আবার প্রেম হোক পর্ব-৭৫

0
720

#আবার_প্রেম_হোক (১৮+ এলার্ট)
#নুসরাত_জাহান_মিম

৭৫.
দিগবিদিকশূন্য হয়ে ছুটে চলেছে চাঁদ।ইতোমধ্যে দৌড়াতে দৌড়াতেই চোখ থেকে চশমা খসে মাটিতে পড়ে তা ভেঙে গিয়েছে।চোখ যেনো আজ বাঁধ মানছেনা।বারংবার পিছু ঘুরে চাইছে সে।এই বুঝি দা*নব গুলো তাকে ধরে ফেললো।পায়ের গতি তীব্র হলো চাঁদের।চশমা ছাড়া সবকিছু ঝাপসা দেখছে।তবুও বাঁচার তাগিদে ছুটে চলেছে অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ দিয়ে।দৌড়াতে দৌড়াতে পা তার ভেঙে আসছে,তবুও থামার নাম নিচ্ছেনা।থামলেই যে মৃ*ত্যু সুনিশ্চিত।কিন্তু মৃ*ত্যুর ভয় সে করছেনা।মনে ভয়ের দানা বেধেছে অন্যকিছুর।জীবন নামক অধ্যায়ের অতি মূল্যবান কিছু চিরতরে হারিয়ে ফেলার ভয়।ন*রপিচা*শগুলোর উদ্দেশ্য যে কতটা ভয়ানক হতে পারে ভাবতেই চাঁদের দ!ম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো,চোখ ফে!টে কান্নারা বারবার উপচে পড়ছে গালে।ভীষণ জ্বালাপো!ড়া হচ্ছে চোখসহ হৃদয়ে।মনে মনে কেবলই আল্লাহকে ডাকছে সে।মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে পড়েছে তার।কোনোকিছুই ভেবে পাচ্ছেনা।একটাই চাওয়া,আজ তাকে যেকোনোক্রমে নিজেকে সহিহ সালামত বাঁচিয়ে ফিরে যেতে হবে।ফিরে যেতে হবে নিজ মা-বাবা আর ভাইয়ের জন্য।ফিরতে হবে নিজের জন্য।ফিরতে হবে বহুবছর বিশুদ্ধ শ্বাস নিয়ে বাঁচার জন্য।আর ভাবতে পারলোনা চাঁদ।দাঁত দ্বারা ঠোট কা!মড়ে ধরে আরেকবার পেছন ঘুরে দেখলো কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা।সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে।চশমা নেই তবুও সে জনশূন্য নীরব রাস্তায় কয়েকজনের পদধ্বনি উপলব্ধি করতে পারলো।হয়তো অনেক দূরে আছে,কিন্তু তারা আছে এবং আসছে!ধেয়ে আসছে তার দিকে।শহীদুল্লাহ হলের সামনে আসতেই সে দ্রুত বামে চেপে জঙ্গলের দিকটায় এগিয়ে চলে।কেবলই ঝোপঝাড় সেথায়।ঝোপের আড়ালে নিজেকে লুকাতেই লম্বা শ্বাস নির্গত হয় তার।নিশ্বাস নেওয়ার শব্দটাও যেনো বাতাসের সাথে তীরের ন্যায় কানে বিধ!লো চাঁদের।ভয় পেয়ে গেলো সে।এই বুঝি শয়তানের মূর্ত প্রতীকেরা তা শুনতে পেয়ে হা*মলে পড়লো তার উপর!ভাবতেই শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেলো চাঁদের।সে ফের শ্বাস নিতে গেলেই নিশ্চুপ হয়ে গেলো,শ্বাস নেওয়াটাও দুঃসা!ধ্যকর হয়ে উঠলো।ঘেমে লালচেবর্ণ ধারণ করেছে মুখমণ্ডল।চোখদু’টো র*ক্তিম।মস্তিষ্ক তার চলতে চাইলোনা।বুকের কাছে লুকানো বাটন ফোনটা কম্পিত হাতে বের করে সর্বপ্রথম তার স্মরণে আসলো প্রণয়ের নাম।সে বেমালুম ভুলে বসলো প্রণয়ের করা সবরকমের অপমান।সে দ্রুত টাইপ করতে লাগলো,

“আমায় বাঁচান প্লিজ!”

