#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 23
🍁🍁🍁
_ ভ ভা ভাইয়া
আচমকা সিমথির কন্ঠ শুনে সায়নরা পেছনে তাকায়। সিমথিকে দেখে সবাই আঁতকে উঠে। মাথা থেকে
র/ক্ত/পা/ত হচ্ছে। হাত কেটে গেছে অনেকখানি। গায়ের সাদা ট্রি-শার্ট র/ক্তে ভিজে গেছে অনেকটা। ফর্সা মুখ টা র/ক্তে লাল হয়ে আছে।
সায়ন : প পরী।
সিমথি আলতো হেসে এলোমেলো পায়ে সায়নের দিকে এগিয়ে আসে। হঠাৎ পড়ে যেতে নিলে সায়ন দৌড়ে সিমথিকে বুকের সাথে চেপে ধরে। চোখে অশ্রু এবার হার মেনেছে। প্রাণপ্রিয় বোনের এ অবস্থা দেখে সায়নের কলিজায় ক্রমাগত কেউ ছুড়ি চালাচ্ছে। ইফাজরা ও ছুটে এসে সিমথির পাশে দাঁড়ায়।
সায়ন : প পরী বোন আমার চোখ খোল। কিচ্ছু হবে না তোর। ভাইয়া এসে গেছে। সোনা বোন আমার চোখ খোল।
সায়নের গলার স্বর শুনে সিমথি বহু কষ্টে চোখ মেলে তাকায়। র/ক্তা/ক্ত হাত সায়নের গালে রাখে। ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে তুলে বহুকষ্টে।
সিমথি : আ আমি ঠি ঠিক আ আছি ভা ভাইয়া। একটু ক কেটে গেছে। আ আমার খুব ঘ ঘুম পা পাচ্ছে।
কথাগুলো বলে সিমথি পুনরায় চোখ বুঁজে নেয়। চাইলে চোখ খোলা রাখতে পারছে না। মাথার পেছন টা ভারি জাতীয় কিছুতে লাগায় পুরো মাথা জিম ধরে আছে। চোখ দুটোতে মনে হচ্ছে কেউ আঠা লাগিয়ে রেখেছে। চোখ বুজার আগে সায়নের ক্রন্দনরত মুখশ্রী টা কেবল আবছা আবছা ভেসে আসে।
সায়ন সিমথির জ্ঞান শূন্য অবচেতন দেহটা জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে। ইফাজ দের চোখ ও ভিজে গেছে। ইফাজ সিমথির মাথায় হাত রাখে। তুহিন পকেট থেকে ফোন বের করে দ্রুত মেঘাদের ফোন করে। মেঘাদের সব জানিয়ে পুনরায় ফোন লাগায় হসপিটালের দারোয়ান আঙ্কেলের কাছে।
ইফাজ : সায়ন সিমথি কে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে। প্রচন্ড ব্লিডিং হচ্ছে।
ইফাজের কথা সায়নের কর্ণপাত হবা মাত্রই সায়ন সিমথিকে কোলে তুলে নেয়। হাটা লাগায় গাড়ির দিকে। সায়নের পেছন পেছন তুহিনরা ও যায়।
জাফর : আমার মন বলছিলো সিমথি ম্যাম গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
ইকবাল : কিন্তু বের হলো কিভাবে?
জাফর : এটা তো উনার জ্ঞান ফিরলেই বলা যাবে।
জাফরের কথায় ইকবাল সহমত হয়। সম্পূর্ণ এক্সিডেন্ট স্পটের দিকে দৃষ্টিপাত করে গাড়িতে উঠে বসে। আজকের কেসের ফাইল করতে হবে। প্রচুর চাপ আছে। আবার এর মধ্যে কারা যেনো সাংবাদিক দের কাছে ও এ খবর লিক করে দিয়েছে। এই নিয়ে অনেক সাংবাদিক কল করেছে। সাংবাদিক রা কাল সকালেই পুলিশ স্টেশন ঘেরাও করবে। তবে সবকিছু অজানাই রয়ে যাবে যতক্ষণ না সিমথির জ্ঞান ফিরছে।
_______________
পৃথিবীতে সূর্যের আগমন ঘটেছে অনেকক্ষণ আগে। ঘড়ির কাটায় নয়টা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। আদি গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে আছে। সামনেই বন্ধ ফোন টা পড়ে আছে। আদির মা, চাচিরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে আদির দিকে তাকাচ্ছে তো নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করছে। আদির বাবারা কাজে বেরিয়ে গেছে। ইশান, আদিবা, শাওন পাখির মতো কুটুর কুটুর করে আদিকে দেখছে তো নিজেদের মধ্যে কিছু বলাবলি করছে। মেহের টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেখে আদির কাছে আসে।
মেহের : ভাইয়া কি হয়েছে।
_____
ইশান : সকাল থেকে গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কেনো।
_____
আদিবা : আজব তো সুপার গ্লো দিয়ে ঠোঁট আঁটকে দেওয়া হয়েছে নাকি।
____
আচমকা তুহা হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে। প্রায় মাস খানেক পর তুহাকে দেখে সবার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু তুহার ফেস রিয়াকশন দেখে সবাই ভ্রু কুঁচকায়।
আদির মা : কিরে তুই আবার প্যাঁচার মতো মুখ করে রাখলি কেনো।
তুহা : তোমরা এভাবে কিভাবে বসে থাকতে পারো। বাইরের অবস্থা জানো কিছু।
শাওনের মা : কেনো রে কি হলো।
তুহা : নিউজ চ্যানেলে যাও। তাহলেই দেখতে পাবে। শহরের অবস্থা গরম হয়ে আছে।
শাওন : আগে বসে নে। দেখে তো মনে হচ্ছে কোচিং থেকে এদিকে এসেছিস।
তুহা : মেহের ভাবী একটু পানি দাও না।
তুহার কথায় মেহের পানি আনতে যায়। তুহা আদিবার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
তুহা : টিভি অন কর গবেট।
আদিবা থতমত খেয়ে রিমোট হাতে নেয়। তখনই আয়াশ আর রিক ঢুকে ওদের বাড়িতে।
আয়াশ : আদি তুই এখনো এভাবে বসে আছিস।
আচমকা আয়াশের কন্ঠস্বর শুনে সবাই দরজার দিকে তাকায়। আয়াশ, রিক কে দেখে সবাই আরো অবাক হয় ।
মেহের : কি হয়েছে ক্লিয়ারলি বলবে তোমরা।
রিক : কি হয়েছে মানে। তোমরা জানো না কিছু।
ইশান : কি জানবো।
তুহা : তোরা দেশে কেনো আছিস বুঝি না। আদিবা টিভি অন করবি নাকি রিমোট নিতে সংসার পাতাবি।
