হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস পর্ব-২২

0
332

#হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস
#পর্ব_২২
#মোহনা_হক

সকাল আটটা। আয়াজ ঘুম থেকে উঠেছে বেশ কয়েক মিনিট পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার প্রেয়সী এখনো ঘুমে মগ্ন। তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আয়াজ এক হাতে তার প্রেয়সীকে আগলে রেখেছে, আরেক হাতে মোবাইল দেখছে। রুয়াতের এরকম সুখময় ঘুম আর নষ্ট করতে চায়নি তাই সে ও শুয়ে আছে। আজ তার কোনো কাজ নেই। সেটা ভেবেই এখনো পর্যন্ত বিছানায় আরাম করছে। বক্ষে এমন চড়ুই পাখির ছানা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে, এই ঘুম কি আর নষ্ট করতে মন চায়?
এমন দু’ঘন্টা যাবত আয়াজ রুয়াত কে বক্ষে জড়িয়ে শুয়ে আছে। দশটা বাজতে চললো। আর শুয়ে থাকাও যাবে না। রুয়াত কে নিজ থেকে সরিয়ে একটা বালিশ দিয়ে শুইয়ে দিলো। শাওয়ার নিতে চলে গেলো। আয়াজের শাওয়ার নেওয়া শেষ। রুয়াতের আর ঘুম শেষ হলো না। আয়াজ একেবারে তৈরি হয়ে নিচে আসে। আরও আগে কল এসেছিলো আজ কিছু মানুষ আয়াজের বাসায় আসবে। চার পাঁচজনের মতো। লোকগুলো তার অফিসের’ই।

ফজলুল চৌধুরী আর আরহাম বসে বসে কিছু একটার হিসেব মিলাচ্ছে। আয়াজ সেদিকটায় যায়। আরহামের পাশে বসতেই আরহাম আয়াজ কে চোখ মারে।

-‘আমায় মেয়ে পেয়েছো? চোখ মেরেছো কেনো?’

আরহাম চোখ রাঙালো। ফজলুল চৌধুরী তার দু ছেলের দিকেই তাকিয়ে আছে হিসেব মেলানো বন্ধ করে। আরহাম ফিসফিস করে বলে-

-‘বাবার সামনেই বলতে হলো তোর? মান সম্মান নেই তো কিছু।’

ইনিমা এসে আয়াজ কে এক কাপ কফি দিয়ে যায়।
-‘দেবর সাহেব কি এখন নাস্তা করবেন নাকি আরও পরে করবেন?’

মাথা তুলে আয়াজ তাকায় ইনিমার দিকে।
-‘এখন দিন নাস্তা। একটু পর বাসায় কিছু লোকজন আসবে। তাদের সাথে জরুরী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বো।’

ইনিমা কিছু বলার আগেই ফজলুল চৌধুরী বলে উঠে।
-‘আজ কি বাহিরে যাবে নাকি?’

কফির কাপে চুমুক দেয় আয়াজ।
-‘নাহ্ ওনারা বাসায় আসবেন।’

ইনিমা আয়াজ কে নাস্তা দেয়। খাবারের মাঝ সময় লোকগুলো চলে আসে। তাই পুরো খাবার না খেয়েই আয়াজ উঠে যায়। এর মধ্যেই বৌ ভাত অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। রুয়াত ঘুম থেকে উঠে বসে আছে। এখনো রুমে কেউ আসেনি। আর সে ও রুম থেকে বের হতে পারছে না। বাহিরে চিৎকার চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। অনেক মানুষের গলার আওয়াজ ভেসে আসছে। রুয়াতের অনুশোচনা হচ্ছে। এতক্ষণ যে ঘুমালো কেউ আবার কিছু বলবে নাকি? তার শ্বাশুড়ি মা যদি কিছু বলে। আর ঘুম থেকে উঠার পর আয়াজ কে একবারও দেখলো না। কখন যে মানুষটা উঠেছে সেই খবর ও নেই রুয়াতের। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। নতুন বউ এতো সময় ধরে ঘুমিয়েছে। আয়াজ তাকে তুলে দিলেই পারতো। ধ্যাত! রুমে পায়চারি করছে রুয়াত। ইনিমা ও আসছে না। আয়নার সামনে এসে থেমে যায় রুয়াত। গলায় কোথাও আয়াজের ভালোবাসার স্পর্শ নেই। ভালোবাসার স্পর্শগুলো বুদ্ধি করেই দেয় নাই এখানে।টেকনিক আছে লোকটার। এসব ভেবে রুয়াত হাসছে। এমপি সাহেবের একটু আধটু বুদ্ধি না হলে চলে নাকি? কাল রাতে কেমন মাতাল হয়ে গিয়েছিলো এমপি সাহেব ভাবতেই রুয়াতের গা শিউরে ওঠে। বিয়ের পর রুয়াত তার নতুন রূপ দেখে একটু অবাক হয়। মেয়েদের দু’টো রূপ এক হচ্ছে বিয়ের আগে অন্যটা হচ্ছে বিয়ের পরে।

