#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৩৯
শুভ্রতাকে কোলে নিয়েই নিজের বাড়িতে ঢুকে নিহান। পিছন পিছন আবিরা আর নেহাও চলে এসেছে। শুভ্রতা ভয় আর লজ্জায় তখনও চোখ বন্ধ করে আছে। রাবেয়া বেগম এগিয়ে এসে বলেন, ” সিড়ি আছে সামনে, মেয়েটাকে নামিয়ে দে। দেখা যাবে দুজনই পড়ে বসে থাকবি।”
নিহান না থেমে হাটতে হাটতেই বলে, ” মা কত মাস ট্রেনিং নিয়েছি জানো? কত কি করেছি আর তুমি কি না সিড়ি নিয়ে চিন্তায় আছো? তোমার ছেলে এত দূর্বল না। চিন্তা করো না।”
শুভ্রতা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে, ” বড়মা তোমার ছেলেকে বলো না প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিতে। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।”
” এই নিহান….”
রাবেয়া বেগমকে থামিয়ে দিয়ে নিহান বলে, ” আমাকে শক্ত করে ধরে রাখো, পড়তে দেব না কোনভাবেই এটুকু বিশ্বাস নেই আমার ওপর?” শুভ্রতা আর কিছু বলে না রাবেয়া বেগম ও নিজের রুমের দিকে চলে যান। আবিরা আর নেহাও মায়ের সাথে হাসতে হাসতে চলে যায়।
নিজের রুমে নিয়ে এসে বিছানার সামনে শুভ্রতাকে নামিয়ে দেয় নিহান। নিহান নয় শুভ্রতা যেন এবার হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এতক্ষণ পরে সে চোখটা খুলল সাথে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
শুভ্রতার অবস্থা দেখে নিহান এগিয়ে এসে বলে, ” কোলে করে নিয়ে আসলাম আমি, আমার হাঁপানোর কথা অথচ তুমি হাঁপাচ্ছো?”
শুভ্রতা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। নিহান কোন উত্তর না পেয়ে আবার প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, ” ভয় পাচ্ছিলে?”
” হ্যাঁ, একটু।”
” পরে গেলেও তোমাকে কোন না কোনভাবে ঠিক রক্ষা করতাম। প্রাণ থাকতে ভালোবাসার মানুষের কষ্ট দেখতে পারতাম না। পৃথিবীর সব হাসি তোমার হোক তার বিনিময়ে যদি গোটা জীবন কষ্ট নামক সুচ বুকে বয়ে বেড়াতে হয় তবু আমি রাজি, শুধু তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না।”
” কি সব বলছেন? আমি কখনো আপনাকে ছেড়ে যাব না। যে মানুষটা আমাকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে তাকে কি করে ছেড়ে থাকব। আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি আপনার সঙ্গ চাই। থাকবেন না?”
” হুম, থাকব। ছেড়ে যেতে চাইলেও যেতে দেব না।”
রাবেয়া বেগম কিছু খাবার প্লেটে সাজিয়ে নেহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিহানের রুমে দিয়ে আসতে বলে। নেহা প্লেট নিয়ে এসে দরজায় নক করতেই শুভ্রতা এসে দরজা খুলে দেয়। নেহা ভেতরে এসে খাবারের প্লেট টি-টেবিলের ওপর রেখে জিজ্ঞেস করে, ” ভাইয়া কোথায়? তুমি দরজা খুলে দিলে যে? তুমি তো ফ্রেশ হচ্ছিলে?”
