আবার প্রেম হোক পর্ব-৬৪

0
713

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৬৪.
ফায়ান আর হুরায়রাকে একইসাথে পড়তে দেখে দৌড়ে তাদের পানে এসে দাঁড়ায় চাঁদ।অতঃপর ফায়ানের উপর থেকে হুরায়রাকে টেনে তুলে দাড় করিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় ফায়ানকে উঠানোর জন্য।ফায়ানও চাঁদের হাত ধরে উঠতেই চাঁদ আঁতকে উঠে বলে,

“ইশ!তোমারতো ঠোট কে!টে গেছেন ফায়ান।আসো আমি ফার্স্ট এইড করে দিচ্ছি”

বলেই ফায়ানকে ধরে নিতে গেলে ফায়ান দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,

“আহহা সমস্যা নেই।হাইপার হয়ো না।আমি ঠিক আছি।আর আপনি,আপনি কোথাও ব্যথা পেয়েছেন?”

এতক্ষণ দৃষ্টি নত করে চাঁদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো হুরায়রা।ফায়ানের কথা শুনতেই তার পানে তাকিয়ে কাপা কন্ঠে বলে,

“আ…আমাকে বলছেন?”

“হ্যা”

“জা…জ্বি আমি ঠিক আছি।আপনি বেশ চোট পেয়েছেন আপনার ফার্স্ট এইড করা উচিত”

“এসব কোনো বিষয় না।এমন একটু আকটু চোট পাওয়া,দেখা নিত্যদিনকারই কাজ আমার”

“মানে?”

হুরায়রার প্রশ্নে চাঁদ বলে,

“ও হচ্ছে ফায়ান।ড.আরফিদ ফায়ান,ব্রেইন স্পেশালিষ্ট অফ ডিএমসি।আমার বন্ধু হয়।আর ফায়ান ও হচ্ছে হুরায়রা,উশ্মির খালাতো বোন”

“আচ্ছা আচ্ছা!নাইস টু মিট ইউ মিস হুরায়রা”

“সেম টু ইউ মি.ডক্টর”

ফায়ানকে কথাটা বলেই চাঁদের পানে তাকিয়ে হুরায়রা বলে,

“এত্ত ইয়াং ডক্টর জীবনে দেখিনি ভাবি”

হুরায়রার কথা শুনে খানিকটা অস্বস্তিবোধ করে ফায়ান।তা বুঝতে পেরে চাঁদ বলে,

“দেখোনি?সিরিয়াসলি?”

“হ্যা ভাবি সত্যি”

“প্রণয় কী তবে?”

“না মানে ইনি তো প্রণয় ভাইয়ার থেকে ছোটই হবে মনে হচ্ছে”

“হ্যা ছোটই তবে প্রণয়ও যখন প্রথম ডক্টর হয় সেও নিশ্চয়ই এমনই ইয়াং আর হ্যান্ড….”

বলতে বলতেও থেমে যায় চাঁদ।কিন্তু তার কথাকে পাশে এসে পূর্ণ করে উশ্মির মামাতো বোন আলিশা,

“হ্যা হ্যা বলো?শরমাচ্ছো কেনো ভাবি?তোমার ইয়াং আর হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং হাজবেন্ড কিন্তু শুধু তোমারই।যদিও প্রণয় ভাই আমার ছোটবেলার ক্রাশ বাট ইটস ওকে।তোমার সাথে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে”

চাঁদ প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে,

“আচ্ছা থাকো তোমরা।আর আলিশা হুরায়রাকে একটু দেখো,কোথাও ব্যথা পেলে একটু মেডিসিন দিয়ে দাও।আমি ফায়ানকে ফার্স্ট এইড করে দিচ্ছি”

বলেই ফায়ানকে সাথে নিয়ে এক চেয়ারে বসিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স আনতে এগোয় সে।আর হুরায়রার পাশে দাঁড়ানো আলিশা হুরায়রাকে বলে,

“মাইরি!ছেলেটা কি হ্যান্ডসাম রে হুরু‌!চাঁদ ভাবির কী হয়?”

ভ্রু যুগোল সামান্য কুঞ্চিত করে হুরায়রা বলে,

“ফ্রেন্ড”

“কেমন ফ্রেন্ড?”

