#ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো
(৭৮)
” কেমন আছো? সবকিছু ঠিকঠাক? শরীর বেশি খারাপ লাগে?”
তানভীরের প্রশ্ন শুনে রোজী কষ্ট করে একটু হাসার চেষ্টা করলো। ধীরে ধীরে বললো,’ সময় সব ঠিক করে দিবে।’
তানভীর শান্ত দৃষ্টিতে রোজীর ব্যথাতুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ মুখ ফুলে অদ্ভুত লাগছে। ফ্যাকাশে চেহারা মলিন দেখাচ্ছে। মাথায় বেবি হেয়ার চুল গুলো উপরমুখী এলোমেলো হয়ে আছে। হুটহাট এই রোজীকে দেখলে নাও চিনতে পারে। রোজীর হাতের মুঠোয় লাবিবার দুটো হাত। এমনভাবে চেপে আছে যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। মাঝখানে রড়ের বেডাটা না থাকলে যেনো জাপটেই রাখতো নিজের কাছে। এখানে রোজীকে স্পেশাল ট্রিটমেন্টে রাখা হয়েছে। রোজী লাবিবাকে বললো,
‘ বাবা মাকে একবার বলবে আমি এখানে আছি। আমার সাথে যেনো দেখা করতে আসে । ‘
লাবিবা তানভীরের দিকে তাকালো। মিথ্যে বলবে রোজীকে? সে তো জানেই না তার পথ বাবা মা ভাইয়ের কাছে সারাজীবনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। তামিমের সামনে এই আবদারটা করলে এতোক্ষনে অনেক কিছুই হয়ে যেতো। লাবিবা ভেবেছিলো তামিম বংশের অন্যদের থেকে আলাদা। ফিরোজ খান,তানভীর খানের মতো ঘাড়ের রগ ত্যাড়া রক্ত গরম মানুষ না। একদম স্বাভাবিক পুরুষদের মতোই একজন। কিন্তু তার ধারণা ভুল। জীবনের একেকটা পর্যায়ের মুখে না পড়লে মানুষ চেনা যায়না। তামিম ও এদের মতোই একজন। সে কষ্টকে লুকাতে জানে না কিন্তু নিজের পথ থেকে কখনোই সরে যায়না। এর প্রমান সে ফ্লোরার থেকেও পেয়েছে। কত নির্ভূলভাবে কাজ সারে এরা। দিনের পর দিন মানুষটাকে নিজের রাখতে প্রটেক্ট করে গিয়েছে। মেয়েটা বুঝতেই পারলো না। আর এখন এই মেয়েটা জীবনের সাথে জড়িয়ে যাওয়ায় একেও আগলে রাখার চেষ্টায় আছে। রোজী কি আদৌ বুঝবে তামিমকে? দিবে তার দাম?
তানভীর লাবিবাকে ইশারায় কথাটা বলতে নিষেধ করলো। একেতো মেয়েটার এই বিপদ তার মধ্যে এসব জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তাই সে নিজেই জানালো, ‘ অনুমতি নেই। আমি আর ভাই ছাড়া কারো সাথে দেখা করার অনুমতি নেই । ‘
রোজী ছোট্ট করে আওয়াজ করলো, ‘ ও।’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘ আপনার ভাই আসবেনা? আমার সাথে একবারও দেখা করতে আসেনি। ‘
রোজী নীচের ঠোঁটে দাঁত কামড়ে কান্না চাপতে চেষ্টা করলো। বেইমান চোখের জন্য পারলো না। টপ টপ করে অশ্রু ঝরে পড়লো। নিজের অসহায়ত্ব,কান্না, কাউকে দেখাতে চায়না সে।এতোকাল নিজের ভেতরে রেখেছিলো বাকি জীবন ও রাখবে যদি তার এভাবেই কেঁদে যেতে হয়। ছোট্ট জীবনটায় যদি আর সুখের দেখা না মেলে।
‘ তুমি চাও ভাই আসুক?’
