ফিরে আসা পর্ব-৪৪+৪৫

0
1005

#ফিরে_আসা
৪৪
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

পর্দার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে ঘরে। ওই সামান্য আলোতেই দেখা যাচ্ছে অরার মুখটা। প্রশান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। চোখেমুখে তার একরাশ স্নিগ্ধতা। আজ সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে আরশাদ এবং অরা। একে তো গত রাতে আরশাদের বলা কথাগুলোর ধকল, তার ওপরে আবার দীর্ঘ জার্নির ধকল। ক্লান্তিতে চুপসে গেছে অরা। তাই বাড়িতে পা রাখতেই নিজের ঘরে এসে গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না। অরার মুখের ওপরে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে আছে তার চুলগুলো। আরশাদ আলতো স্পর্শে তা সরিয়ে দিতেই ঘুমের ঘোরে কেঁপে উঠলো অরা। নিষ্পলক দৃষ্টিতে আরশাদ তাকিয়ে আছে তার দিকে।

এই মেয়েটার মধ্যে কী আছে কে জানে? নিজের মনের কাছে আরশাদ প্রতিজ্ঞা করেছিল এ জীবনে কারও মায়াজালে জড়াবে না। কিন্তু শেষমেশ মনটাই তার সঙ্গে প্রতারণা করলো। আরশাদ নিজেও জানে না কখন সে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে অরার মায়াজালে, কখন তার শুষ্ক হৃদয়ে ভালোবাসা নামক ঝড়টা শুরু হয়েছে।

প্রথমদিকে আরশাদ নিজেকে আটকানোর প্রবল চেষ্টা করেছিল। ভেবেছিল এসব সে কী করছে? সে তো নারী-বিদ্বেষী আরশাদ হক। মেয়েদের দু চোখে দেখতে পারে না সে। অথচ সেই আরশাদই কিনা শেষমেশ একটা মেয়ের চিন্তায় দিনভর ডুবে আছে! একটা পর্যায়ে এসে আরশাদ নিজেকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা বন্ধ করে দেয়। যখন বুঝতে পারে অরাও একটু একটু করে দুর্বল হচ্ছে তার প্রতি।

আরশাদ কোমল স্বরে ডাকলো, “অরা? অরা ওঠো!”

অরা ঘুমজড়ানো কণ্ঠে বলল, “হুঁ?”

আরশাদ অরার মাথায় হাত রেখে বলল, “উঠবে না?”

“উহুঁ।”

ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে আরশাদ তার মোহনীয় স্পর্শে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো অরার মাথায়। ঘুমের ঘোরেই যেন অরা হারিয়ে যাচ্ছে আরশাদের স্পর্শের মাঝে। যে প্রাণপণ চাইছে এই স্পর্শ যেন কোনোদিনও দূরে সরে না যাক, সারাটা জীবন লেগে থাকুক তার শরীরে।

হঠাৎ অরার খেয়াল হলো কে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার মাথায়? চোখ পিটপিট করে তাকাতেই অরা দেখতে পেলো আরশাদের মুখটা। সঙ্গে সঙ্গে তড়িৎ গতিতে উঠে বসলো অরা। আরশাদের দৃষ্টি এখনো আবদ্ধ তার দিকে। অরা ব্যস্ত হয়ে নিজের এলোমেলো কাপড় ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

“কী ব্যাপার? এমন লাফ দিয়ে উঠে বসলে কেন?”

“কয়টা বাজে?”

আরশাদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, “বেশি না, আড়াইটা।”

অরা আঁতকে উঠে বলল, “কী সর্বনাশ! আমি এতক্ষণ ঘুমালাম? আপনি আমাকে আগে ডাকবেন না?”

“আগে উঠে কী করতে? সারারাত তো না ঘুমিয়েই জার্নি করলে।”

“জার্নি তো আপনিও করেছেন। আপনি আগে আগে উঠে গেলেন কী করে?”

“আমার কম ঘুমিয়ে অভ্যাস আছে।”

“অভ্যাস তো আমারও আছে।”

“এখন তুমি শুধু শুধু তর্ক করছো অরা। চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করে নাও তো।”

আরশাদ সাইড টেবিল থেকে একটা ট্রে এনে বিছানায় রাখলো। ট্রের ওপরে স্যান্ডউইচ আর জুস।

অরা অবাক হয়ে বলল, “আড়াইটার সময়ে ব্রেকফাস্ট?”

“ব্রেকফাস্ট ঠিক না ব্রাঞ্চ। খেয়ে বলো কেমন হয়েছে, আমি নিজের হাতে সব বানিয়েছি।”

“আপনি খেয়েছেন?”

আরশাদ মজার ছলে বলল, “তুমি কি ভেবেছো আড়াইটা পর্যন্ত তোমার জন্য আমি না খেয়ে বসে আছি? আমি তোমার মতো অতটা ভালো মানুষ না অরা।”

অরা খানিক হেসে বলল, “আপনি একা একা এত কষ্ট করতে গেলেন কেন? আমাকে ডাকলেই তো আমি হেল্প করতে পারতাম।”

“হুঁ ভেবেছিলাম ডাকবো, কিন্তু শেষমেশ আর ডাকতে পারলাম না।”

“কেন?”

আরশাদ অন্যরকম গলায় বলল, “তোমার ঘুমন্ত মুখটার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম।”

লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো অরার গালদুটো। লজ্জায় আরশাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরশাদ অরার এই হাল দেখে মুচকি হেসে বলল, “হয়েছে, আর লজ্জা পেতে হবে না। খেয়ে নাও।”

অরা কম্পিত স্বরে বলল, “ফ্রেশ হয়ে আসি?”

“ফ্রেশ হতে হবে না।”

“ব্রাশ তো করতে দিবেন!”

“ঠিক আছে, কিন্তু বেশি সময় নিতে পারবে না।”

ফ্রেশ হয়ে এসে অরা নিয়ে বসলো আরশাদের তৈরি করা স্যান্ডউইচ। এই কয়েক মাসে অরাকে হেল্প করতে করতে আরশাদের নিজের রান্নার হাতও বেশ পেকেছে। অরা তৃপ্তি করে স্যান্ডউইচ খাচ্ছে আর আরশাদ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ভাগ্যিস স্যান্ডউইচ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তার এই চাহনি এখনো খেয়াল করেনি। করলে তো এতক্ষণে লজ্জায় জোঁকের মুখে লবণ পড়ার মতো মিইয়ে যেত।

“অরা?”