দরজা খোলার শব্দ শুনে তড়িঘড়ি করে ওড়না মাথায় চাপে। ইনিমা এসেছে। আর রুয়াত ভেবেছিলো অন্য কেউ এসেছে বোধহয়। ইনিমা কে দেখে খুশি হয়ে যায়। ইনিমা তার বোনের সামনে এসে দাঁড়ায়।

-‘ঘুম শেষ হয়েছে তোর?’

-‘আমি আরও আগেই উঠেছি। তুমি না রাতে বললে বের হতে না রুম থেকে তাই বের হইনি। আপু কেউ কি কিছু মনে করেছে? নতুন বউ এতক্ষণ ঘুমিয়েছে বলে?’

দু’পাশে মাথা নাড়ায় ইনিমা।
-‘ধুর বোকা মেয়ে কে কি মনে করবে? আর মা ও বলে দিয়েছে তোকে যেনো আমি পরে ডেকে তুলি। কারণ কাল তোর উপর অনেক বড় ধকল গিয়েছে। কিভাবে কাঁদার পর দূর্বল হয়ে গিয়েছিলি। মা জানে সব তারপর এ বাসায় আসার পর ও তো দেখেছে। কেউ কিচ্ছুটি মনে করেনি। যা ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি তোকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো। আমার সাথে নিচে নামিস তুই।’

মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় রুয়াত। শাওয়ার নিয়ে বের হয়। ইনিমা প্রথমেই তার বোনের চুলগুলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দেয়। তারপর খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। আয়নার সামনে বসিয়েছে রুয়াত। ইনিমা রুয়াতের গলায় একটা স্বর্ণের নেকপিস পড়িয়ে দেয়। তারপর হাতে চুড়ি ও পড়ায়। কাল এসব খুলে রেখেছিলো।

-‘আপু তোমার দেবর কোঁথায়? ঘুম থেকে উঠার পর দেখিনি।’

ইনিমা রুয়াতের চুল বেঁধে দিচ্ছে আর উত্তর দিচ্ছে।
-‘বাসায় আছে। ওই কিছু লোকজন এসেছে তাদের সাথে কথা বলছে। মনেহয় জরুরী কিছু। আর শুন আজ পার্লারে যেতে হবে না আমিই সাজিয়ে দিবো তোকে। এমনিই দেরি হয়ে গিয়েছে।’

ছোট্ট করে উত্তর দেয় রুয়াত।
-‘আচ্ছা।’

রুয়াতের চুল বাঁধা শেষ হলে ইনিমা তাকে নিয়ে নিচে চলে আসে। প্রথমেই মায়া চৌধুরীর কাছে নিয়ে যায়। তিনি রান্নাঘরে ছিলেন। মহিলাদের বলছেন কাজ কিভাবে কি করবে। রুয়াত ইনিমার পিছনে এসে দাঁড়ায়। মায়া চৌধুরী তাকে হাতে ধরে টেনে তার পাশে দাঁড় করিয়েছে। রুয়াতের থুতনিতে হাত রেখে বলে-

-‘কেমন আছো মা? কাল তো অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলে। এখন ঠিক আছো তো?’

রুয়াত হেসে উত্তর দেয়।
-‘জ্বী মা ভালো আছি।’

মায়া চৌধুরী রুয়াত কে ছেড়ে ইনিমা কে বলে-
-‘বড় বউমা নাস্তা দাও রুয়াত কে। কতক্ষণ আর না খেয়ে থাকবে?’

ইনিমা রুয়াতের হাত ধরে নিয়ে আসে সেখান থেকে। টেবিলে নাস্তা দেয় ইনিমা। সায়রা তুলিও রুয়াতের সাথে খেতে বসলো। তারাও এখনো খায়নি। রুয়াতের খাওয়া শেষ হওয়ার পর কিছুক্ষণ মায়া চৌধুরীর কাছে ছিলো। ইনিমা ও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো। রান্নাবান্না সব বার্বুচিরাই করবেন তাই এটার আর ভেজাল নেই। আয়াজের কাজ শেষ হলে সে উপরে চলে যায় আর একজন কে দিয়ে খবর পাঠায় রুয়াত কে উপরে যেতে। রুয়াত রুমে এসে দেখে আয়াজ পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে মোবাইল দেখছে৷ রুয়াতের আগমনে আয়াজ হেসে মোবাইল পাঞ্জাবীর পকেটে পুড়ে। দরজা বন্ধ করে দেয়। কারণ দরজা বন্ধ ছিলো না। অতঃপর সামনে এসে দাঁড়ায় রুয়াতের।

-‘কখন উঠেছো?’

