আবার প্রেম হোক পর্ব-৫৭+৫৮+৫৯

0
757

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫৭.
গা তার কৃষ্ণবর্ণের,পরণে পাহাড়িয়া শাড়ি।চুল উঁচু করে খোপা করা,থুতনীতে তিনটে কালচে বিন্দু।নাকে বড়সড় এক নথ আর চোখে মোটা করে দেওয়া কাজলরেখা।হাতে আছে তামাটে বর্ণের মোটা দু’খানা বালা।শাড়িটাও খানিকটা উচু করেই পরা।শ্যামবর্ণের পা যুগোল নজরে পরতে বাধ্য,উচ্চতা তার মধ্যম ধাচের।যত গন্তব্যের নিকট পৌঁছাচ্ছে হৃদযন্ত্র বেগতিক বাড়ছে তার।তবুও নিজেকে যথেষ্ট সামলে এগিয়ে যাচ্ছে।তার যে যেতেই হবে!অতঃপর অপেক্ষার অবসান ঘটলো।সে এসে পৌঁছালো তার কাঙ্ক্ষিত স্থানে এবং পা বাড়ালো পাশের নেমপ্লেটে বড় করে লিখা ‘রাজ ভিলায়’।পাশে আছে তারই বয়সের আরেকজন।দুজন একে অপরের হাত ধরে এগোয় সামনের দিকে।কৃষ্ণবর্ণের মেয়েটা ঘুরে ঘুরে সবটা দেখতে লাগলে কেউ একজন কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে,

“এই কে রে?এই কালা ছেড়িডা কেডা?”

হঠাৎ শোনা বাক্যে ভয় পেয়ে যায় মেয়েটা।আড়াল হয় তার পাশে থাকা অপর মেয়ের পিছু।তার পাশের মেয়েটা বলে,

“আপা ও এখানে নতুন।আমি এনেছি”

তখনই আরেকটা মেয়ে আসে।এসে জিজ্ঞেস করে,

“কোথা থেকে এনেছো লিমা?”

লিমা উত্তর দেয়,

“মেয়েটা খুব গরীব।বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু স্বামী খুব মা!রধর করে তাই পালিয়ে এসেছে।আমার এক খালার পুরাতন কাজের লোকের কেমন আত্মীয়।কাজ করতে এসেছে।পরে যখন এখানকার কথা বললাম।রাজি হলো”

মেয়েটা কৃষ্ণবর্ণের মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে,

“তাই নাকি?আগেও এসব করেছো?”

“কা তি লো” [না করিনি]

মেয়েটা ভ্রু কুচকে বলে,

“কী বললো?এই মেয়েটা কী বললো রে লিমা?”

লিমা বলে,

“আসলে আপু ও তো মিজোরামের।মিজো ভাষা ছাড়া অন্য ভাষা বলতে পারেনা”

“তো আমার কথা বুঝলো কী করে?”

“বাংলা ভাষা বুঝতে পারে।কিন্তু বলতে পারেনা”

“আর তুমি ওর ভাষা বুঝছো কী করে?কথা বলো কিভাবে?”

“খালার বাসায় গেলে ঐ আন্টি থেকে টুকটাক শিখেছি”

“আচ্ছা আচ্ছা!এই মেয়ে নাম কী তোমার?”

“কা হামিং চু মাহুয়া আ নি” [আমার নাম মহুয়া]

“কী?”

লিমা বলে,

“ওর নাম মহুয়া আপু”

“তো মহুয়া কাজ কী ঠিকঠাকভাবে লিমা বুঝিয়েছে তোমাকে?”

“ইয়েস উনাউনু” [জ্বি আপু]

“ইয়েস মানেতো বুঝেছি।উনাউনু কী?”

লিমা জবাব দেয়,

“উনাউনু মানে আপু।মহুয়া বলেছে জ্বি আপু”

“কিন্তু এরকম মেয়েকেতো মনে হচ্ছেনা কেউ পছন্দ করবে বলে।খানিকটা কালোতো”

“নাথাওকতু আঙ্গা মিন ভাওন রেঙ চুয়ান হারসাতনা আ আওম লো” [আমাকে কাজের লোক হিসেবে রাখলেও সমস্যা নেই আপু]

কপাল কুচকে মেয়েটা বলে,

“কীরে লিমা?”

“বলছে কাজের লোক হিসেবে রাখলেও ওর আপত্তি নেই।সব করে দেবে”

“না,আগে দেখি কেউ চয়েজ করে কিনা”

মহুয়া লিমাকে বলে,

“গায়োয়ি রেং রোহ” [চুপ থাকো]

লিমা তা শুনে মহুয়াকে বলে,

“ঠিক আছে”

সেই মেয়েটা লিমাকে জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে?”

“ওকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে আসি আপু?”

কপাল কুচকে মেয়েটা বলে,

“সব না বুঝিয়েছো?”

“না আপু।শুধু বলেছিলাম নাচগান করতে হবে।বাকিটুকু বলিনি”

“রাজি হবে?”

“রাজি না হলেও কাজের লোক হিসেবে রেখে দেওয়া যাবেনা?মেয়েটার খুব কষ্ট।পরে যদি কেউ পছন্দ করে।তখন নাহয়?”

“আচ্ছা ঠিক আছে।আগে দেখো রাজি হয় কিনা।জোর করেতো কিছু করায় নিষেধাজ্ঞা আছে।যাও”

“ঠিক আছে আপু”

কথাখানা বলেই মহুয়াকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে এগোয় লিমা।অতঃপর ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে মেয়েটাকে বিছানায় বসিয়ে খুব সাবধানী গলায় বলে,

“এজন্যই তোমায় আনতে চাইনি আপু।এখন যদি কেউ তোমায় চেয়ে বসে?তুমি এসবে কেনো আসলে বলবে?”

“কেউ চাবেনা আর চাইলেও আমার পরিকল্পনা আছে লিমা”

“কিন্তু আপু আমার বড্ড ভয় করছে”

“এমন এক জায়গায় ভয় লাগারই কথা।দেখেতো মনে হচ্ছে পতিতালয় টাইপ”

“ওরা সেটাই বানাতে চায় আপু।দেখোনি?সবগুলো মেয়েই এখানে সুন্দর সুন্দর।কেউ কালো বা দেখতে খারাপ নেই”

“আমার মাথায় অনেক পরিকল্পনাই আছে।আমায় নিয়ে তুমি টেনশন করোনা লিমা।এজন্যই এমন রূপে এসেছি যাতে কারো পছন্দের না হই”

“যদি করে ফেলে?তুমিতো সুন্দরই,শুধু কালো মেকাপ করেছো”

“সেসব নিয়ে ভেবোনা।তুমি গিয়ে বলবে রাজি হচ্ছেনা ভয় পাচ্ছে।কিন্তু নাচগান করতে পারবে আর সবার আপ্যায়ন করতে পারবে।তাও যেনো রাখে।টাকাপয়সার অভাবতো।বুঝেছো?”

“ঠিক আছে চাঁ…”

চাঁদ লিমার মুখ চে!পে বলে,

“মহুয়া।মহুয়া আমার নাম”

“ঠিক আছে মহুয়া।এখন তুমি কী করতে চাচ্ছো?”

“লোকজন আসবে কয়টা থেকে?”

“সাতটা বাজলেই শুরু হয়ে যায়”

“কিন্তু একটা জিনিস মাথায় আসছেনা।এতো সনামধন্য কলেজের টিচাররা এবং যারা যারা জড়িত আছে এসব কেনো করাচ্ছে?”