“হুঁ?”

আরশাদ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে গাঢ় স্বরে বলল, “কাল রাতে আমি আমার সব অনুভূতিগুলোর কথা বললাম। তুমি তো কিছুই বললে না।”

অরা লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, “আমি আবার কী বলবো?”

আরশাদ হতাশ কণ্ঠে বলল, “কিছুই বলার নেই তোমার? তাহলে কি আমি ধরে নেবো আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে?”

অরা আঁতকে উঠে বলল, “আমি কি একবারও সে কথা বলেছি না-কি?”

আরশাদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “বুঝেছি।”

“কী?”

“তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্যে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে।”

আরও একবার লজ্জায় মিইয়ে গেল অরা।

আরশাদ অবাক গলায় বলল, “কী সাংঘাতিক ব্যাপার অরা! তুমি এত লজ্জা পাও?”

অরা প্রাণপণ কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল, “কই? না তো!”

“অসুবিধা নেই, লজ্জা পেলে তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে।”

এত লজ্জা অরা রাখে কোথায়? মনের মাঝে শতশত প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে তার। ইচ্ছা করছে এই মুহুর্তেই চিৎকার করে আরশাদকে তার ভালোবাসার কথাটা জানিয়ে দিতে। আবার ঠিক পরমুহূর্তেই মনে হচ্ছে, ওই সাহস সে এ জীবনে করে উঠতে পারবে না।

“অরা শোনো, আমি এখন একটু বের হচ্ছি। আজ আমাদের প্রোডাকশন হাউজের লাইসেন্সের জন্য অ্যাপ্লাই করা হবে।”

“তার মানে তো নামও ঠিক করে ফেলেছেন!”

“K Films.”

অরা ঝলমলে কণ্ঠে বলল, “K for Kotha, তাই না?”

“হুঁ।”

অরা মুগ্ধ গলায় বলল, “খুব সুন্দর হয়েছে নামটা।”

আরশাদ জরুরি কিছু বলার ভঙ্গিতে বলল, “Thank You. আজ একটা ছেলে আসবে তোমার সাথে দেখা করতে। ছেলেটার নাম অয়ন। ওকে তুমি একজন আদর্শ ম্যানেজার হওয়ার কতগুলো টিপস দেবে।”

অরা থমথমে গলায় বলল, “নতুন ম্যানেজারও পেয়ে গেছেন?”

আরশাদ কৌতূহল নিয়ে বলল, “নতুন ম্যানেজারের কথা শুনে মুখটা ভার হয়ে গেল কেন? খুব মিস করবে না-কি আমাকে?”

অরার ইচ্ছা হলো এই মুহূর্তে এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে। আজ কী শুরু করেছে ছেলেটা? অরার ইচ্ছা হচ্ছে মাটির ভেতরে ঢুকে লুকিয়ে পড়তে।

আরশাদ আক্ষেপের স্বরে বলল, “তুমি মিস করো বা নাই করো, আমি কিন্তু তোমাকে ম্যানেজার হিসেবে প্রচন্ড মিস করবো। শুটিংয়ে, মিটিংয়ে, রিহার্সেলে, ইন্টারভিউতে – সব জায়গায় তোমার উপস্থিতি মিস করবো।”

অরার গা বেয়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেল। আরশাদ তার উপস্থিতি মিস করবে? সে কি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ আরশাদের জীবনে?

আরশাদ হালকা গলায় বলল, “কিন্তু কী আর করা? কিছু পেতে হলে কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়। আমার কোম্পানির জন্যে এত ট্যালেন্টেড একজন সিইওকে পেতে হলে আমাকে তো আমার প্রিয় ম্যানেজারকে স্যাক্রিফাইস করতে হবেই। আমাকে বেশি মিস করতে যেও না অরা। বাসায় তো সর্বক্ষণ তাঁর আশেপাশেই থাকবো।”

প্রশংসায় বিগলিত হয়ে অরা বলল, “বুঝেছি।”

“আমি সাতটার মধ্যেই ফিরে আসবো। তুমি রেডি হয়ে থেকো। তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।”

“কোথায়?”

“সেটা তো আগেভাগে বলা যাবে না। সারপ্রাইজ।”

হাজার লজ্জা নিয়ে অরা বলল, “আজ কীভাবে সাজবো বলে দেবেন না?”

“আজ নিজের মতো করেই সাজো। তবে শাড়ি কিন্তু মাস্ট।”

“আপনার শাড়ি খুব পছন্দের?”

আরশাদ ঠিক অরার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “না। শাড়িতে তোমাকে পছন্দের।”

“আমাকে শাড়ি দেখেছেন কয়দিন?”

“যে কয়দিনই দেখেছি, তাই পাগল হয়ে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। যখন আমার ম্যানেজার ছিলে তখন প্রতিদিন এমন সুটেড-বুটেড হয়ে আসতে কেন? একদিন শাড়ি পরে এলেই তো তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম।”

দুজনে একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত। চোখে চোখে যেন এতদিনে মনে জমে থাকা সব কথাগুলো বলে দিচ্ছে তারা। আরশাদের চোখে অরা দেখতে পাচ্ছে নিজের জন্যে একরাশ মুগ্ধতা। তার চোখে আরশাদ কী দেখতে পাচ্ছে কে জানে? অরা হঠাৎ লক্ষ্য করলো আরশাদ তার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। অরা প্রাণপণ চাইছে তার কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে যেতে। তবে ভেতর থেকে কিছু একটা এসে আটকে দিয়েছে তাকে। হিমবাহের মতো জমে রইল অরা।