“প্লিজ প্রণয় জলদি আসুন।ওরা আমায় মে!রে ফেললো”

“দয়া করে আর রেগে থাকবেন না।বাঁচান আমায়”

“শু!করগুলো আমায় বাঁচতে দেবেনা প্রণয়”

“আসুন না প্লিজ‌!”

“আমি…..শহিদুল্লাহ হলের পাশের ঝোপটায় লুকিয়ে আছি।তাড়াতাড়ি আসুন”

“প্লিজ!”

একের পর এক বার্তা পাঠিয়ে ক্ষান্ত হতে পারলোনা চাঁদ।সঙ্গে সঙ্গেই তার স্মরণে এলো অরণের নাম।সে তৎক্ষনাৎ অরণের নম্বরে মেসেজ টাইপ করলো,

“অরণ?আমাকে প্লিজ বাঁচান!প*শুগুলো আমায় ধরে ফেলেছে।আপনারাতো আশেপাশেই আছেন,প্লিজ আসুন।আমি শহীদুল্লাহ হলের পাশের ঝোপটায় আছি।জলদি আসুন”

অতঃপর বুক তার হুহু করে উঠলো।চোখের সামনে নিজ ভাইয়ের নামটা ভেসে এলো।চোখ বুজে শ্বাস নিয়ে ভাইকে বার্তা পাঠালো,

“ভাইরে!জলদি আয়।তোর বোন যে ম*রে গেলো।নর*খা*দকেরা তাকে ধাওয়া করছে।বাঁচা ভাই।জলদি আয়।শহীদুল্লাহ হলের পাশেই আছি।দয়া করে বোনটাকে বাঁচা ভাই”

অতঃপর ফোন ভাইব্রেট মোডে ফেলে ফের বুকের কাছটায় গুজে রাখলো।বিভিন্ন রকমের সূরাহ পড়তে পড়তেই মনে মনে বললো,

“ও ভাই!ভাইরে আমার,জলদি আয়”

বলেই চোখজোড়া বুজে নিলো।আর পারছেনা,বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে।ঝোপঝাড়ের পাতাগুলো নড়েচড়ে উঠতেই ভয়ে সিটিয়ে গেলো।ধুপধাপ পায়ের শব্দে কান খাড়া করে বারংবার ঢোক গিলে শ্বাস নিলো।কেটে গেলো কয়েক মুহুর্ত।অতঃপর একটু নড়তে গেলেই শুনতে পেলো মাহতিম স্যারের কন্ঠস্বর,

“যতটা চালাক নিজেকে ভাবো,ততটা চালাক কিন্তু তুমি নও চাঁদ।যেখানেই লুকিয়ে আছো বেরিয়ে পড়ো।আজ আর তুমি জ্যা!ন্ত ফিরতে পারবেনা তার গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি তোমায়”

কী ভয়াবহ হু*মকি!রুহ কেপে উঠলো চাঁদের।পুনরায় ঘেমে গেলো সে।মৃ*ত্যুকে কখনোই ভয় পেতোনা।তবে আজ এই মুহুর্তে এসে মনে হচ্ছে তার ভুল হয়েছে,বড্ড ভুল!তার উচিত হয়নি এসবকিছুর মাঝে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া।অতঃপর ফের শুনতে পেলো একজন মহিলার কন্ঠস্বর,

