শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব-১৫+১৬+১৭

0
278

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৫

পয়তাল্লিশ মিনিটের ক্লাসে সাহিল শেখকে একটু হাসতেও দেখা যায় নি কারো সাথে আলাদা করে কথা বাড়াতেও দেখা যায় নি। তিনি নিজের মতো পড়া বুঝিয়ে গিয়েছেন শুধু।
শুভ্রতা আর ফাউজিয়া নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলির মাঝে শুভ্রতা বলে,

” স্যারের কি হয়েছে বল তো? এমন মন খারাপ করে আছে কেন?”

” কি জানি, একটা বিষয় খেয়াল করে দেখেছিস স্যার আজকে একটুও হাসলো না অথচ প্রতিদিন ক্লাসে কত সুন্দর করে হাসে স্যার।”

” এক কাজ কর স্যার ক্লাস শেষ করে বাহিরে চলে গেলে তুইও যা, গিয়ে জিজ্ঞেস কর তো স্যার কাল কোথায় গিয়েছিল? এমনি হঠাৎ দেখেছিস এটাই বলবি।”

” ব্যাপারটা কেমন হয়ে যাবে না? ”

” কেমন হবে? কেউ দেখলে জানতে চাইতেই পারে সাধারণ ব্যাপার এটা।”

” আচ্ছা ঠিক আছে দেখি ক্লাস শেষ হোক আগে।”

” ঘড়িতে তাকিয়ে দেখ, ক্লাস শেষ। তুই রেডি হয়ে যা।”

” তুইও যাবি আমার সাথে, আমি একা যাব না।”

” আচ্ছা ঠিক আছে। ”

ক্লাস শেষ হলে সাহিল স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলে শুভ্রতা আর ফাউজিয়া দুজনই স্যারের পিছু নেয়। কিছুটা গিয়েই ফাউজিয়া সাহিল স্যারকে ডাক দেয়। উনি পিছনে ফিরে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ” কিছু বলবেন?”

ফাউজিয়া বলে, ” স্যার আপনি আমাদের ওদিকে বাসা নিয়েছেন? ভার্সিটির সামনের ওই গোলিতে?”

” হ্যাঁ আপনার বাসা ওদিকেই? জানতাম না তো!”

” হ্যাঁ স্যার ওদিকেই। গতকাল আপনাকে দেখলাম সাদা পাঞ্জাবি পরে ফুল হাতে গোলির মুখের দিকে এগিয়ে আসছিলেন।”

” হ্যাঁ গতকাল গ্রামে গিয়েছিলাম। আমার বাবার কবর দেখতে। গতকাল বাবা মা*রা যাওয়ার পাঁচ বছর হলো। মা তো অসুস্থ একটু তাই মা যেতে পারে নি আমি একাই গিয়েছিলাম।”

সাহিল শেখের কথা শুনে ফাউজিয়া আর শুভ্রতা একে অপরের দিকে তাকায়। তারা কি কিই না ভেবে বসেছিল!

ফাউজিয়া বলে, ” ঠিক আছে স্যার, দেখেছিলাম তো তাই জিজ্ঞেস করলাম। আমরা তাহলে এখন আসি স্যার?”

” ঠিক আছে ক্লাসে যান।”

সাহিল শেখ অফিসরুমের দিকে চলে যায়। শুভ্রতা আর ফাউজিয়াও নিজেদের ক্লাস চলে যায়৷ আজ ক্লাসের মাঝে কোন বিরতি নেই। একটানা তিনটা ক্লাস করে দুইটার মাঝেই বাড়ি ফিরে যাওয়া যাবে। দুজন গিয়ে ক্লাসে বসে।
~~

বাড়িতে রান্নাবান্না হচ্ছে সকালের নাশতা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই৷ সবাই কাজে ব্যস্ত আর শাকিরা ফোনটা হাতে নিয়ে একের পর এক দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে যাচ্ছে। গতকাল যখন রায়হানকে কল দিয়েছিল তখন রায়হান বলেছিল আবার কল দেবে কথা বলবে কিন্তু সে আর কলব্যাক করে নি এমনকি শাকিরা বারবার কল দিয়েও তাকে পায়নি। রাতের একপর্যায়ে রায়হান ফোনটাই অফ করে ফেলেছে। প্রায় শেষরাতের শুরু অবধি শাকিরা কান্নাকাটি করেছে রায়হানের জন্য। সে কেন এমন করল তার সাথে এটা ভেবে। শাকিরা বসে বসে ভাবছে এমন ব্যবহারের পরও কি কারো আশায় থাকা বোকামি হবে না? পরিস্থিতি হয়তো বলছে কোন আশা নেই ওদিকে কিন্তু তার মনটা ঠিকই চাইছে সে আসুক আর এসে সবার সামনে বলুক সে শাকিরাকে ভালোবাসে, তাকে বিয়ে করতে চায়।

শাকিরা সকালে মনমরা হয়ে বসে ছিল। তখন তার মা আঞ্জুয়ারা বেগম তাকে নাশতা দিতে আসেন। নাশতা শাকিরার সামনে রাখলেই সে একেবারে নাকচ করে দেয় সে খাবে না।

” কি হয়েছে খাবি না কেন?”