“সেটা আমিও জানিনা আপু”

“আচ্ছা সমস্যা নেই।সব জেনে যাবো ধীরে ধীরে”

“তোমার ভয় লাগছেনা?”

খানিকটা হেসে চাঁদ বলে,

“একটু আকটু অবশ্যই লাগছে।কিন্তু আমি ততটা ভয় পাইনা।ভয় পেলে অবশ্যই এখানে আসতাম না”

লিমা চাঁদের হাত ধরতে গেলে চাঁদ বলে,

“ধরও না রঙ উঠে যাবে”

“আপু আমার না সত্যিই খুব ভয় লাগছে”

“আমার জন্য?”

“হ্যা”

“বোকা মেয়ে।ভয় পেও না,কিছু হবেনা”

“কোনো অঘটন হয়ে গেলে?”

“সেটার ব্যবস্থাও আমার কাছে আছে।চিন্তা করোনা।আমি যে করেই হোক এদের কালো মুখোশ দুনিয়ার সামনে আনবোই।এতোগুলো মেয়ের জীবন ন!ষ্ট করার প্রতিদানতো তাদের দিতেই হবে।আর সবকিছুর কারণ উদঘাটন না করলে শান্তিও মিলবেনা”

“অরণ ভাইয়া জানে?তুমি যে এখানে আসবে?”

“না বলিনি”

“কিন্তু কেনো?”

“তুমিও বলবেনা এসব তাকে।আমিই সময় হলে বলবো।নাহয় অযথা চিন্তা করবে,ভয় পাবে”

“চিন্তার করার মতো বিষয় নয় কি?”

রাত আটটা,
লোকজনের সমাগম বেড়েছে যেনো।বিভিন্ন ধরণের পুরুষের আগমন ঘটছে রাজ ভিলায়।ভেতরটা সাজানো হয়েছে খুব সুন্দরভাবে।সপ্তাহের পহেলা দিন এভাবেই রমরমাভাবে আয়োজন করা হয়।দেয়ালে দেয়ালে আলপনা করা।সেই সাথে বিভিন্ন অশ্লী!ল চিত্রকর্মেও সজ্জিত দেয়ালগুলো।সেসবে চোখ পড়তেই চোখজোড়া বন্ধ করে চাঁদ।ঘৃণায় শরীর রি রি করে উঠছে তার।তবুও দাতে দাত চেপে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে।দেখছে সকল কর্মকান্ড।একজন শ্যাম বর্ণের মধ্যবয়স্ক মহিলা একটা উঁচু চেয়ারে এক পা উঠিয়ে অপর পা জমিনে রেখে হাটুতে হাত ঝুলিয়ে পান চিবুচ্ছেন।খানিক বাদে বাদে তর্জনী হতে মুখে নিচ্ছেন চুনও।তারই পাশের এক চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে আম্বিয়ারূপী সেই মেয়েটা।মধ্যবয়স্ক মহিলার অপর পাশে বসে আছে কলেজ ক্যান্টিনের কাশেম বাবুর্চি।তার হাত-পা টিপে দিচ্ছে ছোট ছোট দশ-বারো বছরের কয়েকটা মেয়ে।এমতাবস্থায় সদর দরজা দিয়ে অন্দরমহলে প্রবেশ করেন অনিন্দ্য ঘোষ এবং মাহতিম আনোয়ার স্যার।দুজনের মুখে লেগে আছে বিস্তৃত এক হাসি।মাহতিম স্যার এসেই আম্বিয়ারূপী মেয়েটার সম্মুখে গিয়ে দাড়িয়েই তার ওষ্ঠদ্বয়ে আলতো এক চুমু খান।মেয়েটাও হেসে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।অতঃপর মাহতিম স্যার চেয়ারে বসতেই তার কোলের উপর বসে গলা জড়িয়ে ধরে খোশগল্পে মেতে উঠে।দৃশ্যসমূহ দেখে গা ঘিনঘিন করে উঠে চাঁদের।চোখজোড়া বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।চারিদিকে গানবাজনার আওয়াজে মাথা যন্ত্রণায় ফে!টে যাচ্ছে যেনো।তবুও নিজেকে কেবলই সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে চাঁদ।এই বুঝি মাস্টারমাইন্ডকে দেখার সুযোগ তার হলো!এই বুঝি আম্বিয়ারূপী মেয়েটার মুখোশ টে!নে ধরলো চাঁদ।তবে তার জন্য প্রয়োজন অধীর অপেক্ষার।চাঁদ করবে,সেই অপেক্ষা অবশ্যই সে করবে।এসবকিছু ভাবতে ভাবতেই আম্বিয়ারূপী সেই মেয়েটা তাকে ডেকে উঠে,

“এই মহুয়া,এখানে এসোতো”

হকচকিয়ে উঠে নিজেকে সামলে চাঁদ তার সম্মুখে গিয়ে বলে,

“ইয়েস উনাউনু?” [জ্বি আপু?]

“রান্নাঘর থেকে সবার জন্য মিঠা শরবত করে আনো।অবশ্যই তাতে মিশ্রিত থাকবে অমৃতরূপী অ্যা!লকোহল”

“অ্যা?অ্যা…অ্যাল..কা…আলকাহোল?”

আম্বিয়া মেয়েটা অপর এক মেয়েকে ডেকে বলে,

“এই ইরানি?মহুয়াকে নিয়ে রান্নাঘরে যাওতো।আমাদের স্পেশাল মিঠা শরবত বানানোটা তাকে শিখিয়ে দিয়ে আসো,যাও।”

ইরানি মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আম্বিয়াকে বলে,

“ঠিক আছে আপু।এই মহুয়া চলো”

পরেরদিন সকালে,
প্রচন্ড মাথা ব্যথা নিয়েও ঘুম থেকে উঠতে হয় চাঁদকে।আজ কলেজে যাওয়াটা অতি আবশ্যক।ঘুম থেকে উঠে হাই তুলতে তুলতেই ফোনে কল আসে অরণের।চাঁদ তা রিসিভ করে বলে,

“হ্যালো?”

“কাল ছিলে কোথায়?কলেজে দেখলাম না যে”

“ক্লাস পিরিয়ড শেষে এসে পড়েছিলাম।আপনি হাসপাতাল থেকে আমায় কী করে দেখবেন?”

“কয়েকবার কলও দিয়েছিলাম কিন্তু বন্ধ বলছিলো।কেনো?”

“এয়ারপ্লেন মোডে রেখেছিলাম তাই”

“কিন্তু কেনো?”

“একটা কাজে গিয়েছিলাম অরণ”

“কী কাজ?”

“কাজটা সফল হয়ে গেলেই আপনাকে জানাবো”

“ঐসব কিছু?দেখো চাঁদ আবারও বলছি নিজের ক্ষ*তি করে কোনোকিছু করবেনা”

“চিন্তা করবেন না।কিছু হবেনা আমার।দরকার পড়লে আমি অবশ্যই আপনাকে স্মরণ করবো”

“ঠিক আছে।যেজন্য কল দিয়েছি,আজ আমাদের বাগানের ভেতরে যাওয়ার কথা।আহিন সব ব্যবস্থা করে রেখেছে।ক্লাস টাইমেই যাবো আমরা।আজ ক্লাস করতে পারবেনা,তাই বই টই এনো না”

“ঠিক আছে।আমি সময়মতো পৌঁছে যাবো”

“আচ্ছা।সাবধানে এসো,রাখছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হাসপাতালের বদলে অরণ কলেজ গেটের সামনে নামে,যা দূর হতে মির আর মিরার নজরেও আসে।মিরার দৃষ্টি সে পানে দেখেই মির বলে উঠে,

“এখন তুইও প্রণয়ের মতো অরণকে সন্দেহ করিস না মিরা,হিতে বিপরীত হবে”

“করছিনা।তুই যা আমি আসছি”

“তুই কিন্তু….”