” আমার ফ্রেশ হওয়া হয়ে গিয়েছে। আয় বসবি।”
” না বউমণি এখন আর বসব না অনেক রাত হয়ে গেছে এখন আসি বরং।”
” এই তুই আমাকে বউমণি কেন বলছিস? লা*/ত্থি খাবি একদম। আমার সাথে এই ভাবি, ননদের সম্পর্ক গড়তে আসলে মে*/রে তক্তা বানিয়ে দেব বলে দিলাম।”
” এই তুমি না নতুন বউ। ”
” তো কি হয়েছে? তোদের সাথে আমার নতুন বউয়ের মত আচরণ করতে হবে? তাহলে তো আমি দূরে কোথাও বিয়ে করলেই পারতাম।”
” তুমি থাকো আমি আসছি।”
নেহা কথা না বাড়িয়ে চলে গেল, শুভ্রতা দরজা আটকাবে ঠিক তখনই নিহান এসে তার আগেই দরজা আটকে দিলো।
নিহান এতক্ষণে খেয়াল করল শুভ্রতা ঠিক তার নিজের মতোই শুভ্র রঙের শাড়ি পরেছে। আচ্ছা বিয়ের রাতে কেউ শুভ্ররঙা শাড়ি পরে কি? তার ঠিক জানা নেই। বিয়ের সাজ ধুয়ে হয়তো গোসলটাও করে নিয়েছে শুভ্রতা। হাটু অবধি চুলের আগা বেয়ে টুপটাপ পানি ঝরছে। কুচিগুলো বেশ এলোমেলো দেখাচ্ছে, নতুন শাড়ি ভাজ খুলে পরলে সেটার কুচি ঠিক করা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে তার ওপর যদি সেটা খসখসা টাইপ শাড়ি হয়ে থাকে তাহলে তো কোন কথাই নেই।
নিহান কোন কথা না বলে শুভ্রতার ওপর চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। বিয়ে হলে কি মেয়েদের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়? সেটাও নিহানের জানা নেই কিন্তু শুভ্রতা বিয়ের সাজের পর থেকে কেমন অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে। সে আগে থেকে উজ্জ্বল রঙের অধিকারী, আজকে যেন আরও বেশি ফর্সা লাগছে। আচ্ছা এই মেয়েকে কি দুধে আলতা গায়ের রঙের মেয়ে বলা যায়? হয়তো বলা যায়,বললে খুব একটা ভুল হবে না। শুভ্রতা একভাবেই দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে, নিহান যেভাবে দেখছিল তাতে লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ সমীচীন। নিহান আস্তে করে মেঝেতে দুই পা গুটিয়ে বসে পড়ে। শুভ্রতার কুচিতে হাত দিবে এমন সময় শুভ্রতা এক পা পিছিয়ে যায়।
” কি করছেন?”
” কুচি এলোমেলো দেখাচ্ছে, ঠিক করলে একদম সব পারফেক্ট হত।”
শুভ্রতা মুচকি হেসে এগিয়ে আসে। নিহান কুচিতে হাত দিতেই শুভ্রতার বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। পুরোনো স্মৃতি উঁকি দেয়। কেউ একজন এভাবে নিচে বসে তার শাড়ির কুচি ঠিক করে দিত। শুভ্রতা মাথা ঝাঁকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। নাহ, অতীত ভাবা যাবে না। এমন সুন্দর বর্তমানে দাঁড়িয়ে অতীত ভাবা মহাপাপ, এত পাপ করলে যে প্রতিটা নিঃশ্বাস বিষা*/ক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবে। শুভ্রতা নিজেকে সামলে নিয়ে নিহানের দিকে তাকায়। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে সে, এতটা যত্ন করে কেউ স্ত্রীর শাড়ির কুচি ঠিক করে দেয়? পরিবেশটা কি আসলেই এত মনোমুগ্ধকর হয়!
নিহান উঠে দাঁড়ায়, শুভ্রতা ঠিক ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। নিহান শুভ্রতার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে, ” আমার চোখে তাকিয়ে দেখ তো কি দেখতে পাচ্ছ?”
” প্রেম।”
” কোন অবস্থানের?”
” গভীর।”
” আর কিছু দেখতে পাও না?”
শুভ্রতা চুপ করে থাকে, নিহান আবার বলে ওঠে, ” তৃষ্ণা দেখতে পাও? বুকে জড়িয়ে নেবার তৃষ্ণা! দেখতে পাও চোখের নিচের জমাট বাধা কালো দাগ? তোমার প্রতি যখন প্রেমের হলো শুরু আমার হয়েছিল সারা, বুঝতে পারো চোখ দেখে? কত কোটি সেকেন্ড, মিনিট তোমাকে নিজের ভেবে কাটিয়েছি, কল্পনায় সঙ্গ পেয়ে মুচকি হেসেছি। একটাবার ভালোবাসি শব্দটা তোমার কানে পৌঁছতে কতটা ব্যাকুল হয়েছি, সেই ব্যাকুলতা দেখতে পাও তুমি? তোমাকে নিজের করে পাওয়ার পরও তৃষ্ণা মিটছে না, এ জনমে মিটবে বলে মনে হয় তোমার? তোমাকে দেখার তৃষ্ণা আমার চোখে আজীবন থাকুক, তোমাকে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য আমার বুকটা সবসময় পু*ড়ু*ক, সেই পো*ড়া*র গন্ধে তুমি আমার কাছে আসলে সময় থেমে যাক। তোমার ব্যথায় আমার হৃদয় সর্বক্ষণ টনটন করুক আর আমি ছাড়া…… ”
” আপনি ছাড়া আমার একটা দিনও না আসুক।”
নিহান থেমে যায় মুহূর্তের মধ্যে, শুভ্রতার চোখ ছলছল করছে৷ চোখের পলক ফেললেই টুপ করে বৃষ্টিফোটা পড়বে। শুভ্রতা বিছানায় ধুপ করে বসে পড়ে। চোখের পানি গাল বেয়ে নেমেছে। নিহান গিয়ে শুভ্রতার পায়ের কাছে বসে।
” আপনি আমাকে ভালোবাসার কথা আগে কেন জানালেন না? জানালে হয়তো আমার জীবনের দ্বি…..”
