নীলাবতী পর্ব-০৭

0
195

#নীলাবতী
[পর্ব – ৭]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

নিলয় নীলার কাছে এসে ক্ষমা চাইতে থাকে। কিন্তু নীলার মনে নিলয়ের জন্য মায়া হচ্ছেনা। যতবার রাতের কথা মনে পড়ে তখনই নীলার রাগ আরো বাড়তে থাকে।

নিলয় নীলাকে বলল — বলো আমাকে কি করতে হবে? তুমি যেটা বলবে আমি সেটাই করব।

— তোমাকে মরতে হবে।

নীলার কথা শুনে নিলয় হতবাক হয়ে গেলো।

— নীলা কি বলছ তুমি?

— হুম আমি ঠিক বলছি। তোদের মতো নিচু মনের মানুষদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।

এই কথা বলে নীলা একটা চাকু বের করে নিলয়ের দিকে এগিয়ে চলে আসে।

— নীলা কি করছ তুমি? চাকু সরিয়ে নাও। পাগল হয়ে গেলে নাকি? নীলা আমি তোমার হাসবেন্ড।

নীলা একটা হাসি দিয়ে বলল — তুই আমার হাসবেন্ড এটা ভাবতেও নিজের প্রতি খারাপ লাগছে। তোর মতো স্বামীদের ছেড়ে দেওয়া যায়না। তোর মৃত্যু আমার হাতেই হবে। একটা কথা জেনে রাখ। আমি আজ থেকে সেই নারীর পাশে থাকব যারা তোদের মতো মানুষের কাছে প্রতারিত হয়। আমি তাদের শেষ করে দেব।

এই কথা বলে নীলা নিলয়ের পেটে চাকুটা চালিয়ে দেয়। নিলয় সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। নিলয় দুই হাত জোর করে নীলার কাছে তার জীবন ভিক্ষা চাইতে থাকে।

— তোর না প্রমোশন দরকার ছিল? দিয়ে দিলাম যাহ। উপরে যাওয়ার প্রমোশন।

এই কথা বলে নীলা নিলয়ের গলায় চাকু দিয়ে একটা টান মারে। নিলয় গলা কাটা মুরগির মতো চটপট করতে করতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। এবার নীলা নিলয়ের লাশ ফ্রিজের ভিতরে রেখে বাহিরে চলে আসে। আর একটা চিঠি লিখে সেটা নিলয়ের পকেটে রেখে দেয়।

এবার বর্তমানে ফিরে আশি। তার পর কি হয়েছে সেটা তো আপনারা সবাই জানেন।

নীলার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আর পলিশ ইন্সপেক্টর নিহান নীলার কাছে এসে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — নীলা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অন্যায়। তুমি পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইতে পারতে। তারা তোমার সাথে এমন অন্যায়ের বিচার করত।

— আপনি কি ভাবছেন আমি পুলিশের কাছে যায়নি? আমি থানায় গিয়ে ডায়েরি লিখতে বলেছি। কিন্তু আপনার পুলিশ যখন ওই লোকের নাম শুনল, তখন তারা আমাকে থানা থেকে বের করে দিয়েছে। স্যার আইন আসলে আমাদের মতো অসহায় মানুষদের জন্য না। আর আপনাদের পুলিশদের উপর থেকেও আমার বিশ্বাস উঠে গিয়েছে। তাই আমি নিজেই সেই লোকদের শেষ করে দেওয়ার অভিযান চালাচ্ছি।

— নীলা তুমি অলরেডি তিনটা মানুষকে হত্যা করে ফেলছ। তুমি কি জানো তোমার ফাঁসি হয়ে যেতে পারে।

— আমি এখন আর নিজেকে নিয়ে ভাবিনা স্যার। আমার যা খুশি হয়ে যাক আমার কোনো সমস্যা নেই।

— নীলা তুমি আমি চাই তুমি নিজে থেকে ধরা দাও। আমি কথা দিচ্ছি তোমার সাজা কম হবে।

— স্যার আমার আর একটা কাজ বাকি আছে। আমি ওটা শেষ করে ধরা দেব।

— কি কাজ? কাওকে আবার মাডার করবে নাকি?