“চিন্তা করিস না।কোনোকিছু ভাবনাহীন বলবোনা।ভরসা রাখ”

“ঠিক আছে।তাড়াতাড়ি আসিস”

মির চলে যেতেই মিরা দ্রুত গতিতে অরণের সামনে এসে দাড়ায়।সবেমাত্রই গেটের ভেতরে পা দিতে নিচ্ছিলো অরণ কিন্তু মিরাকে দেখে থেমে যায় সে।অতঃপর বলে,

“কী?”

মিরা জিজ্ঞেস করে,

“হাসপাতালে যাবি না?”

“আজ আর যাবোনা রে”

“কেনো?”

“একটু কাজ আছে”

“কী কাজ?”

“এমনিতেই একটা কাজ”

“বলা যাবেনা?”

মিরার মলিন কন্ঠস্বর শুনে তার পানে চেয়ে মৃদু হেসে গালে হাত রেখে অরণ বলে,

“অবশ্যই যাবে তবে সময় হোক।সময় হলে সবাইকে বলবো”

“কলেজে যাবি এখন?”

“হ্যা”

“কিছু মনে করিস না তবে একটা প্রশ্ন করতাম”

“তুই কবে থেকে পার্মিশন নিচ্ছিস ডাকিনী?”

খানিকটা রাগ দেখিয়ে মিরা বলে,

“ভালো হচ্ছে না কিন্তু অরণ!”

অল্প বিস্তর হেসে অরণ বলে,

“আচ্ছা আচ্ছা বল”

“ইম….আসলে…মানে…তুই কি…”

“তোতলাচ্ছিস কেনো?যা বলবি বলে ফেল।তোর কথায় কখনো মাইন্ড করিনা,করবোও না।আমি জানি তুই ভেবেশুনেই যা বলার বলবি।বল শুনছি আমি”

“না মানে আসলে হয়েছে কি…. ”

কপাল কুচকে চশমা পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে অরণ বলে,

“ওয়েইট?তুইও কি প্রণয়ের মতো?”

“না না না!এমনকিছুই না দোস্ত”

“আচ্ছা বুঝেছি।আমি চাঁদের সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি।কাজ আছে একটা”

“একটুও বলা যাবেনা?”

“গেলে সেদিনই বলতাম যেদিন প্রণয় যাচ্ছেতাই বলেছিলো”

কথাটা শুনেই দৃষ্টি নত করে মিরা।তা দেখে মিরার থুতনীতে হাত রেখে মাথা উঁচু করিয়ে অরণ বলে,

“পাগলি!এদিকে তাকা।তোর মতো ডাকিনীকে মন খারাপে একদম মানায় না বুঝলি?আর শোন,মনোযোগ দিয়ে শোন।চাঁদ আর আমার মাঝে সত্যিই কিছু নেই।চাঁদকে আমি কেবলই আমার বন্ধুর ভালোবাসা তথা ভাবি রূপে দেখি।অথবা বলতে পারিস একজন ভালো বন্ধু এবং বোন দুটোই মানি ওকে।আর ওর ক্ষেত্রেও একই জিনিস।কিছু কারণবশত আমাদের দেখাসাক্ষাৎ বেশি হচ্ছে আর কিছুইনা।এবং সেসবও তোদের জানাবো সময় হলে”

লম্বা এক শ্বাস টেনে অরণের দুই হাত নিজের দু’হাতে নিয়ে চোখে চোখ রেখে মিরা বলে,

“আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে বিশ্বাস করিনা।তবে তোকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা আমার প্রিয় কাজের মধ্যে একটা”

“অন্ধ বিশ্বাস করিস না তবে বিশ্বাসে কখনো নড়চড় আনিস না,তাহলে ভেঙে যাবো।ভেঙে গুড়িয়ে যাবো”

অরণের ঠোটে তর্জনী রেখে মিরা বলে,

“হিশ!এভাবে বলে না।তোকে বিশ্বাস করা ছেড়ে দিলে ভাববি এ পৃথিবীতে আর….”

মাঝপথে মিরাকে থামিয়ে দিয়ে হাত দ্বারা তার ঠোটজোড়া স্পর্শ করে অরণ বলে,

“ঐ শব্দটা উচ্চারণ করার আগেই নিজ হাতে মে!রে ফেলবো তোকে।বেয়াদব কোথাকার!তুই কোথাও যেতে পারিস না।আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারিস না তুই”

মুচকি হেসে অরণের হাত সরিয়ে মিরা বলে,

“যাবোনাতো,কোত্থাও যাবোনা।এই ডাকিনী কখনো তোর পিছু ছাড়বেনা”

“পিছু ছাড়তে দিলেতো ছাড়বে!”

অতঃপর দুজনে একসঙ্গে হেসে উঠে।হাসতে হাসতেই একে অপরকে বিদায় জানায় তারা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অরণসহ আহিনের পিছু এগোতে লাগে চাঁদ।চারিপাশে এতো মানুষ দেখে খানিকটা অস্বস্তি হচ্ছে তার।বুঝতে পেরে অরণ চাঁদের ডান হাত ধরে চোখ দ্বারা তাকে আশ্বস্ত করে।চাঁদও বিনিময়ে মুচকি হাসে কেবল।দৃশ্যখানা দূর হতে নিজ বিড়ালাক্ষীদ্বারা তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রণয়।অতঃপর তারা সকলে বাগানের ভেতরে ঢুকতেই পাশে থাকা দেয়ালে সজোরে ঘু!ষি মেরে চোয়াল শক্ত করে একের পর এক লম্বা শ্বাস নিতে আরম্ভ করে সে।

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫৮.
“এই বেয়াদব মেয়েটা এখানে কী করছে আহিন?একে কেনো এনেছো তুমি?”

অধিরাজ শেখের কঠিন বাক্যে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তার পানে চাইতে বাধ্য হয় চাঁদ।চাঁদের অগ্নিদৃষ্টি যেনো অধিরাজ শেখের শরীরে আ!গুন ধরিয়ে দিলো।তিনি ফের আহিনকে বললেন,

“এই মেয়েকে এক্ষুনি এখান থেকে যেতে বলো।যেতে বলো আহিন”

তখনই অরণ চাঁদের হাত শক্ত করে ধরে অধিরাজ শেখকে বলে,

“আংকেল চাঁদকে আমি এনেছি।আহিনেরও এতে কোনো সমস্যা নেই”

গম্ভীরভাবে অধিরাজ শেখ বলেন,

“প্রশ্নটা আমি আহিনকে করেছি”

অধিরাজ শেখের কথা শুনে তৎক্ষনাৎ আহিন বলে,

“আমিই ওদের দুইজনকে আসতে বলেছি বাবা।দুজনই বেশ ভালো করে মেডিকেলের ব্যাপারে আমায় জানাতে পারবে তাই”

“মেডিকেল নিয়ে তোমার এতো আগ্রহ কেনো?পলিটিক্স থেকে মন উঠে গেছে?”

“তেমন কিছুই না বাবা”

“তুমি কি ভুলে গেছো এই মেয়ে তোমার সাথে…”

নিজের বাবাকে থামিয়ে দিয়ে আহিন বলে,

“পুরোনো কথা মনে করতে চাই না বাবা”

“পুরোনো মানুষকে তবে বর্তমানে আসতে দিচ্ছো কেনো?”