শুভ্রতাকে কথা শেষ করতে দেয় না নিহান। শুভ্রতার কথার মাঝে বলে ওঠে, ” প্লিজ শুভ্রা, আমি তোর জীবনের শেষ পুরুষ হয়ে থাকতে চাই। আমার জীবনের প্রতিটা সেকেন্ড তোর সাথে কাটাতে চাই। তুই আমার জীবনের প্রথম নারী, প্রথম ভালোবাসা, তুই-ই আমার সবকিছুর শেষ৷ তোর আগে কেউ আসেনি, তোর পরেও কেউ আসবে না। আমি নিহান নিজেকে সিলমোহর দিয়ে আটকে দিলাম। আমি পুরোপুরি তোর হয়ে থাকতে চাই। তুই শুধু তোর অতীতটা প্লিজ সামনে আনবি না, আমি সহ্য করতে পারি না।”
নিহান মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ায়, বিয়ের পাঞ্জাবি সে এখনো পরে আছে। পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ছোট্টো কৌটা বের করে শুভ্রতার সামনে এগিয়ে দেয়। শুভ্রতা নিজের চোখের পানি মুছে নেয়। নিহানের দিকে দৃষ্টি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ” কি আছে এতে?”
” খুলেই দেখ।”
শুভ্রতা নিহানের হাত থেকে কৌটাটা নিয়ে খুলে দেখে সেখানে সুন্দর একটা রিং রয়েছে৷ শুভ্রতা কৌটা থেকে চোখ সরিয়ে বলে ওঠে, ” ডায়মন্ড!”
” হুম। পছন্দ হয়েছে?”
” অনেক বেশি সুন্দর। ”
” তোমার থেকে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ও বেশি নয়। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য্য তোমার কাছে তুচ্ছ।”
নিহানের কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে যায় শুভ্রতা। লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকে। মেঝের দিকে তাকিয়ে লজ্জামাখা মুখ নিয়ে বলে, ” আপনি না ভীষণ বাজে, কেমন কথায় কথায় লজ্জায় ফেলে দেন!”
#চলবে…….
#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৪০
” বউ একটু জড়িয়ে ধরব?”
নিহানের কথায় ফিক করে হেসে ফেলে শুভ্রতা। নিহান একপলকে শুভ্রতার হাসি দেখছে। শুভ্রতা হাসলে তার গালের টোল সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে নিহানের।
” তুমি কি জানো এই হাসি আমার সময় থামিয়ে দেয়? সময়ের সাথে শরীরটাও থেমে যায়, চোখ ও পলক ফেলতে ভুলে যায়। তুমি কি জানো মেয়ে তোমার হাসি অন্যকারো ঠোঁটেও হাসি ফোঁটায়?”
” কার মুখে হাসি ফুঁটে যায় আমার হাসি দেখে?”
” তোর একমাত্র বরের।”
” আচ্ছা, তাই!”
” হ্যাঁ। ”
” আর কি কি হয়?”
” বুকে উথাল-পাতাল ঢেউ উঠে, গালটা ঠোঁট দিয়ে ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করে।”
” ছিঃ বা*জে লোক একটা।”
” সত্য কথা বললেই বা”জে লোক?”
“তা হয়তো কি!”
” আচ্ছা তাই?” বলেই নিহান মুখে হাসি নিয়ে শুভ্রতার দিকে এগোতে থাকে। শুভ্রতা নিহানের এগিয়ে আসা দেখে পিছাতে থাকে। নিহান শুভ্রতার হাত ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে এনে বলে, ” পিছিয়ে যাচ্ছো কেন, আর কত এগোতে হবে আমাকে। জড়িয়ে ধরা পরে, এসো একটা কড়া করে চুমু খেয়ে দেখো। মিষ্টি লাগবে, বারবার খাওয়ার জন্য আবদার করবে দেখে নিও৷ নিহানের স্পেশাল চুমু নেশা ধরিয়ে দেবে গ্যারান্টি।”
নিহানের কথায় শুভ্রতা যেন লজ্জায় ম***রে যাচ্ছে। কী সব কথাবার্তা বলছে নিহান। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ ঢেকে ফেলে সে। নিহান শুভ্রতার অবস্থা দেখে মিটিমিটি হাসছে। এক নিমিষেই বুকে জড়িয়ে নেয় তাকে। নিহান অনুভব করে হৃদয়টা কেমন শীতল হয়ে যাচ্ছে। এত বছরের কাঙ্ক্ষিত মানুষটা আজকে বুকে ঠাই পেয়েছে। অতিরিক্ত ভ্যাপসা গরমের পর বৃষ্টি আর ঝড়ো হাওয়া যেমন পরিবেশ ঠান্ডা করে দিয়ে যায় ঠিক তেমনই এত দিনের না পাওয়ার যন্ত্র*ণা নিমিষেই শরীর, মন শীতল করে দিচ্ছে।
চারদিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। শুভ্রতা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ফজরের সময় হয়ে গিয়েছে। বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। নিহানকে ডাকবে কি না সেটা ভাবছে৷ তার অনেকদিনের ইচ্ছে ফজরে দুজন একসাথে নামাজ পড়তে উঠবে। সেটা আগের জীবনেও কয়েকটা দিন পুরণ হয়েছিল, আর তারপর….!