” তোমাদের বাড়িতে তো অনেক বেশি খাচ্ছি তাই না? বেশি বেশি খাচ্ছি জন্যই তো আমার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছো। বিয়েটা হয়ে যাক, যে বাড়িতে বিয়ে হবে ওই বাড়িতেই গিয়ে খাব। এখানে আমি এক ফোঁটা পানিও খাব না। তোমাদের খাবার তোমরা খাও।”

” এসব কোনধরনের কথা শাকির? তোমার বিয়ের বয়স হয়েছে, বিয়ে দেওয়ার কথা ভাববো না আমরা? গ্রামেই দেখতো ষোলো, সতেরো বছর বয়স থেকেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয় তোর বয়স তবু একুশ হয়েছে৷ কোন মা-বাবা চায় না তার মেয়ের ভালো জায়গায় বিয়েটা হোক? ”

” পরে কি ভালো ছেলে পাওয়া যেত না?”

” তুই কাউকে পছন্দ করিস? পছন্দ করলে বল আমি তোর বাবার সাথে কথা বলি ছেলেকে দেখি।”

” পছন্দ! ওসব আমার ভাগ্যে নেই। বিয়ে দিয়ে দাও সবার ভালো হবে। ”

শাকিরা আর কোন কথা না বলে পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আঞ্জুয়ারা বেগম বেশ চিন্তায় পড়ে যান। ভাবতে থাকেন নিজেরা বেশি বেশি করছে না তো? বিয়ে, দেখতে আসা কি চাপিয়ে দিচ্ছে তারা শাকিরার ওপর? পরে সবকিছু হিতে বিপরীত হবে না তো! তিনি ঠিক করেন, দেখতে এসে পছন্দ হলেও আজ কিছুতেই বিয়ে তিনি হতে দিবেন না।
~~

দুপুর একটায় শুভ্রতার ক্লাস শেষ হয়। শুভ্রতা আর ফাউজিয়া দুজন বেরিয়ে আসে ক্লাসরুম থেকে। সিঁড়িবেয়ে নিচে এসে দেখে নিহান দুই হাত বুকে গুজে সামনে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতা নিহানকে দেখা মাত্রই সকালের কথা মনে পড়ে যায়। শুভ্রতা একটা শুকনো ঢোক গিলে হাটতে থাকে। এই লোক যদি রেগে তাকে মাথার ওপর তুলে মাটিতে ফেলে দেয় তাহলে তার হাড়গোড় ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শুভ্রতা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল ঠিক তখনই নিহান বলে ওঠে,

” আমি নিশ্চয়ই পিঁপড়ের মতো নই যে আমাকে দেখা যাবে না পায়ে মাড়িয়ে চলে যাবি?”

শুভ্রতা দাঁড়িয়ে যায় সাথে ফাউজিয়াও। শুভ্রতার মুখে কোন কথা নেই। ফাউজিয়ে এতক্ষণে খেয়াল করে পাশে নিহান দাঁড়িয়ে আছে। সে হেসে কথা বলে,

” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, ভালো আছেন?”

” জি, আপনি কেমন আছেন?”

” আমিও আলহামদুলিল্লাহ । শুভ্রতা বাইকে ওঠ।”

ফাউজিয়া শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে দেখে সে একদম স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মুখে কোন কথা নেই। ফাউজিয়া দুজনের মুখের অবস্থা দেখে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে তাই সে আর এক মুহূর্ত সেখানে ব্যয় করতে রাজি নয় তাই বিদায় নিয়ে চলে যায়। শুভ্রতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিহান বলে,

” উঠবি নাকি উঠবি না? বেশি বাড়াবাড়ি করলে একদম পিঁপড়ের মতো পিষে মে*রে ফেলব। যে দেখছ কিছু বলছি না নরম হয়ে আছি ওমনি পেয়ে বসেছ তাই না? একদম সোজা এসে বাইকে বসবি নইলে আমিও দেখব তুই বাড়ি কীভাবে যাস আজকে। ”

” আপনি কেন আমার পিছে পড়ে আছেন বলুন তো? বুঝতে পারছেন না কেন আমি কারো সঙ্গ চাইছি না কোন পুরুষের তো নয়-ই”

শুভ্রতা নিহানের দিকে এগিয়ে এসে কথাটা দাতে দাত চেপে বলে আশেপাশে কেউ যেন শুনতে না পায়।