তুহার ধমকে আদিবা দ্রুত টিভি অন করে। মটুপাতলু র চ্যানেলে চেঞ্জ করে তুহা নিজেই নিউজ চ্যানেল দেয়। আদির মা – চাচীরা ইতোমধ্যে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হয়।। নিউজ চ্যানেলে যেতেই টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে মেজর আহনাফ খানের একটা হাস্যজ্জ্বল ছবি। আহনাফ খানের ছবির পাশে সিমথির ও একটা হাস্যজ্জ্বল ছবি পর্দার স্কিনে ভেসে আসে।
” রাত যখন নিঝুম। সবাই যখন সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বিছানায় মাথা ঠেকায় একটু শান্তির আশায়। তখনই কিছু মানুষ পৃথিবী থেকে চিরতরে আরেকটা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। রাত তখন এগারো টা ছাড়িয়ে। আর্মি অফিসার মেজর আহনাফ খানের মতো তার মেয়ে সিমথি জাহান সিয়ার উপর ঠিক একই ভাবে আ্যটাক করা হয়। উদ্দেশ্য সিমথি জাহান সিয়ার মৃত্যু। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী সিমথি জাহান সিয়ার গাড়ি প্রথমে ব্রেক ফেইল করানো হয়। কিন্তু তাতেও যদি সিমথি জাহান সিয়া বেঁচে যায়। তারজন্য ঘৃণিত ষড়যন্ত্র করে সিমথি জাহান সিয়ার গাড়ির বোম ফিট করা হয়। উনার বাঁচার কোনো সম্ভাবনা রাখতে চায়নি প্রতিপক্ষ। গাড়ি টা যখন টিসি ক্লাব ছাড়িয়ে যায় তখনই গাড়িটার সামনে এসে একটা মালবাহী ট্রাক হাজির হয়। এবং কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে ট্রাক&গাড়ির সংঘর্ষ হয়। ট্রাকের ড্রাইভার এক্সিডেন্টের কিছু মুহুর্ত আগে ট্রাক থেকে ঝাপ দেওয়ায় প্রাণে বেঁচে যায়। যদিও উনার ট্রাক সম্পূর্ণ দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিলো। পুলিশের সন্দেহ সিমথি জাহান সিয়ার গাড়ি মালবাহী ট্রাক কে ক্রস করতে গিয়ে গাছের সাথে বারি খায় আর সঙ্গে সঙ্গে বোম ব্লাস্ট হয়। বেশিকিছুক্ষণ খোজাখুজির পর ও সিমথি জাহান সিয়াকে কোথাও পাওয়া না গেলে পুলিশ অফিসার ইকবাল হোসেন ঘোষণা দেয় ব্লাস্টে সিমথি জাহান সিয়া হয়তো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। কিন্তু কিন্তু হুমম এখানে ও কিন্তু আছে। আহনাফ খানের রক্ত কখনো দুর্বল হয় না এটার প্রমাণ দিয়েছেন সিমথি জাহান সিয়া। টিসি ক্লাবের থেকে একটু দূরে দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সেই ভয়াবহ মুহুর্তের কিছু দৃশ্য দেখে নিন এক পলকে। আমি তন্ময় এহমাদ আছি আপনাদের সাথে। ”
আদি শুকনো ঢোক গিলে। বুকের ভেতর টা কেমন করছে। মেহেররা স্তব্ধ হয়ে গেছে নিউজ টা শুনে। সবার দৃষ্টি এখনো টিভি তে নিবন্ধ। টিভি তে ভেসে ওঠে রাতে এক্সিডেন্টের কিছু মুহুর্ত। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিমথির গাড়ি ট্রাককে ক্রস করতে গিয়ে তাল হারিয়ে ফেলে। তবে ট্রাকের একসাইডে কিছুটা লাগায় ট্রাকের মালিক প্রাণ বাঁচানোর জন্য রোড সাইডে লাফিয়ে পড়ে৷ ট্রাক গিয়ে সামনে দুমড়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড পরই সিমথির গাড়ি গাছের সাথে জোরে ধাক্কা লাগে আর সঙ্গে সঙ্গে ব্লাস্ট হয়ে যায়। তবে গাড়িটা গাছের সাথে ধাক্কা লাগার আগেই সিমথি ও গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে। অন্ধকার জায়গায় আবছা আলোতে সিমথি লাফিয়ে পড়ার সময় এক সাইড ফেস টাই দেখা গেছে। ব্যস তারপরই আবারো ভেসে ওঠে তন্ময়ের মুখ।
” রাত প্রায় দুইটার পর সিমথি জাহান সিয়ার খোজ পাওয়া যায় র/ক্তা/ক্ত অবস্থায়। সকালেই ডাক্তাররা জানান সিমথি জাহান সিয়া এখন অনেকটায় সুস্থ আছেন। তবে উনি এখনো সেন্সলেস। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে উনার সেন্স ফিরবে বলে ডাক্তাররা আমাদের জানিয়েছেন। আজকের আপডেট এতোটুকুই পরবতী আপডেট নিয়ে আবারো হাজির হবো আপনাদের মাঝে। আমি তন্ময় এহমাদ। ততক্ষণে সবাই সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ “।
সম্পূর্ণ নিউজ শুনে মেহেররা রিয়াকশন দিতেই ভুলে যায়। আদিবার হাত থেকে রিমোট ঠাস করে পড়ে যায়। রিমোট পড়ার শব্দে আদির হুশ ফিরে। মেহেররা আদির মনে অবস্থা বুঝতে পেরে আয়াশকে ইশারা করে।
আয়াশ : আদি যাবি নাকি হসপিটালে।
আয়াশের কথায় আদি দ্রুত ওঠে দাঁড়ায়।
আদি : পাঁচ মিনিট ওয়েট কর আমি আসছি।
আদির মা : প্রথমে বাচ্চা ছেলে-মেয়ে দুটোর মা-বাবা কে এমন নির্মম ভাবে মে/রে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দিলো। এখন আবার এতো বছর পর মেয়েটার পেছনে লাগলো। এরা কি মানুষ।
শাওনের মা : আমার তো নিউজে দেখেই হাত-পা কাঁপছে। এতোটুকু মেয়ে কিভাবে এতো বড় বিপদ টা সামলালো।
আদির মা : যা বললে ভাবী। আল্লাহ মেয়েটাকে সুস্থ করে দিক। মেয়েটার কিছু হলে সায়ন টা শেষ হয়ে যেতো। ছোট থেকে দেখছি তো ভাই-বোন দুইজনই দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসে।
ইশানের মা : এদের নো ডেঞ্জারসের ইন্ড।
মেহের : ভাগ্যিস তিন্নি এখন স্কুলে নিউজ টা দেখে কেঁদে কেটে হয়রান হয়ে যেতো।
আদি : চল আয়াশ।
আদির কন্ঠে সবাই আদির দিকে তাকায়।
মেহের : আমাদের খবর জানিও। এতোজন তো আর যাওয়া যাবে না হসপিটালে।
মেহেরের কথায় আদি মাথা নাড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায়। যেতে ফোন টা অন করে। ফোন অন করতেই ২০+ মিসড কল দেখে আদির মাথা ঘুরে যায়। কল লিস্ট চেক করে দেখে তন্ময়, তুহিন, মেঘা, রোদেলা, আয়াশ, রিক, তুহা অনেকগুলো মিসড কল দিয়েছে। আদির এখন নিজের উপর রাগ লাগছে। কেনো সিমথির কথায় অভিমান করে ফোন অফ করে দিলো।