শুভ্রতা নিহানের পিঠে হাত দিয়ে ডাকতে থাকে। কয়েকবার ডাকার পর নিহান চোখ পিটপিট করে শুভ্রতার দিকে তাকায়।
ঘুম জড়ানো গলায় বলে, ” কি হয়েছে? ডাকছিস কেন?”
” আজান দিচ্ছে।”
” তো?”
শুভ্রতা কিছু বলবে তখনই নিহানও, ” আচ্ছা উঠছি।” বলে উঠে বসে। চোখ ডলতে ডলতে বলে “ওয়াশরুমে কে আগে যাবে? আমি নাকি তুই?”
” আপনিই যান, আমি বসে অপেক্ষা করছি। আপনার তো জামায়াতে নামাজ পড়তে হবে। আমি ওয়াশরুমে গেলে দেরি হবে তার চেয়ে আপনিই আগে যান ভালো হবে।”
” ঠিক আছে।”
যাওয়া বাদ দিয়ে এক পলকে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আছে নিহান। ঘুম থেকে উঠলেও একটা মানুষ এত সুন্দর দেখায় কীভাবে! এলোমেলো চুল, চেহারাটাও ঘুম ঘুম, কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে!
” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
” তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি।”
” ধুর, যান তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
নিহান ওয়াশরুম থেকে বের হতেই শুভ্রতা ভেতরে চলে যায়। নিহান তৈরি হয়ে শুভ্রতার জন্য একটা চিরকুট রেখে নিজেও মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়। জামায়াতে নামাজ শুরু হতে সাত মিনিট বাকি, বাড়ি থেকে মসজিদে যেতে তিন থেকে চার মিনিট লাগে। নিহান দরজাটা কিছুটা ভেজিয়ে চলে যায়। নামাজ শেষে তার আরেকটা কাজে যেতে হবে। ফুলের যোগাড় করতে হবে, এটা একটা পুরুষের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। পুরুষ এটাকে গুরুত্ব দিলে নারীও পুরুষের প্রতি গুরুত্ব দেয়া বাড়িয়ে দেবে। নারীর ছোট ছোট ইচ্ছে-পূরণ হলেই তারা বেশি প্রশান্তি পায়। এই যেমন হুটহাট ফুল পেলে, নামবিহীন কোন উপহার, বাসায় আসার পথে তার শখের কোন জিনিস, এক জোড়া কানের দুল বা শুভ্র কোন শাড়ি, প্রিয় লেখকের কোন বই, সময়মতো সামান্য প্রশংসা নারীর মন প্রশান্ত রাখার জন্য এগুলোই যথেষ্ট।
শুভ্রতা আলমারি থেকে কয়েকটা শাড়ি বের করে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে কোনটা পরবে সেটা ভেবে। নিহানের কোন রঙটা পছন্দ সেটাও জেনে নেওয়া হয়নি। হঠাৎ ফোনের নিচে সাদা কাগজের মতো দেখতে পেয়ে হাতে নেয়। চিরকুট! চিরকুট পড়ে শুভ্রতা আবার আলমারি খুলে বামপাশের ড্রয়ারে কালো রঙের শাড়িটা দেখতে পায় সে। হাসিমুখে শাড়িটা নিয়ে পরতে চলে যায়।
সকাল আটটা- বাড়িতে হৈচৈ এর শব্দ শোনা যাচ্ছে। স্নিগ্ধার মনে পড়েছে গতকাল সকালে রঙগুলো তার রুমেই ছিল তাই সেগুলো নিয়ে এসে সকাল সকাল আবিরা আর নেহার মুখে দিয়েছে। তাদের দুজনকে দেখতে একদম ভূ*তের মতো লাগছে। দুজন মিলে স্নিগ্ধার মুখে রঙ লাগিয়ে দিচ্ছে তার সাথে যোগ দিয়েছে শাকিরা।
মায়ের প্রেশারটা বেড়েছে শুনে নিহান মোড়ের মাথায় গিয়েছিল ওষুধ নিয়ে আসতে। পাড়ার একজনের ফার্মেসি আছে সেখানে, কল দিয়ে তাকে ডেকে নিয়েছিল। নিহান বাড়িতে ঢুকতেই নেহা এসে তার ডান গালে রঙ মাখিয়ে দেয়। একটা ধমক দিতে যাবে তখনই ভাবে, নাহ ধমক দেয়া ঠিক হবে না। বিয়েতে মজা করছে, করুক। তার চেয়ে বরং খানিকটা রঙ নিজের কাছে রেখে দেওয়া যায়, সময় বুঝে নতুন বউকে রাঙিয়ে দেওয়া যাবে।
হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় শুভ্রতার। উঠে বসে সে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আটটা পার হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে উঠতে গিয়ে বিছানার পাশে চোখ যেতেই দেখে সেখানে একটা গোলাপ আর বেলীফুলের মালা রাখা। সাথে চিরকুটে লেখা, ” শুভ সকাল শুভ্রপরী “। চিরকুট আর ফুলগুলো নিয়ে বসে কিছু ভাবতে থাকে সে। প্রতিটি পদক্ষেপে নিহান তাকে চমকে দিচ্ছে। যে মানুষটা এত ভালোবাসতে পারে সেই মানুষটা এতগুলো বছর ভালোবাসা অপ্রকাশিত রেখেছিল!