” আমি ছাড়া তোর লাইফে কেউ আসবে না, কোন পুরুষ তোর আশেপাশে ঘেষবে না। সে ব্যবস্থা অতি তাড়াতাড়ি করা হবে চিন্তা করিস না। এখন আপাতত বাইকে বস নইলে এখানে অনেক খারাপ কিছু হয়ে যাবে। এখানে আমার আর না আসলেও চলবে কিন্তু তোর কিন্তু আসতেই হবে। ”

শুভ্রতা আর কথা বাড়ায় না, সে জানে এখানে ভয়া*বহ কিছু সত্যি সত্যি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। নিহান বাইকে বসলে শুভ্রতাও গিয়ে পিছে বসে পড়ে। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নেয়, আজ বাবাকে বলতেই হবে নিহানের আচরণের কথা। বাবাকে এটাও জানাতে হবে যেন তিনি নিহানকে নিষেধ করে দেন তার আশেপাশে আসতে।

~~
শুভ্রতা আর স্নিগ্ধা বিকেলের দিকে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নেয়। দুজন রেডি হচ্ছে শাকিরাদের বাড়ি যাবে জন্য। স্নিগ্ধা চুল বাধতে বাধতে বলে ওঠে,

” আপু আমাকে যদি কেউ পছন্দ করে তার সাথে কি আমার রিলেশনে যাওয়া ঠিক হবে?”

ছোটবোনের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয় শুভ্রতা। বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

” তোকে পছন্দ করে কেউ? কে পছন্দ করল শুনি?”

” কেন, আমাকে কেউ পছন্দ করতে পারে না? এমনভাবে বলছিস যেন আমি দেখতে মোটেও ভালো না!”

” ভালো না কে বলেছে কিন্তু তোকে কে পছন্দ করল? ”

” করেছে কেউ, তাকেও আমার ভালো লাগে। এখন বল আমি কি তার প্রোপোজালে হ্যাঁ বলে দেব?”

” আজব, একটা কথা বারবার জিজ্ঞেস করছি যে কে সে, কে সে সেটার উত্তর না দিয়ে কথা বলেই যাচ্ছিস।”

” আমার ক্লাসের একজন।”

শুভ্রতা হাফ ছেড়ে বাঁচে। গতরাতে স্নিগ্ধার মুচকি মুচকি হাসি দেখে ভেবেছিল হয়তো সে নিহান ভাইকে পছন্দ করে। শুভ্রতা একটু নিশ্চিন্ত হয়ে বলে,

” পড়ছিস অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে, দুই একবছর যেতে না যেতেই তোর বিয়ে আসা শুরু হবে। বাবা মা হয়তো ভালো ছেলে পেলে বিয়েও দিয়ে দিবে। আর এই অবস্থায় তুই ক্লাসমেটের প্রোপোজালে হ্যাঁ বলবি কি না বলবি সেটা জানতে চাইছিস? মাথায় মগজ আছে তোর? আমার তো সন্দেহ হচ্ছে। ওই ছেলের বিয়ে করতে এখনো ছয় সাত বছর ততদিনে তো দুই তিনটা বাচ্চা হয়ে যাবে।”

স্নিগ্ধা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, ” সেটাও ঠিক বলেছ। আমার বিয়ে করার হেব্বি শখ। বাড়ি থেকে বিয়ের কথা বললেই বিয়ে করে নেব, পড়তে হবে না আর। বাবা একটা টাকাওয়ালা ছেলে এনে দেবে সারাজীবন আরামে পায়ের ওপর পা তুলে খাব।”

” হয়েছে হয়েছে এবার চল। মা অনেক আগেই যেতে বলেছে শাকিরাদের বাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো লোকজন চলেও আসবে। আর তাছাড়া শাকিরার সাথে আমার একটু কথাও আছে।”

” আচ্ছা আপু, শাকিরা তো রায়হান ভাইয়াকে পছন্দ করতো তাহলে এখানে রাজি হলো কেন?”

” এই এসব কথা আমাকে যা বলেছিস বলেছিস। এই কথা যেন ওই বাড়িতে গিয়ে মুখ দিয়ে না বের হয় বলে দিলাম। চল এখন তাড়াতাড়ি। ”

দুজন একসাথে রুম থেকে বের হয়ে বাড়ির দরজা লক করে শাকিরাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়৷ মেয়েটা একা একা কি করছে কে জানে! কি চলছে তার মনের মাঝে? তাকে যদি আজ পছন্দ হয়ে যায় তাহলে কি বিয়েটা হয়েই যাবে? কিন্তু রায়হান! সে কি এ বিষয়ে জানে? নাকি জেনেও কিছু করবে না!

#চলবে….

