কাব্য কথা পর্ব-০৮

0
443

#গল্প_কাব্য_কথা
#পর্ব_৮
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি

বর্তমান……………….,

আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। আমার চোখের পানি আজকে আমার কথা শুনছে না নিজের মতো করে বেয়েই যাচ্ছে। শেষ বারের মতো একটা বার আমি আমার ভালোবাসার মানুষটা কে দেখতে পেলাম না একটু জড়িয়ে ধরতে পারিনি শেষ বিদায় নিতে পারিনি। বুক ফেটে কান্না আসছে এসব ভাবতে ভাবতে চোঁখ গেলো বেলকনির দিকে একটা ছায়া দেখা যাচ্ছে হয়তো যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সে দাড়িয়ে আছে। গুটি গুটি পায়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম লোকটা আমার দিকে পিঠ দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার মুখটা দেখতে পারছিনা। আমি বেশি কিছু না ভেবেই তাকে বললাম,,,,,,,,,,,,,,

আপনার কাছে একটা আবদার করবো প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আমি একজন কে ভালোবাসি কিন্তু তাকে কখনও বলা হয়নি আর হয়তো হবেও না কিন্তু শুধু একটা বার তাকে দুর থেকে দেখতে চাই প্লিজ আমাকে আপনি তার কাছে নিয়ে যাবেন? এখন নিতে হবে না কালকে সকালে নিয়ে গেলেও হবে আর আপনি চিন্তা করবে না আমি পালিয়ে যাবো না। কথা গুলো অনেক কষ্টে বলে শেষ করলাম কিন্তু আমার সামনে থাকা মানুষটি কোনো কথা বললো না তার থেকে কোনো সারা না পেয়ে কষ্টটা আরো বেড়ে গেলো আর কান্নার গতিও বেড়ে গেলো শব্দ করে কান্না করছি আমার সামনে থাকা লোকটা এবার আমর দিকে ঘুরে দাড়ালো কিন্তু অন্ধকারে তার চেহরাটা তেমন বুঝা যাচ্ছে না সে আমার কাছে আসে আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো, তার হাতের ছোঁয়া আমার খুব চেনা আর তার বডি স্মেল এটাও আমার চেনা, তাহলে কি এটা কাব্য ভাইয়া? আমার ভাবনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,,,,,,

কালকে কেনো? আর দুর থেকে কেনো? এখনি দেখো আর খুব কাছে থেকে দেখো।

তার কন্ঠটা শুনে আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না তাই আমিও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম,,,,,,, আপনি কই ছিলেন আপনাকে কতো ফোন দিছি জানেন আপনার ফোন বন্ধ কেনো ছিলো? এখন দেখেন আবারও আপনি আমাকে হারিয়ে ফেলছেন সত্যি আমি আপনার ভাগ্যে নেই আর সেই জন্যে হয়তো আমার মনের কথা গুলো বলার আগেই আমি অন্য কারও হয়ে গেছি।

কে বলছে তুমি অন্য কারো? তুমি শুধু এই আনান আবরার কাব্যর।

ওনার কথা শুনে তাকে ছেড়ে দিলাম আর হাত ধরে টেনে রুমের ভেতর নিয়ে আসলাম,,,,,, এখন আর এইসব বলে লাভ নেই। আর আপনি এখানে কীভাবে আসলেন কেউ দেখে নাই? কেউ দেখলে খারাপ ভাববে চলে যান আপনি।( হেছকি তুলতে তুলতে)

আমার বাড়ি আমার ঘর আর সবথেকে বড় কথা তুমি আমার বউ আর তোমার সাথে আমাকে দেখলে কেউ কেনো খারাপ ভাবে?

আমি আপনার বউ না। আমি অন্য কারো বউ আর এটা আপনার বাড়ি না আর না এটা আপনার ঘর।

তুমি আমার বউ না তো কার বউ? নাম কি তোমার বরের?

নাম জানি না ( নিচের দিকে তাকিয়ে)

মানে, কাজী যখন তোমার সামনে আমার নাম বলছে তুমি শোনো নাই?

না। আমি তখন কিছু শুনি নাই আমার মনে, মস্তিষ্কে শুধু আপনি ঘুর পাক খাচ্ছিলেন। একবার তো মন চাইছে বিয়ের আসর থেকে দৌড়ে পালিয়ে আপনার কাছে চলে আসি আর আপনার বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকি।( কান্না কান্না কণ্ঠে)

আমার কাছে কেনো আসতে চাইছো তুমি? তোমার না বয়ফ্রেন্ড আছে তার কাছে যাওনি কেনো? ( মুখ টিপে হেসে)

আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই।

তাহলে আমাকে কেনো বলছিলা?

ঐটাতো আপনাকে রাগানোর জন্য বলছি।

কেনো?

ওফফ এতো কেনো কেনো করেন কেন?