মেঘারা নিজেদের কেবিনে প্রেশেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। সিমথি না থাকায় সিমথির প্রেশেন্ট গুলো ওদের কেই দেখতে হচ্ছে সেই সাথে নিজেদের ও আছে। সারারাত না ঘুমানোর ফলে আবার কান্নাকাটির ফলে কারোর চোখ-মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সায়ন আর মিম করিডোরে বসে আছে। সাথে সিনহা ও আছে। ইফাজ একটু আগেই অফিস থেকে ফোন আসায় ওখানে গেছে। রোজের আজ এক্সাম থাকায় সায়ন ধমকে ভার্সিটি পাঠিয়েছে। মিমের মা-বাবা সকালে এসেছিলো সব শুনে।
কিছুক্ষণ পরই তন্ময় ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে হসপিটালে আসে। সিনহা করিডোরে তন্ময়কে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ায়। এক রাতের মধ্যে চোখ-মুখের কি হাল। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে। তন্ময় সিনহার পাশে এসে সিনহার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। সিনহা মুখ ফুলিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে তন্ময়ের কপালের ঘাম মুছে দেয়।
তন্ময় : খেয়েছো কিছু।
সিনহা : তুমি খাওনি আর আমি খেয়ে নেবো।
তন্ময় : পা’গ’লি একটা। চলো কিছু খেয়ে নেবে। সামনে ফাইনাল এক্সাম। অসুস্থ হয়ে যাবে।
সিনহা : ভাইয়া আপুরা ও তো কিছু খায়নি আর আমি খেয়ে নেবো।
সিনহার কথায় তন্ময় সায়নদের দিকে তাকায়।
তন্ময় : আপু এখানে বসে না থেকে বাড়ি যা। সিমথি এখন সুস্থ আছে৷
তন্ময়ের কথায় সায়ন রা তন্ময়ের দিকে তাকায়।
মিম : কোথায় গিয়েছিলি তুই।
তন্ময় : অফিস থেকে বস ডেকেছিলো। কালকে রাতের ঘটনা নিয়েই প্রচার করে আসলাম।
সায়ন : মিম এখানে বসে না থেকে বাড়ি চলে যাও। এই অবস্থায় না খেয়ে না ঘুমিয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে।
মিম : চুপ করো তুমি। নিজের দিকে তাকিয়েছো একবার।
সায়ন : তন্ময় তোর বোনকে বুঝাও। তোর বোন প্রেগন্যান্ট আমি নয়।
এমন পরিস্থিতিতে ও সায়নের কথায় তন্ময়রা হেসে দেয়।
তন্ময় : আপু ভাইয়া কিন্তু ঠিক বলেছে। চল তোকে গাড়িতে দিয়ে আসি।
অতঃপর তিনজনের জেদের কাছে পরাস্ত হয়ে মিম মুখ ফুলিয়ে উঠে চলে যায়। প্রেগন্যান্ট তো কি হয়েছে। চার মাসের প্রেগন্যান্সি এমন ভাবে ট্রিট করছে যেনো আট-নয়মাসের পেট হুহহ। কথাগুলো মনে মনে আওড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে। তন্ময় ড্রাইভার কে বুঝিয়ে আবারো হসপিটালে আসে। মেঘার কেবিনে ঢুকে পড়ে। হঠাৎ তন্ময়কে কেবিনে দেখে মেঘা চমকে যায়। প্রেশেন্ট রেখে উঠে দাঁড়ায়।
মেঘা : তন্ময় তুই। সি সিমথি সিমথির কিছু হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার তো বললো সিমথি আউট অব ডেঞ্জারস। কিরে কিছু বল।
তন্ময় : আমাকে বলতে দিয়েছিস কিছু। সিমথির কিছু হয়নি। ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ায় এখনো সেন্স লেস হয়ে আছে।
তন্ময়ের কথায় মেঘা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে
মেঘা : তাহলে কেনো আসলি।
তন্ময় : কাল রাত থেকে জেগে আছিস। এখনো খাসনি কিছু। নিজের খেয়াল না রাখলে প্রেশেন্ট দেখবি কিভাবে।
মেঘা : খেতে ইচ্ছে করছে না। আগে সিমথি সেনৃস আসুক পরে খেয়ে নেবো। তোরা খেয়ে নে। রোদেলা, তুহিন ওদের খাইয়ে নিয়ে আয়।
তন্ময় : তুই বললেই যেনো আমি শুনবো। হুহ
মেঘার কথায় তন্ময় ভেংচি কেটে বেরিয়ে যায়। কেবিনে থাকা প্যাশেন্ট ওদের বন্ধুত্ব দেখে অবাক হয়।
আদি : সায়ন।
আচমকা আদির কন্ঠস্বর শুনে সায়ন মাথা উঁচু করে উপরে তাকায়। আদিকে দেখে শুকনো হেসে উঠে দাঁড়ায়।
সায়ন : তুই৷
আদি : সিয়া কেমন আছে।
সায়ন : এখন আগের থেকে বেটার। ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ায় ঘুমাচ্ছে।
আয়াশ : তুই এখন বাড়ি যা সায়ন। হসপিটালে কতক্ষণ থাকবি।
সায়ন : না রে বাড়ি গিয়ে শান্তি পাবো না।
রিক : বেশি কথা বলিস না। গায়ে রক্তে মাখামাখি শার্ট পড়ে কতক্ষণ থাকবি। সিমথির জ্ঞান ফিরলে তোকে এভাবে দেখে কি করবে জানিস।
সায়ন : ও তো ঘুমাচ্ছে। ( কেবিনের দিকে তাকিয়ে)
আয়াশ : ভাই আমার সাথে বাড়ি আয়। চেঞ্জ করে শাওয়ার নিয়ে আবার আসিস।
তরী : সায়ন ভাইয়া বাড়ি যাও। আমরা আছি তো।
তরীর কথায় সায়ন তরীর দিকে তাকায়।
সায়ন : কিন্তু
তরী : আমি অতটা খারাপ নয় ভাইয়া। যাও তুমি নিশ্চিতে। সিমথিকে দেখার জন্য এখানে অনেকে আছে।
সায়ন : ঠিক আছে। আমি আবার আসবো। একটা লম্বা শাওয়ার নিতে হবে।
সায়নের কথায় আয়াশরা সায়ন দেয়। আয়াশ সায়নকে নিয়ে চলে যায়। তরী ও চলে যায়।
সাদা বেডে শুয়ে আছে সিমথি। চোখ বন্ধ। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। বাম হাতেও ব্যান্ডেজ করা। মুখটা শুকিয়ে গেছে। মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। আদি পা টিপে টিপে সিমথির পাশে এসে দাঁড়ায়। সিমথি কে এভাবে দেখে আদির বুকের ভেতর অসহনীয় পীড়া আরম্ভ হয়। কাল দুপুরেও মেয়েটা ঠিক ছিলো। আর এখন শুয়ে আছে। আদির সিমথি ব্যাডেন্জ আবৃত কপালে একটা চুমু খায়।