“প্লিজ বাবা এই টপিকে আর কথা বলতে চাচ্ছি না আমি”

“মেয়েটাকে যেতে বলো”

বাবার জেদ দেখে আহিন খানিকটা পিছিয়ে চাঁদের কাছে এসে তার বাম পাশে দাঁড়িয়ে হাত ধরে বলে,

“চলো চাঁদ।কারো কথায় কান দিতে হবেনা”

বলেই অরণসহ তিনজনে একসঙ্গেই ভেতরের দিকে এগোয়।আর অধিরাজ শেখ ছেলের এহেন কান্ডে চোয়াল শক্ত করে ভেতরে যাবার বদলে জায়গা প্রস্থান করেন,সাথে তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গের সকলেই।

ভেতরে এসেই চাঁদ আহিনকে বলে,

“আপনার আংকেলকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি আহিন”

চাঁদের দিকে চেয়ে আহিন বলে,

“আমি আমার বাবাকে ভালো করেই চিনি।এবং এজন্যই কাজটা করেছি”

চাঁদ আহিন আর অরণকে অন্যদিকে নিতে নিতে ফিসফিসিয়ে বলে,

“কিন্তু এতো মানুষের মাঝে আমি বা অরণ যা করতে এসেছি তাতো সম্ভব না”

“চিন্তা করোও না।বাবা এতক্ষণে চলেও গেছে জানি আমি।আর আমি আমার দলকে নিয়ে অন্যদিকটায় যাচ্ছি।তুমি অরণকে নিয়ে অন্যদিকে যাওয়া।কাজ হলে আমায় কল বা টেক্সট করও।আমি সেদিকে যাবো তারপর তুমি এদিকটায় আবার দেখে নিও,ঠিক আছে?”

লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদ কৃতজ্ঞতার সহিত বলে,

“আপনার এই ঋণ…..”

খানিকটা হেসে আহিন বলে,

“আপাতত তোলা থাক।কখনো সুযোগ হলে শোধ করে দিও”

অতঃপর নিজের দলবলকে নিয়ে অন্যদিকে যেতে লাগে আহিন।চাঁদ আর অরণও তাদের সাথেই ছিলো তবে সুযোগ পেয়েই তারা আড়াল হয়ে যায় আর অপরপাশটায় চলে আসে।

বেশ মনোযোগ সহিত দুজনই দুজনের চশমা বারবার ঠেলেঠুলে আশেপাশে এবং ঘাসের উপর কি যেনো খোঁজার প্রয়াস চালাচ্ছে।তবে এমন কিছুই তারা খুঁজে পাচ্ছেনা যা তাদের কাজে লাগবে অথবা লাগতে পারে।কোনোপ্রকার প্রমাণ তারা এখান থেকে যোগাড় করতে পারছেনা।হতাশ হয়ে চাঁদ সেখানেই বসে পড়ে হাপাতে থাকে।চাঁদকে এভাবে বসতে দেখে অরণও তার পাশে বসে বলে,

“কী হলো?”

“কিছুই পেলাম না।ভালো লাগছেনা”

“কথাটা তিক্ত হলেও সত্য যে কোনো অপরাধীই অপ!রাধ করে সেখানে নিজের বিরুদ্ধে প্রমাণ রেখে যাবেনা অবশ্যই।আমরা অযথাই আসলাম”

অরণের পানে চেয়ে চাঁদ বলে,

“এটাও কিন্তু সত্যি যে অপরাধী অ!পরাধ করে একটা না একটা ভুল অবশ্যই করে যায়।শুধু নিখুঁতভাবে তা খোঁজার অপেক্ষা মাত্র”

“তাহলে চলো এখানে বসে না থেকে ঐপাশটায় যাই।খুব সম্ভবত এখানে কিছু নেই”

“আমারও তাই মনে হচ্ছে।আম্বিয়া আপুর লা*শটাও তো সেই দিকটায়ই ছিলো।আরেকটা কথা অরণ”

“বলো?”

“আমি আম্বিয়া আপুর মতো সেই মেয়েটাকে আবার দেখেছি এবং এবার কথাও বলেছি”

“মানে?কিসব বলছো?তোমায় কিছু করেনিতো?”

“না।জানি শুনলে রাগ করবেন তাই আপাতত কিছু বলছিনা।আমি আরও কিছু জেনে নেই তারপর আপনায় সবটা বলবো”

কপাল সামান্য কুচকে অরণ বলে,

“তুমি আসলে করতে টা কী চাচ্ছো বলোতো?”

“সময় হলেই জানাবো।তাছাড়া আমি দুঃখিতও ভীষণ আপনার কাছে”

ভ্রুযুগোল কুঞ্চিত করে অরণ শুধায়,

“আর সেটা কেনো?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“এই যে আমার জন্য আপনার ইন্টার্নশিপে সমস্যা হচ্ছে”

“না তেমন কিছুই না”

“আমার জন্য আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডসহ বন্ধুবান্ধবের সকলেই আপনায় সন্দেহ করছে এমনকি ক্যারেক্টার নিয়েও প্রশ্ন তুলছে”

“আমি আমার বন্ধুবান্ধবদের চিনি চাঁদ।ওরা কেউই আমায় বা তোমায় সন্দেহ করছেনা,কেনোনা ওরা জানে আমাদের মাঝে কিছুই সম্ভব না।আর প্রণয় যেটা করছে তা নিতান্তই জেলাসিবশত করছে”

প্রসঙ্গ এড়াতে চাঁদ বলে,

“চলুন যাওয়া যাক।ঐপাশটায় যাই।আমি আহিনকে কল দিয়ে বলছি”

“টেক্সট দাও।দিয়ে মিসডকল দাও।নাহয় কেউ সন্দেহ করবে”

“ঠিক আছে”

অরণের কথা মোতাবেক তাই করে চাঁদ।অতঃপর তারা আসে বাগানের অপরপাশটায়।এসে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে চাঁদ অরণকে বলে,

“এই অরণ?এখানে না আপুর লা*শ ছিলো?কোথায় গেলো?র*ক্তের ছিটেফোঁটাও নেই?”

সামান্য হেসে অরণ বলে,

“তোমাকে দেখে বোকা মনে হলেও ততটা বোকা মেয়েতো তুমি নও চাঁদ।এতো বিচক্ষণ হয়েও এ কথা কী করে বলছো?”

“মানে?”

“আরে বোকা মেয়ে,ওরা কী জেনেশুনে নিজেদের বিপদে ফালাবে?এখনো সেসব রেখে দেবে?”

“ওহ সরি!আমি ভাবিনি সেটা”

“আচ্ছা এখন দেখো কোনো ক্লু পাও কিনা।হতে পারে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কিছু ফেলে গেলো”

“হ্যা দেখছি”

অতঃপর দুজনে আবারও প্রাণপন চেষ্টা করে যেনো ছোট্ট একটা হলেও কোনো প্রমাণ তারা পাক যার বদৌলতে সামনে আগানো যাবে।এবং সম্ভবত অরণ তা পেয়েও যায়,পায় কিছু একটা চাঁদও।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাজ ভিলায়,
লোকসমাগম শুরু হয়েছে ঘন্টাখানেক পূর্বেই।তবে আজ এক নতুন মুখের সাথে পরিচিত হয়েছে চাঁদ।লোকটার মুখে মাস্ক,পরণে এবং মাথায় কালো রঙের পোশাক।শুধু চোখদুটোই দেখা যাচ্ছে।চাঁদ মনে মনে ভাবছে সম্ভবত এই লোকটাই মাস্টারমাইন্ড হতে পারে।নাহয় নিজেকে এতো লুকাবার কীই বা প্রয়োজন?সে কিছু একটা পরিকল্পনা করে শরবতের গ্লাসগুলো নিয়ে সেই লোকটার দিকে এগিয়ে যায়।অতঃপর একে একে সবাইকে শরবত দিয়ে লোকটার দিকে যেয়েই সাবধানতা অবলম্বন করে তার গায়ে শরবের গ্লাস ফেলে দেয়।লোকটা তাতে ভ!ড়কে গিয়ে চেচিয়ে উঠে।কালো রঙের ব্লেজারটা ঝাড়তে ঝাড়তে তর্জনী উঁচিয়ে বলে,

“ইউ বু!লশিট গার্ল!এই আম্বিয়া?আম্বিয়া?এই মেয়েটাকে কে এনেছে এখানে?এমন কুৎসিত মেয়ে এখানে কী করে?”