“মিস মহুয়া?নাকি বলবো মিস চাঁদ?খুব ধূর্ত তুমি তাইনা?কিন্তু এই অহনার থেকে ততটাও ধূর্ত তুমি নও।তোমায় আমি সেদিনই সন্দেহ করেছি যেদিন তোমার কালো হাতে ধবধবে ফর্সা আভা দেখেছি।সন্দেহের মাত্রা সেদিন প্রগাঢ় হয়েছে যেদিন তোমার টুকরিতে চাঁদের জামাকাপড় দেখেছি।তবুও কিছু বলিনি।অপেক্ষায় ছিলাম সুযোগের।এবং আজ দেখো সেই সুযোগ হাত পেতে বসে আছে।তোমার পতন তখনই ঘটাতাম যখন ড্যাড আহানের দরজায় কড়া নাড়ে।কিন্তু আমার ভাই!সেতো তোমার প্রেমে মাতোয়ারা।তোমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই আ*হত হলো।এই মেয়ে বলোতো তোমার মাঝে কী আছে?সব ছেলেরা তোমার পিছুই কেন জোকের মতো লেগে যায়?আমার দুই ভাই ই তোমার নেশায় কেন আসক্ত?আর তোমার সেই প্রেমিক পুরুষ?কী যেনো নাম?ওহ হ্যা প্রণয়।সেও তো তুমি বলতে পাগল।এখন নাকি নতুন নাগড় জুটিয়েছো?তোমারই প্রেমিকের বন্ধু?মৌমাছির ন্যায় সকলে তোমার পিছু ভোঁভোঁ করে কেন?ততটাও সুন্দরী কিন্তু তুমি নও,যেমনভাবে ওরা সকলে প্রিটেন্ড করে।এই মেয়ে এই?আমার মাথায় র*ক্ত উঠিয়োনা।আমি জানি তুমি আশেপাশেই লুকিয়ে আছো এবং স্পষ্ট সবটা শুনতে পাচ্ছো।বের হও,বের হও বলছি।আজ তোমায় মে*রে তবেই ক্ষান্ত হবো আমি”

এই কন্ঠস্বর সে এর আগেও শুনেছে তবে মেলাতে পারছেনা।কে এই মহিলা?আহানকে ভাই বলেছে?তার মানে কি আহান আর আহিনের সৎ বোন সে?অধিরাজ শেখের প্রথম স্ত্রীর ঘরের সন্তান?কিন্তু সে চাঁদের সম্পর্কে এতকিছু কী করে জানে?তবে কি আহিনের বোনই আম্বিয়ারূপী সেই মেয়েটা?নিজের চেহারা ঢাকতে আম্বিয়ার রূপ ধারণ করেছে?তাকে কেনো মা!রতে চায় সে?কোনোভাবে কি তাদের ভিডিও করার সময় দেখে ফেলেছিলো চাঁদকে?উহ!আর ভাবা যাচ্ছেনা।চোখ বুজে কান্না আটকাবার প্রয়াস চালাচ্ছে।

চাঁদকে অন্ধকারের মাঝে ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে খুঁজতে খুঁজতেই হঠাৎ করে মেসেজের টুং শব্দে কপাল কুচকে আসে অরণের।সে ফোনের লক খুলে নোটিফিকেশন বার চেক করতেই দেখতে পায় চাঁদের নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।মেসেজটি সে পড়ে,

“অরণ?আমাকে প্লিজ বাঁচান!প*শুগুলো আমায় ধরে ফেলেছে।আপনারাতো আশেপাশেই আছেন,প্লিজ আসুন।আমি শহীদুল্লাহ হলের পাশের ঝোপটায় আছি।জলদি আসুন”

এরূপ ভয়াবহ বার্তা দেখে বুকের ভেতর তীব্র শব্দে ধড়াম করে হৃদযন্ত্রটা কে!পে উঠে অরণের।সে ফের নাম্বার লক্ষ্য করে।হ্যা নাম্বারতো ঠিকই আছে,চাঁদেরই।কিন্তু চাঁদের ফোনতো তার কাছে।তবে?কেউ কি ভুয়া খবর দিতে চাচ্ছে?এই ভেবে পকেট থেকে চাঁদের দেওয়া এন্ড্রয়েড ফোনটা বের করে পাওয়ার বাটনে চেপে তা চালু করে দেখে তাতে কোনো সিমই নেই।অতঃপর নিশ্চিত হয় সেই মেসেজটা চাঁদই তাকে করেছে।তার মানে?তার মানে চাঁদ খুবই ভয়াবহ বিপ!দে ফেসেছে।উদ্ধার করা ভারী মুশকিল তবে সে তাকে যেভাবেই হোক উদ্ধার করেই ছাড়বে।ওসব পশুদের কীর্তিকলাপ তার জানা।মেয়েটা যে মৃ*ত্যুর দুয়ারে আছে তা ভাবতেই শ্বাস আ!টকে আসে অরণের।সে দ্রুত গতিতেই হাতের মোবাইলটা বন্ধ করে পকেটে পুরে ছুট লাগায় শহীদুল্লাহ হলের দিকে।