“তা আমি কী করে বলবো?ফ্রেন্ড আবার কেমন হয়?”

“ছেলেটাকে পটাতে চাই রে।পড়াশুনা করে নাকি কী?”

“না।সে নাকি ডক্টর,ব্রেইন স্পেশালিষ্ট”

“উরিব্বাস!বলিস কী?”

“ঐ ডক্টরকে বাদ দিয়ে গেটের দিকে চল উশ্মিপু এসেই পড়বে মনে হয়”

“হ্যা হ্যা চল”

ফায়ানের পাশে বসে সন্তপর্ণে ঠোটে মেডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছে চাঁদ।মাঝেমাঝে তার সাথে কিছু আলাপও করছে।চাঁদ ফায়ানকে বলছে,

“আমার কী মনে হয় জানো?অরণকে কেউ ইচ্ছা করে ভুল কিছু দিচ্ছে।আচ্ছা তোমরা সবাই বাদে বাইরের কেউ কি অরণের ব্যাপারে জানে?”

“না।প্রণয় ভাইয়ার বন্ধুরা আর আমিই কেবল”

“আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে হাসপাতালেই কেউ কিছু একটা করছে।যার জন্য অরণের অবস্থার উন্নতি হচ্ছেনা”

“কাউকে সন্দেহ করছো তুমি?”

“সন্দেহ করার মতো কেউই নেই।তবে হতেই পারে হাসপাতালের কেউ”

“কিন্তু অরণ ভাইয়ার সাথে কেউ কেনো এমনটা করবে?”

“আছে কিছু পুরোনো শত্রুতা”

“কার সাথে?”

“সেসব রাখো।আমি যা বলছি তুমি তাই করো”

“কী করতে বলছো তুমি?”

“তুমি অরণকে তোমার বাসায় নিয়ে গিয়ে ট্রিটমেন্ট করাও।কেনো জানি মনে হচ্ছে হাসপাতালে থাকলে অবস্থার আরও অবনতি হবে।আর হ্যা তুমি তাকে হুট করেই নিয়ে যাবে প্রণয়ের সাথে কথা বলে।আর কাউকে জানাবেও না এই ব্যাপারে।অরণ যে তোমার বাসায় আছে এ কথা শুধু তুমি আর প্রণয়ই জানবে,আর কাউকে জানাবেনা”

“আর এমনটা কেনো?বাকিরা জানলে কী হবে?”

“জানাজানি হলে কালপ্রিট এলার্ট হয়ে যাবে”

“অরণ ভাইয়ার বন্ধুদের মাঝে কেউ?”

“এমন কেউই নেই তবে হতেই পারে তাদের পরিচিত কেউ।তাই বলছি এরকমটাই করো।নাকি আমায় তুমিও বিশ্বাস করছো না?প্রণয়দের মতো অবিশ্বাস করছো?”

“এমনটা মোটেও নয় চাঁদ।তবে তোমার পালিয়ে যাওয়ার কারণ আজও জানা হলোনা আমার”

“তা আর কখনো কেউই জানবেনা”

“কেনো?”

“এমনি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত আটটা বেজে তেরো মিনিট,
সদর দরজা দিয়ে গাউনের দুই পাশ উঁচু করে ভেতরে প্রবেশ করছে উশ্মি।পাশে তার সকল বোনেরা।সেই সাথে আছে চাঁদও।স্টেজের উপরে বসে থাকা রামিম আর রায়হান দুইজনেরই নজর তখন উশ্মির পানে।রায়হান কয়েক সেকেন্ড উশ্মিকে দেখেই বন্ধুর পানে তাকায়।অতঃপর বন্ধুর দৃষ্টিতে মুগ্ধতার রেশ দেখে মৃদু হাসে সে।হাসতে হাসতেই চেয়ার থেকে উঠে নেমে আসে সেখান থেকে।নেমে এগিয়ে আসে উশ্মির দিকে।উশ্মির সামনে এসে রায়হান দাড়াতেই উশ্মি হাটা থামিয়ে তার পানে তাকায়।তাকিয়ে তার দৃষ্টি পড়তে চায়।এবং সে দৃষ্টিতে উশ্মি কোনোরূপ হিংস্রতা বা কষ্টের ছাপ দেখতে পায়না।যার দরুন স্বস্তিতে ভেতরটা ভরে উঠে তার।সে লম্বা শ্বাস ফেলে মৃদু হাসে।উশ্মির হাসির বিনিময়ে রায়হানও হাসে।হেসে উশ্মির দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,