আম্বিয়ারূপী মেয়েটা তৎক্ষনাৎ নিজ কক্ষ হতে বেরিয়ে বলে,

“কা…কী হয়েছে স্যার?কোনো সমস্যা?”

“ইয়েস অফ কর্স!হু’জ দিজ গার্ল?এমন কালো আর অদ্ভুত মেয়ে এখানে কী করছে?এই মেয়েতো আমার ব্যবসা লাটে উঠিয়ে দেবে।একে দেখলেতো আমার কাস্টমারেরা আর এদিকে আসবেওনা।একে এক্ষুনি বের করো”

আম্বিয়া বলে,

“স্যার আসলে হয়েছে কী মেয়েটা গরীব।লিমা এনেছে,আমারও মায়া হলো”

গম্ভীরভাবে লোকটা বললো,

“এটা মায়া করার জায়গা নয় আম্বিয়া”

“জানি স্যার কিন্তু মেয়েটা গতকালই এসেছে।আর আড়ালে আড়ালেই থাকে।কাস্টমার নিয়ে চিন্তা করবেন না।যদি এই মেয়েটাকে কারো পছন্দ হয় এই মেয়েও এসব করবে।আর দেখুন না কি নিখুঁত মুখশ্রীর মেয়েটা।বেশভূষা এমন বলে আজব লাগছে।তবে মেয়েটার চেহারা-সুরত খারাপ না।ভালোভাবে দেখুন স্যার”

আম্বিয়ার কথায় লোকটা চাঁদকে আপাদমস্তক পরখ করতে লাগে।বেশকিছুক্ষণ চাঁদের মুখপানে তাকিয়ে থাকে সে।চাঁদের দৃষ্টিও লোকটার পানেই ছিলো।ঠিক তার চোখ বরাবর।চোখে চোখ পড়তেই চাঁদ তা সরিয়ে ফেলে।লোকটা তাও তারই দিকে তাকিয়ে আছে।তা বুঝতে পেরে বেশ অস্বস্তিবোধ করে চাঁদ।লোকটা গলা খাকারী দিয়ে বলে,

“একে যেতে বলো এক্ষুনি।আমার কাস্টমারদের সামনে যেনো না আসে।যদি কেউ বিষয়টা অপছন্দ করে তো তোমাকে এবং লিমা দুজনকেই এর শা*স্তি পেতে হবে সাথে এই মেয়েটাকেও”

আম্বিয়া মেয়েটা চাঁদকে বলে,

“যাও মহুয়া তুমি তোমার রুমে যাও।এখানে এসোনা,দরকার পড়লে আমি ডাকবো তোমায়”

“ওকে উনাউনু” [ঠিক আছে আপু]

চাঁদের কন্ঠস্বর শুনে লোকটা আরেকদফা তার পানে তাকায়।তাকিয়ে তার মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে।অতঃপর পিছু ঘুরে চাঁদ চলে যেতে আরম্ভ করলেই লোকটার দৃষ্টি গিয়ে আটকায় চাঁদের অর্ধোন্মুক্ত পিঠের দিকে।সাথে সাথে সে দৃষ্টি নত করে।হঠাৎ করেই তার হাশফাশ লাগা শুরু হয়।সে আম্বিয়ারূপী মেয়েটার কানে কি যেনো বলে প্রস্থান করে।আর চাঁদ নিজের রুমের দিকে এসে দরজার আড়ালে লুকোয় সবটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য।এবং তার নজরে আসে একের পর এক আসা বহু পুরুষের আগমনের দিকে।তারা এসেই হয় সেখানে থাকা মেয়েদের নিয়ে বিভিন্ন রুমে ঢুকছে নয়তোবা একাই রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিচ্ছে।আর চাঁদ জানে রুমের ভেতর আগে থেকেই মেয়ে আছে।হতাশার নিশ্বাস ছাড়ে চাঁদ।সে ভেবে পায়না এসব করার মানে কী?কী লাভ এসব করে?কীই বা সে পাবে যে এসব করছে?কেনোই বা করছে?কী উদ্দেশ্য তার?ঠিক তখনই নজরে আসে লিমার পাশে এক লোক দাঁড়িয়ে তার পেটে হাত রেখে তাকে নিয়ে লিমার রুমের দিকে যেতে লাগলো।অতঃপর রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।দৃশ্যখানা দেখে লিমাকে স্বাভাবিকই মনে হলো তবে স্বাভাবিক থাকতে পারলোনা চাঁদ।তার দম ব*ন্ধ হয়ে আসছে।নিশ্বাস নিতে ক*ষ্ট হচ্ছে ভীষণ।এ কোন গোলক ধাধায় পড়েছে সে?কবে এসবকিছুর রহস্য সে উদঘাটন করবে?কবে সবাইকে মুক্তি দেবে এখান থেকে?এখন নিশ্চয়ই বর্বরদের ন্যায় লিমার উপর হাম!লে পড়বে লোকটা?লিমা কি চিৎকার করবে?নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে?নাকি সবটা মেনে নেবে?উত্তর চাঁদের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়ই তাকে দিয়ে দিলো।উত্তরটা ঠিক এরকম যে ‘হ্যা এছাড়া আর যে উপায় নেই!মেনে নেওয়া ছাড়া এখন আর কিছুই করার নেই’।চাঁদের পক্ষে আর কিছু দেখা সম্ভব হলোনা।দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করতে নিলেই নজরে আসে কালো পোশাকে আবৃত আরেকজন লোককে।প্রথমে চাঁদ ভেবেছিলো প্রথম লোকটাই।কিন্তু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর সে লক্ষ্য করলো আগেরজন বেশ লম্বা আর সুঠামদেহী ছিলো আর এখন যে এসেছে সে আগেরজনের তুলনায় খানিকটা খাটো।হাতে গ্লাভস নেই,যার দরুন খানিকটা কুচকানো চামড়াও চাঁদের নজরে এলো।সে বেশ বিপাকে পড়ে গেলো মাস্টারমাইন্ডকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বেশকিছুদিন পরের কথা,
অরণের সাথে চাঁদের দেখা হচ্ছেনা বলে ক্লাস পিরিয়ড চলাকালীনই অরণ চাঁদের ক্লাসের বাইরে এসে দাঁড়ায়।অপেক্ষা করতে লাগে পিরিয়ড শেষ হওয়ার।অতঃপর স্যার ক্লাস থেকে বের হতে নিলেই অরণকে দেখে বলেন,

“কিরে অরণ?ইন্টার্নশিপ কেমন যায় তোর?”

অরণ মৃদু হেসে বলে,

“এইতো স্যার,যাচ্ছে বেশ!”

“কী নিয়ে ইন্টার্নশিপ করছিস এখন?”

“কার্ডিওলজি স্যার”

“বাহ বেশ!তোরাই জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।তা প্রণয় কী করছে ইদানীং?”