আরশাদ তার ডান হাতটা রাখলো অরার গালে। তার এই সম্মোহনী স্পর্শে দিশেহারা হয়ে পড়লো অরা। নিজেকে আর এই গ্রহের বাসিন্দা বলে মনে হচ্ছে না। আরশাদের দুটো চোখ এতক্ষণ তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন তারা আবদ্ধ তার ঠোঁটের দিকে। আরশাদ একটু একটু করে অগ্রসর হচ্ছে অরার ঠোঁটের দিকে। তার গরম নিঃশ্বাসগুলো আছড়ে পড়ছে অরার মুখের ওপরে। অরার নিঃশ্বাসও ঘন হয়ে আসছে।

আচমকা একটা শব্দে সংবিৎ ফিরে পেলো দুজনে। শব্দটা আরশাদের ফোনের রিংটোনের। আরশাদের এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে ফোনটাকে ধরে আছাড় মারতে। নাহ্! নিজের ফোনকে শুধু শুধু আছাড় মারতে যাবে কেন? আছাড় মারা উচিত যে ব্যক্তি ফোন করে এমন দারুণ মুহূর্তটা নষ্ট করেছে তাকে।

ফোন রিসিভ করে আরশাদ বিরক্ত গলায় বলল, “হুঁ, আসছি!”

আরশাদ চলে যেতেই আয়নার সামনে একরাশ কৌতূহল নিয়ে দাঁড়ালো অরা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো নিজেকে। সে কি এতটাই সুন্দর? বাঙালি মেয়েরা সকলেই কমবেশি সুন্দর। তবে অরা কি এতটাই আহামরি সুন্দর যে আরশাদের মতো মানুষ তাকে ভালোবেসে ফেলেছে?ভালোবাসা-বাসির ক্ষেত্রে সুন্দর চেহারার থেকেও বেশি জরুরি সুন্দর একটা মন। আরশাদ হয়তো সেই মনটারই সাক্ষাৎ পেয়েছে।

মোবাইল হাতে নিতেই অরা লক্ষ্য করলো আননোন নম্বর থেকে ডজনখানেক কল এসেছে। আবারও শুরু হলো এই আননোন নম্বরের উৎপাত। গত তিনদিন রাঙামাটিতে নেটওয়ার্কের বাইরে ছিল বলে এসকল কল আসেনি তার কাছে। অরা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত এসকল নম্বরের পেছনে একজনই আছে। সে আজ একটা নম্বর ব্লক করলেই আগামীকাল নতুন নম্বর থেকে ফোন শুরু করবে। আর ফোন রিসিভ করলে অপরপ্রান্ত থেকে কথা বলবে না। ভালো ঝামেলায় পড়া গেল! এই নম্বরটাও ব্লকলিস্টে ফেলে দিলো অরা।

অয়ন বাসায় এলো সাড়ে চারটার দিকে। ছেলেটা সবে অনার্স প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করেছে। আরশাদ একে কী করে খুঁজে পেয়েছে কে জানে। অয়নের আচার-আচরণে ভদ্রতা মিশে আছে। কথাও বলছে ভদ্রভাবে। বেচারার জন্যে মায়া হলো অরার। দুদিন পরেই তার জীবন জর্জরিত হয়ে যাবে আরশাদের ধমকে।

অয়ন সঙ্গে করে তার ল্যাপটপ নিয়ে এসেছিল। অরা সেখানেই তাকে শিডিউল তৈরি করা শিখিয়ে দিলো। আরও শিখিয়ে দিলো কী করে আরশাদের টিমের সকলকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কোনো ঝামেলার সম্মুখীন হলে কী করে তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া যায়। তার থেকেও বড় কথা শুটিং শেষে আরশাদের রাগকে কী করে ঠান্ডা করা যায়।

ঘন্টাখানেক পর চলে গেল অয়ন। অরা ক্লান্ত ভঙ্গিতে টিভির সামনে বসলো। সামনে টিভি চললেও তার হাতে ফোন। এই বদভ্যাস কিছুদিন যাবত শুরু হয়েছে তার। একসঙ্গে ফোন ও টিভি দুটোই চাই। টিভিতে দেখার মতো কিছু নেই বলে গানের অনুষ্ঠান ছেড়ে রেখেছে অরা, রবীন্দ্রসঙ্গীত। গানগুলো এমনভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে যেন যে শুনবে তারই ঘুম চলে আসবে। ফোনেও দেখার মতো কিছু নেই। ফেসবুকের নিউজ ফিডে অলসভঙ্গিতে স্ক্রল করে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা ম্যাসেজের নোটিফিকেশন ভেসে উঠলো তার চোখের সামনে।

নতুন একটা আননোন নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে : আমি কিন্তু সব জানি অরা।

অরার বিরক্তি সকল সীমা ছাড়িয়ে গেল। সে বুঝতে পারছে একের পর এক নতুন নম্বর থেকে ফোন করা ওই আগন্তুকই তাকে ম্যাসেজ করেছে।

অরা বিরক্ত ভঙ্গিতে টাইপ করলো : ফাজলামি করছেন? কে আপনি? কী জানেন?

অপরপ্রান্ত থেকে রিপ্লাই এলো : যা জানলে আপনার আর আরশাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।

অরার মস্তিকে চিন্তা খেলে গেল। কে আছে এই নম্বরের পেছনে? তার উদ্দেশ্য কী? কী এমন কথা জানে সে, যা জানলে তার এবং আরশাদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে?

অরা লিখলো : কে আপনি?

রিপ্লাই এলো : সব কথা ম্যাসেজেই বলবো? Pick up the call.

সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠলো ফোনের রিংটোন। ম্যাসেজ প্রদানকারী নিজেই কল করেছে। এতদিন তো অরা ফোন রিসিভ করার পর টু শব্দ পর্যন্ত করে। অথচ আজ আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে চাইছে।

রোবটের মতো একটা কণ্ঠস্বর বলে উঠলো, “আফরোজা অরা! না-কি অরা হক? কোন নামে ডাকবো আপনাকে?”

মোটেও বিচলিত হলো না অরা। আজকাল অনেক মোবাইল অ্যাপ রয়েছে যা ব্যবহার করে নিজের কণ্ঠস্বর বিকৃত করে মোবাইলে কথা বলা যায়। নিজের পরিচয় গোপন রাখার জন্যেই মানুষ মূলত এই নকল কণ্ঠস্বরের আশ্রয় নিয়ে থাকে। গলায় স্বরটা রোবটের মতো হলেও বোঝাই যাচ্ছে এর পেছনে রয়েছে একজন পুরুষ।

অরা থমথমে গলায় বলল, “কে আপনি? নকল ভয়েসে কথা বলছেন কেন?”

অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি আগ্রহ নিয়ে বলল, “আমার আসল ভয়েস শোনার এত তাড়া কেন আপনার?”

অরা ক্রুদ্ধ স্বরে বলল, “আপনিই তাহলে একমাস ধরে আমাকে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে বিরক্ত করছেন? কী চান আপনি?”

“যদি বলি আপনাকে?”

অরা তেজী গলায় বলল, “What rubbish!”

অপরপ্রান্তের রোবট হাসি হাসি গলায় বলে উঠলো, “আরে আপনি দেখি রেগে যাচ্ছেন। ঠাট্টা করছিলাম। আমার চাওয়ার তেমন কিছুই নেই।”

“তাহলে আমাকে বিরক্ত করছেন কেন?”

“সেসব কথা পরে হবে। আগে বলুন, আরশাদ হকের সঙ্গে কেমন চলছে আপনার সংসার?”

অরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “তাতে আপনার কী? আমার সংসার কেমন চলছে তার উত্তর আপনার মতো আগন্তুককে দিতে হবে কেন?”

“মিডিয়ার সামনে তো খুব সুখী দম্পতির অভিনয় করেন। হাতে হাত রেখে রেড কার্পেটে হাঁটা, জন্মদিনে নিজের হাতে কেক বানিয়ে সেই কেকের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করা। How romantic! কিন্তু আসলে যে আপনাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই, এটা কি সবাই জানে?”

অরা কিছুটা ভড়কে গিয়ে বলল, “কী বলতে চাচ্ছেন আপনি?”

“আপনারা তো এক ঘরে থাকেন না। মিডিয়াকে দেখানোর জন্যে একই ছাদের নিচে থাকেন।”

বিয়ের পর থেকে এ বাড়িতে তারা কখনো এক ঘরে থাকেনি। কিন্তু এই খবর তো আরশাদ এবং অরা ছাড়া কেউ জানে না। এমন কী এ বাড়িতে যারা কাজ করে তারাও না। অথচ এই লোকটা জানলো কী করে?

অরা শীতল কণ্ঠে বলল, “Stop your nonsense! কে বলেছে এসব বাজে কথা?”

অপরপ্রান্তের লোকটা চালাকির ভঙ্গিতে বলল, “কাউকে বলতে হয়নি। আমি নিজেই সব জানি। আমি এও জানি যে আপনাদের বিয়েটা হয়েছে চুক্তির মতো। এক বছর পর ডিভোর্স দেওয়ার চুক্তিতে আরশাদ হক বিয়ে করেছে আপনাকে। ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সবাই আরশাদকে ক্যারেক্টারলেস বলে আখ্যা দেয়। নিজের ইমেজ রক্ষা করতে আরশাদ বিয়ে করে আপনাকে।”

আরেকদফা অবাক হয়ে গেল অরা। তাদের এই বিয়ের সত্যিটা তো কারও জানা নেই। অত্যন্ত গোপনীয়তার মাঝে বিয়েটা হয়েছিল তাদের। নিতান্ত অপরিচিত কারোর তো জানার কথা নয় এই সত্যিটা।

অরা দৃঢ় ভঙ্গিতে বলল, “আপনার ফালতু কথা শোনার সময় আমার নেই। আপনি নিজে তো একজন কাওয়ার্ড। কাওয়ার্ডের মতো নিজের আসল ভয়েস আড়ালে রেখে কথা বলছেন।”

লোকটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “আমি কাওয়ার্ড? আপনার কোনো ধারণাই নেই আমি কী করতে পারি অরা।”

“আমার কোনো ধারণা থাকার দরকারও নেই। আর কোনোদিনও যেন আমার এই নম্বরে আপনাকে কল করতে না দেখি।”

ফোনটা কেটে দিয়ে এই নম্বরটাও ব্লক করে দিলো অরা। তবে একটা চিন্তা কিছুতেই তার মাথা থেকে যাচ্ছে না। তাদের বিয়ের সত্যতা, তারা যে এতদিন যাবত একই ঘরে থাকছে না এই সত্যিটা – এই লোকটা জানলো কী করে? কে আছে এই রোবোটিক কণ্ঠস্বরের পেছনে? তাদের বিয়ের সাক্ষী ছিল দুজন। মেহেদী এবং তুফান। অন্যদিকে বিয়ের পুরো পরিকল্পনা করেছিল আরশাদের আইনজীবী হিমেল। এদের মধ্যে থেকে কেউ কি? না, না। এসব কী ভাবছে অরা? এরা তো আরশাদের খুব কাছের লোক। নিশ্চয়ই তাদের অজান্তে বিয়ের এই সত্যিটা জেনে গেছে কেউ। সেই ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে অরাকে।

ঘন্টাখানেক পর একটা অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ তৈরি করেছে আরশাদ এবং অরাকে নিয়ে। নিউজটা এরকম, “আরশাদ হক এবং তার স্ত্রী আফরোজা অরার বিয়ে নিয়ে সামনে এলো নতুন তথ্য। ঘনিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, তাদের বিয়েটা কেবলই জানানো নাটক। সিলেটের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে নিজের ম্যানেজারের সঙ্গে ঘনিষ্ট ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর একপ্রকার বাধ্য হয়েই অরাকে বিয়ে করেন আরশাদ। মূলত নিজের মর্যাদা রক্ষা করার জন্যেই এমনটা করেন তিনি। বিয়েতে তাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বিয়ের এক বছরের মাথায় অরাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবেন আরশাদ। এই বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি আরশাদ এবং অরা।”

নিউজটা নিয়ে ফেসবুকের বেশির ভাগ সিনেমার গ্রুপ এখন সরগরম। যদিও নিউজের সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই, তবুও এ নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে সকলে। নিউজটা সামনে পড়তেই অরার গা বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। তার বুঝতে মোটেও অসুবিধা হলো না এই কাজটা কার। ওই অপরিচিত ব্যক্তির। নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্যেই সাংবাদিকদের কাছে এই খবর ছড়িয়ে দিয়েছে সে।

নম্বরটা আনব্লক করে তাতে কল দিলো অরা। দুটো রিং বাজতেই অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি ফোন রিসিভ করলো।

অরা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, “আপনার সমস্যা কী?”