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৬

রায়হানকে গতকাল কল দিয়ে বলার পরও রায়হান কোন খোঁজ খবর নেয়নি শুনে শুভ্রতার বেশ রাগ হলো। রায়হান যে শাকিরাকে পছন্দ করে সেটা শুভ্রতার কাছে একশো শতাংশ পরিস্কার। তাহলে পছন্দের মানুষের বিয়ে হতে দিচ্ছে কি করে! তারা তো প্রেম করে নি যার কারণে বিয়ের পর অশান্তি হতে পারে এরকম কোন ব্যাপারও নেই। তার ফুপা ফুপিও যথেষ্ট ভালো মানুষ শাকিরাকে যথেষ্ট ভালোবাসে। ছেলের বউ বানাতে নিশ্চয়ই আপত্তি করবে না। রায়হানও যেহেতু ভালো একটা ছেলে বাবার সাথে ব্যাবসা সামলাচ্ছে তার মানে কিছু একটা করছে, বসে তো নেই সে হিসেবে এখান থেকেও না করবে না। তার মানে দাঁড়ালো সবদিক দিয়ে সবকিছু ইতিবাচক।

রায়হান কাল থেকে আর কল দেয় নি জন্য শাকিরা রাগ করে ফোন বন্ধ করে রেখেছে। তার মতে যে দূরে থাকতে চায় তাকে দূরে রাখাই শ্রেয়। শাকিরাদের বাড়ি আসলে শুভ্রতার ফোনেরও নেটওয়ার্কের সমস্যা করে৷ গ্রামে আবার এই একটা ঝামেলা, সবকিছু উন্নত হচ্ছে কিন্তু নেটওয়ার্কের ব্যবস্থাটা তার একদম পছন্দ না। একেক জায়গায় একেক সিমের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।

বাহিরের আওয়াজে বোঝা গেল ছেলেপক্ষ চলে এসেছে। তাদের হয়তো এখন নাস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। শাকিরাকেও সাজানো প্রায় শেষ কিন্তু সে কান্না করছে জন্য কাজলটা ঘেটে ঘ হয়ে যাচ্ছে বারবার। সেটা ঠিক করতে করতে শুভ্রতা বেশ চটে যায়।

” তুই কান্না করবি সেটা আমাকে আগে বলতে পারলি না? সাজানোর আগে কান্না করে নিলেই হতো, এখন কান্না করে সাজটা নষ্ট কেন করছিস শাকিরা? বারবার এটা ঠিক করতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না।”

শাকিরা কোন কথা না বলে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। শুভ্রতা আবার তার চোখের নিচের জায়গাটা ঠিক করে দিল। একজন এসে ছোট করে একটা কালো টিপ দিয়ে দিতে বলল কিন্তু শুভ্রতা টিপ দিতে নারাজ কারণ মুসলিম মেয়েদের টিপ ইগনোর করে চলা উচিৎ বলে সে মনে করে। যারা সুন্দর তাদের টিপ ছাড়াই সুন্দর লাগে।

শাকিরা এখন চুপচাপ বসে আছে। কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে আছে। হঠাৎ স্নিগ্ধা রুমে এসে বলল,

” আপু, রায়হান ভাইয়া তোমাকে বাহিরে ডাকছে।”

শাকিরা চোখ বড় বড় করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে, ” রায়হান ভাই এসেছে! আমি জানতাম উনি আসবে, আমি যে বুঝেছিলাম উনিও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমাকে না ডেকে তোকে কেন ডাকছে শুভ্রতা?”

” আমি কি জানি? তুইও এখানে আর আমিও এখানে। আর তাছাড়া তোকে আজ দেখতে এসেছে তোর সাথে রায়হান ভাইয়া আলাদা করে কথা বললে সবাই কিছু মনে করতে পারে৷ শোন শাকিরা আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুই কিন্তু ওদের সামনে যাবি না ঠিক আছে?”

শাকিরা মাথা নাড়ায়, সে যাবে না। শুভ্রতা আর স্নিগ্ধা বাহিরে দাঁড়িয়ে চলে আসে। বাড়ির বাহিরে এসে দেখে রায়হান, নিহান, নেহা, আবিরা সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা আর শুভ্রতা সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো।

” এটা কোন কাজ করেছ ভাইয়া?

শুভ্রতা কথাটা বলতেই রায়হান অসহায়ের মতো মুখ করে বলে, ” বন্ধুদের সাথে ট্যুরে গিয়েছিলাম, সারাদিন জার্নি করে এসেছি। কোনরকমে এসে পৌঁছেছি, ট্যুরে গিয়েও শান্তি নেই। বাবা ওখানেও কাজ ধরিয়ে দিয়েছেন দোকানে গিয়ে গিয়ে কাস্টমারের সাথে রাতে দেখা করে কথা বলতে হয়েছে। একটু পানিও পড়েনি পেটে আজ। ”

” ফোন করে বলে দিলে হতো না?”

” নিজে আসা আর ফোনে বলা তো এক না। ”

” আচ্ছা যা হয়েছে হয়েছে এবার বল কি করা যায়?”

আবিরা কথাটা বলার পরই নিহান বলে, ” শাকিরা কি ওদের সামনে গিয়েছে?”