“ওর ও একই”

“আচ্ছা আচ্ছা।দুই বন্ধু এক জায়গায়ই যাচ্ছিস।তা সাথেরজন কই তোর?আর এখানে কী করছিস?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরণ বলে,

“প্রণয় হাসপাতালেই আছে স্যার।আমি কাজে এসেছিলাম”

“আচ্ছা আচ্ছা,তোদের মনঃকামনা পূর্ণ হোক”

“দোয়া রাখবেন স্যার”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বর্তমানে চাঁদসহ অরণ ক্যান্টিনে বসে আছে।চাঁদকে বেশ ক্লান্ত লাগছে বলে অরণ লেমন জুস নিয়ে এসে চাঁদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“নাও খাও”

অরণের পানে চেয়ে গ্লাসটা নিয়ে জুসটুকু খেয়ে টেবিলেই রেখে দেয় চাঁদ।অতঃপর অরণই বলে,

“কয়দিন ধরে খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে?”

লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদ বলে,

“অনেকটা তেমনই।আপনাকে বেশ কিছু বলার আছে আমার”

“হ্যা বলো?”

“এখানে না”

“তাহলে বাইরে কোথাও চলো”

“কালতো শুক্রবার।কাল চলুন?”

“ঠিক আছে”

“উঠি তাহলে”

“কোথায় যাবে?”

“ক্লাসে”

“তোমায় মনমরা লাগছে চাঁদ”

“মনতো কবেই ম!রেছে।মন বলতে আর কিছু আছে নাকি?”

“তুমি কি প্রণ…”

“আমি চললাম।আপনিও হাসপাতালে ফিরুন নাহয় আবার লোকে সন্দেহের বশত আপনায় ফলো করবে”

কপাল কুচকে অরণ বলে,

“তুমি জানো কী করে?”

ম্লান হেসে চাঁদ বলে,

“জানিতো অনেক কিছুই।এবং অনেক কিছুই শুনেছি,শুনি।থাক সেসব,আপনি বরং উঠুন আমিও উঠছি”

বলে আর এক মুহুর্ত দেরি করেনা চাঁদ,দ্রুতই সে জায়গা প্রস্থান নেয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাজ ভিলার সদর দরজা দিয়ে কালো পোশাকে আবৃত এক লোক ভেতরে প্রবেশ করেই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আম্বিয়ারূপী মেয়েটাকে বলে,

“মহুয়া মেয়েটা কোথায়?দেখছিনা কেনো?”

আম্বিয়া বলে,

“শরবত করতে গেছে”

“শোনো আম্বিয়া।ঐ মেয়েটাকে আর মজলিশে আসতে দেবেনা।আমি চাইনা সে কারো নজরে পড়ুক”

ভ্রু কুচকে আম্বিয়া বলে,

“কিন্তু কেনো স্যার?”

“তোমায় আমি অর্ডার ফলো করতে বলেছি প্রশ্ন করতে নয়”

“জ্ব…জ্বি স্যার এমনটাই হবে”

“আর এক্ষুনি তাকে তার রুমে পাঠাও।মেয়েটাকে আমার লাগবে দ্রুত”

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫৯.
বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে চাঁদের।ভেতরে থাকা হৃদযন্ত্রটা তড়িৎ গতিতে লাফাচ্ছে তার।সে কস্মিনকালেও ভাবেনি তাকে কোনো পরপুরুষ এভাবে চেয়ে বসবে।মনে তার এতোটা ভয় জেঁকেছে যে মস্তিষ্কে নানান ধরণের উদ্ভট চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।হয় আজ নিজে শেষ হবে নাহয় এসব জা!নোয়ারদের শেষ করবে।যা হবে সে দেখে নেবে,এই ভেবেই শাড়ির কুচির কাছটায় কোমড়ে একটা ছুরি গুজে নেয় আর হাতে একটা পেপার স্প্রে নিয়ে কাপড়ে পেচিয়ে হাত পেছন দিকটায় দিয়ে এগোয় নিজ রুমের দিকে।অতঃপর ভেতরে আসতেই দেখতে পায় তার বিছানায় পায়ের উপর পা তুলে বিছানার পেছন দিকে দু’হাত রেখে উপরে ঝুলন্ত ফ্যানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছে সেই কালো পোশাকে আবৃত লম্বাটে লোকটা।চাঁদ এসে খানিকটা কাশতেই লোকটা দৃষ্টি তার পানে করে গম্ভীরভাবে বলে,

“দরজা আটকে দিয়ে কাছে এসো”

চাঁদ সামান্য ঢোক গিলে দরজা আটকে দিয়ে লোকটার সামনে গিয়ে দু’হাত জায়গা ফাকা রেখে দাঁড়ায়।চাঁদের তার সামনে যেতেই লোকটা তাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে লাগলে চাঁদ ভীষণ বিব্রতবোধ করে,অস্বস্তি জেঁকে ধরে তাকে।খানিকটা ঘামতেও লাগে সে।হৃদপিণ্ড এত দ্রুত চলাচল করছে যে সে নিজেকে সামলে রাখতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে তবুও সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।চোখ ফেটে কান্না আসার উপক্রম তবুও নিজেকে সামলাচ্ছে সে।অতঃপর লোকটার ভরাট কন্ঠে কেপে উঠে সে।লোকটা বলে,

“নাম কী তোমার?”

“মা….মাহুয়া”

“তো মহুয়া?এর আগেও এসব করেছো?”

“কা তি লো” [না করিনি]

লোকটা তার গাম্ভীর্যভাব বজায় রেখেই বলে,

“তোমার ভাষা বুঝতে পারদর্শী নই আমি।ইংলিশ বলতে পারো?”

চাঁদ মাথা দু’পাশে নাড়ে অর্থাৎ ‘না’।তা দেখে লম্বা শ্বাস ফেলে লোকটা বলে,

“বাংলা যেহেতু পারোই না তাহলে আমার সাথে ইশারায় কথা বলবে বুঝেছো?”

চাঁদ কেবলই মাথা ঝাকায়।লোকটা আবার বলে,

“বয়স কত তোমার?”

চাঁদ হাতের দশ আঙুল দুইবার দেখাতেই লোকটা হেসে দিয়ে বলে,

“বিশ?”

চাঁদ দ্রুত উপরনিচ মাথা ঝাকায়।লোকটা তার মাথায় থাকা কালো পেচানো কাপড়টা খুলে ফেলে চুল ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,

“এত কম বয়সে বিয়ে দিয়েছিলো কেনো তোমায়?”

চাঁদ কেবলই তাকিয়ে থাকে তার পানে।লোকটার উদ্দেশ্য ঠিকঠাক বুঝতে পারছেনা সে।তবুও কেবল তাকিয়ে আছে বলে লোকটা বলে,

“ওহ সরি সরি আমিতো ভুলেই গেছি তুমি বাংলা বলতে পারোনা”

চাঁদ আবারও মাথা ঝাকায়।তারপর লোকটা পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখের মাস্কটা খুলে বিছানার উপর রেখে রুমাল দিয়েই মুখের ঘামটুকু মুছতে মুছতে চাঁদের পানে দৃষ্টি দিয়ে মৃদু হেসে বলে,

“তুমি এভাবে পাহাড়িদের মতো না সেজে নরমাল বাঙালী মেয়েদের মতো সাজতে পারোনা?ভীষণ ভালো লাগবে কিন্তু তোমায়।আর ওয়েস্টার্নে?”