লোকটা ব্যক্তি রহস্যময় হাসি নিয়ে বলল, “দেখলেন তো অরা, এই কাওয়ার্ডের ক্ষমতা কত দূর।”

“আপনার কী মনে হয়? আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি? আপনি সাংবাদিকদের বলেছেন এক বছর পর আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। এক বছর পর ডিভোর্স হলে তবে তো আপনার কথা সত্যি প্রমাণিত হবে।”

“এক বছর পর ডিভোর্স না হয় নাই হলো। কিন্তু আরশাদ যে নিজের ইমেজ রক্ষা করতে আপনাকে বিয়ে করেছে, একদিন বিয়ে করে সবাইকে দুদিন আগের ডেট জানিয়েছে – এই সত্যি তো আর মিথ্যা হয়ে যাবে না।
সাংবাদিকদের কাছে যা ছড়িয়ে দিয়েছি তার নাম গুজব। আমার কাছে কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ আছে ওই গুজবকে সত্যি প্রমাণ করার জন্যে।”

হঠাৎ অরার মনে হলো লোকটা ঠিকই বলেছে। তারা যে পরিস্থিতির শিকার হয়ে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছে এই সত্যি একবার সকলে জেনে গেলে কিছুতেই তাদের বিয়েটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবে না। আরশাদের ক্যারিয়ারের জন্যেও হবে তা বড় হুমকি।

অরা কম্পিত স্বরে বলল, “কী প্রমাণ আছে আপনার কাছে?”

“সেটা না হয় নাই বললাম। প্রয়োজন না পড়লে কোনোদিন ওই প্রমাণ ব্যবহারও করবো না। কেউ কোনোদিন জানবে না আপনাদের বিয়ের আসল সত্যি কী। কিন্তু তার জন্যে আপনাকে যে একটা হেল্প করতে হবে।”

“কী হেল্প?”

“আজ ঠিক বিকেল ছয়টায় আপনাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে হবে, একা। আধা ঘন্টার মতো কথা বলবো। আপনার আছে আমার একটা দাবি আছে। আপনি দাবি পূরণ করবেন। ব্যাস, তারপর আপনি আপনার রাস্তায়, আমি আমার রাস্তায়।”

“আমাকে বোকা পেয়েছেন? আমি কিছুতেই আপনার সঙ্গে দেখা করবো না।”

“ভয় পাচ্ছেন কেন? আমরা তো পাবলিক প্লেসেই দেখা করবো। আমি আপনার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করবো না। প্রমিজ! আপনি শুধু আমার দাবিটা পূরণ করবেন।”

অরা বুঝতে পারছে না তার কী করা উচিত। সে কি যাবে এই অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে? অরা বেশ বুঝতে পারছে লোকটা তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছে। কোনো না কোনোভাবে সে জেনে গেছে তাদের বিয়ের সত্যতা। হাতে নিশ্চয়ই শক্ত কোনো প্রমাণও আছে। এখন সেই সত্যটাকে কাজে লাগিয়ে অরাকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। কিন্তু কী হতে পারে সেই দাবি? টাকা-পয়সা? না-কি অন্যকিছু?

হাজার দোনমনো শেষে অরা দেখা করতে যাওয়ার জন্যে রাজি হলো। এর পেছনে দুটো কারণ রয়েছে। প্রথমত, লোকটার আছে নির্ঘাত জোরালো প্রমাণ আছে। যে চোখের পলকে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, সে চাইলেই ওই প্রমাণ ছড়িয়ে দিতে পারে সকলের মাঝে। অরা চায় না আরশাদের ক্যারিয়ারে কোনপ্রকার আঁচ আসুক। তাছাড়া যে জায়গায় লোকটা দেখা করতে বলেছে সে জায়গাটা অরার চেনা। দিনভর লোকজন গিজগিজ করে সেখানে। আর বেশি দেরি না করে অরা বেরিয়ে গেল। তাকে তো আবার সাতটার আগেই ফিরে আসতে হবে। সাজতে হবে আরশাদের জন্যে।

ধানমন্ডি ২৭ এর ব্যস্ত রাস্তা। শত শত গাড়ি চলাচল করছে রাস্তা দিয়ে। সন্ধ্যা এখনো মিলিয়ে যায়নি তবুও ঝলমলে আলো জ্বেলে দিয়েছে কমার্শিয়াল ভবনগুলো। একটা বিল্ডিংয়ের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো অরা। তার পেছনে সাদা রঙের একটা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক এই জায়গাতেই দাঁড়াতে বলেছিল লোকটা। ব্যস্ত ভঙ্গিতে হ্যান্ডব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তার নম্বরে ডায়াল করলো অরা। অদ্ভুত ব্যাপার এখন আর ফোন রিসিভ করছে না সে। দেখা করতে বলে নিজেই হাওয়া হয়ে গেল? আরও বেশ কয়েকবার ফোন করলো অরা, কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে কোনপ্রকার জবাব নেই। বিরক্ত ভঙ্গিতে ঘড়ির দিকে তাকালো অরা। আধঘন্টা তো এখানেই পাড় হয়ে গেল। তাকে তো আবার বাড়ি ফিরতে হবে জলদি।

আচমকা খুলে গেল তার পেছনে থাকা মাইক্রোবাসের দরজা। অরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বলশালী একটা হাত এসে পড়লো তার মুখের ওপরে। অরার হাত থেকে তার ফোনটা ছিটকে পড়ে গেল রাস্তায়। পেছন থেকে কেউ একজন তার মুখে হাত চেপে ধরেছে। হাতে আবার একটা রুমাল। অরা ছটফট করছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে। কিন্তু কিছুতেই লোকটার সঙ্গে পেরে উঠছে না। লোকটা আরেক হাত দিয়ে অরাকে গাড়ির ভেতরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রাস্তায় থাকা মানুষজন নিজেদের ব্যস্ততা ভুলে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলো। কিন্তু তার আগেই লোকটা অরাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। প্রবল বেগে ছুটতে শুরু করলো মাইক্রোবাস।

