ফাগুন ছোঁয়া পর্ব-১৪

0
202

#ফাগুন_ছোঁয়া
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_সারা মেহেক

ফাইনাল প্রফ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর আদ্রিশ ও মিমের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। আদ্রিশের মা চাইছিলো যতদ্রুত সম্ভব মিমকে বাড়িতে তুলে নিতে। এ কারণেই কাল বিলম্ব না করে দ্রুতই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার, আদ্রিশ ও মিমের গায়ে হলুদ। দুজনের গায়ে হলদু দু বাড়িতে ঘরোয়াভাবে আয়োজন করা হয়েছে। মিমের গায়ে হলুদের স্টেজ করা হয়েছে তাদের বাসার ছাদে। হলুদে শুধুমাত্র তার বান্ধবীরা এবং দাদুবাড়ি ও নানুবাড়ির সবাই এসেছে। এ বাদে বাইরের কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।

দুপুর একটার পরে মিমকে কাঁচা হলুদ রঙের একটি শাড়ি পরিয়ে হলুদ বাঁটা ছোঁয়ানো হলো। এরপর বাড়ির সকল মহিলারা মিলে হলুদের গোসল করিয়ে সন্ধ্যার হলুদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বসলো। মিম দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিতে বসলো। এর মধ্যে আদ্রিশের কল এলো। কল রিসিভ করতেই ওপাশ হতে আদ্রিশ জিজ্ঞেস করলো,
” আজকে হলুদের জন্য কি পরবে?”

হঠাৎ এহেন প্রশ্নে কিঞ্চিৎ হকচকিয়ে গেলো মিম। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
” কি আর পরবো, শাড়ি পরবো।”

” সেটা জানি। গহনা হিসেবে কি পরবে?”

” ফুলের গহনা পরবো?”

” আর্টিফিশিয়াল? ”

” হুম। কেনো?”

” আর্টিফিশিয়াল পরবে না। এক্ষুনি কাউকে ফুলের দোকানে পাঠিয়ে রিয়েল ফুলের মালা, দুল এসব বানিয়ে নাও।”

” এখন আদৌ সম্ভব নাকি! আরেকটু পরই রেডি হবো আমি। গহনা ওর্ডার করে বানাতেও তো কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় লাগবে। আগে বলবেন না আমাকে!”

” আমার তো জানা ছিলো না। ভেবেছিলাম ফুলের মালা, চুড়ি পরবে। কিন্তু আম্মার কাছে শুনলাম আর্টিফিশিয়াল পরবে।”

” আচ্ছা, আর্টিফিশিয়ালে সমস্যা কি? ওটাই পরি এখন। ফুলেরগুলো এখন আনা সম্ভব না।”

আদ্রিশ এবার বিনীত স্বরে বললো,
” প্লিজ মিশমিশ, তোমাকে ফুলের সাজে দেখার ভীষণ ইচ্ছে আমার। বিয়ে তো আর বারবার হবে না। আমার এ অনুরোধটা কি রাখবে না?”

মিম আদ্রিশের এহেন অনুরোধে নাকচ করতে পারলো না। বললো,
” আচ্ছা, আমি কাউকে বলছি। দেখি ব্যবস্থা করা যায় কি না। ব্যবস্থা না করতে পারলে তখন কিন্তু আর্টিফিশিয়ালটাই পরবো।”

” তখন পরো। সমস্যা নেই। কিন্তু এখন জলদি যাও। রাখছি। পরে কথা হবে।”

” আচ্ছা। ”
ফোন রেখে মিম তার এক চাচাতো ভাইকে জরুরি ভিত্তিতে ফুলের দোকানে পাঠালো। সবার মধ্যে এ নিয়ে জানাজানি হলে মিমকে নানাভাবে টিপ্পনী কাটে সবাই। এ নিয়ে সে লজ্জায় বাঁচে না। আজ যেনো মুখ লুকানোর একটা জায়গা খুঁজে পেলেই বাঁচে সে!
আধ ঘণ্টার মাঝে গাজরা ও লাল গোলাপের গায়ে হলুদের সেট নিয়ে আসা হলো। তা দিয়েই শেষমেশ তৈরী হলো মিম।