বলেই আবারও চাঁদকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগে।তা দেখে চাঁদ আরেকটু দূরে চলে যায় বলে লোকটা হোহো করে হেসে দিয়ে বলে,

“হাহাহা রিল্যাক্স‌!এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই”

চাঁদ কেবলই ঢোক গিলে।লোকটা আঙুলের ইশারায় কাছে আসতে বললে চাঁদ সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে।মিনিট দুয়েক চুপ থেকে লোকটা নিজেই চাঁদের হাত ধরে টেনে তার নিকটে এনে দাড় করায় চাঁদকে।সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের শরীরে এমনভাবে বিদ্যুৎ খেলে গেলো যেনো সে এক্ষুনি জ্ঞান হা!রাবে।ভয়ে জমে গেছে পা জোড়া।কী করবে না করবে বুঝতে পারছেনা।কেবলই লোকটার মুখের পানে তাকিয়ে আছে সে।খানিকটা বিদেশী ভাব তাতে বিদ্যমান হলেও মুখের আদলটা কার সাথে যেনো মিলে যাচ্ছে ঠিক মনে করতে পারছেনা চাঁদ।সে এরকম চেহারা আগেও দেখেছে,হয়তো হুবুহু না তবে খানিকটা এমনই।কিন্তু এই লোকটা ভীষণ ফর্সা,চুলগুলো কালচে-বাদামী।পুরোপুরি বাদামী না তবে রঙটা ঠিক কাঠ লিচুর বাকলের ন্যায়।মুখে দাড়ি-গোফের ছিটেফোটা নেই।হয়তো ক্লিন শেভ করা।লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করতে করতেই তার হঠাৎ বলা বাক্যে কান গরম হয়ে আসে চাঁদের,

“চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছো মেয়ে?তবে আমিতো পুরোটাই নিজেকে সপে দিতে চাই তোমার কাছে।উইল ইউ বি মাই ভ্যালেনটাইন বেইবি?”

বলেই চাঁদের কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে সে।চাঁদ হতবিহ্বল হয়ে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে।তবে লোকটার শক্তির সাথে সে পেরে উঠে না।অতঃপর হতাশার নিশ্বাস ছাড়তেই লোকটা শরীর দুলিয়ে হেসে হেসে বলে,

“শেষ?সব শক্তি শেষ?এত ছটফট করছো কেনো লিটেল বার্ড?”

অতঃপর আবারও চাঁদকে ঝাকিয়ে বলে,

“এই মেয়ে পাখি হবে আমার?”

বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে থাকে চাঁদ তার পানে।অতঃপর লোকটা আবারও বলে,

“হেই বলোনা মহুয়া?ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া?কতটা পাগল করেছো তুমি আমায়?তোমার এই মায়াবী মুখটা একদম ভুলতে পারিনা”

বলেই চাঁদের নাকের ডগায় আলতো করে তর্জনী দ্বারা ছুয়ে দেয় সে।চাঁদের শরীর রি রি করে উঠে ঘৃণায়।দাতে দাত চেপে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।অতঃপর লোকটার একের পর এক প্রশ্ন শুনে চোখ খোলে সে,

“তুমি নাকি মিজোরামের?তবে তোমার মাঝেতো তা দেখতেই পাই না আমি।কেমন বাঙালীয়ানা ভাব তোমাতে।হোয়াই বাংলাদেশী গার্লস আর সো অ্যাট্রাকটিভ ম্যান?বাট তুমিতো ইন্ডিয়ান রাইট?”

লোকটার কথা শুনে চাঁদ মাথা ঝাকিয়ে আবারও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে লোকটা চাঁদের ঠোটে তর্জনী রেখে বলে,

“হিশ!এতো নড়াচড়া করছো কেনো?চুপচাপ থাকো না মহুয়া বার্ড।আয় ওয়ানা সে সামথিং টু ইউ”

বলেই আরেকটু চেপে ধরে কাছে নিয়ে আসে তাকে।চাঁদের পেটের কাছে থাকা ছুরির ধা!রালো অংশ দ্বারা বারবার পেটে চাপ লেগে ব্যথা পাচ্ছে সে।খানিকটা জ্বলছেও।সম্ভবত কে!টে গেছে।দাত কিড়মিড়িয়ে ব্যথায় হাসফাস করতে লাগে সে।চাঁদের ছটফটানি দেখে লোকটা বলে,

“ভয় পেয়োনা।তোমার সাথে কিছু করবোনা আমি।শুধু এভাবে দাঁড়িয়ে থাকো ভাল্লাগছে।দূরে যেয়োনা প্লিজ”

এরপর খানিকটা থেমে লোকটা ফের বলে,

“তোমার মুখটায় এত মায়া!উফ।আই জাস্ট লাভ ইওর আইস,ফেস।দিজ নোজ,লিপ্স,হ্যান্ড,হিপ,চেস্ট ইচ অ্যান্ড এভ্রিথিং হোয়াট ইউ হ্যাভ প্রিটি গার্ল!”

লোকটার কথায় গা ঘিনঘিন করে উঠে চাঁদের।অতঃপর তাকে সরাতে চাইলে সে আরও চেপে ধরে কঠিনভাবে বলে,

“আরেকবার নড়তে চাইলে যা করতে চাচ্ছিনা তা করে ফেলবো মেয়ে! আর তুমি আমায় বাঁধাও দিতে পারবেনা”

লোকটার কথায় পুরোপুরি জমে যায় চাঁদ।লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলতে লাগে সে।চাঁদের উত্তপ্ত শ্বাসগুলো গিয়ে আছড়ে পড়তে লাগে লোকটার ঘাড় এবং গলায়ও।বড্ড বেসামাল হয়ে পড়ে সে।চাঁদকে অনেকটা কাছে টেনে এনে তার ঘাড়ের কাছে মুখ নিতে লাগলেই চাঁদের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়ে যায়।চোখে থাকা লেন্স খুলে যাবে বলে তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে ঠোট কামড়ে ধরে মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ ডাকতে লাগে সে।লোকটার ঘাড়ে গরম পানির স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে চাঁদকে সরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে দেখতেই বিচলিত হয়ে চাঁদের বাহু ধরে সে বলে,

“মহুয়া?এই মহুয়া?কাদছো কেনো?”

“প্লিজ প্লিজ কেদোনা।আয় আম সো সরি।আর হবেনা।আর এমন হবেনা সত্যি।তবুও কেদোনা প্লিজ”

“প্লিজ কেদোনা।এই যে দেখো কানে ধরছি আমি”

বলেই হাতে থাকা গ্লাভস গুলো খুলে কানের লতি স্পর্শ করে সে।অতঃপর খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,

“এই দেখো,দেখোনা।দেখো,এই যে দেখো তোমার জন্য কেবল তোমার জন্য দি লিওনেল অ্যালেন কানে ধরেছে।জাস্ট সি গার্ল।দেখো”

লোকটার কথা শুনে পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় চাঁদ।অতঃপর নাক টেনে কেবলই তার পানে তাকিয়ে থাকে সে।লোকটা তাকে তার ডান পাশে বসিয়ে দিয়ে বলে,

“পাশে বসো ঠিক আছে?কাছে আসতে হবেনা।আনবোনা আর।তবুও তুমি কেদোনা।এই‌!পানির ছাপ পড়ে গেছে গালে।দেখি মুছে দেই”

“না!”

কপাল কুচকে লোকটা বলে,

“ঠিক আছে ঠিক আছে ধরছিনা।তুমি বলো,আমায় কেমন লেগেছে তোমার?ভালো?”

কথাখানা শুনেই লোকটার দিকে তাকিয়ে চাঁদ মাথা কাত করে বলে,

“নাম?”

“কী?”

চাঁদ ভ্রু উচিয়ে বলে,

“তুঙ্গি আই হামিং?” [আপনার নাম কী?]