বাহিরের রুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে, নিহান ও বসে আছে। রান্নাঘরে রাবেয়া বেগম নাস্তা বানাচ্ছেন। শুভ্রতা সিড়ির কাছে এসে ভাবছে মাথায় কাপড় দেবে কি না? ভালোভাবে নিচে দেখে নেয় কে কে আছে, শুধু আবিরা আর নেহা আছে সাথে নিহান। বড়মা রান্নাঘরে কাজ করছেন, তাই সে আর সাত-পাঁচ না ভেবে মাথায় কাপড় না দিয়েই নামতে থাকে। মাথায় কাপড় দিলে তো খোপার ফুলটা নিহান দেখতে পাবে না।
নিহান বসে ফোনে কিছু একটা করছিল। শুভ্রতা পাশ দিয়েই সোজা রান্নাঘরের দিকে চলে যায়। নিহান সামনে তাকাতেই শুভ্রতার খোপায় ফুল দেখে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে।
শুভ্রতাকে দেখে রাবেয়া বেগম বলেন, ” ঘুম হলো?”
” হ্যাঁ হয়েছে। আমায় কিছু কাজ দাও করে দিই।”
” তোর কিছু করতে হবে না, আমি তোর বড়মা’ই আছি চাপ নিস না। আমার দুই মেয়েকে রান্না করে খাওয়াতে পারলে তোকেও পারব। যা গিয়ে বস ওখানে।”
” কিছু একটা করি প্লিইইইইজ বড়মা।”
” তুই কালো শাড়ি পরেছিস! আজ কালো শাড়ি কেন?”
রাবেয়া বেগমের প্রশ্নে শুভ্রতা শুকনো ঢোক গিলে নিহানের দিকে তাকায়। নিহান মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে। বউ এখানে কালো শাড়ি পরে জেরার সম্মুখীন হয়েছে আর বর চুপচাপ বসে ফোন ঘাটছে!
” কি হলো ওদিকে কি দেখছিস?”
” উনি বলেছেন কালো শাড়ি পরতে তাই পরেছি।”
” আচ্ছা যা গিয়ে বস ওখানে। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।”
” আমি তোমার সাথে নাস্তা নিয়ে যাই অন্তত।”
” শুভ্রতা! যেতে বলেছি আমি। ”
শুভ্রতা আর কোন কথা না বাড়িয়ে আবিরার পাশে গিয়ে বসে। শুভ্রতাকে আবিরার পাশে বসতে দেখে নিহান ভ্রু কুচকে তাকায় তার দিকে। শুভ্রতা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আবিরা আর নেহার সাথে গল্প শুরু করে দেয়।
বিকেলে আসরের নামাজ শেষ করে বাবার সাথে বসে বসে গল্প করছে শুভ্রতা। স্নিগ্ধা ঘুমোচ্ছে আর আয়েশা বেগম শুভ্রতার জন্য ফ্রিজ থেকে পায়েস নিয়ে এসে পাশে বসলেন। শুভ্রতা ঘন দুধের বাদামী রঙের পায়েস খেতে ভীষণ পছন্দ করে। ছোটবেলা থেকেই মাঝেমাঝে পায়েস খাওয়ার বায়না ধরে। আয়েশা বেগম পায়েস এগিয়ে দিতেই সে মনোযোগ দিয়ে খেতে থাকে।
” ভালো হয়েছে খেতে? কালকে তো খেতেই পারলি না।”
” তোমার হাতের পায়েস ভালো না হয়ে উপায় আছে? বাবাকেও দাও একটু। ”
” না রে আমি এখন পায়েস খাব না। একটু বের হব, সারাদিন বাড়িতে ছিলাম। ”
” একটু খেয়ে বের হও দেখো অসাধারণ হয়েছে খেতে।”
” ঠিক আছে, আয়েশা দাও পিরিচে করে একটু খেয়ে দেখি।”
আয়েশা বেগম পায়েশ আনতে যান। আবিরা রুমে ঢুকতেই শুভ্রতা তার মাকে ডেকে বলে, ” মা আরেকটা পিরিচেও দিও পায়েস, আবিরা আপু এসেছে।”
আবিরা এগিয়ে এসে পাশে বসে বলে, ” সে পায়েস খাচ্ছি সমস্যা নেই। কথা হচ্ছে ভাইয়া তোকে ডাকছে।”
” আমাকে? কেন, কি হয়েছে?”
