাড়িয়ে?”

বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দিয়ে বলে– ” আসলে রাতে কি রান্না করবো তা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম। ”

নিরব আর কিছু বলে না চলে যায় সেখান থেকে। মেয়েটাকে ইদানীং তার প্রচুর বিরক্ত লাগে। বৃষ্টি চোখ আবার পানিতে টলমল করে। সেখান থেকে সোজা ছাদে চলে যায় সে।

—————–
গানের তালে তাল মিলিয়ে নাচচে রিধি। তন্নি আর রাদ পাশাপাশি বসে আছে । তাদের গায়ে হলুদ ছুঁয়ানো হয়ে গেছে।

আনন্দ উল্লাসের পরে সবাই নিজেদের বাসায় চলে আসে। তন্নি বাসায় এসে গোসল করে বেলকনিতে এসে দাড়ায়। সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা তা তাকে বড্ড ভাবাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে– ” আমি জানি আল্লাহ তুমি আমার জন্য ভালো কিছু রেখেছো।”

তন্নি এগুলো ভাবছিল তখন তন্নির ফোন বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে বৃষ্টি। বিরক্তিতে মুখ কুচকে ফেলে রিসিভ করবে। ফোন রিসিভ করতেই ঐ পাশ থেকে বৃষ্টি বলতে শুরু করল,–” তন্নি রাগ হস নাহ আমি কল দিয়েছি তোকে একটা বিষয় জানাতে। ”

তন্নি বিরক্ত নিয়ে বলে,–” কি বল”

বৃষ্টি দম নিয়ে বলা শুরু করে, –” নিরব তোর বিয়েতে ঝামেলা করতে পারে। যদিও তোর বিয়ে হয়ে যায় কিন্তু বিয়ের পরও করবে ওর মাথায় তোকে পাওয়ার ভুত চেপেছে। ”

তন্নি কিছু বলে না। বৃষ্টি ফোন কেটে দেয়। পাশে থাকা ফুলদানিটা ছুড়ে মারে তন্নি। চিৎকার করে বলতে থাকে, –” কি পেয়েছে ঐ নিরব? ওর হাতের পুতুল নাকি যে যখন ভালো লাগল কাছে টেনে নিল আর যখন খেলা শেষ ফেলে দিল। এই লোকটাকে আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি ওকে দেখলে রাগে আমার মাথা ফেটে যায় তা কি বুঝতে পারে না ওরে সহ্য হয় না আমার। ”

রাগে ফুঁসছে সে। তন্নির চিৎকার শুনে মিশমি আর তুষার সাহেব ছুটে আসে তার রুমে। ওরা আসতেই তন্নি নিচে পড়ে যায়। আবারও সে অসুস্থ হয়ে গেছে হাত পা কুচকে যাচ্ছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তুষার সাহেব তন্নিকে কোলে নিয়ে রুমে আসে। বয়স হওয়াই তন্নিকে কোলে নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয় তন্নিকে।

কিছুক্ষণ পরে ঠিক হয়ে গেছে তন্নি। তন্নি স্বাভাবিক হওয়ার পর তুষার সাহেব তার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করল, –” কি হয়েছে এমন চিৎকার করছিলি কেন?”

তন্নি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,–” বাবা আমি কি একটু শান্তি পাবো নাহ এই নিরব নামক অভিশাপ থেকে কবে মুক্তি পাব?”

তুষার সাহেব কিছু বললেন না শুধু তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তিনি গিয়েছিলেন নিরবের কাছে। ঐদিনও নিরব তাকে অপমান করে দিয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে ভালো বাবা হতে পারে নি সে নয়তো কখনও নিরব নামক একটা জানোয়ারের সাথে তন্নিকে বিয়ে দিতো না।

——————
নিরব পেয়েছে উপায় যেটাতে তন্নি কখনও রাজি হবে না রাদকে বিয়ে করতে। নিরব ফোন বের করে হাতের থাকা কাগজে লিখা নাম্বারে কল দেয় সে। প্রথম বার রিং হয়ে কেটে যায়। নিরব আবারও কল দেয় এবার দুইবার রিং হতেই কল রিসিভ করে একজন মেয়ে হ্যালো বলে উঠে। নিরব জলদি বলে,– মিস আপনার সাথে কিছু কথা আছে। ”

মেয়েটা ভ্রু কুচকে বলে,–” হ্যাঁ বলুন কি বলবেন?”

নিরব বলল,–” তার আগে বলুন আপনি কি মনি?”

মেয়েটা অবাক হয়ে বলল,–” হ্যা। আপনি আমাকে চিনেন?”

নিরব একটা বিজয়ের হাসি দিল। তার মনে খুশির আমেজ। সে যে ভীষণ খুশি সে আবার তন্নি কে পেয়ে যাবে

চলবে