কুঞ্চিত ভ্রুযুগোল আরও কুঞ্চিত করে লোকটা বলে,

“কী?কী বলছো?বাংলায় বলো।নাহয় ইশারায়”

অতঃপর ইতস্তত করে চাঁদ তার তর্জনী দ্বারা লোকটার বাহুতে স্পর্শ করে উচ্চস্বরে বলে,

“নাম?”

বলেই আবারও তাকে ছুয়ে দুই ভ্রু উচিয়ে বলে,

“নাম?”

লোকটা হেসে দিয়ে বলে,

“ওহ আচ্ছা আমার নাম?আমার নাম জিজ্ঞেস করছো তুমি?”

চাঁদ উপরনিচ মাথা নাড়তেই লোকটা বলে,

“আমার নাম অ্যালেন।লিওনেল অ্যালেন।তুমি আমায় অ্যালেন বলে ডেকো ঠিক আছে?”

“অ্যা…অলান?”

লোকটা হেসে বলে,

“না না।অ্যালেন”

“অ্যা…অ্যালেন?”

“এইতো এইতো হ্যা।অ্যালেন,আমি অ্যালেন।মহুয়ার অ্যালেন”

বলেই হাসে সে।অতঃপর আবারও বলে,

“এই জানো?আমি তোমার থেকে কিন্তু অত বড় না। আ’ম অনলি টুয়েনিফাইভ”

“হা?”

“মানে আমার পঁচিশ বছর।তোমার থেকে পাঁচ বছরের বড় আমি”

“ওকে ওকে”

“এই ইংলিশ পারো তুমি?”

চাঁদ ডানে বায়ে মাথা ঝাকায়।ঝাকাতেই ভ্রু কুচকে অ্যালেন বলে,

“তাহলে ওকে বললে যে?”

এবার নিজের দিকে ইশারা করে চাঁদ বলে,

“ভাসা?আমা..আমাদার ভাসা”

চাঁদের কথা শুনে দুই ভ্রু কুচকানোবস্থায় উঁচু করে দুই ঠোট মিলিয়ে রেখেই ঠোট টিপে হাসতে লাগে ছেলেটা।অতঃপর বলে,

“আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি।তোমায় আমি রোজ একটু একটু করে বাংলা শেখাবো ঠিক আছে?আর শোনো তোমার কাছে আমি ছাড়া কেউ আসবেনা।ইউ আর অনলি মাইন”

ছেলেটার কথাগুলো শুনে বিস্ফোরিত নয়নে তার পানে চাইতে বাধ্য হয় চাঁদ।জানতে ইচ্ছে করছে এই লোকটা কে?তার সাথে এমন করছে কেনো?খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে ‘আপনি আমার মতো কালো মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট কেনো?চাওয়াটাতো দৈহিক বলে মনে হচ্ছেনা।তবে কী তা?’ নিজের কথাগুলো মনে মনেই গিলে ফেলে চাঁদ।অতঃপর ভাবতে থাকে ছেলেটাকেতো ভালোই মনে হচ্ছে তবে এসবের সাথে জড়িত কেনো সে?বিদেশী বিদেশীও লাগছে।নামটাও কেমন বিদেশীদের মতো।তবে এত সুন্দর বাংলা বলছে কী করে?কে এই অদ্ভুত ছেলেটা?মাস্টারমাইন্ডের কী হয় সে?নাকি সে ই মাস্টারমাইন্ড?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
শুক্রবার,জুম্মার দিন।জুম্মা পড়েই মসজিদ থেকে বেরিয়ে চাঁদের নম্বরে ডায়াল করে অরণ।কিছুক্ষণ বেজে বেজে কেটে গিয়ে পরবর্তীতে ওপাশ থেকেই কল আসে চাঁদের।অরণ তা রিসিভ করে বলে,

“আমি বের হয়েছি।তুমি রওয়ানা দাও।পনেরো মিনিটের মতো লাগবে আমার”

“শুনুন।আমরা ওয়ারি যাবো।নাহয় সমস্যা হবে।আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করে”

“এমনটা মনে হচ্ছে কেনো?”

“জানিনা।আপনি আগে মোড়ের সামনে আসুন।না থাক আপনি শহীদুল্লাহ্ হলের সামনে আসুন আমি ওখানটায় দাড়াবো।সেখান থেকে ওয়ারি ঠিক আছে?”

“আচ্ছা আসছি।তবে সাবধানে এসো তুমি।আজকাল তোমায় নিয়ে অনেক টেনশন হচ্ছে।না জানি কোন ঝামেলায় নিজেকে জড়িয়েছো”

খানিকটা হেসে চাঁদ বলে,

“চিন্তা করবেন না।আসুন”

অতঃপর কল কেটে দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে চাঁদ।পরনের জামা খানিকটা উঁচু করে পা’জামা একটুখানি নামিয়ে বেশ সাবধানে আলতো হাতে পেট ছুতেই দাত খিচে চোখজোড়া বন্ধ করে নেয়।চশমা বারবার নাকের ডগায় আসছে বলে বিরক্ত হয়ে চশমা খুলেই ফেলে চাঁদ।খুলে তা পাশে রেখে দিয়ে সামনে থাকা স্যাভলন নিয়ে তুলোতে ভরিয়ে পেটে লাগাতেই জ্বলে উঠে পেটের কা!টা অংশটা।ছুরি লম্বাভাবে রাখা ছিলো বিধায় কাটা দাগটাও লম্বাটে ই হয়েছে।অনেকখানিই চামড়া ভেদ করে মাংসে লেগে কে!টে গিয়েছে।শুকাতে ঢের সময় লাগবে ভেবেই হতাশ হয় চাঁদ।ভীষণ জ্বালাপোড়া করে তার।পেটে টানও লাগে।কোনোকিছুই শান্তি মতো করতে পারেনা।তুলো আর স্যাভলন দিয়ে কাটা জায়গা পরিষ্কার করে তাতে পভিসেপ ক্রিম লাগিয়ে তার উপর সামান্য তুলো রেখে ব্যান্ডেজ দিয়ে পুরো পেটে তা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে এনে গিট দিয়ে ড্রেসিং শেষ করেই উঠে দাঁড়ায় বের হওয়ার জন্য।উঠতে গিয়েও পেটে টান লাগে তার।তবুও নিজেকে সামলে দরজা খুলে হাটা ধরে বাড়ির বাইরে যাবার উদ্দেশ্যে।

শহীদুল্লাহ হলের সামনে থেকে চাঁদ আর অরণ একই রিক্সায় উঠে।গন্তব্য ওয়ারির পাস্তা ক্লাব।কথায় আছে,যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।আজ যেনো তা খাপে খাপে মিলে গেছে।চাঁদের পেটে টান লাগছিলো বিধায় রিক্সায় উঠতে অসুবিধা হচ্ছিলো তাই অরণ তার হাত ধরে রিক্সায় উঠতে সাহায্য করে এবং ঠিক সেই মুহুর্তে নামাজ সেড়ে সেই পাশ দিয়েই নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো প্রণয় কিন্তু চাঁদ আর অরণকে সেভাবে দেখে ভ্রু সামান্য কুঞ্চিত করে তাদের পানে তাকিয়ে থাকে।অতঃপর যেই না তারা রিক্সায় উঠে রিক্সার হুড তুলে দেয় চোয়াল আপনাআপনি শক্ত হয়ে আসে প্রণয়ের।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাদের হাতেনাতে ধরার জন্য ক্ষীপ্র গতিতে সেও এক রিক্সায় উঠে তাদের পিছু নেয়।

To be continued…..