পথিমধ্যে এসেই একটা ছেলেকে র*ক্তাক্তবস্থায় দেখে পা থমকে যায় অরণের।সে সামনে এগিয়ে ছেলেটার কাছে গিয়ে হাটু গেরে বসে কোলের উপর ছেলেটার মাথা তুলতেই দেখে অস্ফুটস্বরে সে কেবলই বলছে,

“চাঁ….চাঁদ….চাঁদকে ওরা মে!রে ফেলবে”

অরণ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,

“আপনার এ অবস্থা কী করে হয়েছে ভাই?”

অ্যালেন নিভুনিভু চোখজোড়া আলতো খুলে বলে,

“ভাই আমা…আমার চাঁদকে আপনি বাঁচান।ওদিকে ছুটেছে সে।তার পি…পিছু নিয়েছে কয়েকটা বদমাশ লোক।ও…ওরা ওকে ছাড়বেনা।যেকোনোক্রমে তাকে আপনি বাঁচান প্লিজ”

কপাল কুচকে অরণ বিরবির করে,

“আমার চাঁদ?মানে তার চাঁদ?কিন্তু চাঁদ তার?ধ্যাত!”

অতঃপর অ্যালেনের দিকে চেয়ে অরণ বলে,

“আপনি চাঁদকে চেনেন কী করে?”

অ্যালেনের পাল্টা প্রশ্ন,

“আপনি চাঁদকে চেনেন?”

“হ্যা ও আমার বন্ধুর….”

বলতে গিয়েও খানিকটা থেমে অরণ গম্ভীরভাবে বলে,

“জুনিয়র”

কথাখানা শুনতেই অরণের দু’হাত চেপে ধরে অ্যালেন বলে,

“আপনি প্লিজ আমার চাঁদটাকে বাঁচান ভাই”

বারবার ছেলেটার মুখে ‘আমার চাঁদ,আমার চাঁদ’ শুনে বিস্ময়ে কপাল কুচকে আসছে অরণের।মনের মাঝে বিভিন্ন প্রশ্নেরা উঁকি দিচ্ছে।তবে কি প্রণয়ের সন্দেহ ঠিক?প্রণয় কি এই ছেলেটাকে চাঁদের সাথে দেখে তাকে সন্দেহ করেছে?উহ!মাথা কাজ করছেনা অরণের।প্রণয়ের মতো চিন্তাভাবনা করায় নিজের উপরই বেশ বিরক্ত হলো সে।কিন্তু ছেলেটা কেনোই বা চাঁদকে বারবার তার চাঁদ বলছে?কী সম্পর্ক দুজনের?দোনোমোনো করতে করতেই ফের অ্যালেনের কন্ঠস্বর শুনতে পায় সে,

“ভাই?যান না প্লিজ।অনেক্ক্ষণ হয়েছে….আপ…আপনি….”

অ্যালেনের পানে চেয়ে আপাতত সেসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে অরণ বলে,

“কিন্তু ভাই আপনি আ*হত।আপনার….”

“আমার কিছু হবেনা।আপনি যান প্লিজ”

“এক মিনিট”

বলেই নিজের কাধের ব্যাগ থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে হাতে তুলো নিয়ে অ্যালেনের মাথার পেছনের র*ক্ত পরিষ্কার করতে নিলেই অ্যালেন বাঁধ সেধে বলে,

“কী করছেন?ঐখানে চাঁ….”