হলুদের অনুষ্ঠানের তখন একেবারে শেষ পর্যায়ে। মিম বাসায় চলে এসেছে। প্রায় সবাই বাসায়। এমন সময় হঠাৎ মিমের বোন আভা এসে তাকে চুপিচুপি ছাদে যেতে বললো। এই রাতে ছাদে যাওয়ার কথা শুনে মিম ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, ছাদে কি কাজ। তখন আভা তার কানে কানে আদ্রিশের কথা বললো। আদ্রিশের আসার কথা শুনে মিমের চোখ রীতিমতো কপালে। সে বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
” এখন উনি ছাদে!”

আভা সতর্ক কণ্ঠে বললো,
” আস্তে কথা বল আপু। ভাইয়া ছাদে এসেছে। তোর সাথে দেখা করেই চলে যাবে। দ্রুত চল। বাসার কেউ কিন্তু এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। ”

মিম ঈষৎ ভীত কণ্ঠে বললো,
” এখন আবার ছাদে গেলে কেউ সন্দেহ করবে না?”

” আরে সে ব্যবস্থা করা যাবে। আমরা কোনো ব্যবস্থা করে নিবো। এখন তুই দ্রুত চল।”

মিম আর কথা বাড়ালো না। দ্রুত উঠে আভার সাথে ছাদে চলে এলো। আভা স্টেজের বিপরীত দিকে আদ্রিশের পাশে মিমকে দাঁড় করিয়ে দ্রুত ছাদ থেকে চলে গেলো।

আদ্রিশ তখন ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রাতের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত ছিলো। কিন্তু পিছন হতে ঠিকই মিমের পদধ্বনি তার কর্ণকুহরে বাড়ি খেলো। সে পিছনে ফিরলো। মিমকে হলদে বরণ রূপে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে দাঁড়ালো সে। বোধহয় হৃদপিণ্ডের কয়েকটা বিটও মিস করলো সে। কি অপরূপ লাগছে তার মিশমিশকে! গায়ে হলুদে কমলা রঙের আটপৌরে শাড়ি, গলায়, কানে,কপালে,খোঁপায়,হাতে গাজরা ও লাল গোলাপের ফুলের গহনা, মুখে সাজ। সবদিয়ে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছে আদ্রিশের। সে বোধহয় মিমকে এ রূপে দেখার পর চোখের পলক ফেলতেও ভুলে বসেছে! তার এ নিষ্পলক চোখের চাহনি দেখে না চাইতেও লজ্জায় পড়ে গেলো মিম। সে এতক্ষণ আদ্রিশের পানেই চেয়ে ছিলো। কিন্তু এবার লজ্জায় দৃষ্টি হটিয়ে নিলো। তার লুকোচুরি দৃষ্টি দেখে আদ্রিশ তার দিকে বেশ খানিকটা এগিয়ে এলো। তাদের দুজনের মাঝে আপাতত দূরত্ব একেবারেই কম। মিম লজ্জায় দৃষ্টি তুলতে পারছে না। এদিকে আদ্রিশও তার দৃষ্টি মিমের উপর থেকে হটাতে পারছে না।

আদ্রিশ মুগ্ধ দৃষ্টিতে মিমের পানে চেয়ে আবেশী কণ্ঠে বললো,
” তোমার উপর থেকে আজ চোখ ফেরানো বড্ড দায় হয়ে পড়েছে মিশমিশ। তুমি বোধহয় বুঝতে পারছো না তোমাকে আজ কতটা আকর্ষণীয় লাগছে। ঠিক এই কারণে তোমাকে তাজা ফুলের গহনা পরতে বলেছিলাম। ”

মিম আদ্রিশের কথায় লাজুক হাসলো। আদ্রিশ তখন তার থুতনি ধরে মুখ তুলে বললো,
” একটু আমার দিকেও তাকাও মিসেস আদ্রিশ। এত লজ্জা পেলে কি করে চলবে? বিয়ের অনেক মাস হয়ে গিয়েছে। এমন তো না যে আমাদের কালকে বিয়ে।”

” কিন্তু আমার মনে হচ্ছে কালকেই আমাদের বিয়ে। একদম নতুন করে। মনেই হচ্ছে না আমাদের বিয়ের কয়েক মাস পেরিয়ে গিয়েছে!”