রোজী তানভীরের দিকে তাকালো। আরজি জানালো,
‘ বলবেন একটু আসতে? কিছু কথা ছিলো।’
‘ নিজেই ডেকে নাও। ‘
তানভীর পকেট থেকে ফোনটা বের করলো। তামিমের নাম্বারে ডায়াল করে রোজীর দিকে এগিয়ে দিয়ে ইশারায় নিতে বললো। স্কিনে তাকিয়ে রোজীর হাত কাঁপছে নিতে। লজ্জা ভয় অপরাধ বোধ সবগুলোই ঘিরে ধরেছে। কোন মুখে বলবে তামিমকে আসতে?
‘ দেখতে চাইলে আসতে বলো। ‘
ফোনটা তানভীরের হাতে থাকা অবস্থাতেই রিসিভ হয়। রোজী জটপট করে নিয়ে কানে চাপে। কাঁপা গলায় বলে, ‘ হ্যালো। আমি রোজ। ‘
পরিচয় দিয়েই রোজী শান্ত হয়ে যায়। ওপাশ থেকে নিঃশ্বাস এর শব্দ আসে শুধু। রোজী লাবিবা এবং তানভীরের দিকে তাকায়।তানভীর বুঝতে পেরে লাবিবার হাত ধরে সাইডে হাঁটতে থাকে। ফোনের ওপাশে তামিম এখনো কিছুই বলছেনা। তামিম নিশ্চুপ হয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। জীবন তাকে সহজ হতে দেয়না। সে কঠিন ব্যাক্তিও নয়। শুধু নিজের সাথে বোঝাপড়ায় ব্যস্ত থাকে। এ কয়েকদিনে সহজ সরল রোজীকে দেখে মনেই হয়েছিলো মেয়েটা ইনোসেন্ট। তাকে বিশ্বাস করা যায়। জীবনে আরেকবার এই নারীতে আসক্ত হতে তার মন আকুল হয়ে উঠে। কিন্তু না। যে মেয়ে নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করতে পারেনা সে কিভাবে তামিমের বিশ্বস্ত হয়ে উঠবে? রোজীকে রিহাবে পাঠানোর দুইদিন পর ই তামিম শহর ছেড়েছে। ঢাকায় নিজের ফ্ল্যাটে একা থাকে। সেখান থেকেই সকালে রওনা দেয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে আবার মাঝরাতে ব্যাক করে । এভাবেই চলছে জীবন । সোহানা ফিরোজ ছেলেকে এ ব্যাপারে কোনো বাঁধা দেয়নি। তাদের তামিমের একা থাকা নিয়ে কোন অসুবিধা নেই। সৎ শিক্ষায় সন্তান বড় করলে বাবা মা দের কোনো চিন্তা থাকে না। মাইলের পর মাইল দূরত্ব থাকলেও তারা জানে তাদের শিক্ষায় বড় হওয়া ছেলে কখনো ভুল পথে পা রাখবে না। যারা এই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে অক্ষম তারা কোনো দিনই সৎ ছিলো না। আড়ালে আবড়ালে তারা ঠিকই এই বিশ্বাসের অমর্যাদা করে যায়। অতীত সাক্ষী। তামিমের নিজেকে সময় দেওয়া উচিত। একটু স্বাভাবিক হলে ঠিকই ফিরে আসবে সংসারে। সোহানার একটাই কষ্ট ছেলেটাকে সংসারে বাঁধার কতো চেষ্টা করলো পারলো না। ক্যারিয়ারে করে খাবার আসে খান বাড়ি থেকে হসপিটালে। তামিম জানে মায়ের মতো কেউ তাকে নিঃসার্থ ভাবে ভালোবাসবে না। তবুও সে চেয়েছিলো তার স্ত্রী তাকে নিঃসার্থ ভাবে ভালোবাসুক। রোজীর ক্ষেত্রে হতে পারতো। যখন তাদের ফ্যামিলি ইনটেনশন জানতে পারে তখনও চুপ ছিলো। চেয়েছিলো রোজীকে নিজের মতো গড়ে তুলতে। কিন্তু রোজী তাকে ঠকিয়ে দিলো । ফোনের ওপাশে ছটফট করতে করতে রোজী বললো,
‘ আপনি কিছু বলবেন না? ‘
‘ তুমি আমাকে ঠকিয়েছো। ‘
‘ আল্লাহর কসম লাগে এমন কথা বলবেন না। আমি দোষী আমি জানি। আপনাকে অন্ধকারে রেখে আমি দোষ করেছি কিন্তু আপনাকে ঠকায়নি। আপনাকে ভালোবাসার চেষ্টা করে গেছি । আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের সাথে লড়াই করেছি। আমাকে ক্ষমা করুন প্লিজ। ‘