আরে আজব তো তুমি বিয়ের দিন তোমার বয়ফ্রেন্ন্ডের চিন্তা না করে আমার চিন্তা করছো আবার আমাকে ফোনও দিছো আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কিছু বলছো। কেনো করছো আমার জানতে হবে তো।

ভালোবাসি তাই।( নিচের দিকে তাকিয়ে)

তুমি আমাকে ভালোবাসো? কিন্তু কবে থেকে?( অবাক হয়ে)

আগে শুধু ভালো লাগতো কিন্তু আপনার ডায়েরি পরে বুঝতে পারি আমি আপনাকে ভালোবাসি আর এটাও নিশ্চিত হই যে ঐ অন্ধকার রুমের মানুষটা আপনিই ছিলেন।

তুমি কি ভাববে বুঝলে ওইটা আমি ছিলাম?

আপনার নিশ্বাস, আপনার হার্টবিটের শব্দ, আপনার স্পর্শ আর আপনার বডি স্মেল এই গুলো আমি মনে রাখতাম আমি যখনই আপনার কাছে যেতাম এই জিনিস গুলো অনুভব করতাম তাই আপনাকে চিনতে আমার কষ্ট হয়নি। এখন আর এইগুলো বলে লাভ নেই। আপনাকে দেখার ইচ্ছে ছিলো এখন সেটাও পুরন হইছে কেউ দেখে ফেলার আগে আপনি চলে যান।

কেউ কিচ্ছু বলবে না আমি সবার সামনে দিয়েই তোমাকে এই ঘরে নিয়ে আসছি। এখন তুমি আমার সাথে আসো তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি,,,,,,,,,,,,

মানে কোথায় যাবো আর কি বুঝায় বলবেন?

আরে আসো তো আগে।

আমার হাত ধরে খাটের ওপর বসিয়ে দিলেন আর নিজেও বসে পরলেন আর বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,,,

তুমি যেদিন আমাকে তোমার ভাইয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে সেইদিন আমি আবারও অবাক হই এটা জেনে যে তুমি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ইনানের বোন।

আমি তার কথায় আবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মানে আপনি আমার ভাইয়ার বন্ধু আনান।

হুম। ওইদিন,,,,,,,,,,,,,,!

মিনি সাউন্ড বক্স মানে? কথাই কি তোর প্রিয়সী?

হুম, কিন্তু আমি জানতাম না যে ও তোর বোন। দোস্ত এখন কি তুই আমার ভালোবাসার ভিলেন হিসেবে আসবি?

আরে শালা কি বলিস তুই। আমি অনেক খুশি যে আমার বোন তোর মতো একটা মানুষ পাইছে।

দোস্ত এখন আমি সত্যিই তোর শালা হবো।

মানে বুঝলাম না?

তুই ইতিকে চিনিস?

হুম কথার বান্ধুবী। অনেক ভালো মেয়েটা আর সুন্দরীও।

ও আমার বোন আর ও তোকে ভালোবাসে। আজকে ওকে দেখতে আসছিল। ইতি কথাকে জানায় ও তোকে ভালোবাসে তাই কথা ওর বিয়ে ভেঙ্গে দেয় আর ইতিকে ওয়াদা করে যে ওর বিয়ে তোর সাথেই হবে তাই ও আমাকে তোর সাথে কথা বলতে নিয়ে আসছে। দোস্ত আমার বোনটা তোকে সত্যিই অনেক ভালোবাসে আমি তোকে বলছি না যে তুই ওকে বিয়ে কর শুধু এটুকু বলবো প্লিজ বিষয়টা একটু ভাবিস।

হুম বুঝলাম। আয় একসাথে বিয়ে করি।

মানে? (অবাক হয়ে)

মানে আমি তোর বোনকে আর তুই আমার বোনকে। কালকে আমি তোর বোনকে বিয়ে করবো আর পরশু তুই আমার বোনকে আর তার পরের দিন বৌভাতের অনুষ্ঠান এক খরচে দুই বিয়ে কি বলিস।( চোখ টিপে)

শালা কী বুদ্ধি তোর মাথায়, কিন্তু তোর বোন মিনি সাউন্ড বক্স রাজি হবে আমাকে বিয়ে করতে। আর আজকে ও বললো ওর নাকি বয়ফ্রেন্ড আছে।

আরে মিথ্যা কথা ও তোকে ভালোবাসে কিনা সেটা জানি না কিন্তু তোকে ওর খুব ভালো লাগে। ওইদিন আমি ওর ঘরে একটা কাজে গেছিলাম পারে দেখি ওর ডাইরিতে ওর ভার্সিটির স্যার কাব্যকে নিয়ে কিছু লিখা আমি ভাবলাম হয়তো অন্য কেউ কিন্তু এখন তোর কথা শুনে বুঝতে পারলাম এটা তুই তাই পেরা নিস না। এখন চল আব্বা আম্মার সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলি।

দোস্ত আমার একটা বুদ্ধি আসছে?

কী বুদ্ধি শুনি?