— হুম। একজন আছে আমি ওঁকেও শেষ করব। তারপর আমার কাজ শেষ।

— এটা ঠিক না। আমি তোমার হয়ে লড়াই করব। আমি তোমার ক্যাচ নেব। তুমি আর কাওকে মারবেনা।

— নাহ স্যার। আমি যতদিন না ওই জা*নো*য়া*রকে নিজ হাতে শেষ করছি ততদিন আমার শান্তি নেই।

— নীলা আমার কথা শোনো। তুমি এসব ছেড়ে দাও।

— মাপ করবেন। আমি আপনার কথা রাখতে পারিনি।

এই কথা বলে নীলা চলে গেলো। নিহান নীলার দিকে তাকিয়ে রইলো। পরের দিন সকালে নিহান থানায় যায়। (ওই লোকটার নাম হচ্ছে রবিন হাওলাদার) নিহান এই থানায় নতুন তাই সে কারোর সম্পর্কে কিছুই জানেনা। নিহান থানার দারোগাকে ডাক দিলেন।

— বলুন স্যার৷

— আচ্ছা রবিন হাওলাদার কে? ওনাকে চিনেন নাকি? আর ওনার নামে কি কেউ মামলা কর‍তে আসছিলো?

দারোগা কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে রইলো ।

— কি হলো কথা বলছেন না কেন?

— আসলে স্যার উনি হাওলাদার গ্রুপের মালিক। ওনার নামে কেউ তো মামলা করতে আসেনা। উনি তো অনেক ভালো মানুষ।

— নিহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — কয়েকদিন আগে একটা মেয়ে আসছিলো থানায় রবিন হাওলাদারের মানে মামলা করার জন্য কিন্তু আপনার তার মামলা নিলেন না। কেন এমন কিরলেন?

— কে এসেছে কিছুদিন আগে?

— কে এসেছে সেটা বলতে চাইছিনা। একটা মেয়ে এসেছে।

— মনে পড়ছে৷ কিন্তু মেয়েটার কাছে তো কোনো প্রমাণ ছিলনা।

— আপনাদের তদন্ত করা দরকার ছিলো।

— আসলে স্যার আপনি এখানে নতুন তাই কিছুই জানেন না। হাওলাদারের হাত অনেক বড়।

— আচ্ছা বুঝতে পারছি আর কিছু বলার দরকার নাই। আপনি এবার আসতে পারেন।

নিহান বুঝতে পারে রবিন হাওলাদার কেমন মানুষ।

এই দিকে নীলা রাসেলের সাথে কথা বলছে এমন সময় অচেনা নাম্বার থেকে একটা কল আসে।

— হ্যালো কে আপনি?

— নীলা আমি মারিয়া। তোর সাথে আমার জরুরী কিছু কথা আছে। তুই কোথায় আছিস?

— আমি কোথায় আছি সেটা জানার দরকার নাই। তুই নদীর পাড়ে আয় আমি ওখানে যাচ্ছি।

— ঠিক আছে।

এই কথা বলে মারিয়া ফোন কেটে দিলো। নীলা রাসেলকে বলল — রাসেল আজকে রাতেই আমি রবিন হাওলাদার কে চিরকালের জন্য বিদায় করে দেবো। আমি আর সময় নিতে চাচ্ছি না। তুমি সব ব্যবস্থা করে রাখো। কীভাবে হাওলাদার বাড়িতে যাওয়া যায় সেই দিকে নজর রাখবে। আমি মারিয়ার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