‘ ফোন রাখো। ‘
‘ আমাকে একটুও মিস করেন না? জানেন আমার এখানে ভীষণ কষ্ট হয়। আপনি দেখে যান আমাকে। আসুন না প্লীজ। ‘
‘ আমার রোজ, দাগহীন ভাবে ফুটে যেদিন সৌন্দর্য ছড়াবে সেদিনই আমি তাকে আমার কাছে নিয়ে আসতে যাবো। তার আগে নয়। ‘
তামিম ফোনটা কেটে বিছানার উপর ছুড়ে দিলো। বড্ড অস্থির লাগছে মন। এভাবে কেনো ডাকে? সে কিভাবে সাড়া না দিয়ে থাকবে রোজের ডাকে? তবুও নিজেকে আটকাতে হবে। এই কয়টা দিন তামিম শুধু রোজকে নিয়েই ভেবেছে। মেয়েটার ঐ ফ্যাকাশে চেহারা তার হৃদয়ে গেঁথে আছে। তার চলন, ভীতু এক্সপ্রেশন, মুচকি হাসি সব কিছু মিলে তামিমের মাথায় জেঁকে বসেছে। ভীষনভাবে মিস করছে সে তার রোজকে। দ্বিতীয়বার সে প্রেমে পড়েছে। এই ঠকবাজ মেয়েটার প্রেমে পড়েছে। তাকে আশা দেখিয়ে কাছে এসে দূরে সরে গিয়ে ঠকিয়েছে। নিজেকে শেষ করার এতো প্রয়োজন থাকলে তাকে কেনো শেষ করতে এলো? একাই শেষ হয়ে যেতো। ক্ষততে মলম না লাগিয়ে ঘা টা আরো কাঁচা করে গেলো। এই কাঁচা ঘা তাকেই সারিয়ে তুলতে হবে। ছাড়বেনা তামিম রোজীকে। একদম ছাড়বেনা। তাকে ঠকানোর জন্য এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য হলেও রোজীকে শাস্তি পেতে হবে।
কয়েকদিনেই রোজীর দেওয়া আঘাতগুলো মাথা থেকে ঝাড়িয়ে ফেলে তামিম। ফিরে আসে নিজের স্বাভাবিক জীবনে। নিজ বাড়িতে ফিরে এসে বাবাকে জানায় সে ব্যবসায় জয়েন করবে। তামিমের সিদ্ধান্তে ভীষন খুশি হয় পরিবারের প্রত্যেকে। তামিমকে ব্যাক করতে দেখে শান্তি অনুভব করে। বাড়িতে গুমোট ভাবটা ছেড়ে যায়। প্রাণচ্ছোল হয়ে উঠে। লাবিবার ইনকোর্স পরিক্ষা ছিলো এসবের মধ্যেই। সেজন্য তানভীর লাবিবাকে গ্ৰামে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। এখানে থাকলে এসব নিয়েই পড়ে থাকবে মেয়েটা। এটা ওটা শুনবে আর পড়াশোনা করতে বসে সেসবই ভাববে। গতবার ফাইনাল এক্সামের রেজাল্ট ভুলেনি। তার জন্যই রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। পরিবারে একটার পর একটা ধাক্কা আসে। এসবের মাঝে যারা গুরুদায়িত্ব বিশেষ করে বাড়ির বউরা থাকে তাঁদের এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। ভালো রেজাল্ট করতে হলে এসবের মাঝেই করতে হবে নয়তো সংসার করো চুটিয়ে। সেজন্যই তানভীর শ্বশুড়ের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়েছিলো কিন্তু লাবিবার জন্য হয়ে উঠেনি। লাবিবার পরিক্ষাকালীন সময়ে মাত্র দুই দিন গিয়েছিলো তানভীর। সেটাও লাবিবার জেদের কারণে। তানভীরের উপস্থিতিতে লাবিবা সবকিছু ভুলে বসে। তার জীবনের একমাত্র প্রায়রিটি হয়ে উঠে তানভীর। লাবিবাকে বাবার বাড়ি পাঠানোর বুদ্ধিটা ইসমাইলই তানভীর কে দিয়েছে। এতে মেয়ের পড়াও হবে আবার মেয়েকে নিজের কাছেও রাখা হবে। তানভীর ভাবলো নিউজটা লাবিবাকে জানানো যাক যে ভাই ব্যবসায় জয়েন করছে। ভীষন খুশি হবে। ভাইকে নিয়ে একটু হলেও চিন্তায় ছিলো। চিন্তার অবসান হোক। লাবিবার ফোনে একটা টেক্সট পাঠিয়ে দিলো।