” না।”

শুভ্রতা ছোট করে জবাব দিয়ে দেয়। নিহান শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে বলে, ” তুমি তাহলে ওকে গিয়ে বলো সে যেন মাথাঘুরে পড়ে যায় জ্ঞান হারায় যেন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ”

” শাকিরা জ্ঞান হারাবে মানে?”

” ওকে দেখানো তো কোনমতে থামাতে হবে তাই না!”(আবিরা)

” তুমি যাও তাড়াতাড়ি। ”

শুভ্রতার সাথে তুমি করে বলায় খুব অস্বস্তি হচ্ছে তার। নিহানের কথাটাও সবার পছন্দ হয়। আরও কিছুক্ষণ সবার মাঝে আলাপ আলোচনা চলে।

শুভ্রতা আর নেহা চলে যায় শাকিরার কাছে। রুমে আপাতত তেমন কেউ নেই। রুমে ঢুকেই শুভ্রতা নেহাকে বলে, ” তুই শাকিরার কাছে বসে সবকিছু বুঝিয়ে বল আমি বাহিরের দিকটা দেখছি। ”

শুভ্রতার কথামতো নেহা শাকিরার কাছে চলে যায়। নেহা শাকিরাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়। শুভ্রতা বাহিরে পাহাড়া দিচ্ছে কেউ যেন এখনই না আসে। শুভ্রতা বাহিরে গিয়ে দাঁড়াতেই নিহান এসে পাশে দাঁড়ায়।

” রেডি হয়ে যাও জান, বিয়েটা ভেঙেই তো বিয়ের জন্য বসতে হবে।”

” মানে?”

” একটু পরেই বুঝতে পারবে।”

” আপনি এমন কেন করছেন বলুন তো? আপনার ব্যবহার আমার কাছে ঠিক লাগছে না একদম। আমার আশেপাশে আসবেন না প্লিজ।”

” কাছাকাছি থাকারই ব্যবস্থা করছি অপেক্ষা কর শুধু আরেকটু।”

” আমি ডিভোর্সি, নিহান ভাই।”

” আমি তোকে ভালোবাসি। ”

কথাটা যেন সরাসরি শুভ্রতার হৃদয়ে আঘা*ত করে। সে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই শাকিরার রুম থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসে। সবাই শাকিরার রুমের দিকে ছুটে যায়। শাকিরার মা আঞ্জুয়ারা মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে কান্নাকাটি শুরু করে দেন। মুখে পানি ছিটানো হয় তবুও শাকিরা চোখ খোলে না। অতঃপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ছেলেপক্ষের কয়েকজন নিজেদের মাঝে বলাবলি শুরু করে মেয়ে হয়তো অসুস্থ তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাইছে। অনেক মেয়ের তো অনেকরকম অসুখ থাকে। কেউ কেউ তো বলতে শুরু করে হয়তো মেয়ে অন্যকাউকে পছন্দ করে সেই চিন্তায় জ্ঞান হারিয়েছে আসল ব্যাপার কোনটা কে জানে!

শাকিরার বাবা ছেলেপক্ষের কাছে এসে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে ক্ষমা চায় কারণ তার মেয়েকে এখন ডাক্তার দেখাতেই হবে জ্ঞান ফিরছে না। ছেলেপক্ষের একজন বলে ওঠে,

” মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যান ভাই, আমরাও নাহয় আজ উঠি। যোগাযোগ করে আবার অন্যদিন চলে আসব।”

আশেপাশের সবাইও তাই কথা মেনে নেয়। শাকিরার বাবাও আর আপত্তি করে না। তিনি তাদের থেকে বিদায় নিয়ে মেয়েকে নিয়ে বের হন সাথে রায়হান আর নিহান যায়।

শাকিরাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। বাড়ির বাহিরের বড় উঠোনে জোৎস্নার আলোতে সবাই বসে আছে। আবিরা পুকুর পাড়ের সিড়িতে বসে ফোনে কথা বলছে। সম্ভবত সে অভিকের সাথে কথা বলছে। একটু দূরেই বাড়ির বড়রা বসে কথা বলছে। শাকিরার মা শেষ দেড় ঘণ্টা চিন্তিত থাকলেও এখন বেশ খানিকটা চিন্তামুক্ত আছেন কারণ তার মেয়ে সুস্থ আছে। ডাক্তার বলেছে অতিরিক্ত গরমে শাকিরার এমন হয়েছে তার ওপর আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ঠিকমতো না খাওয়া। এই বয়সে মেয়েরা অনেকেই খাওয়া কমিয়ে দেয় এটা ভেবে যে শরীর ঠিক রাখতে হবে মোটা হওয়া যাবে না। এটাই তাদের অসুস্থতার মুখ্য কারণ হিসেবে ধরা হয়। ভালো থাকতে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবারে প্রয়োজন আছে।

শুভ্রতা একাই শুধু পায়চারি করছে। অপেক্ষা করছে কখন তারা সবাই বাড়ি এসে পৌঁছবে।

মিনিট দশেকের মাথায় সবাই বাড়ি এসে পৌঁছল। কাজিনরা সবাই একসাথে শাকিরার রুমে বসে আছে শুধু নিহান ছাড়া। শাকিরার খাটে আর আশেপাশে চেয়ার নিয়ে সবাই বসে আছে। আঞ্জুয়ারা বেগম মেয়ের জন্য ডিম সিদ্ধ আর গরম দুধ আনতে গিয়েছেন।

” আপনি আমাকে পছন্দ করেন রায়হান ভাই?”