” তা ঠিক বলেছো। বিয়ের পরেও যে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে এসেছি তোমাকে তার মাঝেও ভীষণ মজা আছে। একটা এডভেঞ্চারাস ফিলিং পাচ্ছি।”

” কিন্তু আমি যে ভয় পাচ্ছি। যদি এ নিয়ে ঝামেলা হয়!”

” আরে কিসের ঝামেলা হবে! আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড না কি! তোমার বিয়ে করা বর। সো যাস্ট চিল। ”
এই বলে আদ্রিশ অকস্মাৎ মিমের কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। প্রগাঢ় কণ্ঠে বললো,
” আগে আকদ হওয়ার এই সুবিধা বুঝলে? গায়ে হলুদের দিন এসেও রোমাঞ্চ করা যাচ্ছে। ”

মিম মুচকি হাসলো। বললো,
” সবসময় মাথায় রোমান্সই ঘুরে তাই না? রোগী দেখেন কি করে? ”

” ওভাবেই দেখি। কষ্ট হয় ভীষণ। মন চায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে গিয়ে তোমাকে দেখে আসি। তবে আশা করছি আমার এ শখ দ্রুতই পূরণ হবে। কারণ আর দু তিন মাসের মধ্যেই রেজাল্ট দিয়ে দিবে। তখন ইন্টার্নিতে জয়েন করার পর সারাদিন আমার পাশে পাশে থাকবে।”

মিম ফিক করে হেসে বললো,
” হ্যাঁ আপনার জন্য এই এক বছর আমাকে তো শুধু মেডিসিনেই ডিউটি দিবে। সার্জারি, গাইনি তো বাদ তাই না?”

আদ্রিশ হেসে বললো,
” অনলি মেডিসিন ইজ রিয়েল মিশমিশ। উঁহু, মেডিসিন বললে ভুল হবে। অনলি কার্ডিওলজি ইজ রিয়েল।”
বলেই দুজনে সমস্বরে হেসে উঠলো। এভাবে আরো কিছু সময় কাটালো দুজনে। অতঃপর আভা এসে দ্রুত মিমকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। পিছে আদ্রিশের মন চাইলো মিমকে আজ সারারাত নিজের সাথে রাখতে। আজকের জন্য কি এক অপূর্ণ ইচ্ছা!

—————

বিয়ের সব কার্যক্রম শেষে বিয়ের কয়েক মাস পর শ্বশুরবাড়িতে পা রাখলো মিম। একমাত্র ছেলের বউ হওয়ায় ধুমধাম করে তাকে স্বাগত জানানো হলো এ বাড়িতে। পাড়াপড়শি থেকে সকল মহিলারা দেখতে এলো তাকে। প্রায় সকলেই প্রশংসা করলো তার। বেশ রাত হয়ে গিয়েছে বিধায় আর দেরি না করে মিমকে আদ্রিশের রুমে বসানো হলো। নদী তাকে সুন্দর মতো বসিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। তার কয়েক মিনিটের মাঝেই আদ্রিশ রুমে এলো। দেখলো মিম দীর্ঘ এক ঘোমটা টেনে বিছানার মাঝ বরাবর বসে আছে। আদ্রিশ গিয়ে তার সামনে বসলো। হাসিমুখে বললো,
” এখন কি কোনো ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে হবে?”