তামিমের বিজনেসে কোনো ধারণা নেই। তানভীর তাকে হেল্প করছে। অল্পদিনেই শিখে ফেলবে আশা করা যায়। তামিম কিছুদিন অফিসে বসেই বললো তার দ্বারা হবেনা। ফিরোজ খানের কড়া নির্দেশে তাকে বাধ্য হয়েই ব্যাপারগুলো বুঝতে হচ্ছে। কর্মচারীরাও তামিমকে বিভিন্ন দিকে অবগত করে। বিশেষ বিশেষ মিটিং এ তানভীর স্বয়ং উপস্থিত থাকে যেনো নিউ কামার তামিম কোনো ভুল না করে ফেলে। হসপিটাল বিজনেস নিয়ে তামিম দিব্যি আছে। শুধু শূন্যতা অনুভব হয় রাতে ঘরে ফিরলে। ভীষন ভাবে মিস করে কয়েকদিনের অতিথিকে। অতিথি অতিথিই হয়ে রবে নাকি ঘরণী রুপে ফিরে আসবে তামিমের জানা নেই। সেদিনের পর তামিম অনেক বার গিয়েছে রিহাবের সামনে। গাড়ি থেকে নামেনি। রোজীকে দেখলে যদি শূণ্যতা আরো বাড়ে? কি করে থাকবে সে? তামিম গভীরভাবে উপলব্ধি করে। মেয়ে জাতি বিশাল ক্ষমতার অধিকারী। তারা চাইলে পুরুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে আবার চাইলে শূন্যে ভাসিয়েও দিতে পারে ।
রেগুলার গল্প দিচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ বলেন। কেউ ছোট ছোট বলে মাথায় তুলবেন না। প্রতিদিন গল্প লিখি কতোটা ধৈর্য্য আমার একবার ভাবুন তারপর তারিফ করুন 🙃। মাঝে মাঝে প্রব্লেমের কারণে এক দুইদিন গেপ যাবেই ঐটাকে বলবেন ব্যাপার না। প্রব্লেম সলভ। সব সমস্যার সমাধান লাব্বু দিবে।
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(৭৯)
লাবিবার পরিক্ষা শেষ দুইদিন হয়েছে। তানভীর যায়নি তাকে নিয়ে আসতে। সেজন্য লাবিবার ভীষণ অভিমান। লাবিবা কিছুতেই বুঝে পায়না তানভীরকে। যখন বউ কাছে থাকে বউ ছাড়া তার কিছুই চলেনা যখন বউ দূরে থাকে বউয়ের কথা মনেই থাকে না। এই লোককে মোটেই হাত ছাড়া করা যাবেনা। কোনো ফোন না টেক্সট না কিছুই না। এভাবে চলতে দেওয়া যায়না। লাবিবা কিচেনে গিয়ে দেখলো রান্না হচ্ছে খাসির মাংস আর ডিম ভোনা। খাসির মাংস লাবিবার বেশ পছন্দের। কিন্তু তানভীরের পছন্দের কিনা জানা নেই। তবুও সুযোগটা নেওয়াই যায়।
‘ আম্মু কি রান্না করো? মাটন! ওয়াও খান সাহেবের খুব প্রিয়। ‘
‘ কই ছেলেটাতো মাটন অল্প খায় দেখলাম। ‘
‘ এতো এতো পদ রান্না করো কোনটা রেখে কোনটা খাবে? দু একটা তরকারীর সাথে যদি দাও তখন দেখবে মাটন ছাড়া কিছুই নিচ্ছে না। বিশ্বাস না হলে দেখতে পারো। ‘
‘ ফোন কর না তানভীরকে। একসাথে লাঞ্চ করে যাক। আমি রুই মাছটাও ভোনা করি সাথে বেগুন ভাজি।’
লাবিবা রুম থেকে সাবিনার ফোনটা নিয়ে আসে।
‘ নাও ফোন দাও। ‘
‘ দেখছিস না কাজ করছি। তুই দে। ‘
‘ আমার কথা শুনে আসবে কেনো? লাঞ্চ করতে? এটা ভাবাও ভুল ওকে? তোমার কথা শুনে যদি আসে তুমি বলো। ‘
‘ আচ্ছা ধরিয়ে দে। ‘
লাবিবা সাবিনার কানে ফোন ধরে আছে। সাবিনার হাতে মাছের বাটি। ভাজার জন্য ম্যারিনেট করছে। রিসিভ হতেই সাবিনা জিজ্ঞেস করে,
‘ বাবা কোথায় আছো এখন?’