মুখে কথাটি বললেও নজর রুয়াতের আশেপাশে। হুট করে আয়াজ রুয়াতের কোমড় পেচিয়ে ধরে। মুখে হাসি তার। রুয়াত নজর নিচু করে আয়াজের পাঞ্জাবীর দিকে তাকিয়ে আছে।

-‘অনেক্ষণ হয়েছে উঠেছি। আপনি যখন উঠেছিলেন আমায় কেনো তুলেননি?’

আয়াজ তার মাথা নিচু করে রুয়াতের ঘাড় মুখ ডুবিয়ে দেয়। ব্যস ওমনিই রুয়াত কেঁপে উঠে। হাত উঁচু করে আয়াজের ঘাড় চুল আঁকড়ে ধরে। মুখটা সরিয়ে নেয় আয়াজ।

-‘এতো বড় মেয়ে হয়েও এখনো বরের স্পর্শে কেঁপে ওঠা লাগে তোমার? এরপর থেকে শুধু সহ্য করে নিবে। কেঁপে ওঠা যাবে না। নাহলে দিনের বেলায় ও আমি বেসামাল হয়ে যাবো। তারপর তোমাকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না আমার থেকে।’

চুপচাপ আয়াজের কথা মাথা নেড়ে মেনে নেয় রুয়াত। আয়াজ চোখগুলো ছোট ছোট করে কিছু ভাবলো। তার প্রেয়সীর তো আবার হুটহাট এসবের অভ্যাস নেই। রুয়াতের অধরের দিকে নজর তার। সেখানটাই অধর ছোঁয়ালো। হুট করে ছাড়লো না। স্পর্শ আরও গাঢ় হতে লাগলো। আয়াজের এক হাত রুয়াতের চুলে অন্য হাত কোমড় বরাবর। রুয়াত আর সইতে না পেরে আয়াজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ওদিক ফিরে হাঁপাচ্ছে রুয়াত। সোজা আয়াজ বের হয়ে যায় রুম থেকে। দরজা খোলার আওয়াজ শুনে সেদিকটায় তাকায় রুয়াত। হতভম্ব হয়ে শুধু চেয়ে আছে। এমনটা করায় কি রাগ করেছে আয়াজ? বোধগম্য হলো না রুয়াতের। পিছন থেকে যে আয়াজ কে ডাক দিবে বা তার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে সে শক্তিটুকুও যেনো নেই রুয়াতের।

ইনিমা রুয়াত কে তৈরি করে দেয়। শাড়ি পড়া হতে শুরু করে মেকআপ সবকিছুই ইনিমা একা হাতে হ্যান্ডেল করেছে। মাঝে মাঝে একটু সায়রা আর তুলির থেকেও হেল্প নেয়। রুয়াতের মন একেবারে বিষন্নতায় ডুবে আছে। আয়াজের ওই রকম ব্যবহার, রাগ করে চলে যাওয়া একটুও সহ্য করতে পারেনি সে। আজ এখনো একটিবারের জন্যও রুমে আসেনি আয়াজ। কাউকে বলতেও পারছে না কিছু। আর কাকেই বা এসব বলবে। মুখ বুজে বসে আছে রুয়াত। ইনিমা খুব সুন্দর করে রুয়াত কে সাজিয়ে দেয়। ইনিমার সাজ বরাবরের মতোই বড্ড সুন্দর হয়। আর রুয়াত কেও খুব প্রিটি লাগছে। সব গহনা পড়িয়ে রুয়াত কে আয়নার সামনে
দাঁড় করায়। রুয়াতের দৃষ্টি অন্যদিকে। এসব কিছুই ভালো লাগছে না। আয়াজ রাগ করে আছে। তার রাগ ভাঙাতে পারলে একটু হলেও রুয়াতের মনে শান্তি লাগতো।

রুয়াত কে আয়নায় দেখিয়ে ইনিমা বলে উঠে।
-‘তোকে খুব সুন্দর লাগছে রুয়াত। একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ।’

আয়নায় রুয়াত তাকে দেখে। সত্যিই সুন্দর লাগছে কিন্তু আয়াজ তার সাথে রাগ করে আছে এই নিয়েই তার খারাপ লাগছে। ইনিমার কথার কোনো রকম উত্তর দিলো না। আর এইদিকে ইনিমা ভেবেছে তার সাজ রুয়াতের পছন্দ হয়নি। রুয়াত কে তার সামনে দাঁড়া করায়।

-‘সাজ পছন্দ হয়নি তোর?’