মিম তৎক্ষণাৎ ঘোমটা হটিয়ে ভেঙচি কেটে বললো,
” এত কষ্ট করে আপনার জন্য সেজেছি। আপনার জন্য গরমের মধ্যে এখনও এ ভারী শাড়ি পরে বসে আছি। তারপরেও কোন মুখে জিজ্ঞেস করেন যে ফর্মালিটি মেইনটেইন করেন কি না! হুহ। বুঝেছি, পুরোনো হয়ে গিয়েছে তো তাই কদর নেই। ”
বলেই মিম বিছানা হতে নামতে নামতে বললো,
” দেখি সরুন। এসব ঝামেলা খুলি আগে। কারোর তো আর এসব নিয়ে পরোয়া নেই।”
বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো মিম। ওদিকে তার এ কান্ড দেখে আদ্রিশ ঠোঁট চেপে হাসলো। সশব্দে হাসতে পারলো না। কেননা তার হাসির শব্দে মিম এবার নির্ঘাত রেগে বো”ম হয়ে যাবে৷
আদ্রিশ হাসি চাপিয়ে রেখে মিমের পিছে গিয়ে দাঁড়ালো। মিম তখন চোখমুখ কুঁচকে হাতের চুড়িগুলো খুলছিলো। আদ্রিশ কিছু না বলে অকস্মাৎ তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে তার হাত দুটো ধরলো। তার কাঁধে মাথা রেখে আদুরে স্বরে বললো,
” এতো রাগ কিসের হুম?”

মিম জবাব দিলো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিশ তখন নিজের দু হাত লাগিয়ে একে একে মিমের পরনের চুড়ি খুললো। এরপর মিমকে ড্রেসিং টেবিলের সামনের চেয়ারে বসিয়ে তার মাথার ঘোমটা সরালো। অতঃপর একে একে ভীষণ যত্ন সহকারে মিমের কানের দুল, টিকলি, গলার হার খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো। বললো,
” এখন গিয়ে মেক-আপ তুলে একটা কমফোর্টেবল ড্রেস পরে আসো। আমি বাইরে ওয়েট করছি।”

মিম আর কথা বাড়ালো না। ট্রলি হতে একটা সুতির শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো সমস্ত রুমে আঁধারে ঢাকা। শুধু জানালা গলিয়ে এক টুকরো জ্যোৎস্নার আলো আসছে। এই আঁধারের মাঝেই সে আদ্রিশকে খুঁজলো। কিন্তু পেলো না। ভাবলো ব্যালকনিতে আছে বোধহয়। ব্যালকনিতে গিয়ে দেখলো সত্যিই আদ্রিশ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। সে গিয়ে আদ্রিশের পাশে দাঁড়ালো। আদ্রিশ তার উপস্থিতি টের পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” ফ্রেশ হয়েছো?”

” হ্যাঁ হয়েছি। আপনি?”

” আমিও হয়েছি। ”

” আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করার ছিলো। ”

” হ্যাঁ করো।”

” বাসায় কবে উঠবেন?”

” পরশুদিন। আরো কয়েকদিন পর উঠতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বেশি ছুটি নেই। বাসায় উঠার পর তোমার সাথে কিছু গোছগাছ করতে হবে। এজন্যই দ্রুতই উঠতে চাচ্ছি।”

” এত দ্রুত বাসায় উঠা নিয়ে আম্মা কিছু বলেনি?”

” না। আম্মা কি বলবে। উনি আমাদের সিচুয়েশন বুঝেছে। আম্মা বললো এখন বাসায় উঠলে ঝামেলা কম হবে। বাড়িতে কয়েকদিন পর আবারও আসা যাবে। ”

” ওহ।”
এরপর দুজনের মাঝে আর কথা হলো না। বেশ কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়েই তারা জ্যোৎস্না বিলাস করলো। এর মাঝে খানিক সময় বাদে হঠাৎ আদ্রিশ মিমকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরলো। মিমের খোলা চুলের মাঝে আলতো করে মুখ গুঁজে নিতে নিতে বললো,
” আজকে কি খুব ক্লান্ত?”