আদি : জলদি সুস্থ হয়ে যাও। তোমাকে এভাবে দেখতে আমার একদম ভালো লাগছে না। তোমাকে একটা গুড নিউজ দেওয়ার আছে। না উঠলে জানবে কিভাবে।
আদি সিমথির পাশে হাত ধরে বসে থাকে। অনেকক্ষণ পর বাইরে থেকে রিকের আওয়াজ আসতেই আদি উঠে দাঁড়ায়। হাতের উল্টোপিঠে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।
চলবে,,,,,
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 24
🍁🍁🍁🍁
সিমথি সুস্থ হয়েছে আজ সাত দিন হলো। এখন কেবল মাথায় ব্যান্ডেক করা। মাথার আঘাত টা গুরুতর হওয়ায় আঘাত শুকাতে সময় নেবে। এই সাতদিন সায়ন সিমথিকে হসপিটালে থাকতে দেয়নি। জ্ঞান ফিরার পর দিনই বাড়ি নিয়ে এসেছে। সেদিন টা রেস্ট নিয়ে আবারো কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। তবে এক্সিডেন্ট কেস হওয়ায় হুটহাট পুলিশের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সায়ন : পরী তুই আদিকে ভালোবাসিস।
সিমথি আজ হাফ টাইম হসপিটালে কাজ করায় রাতে বাড়ি বসে কাজ করছিলো তখনই হঠাৎ সায়নের কথায় সিমথি ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে সায়নের দিকে তাকায়। সায়নের দৃষ্টি এখনো সিমথির দিকে। সিমথি একটা ঢোক গিলে। আচমকা এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হবার জন্য সিমথি প্রস্তুত ছিলো না। সিমথিকে চুপ থাকতে দেখে সায়ন এসে সিমথির পাশে বসে। সিমথির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে
সায়ন : কি রে বল।
সিমথি : ত তোকে এ এসব কে বললো।
সায়ন : যা জিজ্ঞেস করেছিস সেটার এন্সার দে।
সিমথি : এসবের মানে কি। হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো করছিস।
সায়ন : এন্সার টা দে।
সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। সায়ন যে উত্তর না নিয়ে ওকে ছাড়বে এটা সিমথি ভালোই জানে। কোল থেকে ল্যাপটপ টা নামিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কিভাবে বলবে ভাবতে শুরু করে।
সায়ন : এতো কি ভাবছিস। সোজা প্রশ্নের উত্তর টা দিতে এতোক্ষণ লাগে। উত্তর তো তোর জানার।
সায়নের কথায় সিমথি কিছুক্ষণ চুপ থাকে।
সিমথি : হ্যাঁ ভালোবাসতাম।
সিমথির কথায় সায়ন শান্ত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।
সায়ন : এখন বাসিস না।
______
সায়ন : কি হলো বল।
সিমথি : কি শুনতে চাস। হ্যাঁ নাকি না।
সায়ন : সত্যি টা।
সিমথি : তুই ভাবীপু কে কত বছর ধরে ভালোবাসিস ভাইয়া৷
সায়ন : কেনো।
সিমথি : আহা বল না।
সায়ন : প্রায় দশ বছর।
সিমথি : স্কুল লাইফ থেকে তাই তো৷
সায়ন : হুমমম।
সিমথি : হুট করে ভাবীপু তোর থেকে দূরে চলে গেলে কি ভাবীপু কে ভুলে যাবি।
সায়ন : নাহ।
সিমথি : কেনো
সায়ন : কারণ ওকে আমি ভালোবাসি। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি। দূরত্ব ভালোবাসা কমায় না বরং
বাড়ায়। আর যে ভালোবাসা সামান্য দূরত্বে শেষ হয়ে যায় সেটা মোহ ভালোবাসা নয়।
সিমথি : লজ্জা রাখ ইয়ার আমি তোর ছোট বোন।
সায়ন : আমি তোকে সবসময় নিজের একান্ত কাছের একজন বন্ধু ভাবি যাকে নির্দ্বিধায় সব বলা যায়। এবার আমার উত্তর টা দে।
সায়নের কথায় সিমথি হাসে। এক পা এক পা করে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়। বাইরে বাতাস বইছে তবে সেটা খুবই অল্প। আজকে গরমের মাত্রা অনেক ছিলো। সিমথি আকাশের মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলায় মত্ত চাঁদের দিকে তাকায়। সায়ন সিমথির পাশে এসে দাঁড়ায়।
সিমথি : আদি কে আমি প্রথম যখন দেখেছিলাম তখন ক্লাস টেনে পড়ি। আমাদের স্কুলের সামনে আয়াশ ভাইয়ার সাথে প্রথম দেখেছিলাম। সেদিন উনি ওয়াইট কালার শার্ট আর কালো জিন্স পড়ে ছিলো। চুলগুলো বাতাসে উড়ছিলো। উনি আয়াশ ভাইয়া কে কিছু বলছিলো হাত নাড়িয়ে। সেদিন স্কুল ছুটির পর আমরা ফুসকা খাওয়ার জন্য বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আদিকে দেখার পর আমার কেমন যেনো লেগেছিলো। নতুন একটা অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়ে ছিলাম সেদিন৷ যতক্ষণ উনি ওখানে ছিলো ততক্ষণ আমি আড়চোখে উনাকে দেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই উনি কোথায় যেনো চলে গিয়েছিলো। প্রায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম কিন্তু উনার দেখা পায়নি। তখন মন খারাপ করে বাড়ি চলে এসেছিলাম। হঠাৎ নিজের মন খারাপের কারণ আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। সারাদিন শুধু উনার কথা ভেবেছিলাম। উনার হাসির মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম। তারপর আর মাসে খানেক উনার সাথে আমার কোনো রকম দেখা হয়নি। তবে আমি প্রতিদিন উনাকে খুঁজতাম। তখন এসবকে নিজের আবেগ ভেবে দমিয়ে রেখে পড়াশোনায় মন দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ও বেশিদিন টিকাতে পারিনি। হঠাৎ একদিন তুই আদি, আয়াশ ভাইয়া, রিক ভাইয়া আর মিম আপুকে নিয়ে বাড়ি হাজির হয়েছিলি। ওইদিন আদি কে আবারো দেখেছিলাম। তারপর প্রায়ই দেখা হতো কারণ উনারা আমাদের বাড়ি আসতো। আগে তেমন একটা না আসলে ও সেদিনের পর থেকে আসতো। বেশ কিছুদিন যাবার পর অনুভব করলাম আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আমার মনকে অনেক কন্ট্রোলে রেখেছিলাম কিন্তু পারিনি। তারপর আমি আদি ভাইয়া কে জানায় ও। কিন্তু উনি না করে দেয়। কিন্তু তুই তো জানিস আমি বরাবরই নাছোড়বান্দা ছিলাম। সিরিয়াল সিনেমার মতো ভাবতাম হয়তো উনিও কোনোদিন আমাকেও ভালোবাসবে। কিন্তু আমি বার বার ভুল প্রমাণিত হতাম। তারপর কিছু কারণে ই উনাকে আমি মুক্তি দিয়েছিলাম এসব থেকে।
