বিনিদ্র রজনী পর্ব-০৪

0
352

#বিনিদ্র_রজনী
#পর্ব_৪
#মুমতাহিনা_তারিন

অফিসে বসে আছে আদনান কিন্তু কাজে মন দিতে পারছে না । নিজের ভিতর অস্থিরতা কাজ করছে । অফিসের কলিগ সুমন ওর পাশের ডিস্ক থেকে চেয়ার টেনে বসলো । সুমন ওদের বাড়ির পাশের বিল্ডিং এ থাকে।

” ভাই মন খারাপ কইরেন না । মেয়েটারে দেখে আমারও মনে হয়নি ওমন । বাদ দেন এমনি ও গ্রামের মেয়ে ওর থেকে কত ভালো মেয়ে পাবেন ।”

আদনান কোনো কথার উত্তর দিলো না । ওর ভিতরে ভূমিকম্প হচ্ছে সব কিছু কেমন এক মুহুর্তে উল্টে পাল্টে গেলো । রাগের মাথায় সেইদিন অরোরা কে তুলির বিষয়ে সব বলেছিল আদনান । অরোরা কে সাহায্য করতে বলেছিল যাতে ওর জীবন থেকে তুলিকে সরিয়ে দেয় কিন্তু এই ভাবে তো করতে বলেনি । আর সেই ঘটনা আরো এক বছর আগের! আদনানের কাছে থেকে কোনো ধরনের উত্তর না পেয়ে সুমন উঠে নিজের কাজে চলে গেলো ।

আকাশে মেঘ জমেছে বৃষ্টি আসবে মনে হয় । আচ্ছা তুলির কি বৃষ্টি ভালো লাগতো? দুটো বছর এক সাথে থেকেও আদনান জানে না । নিশ্চয় তুলি জানে ওর কি কি পছন্দ না জানলে আদনানের কিছু বলার আগেই কিভাবে সব সামলে নিতো। কিছুই ভালো লাগছে না আদনানের বার বার ঘড়ি দেখছে কখন যে সময়টা কেটে যাবে আর কখন যে একটু বাড়ি যেতে পারবে!
_____________

লিতুন বেগম তুলির ভাবির কাছে সব কিছু বলে দিয়েছে । কিন্তু তুলির ভাবি রিনা কাউকে কিছু জানায়নি । যতোই খারাপ হোক ও চাইবে না তুলির খারাপ কিছু হোক । নিজের স্বামীর যা আয় তাতে ওদের সংসার খুব কষ্ট করে চালাতে হয় । রিনা কোনো রাগারাগি চায় না তুলিকে নিজের রাস্তা নিজেকে মাপতে বলে দেবে । মানুষকে দিয়ে তুলিকে অপমানিত করে কিছুই পাবে না রিনা ।

” তুলি দেখো তোমার ভাইয়ের আয় সম্পর্কে তুমি তো জানোই। আর জামাই বাড়ি কি করছো সে সম্পর্কে তোমার শাশুড়ি সব বলেছে আমাকে । আমি তো আর দুশ্চরিত্রা মেয়েদের বাড়ি রাখতে পারবো না । কিছুদিন পর আমার ও মেয়ে ছেলে হবে তুমি যদি এইখানে খুঁটি গেড়ে বসে থাকো তাহলে তোমার কাছ থেকে তারা কি শিখবে ?তাই তোমার ভাই বাড়ি আশার আগেই তুমি তোমার রাস্তা ধর”

তুলি অপমানে মুখ ছোটো হয়ে এসেছে । চোখ দিয়ে আর পানি পড়ছে না তার । কাবিনের তিন লাখ টাকা আছে কাছে কিন্তু কয়দিন বা চলবে এই টাকা দিয়ে । কিছু তো করতে হবে কিন্তু কি করবে তুলি! আজকে না হয় হাঁটাচলা করতে পারছে কিন্তু কয়মাস পরেই তো আর কিছু করার অবস্থায় থাকবে না ।