” সেটা জানি না, পায়েসটা শেষ করে একটু তাড়াতাড়ি যা। দেরি করলে আবার রেগে যাবে।”
শুভ্রতা চিন্তায় পড়ে যায়। এত জরুরি তলব কেন? আসার সময় দেখে এলো কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে, আসার সময় বলেও এসেছে। তবুও কেন ডেকে পাঠিয়েছে কে জানে!
পায়েস খাওয়া শেষ করে, বাবাকে বলে উঠে ফোন হাতে নিবে তখনই দেখে সেখানে ফোন নেই। তার মানে ফোন রুমেই রেখে এসেছে। সেই অচেনা নম্বর থেকে আবার কল এলো না তো! শুভ্রতা তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়।
#চলবে….
#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_৪১
বাহিরে তাকাতেই কাকে দেখলো শুভ্রতা? ইমতিয়াজ! ইমতিয়াজ কেন এখানে এসেছে?
শুভ্রতা রেস্টুরেন্টে চেয়ারটায় বসে আছে। নিহান খাবার অর্ডার দিতে গিয়েছে। শুভ্রতা বসে ফোনে কিছু একটা করছিল হঠাৎ বাহিরের দিকে তাকাতেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়ার যোগাড় হয়ে যায়। বাহিরে কে দাঁড়িয়ে, ইমতিয়াজ! ইমতিয়াজ কেন তার পিছু কিরছে, কি চায় সে? শুভ্রতা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস টেনে নিহানের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর দুজন মিলে খাবার নিয়ে নিজেদের টেবিলে চলে আসে। যদিও শুভ্রতা ইমতিয়াজের চোখ থেকে বাঁচতেই নিহানের কাছে গিয়েছিল কিন্তু ওখান থেকে ফিরে সে নিজেই বাহিরের দিকটায় তাকিয়ে ইমতিয়াজকে খুঁজতে থাকে।
” আমি খাবার নিয়েই আসছিলাম তোমার আবার যেতে হবে কেন?”
শুভ্রতা আশেপাশে তাকিয়ে ইমতিয়াজকে খুঁজছিল এমন সময় নিহান কথাটা বলে উঠলে চমকে উঠার ন্যায় নিহানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। নিহানের পুরো কথায় মনোযোগ না থাকলেও কিছুটা কানে গিয়েছে তার। সে অনুযায়ী বলে,” দেরি হচ্ছিল তাই গেলাম। একটা সাহায্য করাও হয়ে গেল।”
নিহান হালকা হাসির রেখা টেনে শুভ্রতার উদ্দেশ্যে বলে, ” বিকেলে কি ভয় পেয়ে গিয়েছিলি?”
” আপনি এমনভাবে ডাক পাঠিয়েছিলেন, ভয় পাব ন? আরাম করে পায়েস খাচ্ছিলাম তখন।”
শুভ্রতার কথায় নিহানের ওষ্ঠ আরেকটু প্রশস্ত হয়। চোখগুলো ছোট হয়ে যায়। নিহান হাসলেই তার চোখগুলো দারুণভাবে ছোট হয়ে যায়।
” হাসছেন কেন? আমি কি কোন জোকস শুনিয়েছি নাকি?”