‘ কলেজে আম্মু। কিছু হয়েছে?’
‘ কলেজ থেকে সোজা চলে আসবে। একসাথে লাঞ্চ করবো। মাটন করেছি। তোমার নাকি মাটন পছন্দ?’
‘ মাটন?’ তানভীর কনফিউজড হয়ে গেলো। তার কবে মাটন পছন্দ? তার পছন্দ বরাবরই বিফ।
‘ হুম। লাবি মা বললো। ‘
‘ আমার লেট হবে আম্মু। ‘
‘ কাজ শেষ করেই এসো। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
তানভীর এলো পড়ন্ত বিকেলে। ছাদে ফুল বাগানে লাবিবা ছোট ভাইবোনদের নিয়ে বসে আছে। একেকটা এমন দুষ্টু হয়েছে , পাকা পাকা কথা বলছে আর হাসতে হাসতে গলে যাচ্ছে। লাবিবা ঠোঁট টিপে হাসছে আর গোধূলি বেলার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে সন্ধ্যা মালতী ফুল। মেজেন্টা রংয়ের এই ফুল হাতে ঘষে হাতের তালু গোলাপী রঙের হয়ে গেছে। গাড়ির আওয়াজ পেতেই সবাই দৌড়ে গিয়ে রেলিং ধরে উঁকি দিলো। ” দুলাভাই এসেছে দুলাভাই এসেছে বলে হৈ হৈ করে উঠলো। একসাথে ছুটলো সিড়ি বেয়ে। দুলাভাইকে কে আগে গিয়ে ধরবে প্রতিযোগিতা হবে। লাবিবা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে উঠলো না। আলসে মেয়ে একটু ফাঁকে সন্ধ্যা মালতী গাছের দিকে হাত বাড়ালো। স্পর্শ করতে পারলো না। পিঠ বাঁকিয়ে টানা দিয়ে একমুঠো ফুল হাতে তুলে নিলো। একটা একটা করে দুটো দুটো করে ঘসতে লাগলো। হাতের তালু পরিপূর্ণ রঙিন হয়ে উঠলো। দেখে মনে হবে সত্যি সত্যি রং লাগিয়েছে। কিন্তু এটা ফুলের রং।
তানভীরের দুই হাতে ঝুলছে দুই পিচ্চি আর ঘাড়ে উঠেছে একজন। বাকিগুলো পা আর কোমড় জড়িয়ে ধরেছে। ওদের হৈ হুল্লোড় কিচিরমিচির পাখিদের মতো মনে হচ্ছে। বাড়ির গেইটের সামনে এই অবস্থায় দেখে রাস্তা দিয়ে গ্ৰামের পথযাত্রী কেউ কেউ হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ তানভীরকে ডেকে ডেকে মজার মজার কথা বলে যাচ্ছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রুপালী হো হো করে হাসছে। তানভীর বুঝতে পারলো এরা ছাড়বেনা। কিছু একটা করতে হবে। হাত থেকে ছাড়পোকা দুটোকে নামিয়ে দিয়ে পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে। পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে বলে,
‘ সামনের দোকান থেকে সবাই চিপস খেয়ে আসো যাও।’
‘ বড় নোট নিবে না। দুলাভাই ছোট নোট দেন। ‘
‘ ছোট নোট তো নেই শালিকা। ‘
‘ তাহলে খুচরা নোট দেন। ‘
‘ ছোট নোট কোনটা খুচরা নোট কোনটা?’