শাকিরার এমন উদ্ভট প্রশ্নে এতগুলো মানুষের মধ্যে লজ্জা পেয়ে যায় রায়হান। কখন কোথায় কি বলতে হয় এই মেয়ে এখনো শিখে উঠতে পারল না!
নেহা আর স্নিগ্ধা মুখ টিপে হাসছে। আবিরা তো বলেই ওঠে,

” হ্যাঁ রায়হান ভাইয়া বল, তুই শাকিরাকে বলে দে তো আমিও রেকর্ড করে রাখি যেন পরে তুই অস্বীকার করতে না পারিস।”

আবিরার কথায় স্নিগ্ধা শব্দ করে হেসে ফেলে। আবিরা আবার বলে, তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা কর ভাই দুই বিয়ে একসাথে খাব।”

” দুই বিয়ে! কে কে বিয়ে করছে?”

রায়হান ঠিক বুঝতে পারল না দুইটা বিয়ের কথা আবিরা কেন বলল!

” তোর আর নিহান ভাইয়ের।”

” নিহান ভাই বিয়ে করছে নাকি?”

” তো বিয়ে করবে না? তিনমাস ছুটি পেয়েছে এরপর কি আর কখনো এত ছুটি পাবে! ছুটিটা কাজে লাগাতে হবে তো!”

” মেয়ে দেখা হচ্ছে?”

” হ্যাঁ দেখা হচ্ছে তো।” মাঝখান থেকে নেহা রায়হানের কথাটার জবাব দিয়ে ওঠে।

শুভ্রতার এবার অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়। নিজের বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিকই দেখে বেড়াচ্ছে অথচ তার ওপর শুধু অধিকার ফলাচ্ছে। তার মতে শুধুমাত্র বাবা ছাড়া কোন পুরুষই যথাযথ নয়।

#চলবে….

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৭

” মামা, আমি আপনার মেয়ে শাকিরাকে পছন্দ করি। বিয়েও করতে চাই। আশা করছি আপনি, মামি কেউই কোন আপত্তি করবেন না এ ব্যাপারে। আমি খুব একটা খারাও ছেলে নই সেটা আপনারা সবাই জানেন। আমি আপনার মেয়েকে ভালো রাখতেও পারব ইন শা আল্লাহ। আমার বাবার অনেক টাকা পয়সা আছে সেই ভরসায় বিয়ে করছি না আমিও এখন ব্যবসা দেখাশোনা করি৷ বাবা নিজেও আমার ওপর দায়িত্ব দিতে চাইছেন আমিই নিচ্ছি না।”

রায়হানের কথা শুনে খুব একটা অপ্রস্তুত হন নি শাকিরার বাবা সবুর সাহেব। তিনি রাতেই কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন এ ব্যাপারে। আন্দাজ সঠিক কি না সেটা জানার অপেক্ষাতেই ছিলেন। রায়হান যে ছেলে হিসেবে শুধু ভালো না খুব ভালো এটা সবাই জানেন। তিনি এটা ভেবে বিস্মিত হচ্ছেন যে শাকিরার মতো মেয়েকে পছন্দ কীভাবে করল! মেয়েটা না আছে পড়াশোনায় আর না আছে অন্যকিছুতে।

সবুর সাহেব একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, ” তোমার কথায় তো আমি আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিয়ে দেব না। তুমি বাসায় জানাও। বেহায়া ছেলে নিজের বিয়ের কথা নিজে বলছো। ”

” মামা অনেক সময় নিজের বিয়ের কথা নিজেকেই বলতে হয়। আমি মাকে বলে রেখেছি মা-বাবা আগামীকালই!!”

” হবু শ্বশুরের সাথে একদম লাজলজ্জা বিক্রি করে কথা বলবে না। আপা আর দুলাভাইকে জলদি আসতে বলো। ”

সবুর সাহেব বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রায়হান তার বাবাকে কল দিলো। কল দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ ও হলো।

” বাবা, নানাবাড়ি আসছো কবে? এখানে তোমার কত কাজ পড়ে আছে ভাবতে পারছো তুমি?”