যদিও বা নিহানের হাসি থেমে যাওয়ার পথেই ছিল শুভ্রতার এই কথায় আবার হেসে ফেলে সে। আশ্চর্য এই কথায় কি কেউ হাসে? নিহান কেন হাসছে? অবাক করা বিষয় শুভ্রতার কথায় আজ অযৌক্তিকভাবে হাসি পাচ্ছে নিহানের। এভাবে হাসলে কি শুভ্রতা রেগে যাবে? আসলেই রেগে যাবে? খুব বেশি রেগে যাবে কি? নাহ, কথায় কথায় এভাবে হাসা ঠিক না, আর যার কথায় হাসবে সে যদি কোন আবেদনময়ী নারী হয়, চোখে যার প্রজ্জ্বলিত শিখা তাহলে তার কথায় হাসা দন্ড**নীয় অপরাধ।
বিকেলে আবিরা ডেকে দেওয়ার সাথে সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিহানের কাছে যায় সে। রুমে পা রেখেই ইন্দ্রিয় বুঝিয়ে দেয় নিহান ঘরে নেই, সে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কারো সাথে আলাপ করছে। সেটা কি প্রেমালাপ? ছি, প্রেমালাপ কেন হতে যাবে? সব আলাপ প্রেমালাপ হয় না, পৃথিবীর সব মধুর আলাপকেও প্রেমালাপের ক্যাটাগরিতে ফেলা যায় না।
শুভ্রতা ব্যালকনির দিকে পা বাড়ায়। কিছুটা এগিয়ে যেতেই শুনতে পায়, ” জি স্যার আমি খুব তাড়াতাড়ি রওয়ানা দিব ইন শা আল্লাহ। যে ব্যক্তিকে সন্দেহ হয়েছিল তাকে আটকে রাখা হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিব। গতকাল ব্যস্ত থাকায় আমি কিছুই করতে পারি নি। ইন শা আল্লাহ আমি খুব তাড়াতাড়ি কাজে এক্টিভ হব।”
শুভ্রতা কথা বলতে শুনে ব্যালকনির দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বাতাস বইছে। ঠান্ডা বাতাস। এক মুহুর্তের মধ্যে কি সুন্দর অনুভব হচ্ছে শুভ্রতার! নিহান কথা শেষ করতেই শুভ্রতার উপস্থিতি বুঝতে পেরে পিছনের দিকে তাকায়, শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের ছোট চুলগুলো উড়ে পিছনের দিকে যাচ্ছে। সংগোপনে পা ফেলে শুভ্রতার দিকে এগিয়ে আসে সে। কোমরে হাত দিতেই শুভ্রতা চমকে ওঠে। সামনে তাকিয়ে দেখে নিহান,স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” আপনিও না! ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। ছাড়ুন, ডেকেছেন কেন?”
” বউ আদর করতে।”
নিহানের অস্পষ্ট কথা শুভ্রতা এতকাছে থেকেও ঠিক বুঝতে পারে না। তাই পুনরায় সেই কথা শুনতে জিজ্ঞেস করে, ” কি?”
” কিছু না চুপ করে থাকো একটু।”
” কিন্তু ডেকে….”
শুভ্রতার কথা শেষ করতে দেয় না নিহান। ঠোঁটে আঙুল রাখতেই বৈদ্যুতিক শ*ক খাওয়ার মতো এক ঝটকায় চুপচাপ স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে যায় সে। নিহানের নেশা**ক্ত চোখ শুভ্রতার পুরো মুখ একবার পর্যবেক্ষণ করে ঠোঁটের ওপর নজর ফেলে। শুভ্রতার ঠোঁট কাঁপছে। অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে। শুভ্রতা মাথানিচু করে নেয়, ভেতরটা খুব হাসফাস করছে তার। নিহানকে এত কাছে দেখে শরীরটা কেমন একটা লাগছে। নিহানের ঠোঁট শুভ্রতার গাল স্পর্শ করল। শুভ্রতা সাথেসাথে চোখ বন্ধ করে নেয়।
দরজায় কেউ নক করতেই শুভ্রতা নিজেকে নিহানের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। নিহান কপালে হাত দিয়ে চোখমুখ খিঁচে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। শুভ্রতা দরজার দিকে গিয়ে দেখে ইরা দাঁড়িয়ে।
” আরে ইরা! আয় ভেতরে আয়, বাহিরে দাঁড়িয়ে কেন?”
” এমনিই আসলাম। তুমি ঘামছো কেন ফ্যান দাও নি?”
” এমনিইইই, ও কিছু না। আয় ভেতরে আয়। ”
” শুভ্রা রেডি হয়ে নাও, বাহিরে যাব। হাতে সময় নেই, আবার ফিরতে হবে তো।”
ইরার উপস্থিতি বুঝতে পেরে ব্যালকনি থেকেই শুভ্রতাকে ডেকে কথাটা বলে নিহান। শুভ্রতা নিহানের দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে বলে, ” বের হবেন, একথা বলেন নি তো?”
” বের হব এটা জানাতেই আবিরাকে পাঠিয়েছিলাম।”
” আচ্ছা আপু তোমরা যাও আমি বরং অন্যসময় আসব।”
শুভ্রতাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ইরা চলে যায়। শুভ্রতাও নিহানের কথামতো রেডি হতে চলে যায়। দশ মিনিটের মাঝে নিহানের রেডি হওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। সে বসে বসে শুভ্রতার জন্য অপেক্ষা করছে। বেচারি শাড়ি পরেছে কিন্তু কুচি ঠিক করতে পারছে না। সব মেয়ের এই অবস্থাই হয়, ঘরে স্বামী থাকলে তারা কুচি ঠিক করতে পারে না। কুচি ঠিক দেবার দায়িত্ব প্রতিটা স্বামীর। নিহানও সেই দায়িত্বটা যথেষ্ট মনোযোগ দিয়ে পালন করে। শাড়ির কুচি ঠিক করে দাঁড়িয়েই নিহানের মনে হলো শুভ্রতাকে একটা চুমু খাওয়া দরকার। দরকার যেহেতু তাই এমন দরকারি কাজে দেরি করতে নেই। চুমুর বিষয়টা মনে হলেই দিয়ে দিতে হয়৷ নিহানও দেরি করল না। শুভ্রতার মুখের দুইপাশে হাত দিয়ে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
” কি হলো?”