সায়ন : কারণ টা কি আমি
সায়নের কথায় সিমথি সায়নের দিকে তাকায়। অতঃপর মুচকি হাসে।
সিমথি : পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে বেশি তোকে ভালোবাসি ভাইয়া। উনার প্রতি যখন আমি ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছিলাম তখন ও যদি জানতাম তুই তোর কোনো বন্ধুর সাথে তোর বোনের সম্পর্ক মানবি না আমি নিজেকে তখনই দমিয়ে নিতাম। কিন্তু তোর এই কথাটা আমি তিন মাস আগে শুনেছি। কিন্তু উনাকে আমি মুক্তি দিয়েছি আজ প্রায় সাত বছর। তাই কারণ টা কোনো ভাবেই তুই হতে পারিস না।
সায়ন : এখন যদি ও তোর লাইফে ফিরতে চাই তুই মানবি।
সায়নের কথায় সিমথি পুনরায় হাসে।
সিমথি : উনি বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে বন্ধুত্ব বেছে নিয়েছে ভাইয়া। আমি তোর আর আদির মধ্যে তোকে বেছে নিয়েছি। অতীত নিয়ে আর ভাবতে চাই না। যা হওয়ার হয়েছে। এখন বড় হয়েছি বুঝতে শিখেছি।
সায়ন : ভালোবাসিস আদিকে এখনো। এই এন্সার টা পায়নি এখনো।
সিমথি : ভাইয়া প্লিজ। কেনো এসব টানছিস। এসব তোকে কে বলেছে।
সায়ন : এটা তোর না জানলে ও চলবে। আমার এন্সার টা দে।
সিমথি : দূরত্ব কখনো ভালোবাসা কমায় না বরং বাড়ায় কথাটা তুই একটু আগে বলেছিলি তাই না।
সিমথির কথায় সায়ন বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। আচমকা বুকের মাঝে চাপা আর্তনাদ ভেসে ওঠে। নিজের করা মজার ছলে নিজের প্রিয় বোনটা এতো কষ্ট পাবে এটা সায়ন ভাবেনি। সায়ন সিমথিকে টেনে নিজের দিকে ফেরায়। সিমথি হেসে উঠে। সায়ন সিমথির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়।
সায়ন : বড় হয়ে গেছিস পরী। কষ্ট লুকিয়ে হাসতে শিখে গেছিস।
সিমথি : দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ভাইয়া। এতো এতো ঠকবাজের আড়ালে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি রে। বিশ্বাস কর আমাদের চারপাশটায় মুখোশধারী মানুষের অভাব নেই। তাই নিজের কষ্ট টা নিজের মাঝে চেপে রাখতে হয়। তুই বড্ড সরল রে ভাইয়া। বাবাই কি বলতো মনে আছে তোর। আমি বাবাইয়ের মতো শক্ত মনের হয়েছি আর তুই মায়ের মতো সরল। ভাইয়া মা- বাবাই নেই তাই বলে কি তুই আমাকে ছেড়ে দিয়েছিস। মায়ের সরলতা মা’কে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। আর বাবাইয়ের কঠোরতা বাবাই কে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ভাইয়া নিজেকে একটু কঠোর কর। আমি সবসময় থাকবো না। নিজের দুর্বলতা গুলো নিজের মাঝে রাখ। কি দরকার নিজের দুর্বলতা কে নিজের মৃ’ত্যু’র অস্ত্র বানানো।
আচমকা সায়ন সিমথিকে জড়িয়ে ধরে।
সায়ন : সরি রে বোন। আমি বন্ধুর সাথে বোনের সম্পর্ক মানবো না এটা মজা করে বলেছিলাম। আমি কখনো ভাবিনি একটা মজায় এতোকিছু হয়ে যাবে।
সিমথি : ভাইয়া বাদ দে না এসব।
সায়ন : নাহ। আমি নিজে আদির সাথে কথা বলবো। আমার সামনে আমার সবচেয়ে কাছের দুজন মানুষ কষ্ট পাবে আমার কারণে এটা আমি মানতে পারবো না। তুই শুধু সব ভুলে যা নতুন করে সব শুরু করার চেষ্টা কর। আদিকে ভুল বুঝিস না। আদি ভীষণ ভালো ছেলে।
সিমথি : আমি জানি ভাইয়া। আমার উনার উপর রাগ নেই। সত্যি বলতে এতোদিন রাগ ছিলো কিন্তু এখন আর নেই। তবে আমার লাইফে কাউকে জড়াতে চাই না।
সায়ন : কিন্তু পরী।
সিমথি : ব্যস ভাইয়া। আমার একটু মানসিক শান্তির প্রয়োজন। এতোসবে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। আমার মাথায় প্রচুর পেইন হচ্ছে। ঘুমা গিয়ে আমিও ঘুমাবো।
সায়ন : মেডিসিন নিয়েছিস।
মেডিসিনের কথা শুনে সিমথি নাক-মুখ কুঁচকে ফেলে। সিমথির রিয়াকশন দেখে সায়ন যা বুঝার বুঝে যায়। সিমথির হাত টেনে বেডে বসিয়ে মেডিসিন খাইয়ে চলে যায়। সিমথি বেডে শুইয়ে চোখ বুঁজে নেয়। ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি।
সিমথি : সব সম্পর্কে পূর্ণতা মানায় না। আদির মা কখনো আমাকে মানবে না এটা আমি জানি।
মনে মনে কথাগুলো আওড়িয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চোখ মেলে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
____________
শাওন : কেনো মেঝো মা সিমথি কি মেয়ে হিসেবে খারাপ।
আদির মা : আমি তা বলছি না। সিমথি যথেষ্ট ভালো মেয়ে। কিন্তু ও সারাদিন মা’রা’মা’রি গু’লাগু’লি তে থাকে। আমি আমার ছেলেকে এমন বিপদে ফেলতে পারিনা।