নিজের ওপরে অতর্কিত হামলা করা লোকটার চেহারা দেখতে পারলো না অরা। তার আগেই তার চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো। মাথা ভনভন করতে লাগলো। অরা বুঝতে পারছে সে জ্ঞান হারাচ্ছে। নির্ঘাত ওই রুমালে ক্লোরোফর্ম ছিলো। অরা এও বুঝতে পড়ছে যে সে বিপদে পড়ে গেছে। বিরাট বিপদ, এই বিপদ থেকে তার সহজে নিস্তার নেই।

(চলবে)

#ফিরে_আসা
৪৫
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ঘড়ির দিকে তাকালো আরশাদ। কয়েক মিনিট পরেই ঘড়ির কাটা গিয়ে পড়বে আটটার ঘরে। বেশ দেরি করে ফেলেছে সে। অরা নির্ঘাত তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্যে। দোষটা আরশাদের নয়। ঢাকা শহরের বিখ্যাত ট্রাফিকের বদৌলতেই তো সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাড়ির সামনে গাড়িটা পার্ক করলো আরশাদ।আর গ্যারেজে রেখে এলো না। একটু পরেই তো অরাকে নিয়ে আবার বের হবে সে। আজ সে অরাকে নিয়ে যাবে তিনশ ফিটে অবস্থিত বাগানঘেরা একটা রিসোর্টে। আরশাদ শুনেছে বাগানজুড়ে না-কি বেলি ফুল আর জুঁই ফুলের গাছ। এই দুই ফুলের গন্ধ ওখানকার বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাছাড়া ওই রিসোর্টর ঠিক সামনেই রয়েছে প্রকান্ড এক পুকুর। অরার সঙ্গে পুকুরের জলে পা ডুবিয়ে চাঁদের প্রতিফলন দেখা যাবে।

আবারও আগের মতো হয়ে যাচ্ছে আরশাদ। যে আরশাদ প্রকৃতির মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিতে পারতো। প্রকৃতির ছোট ছোট বিষয়গুলো যাকে বিস্মিত করে তুলতো। সবটাই হয়েছে অরার কারণে। মেয়েটার কারণেই তো নতুন করে নিজেকে খুঁজে পেতে শিখেছে আরশাদ।

গাড়ি থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে কয়েকবার কলিংবেল চাপলো আরশাদ। অথচ ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। অন্যসময় হলে তো সেই কখন ছুটে এসে দরজা খুলে দিতো অরা। আজ তার কী হলো? আরও কয়েকবার কলিংবেল চাপলো আরশাদ। ফলাফল শূন্য। তেমন একটা বিচলিত বলে মনে হলো না আরশাদকে। হয়তো অরা তৈরি হতে ব্যস্ত তাই দরজা খুলতে দেরি হচ্ছে। অপেক্ষা না করে আরশাদ নিজেই লকের পাসওয়ার্ড চেপে দরজা খুলে নিলো।

বসার ঘরের টিভি চলছে। সোফার ওপরের কুশনগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। বোঝা যাচ্ছে এই এখানে বসে ছিল, কিছুক্ষণ আগে উঠে গেছে। আরশাদ সিড়ি বেয়ে উঠে গেল দোতলায়। অরার ঘরের দরজা বন্ধ। একজন ভদ্রলোক কখনো একটা মেয়ের ঘরে নক না করে ঢোকে না। যতই সেই মেয়েটা তার স্ত্রী হোক না কেন। আরশাদ কয়েকবার দরজায় নক করলো। এবারও কোনো আওয়াজ আসছে না ভেতর থেকে।

চিন্তার ভাঁজ পড়লো আর আরশাদের কপালে। অরা তো কখনো এমন করে না। আরশাদ বাড়ি ফিরে এলে সে এক মুহুর্ত নিজের ঘরে থাকে না। অরা ঘুমিয়ে পড়লো না তো? আচ্ছা মেয়েটার কি শরীর খারাপ করেছে? কাল সারারাত না ঘুমিয়ে জার্নি করেছে। শরীর খারাপ তো করতেও পারে।

আরশাদ উঁচু গলায় কয়েকবার ডাকলো, “অরা! অরা!”

নাহ্! কোনো জবাব নেই। এভাবে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করা যায়? এক পর্যায়ে দোনমনো নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো আরশাদ। অরা নেই। বাথরুমে লক্ষ্য করলো – সেখানেও নেই। অদ্ভুত ব্যাপার! মেয়েটা গেল কোথায়? পুরো বাড়ি খুঁজে দেখলো আরশাদ। ছাদটাও বাদ রাখলো। অরা কোথাও নেই।

বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডদের ডেকে পাঠালো আরশাদ।

চিন্তিত গলায় বলল, “তোমাদের ম্যাডাম কোথায়?”

গার্ডদের মধ্যে একজন পরিষ্কার গলায় বলল, “ম্যাডাম তো বাইরে গেছে স্যার।”

আরশাদের কণ্ঠস্বরে চিন্তারা গভীরতর হলো। সে বলল, “কখন?”

“এই তো, বিকেলের দিকে।”

আরশাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, “গাড়ি নিয়ে যায়নি?”