শুভ্রতার প্রশ্নের উত্তরে বেশ স্বাভাবিকভাবে নিহান জবাব দেয়, ” চুমু খাওয়া হলো।”
” এত চুমু খাওয়া আসে কোত্থেকে আপনার? এভাবে অপ্রস্তুত করে দিবেন না একদম।”
” কোথায় এত চুমু দেখলি? এটা তো কিছু না। বউকে তো সারাদিন চুমুর ওপর রাখতে হয় নইলে বউ বুঝবে কী করে যে তার বর অত্যাধিক রোমান্টিক?”
শুভ্রতা আর কথা বাড়ায় না। কারণ সে বুঝে গেছে এখন নিহানের কথার বিপরীতে কথা বললে নিহান আবার কিছু বলবে, তারপর সে কিছু বলবে এভাবে কথা বাড়তেই থাকবে। তার চেয়ে ভালো কথার সমাপ্তি এখানেই ঘটুক।
শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে নিহান শুভ্রতার কপালে আরেকটা চুমু খেয়ে বাহিরের দিকে চলে যেতে যেতে বলে, ” আমি নিচে অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি চলে আয় জান।”
_
” মুখ খুলুন।”
নিহান খাবার নাড়াচাড়া করছিল। শুভ্রতা চামচে খাবার নিয়ে নিহানের মুখের সামনে ধরে। নিহান মুচকি হেসে খাবারটা খেয়ে নেয়। নিজের খাবারের প্লেটে চামচ রেখে নড়ে চড়ে বসে সে। খাবার চিবিয়ে নিয়ে বলে, ” আমি এখন নিজে হাতে খাব না। তুই খাইয়ে দিবি।”
” লোভ হয়ে গেল তাই না? আচ্ছা দিচ্ছি।”
শুভ্রতা নিজেও খাচ্ছে আর একমনে নিহানকেও খাইয়ে দিচ্ছে। নিহানের পিছনের টেবিলেই ইমতিয়াজ বসে আসে। নিহানের বিপরীতে থাকায় নিহান তাকে দেখতে পারছে না। শুভ্রতার চোখ মাঝেমাঝে সেদিকে যাচ্ছে। দুই একবার চোখে চোখ পড়তেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছে শুভ্রতা। যে মানুষটা সবকিছু ছেড়েছুড়ে তার কাছে ছিল তাকে কতগুলো মাস শান্তিতে ঘুমোতে দেয় নি, কান্না ছাড়া যার দিন কাটেনি, কথার আঘা**তে ক্ষ*তবিক্ষ*ত করতে ছাড়ে নি তার ওপর এখন এত নজর রাখা কেন? কি চাইছে ইমতিয়াজ? তার নতুন সংসারে কোন ঝামেলা বাধাবে না তো! ভয় লাগছে শুভ্রতার। নিহানকে কি সবকিছু জানিয়ে দেয়া উচিৎ? কী জানাবে সে? প্রাক্তন স্বামী তাকে অনুসরণ করছে?
নিহানকে খুশি খুশি মুখে খাইয়ে দেওয়া দেখে ইমতিয়াজ তার হাতের কাটাচামচটা দিয়ে টেবিলে শক্ত করে বসিয়ে ঘুরিয়ে যাচ্ছে। কিচ্ছুক্ষণ এভাবে ঘুরালে টেবিলে দাগ বসে যেতে পারে।
খেতে খেতে নিহান শুভ্রতার হাত ধরতেই ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়ায়, শুভ্রতা ভয়ে কেঁপে ওঠে। ইমতিয়াজ তাদের দিকে রাগা*ন্বিত চোখে তাকিয়ে আছে। তাদের দিকে পা বাড়ায়, শুভ্রতা মাথা নিচু করে নেয়। সে নিহানকে বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। ইমতিয়াজ কি বড় কোন ঝামেলা বাধাবে? শুভ্রতার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গিয়েছে। তার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ।
শুভ্রতা আবার নিহানের পিছনের দিকে তাকাতেই দেখে ইমতিয়াজ সেখানে নেই। শুভ্রতার চোখ এদিক ওদিক ঘুরছে। নাহ, ভেতরে আর দেখা যাচ্ছে না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেল ইমতিয়াজ!
#চলবে……