— ঠিক আছে আপু। আমি সব ব্যবস্থা করব। আর আম হাওলাদার বাড়িতে আমার লোক পাঠাচ্ছি।

এই দিকে নিহান পুরোনো অনেক গুলো ফাইল বের করে। হাওলাদার এর নামে কোনো মামলা আছে নাকি। নিহান একটা ফাইলের ভিতরে দেখে হাওলাদারে নামে অনেক গুলো মামলা আছে কিন্তু পুলিশ হাওলাদার এর কোনো কিছুই করতে পারেনি। নিহান সেই ফাইল নিয়ে একজন পুলিশ অফিসারের কাছে গেলো।

— মিহির সাহেব। এই ফাইল টা দেখলাম রবিন হাওলাদারের নামে অনেক গুলো মামলা আছে কিন্তু এই মামলার তো কোনো কাজ হয়নি উল্টো বন্ধ করা কেন হলো?

— আসলে স্যার, ওনাকে থানায় আনার সাথে সাথে আমাদের চাকরি হারাবে। সেই জন্য।

— আমি এই ক্যাচ টা আবার শুরু করব।

— স্যার এসব তো অফ হয়ে গেছে। এটা নিয়ে আর নাড়াচাড়া না করাই ভালো। হাওলাদার লোকটা মোটেও ভালো মানুষ না। আপনার ক্ষতি করে দিতে পারে।

— দেখা যাবে।

নিহান এই কথা বলে নিজের কেবিনে চলে আসে। আর সে তার সিনিয়র অফিসারকে কল দিয়ে বলে সে হাওলাদারের বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্যাচ টা শুরু করতে চায়। কিন্তু অফিসার উল্টো রাগ দেখিয়ে বলল — তোমাকে যে কাজের জন্য পাঠানো হয়েছে তার তো এখনও কিছু করতে পারলেনা। আগে তুমি তোমার এই ক্যাচ সমাধান করো তারপর নতুন ক্যাচ।

— স্যার এই ক্যাচ নিয়েও আমাদের কাজ করা দরকার। অনেক গুলো মামলা দেখলাম। কিন্তু পুলিশ তাকে কিছুই বললনা।

— নিহান আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা। তুমি আগে ওই মেয়েকে গ্রেফতার করো। বাকিটা পরে দেখা যাবে৷

এই কথা বলে ফোন কেটে দিলো। নিহান রাগ দেখিয়ে ফাইল টা ফ্লোরের উপরে ছুড়ে ফেলে দিল।

অন্য দিকে নীলা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখে মারিয়া তার জন্য অপেক্ষা করে আছে আগে থেকেই।

— মারিয়া কি বলবি বল।

— সরি নীলা। আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। আমি তোর সাথে কাজটা ঠিক করিনি।

— সরি বলতে হবেনা। তুই তোর ভুল বুঝতে পারছিস সেটাই অনেক।

— নীলা আমি আসলে কিছুই জানতাম না। কিন্তু নিহান আমাকে সব বলার পরে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। তুই আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দে বোন।

— তোর উপরে আমার কোনো রাগ বা অভিযোগ নেই। তুই আমার বোন। আমি তোকে ভালোবাসি। কিন্তু একটা কথা নিহান তোকে এসব বলল কেন?

— নিহান তোর ব্যপারে সব জানার জন্য আমার সাথে দেখা করে। তখন আমার থেকে নাম্বার নিয়ে যায়। তারপর ফোন দিয়ে আমাকে সব বলে। আমি নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত দোস্ত।

নীলা মারিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আর মারিয়া কান্না করতে শুরু করে।

— কান্নার কিছু নেই। আজকে রাতে আমি হাওলাদারকে শেষ করব৷ এই কথা আবার কাওকে বলিস না নিহান কেও না।

— ঠিক আছে, আমিও যাবো তোর সাথে।

— নাহ, আমি একাই যাবো। আমি চাইনা আমার জন্য তোর কোনো সমস্যা হোক। আসি দোস্ত। আর হে হাওলাদার কে শেষ করে আমি ধরা দিয়ে দেবো। তারপর আমার যা ইচ্ছে হবে। আমার আর কোনো দুঃখ থাকবেনা। চলি দোস্ত।

এই কথা বলে নীলা চলে গেলো।

চলবে??