“না স্যার। ম্যাডাম বললেন আধঘন্টার মধ্যে ফিরে আসবেন। তাই আর গাড়ি নেননি।”

“ঠিক আছে তোমরা যাও।”

আরশাদের উদ্বেগ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। বিকেলে আধঘন্টার জন্যে বাইরে বেরিয়ে কেউ যদি রাত আটটায়ও না ফেরে তখন সেটা চিন্তার বিষয়। অরা কোথায় গেছে কে জানে? অরার একটা বদভ্যাস হলো কোথাও যেতে হলে সে কখনোই আরশাদকে জানায় না। অবশ্য জানানোর কিছু নেই, সে স্বাধীন মানুষ। যেখানে খুশি যেতেই পারে। তবে ঘন্টার পর ঘন্টা নিরুদ্দেশ থাকলে সেটা নিশ্চয়ই আগেভাগে জানাতে হয়।

বিরক্ত ভঙ্গিতে অরার নম্বরে ডায়াল করলো আরশাদ। এতটুকু ভালোবাসাতেই আশকারা পেয়ে গেছে মেয়েটা। নাহ্! এভাবে হবে না। মেয়েটাকে আগের মতোই ধমকের ওপরে রাখতে হবে।

দুটো রিং বাজতেই অপরপ্রান্ত থেকে এক নারীকণ্ঠ বলে উঠলো, “আপনি যে নম্বরটিতে ডায়াল করেছেন, তাতে এই মুহূর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব নয়। কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।”

ভালো যন্ত্রণায় পড়া গেল তো! একটা মেয়ে হঠাৎ এমন নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে। আরশাদ বিচলিত হয়ে মস্তিষ্কের অক্সিজেন অপচয় করলো না। ঠান্ডা মাথায় বসে চিন্তা করতে লাগলো, কোথায় যেতে পারে অরা। কাজের খাতিরে কোথাও গেলে আরশাদের জানা থাকতো। পড়াশোনার খাতিরে কি কোথায় গেছে? হয়তো এমন হয়েছে, আজ ক্লাসে জরুরি একটা নোট দিয়েছে সেটা তাকে তুলতে হবে। তাই সীমার কাছে গেছে। হতেই পারে।

আরশাদ ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ফিরে গেল অরার ঘরে। অরা যেমন গোছানো মেয়ে তার কাছে নিশ্চয়ই জরুরি নম্বরগুলো আলাদা করে লিখে রাখার কথা। অরার বিছানার পাশের সাইড টেবিলেই একটা ডায়েরি পেলো আরশাদ। তার ধারণাই সঠিক হলো। জরুরি নম্বর, গুরুত্বপূর্ণ তারিখ, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ড – সব গুছিয়ে লিখে রেখেছে অরা। এখানেই সীমার নম্বর খুঁজে পেলো আরশাদ। এক মুহূর্তও অপচয় না করে ডায়াল করলো সীমার নম্বরে।

কয়েকটা রিং বাজতেই অপরপ্রান্ত থেকে ফোনটা রিসিভ করে সীমা উৎফুল্ল ভঙ্গিতে বলল, “আরশাদ ভাইয়া! কেমন আছেন?”

আরশাদ জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে বলল, “তুমি বুঝলে কীভাবে এটা আমার নম্বর?”

সীমা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, “আমি আসলে অনেক আগেই অরার মোবাইল থেকে আপনার নম্বর চুরি করেছিলাম। কখনো ফোন করতাম না আপনাকে। আমার প্রিয় সুপারস্টারের ফোন নম্বর আমার মোবাইলে আছে এতটুকুই শান্তি।”

আরশাদ ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে থমথমে গলায় বলল, “অরা তোমার ওখানে?”

“কই? না তো। কেন ভাইয়া? অরা বাড়িতে নেই?”

“না। কোথায় গেছে বলেও যায়নি। ফোনটাও বন্ধ পাচ্ছি। কোথায় গেছে তুমি কি বলতে পারো?”

সীমা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, “অরা তো কাজ ছাড়া সন্ধ্যার পর বাড়িতে থেকে বের হবার মেয়ে নয়।”

“কোনো কাজে যায়নি। গেলে আমি জানতাম।”

“আচ্ছা ভাইয়া আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি। হয়তো আমাদের কোনো ক্লাসমেটের বাড়িতে গিয়েছে।”

সীমার খোঁজ নেওয়ার কতদূর কাজ হবে বোঝা যাচ্ছে না। তীব্র টেনশনে আরশাদের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। মেয়েটা আজ ফিরুক বাড়ি, খবর আছে তার! প্রায় রাত নয়টা বাজতে চলল অথচ অরার কোনো খবর নেই।

একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে যাচ্ছে আরশাদ। টেনশনের সময়ে না-কি সিগারেট নার্ভ শান্ত রাখে। তার ক্ষেত্রে কোনো কাজ করছে বলে তো মনে হয় না। আরশাদের টেনশন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ মোবাইলের নোটিফিকেশনে সংবিৎ ফিরলো তার। নতুন ম্যাসেজের নোটিফিকেশন। একটা প্রাইভেট নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে। একটা ছবি, তার নিচে কী যেন লেখা। ছবিটা দেখেই আরশাদের শিরদাঁড়া প্রকম্পিত করে প্রবল ঝড় বয়ে গেল।

জরাজীর্ণ একটা ঘরের মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে অরা। তার কপালে আঘাতের দাগ। চোখের কাজল লেপ্টে চোখের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। জামার একাংশ ছিঁড়ে গেছে। তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ালো আরশাদ। তার হৃদস্পন্দন এক লাগে বেড়ে গেছে। বুকের ভেতরটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কে করেছে অরার এমন অবস্থা? কার এত বড় সাহস আরশাদ হকের জিনিসে হাত দেবার? সে কি জানে না, একবার তাক নাগালে পেলে আরশাদ তাকে শেষ করে ফেলবে?

নিচের লেখাটার দিকে লক্ষ্য করলো আরশাদ। ইংরেজি অক্ষরে লেখা, “Your girl is now mine!”

আবছা অন্ধকারে ছেয়ে আছে ঘরটা। অরা চোখ মেলে তাকালো তবে আশেপাশে সব ঝাপসা দেখছে। তার মাথাটা প্রবল ঘূর্ণির ন্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কেমন একটা তীক্ষ্ণ গন্ধ ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। দীর্ঘক্ষণ একটা ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশ না করলে যেমন গন্ধ হয়, ঠিক সেরকম। হাত-পা নাড়াবার চেষ্টা করতেই ব্যর্থ হলো অরা। খেয়াল করলো একটা চেয়ারের সঙ্গে শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। সে কোথায়? কে তাকে এখানে নিয়ে এসেছে?