ওপাশ থেকে রবিউল আহমেদ বলে ওঠেন, ” কাজ! আমার? ”

” হ্যাঁ তোমার ছেলের বিয়ে আটকে আছে এখানে। তুমি আর মা আসলেই আমি বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব।”

” কি বলছো তুমি? বউ মানে?”

“আমি আর আলাদা করে এক্সপ্লেইন করতে পারব না তুমি মায়ের কাছে থেকে শুনে নাও প্লিজ। তাড়াতাড়ি চলে আসবে কিন্তু বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফিরতে হবে। ”

” মেয়ে কে?”

” শাকিরা, মায়ের চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে।”

” নিজের জন্য মেয়ে নিজেই পছন্দ করে নিলে?”

” আমি তো পছন্দ করে বলছি আর তুমি যে বিয়ে করে বউ নিয়ে গিয়েছিলে সেবেলায়? তুমি আমার থেকে একধাপ এগিয়ে ছিলে বাবা।”

” বাবার সাথে এভাবে কথা বলতে লজ্জা লাগে না তোমার? অতীত টেনে তুলছো?”

” লজ্জা করলে বউ পাব না, তুমি আর মা বরং তাড়াতাড়ি চলে এসো। রাখছি…”

রায়হান ফোন রেখে নিহানদের বাড়ির দিকে যায়। সে আজ ওখানেই থাকবে৷ নিহান আর রায়হান প্রায় সমবয়সী। দুজনের সম্পর্কটাও বেশ ভালো।

নিহান কিছু একটা লিখছিল রুমে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে সেটা বইয়ের ভাজে লুকিয়ে রাখে। রায়হান এগিয়ে আসে নিহানের দিকে।

” কিছু করছিলি হবু মেজর ভাই?”

” এটা কোন ধরনের ডাক হলো?”

” কি বলব হবু বউয়ের বড় ভাই?”

” আজ দেখছি সেই আগের মতো আপনার মুখে কথা ফুটেছে। তা এত আনন্দ কি বিয়ে করার খুশিতে নাকি?”

” আমি কবে চুপচাপ ছিলাম বল তো? তুই বিয়ে করছিস কবে সেটা বল তো?”

” যাকে বিয়ে করতে চাই সেই তো রাজি হয় না।”

” হবু মেজরকে বিয়ে করতে কার আপত্তি শুনি?”

” তোর বোনের। ”

” আমার বোন?”

” তোরই তো বোন, কি সুন্দর ভাইয়া ভাইয়া করে না তোকে?”

” তুই এখনো শুভ্রতাকে ভালোবাসিস?”

” কোনসময় ভালোবাসা বন্ধ করেছিলাম নাকি? তুই শাকিরার প্রেমে পড়ার আগে থেকেই আমি এই মেয়েটাকে ভালোবাসি, অসম্ভব ভালোবাসি। ”

” শুভ্রতা কি বলে?”

” আপনি আমার কাছাকাছিও আসবেন না, এটা বলতেই আছে। ও বুঝতেই চায় না যে আমি ওকে সত্যিই ভালোবাসি। ওর কথাকে আমি আর গুরুত্ব দেব না। ওর বিয়ের সময় আমি ছিলাম না জন্য বিয়েটা করতে পেরেছিল কিন্তু এবার ওর মতকে গুরুত্ব দিলে ও একটা ভালো জীবন হারাবে আর আমি ওকে। ”

” ওকে কীভাবে মানাবি?”

” ওর সাথে একবার খোলামেলা কথা বলব, মানলে তো বড়ই ভালো আর না মানলে ওর অমতেই বিয়েটা করব তাও দুই সপ্তাহের মধ্যেই।”

” আমি জানি শুভ্রতা তোর সাথে যতটা ভালো থাকবে ততটা ভালো ওকে কেউ রাখতে পারবে না কিন্তু সে একবার ভালোবেসে ঠকেছে তাই হয়তো সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না। মানুষটা তাকে প্রচন্ড খারাপভাবে ঠকিয়েছে রে।”

” কি হয়েছিল বলবি? আমি ওর অতীত নিয়ে কারো সাথে কোন কথা বলি নি। আমার আগ্রহ ও নেই তবুও জানা দরকার হয়তো।”

রায়হান নিহানকে সবকিছু বলতে শুরু করে। সে একদম বিয়ের থেকে শুরু করে ডিভোর্স অবধি যা যা ঘটেছে সবকিছু বলে। নিহান চুপচাপ সেগুলো শুনতে থাকে।

~~

প্রায় ঘণ্টাখানেক হলো শাকিরার রুমে সবাই আড্ডা বসিয়েছে। সকাল সকাল রায়হানের মা আর বাবা চলে এসেছে। এসেই জানতে পেরেছে ছেলে কি কান্ড ঘটিয়েছে। যদিও তারা জানতো শাকিরার কথা। রায়হান তার মায়ের সাথে সব কথা শেয়ার করে। তারা শাকিরাকে রিং ও পড়িয়েছে আজকে। তখন থেকেই সবার আলাপ আলোচনা চলছে। শাকিরা চুপচাপ বসে আছে। নিজের বিয়ের আলোচনায় বসে থাকতে তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। রায়হান বলেছিল বেরিয়ে তার সাথে দেখা করতে কিন্তু এখান থেকে কীভাবে উঠবে সেটাই ভাবছে।

হঠাৎ শুভ্রতা ভেতরে প্রবেশ করে। শুভ্রতাকে দেখে রবিউল সাহেব তাকে ডেকে কাছে বসায়।

” ভালো আছিস রে মা?”