আদির বাবা : মেয়েটা তো আর খারাপ কাজের জন্য এসব করে না।
আদির মা : তুমি কোনো কথা বলবে না। আমি যখন বলেছি আদির সাথে আমি সিমথির বিয়ে দেবো না। তার মানে দেবোই না।
আদির মায়ের কথায় শাওন রা পুনরায় আশাহত হয়। শাওনরা একে অপরের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকায়। আদি রেগে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
আদি : কেবল এতোটুকুতেই তোমার সমস্যা।
আদির মা : হ্যাঁ। আর ওই মেয়ে কি পারবে এসব ছাড়তে। জানি পারবে না। আমি কোনো ভাবে সিমথিকে ছোট করছি না কিন্তু ওর কাজটা আমার অপছন্দের।
মেহের : মেঝো মা
আদির মা : নাহ মেহের। তোমার ভাইয়ার যদি একান্তই বিয়ের শখ এতোবছর পর জেগে থাকে তাহলে আমি নিজে মেয়ে পছন্দ করবো। তোমার মতো ঘরনী মেয়ে নিয়ে আসবো। সিমথি সবসময় পড়াশোনা আর খু’না’খু’নি নিয়ে ব্যস্ত ছিলো ওর পক্ষে কখনো সংসারের কাজ জানা সম্ভব না। তারপর বিয়ের পর কি এসব ড্রেস পড়বে। আমার মনে হয়না ও কখনো শাড়ি পড়েছে বলে।
আদিবা : মা তুমি তো নিজেই সব জেনে বসে আছো। এভাবে না জেনে একজনকে জাজ করাটা ঠিক না।
আদির মা : তুই আমার পেটে হয়েছিস নাকি আমি তোর পেটে। বড়দের মাঝে কথা বলবি না। আমি কাল থেকেই মেয়ে দেখা শুরু করছি।
আদি : এনাফ ইজ এনাফ। লাইফ টা আমার মা। আমি যাকে তাকে বিয়ে করবো এটা ভাবলে কিভাবে। আর সিয়াকে নিয়ে তোমার মনে সব ভুল ধারণা আছে। কতটুকু জানো ওকে।
আদির মা : আদি চুপ কর নয়তো এখন হাত উঠে যাবে। ( রেগে)
ইশানের মা : আহ মেঝো ভাবী কি বলছো এসব।
আদি : আমি সিমথি ব্যতিত কাউকে বিয়ে করবো না।
আদির মা : এটাই তোর শেষ কথা।
আদি : হ্যাঁ
আদির মা : আমার থেকে এখন ওই মেয়েটা বড় হয়ে গেলো।
শাওন : মেঝো মা প্লিজ ইমোশনাল কথা বলবে না। তুমি কেনো শুধু শুধু ওদের ভালোবাসার মাঝে ব্যাঘাত আনছো।
আদির মা : আমার সিদ্ধান্ত আমি জানিয়ে দিয়েছি বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে। যদি ওই মেয়েকে তুই বিয়ে করতে চাস করতেই পারিস কিন্তু আমাকে আর কখনো মা বলে ডাকতে পারবি না। আমি জানবো আমার কেবল একটাই মেয়ে।
আদির বাবা : তাহমিনা ( ধমকে)
আদির মা রেগে মেগে চলে যায়। পেছন পেছন আদির বাবা ও যায়। শাওনের মা-বাবা ও চলে যায়। আদি রেগে সোফায় লাথি দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। পেছনে মেহেররা এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের বিশ্বাসই হচ্ছে না আদির মায়ের মনে সিমথির সম্পর্কে এতোটা ভুল ধারণা আছে।
চলবে,,,,,
( নাও এদের আর হইলো মিল 😒 )
#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 25
🍁🍁🍁
আদিদের বাড়ির পরিবেশে বেশ কিছুদিন ধরেই নীরবতা বিরাজ করছে। মা- ছেলের মধ্যে চলছে নীরব যুদ্ধ। আদি যতই সব কিছু সহজ করতে চাইছে কিন্তু আদির মা ততই সব বিগড়ে দিচ্ছে। আদির বাবা, শাওনের মা-বাবা সহ বাড়ির সবাই আদির মাকে বুঝাচ্ছে কিন্তু আদির মা বুঝতে নারাজ। আদির মায়ের এক কথা উনি উনার ছেলেকে নিজের মনের মতো মেয়ের সাথে বিয়ে দেবে। কিন্তু সিমথি কিছু তেই নয়।
রাতে সবাই নিজ নিজ কাজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসে। কারোরই মন মেজাজের ঠিক নেই। তিন্নির ছোট্ট মন টা বুঝতে পারছে ওদের বাড়িতে ছোটো খাটো একটা টর্নেডো বয়ে যাচ্ছে।
শাওন : আদি কোথায়।
শাওনের কথায় আদির মা বলে উঠে,,,
আদির মা : ওর এখন সেই সময় আছে তোদের সাথে কথা বলার আড্ডা দেওয়ার। দেখ গিয়ে ওই মেয়েটার সাথে কথা বলছে।
আদির মায়ের কথায় শাওন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। শাওন রা ভালো করেই জানে লাস্ট কিছু দিন ধরে আদি – সিমথি দুজনের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। মূলত যোগাযোগ টা আদিই দমিয়ে নিজের মাকে বুঝাতে চাইছে। আর সিমথি সে তো আদিকে মুক্তি দিয়েছে।
মেহের : মেঝো মা। আমরা তো কেউই সিমথি কে চিনি না। তুমি কেবল ওর বাহ্যিক আচরণ টা দেখছো কিন্তু অভ্যন্তরে তো সিমথি সম্পূর্ণ আলাদা হতেই পারে।
আদির মা : দেখ মেহের তুই এই বাড়িতে আসার পর থেকে আমি কখনো আদিবা আর তোকে আলাদা করে দেখিনি। আমার কাছে আমার নিজের সন্তানরা যেমন তোরা, শাওন, ইশান ওরা ও তেমন। আজ যদি আদির জায়গায় ইশান ও সিমথির কথা বলতো তখনো আমি না করতাম।
ইশান : আমি কেনো সিমথি কে নিয়ে ভাববো। আজব।
আদির মা : আমি আমার ছেলের জন্য একটা লক্ষ্মী শান্ত শিষ্ট ভদ্র মেয়ে চাই। সিমথি শান্ত শিষ্ট ভদ্র হলেও ওর কাজ গুলো আমার অপছন্দের। আর সিমথি কি বিয়ের পর ও সারাদিন হসপিটাল নিয়ে পড়ে থাকবে। আর বাড়ির সব কাজ বুঝি তুই একা করবি। সিমথি কি পারবে নিজের পেশা বাদ দিতে। পারবে তোর মতো করে সংসার টা কে আগলে রাখতে। সিমথি তো বিয়ের আগে আমার আর আমার ছেলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে দিয়েছে। বিয়ের পর এই বাড়ি ভাগ হবে না তা কি সিউর হয়ে বলতে পারবি।
আদির বাবা : তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি বাড়ির বউ না বাড়ির জন্য চাকরানী আনতে চাইছো। মেহের কে ও কি তুমি এই নজরেই দেখো।