শোন, আমি ইতিকে জানাবো না যে কালকে তোর সাথে ওর বিয়ে শুধু খালামনি আর ছোটো বাবাকে বলবো আর তুইও ইতিকে বলবি না যে আমার সাথে কথার বিয়ে আর কথাকেও না। আমি দেখতে চাই কথা সত্যিই আমাকে ভালোবাসে কিনা।

আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।

বুঝছো এইবার কেমনে কি হইলো?

ওনার কথা শুনে রাগে তাকে মারতে শুরু করলাম আর বলতে লাগলাম,,,,, কেনো এমন করলেন আমার সাথে জানেন কতটা কষ্টও পাইছি আমি আপনার জন্যে। বার বার শুধু একটা কথাই মনে পরছিলো যে আমাকে হারিয়ে আপনি কি নিয়ে বাঁচবেন। মন চাইছিলো মরে যাই। আমার মুখে মরে যাওয়ার কথা শুনে কাব্য ভাইয়া আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মনে হচ্ছিলো আমার সব কয়টা হাড্ডি ভেঙ্গে যাচ্ছে।

জান এমন কথা আর কখনই মুখে আনবে না তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো।

আমি বুঝতে পারছি কাব্য ভাইয়া অনেক ভয় পেয়ে গেছে তাই তাঁকে শান্ত করতে তাকে বললাম,,,,,,,,,, ভালোবাসি আপনাকে আমি কোথাও যাব না একটু শান্ত হোন প্লিজ।

আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালে আলতো করে তার ঠোঁট ছোঁয়ালো। আর বললো,,,,,,, কখনও আমাকে ছেড়ে যেওনা। এখন চলো ফ্রেশ হয়ে এসো নামাজ পড়তে হবে।
আমিও তার কথা মতো ফ্রেশ হয়ে আসলাম তারপর দুজনেই নামাজ আদায় করলাম। তারপর হঠাৎ করেই মনে পরলো এটা তো কাব্য ভাইয়ার রুম না তাহলে এটা কোন জায়গা? তাই কাব্য ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,, এটা কার বাড়ি?

এটা আমাদের পুরোনো বাড়ি, আমার দাদীর ইচ্ছে ছিলো আমার বউ যেনো আগে এই বাড়িতে আসে। তাই আমরা এখানে।

ওহহ আচ্ছা।

জান শোনো না ( পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে)

তার এমন করে জড়িয়ে ধরায় আমার কাপাকাপি শুরু। আর ঘাবড়ে গিয়ে বলে ফেলাম,,,,, কাব্য ভাইয়া কি করছেন ছাড়েন, আমার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে সে আমকে তার মুখোমুখি দাড় করালো আর বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,, আবার ভাইয়া ডাকছো আচ্ছা ভালো হইছে এখন শাস্তি ভোগ করো কথাটা বলেই আমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো,, আমি কিছুই বুঝতে না পেরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি একটু পরে সে আমাকে ছেড়ে দিলো আর কোলে তুলে নিলো আর বিছানায় শুইয়ে দিল তারপর লাইট অফ।

( এরপর আপনাদের লেখিকা আর কিছু দেখে নাই দেখবো কেমনে ঘরেতো অন্ধকার ছিলো)।

আযানের ধ্বনি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো আমার। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি কাব্য আমায় জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আমি তাকে আস্তে আস্তে ডাক দিলাম,,,,,,,, এই শুনছেন? উঠেন।

জান ঘুমাইতে দাও।

না উঠেন নামাজ পড়তে হবে।

এখন তো উঠতেই হবে।

তারপর আমরা ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম কাব্য ভাইয়া আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে আর বলছে,,,,,,

তোমাকে অনেক ভালবাসি প্লিজ কখনও আমাকে ছেড়ে যেও না আমি ভুল করলে আমাকে শাসন করো কিন্তু ছেড়ে যেও না।

আমি তার দিকে ঘুরে তার বুকে মাথা রাখলাম আর বললাম,,,,,,,, ছেড়ে যাওয়ার জন্য কি আপনাকে জড়িয়ে ধরছি।
আমার কথা শুনে সে একটু হেসে আমার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলো। সময়টা ভালই কাটছে একটু পরে নিচে গেলাম দাদী সবার সাথে আমারকে পরিচয় করিয়ে দিল সেখানে খালামনি আর ছোটো বাবা দুজনেই ছিলো। দেখে মনে হলো কাব্যর হটাৎ বিয়ে করায় সবাই একটু অবাক কিন্তু দুজন মানুষ খুব বিরক্ত এক হলো কাব্যর বড় চাচী আর একজন হলো তার মেয়ে। সকালের নাস্তা শেষ করে কাব্য রুমে গেল আর যাওয়ার আগে আমাকে তাড়াতাড়ি ওপরে যেতে বললো, আমিও তার কথা মতো উপরে গেলাম কিন্তু দরজা খুলে যা দেখি তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,?

#চলবে…………