” জি ফুপা, আপনি কেমন আছেন?”

” আমিও আলহামদুলিল্লাহ। এখন কি পড়াশোনা করছিস?”

” হ্যাঁ করছি, পড়াশোনা তো করতেই হবে ওটাই এখন আমার সবকিছু। সাকসেস খুব বেশি করে প্রয়োজন আমার।”

” ভালো করে পপড়াশোনা করে বাবার মুখ উজ্জ্বল করো। তোমার ফুপির সাথে কথা হয়েছে?”

শাকিরার পাশে থেকে রায়হানের মা সাজিদা বেগম বলে ওঠেন, ” আমার জানের টুকরোর সাথে আমার কথা হবে না! ওকে বড় করেছি আমি।”

” হ্যাঁ সেটাই তো, আমার দ্বিতীয় মা হচ্ছে আমার ফুপি। ফুপি এখানে আসবে আর আমার সাথে দেখা করবে না?”

রবিউল সাহেব হাসতে হাসতে বলেন, ” তাহলে তো আমার প্রশ্ন করা ভুল হয়ে গেল দেখছি।”

শুভ্রতা ফুপাকে জিজ্ঞেস করে, ” বিয়ে কবে ঠিক হলো ফুপা?”

” এই মাসের শেষের দিকে আটাশ তারিখ।”

” ফুপি….”

” হ্যাঁ বল।”

” তোমার ছেলের হবু বউকে আমি নাম ধরে ডাকব নাকি ভাবি বলব বলো তো?”

” তোর যা ইচ্ছে হয় ডাকিস।”

” তাহলে শাকিরাই বলবে, ভাবি বলাটা ভেতর থেকে আসবে না। এই শাকিরা বাহিরে আয় তো একটু কথা আছে।”

শাকিরা অনুমতি নিয়ে শুভ্রতার সাথে বাহিরে চলে যায়। শুভ্রতা শাকিরাকে ছাদে যেতে বলে। শুভ্রতা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করতে থাকে।

রায়হান চিলেকোঠার ঘরের একপাশে দাঁড়িয়ে শাকিরার জন্য অপেক্ষা করছে। শাকিরা এসে এপাশে ওপাশে খুঁজে না পেয়ে চলে যেতে লাগলে রায়হান বেরিয়ে আসে। পিছন দিক থেকে বলে,

” এত দেরি হলো কেন আসতে?”

” আপনি কোথায় ছিলেন?”

” পাশেই, তোর আসতে এত দেরি হলো কেন সেটা বল।”

” সবাই ছাড়ছিল না যে।”

” আচ্ছা শোন একটা কথা।”

” হ্যাঁ বলেন।”

” বাবা-মা রাতে বাসায় ফিরবে উনাদের সাথে সাথে থাকবি। আমার এখন ফিরতে হবে কাজ পরে গেছে। আমি ফোন দিব তোকে। সাবধানে থাকবি, পড়ালেখায় মন দিবি এখন থেকে। কোন সমস্যা হলে শুভ্রতার কাছে যাস, ও তো ভালো স্টুডেন্ট। ”

” এখনই যেতে হবে?”

” হ্যাঁ দেরি করা যাবে না।”

রায়হান আর শাকিরা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে। শুভ্রতা সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রতা আজ ক্লাসে যায়নি জন্য ফাউজিয়া কল করেছে। শুভ্রতা ফাউজিয়ার সাথেই কথা বলছিল এমন সময় নিহান এসে সামনে দাঁড়ায়।

” দোস্ত একটু ফোন রাখতো আমি তোকে পরে কল দিচ্ছি।” বলেই শুভ্রতা কল কেটে দিয়ে নিহানের দিকে তাকায়।

” কিছু বলবেন?”

” হ্যাঁ। তোকে কিছু জানানোর আছে।”

“কি?”

” এখানে না, পুকুরপাড়ের দিকটাতে চল একটু। ”

” এখানেই বলুন, এখানে কি সমস্যা?”

” ওখানে গেলেও তো কোন সমস্যা নেই। আয় আমি অপেক্ষা করছি। ”

নিহান সেখান থেকে চলে গেলে শুভ্রতাও পিছু পিছু হাটতে থাকে আর ভাবতে থাকে কি বলবে নিহান!

#চলবে…….