ধ্যান ভাঙে রুয়াতের। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হাসে সে।
-‘না আপু সুন্দর হয়েছে খুব।’

খুশি হয়ে যায় ইনিমা। রুয়াত কে তার রুমে নিয়ে আসে। সে ও রেডি হয়। মজুমদার বাড়ি থেকে সবার আসতে অনেক দেরি হয়। মেহরুবা আর হান্নান মজুমদার রুয়াত কে দেখেই কেঁদে দেয়। এই একটা দিন তারা কিভাবে যে রুয়াত কে ছাড়া কাটিয়েছে তারা নিজেরাই জানে। এমনটা না যে তারা রুয়াত কে ছাড়া কখনো থাকেনি। বিয়ের পর এই প্রথম ওনারা রুয়াত কে ছাড়া কাটিয়েছে। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। আয়াজ দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। রুয়াত বার বার আয়াজের দিকে তাকিয়েছিলো, একটু কথা বলার জন্য চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করেছিলো। তার সব কল্পনা জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে আয়াজ। একটিবারের জন্যও কথা বলেনি, তাকায়ওনি। বরং আরও চোখাচোখি হলে দৃষ্টি সরিয়ে নিতো। দূরে দূরে থেকেছে।

মেহরুবা অনেক বলেছে আয়াজ কে তাদের সাথে যেতে। আয়াজ না করে দিয়েছে সে যাবে না। শুধুমাত্র হান্নান মজুমদার আর মায়া চৌধুরীই জানেন আয়াজ পরে যাবে কিন্তু সবার সামনে বলছে সে যাবে না। রুয়াত দূর থেকে আয়াজ কে দেখছে। তুলির থেকে শুনেছে আয়াজ নাকি যাবে না তাদের বাসায়। এত্তো রাগ লোকটার। আর রুয়াত ও আয়াজের সাথে কথা বলতে পারছে না রাগ ও ভাঙাতে পারছে না। কি এক মুসিবতে পড়লো। রুয়াত কে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। আরহাম আয়াজের পাশে দাঁড়িয়ে বলে-

-‘কিরে যাচ্ছিস না কেনো শ্বশুড় বাড়ি? রাগ করেছিস বুঝি আমার শালীকার সাথে?’

রুয়াত গাড়িতে উঠছে সেদিকটায় চেয়ে আছে আয়াজ।
-‘আমি কি একবারও বলেছি আমি রাগ করে শ্বশুড় বাড়ি যাচ্ছি না?’

-‘তাহলে যাচ্ছিস না কেনো সেটা বল।’

-‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই যাচ্ছি না আবার ইচ্ছে হলে যাবো।’

-‘হু বুঝেছি এমপি সাহেবের মন বলে কথা। ভেবেছিলাম হয়তো বিয়ের পর মানুষ হবি। কিন্তু রুয়াত দেখি তোকে এক রাতেও মানুষ করতে পারলো না। কেমন লেগেছে কাল?’

আয়াজ সরে আসে আরহামের থেকে।
-‘তুমি আজ থেকে আমার দূরে দূরে থাকবে। আয়াজের ত্রিসীমানায় ও যেনো আরহাম কে না দেখি। বলে দিলাম।’

চলে যায় আয়াজ সেখান থেকে। আরহাম চেচিয়ে উঠে।
-‘আরে আমি তো শুধু ট্রিটের কথা বলছিলাম না মানে ট্রিট তো দেসনি তাই সেটার কথাই মিন করেছি। তুই তো না শুনেই চলে গেলি।’

ফিরেও চায় না আয়াজ। আরহাম বুঝতে পারলো না কিভাবে আয়াজ বুঝে গিয়েছে। বুদ্ধি আছে ছোট ভাইয়ের। শুধু তার মাথা’ই ফাঁকা ভিতরে কিছুই নেই। তাই আওয়াজ হয় বেশি। আরহাম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াজ কে স্যালুট দিতে মন চায় মাঝেমধ্যে।