আদ্রিশের স্পর্শে মিম শিউরে উঠেছিলো। ব্যালকনির গ্রিল শক্ত হাতে চেপে ধরে বললো,
” আছি কিছুটা ক্লান্ত।”

আদ্রিশ ধীরেধীরে মিমের কাঁধের উপর হতে চুল সরিয়ে নিলো। কাঁধে থুতনি রেখে আবেশী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” এই ক্লান্তমাখা আজকের রাতটা কি আমার নামে দিতে পারবে মিশমিশ? ”

মিম আদ্রিশের এহেন আবদারে কেঁপে উঠলো। সেদিন রাতে সে অপ্রস্তুত ছিলো বিধায় নাকচ করেছিলো। কিন্তু আজ আর নাকচ করার সাহস বা ইচ্ছে কোনোটাই হলো না তার। সে নীরব রইলো। আদ্রিশ তার এ নীরবতাকে সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরে নিয়ে তার গলায় আলতো অধরের স্পর্শ দিলো। অতঃপর তাকে পাঁজাকোলে তুলে ব্যালকনি হতে রূমের দিকে পা বাড়ালো।

————-

একটা খাট, একটা আলমারি, একটা ছোট্ট ড্রেসিং টেবিল দিয়ে আপাতত আদ্রিশ ও মিমের ছোট্ট সংসার জীবনের উদ্বোধন হলো। বাসার রুমগুলো আগে থেকেই বাড়িওয়ালাকে বলে কাজের লোক দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে রেখেছিলো। মিম এসে তাদের রুমের সবকিছু টুকটাক গোছগাছ শুরু করে দিলো। ট্রলি হতে একটা হালকা রঙের চাদর বিছিয়ে দিলো খাটে। বালিশের কভার ভরলো। এরপর তাদের কিছু জামাকাপড় গুছিয়ে আলমারিতে রাখলো। ড্রেসিং টেবিলে রাখলো চিরুনি, পারফিউম আর ক্রিম। বাকি জিনিসগুলো পরে গুছাবে বলে ট্রলির মধ্যেই রেখে দিলো সে। এর মাঝে সে আদ্রিশকে আজকের রান্নার জন্য বাজারে পাঠালো।
আদ্রিশ বাজার থেকে ফেরার পর দুজনে মিলে একসাথে অল্পস্বল্প করে রান্নাঘর গোছালো। এরপর মিম আজকে রাতের খাবারের জন্য ডাল ও আলুভর্তা বসিয়ে আদ্রিশকে বললো ভাতের চাল ধুয়ে দিতে। আদ্রিশ শুধু ভাতের চালই ধুলো না বরং চুলোয় ভাতও বসিয়ে দিলো।

খাওয়াদাওয়া শেষে রুমে গিয়ে বালিশের উপর মাথা রাখতেই সারাদিনের এক বিশাল ক্লান্তিকর দিনের সমাপ্তি হলো। ক্লান্তিতে দুজনের চোখই বুজে আসছিলো প্রায়। এই ক্লান্তির মাঝেও আজ হঠাৎ মিমের মন চাইলো সে আদ্রিশের বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো। তাই বিনা অনুমতিতেই সে আদ্রিশের বুকে মাথা রাখলো। আদ্রিশ ততক্ষণে চোখ বুজে ফেলেছিলো। বুকের উপর মিমের উপস্থিতিতে সে চোখ খুললো। মিমকে জড়িয়ে ধরে সিলিং এর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। অতঃপর তৃপ্তিকর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” নিজের সংসার চালানোর অনুভূতি কেমন মিসেস?”

মিম ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
” অন্যরকম। আমি ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। তবে একটা কথাই বলতে পারবো, এই বাসার প্রতিটি জিনিস এখন আমার। এই সংসার আমার। এই বুকটা আমার। আমার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটাও আমার। স্বার্থপর এ দুনিয়ায় আমিও স্বার্থপর হয়ে উঠেছি। কেননা এ ঘরের প্রতিটি কোনা আর এই মানুষটাকে শুধুমাত্র ‘আমার’ বলে দাবী করতে পারছি আমি।”

” এখানকার প্রতিটি জিনিস তোমার। আমিও তোমার আর তুমিও আমার। আমাদের দুজনকে মিলেই আমাদের এ ছোট্ট সংসার। আদ্রিশ ও মিমের সংসার।”
#চলবে
®সারা মেহেক