আদির মা : আদিবার বাবা ( হালকা চেঁচিয়ে)
আদির বাবা : চেচাচ্ছো কেনো। মেয়েটা কি এতোদিন ধরে পড়ালেখা করে ডাক্তারি পাস করেছে বিয়ের পর এসব ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এটা ওর পেশা। যেটা নিজের যোগ্যতায় পেয়েছে। আর সিমথি তোমার আর আদির মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে নি বরং তুমি তিনজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছো। নিজের ভুল টা বুঝবে ঠিকই কিন্তু ছেলে মেয়ে দুজনকেই কষ্ট দিচ্ছো।
আদির মা : আমি তোমার সব কথায় মানছি। কিন্তু মেয়ে মানুষের বিয়ের পর আর কিসের চাকরী করা লাগবে। ও কি আমার ছেলেকে বসিয়ে খাওয়াবে। আমার ছেলের যথেষ্ট যোগ্যতা আছে টাকা কামিয়ে নিজের বউকে খাওয়ানোর।
আদির বাবা : তোমার কথা শুনে সত্যি আমি অবাক হচ্ছি। কতটা আদিম কালে বাস করছো। যেই কালে ছেলে-মেয়ে একসাথে সমান তালে কাজ করে বাড়ি-বাইরে সব সামলাচ্ছে। আর তুমি ছিহহ।
আদির মা : আমার কথা তোমার এখন সহ্য হবে না এটা স্বাভাবিক। সিমথি যদি এতটাই ভালো হতো তাহলে সিমথির দাদি ওকে দেখতে পারে না কেনো। বিদেশে ছিল এতো বছর নিশ্চয় দেশের সব মেনে চলা সম্ভব হয়নি। আর আমি তো এটা ও শুনেছি বিদেশী মেয়েরা মদ খায়। সিমথি ও নিশ্চয়।
আদিবা : থামো মা প্লিজ। ওদের ফ্যামিলি তে কি প্রবলেম এটা তুমি আমি কেউই জানিনা।
আদির মা : তোকে আমি আগেও নিষেধ করেছি বড়দের মাঝে কথা বলবি না।
আদির মায়ের কথায় আদিবা রেগে যায়।
শাওনের মা : আচ্ছা মেঝো। তুই কি সিমথির ভালো গুণ গুলো দেখিস না। একটা কথা জানিস যাদের আমরা অপছন্দ করি তাদের খারাপ দিকগুলোই আমাকে চোখে পড়ে। একটু ভেবে দেখ তো সিমথিকে তুই যতটা খারাপ মেয়ে ভাবছিস ও কি আধো এসব কথা শোনার যোগ্য। কেনো মেয়েটাকে এতো নিচে নামাচ্ছিস।
আদির বাবা : ওর এসব ভেবে লাভ নেই বড় ভাবী। ওর মাথা খা’রা’প হয়ে গেছে। সিমথিকে বিয়ে করে নিজের বাড়ির বউ করার জন্য যেখানে অন্যরা পাগল সেখানে ও সিমথির খুট ধরছে।
আদির মা : তো তাদের ছেলেই বিয়ে করুক না। আমি আমার ছেলের বিয়ে দেবো না ব্যসস। আর হুম আমি একটা শর্তেই সিমথি কে নিজের ছেলের বউ করবো। যদি ও বিয়ের পর ডাক্তারি বাদ দিতে পারে আর ওর এসব মা’রা’মা’রি বাদ দিয়ে মেহেরের মতো ঘরনী মেয়ে হতে পারে।
শাওন : তাহলে তোমার ছেলের জন্য মেয়ে দেখা শুরু করো। সিমথি এসব ছাড়বেও না আর তোমার শর্ত ও পূরণ হবে না।
ইশান : তুমি বড্ড রুড হয়ে যাচ্ছো মেঝো মা। এতে আদি ভাইয়ার উপর কতটা প্রভাব পড়ছে জানো। আদি ভাইয়া চাইলেই সিমথিকে বিয়ে করে নিতে পারতো কিন্তু ও তোমার অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছে আর তুমি কি না।
আদির বাবা : ছেলের মন বুঝার ক্ষমতা হারিয়েছে। কবে না এসবের জন্য আমি আমার ছেলে টাকেই হারিয়ে ফেলি।
আদির বাবা রাগারাগি করে রুমে চলে যায়। উপর থেকে আদি এতোক্ষণ সব শুনছিলো। আদি ও নিজের রুমে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। বুক ছিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। পকেট থেকে ফোন বের করে সিমথির নাম্বারে কল লাগায়।
সিমথি ওটি থেকে বেরিয়ে নিজের কেবিনে আসে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ৫+ মিসড কল। সিমথি স্মিত হাসে। তখনই ফোনটা আবারো বেজে ওঠে।
সিমথি : হুম বলুন।
আদি : এতোক্ষণ কোথায় ছিলে।
সিমথি : সেটা জেনে আপনার কি লাভ।
আদি : ওহ আচ্ছা। সরি। বাই ।
সিমথিকে কিছু বলার না দিয়েই আদি ফোন কেটে দেয়। সিমথি ফোনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। অন্যদিকে আদি চোখ বুঁজে একটা লম্বা শ্বাস টানে।
আদি : না জন্মদাত্রী মা বুঝলো আমাকে আর না যাকে ভালোবাসি সে বুঝলো।
শাওন : আদি রুমে আছিস।
শাওনের ডাকে আদির হুশ ফিরে। নিজেকে সামলে রুমে যায়। শাওনদের সবাই কে একসাথে দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
আদি : কিছু বলবে। সবাই একসাথে এই সময় কেনো।
শাওন : মেঝো মা’র সাথে নিজে গিয়ে কথা বল। হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে সব।
আদি : কি বলবো বলবে একটু। মা তো অলরেডি সিমথির সম্বন্ধে সব ভুল ধারণা পুষে রেখেছে।
মেহের : তো এই ভুল ধারণা গুলো তো ভাঙতে হবে। এভাবে যদি চলে তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।
ইশান : আদি ভাইয়া ভাবী কিন্তু ঠিক বলছে।
আদি : মা আমাকে শর্ত দিয়েছে শুনিসনি তোরা।
আদিবা : তো কি শর্ত মেনে নিবি। ভুলে যাবি সিমথি আপুকে।
আদি : আমি কাউকেই ছাড়তে পারবো না। মা কে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আর সিমথি ওকেও ছাড়তে পারবো না।
মেহের : আমার মতে একবার সিমথির সাথে কথা বলে দেখো।
আদি : কি বলবো আমাকে বিয়ে করতে হলে ডাক্তারি ছেড়ে দিতে হবে
আদিবা : আরে ধ্যাত ডাক্তারি কেনো ছাড়বে। তুই মায়ের সাথে কথা বল।
আদি : মা তো আমার সাথে কথায় বলছে না। আমি সামনে গেলেই মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
শাওন : মায়েরা কখনো সন্তানের উপর রেগে থাকতে পারেনা। তুই একবার গিয়ে মেঝো মার কোলে মাথা রাখ দেখবি মেঝো মা তোকে কাছে টেনে নেবে। তখন না হয় শান্ত মাথায় বলিস।