“আয় আমার সাথে”

উশ্মিও বিনাবাক্যে রায়হানের হাত ধরে এগোতে লাগে সামনে।উশ্মি আর রায়হানের কোনোরূপ সমস্যা না হলেও তাদের পানে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাদের ভাইবোনেরা,সেইসাথে রামিম নিজেও।সে কপাল কুচকে ভাবছে রায়হান আসলে করতে টা কী চাচ্ছে?যখনই রায়হান উশ্মিকে নিয়ে মুখে হাসি বজায় রেখেই স্টেজের দিকে এগোতে লাগে তখনই রামিমের কুঞ্চিত কপাল শিথিল হয়,ঠোট জোড়াও হয় প্রসারিত।বন্ধুর পানে হাসিমুখ করে তাকিয়ে থাকে সে।রায়হান উশ্মিকে বেশ ধীরেসুস্থে স্টেজে উঠিয়ে রামিমের পাশে বসিয়ে রামিম আর উশ্মির হাত একে অপরকে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

“নাও পার্ফেক্ট!এই দাড়া দাড়া তোদের ফার্স্ট ছবি আমিই তুলবো”

বলেই স্টেজ হতে নিচে নেমে উশ্মি আর রামিমের সেভাবেই বসে থাকাবস্থায় দুই তিনটা ছবি নিজ ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করে বলে,

“একে অপরের দিকে তাকা,আরেকটা তুলি আমি”

রায়হানের কথা শুনে উশ্মি বেশ লজ্জায় পড়ে যায়।গালদুটো সামান্য ফুলে উঠে তার,সেইসাথে খানিকটা জ্বলেও উঠে।ইশ!এ কেমন লজ্জা?এত লজ্জা কেনো লাগছে?এই দিনটার জন্যই তো এত অপেক্ষার প্রহর সে গুনেছে,তবে আজ কেনো এত আড়ষ্টতা?এসব ভাবতে ভাবতেই রামিমের পানে তাকায় সে।আর রামিম আগে থেকেই তাকিয়ে ছিলো উশ্মির দিকে।সে আসলে উশ্মির লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমা দেখছিলো।উশ্মিকে নিজের দিকে তাকাতে দেখেই ঠোট চেপে হেসে দেয় রামিম।রামিমের কান্ডে উশ্মি আরও লজ্জায় পড়ে রামিমের দিকে তাকিয়ে থেকেই দৃষ্টি নত করে।এমতাবস্থায় রায়হানসহ সেখানে উপস্থিত অনেকেই ছবি তোলা শুরু করে।ক্যামেরাম্যানও চটজলদি এসে প্রেমময়ী সৌন্দর্যেমন্ডিত মুহুর্তকে তার ক্যামেরায় বন্দি করে।

এত ভীড়ের মাঝে চাঁদ রামিম আর উশ্মির ছবি তুলতে গিয়ে পড়েই যাচ্ছিলো কিন্তু তার পূর্বেই চাঁদকে ধরে ফেলে উশ্মির মামাতো ভাই আলফি।আর বলে,

“আস্তে ভাবি,পড়ে যাবেন তো”

সাথে সাথে আলফির থেকে দূরে সরে গিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি হেসে চাঁদ বলে,

“থ্যাংক ইউ ভাইয়া”

“একটা কথা বলবো ভাবি?”

“জ্বি ভাইয়া?”

“রায়হানরা তো সবাই আপনাকে চাঁদ বলেই ডাকে।আমি ডাকলেও আপনার সমস্যা হবে কি?আসলে আমরা সবাই সেম এজ তো”

তৎক্ষনাৎ চাঁদ সামান্য হেসে বলে,

“না না,তেমন সমস্যা নেই”

“আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি গিয়ে কোথাও বসুন,অসুস্থতো আপনি”

“ননদের এংগেজমেন্ট,বসে আর থাকি কী করে ভাইয়া?”