” ভাবি দুটো দিন সময় দেন । আমি এমনি ও বোঝা হয়ে এখানে পড়ে থাকতাম না । আমি গেলেই তো এখন আর বাড়ি খুজে পাবো না । ”

কথা বলতে বলতে তুলি কেঁদে দিলো । রিনার সাথে বিয়ে হওয়ার আগেই তুলির বিয়ে হয়েছিল । এই দুটো বছরের মধ্যে মাত্র দুইবার এ বাড়ি আসতে পেরেছে তুলি তাই রিনার সাথে সম্পর্ক তেমন ভেবে তৈরি হয়নি । কিন্তু তুলি যত বড় এইখানে এসেছে রিনার সাথে সর্বোচ্চ ভালো ব্যবহার করেছে। তাই রিনার মনটাও নরম হলো ।

____________________

অফিস থেকে বের হতে না হতেই অঝোরে বৃষ্ঠি শুরু হলো। হঠাৎ বৃষ্টির জন্য রাস্তায় যারা ছিল সবাই দৌঁড়ে এদিক সেদিক গিয়ে একটু আশ্রয় খুঁজতে থাকলো । বৃষ্টির পানিতে গাছে জমে থাকা ধুলাবালি ধুয়ে যাচ্ছে। রোহান পাশে এসে কখন যে দাড়িয়েছে খেয়াল করেনি আদনান ।

” বাড়ি যাবি না? চল”

” ছাতি নেই তো”

” ভাবি আমার কাছে তোর জন্য ছাতি দিয়ে রেখেছিল। তুই তো কোনোদিন ছাতি আনিস না। কিন্তু একটা আশ্চর্য বিষয় কি জানিস আজকে ভাবি কল দেইনি । ভাবি কি অসুস্থ? ”

শিউলি রোহানকে তুলির কথা কিছুই বলেনি । আদনান রোহানের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো ।

” তুলি আর তোকে কল দেবে না। বায় দ্যা ওয়ে তুলি তোকে কেনো কল দিত? ”

” কেন!!! ”

” শিউলির কাছ থেকে শুনে নিস। আচ্ছা বল তুলি কেনো তোকে কল দিত?”

“আমার বলতে মানা আছে তাও বলি আমাকে প্রতিদিন তোর সাথে যাওয়ার জন্য কল দেয় । এই যে রোদ বৃষ্টিতে তুই ছাতা আনিস না আমার কাছে পাঠিয়ে দেয় ইত্যাদি । তুই কিন্তু লাকি কত ভালো লক্ষ্মী বউ তোর । এখন এমন ভালোবাসার মানুষ তো খুঁজেও পাওয়া যায় না । আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় তোরা কি প্রেম করে বিয়ে করেছিলি!”

” না তেমন কিছু না । চল যাই ভালো লাগছে না ”

সারা রাস্তা রোহান বক বক করলো কিন্তু আদনান অন্য চিন্তায় মগ্ন । রোহান যে কখন কি বলছে তার কোনোকিছুই আদনান বলতে পারবে না ।

বাড়ির কলিংবেল বাজাচ্ছে আদনান প্রায় পাঁচ মিনিট যাবত দাড়িয়ে আছে সে । কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না রাগ হচ্ছে না আদনানের ,,,আগে একবার বাজানোর সাথে সাথে দরজা খুলে হাসিমুখে তুলি দাড়িয়ে যেতে ।

রাহেলা এসে দরজা খুলে দিল । ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো আদনান ডাইনিং টেবিলে আজকে আর সরবত নেই । মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলো। হয়তো আর তুলির সেই হাসি মাখা মুখটা দেখা হবে না ।

টি টেবিলে এক গ্লাস পানি রাখলো রাহেলা খালা । পানিটা খেয়ে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল । ড্রেসিং টেবিলের সামনে পড়ে আছে ছোট্ট চিরকুট। যাওয়ার আগে তুলি আদনানের ঘরের সামনে একটা চিরকুট রেখে গিয়েছিল । কোথায় কি আছে সব লিখে রেখে গেছে যাতে আদনানের খুঁজতে সমস্যা না হয় ।

চলবে,,,,,