শাওনের কথায় সবাই সহমত হয়।
______________
সকাল সকাল নিজের কেবিনে তন্ময়দের দেখে সিমথি অবাক হয়। তন্ময় তো কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলো। ফিরলো কবে।
সিমথি : তোরা সবাই এখানে কি করিস।
তন্ময় : দরকার আছে।
সিমথি : ওহ।
মেঘা : এখন তো দশটা অবধি তুই ফ্রি তাই না।
মেঘার কথায় সিমথি ঘড়ির দিকে তাকায়। নয়টা পঁচিশ বাজে।
সিমথি : হুমম কেনো।
রোদেলা : আদি ভাইয়া কে আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায় না।
রোদেলার কথায় সিমথি রোদেলার দিকে তাকায়। সবার দৃষ্টি সিমথির দিকে। সিমথি সবাইকে পরোখ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে তোলার বৃথা চেষ্টা চালায়।
মেঘা : আমাদের সামনে অন্তত এই হ্যাপি লাইফ লিডের অভিনয় টা করিস না। সবার সামনে তুই দারুণ অভিনেত্রী সাজলেও আমাদের কাছে হতে পারিস না।
সিমথি : আমাকে তো ভালোই চিনিস।
তুহিন : সিমথি প্লিজ একটা সুযোগ তো দেওয়ায় যায়। আদি ভাইয়া কেনো এমন টা করেছিলো এটাতো আমরা সবাই জানি। তবে কেনো এমন করছিস বলবি।
তন্ময় : আদি ভাইয়া কে তো এখনো ভালোবাসিস তবে কেনো দূরত্ব বাড়াচ্ছিস।
সিমথি : চুপ করবি তোরা প্লিজ।
মেঘা : কেনো চুপ করবো। নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস ছেলেটাকেও কষ্ট দিচ্ছিস। কারণ টা তো বলবি।
সিমথি : শুনতে চাস। তাহলে শোন। তোদের আদি ভাইয়ের মা কখনো আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করাবে না। আর আমি তোদের ভাইয়া আর তার মায়ের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করতে পারবো না। মা-বাবা না থাকার কষ্ট টা আমি বুঝি। যেই সময়ে ব্যথা পেলে কষ্ট পেলে মায়ের কোলে মাথা রেখে কান্না করার সময় সেই সময় টা আমি নিজের কষ্ট নিজের ব্যথা নিজেকে সামলাতে শিখেছি। ভাইয়া সর্বদা আমাকে আগলে রাখতো। কিন্তু ভাইয়ার অগোচরে আমার সাথে কি কি হতো এটা নিশ্চিত তোদের অজানা নয়। এসব আমি কখনো ভাইয়া বলতাম না। কারণ ভাইয়া কষ্ট পাবে। ভাববে হয়তো সে মা-বাবার দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ। একটা কথা কি জানিস। পৃথিবীতে মা-বাবার ছায়া ছাড়া পথ চলা অনেক কঠিন। আমি সেই সময় পার করেছি আর এখনো করছি তাই মা-বাবা হারানোর কষ্ট টা বুঝি। আর তোদের ভাইয়া আমাকে বিয়ে করলে কখনো সুখী হতে পারবে না। আমার তো নিজের জীবনেরই কোনো লাইসেন্স নেই তো কিভাবে উনাকে জড়ায় বল। হুমম একটা সময় আদিকে আমি নিজের থেকে দূরে সরাতে চেয়েছিলাম অজানা কারণে। অজানার পেছনে সত্যি টা যখন জেনেছিলাম তখন ভেবেছিলাম উনাকে একটা সুযোগ দেওয়ায় যায় তবে ভাইয়ার অনুমতিতে। আমি আদিকে আগে যতটা ভালোবাসতাম এখন ও বাসি। দূরত্ব বাড়িয়েছিলাম দীর্ঘ সময়ের কিন্তু ভালোবাসাটা কমাতে পারিনি বরং বেড়েছিলো। আমি চাইলেও উনাকে ভুলতে পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা। কিন্তু এখন আমি আমার জন্য উনার ফ্যামিলি প্রবলেম টা মানতে পারবো না। উনার ফ্যামিলি বন্ডিং টা ভীষণ সুন্দর আমার দারুন লাগে। আমাদের ফ্যামিলির মধ্যে ভাই-বোনের বন্ডিং ভালো হলেও ফ্যামিলি টা অপূর্ণ। একটা ভালো ফ্যামিলি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আর আমার ভাগ্য সবসময় খারাপ। ছোট থাকতেই মা-বাবা কে হারিয়েছি। আমি মা-বাবা কে বেশিদিন দেখতেও পারিনি। বাবাই ফিল্ডের জন্য দূরে থাকতো তখন আমি অনেক ছোটো।
এতোটুকু বলে সিমথি থামে। গলা ধরে আসছে। ঢোক গিলে কান্না থামায়। পুনরায় বলতে শুরু করে
সিমথি : অল্প বয়সেই মা-বাবা কে হারিয়েছি। তারপর তরী আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই ভুল বুঝলো তাও কিনা একটা ছেলের জন্য। সেই থেকে তরীর সাথেও আমি কথা বলিনা। আমি দাদি উনার কথা কি বলবো উনি নিজেও জানে না আমাকে কেনো অপছন্দ করে। সব অপূর্ণতার মাঝেও আমি ভাইয়া , ইফাজ ভাইয়া রোজ আর তোদের মতো বন্ধু দের পেয়েছি। এতটুকু পেয়েছি তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। আমি খুশি। আর বাকি রইলো আদি। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির মাঝে উনি আমার সবচেয়ে বড় অপূর্ণতা। যেটা কখনো পুরণ করার নয়। আদি আমার ভীষণ শখে পুরুষ।৷ অপরিনত বয়সের ভালো লাগা, প্রাপ্ত বয়সের ভালোবাসা। জীবনের প্রথম পুরুষ উনি আর প্রথম ভালোবাসা ও উনিই। প্রথম ভালোবাসা কখনো ভুলা যায় না। আর আমি উনাকে ভুলতে ও চাইনা। উনি আমার একমাত্র ভালোবাসা হয়েই থাক। সাত বছরে যখন অন্য কোনো ছেলেকে ভালো লাগে নি আগামী সাতশ বছরে ও ভালো লাগবে না। এটা আমার ভালোবাসার বিশ্বাস। তাই উনি অপূর্ণতার মাঝেই থাকুক। নয়তো আফসোস করবো কি নিয়ে। আফসোস করার জন্য হলেও উনি অন্য কারোর হোক। সব পেলে নষ্ট জীবন।
সিমথির কথাগুলো শুনে তন্ময়রা ও চুপ হয়ে যায়। কথাগুলো সত্যি। একটা ও মিথ্যা নয় এটা তন্ময়রা জানে।
আদি : মেঘা একটু প্রাইভেসি দেওয়া যাবে আমাদের।
চলবে,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)