প্রচন্ড এক চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলো অরা। এবারও সফল হলো না। তার মুখে ওপর জোরালো স্কচটেপ আটকে দেওয়া। অরা প্রাণপণ চেষ্টা করলো এই বাঁধন থেকে মুক্তি পাবার। তবে সে খুব ভালো করেই জানে খুব সহজে সে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না। ভয়ে তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ছুটে এখান থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে অরা। কেন যে সে অপরিচিত একটা মানুষের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হলো?

অরার চোখ দুটো বেয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো। আরশাদ নিশ্চয়ই তার জন্যে দুশ্চিন্তা করছে। সে জানে অরা এই অবস্থায় অচেনা একটা জায়গায় বন্দী হয়ে আছে?

হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ কানে ভেসে আসতেই হিমবাহের মতো জমে গেল অরা। এই নিশ্চয়ই সেই অপরিচিত লোকটা। যে তাকে ফোন করে এতদূর পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। অরার হাত-পা শক্ত হয়ে এলো। নিজেকে সজাগ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সে।

লম্বা-চাওয়া একটা লোক এসে দাঁড়ালো তার সামনে। তার মুখে মুখোশ, হাস্যোজ্জ্বল জোকারের মুখোশ। লোকটা ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে আসছে তার দিকে। ভয় একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে অরার সমস্ত শরীরে। কী করতে যাচ্ছে সে? ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলো অরা। তবে তার অগ্নিদৃষ্টি ঠিকই আবদ্ধ লোকটার দিকে।

লোকটা এগিয়ে এসে অরার মুখের স্কচটেপ খুলে দিলো।

সঙ্গে সঙ্গে অরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলল, “কে আপনি? আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? কে আপনি?”

কোনো জবাব নেই। সে মুখোশের ফাঁক দিয়ে দেখে যাচ্ছে অরাকে। অরা বুঝতে চেষ্টা করছে কে এই লোকটা? কী উদ্দেশ্য তার? সে কি অরার কোনো ক্ষতি করতে চাইছে? না-কি তাকে বন্দী করে আরশাদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করতে চাইছে?

আচমকা শিষ বাজানো শুরু করলো লোকটা। ‘মনেরও রঙে রাঙাবো’ গানটা শিষ তুলে গাইছে সে।

অরা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো, “শীষ বাজানো বন্ধ করেন, কে আপনি? আমার কাছে কী চান?”

মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা লোকটা খানিক হেসে বলল, “আপনার কাছে তো কিছুই চাই না। আপনাকেই চাই।”

অরা কিছু একটা বলতে গিয়েই থেমে গেল। এই কণ্ঠস্বর তো তার চেনা। সে জানে মুখোশের পেছনে কে লুকিয়ে আছে। নিজের মনকে যেন বিশ্বাস করতে চাইছে না অরা। এ কী করে সম্ভব? আবারও শিষ বাজাতে বাজাতে মুখোশটা খুলে ফেলল সে।

প্রচ্ছন্ন হাসি হেসে বলল, “সারপ্রাইজ!”

অরা বিস্ময়ে খাবি খেয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সাবের। সাবের তাকে ধরে নিয়ে এসেছে এখানে?

অরা চমকে উঠে বলল, “তুমি?”

সাবের বিজয়ীর হাসি হেসে বলল, “কেমন দিলাম?”

অরা কয়েক মুহূর্ত অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, “বাহ্! তোমার এত সাহস? আমি তো জানতাম তুমি ওয়ার্ড ক্লাস কাপুরুষ।”

সাবের একটা চেয়ার টেনে এনে অরার সামনে বসতে বসতে বলল, “দামী কিছু পেতে হলে একটু সাহস তো করতেই হয়। তোমাকে পাবার বাসনা করেছি।”

“সব চাইলেই পাওয়া যায় না?”

“যায়, হার্ডওয়ার্ক করলে অবশ্যই যায়। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমাকে পেয়েই ছাড়বো। যেদিন তুমি ভরা ক্যাম্পাসে আমাকে অপমান করলে, সেদিন তো ওই প্রতিজ্ঞা আরও দৃঢ় হয়ে দাঁড়ালো।”

সাবেরের ক্ষমতা কতদূর তা খুব ভালো করেই জানে অরা। ভয়টা তার কেটে গেছে। বরং নিজের ওপরে রাগ লাগছে। কী করে সাবেরের মতো নিম্ন বুদ্ধির একটা ছেলের ফাঁদে পা দিলো সে?

সাবের অরার দিকে ঝুঁকে এসে বলল, “তুমি তো শুরু থেকেই আমার ছিলে অরা। মাঝখান দিয়ে বিয়েটা করে ঝামেলা পাকিয়েছ। অবশ্য অসুবিধা নেই। আমি জানি সুপারস্টার সাহেব তোমাকে টাচ পর্যন্ত করেনি।”

অরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আমার বিয়ে কীভাবে হয়েছে সেটা তুমি জানলে কী করে?”

“সব কথা এখনই শুনবে? কথা শোনার জন্যে তো সারাজীবন পড়ে আছে সুইটহার্ট। আমার স্বপ্ন তোমাকে নিয়ে ওয়ার্ড ট্যুরে যাবো। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াবো। খুব শীঘ্রই কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে।”

অরা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “তুমি দোয়া করো যেন ধরা না পড়ে যাও সাবের। একবার ধরা পড়ে গেলে তোমার শরীরের একটা হাড্ডিও আস্ত থাকবে না।”

সাবের কৃত্রিম বিস্ময় নিয়ে বলল, “বাব্বাহ! এত ভরসা সুপারস্টার সাহেবের ওপর? ভালো ভালো!”

সাবের উঠে দাঁড়িয়ে আবারও নতুন একটা স্কচটেপ অরার মুখের ওপরে লাগিয়ে বলল,
“তুমি থাকো, আমি এক্ষুনি চলে আসবো।”

সাবের নতুন কী খেলা শুরু করেছে অরা জানে না। তবে সে জানে আরশাদ ঠিকই তাকে খুঁজে বের করবে। উদ্ধার করবে এখন থেকে। আরশাদ তো নিজের মুখে বলেছে ভালোবাসি। তার ভালোবাসার ওপরে এতৎকি আস্থা অরার আছে।

(চলবে)