‘ লাল নোট আর সবুজ নোট। ‘
‘ ফিরোজা রঙের নোট আছে চলবে?’
‘ দেন দেন। ‘
তানভীর দুটো একশ টাকার নোট বের করে দিলো। টাকা নিয়ে বাচ্চারা ছুটলো রাস্তা দিয়ে। তানভীর ডেকে বললো, ‘ এই ফুটপাত দিয়ে যাও। সাবধানে। ‘
তানভীর লাবিবাকে নিচে না পেয়ে ছাদে চলে এলো। লাবিবাকে দোলনায় বসে থাকতে দেখে পা দিয়ে সিড়ির দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে এলো। লাবিবা তখনও আকাশের দিকে তাকিয়ে। তানভীর সামনে এসে দাঁড়াতেই মনে হলো আকাশটা বেশি সুন্দর লাগছে। মৃদু বাতাসে নাকে ভেসে আসছে তানভীরের পারফিউমের স্মেল। তানভীর লাবিবার মুঠোতে সন্ধ্যা মালতী দেখলো। মৃদু হেসে দুটো ফুল নিয়ে কানের পাশে গুঁজে দিলো। লাবিবা মুখ নামিয়ে তানভীরের দিকে তাকালো। তানভীর ঢিল বেনুনীটা পেছন থেকে সামনে একসাইডে এনে রাখলো।
‘ এখন সুন্দর লাগছে। আমার সন্ধ্যা মালতী। ‘
লাবিবা হুট করেই দাঁড়িয়ে তানভীরের বুকে হাত লাগলো। সাদা শার্টে হাতের ছাপ পড়ে গেলো। তানভীর বুঝে উঠতেই পর পর কয়েকটা হাতের ছাপ পড়ে শার্টটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেলো। তানভীর জানতো তার রাণীর অভিমান হয়েছে। রাগ দেখাবে নয়তো গাল ফুলাবে অথবা তার নামেই তার কাছে নালিশ জানাবে। এভাবে এট্যাক করে বসবে ভাবতে পারেনি। লাবিবার হাত মুচরে ধরলো, ‘ কি করছো?’
লাবিবা হাত ছাড়িয়ে নিলো। অভিমান মিশ্র কন্ঠে রাগ দেখালো,
‘ এখানে কেনো এসেছেন? আপনার তো বউ নেই। বউহীন পুরুষ। ‘
‘ তো মেডাম আপনি যেনো আমার কে? ‘
‘ জানিনা। ‘
‘ জানেন না?’
‘ না। ‘
তানভীর লাবিবার মাথার পেছনের চুল মুঠি ধরে মুখের সামনে নিয়ে এলো। গালে নাক ঘষে বললো,
‘ এবার বলুন জানেন না আপনি আমার কে?’
‘ আহ। ছাড়ুন। ব্যথা পাচ্ছি। ‘
তানভীর একটু নরম করে ধরলো। তবে ছেড়ে দিলো না। আরেক হাত লাবিবার কোমড়ে গলিয়ে দিলো। নেশাক্ত ভয়েজে বললো, ‘ রুমে চলুন। বুঝিয়ে দিচ্ছি আপনি আমার কে । ‘ লাবিবার ব্যাথাতুর মুখটায় নিমেষেই লাজুক আভা ছড়ালো। তানভীর দুষ্টু হাসলো। চুল ছেড়ে
দুহাতে বুকের উপর তুলে নিলো। কানে ফিসফিসিয়ে বললো, ‘ আপনি আমার একমাত্র ভালোবাসার বউ , আমার জীবনের রাণী। ‘ লাবিবা জেতার চেষ্টা অব্যাহত রাখলো।
‘ দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন। ‘
‘ দিন দিন ভোজপুরি হিরোইন যে টপ লেভেলে পৌঁছে যাচ্ছেন। ‘
‘ উফ! ‘
তানভীর লাবিবাকে পাজাঁকোলে তুলে নিলো। থুতনিতে হালকা কামড়ে দিয়ে বললো,’ উফ টু!’