জাফরি অসুস্থ থাকায় ইনিমা আসেনি আর রুয়াতের সাথে৷ জ্বরে মেয়েটা কে কাবু করে ফেলেছে। এজন্য ইনিমা আর আসেনি। মায়া চৌধুরী বলেছেন যাওয়ার জন্য কিন্তু ইনিমা আসতে রাজি হয়নি। রুয়াতের ভীষণ খারাপ লাগছে আয়াজের জন্য। এমন কষ্ট যেনো আর কখনো হয়নি তার৷ তাও বাসায় এসে দিব্যি হাসিখুশি রয়েছে। সবার সাথে কথা বলছে, হাসছে। এসব কষ্ট গোপন থাকুক শুধু। রুয়াত ফ্রেশ হয়ে তার নানুর কাছে যায়। হিসেবে রুয়াতের নানুর বয়স কম কিন্তু তিনিই অসুস্থ আর রুয়াতের নানা আমজাদ আলী নিজেকে স্ট্রং ম্যান বলে দাবি করছে। আমজাদ আলী তার স্ত্রী’র থেকে খুব ভালো আছে। অনেক্ক্ষণ রুয়াত তার নানার আর নানুর খুনশুটি দেখলো। মেহরুবা রাতের খাবার খাইয়ে দেয় রুয়াত কে। নিচে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। হান্নান মজুমদার আর রুয়াতের দু’ই মামীর সাথে লুডু খেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। রুয়াত কিছু সময় ও ওখানে বসে ছিলো। তারপর উপরে চলে আসে।

রুমে একা একা শুয়ে আছে রুয়াত। কয়েকবার আয়াজ কে কল দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু আয়াজ প্রত্যেকবার কল কেটে দিয়েছে। এখন মোবাইল বন্ধ বলছে। তাও রুয়াত কল দিয়েই যাচ্ছে। এক সময় রুয়াত কল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ঘুমিয়েও গিয়েছে সে। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।

আয়াজ রুয়াতের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপবতী তরুণী তার প্রেয়সী। আয়াজ নিঃশব্দে হাসে। এখন থেকে কোনো মতেই তার জানটা কে ছাড়া থাকতে পারবে না। আয়াজ একটু ঝুঁকে আসে। মুখের উপর কারো গরম নিঃশ্বাস পড়তেই ভড়কে যায় রুয়াত। চোখ খুলে দেখে আয়াজ তার দু’পাশে হাত রেখে ঝুঁকে বসে আছে। রুয়াতের চোখ গুলো বড় বড় হয়ে আসে। সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি? তড়িঘড়ি করে উঠে বসে। তৎক্ষনাত আবার আয়াজ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অস্থির কন্ঠে বলে-

-‘আপনি সত্যিই এসেছেন? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না কেনো?’

রুয়াতের পিঠে হাত রাখে আয়াজ।
-‘জড়িয়ে ধরে আছো অথচ বিশ্বাস করতে পারছো না?’

আয়াজের বক্ষ থেকে মুখটা সরিয়ে আনে। কিন্তু আগের মতোই হাত দু’টো দ্বারা জড়িয়ে ধরে আয়াজ কে। এক হাত আয়াজের গালের রাখে।

-‘রাগ করেছেন আমার উপর?’

আয়াজ হাসে।
-‘প্রশ্ন’ই উঠে না রাগ করার। মজা করেছিলাম তুমি বুঝতে পারোনি। ভেবেছো আমি রাগ করেছি?’

রুয়াত আস্তে করে থাপ্পড় দেয় আয়াজের বক্ষে।
-‘আমি কষ্ট পেয়েছি অনেক।’

ভ্রু কুচকায় আয়াজ।
-‘কালকের থেকেও বেশি?’

রুয়াত চোখ বড় হয়ে গিয়েছে। দিন দিন মানুষটা বেশ নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।
-‘উফ রাখুন তো এসব কথা। তখন আসেননি কেনো?’

-‘মন চেয়েছে আসিনি। কিন্তু তোমার বাবা জানতো আমি আসবো।’

আয়াজ রুয়াত কে ঘুরিয়ে টেনে নেয় তার কাছে। রুয়াতের পিঠ ঠেকে আয়াজের বক্ষ বরাবর। আয়াজের হাত রুয়াতের জঠরে। রুয়াতের ঘাড়ে আয়াজ তার অধরের স্পর্শ দিতে ব্যস্ত। কাঁপা হাতে স্পর্শ করে আয়াজের হাত।

-‘খা খাবেন চলুন।’

রুয়াত আস্ত একটা নেশা। মাতাল স্বরে বলে-
-‘খাবো না। এখন শুধু ভালোবাসা হবে জান। শুধুই ভালোবাসা।’

ঢোক গিলে রুয়াত। আবারও আয়াজের সেই রূপ!

#চলবে….