“তবুও কোথাও বসুন।দাড়ান আমি চেয়ার এনে দিচ্ছি”

বলেই চাঁদের থেকে খানিকটা দূরে একটা চেয়ার টেনে দিয়ে বলে,

“এখানটায় বসুন।ওখানে আপাতত ভীড়”

“জ্বি”

বলেই চেয়ারটাতে গিয়ে বসে চাঁদ।চাঁদ বসতেই আলফিও তার পাশের আরেকটা চেয়ারে বসে বলে,

“ভাবি আসলে একটা কথা বলতাম”

“জ্বি ভাইয়া অবশ্যই”

সামান্য হেসে ইতস্ততবোধ করে আলফি বলে,

“আসলে ভাবি একটা হেল্প লাগতো যেটা আমায় কেবল আপনিই করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে”

“কিরকম হেল্প?”

“আসলে আজ আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার কথা ছিলো।এজন্যই এখানে আসতে চাইনি।পরে ওকে সব বলার পর বললো যাও সমস্যা নেই।কিন্তু আমি জানি ও রাগ করবে তাই বলেছিলাম পার্টিতে চলে আসো।এখন ও নাকি এসেছে,কীভাবে ভেতরে আনবো না কী করবো বুঝতে পারছিনা”

আলফির কথায় সামান্য হেসে চাঁদ বলে,

“হায়রে!এই ব্যাপার?”

“না মানে তুমি বুঝছো না”

আরেকটু শব্দ করে হেসে চাঁদ বলে,

“বুঝেছি ভাইয়া বুঝেছি।আপনি চলুন আমি তাকে নিয়ে আসছি।আর কাউকে বুঝতে দেবেন না যে সে আপনার গার্লফ্রেন্ড হয় তাহলেইতো হলো”

“আমার যেই বিচ্ছু বোনেরা আছে!এক সেকেন্ডেই বুঝে যাবে”

“না বুঝবেনা।আমি সেই ব্যবস্থাই করে দিচ্ছি চলুন”

বেশ অনেক্ক্ষণ ধরেই চাঁদকে পর্যবেক্ষণ করছে প্রণয়।বর্তমানে আলফির সাথে তাকে দেখে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।অতঃপর আলফির সাথে চাঁদকে হাসিমুখে কোথাও যেতে দেখে দাতে দাত চেপে নাসারন্ধ্র প্রসারিত করে বলে,

“স্বভাব আর গেলোনা!”

কথাখানা বলেই স্টেজের দিকে উঠতে উঠতে রামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“বউতো তোর এলোই।সেরিমনি শুরু কর”

রামিম বলে,

“দাড়া সবাই এসে নিক।যার জন্য এত আয়োজন হলো তাকেইতো দেখছিনা”

প্রণয় বুঝতে না পেরে বলে,

“কার কথা বলছিস?”

“কার আবার?তোর বউয়ের”

চাঁদের কথা শুনে বিরবির করে প্রণয় কিছু একটা বলতেই উশ্মি বলে,

“কী ভাবছো ভাইয়া?যাও ভাবিকে নিয়ে এসো ভাবি আসলেই শুরু করি”

প্রণয় আশেপাশে তার কোনো বোনকে না দেখে বিরক্তি নিয়ে নিজেই স্টেজ থেকে নামে চাঁদকে ডাকার জন্য।
অতঃপর চাঁদ যেখানটায় গিয়েছিলো সেখানে এসে দেখে চাঁদ আর আলফিসহ সেখানে আরও একটা মেয়ে উপস্থিত।আর চাঁদ তাকে বলছে,

“তোমরা দুজন ভেতরে যাও।যদি কেউ সন্দেহ করে বা দেখে ফেলে আমি এসে সামলে নেবো”

হঠাৎ প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠে পেছন ঘুরে তাকায় চাঁদ,

“কী সামলাবেন আপনি?”

প্রণয়কে দেখে চাঁদ নিম্নস্বরে বলে,

“সে আপনার না জানলেও চলবে”

চাঁদের কথা শুনে চাঁদের দিকে এগিয়ে এসে চাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

“বউ হন আপনি আমার”

অতঃপর আলফির দিকে তাকিয়ে বলে,

“কিরে আলফি?বউ কী করছে না করছে আমি তা জানতে পারি না নাকি?”

তখনই আলফি বলে,

“হ্যা পারিস তো।আসলে ও হচ্ছে তনিমা,আমার গার্লফ্রেন্ড।ভেতরে নিতে পারছিলাম না তাই চাঁদ কে নিয়ে এসেছি ব্যবস্থা করে দিতে”

“ওহ আচ্ছা!এটা সোজাসুজি বললেইতো হয় মিস রেডরোজ।পেচানোর স্বভাব আপনার আর গেলোনা!”

প্রণয়ের সাথে কোনোরূপ কথা না বলে চাঁদ তাদের রেখেই ভেতর দিকে এগিয়ে গেলে আলফি বলে,

“কিরে রাগ করে আছে নাকি?”

“ঐ একটু আকটু”

“যা তাহলে বউয়ের রাগ ভাঙা”

“যাচ্ছি।তোরাও ভেতরে আয়,আংটিবদল শুরু হবে”

“হ্যা আসছি,চল”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অতঃপর আংটিবদল সম্পন্ন হলো।উশ্মি আর রামিম একে অপরের নামে লিখিত হলো।সকলেই খুশিতে মিষ্টিমুখ করছে।আর সেখানে সবচাইতে বেশি খুশি রায়হানকেই দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ করে রায়হানের এত পরিবর্তনের কারণ কেউই উদঘাটিত করতে পারছেনা।তবে চাঁদ রায়হানের জন্য বেজায় খুশি।সে মনেপ্রাণে চাচ্ছে এবার যেনো শিফাও রায়হানের নামে লিখিত হয়ে যায়।তখন শিফার থেকে তার পছন্দের পুরুষের নাম না জানলেও,রায়হানের দিকে তার তাকানোর ভঙ্গিমা দেখেই সে বুঝে নিয়েছিলো লোকটাকে সে ভালোবাসে।তবে রায়হান কী করে বুঝবে সেটা?অথবা রায়হান কি ভালোবাসবে শিফাকে?এসব ভাবতে ভাবতেই সে পরিকল্পনা করছিলো কী করে দুজনকে কাছে আনবে।কীভাবে রায়হানের মনেও শিফার জন্য অনুভূতি জাগাবে।ভাবতে ভাবতেই তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলেও যায়।সামান্য হেসে সে একবার রায়হান তো আবার শিফার দিকে তাকায়।তারই মাঝে তার মনে পড়ে রিদি আর মিরের কথা।কিন্তু এবার তাকে বেশ চিন্তিত দেখায়।রিদি মেয়েটা বেশ নম্র-ভদ্র।তবে মির?যতই মিরের সাথে চাঁদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হোক না কেনো সে চায় না এমন এক ছেলের সাথে এতটা সুশীল মেয়ের কোনোকিছু হোক।একজন প্লেবয় ভাই হিসেবে যতই পার্ফেক্ট হোক না কেন একজন স্বামী হিসেবে সে কতটা পার্ফেক্ট হতে পারবে?আর রিদি?মেয়েটা এখনই মিরের গার্লফ্রেন্ড আছে জেনে নিজের যেই দশা করেছিলো যদি তাদের মাঝে কিছু হওয়ার পর মিরকে অন্যের সাথে দেখে তখন?কীভাবে সামলাবে নিজেকে?আর মির?সে কি পারবে রিদিকে সত্যি সত্যি ভালোবাসতে?নাকি তার প্লেবয় স্বভাব কখনোই যাবেনা?ভাবতে ভাবতেই মিরের পানে তাকায় চাঁদ।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত দশটা চল্লিশ মিনিট,
খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষে চাঁদ হাত ধুতে ওয়াশরুমে আসলে দেখে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে আলফির গার্লফ্রেন্ড তনিমা।তা দেখে হাত ধুতে ধুতেই চাঁদ তাকে জিজ্ঞেস করে,

“খেয়েছো তনিমা?”

কল কেটে দিয়ে তনিমা হেসে বলে,

“হ্যা ভাবি খেয়েছি।তুমি খেয়েছো?”

“হ্যা খেয়েই আসলাম।কার সাথে কথা বলছিলে?”

“বাসা থেকে ভাবি কল দিয়েছিলো”

“ওহ আচ্ছা তাহলে চলে যাবে এখন?”

“হ্যা ভাবি,অনুষ্ঠানও তো প্রায় শেষই”

“হ্যা।তাহলে আবার এসো একদিন বাসায়।আলফি ভাইয়াকে নিয়ে আসা লাগবেনা।আমায় কল দিও আমিই তোমায় নিয়ে আসবো কেমন?”

মৃদু হেসে তনিমা বলে,

“ঠিক আছে ভাবি তোমার নাম্বারটা দাও।ওহ হ্যা আরেকটা কথা”

“কী?”

“তোমায় তখন থেকে বলবো বলবো করে বলা হচ্ছিলোনা”

“কী কথা?”

“আমার এসাইলামে একজন মানসিক রোগী আছে।দেখলে একদমই বোঝা যায়না সে যে অসুস্থ।সারাদিন সুস্থ স্বাভাবিক থাকবে তবে দিনের আলো কমে গিয়ে রাতের অন্ধকারে আকাশ আচ্ছন্ন হতে হতেই তার পাগলাটে স্বভাব শুরু হয়”

তনিমার কথার মাঝেই চাঁদ বলে,

“তোমার এসাইলাম মানে?”

তনিমা হেসে বলে,

“ওহ তোমাকেতো বলাই হয়নি।আমি একজন সাইকোলজিস্ট”

“ওহ আচ্ছা আচ্ছা!গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট তাহলে?”

“হ্যা ভাবি”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“আমারও হওয়ার কথা ছিলো।যাক সেসব,তারপর সেই লোকটার কী হলো?”

“ওহ হ্যা,তোমাকে যেজন্য বলছি।সেটা হলো তার মুখে প্রায়শই চাঁদ নাম শুনি আমি।তো যেহেতু তোমার নামও চাঁদ,তাই ই আমার তার কথা মনে পড়লো বলে তোমায় বললাম”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“একজন ভারসাম্যহীন লোক আমার নাম বলে?কী বলে সে?”

“আরেহ ভাবি!চাঁদ কি শুধু তুমিই নাকি?দুনিয়ায় চাঁদ নামের মেয়ের অভাব আছে নাকি?আর তার মুখে প্রায়শই শুনি ‘আমার চাঁদকে ছেড়ে দাও’ আরও বলে ‘আমার চাঁদকে বাঁচাও প্লিজ!’ আমাকেইতো প্রায় প্রায় বলে ‘প্লিজ তনি ডক্টর আমার চাঁদকে তুমি বাঁচাও,ওরা ওকে মে!রে ফেলবে।আমি আসলে বুঝেই উঠতে পারিনা সে বলছেটা কী?কেনোই বা বলছে?বা তার জীবনে হয়েছিলো টা কী?”

হঠাৎ করেই চাঁদের হৃদপিণ্ড দ্রুতগতিতে চলাচল করে।হৃদস্পন্দন তীব্র হয় তার।সে তনিমাকে জিজ্ঞেস করে,

“লোকটার নাম কী?”

“তার নাম…..”

বলতে বলতেই তনিমার ফোনে আবারও তার ভাবির কল আসে।তাই তনিমা চাঁদের থেকে বিদায় নিয়ে বলে,

“তার ব্যাপারে আরেকদিন বলবো ভাবি।আমার ভাবি চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে।এত রাত হলো এখনও যাচ্ছিনা কেনো।আসি তবে?তুমিও আমার বাসায় যেও,আবার দেখা হবে ভাবি আর নিজের খেয়াল রেখো।জলদি সুস্থ হয়ে যাও”

বলে দ্রুতগতিতে ফোন কানে লাগিয়ে তার ভাবির সাথে কথা বলতে বলতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায় তনিমা।আর চাঁদ সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে রয়।আয়নার পানে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে সে’ সন্ধ্যার বিভৎসকর স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠতেই চোখজোড়া খিচে বন্ধ করে নেয় সে।ঠোট কামড়ে ধরতেই দু’ফোটা অশ্রুজল কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে তার।

To be continued…..