হালকা আকাশি রঙের শার্ট পড়ে খেতে বসেছে তানভীর। পরে আসা শার্টটা নষ্ট ই করে দিলো। দাগ আদৌ উঠবে কিনা ভালোভাবে জানা নেই। সাবিনা খুব যত্ন নিয়ে পরিবেশন করেছে জামাইয়ের জন্য। লাবিবার কথা অনুযায়ী অল্প আইটেম রেখেছে ডিনারে। কথা ছিলো মাটন বেশি নিবে তানভীর। তা না বেশী নিলো লাবিবা। ভাত ছেড়ে শুধু মাংস খেতে বসেছে। সাবিনা দু বার চোখ রাঙিয়ে বলে গেছে ভাত দিয়ে খেতে। লাবিবা শুনলে তো! মেয়েটা একদমি ভাত পছন্দ করে না। বাঙালি হয়ে যদি ভাত না খায় তাহলে কি চলে? সাবিনা আশেপাশে নেই দেখে তানভীর ভাত মাখিয়ে লাবিবার মুখের সামনে ধরলো, ‘ হা করো। ‘
‘ উহু। খাবোনা। ‘
‘ হা করতে বলেছি। ‘
ধমক খেয়ে মুখে পুড়ে নিলো। তানভীর লাবিবার প্লেটটা সামনে থেকে সরিয়ে রাখলো। নিজেই ভাত মাখিয়ে খাওয়াতে লাগলো। নিজেও খেলো। লাবিবাকে বললো,
‘ আমি বিফ লাইক করি। তোমার বিফে কি প্রবলেম? এলার্জি?’
‘ একটু। ট্যাবলেট নিলেই শেষ। ‘
‘ তাহলে?’
লাবিবা চুপ থাকলো। উত্তর দিতে পারলো না। আমতা আমতা করতে লাগলো। তার উত্তরটা তানভীরই একটু একটু করে ধরিয়ে দিলো,
‘ প্রেশার বাড়ে? ‘
‘ তেমন না। ‘
‘ রক্তচাপ তো বাড়ার কথা। ‘
‘ তেমন না। ‘
‘ অন্যকিছু? ‘
খাওয়া ছেড়ে তানভীর লাবিবার চোখে চোখ রাখলো। ধীরে ধীরে আওডালো, ‘ নাউ য়্যু য়্যার ম্যারিড না? ‘
লাবিবা চোখের পাতা বন্ধ করতেই তানভীর চোখ সরিয়ে নিলো। দাতে দাঁত চেপে বললো, ‘ স্ট্যামিনা বাড়াতে হবে। আজ থেকে মাটন আউট বিফ ইন । মনে থাকবে?’
‘ থাকবে না।’
‘ আমি আছি কি করতে?’
তানভীর বাড়ি ফিরলে সোহানা জিজ্ঞেস করল,
‘ লাবিবা কোথায়? সাথে আসেনি?’
‘ না। ‘
‘ বাড়িটা খালি খালি লাগছে। আমি ছেলে বউদের বাড়িতে দেখতে চাই। ‘
‘ অপেক্ষা করো। ‘
তামিম সোহানার কথা দাঁড়িয়ে শুনছিলো। কিছু একটা মনে পড়ার ভঙি করে বললো, ‘ মম তানভীরের তো ম্যারেজ এনিভার্সারি তিনদিন পর। এই তিনটা দিন মনে হয় তোমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। ‘
‘ এর জন্যই নিয়ে আসছিস না? ‘
তানভীর মাথা নাড়ালো । ‘ তোমার ছেলের বউকে সারপ্রাইজ দিবো ভাবছি। এখন একটু প্যারায় রাখবো। যেনো ডেট টা মনে না পড়ে । ‘
সোহানা হাসলো। তামিম তানভীরের কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘ তোদের বিয়েতে তেমন কোন গিফট ই দেওয়া হয়নি। সারপ্রাইজ পার্টিটা আমার পক্ষ থেকে রইলো। ‘
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা