আবার প্রেম হোক পর্ব-৭৩

0
621

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৭৩.
“তোমার ভাই আর আমার মাঝে কী হয়েছে তা জানার প্রয়োজন নেই।তুমি ভাইয়াদের নিয়ে চলে যাও,ঠিক আছি আমি”

চাঁদের স্পষ্ট মতবাদে ভ্রুযুগোল কুঞ্চিত হয় উশ্মির।সে কিছু বলতে নিলেই চাঁদ তাকে বাঁধা প্রদান করে বলে,

“দেখো উশ্মি,তোমাদের বিয়ের ঠিকঠাক একমাসও বোধহয় হয়নি।আগে নিজের লাইফ সেটেল করো,এসব পরেও দেখা যাবে”

“কিন্তু কী নিয়ে এসব হয়েছে আর ভাই ই বা কেনো তোমার বিরুদ্ধে এসব প্রমাণ দিয়েছে?তুমি কি সত্যি সত্যি?”

“অতীতে এমন কিছুই করেছিলাম যার রেশ এখনও রয়ে গেছে।আর কিছু জানতে চাবেনা,যাও তোমরা”

উশ্মি চাঁদের অস্বস্তি বুঝতে পেরে আর কোনো বাক্য ব্যয় না করে রামিম আর চৈত্রের সহিত বের হয়ে যায় থানা থেকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“আমি কেবলই তাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম।একজন শিশুর মৃ*ত্যু কখনোই কামনা করিনি”

বলেই হতাশার শ্বাস ফেলে হাসপাতাল থেকে বের হয় প্রণয়।আজ আর গাড়িতে করে সে যায়না।হেটেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।সাথে মস্তিষ্কে কিছু জিনিসের গরমিল হিসাবনিকাশ চলছে।অতঃপর তার মস্তিষ্ক তাকে ঠিক সেদিন টায় নিয়ে যায় যেদিন চাঁদ তার থেকে পালিয়েছিলো মাইলের পর মাইল দূরে,বহুদূরে।প্রণয়ের সর্বপ্রথম স্মরণে আসে সে যখন হাসপাতালে বসে ছিলো আর তার ফোনে কিছু বার্তাসহ ছবি আর ভিডিও আসে এবং দ্রুতগতিতেই সে তার মুঠোফোনটাকে তৎক্ষনাৎ ফ্লোরে আছরে মা‌!রে সেই দৃশ্যসমূহ।অতঃপর ভাবে যা পাওয়ার সে তাতেই পাবে,কিন্তু কীভাবে?এতবছর আগের ফোন এখন কি রিপেয়ার করা যাবে?আর যদি যেসব সে দেখেছে সেগুলো সত্যি না হয়?তবে?কিন্তু সেতো স্পষ্ট অরণ আর চাঁদকে দেখেছে।আর যেসব সে শুনেছে দেখেছে সেগুলোই বা কী করে মিথ্যা হিসেবে মানবে?চাঁদ কি আসলেই নিরাপরাধ?নাকি অন্য কিছু?এসব ভাবতে ভাবতেই ঘাম ছুটে যায় তার আর মাথায় অসহনীয় যন্ত্রণায় ফে!টে যাবার উপক্রম।আর কিছু ভাবতে না পেরে রিক্সা নিয়ে সে সোজা বাড়ি চলে আসে।এসেই তার নিজস্ব ছোট আলমারি খুলে তার ভেতরে থাকা পুরোনো সব জিনিস খতিয়ে দেখতে লাগে।যেখানে সে চাঁদের সাথে কাটানো মুহুর্তের সাক্ষীস্বরূপ রেখে দেওয়া স্মৃতিসমূহ খুঁজে পায়।চাঁদের ছোটখাটো জিনিস সেখানে বিদ্যমান।অতঃপর চাঁদের নীলরঙা চুড়িসহ আরও বিভিন্ন সাজসজ্জার জিনিসপত্র দেখে প্রথম প্রথম যখন চাঁদ নামক তার একান্ত চন্দ্রময়ীকে সে তার মন দিয়ে বসেছিলো সেসব জিনিস স্মরণে আসে।অল্প বিস্তর হতাশার শ্বাস ত্যাগ করে সে আলমারির বেশ ভেতর দিকটায় লুকিয়ে রাখা বাক্সটা নিতে গেলেই নজরে আসে একটা ডায়েরী।ডায়েরীটা চোখে পড়তেই তার মনে পড়ে সেদিনের কথা যেদিন ডায়েরীটা হারিয়ে যাওয়ায় উন্মাদের মতোন হয়েছিলো চাঁদ।কী আছে এই ডায়েরীতে?বিশেষ কিছু?নাকি চাঁদের লুক্কায়িত সত্যসমূহ?বেশ উদগ্রীব হয়ে উঠে প্রণয়।তার মস্তিষ্কে এতকিছুর ভার একসাথে বহন করা সম্ভব হচ্ছেনা।তবে সর্বপ্রথম ফোনটা থেকে সত্যিসমূহ উদঘাটিত করতে হবে তাকে।এই ভেবে বাক্সটা খুলতেই ভাঙাচুরা,পচে যাওয়া পুরোনো কিছু জিনিস তার নজরে আসে।তাতে বিদ্যমান একটা শুকিয়ে আসা পচা লালগোলাপ,একটা জং ধরে যাওয়া হাতের আংটি,পুরোনো লালচে হলুদ কাগজের ভাজ করা এক পত্র,ডান পাশে সেই ভাঙা পুরোনো ফোনটা,বাম পাশে শুকিয়ে যাওয়া র*ক্তেমাখা একটা পাতলা ওড়না বেশ কুচকানো অবস্থায় আর ফোনটার নিচে এক এলোকেশী রমনীর হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর ছবি। যখন বিকেলবেলার রোদ এসে তার হলদে ফর্সা ত্বক আরও উজ্জ্বলতা আর লাবণ্যময়তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে বাধ্য করেছিলো,পরণে তার বেশ পাতলা আর ছোট হাতার একটা টি-শার্ট,পাতলা এক ওড়না গলায় পেচানো এবং দূরদৃষ্টি কেবলই একজনের পানে,গালজুড়ে লজ্জার র*ক্তিম আভা,চোখজুড়ে মুগ্ধতার রেশ।সে এক অভূতপূর্ব মুহুর্তের প্রতিচ্ছবি!ফোনের নিচ থেকে ছবিখানা নিয়ে দৃশ্যসমূহ স্মরণ করতেই প্রণয়ের মনে পড়ে সেদিনের কথা যেদিন প্রথম অরণের সহিত চাঁদকে কেবল একটিবার দেখার জন্য মরিয়া হয়ে চোরের ন্যায় তার প্রিয় রমণীর বাড়ির পাশের ছাদে হাজির হয়েছিলো আর সেই প্রথমবারের ন্যায় মেয়েটাকে সে অপরূপ রূপে বিমোহিত নয়নে দেখতে দেখতে অজান্তেই নিজ মুঠোফোনে সেই সুন্দরতম দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দী করেছিলো।অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছবিটা সেভাবে রেখেই র*ক্তেমাখা ওড়নায় হাত দেয় সে।ওড়নাটা হাতে নিয়ে পলকহীন তার পানে চেয়ে মনে মনে সে বলে,

“এমনটা কেনো করলেন চাঁদ?অরণের সাথে আপনি কেনো এমন করলেন?সেদিন ওভাবে না পালালেই কি পারতেন না?যদি কিছু থেকেই ছিলো কেনো বলেননি আমায়?আপনার ঐ সুন্দরতম মুখশ্রীর আড়ালে আসলে কোন রূপ লুক্কায়িত বলবেন?রূপটা কি বেশ কুৎসিত?নাকি সহজ-সরলা কোনো রমণীর গোছানো কোনো মিথ্যে?”

কথাগুলো মনে মনে আওড়াতেই তার স্মরণে আসে মিরের বলা চাঁদের প্রাণ বাঁচানোর কথাগুলো আর সেইসাথে মনে পড়ে চৈত্রের বলা তার বোনের জন্য এ শহর অভিশপ্ত বাক্যখানা।কিন্তু কেনো?কেনোই বা অভিশপ্ত হবে?কেনোই বা প্রাণ বাঁচানোর কথা আসবে?যে নিজেই কারো জীবননা*শের কারণ তার প্রাণ কী করে সংকটে আসে?কোনোকিছুতেই কিছু মেলাতে পারছেনা প্রণয়।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে ফোনটা হাতে নিতেই তার আরেকবার মনে পড়ে চাঁদের দুইবছর গ্যাপ গিয়েছে,কিন্তু সেটা কেনো?আহ!আর কিছু তার মস্তিষ্ক নিতে পারছেনা।সে তৎক্ষনাৎ মোবাইলটা বাদে বাকিসব আলমারিতে রাখতে রাখতে আবারও নজরে আসে আধখোলা সেই ডায়েরীটা।যা ধপ করে দুপুরবেলা তারই পায়ের কাছে পড়েছিলো ছাদের উপর হতে।যাকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কেউ পায়নি।যার জন্য অসুস্থতায় মূর্ছা গেছিলো চাঁদ নামক তার একান্ত এবং একমাত্র অর্ধাঙ্গিনীরূপী নিজস্ব নারী।কপাল তার কুচকে আসে সেদিনটা মনে করতেই।সে ডায়েরীটার কথা বেমালুম ভুলে বসেছিলো।তবে আপাতত ডায়েরী পড়ার সময় তার নেই।আগে যেতে হবে চাঁদের কাছে।সত্যিটা তার জানা ভীষণ প্রয়োজন।সেইসাথে বছর পাঁচেক আগের অরণ আর তার এত মেলামেশার কারণসমূহও।আলমারিটা ভালোভাবে তালাবদ্ধ করে ভাঙা ফোনটা পকেটে পুরে অস্থিরচিত্তেই ছুট লাগায় সে রিপেয়ারিং অফিসে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বিকাল তখন চারটা বেজে দশ মিনিট,
মোবাইল ঠিক করিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছিলো প্রণয়।এমতাবস্থায় ভাঙা ফোনটা সে চালু করতেই কয়েকটা মেসেজের টুংটাং শব্দ ভেসে আসে কানে।সাথে সাথে ধুক করে উঠে বুকটা তার।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে ফোনের লক খুলে নোটিফিকেশন বার চেক করতেই ‘চন্দ্রময়ী’ লিখা নম্বর হতে প্রায় বছর ছয়েক পূর্বের কয়েকটা বার্তা লক্ষ্য করে সে।মেসেজ অপশনে যেতেই তার চোখে পড়ে সবগুলো বার্তা,

“আমায় বাঁচান প্লিজ!”

“প্লিজ প্রণয় জলদি আসুন।ওরা আমায় মে!রে ফেললো”

“দয়া করে আর রেগে থাকবেন না।বাঁচান আমায়”

“শু!করগুলো আমায় বাঁচতে দেবেনা প্রণয়”

“আসুন না প্লিজ‌!”

“আমি…..শহিদুল্লাহ হলের পাশের ঝোপটায় লুকিয়ে আছি।তাড়াতাড়ি আসুন”

“প্লিজ!”

অতঃপর আর কোনো বার্তা সে নম্বর থেকে আসেনি।হৃদয় খাঁ খাঁ করে উঠলো প্রণয়ের।বেশ শব্দ করেই হৃদয় বুঝি তার ভেঙে গেলো?নিশ্বাসের গতি বাড়লো তার।বিড়ালাক্ষীজোড়া ঝাপসা হয়ে এলো।শক্ত,তথাকথিত পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী প্রণয় নামক হৃদয়হীন ব্যক্তির আঁখিদ্বয়ও কি সিক্ত হলো?বুকের ভেতর এত জ্বালা পো!ড়া করছে কেনো?প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়?নাকি আর কখনোই তাকে না পাবার তীব্র যন্ত্রণা?অতঃপর শুষ্ক কপোল বেয়ে বুঝি গড়িয়ে পড়লো এক ফোটা নোনাজলও?পুরুষ মানুষের না কাদতে নেই?তাদের না কাদা বারণ?তবে শক্তপোক্ত এই মানবের বিড়ালাক্ষীজোড়া তা মানছেনা কেনো?কেনো হৃদয়সহ আঁখিদ্বয়ও জ্ব!লেপু!ড়ে ছাড়খাড় হচ্ছে তার?উহ!এ কেমন অসহনীয় যন্ত্রণা?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যাবেলা,
উশ্মি ফের এসেছে চাঁদের সাথে দেখা করতে।আর এবার বাকি আসামীদের অন্যপাশে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।সেখানে কেবলই চাঁদ আর উশ্মি বিদ্যমান।চাঁদের পাশে বসে উশ্মি বলে,

“বিনা সংকোচে বলো ভাবি।এই দেখো তোমার আর ভাইয়ার ডিভো!র্স পেপার।আমি সব রেডি করে রেখেছি।যেভাবেই হোক তোমাদের ডি!ভোর্স আমি দেওয়াবোই!ভাইয়ের আর সবকিছু মানতে পারলেও এই মিথ্যা জিনিসটা জাস্ট মানতে পারছিনা আমি।তুমি বলো কেনো ভাইয়া এমন করলো তোমার সাথে?দুজন নাকি দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসতে?”

To be continued…..

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৭৩.(বর্ধিতাংশ)
“একজন ধর্ষি!তাকে কি কেউ ভালোবাসে উশ্মি?বাসতে পারে কি?”

জেল হাজতের পাকায় দৃষ্টি সীমাবদ্ধ করে বাক্যখানা আওড়িয়ে দাঁত দ্বারা ঠোট কা!মড়ে ধরে চাঁদ।চোখ তার জলে টইটম্বুর।বুকের ভেতর দহন যন্ত্রণা হচ্ছে।এর তুলনায় ম!রণ যন্ত্রণাও ঢের সুখের হতো।এরূপ ভাবনাই আপাতত চাঁদের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে।তবুও সে নিজেকে সামলে লম্বা শ্বাস ফেলে দুচোখের পাতা এক করে বর্ষণ ঝড়ায় তার শুষ্ক কপোল গড়িয়ে।বাঁচতে আর ইচ্ছে করছেনা।এই জেলখানা থেকে বেরুতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা।বড়ো ইচ্ছে জাগছে এখানেই থেকে সে পচুক,পচে গলে ম!রে যাক।নাহয় তার খুব কঠিন সাজা হোক।সেই সাজার দরুন তার প্রাকৃতিক এক মৃ!ত্যু ঘটুক।আ!ত্মহ!ত্যার পথ না সে পেরেছিলো তখন নিতে,না পারছে এখন।এখন যেনো তখনকার তুলনায়ও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে।এ যন্ত্রণা ভালোবাসার বিনিময়ে কেবলই সন্দেহ আর অবিশ্বাস পাওয়ার।এ যন্ত্রণা ভালোবাসার মানুষের থেকে কেবলই অপমান আর লাঞ্চণা-বঞ্চণার।এ যন্ত্রণা কাউকে সত্যিগুলো বলতে না পারার।তবুও আজ সে উশ্মিকে বলবে,পুরো সত্যটা সে উশ্মিকে জানাবে।অতঃপর আবার পালিয়ে যাবে সকলের দৃষ্টির বাইরে।দূরে,বহুদূরে।আর যে সে পারছেনা।এত দুঃখ,কষ্ট আর সহ্য করার মতো ক্ষমতা চাঁদের নেই।তার ভাবনায় সুতো কাটে উশ্মির অবাক কন্ঠে চেচানোতে,

“কী বলছো ভাবি?মাথা ঠিক আছে?”

লম্বা শ্বাস ফেলে লাল হয়ে আসা দৃষ্টি নিয়েই উশ্মির পানে তাকায় চাঁদ।অতঃপর কিঞ্চিৎ হেসে বলে,

“আমার মাথা ঠিকই আছে উশ্মি।যে সত্যি সকলে জানতে চেয়েছে।যে সত্যি এতবছর আমি কেবলই আমার হৃদয়জুড়ে লুক্কায়িত রেখেছি,তা আমি তোমায় বলছি।আর যে ভার নিতে পারছিনা রে!মনে হচ্ছে কেউ আমার হৃদয় চি!ড়ে দিচ্ছে!”

“পাগল হয়েছো?কিসব বলছো ভাবি?”

“কেবলই সেই সত্যিটুকুই তোমায় বলবো,যতটুকু জানা তোমার প্রয়োজন।এর বেশি জানতে চাইবেনা তো?”

বলে অসহায় দৃষ্টি উশ্মির পানে নিক্ষেপ করতেই উশ্মি বলে,

“চাইবোনা,বলো”

লম্বা শ্বাস ফেলে হাজতের শোয়ার উঁচু জায়গায় পা গুটিয়ে বসে দৃষ্টি ফ্লোরপানে রেখে বেশ ধীর কন্ঠে মলিনভাবে চাঁদ বলতে আরম্ভ করে,

“তোমার ভাই আদোতে আমায় ভালোবাসতো কিনা জানিনা উশ্মি।তবে এখন কেবলই ঘৃ!ণা করে।আর তার কারণ হলো সে মনে করে অরণের এ অবস্থার জন্য আমি দায়ী।কিন্তু আমি অরণকে কস্মিনকালেও মা!রার মতো জঘন্য কাজ চিন্তায়ও আনতে পারিনা,পারিনি।হ্যা সেদিন অরণের মাথায় আ!ঘা!ত আমি অবশ্যই করেছিলাম তবে তা কেবলই তাকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচাতে,মা!রতে নয়।আর সেদিন পালিয়েছিলাম এইজন্যই যে আমার মতো একজন ধ!র্ষি!তা কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।কেউ তাকে ভালোবাসতে পারেনা,প্রণয়ও কখনো বাসবেনা।সে বাসলেও আমি চাইনা তার জীবনে আমি আর থাকি।কেনোই বা থাকবো?কীই বা আছে আমার মাঝে?সবতো বিলীনই হয়ে গেছে।বর্তমানে আমি কেবলই এক মিথ্যে খোলসে আবৃত মানবমূর্তি।আর আমার ধ……ধর্ষ!ণের কথা আমার ভাই আর অরণ ব্যতীত আর কেউ জানেনা।আমার নিজ মা-বাবাও না।আর আমি আশা করবো এ সত্যিটা তুমি যেভাবে জেনেছো সেভাবেই সবটা গিলে হজম করে ফেলবে”

বলেই আড়চোখে উশ্মির পানে তাকায় চাঁদ।তাকিয়ে দেখতে পায় উশ্মির চোখভর্তি পানি।তা দেখামাত্র হকচকিয়ে উঠে উশ্মির বাহু ছুয়ে চাঁদ বিচলিত হয়ে বলে,

“এই মেয়ে কাদছো কেনো?কী হয়েছে?”

ঠোট কা!মড়ে দীর্ঘ শ্বাস ভেতরে নিয়ে উশ্মি বলে,

“এতটা কষ্টদায়ক বিষয় এতটা সাবলীলভাবে কী করে বলছো ভাবি?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হেসে চাঁদ বলে,

“একবছরেরও বেশি সময় ধরে ট্রমায় ছিলাম।পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়েছি,নিজেকে ঠিক করতে হয়েছে।নিজের মা-বাবা,ভাই,পুরো পরিবারটার জন্য।চাইলেই আ!ত্মহ!ত্যার পথ বেছে নিতে পারতাম তবে আল্লাহ যে আমায় কখনো ক্ষমা করবেন না।আর না পারবো আম্মু আব্বু আর আমার একমাত্র প্রাণের চেয়েও প্রিয় ভাইটার দীর্ঘশ্বাস আর অভ্যন্তরীণ কান্নার কারণ হতে।আম্মু হয়তো চেচিয়েই কান্না করতে পারবে।কিন্তু আমার ভাই?আর আমার আব্বু?তারাতো কাদতেও পারবেনা,সইতেও পারবেনা।আমার পুরো পরিবারটা এক নিমিষেই ধ্বং!স হয়ে যাবে।না পারবে কেউ ভালোভাবে বাঁচতে,না পারবে ম!রতে।সকলের মনে কেবলই এক দীর্ঘশ্বাস হয়ে বাঁচতে চাইনি উশ্মি।নিজেকে ভুলে পরিবারটার জন্যই বেঁচে আছি।আর চির ঋণী হয়ে আছি অরণ নামক সেই পবিত্র আত্মার অধিকারী মানবটার প্রতি।সে যদি সেদিন না থাকতো জা!নোয়ারগুলো…….জা!নোয়ারগুলো আত্মাটাকেতো আমার মে!রে ছিলোই,রুহটাকেও মে!রে দিতো।কেবল তার জন্যই বেঁচে ফিরতে পেরেছিলাম।আর পশুগুলোর নি!র্মম সেই অত্যাচারগুলো মনে পড়লে এখনও আমার গা শিউরে উঠে উশ্মি!তাদের সেই বি!শ্রী ছোয়াগুলোয় গা ঘিনঘিন করে উঠে আমার।ইচ্ছা করে নিজ দেহকেই কে!টেকু!টে নষ্ট করে দেই।ঘষেমেজে আগের মতো চকচকে করে ফেলি।কিন্তু আমি যে পারিনা উশ্মি।পারিনাতো!যখনই সেই দৃশ্যগুলো মনে পড়ে তখন যেনো একবার করে বিশ্রীভাবে ম*রে যাই আমি!বড্ড পীড়াদায়ক এ যন্ত্রণা।নিজেকে জ্বালি!য়েপু!ড়িয়ে দিতে ইচ্ছা হয়”

অতঃপর ফের সেদিনে ফিরে যায় যেদিন নিজের সর্বস্ব খুইয়েছিলো চাঁদ।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বাড়িতে এসে নিজ রুম ভেতর থেকে আটকে দিয়ে উন্মাদের ন্যায় ঘর্মাক্ত শরীর নিয়েই আলমারি খুলে আধখোলা ডায়েরীটা বের করে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে পড়া আরম্ভ করে প্রণয়।প্রথম পাতা,

‘আজ আমার সতেরোতম জন্মদিন।তো সেই উপলক্ষেই নিজেকেই নিজে দু’টো ডায়েরী গিফট করলাম।তন্মধ্যে তুমি একটা।তোমার প্রতিটা পাতায় নিজের সুখ,দুখের আলাপন করবো প্রিয়ংবদা।হ্যা,তোমায় প্রিয়ংবদা বলেই আখ্যায়িত করলাম।কেনোনা আমায়তো কেউই কখনো কিছু বলে আখ্যান দিলোনা।আমিই নাহয় দেই?আজ আর লিখবোনা তবে শেষে এইটুকুই বলছি আজ আমি ভীষণ খুশি!ভীষণ!কেনো খুশি তাই জানতে চাচ্ছো না?বলছি বলছি সবুর করো!জানোনা?সবুরে মেওয়া ফল?আমার প্রাণের প্রিয় ডিএমসি নিয়ে এক বুকভরা স্বপ্ন গেথেছি মনে।যে করেই হোক এইচএসসিতে আমায় প্লাস পেতেই হবে।এসএসসিতে ছুটে গেছে তাতে কী?এইচএসসিতে পেয়ে আমার মেডিকেল জয়ের আরও একধাপ এগিয়ে যাবো আমি!তুমি তাতে সাথে থাকবেতো?দেখবেনা আমার স্বপ্নজয়ের সেই সুন্দরতম মুহুর্তটা?যেদিন আমি পদার্পন করবো আমার স্বপ্নের ঢামেকে?কী দেখবেতো?তোমাকে দেখতেই হবে!আমি দেখাবো।হোহোহোহোহোওওওও!’
০৭.০২.২০০৭

আর কিছু লিখা নেই সেথায়।পরবর্তী পাতা উল্টাতেই প্রণয়ের নজরে আসে,

‘প্রিয়ংবদা,
জানো?আজ আমার ভীষণ মন খারাপ।এতটাই খারাপ যে কাউকে বলে বোঝাবার মত ক্ষমতা আমার নেই।স্বপ্ন আমার এভাবে চূর্ণ না হলে কি পারতোনা বলো?আল্লাহ আমার সাথে এমন করলেন কেনো?কী দোষ ছিলো আমার?চেষ্টাতো কম করিনি।এ প্লাসটা আমার ছুটে গেলো কেনো?এবার কী করে আমি আমার স্বপ্নকে জয় করবো?কীভাবে আমার ঢামেক আমার হবে বলবে?উহ!এত যন্ত্রণা হচ্ছে!পারছিনা আর’
১৭.০৬.২০০৮

প্রতিটা পাতা পড়তে পড়তেই আলমারির সাথে ঠেস মেরে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে প্রণয়।অতঃপর ফের পাতা উল্টায়,

‘আমার শেষ চেষ্টাটুকু করতে হবে প্রিয়ংবদা।আমি আমার স্বপ্নকে নিজের কাছে ছিনিয়ে আনবোই!আমাকে পারতেই হবে।এভাবে নিজ স্বপ্নকে বিলীন হতে দেবোনা আমি।আব্বুর সেই ছোট্ট বাঘিনীটাকে আজ বড় হতে হবে।বাঘিনীতো হারতে পারেনা তাইনা?সেতো হারা শেখেই নি!সে কেবলই থাবা মে!রে সবটা ছিনিয়ে আনতে জানে।এই ভূমিতে বিদ্যমান চাঁদও তাই করবে।ছিনিয়ে আনবে তার স্বপ্ন,তার স্বপ্নের ঢামেক’
০৭.০৭.২০০৮

অতঃপর আবারও পাতা পাল্টায় প্রণয়,

‘আলহামদুলিল্লাহ!আলহামদুলিল্লাহ!নিজ স্বপ্নকে জয় করেছি আমি!এইতো স্বপ্নটাকে নিজের করে পেলাম।এভাবেই সব স্বপ্নকে জয় করে নেবো ইনশাআল্লাহ।তবে এতটা অবিশ্বাস্যনীয় রেজাল্ট হবে ভাবতেই পারিনি একদম!মাসখানেক বাদে যাবো।যাবো আমার স্বপ্নের ঢামেকে।উহুউউউ!কি যে খুশি আমি’
২৯.০৯.২০০৮

পরবর্তী পাতায় লিখা,

‘কেউ কখনোই জানতে পারবেনা এডমিশনে ৯৮ টার্গেট রেখে ৯৮ পাওয়াটা কতটা দুঃসাধ্য ছিলো!কেউ কখনোই জানবেনা ঠিক কি কি’র মধ্য দিয়ে আমি গিয়েছি।কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধও করিনা।যার যা ভাবার ভাবুক আই জাস্ট হার্ডলি কেয়ার!’
৩১.১০.২০০৮

ডান পাশে লিখা তারিখটায় চোখ পড়তেই প্রণয়ের স্মরণে আসে ঠিক এ দিনটায়ই চাঁদের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ।এদিনেইতো হৃদয় তার হরণ করেছিলো সেই চন্দ্রময়ী নারী!অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে পাতা উল্টায় প্রণয়।আর তার নজরে আসে,

‘কী মনে করে সেই বিড়ালাক্ষীমানব নিজেকে?তার খুব দেমাগ?আমি তার সাথে কথা বলতে কি ম*রে যাচ্ছিলাম?নাকি তাকে একনজর না দেখলে চোখ খ!সে পড়বে আমার?আমিও তাকে দেখিয়ে দেবো চাঁদ কী জিনিস!আবার নাকি সেই বেয়াদবটার উপর ক্রাশও খেয়েছি ভাবলেই গা জ্ব!লে যায় আমার’
০৯.১২.২০০৮

পুরো পাতাটা পড়তেই কন্ঠনালী কেপে উঠে প্রণয়ের।ঠোটজোড়া সামান্য প্রসারিত হয়।সেইসাথে চোখজোড়াও হাসতে বাধ্য হয় তার।

To be continued…..