অ্যালেনের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই অরণ বলে,

“আমি পেশায় একজন ফিউচার ডাক্তার মিস্টার।তো আমার সর্বপ্রথম কর্তব্য হলো একজন রোগীকে সারিয়ে তোলা।এখন আপনার এ অবস্থা দেখে না আমার বিবেক,আর না আমার মন আমায় যেতে দিচ্ছে।বেশিক্ষণ লাগবেনা।আমি জাস্ট ব্যান্ডেজটা পেচিয়েই চলে যাবো।আপনি বেশি কথা বলবেন না প্লিজ”

বলেই অ্যালেনকে ফার্স্ট এইড করে দেয় অরণ।অতঃপর তাকে ধরে রাস্তার একপাশের দেয়ালে হেলান দিইয়ে বসিয়ে ব্যাগ থেকে এক বোতল পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,

“দরকার পড়লে খাবেন।আমি আসছি”

বলেই দ্রুতগতিতে ছুট লাগায় শহীদুল্লাহ হলের দিকে।যতই সে হলের সন্নিকটে যাচ্ছে ততই বুক তার ধুকপুক করছে।মেয়েটার কিছু হলোনাতো?কেউ কি তাকে ধরে ফেললো?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অফিসে কর্মরতবস্থায় হুট করেই চৈত্রের কেমন হাশফাশ লাগছে।হঠাৎ করেই তার তীব্র মন খারাপ হচ্ছে।কেনো হচ্ছে সে জানেনা।আপাতত সেসব দিকে মন না দিয়ে ফের কম্পিউটারের দিকে নজর দিতে নিলেই ফোনকল আসে তার।মনোযোগ ভঙ্গ হতেই পকেট থেকে ফোন বের করে কল রিসিভ করতেই মায়ের বিচলিত কন্ঠ ভেসে আসে কানে,

“চৈত্র?বাবারে!চাঁদতো এখনো ফেরেনি।ফোনও ধরছেনা।তোর সাথে কথা হয়েছে কিছু?পাঁচটার মধ্যেই বাসায় থাকে।আজ কলেজ থেকে এখনো ফেরেনি।সাতটার উপরে বাজে”

মায়ের উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বরের কয়েক বাক্যে কপাল বেশ কুঞ্চিত হয় চৈত্রের।সে মাকে জিজ্ঞেস করে,

“এখনো ফেরেনি?সাতটা দশ বেজে গিয়েছে।আচ্ছা আমি দেখছি আম্মু।তুমি টেনশন করোনা”

বলেই কল কেটে দিয়ে ফোনের লক খুলতেই চাঁদের নাম্বার থেকে পাঠানো মেসেজে চোখ পড়ে চৈত্রের,

“ভাইরে!জলদি আয়।তোর বোন যে ম*রে গেলো।নর*খা*দকেরা তাকে ধাওয়া করছে।বাঁচা ভাই।জলদি আয়।শহীদুল্লাহ হলের পাশেই আছি।দয়া করে বোনটাকে বাঁচা ভাই”

চাঁদের পাঠানো বার্তা নজরে আসতেই শ্বাস আ!টকে আসলো চৈত্রের।গলার কাছটায় শ্বাস বোধহয় আ!টকে গিয়েছে।কোনোকিছু না ভেবেই ফোন হাতে নিয়ে দ্রুত চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে কাচের ডেস্কের কোনার সাথে লেগে হাত কে!টে যায় চৈত্রের।সে সকলকিছুকে উপেক্ষা করে ছুট লাগায় অফিসের বাইরে।হঠাৎ উদ্ভ্রান্তের ন্যায় চৈত্রকে দৌড়াতে দেখে সকলেই ভড়কে যায়।কয়েকজন জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে?চৈত্রের এতকিছু শোনার বা কথা বলার সময় নেই।সে বর্তমানে তার বোনটার কাছে পৌঁছাতে চায়।একটাই প্রাণভোমরা তার।তার কিছু হয়ে গেলে?ম*রে যাবে সে।নিশ্বাস ভারী হয়ে আসলো চৈত্রের।আঁখিদ্বয় সিক্ত হলো তার।সে কোনোমতে বাইরে এসেই একটা রিক্সায় চড়ে বসলো।

শহীদুল্লাহ হলের সামনে এসে অরণ কাউকেই দেখতে পেলোনা।সেখানকার যতটুকু সম্ভব সবটা পর্যবেক্ষণ সে করলো তবে কোথাও চাঁদের হদিস সে পেলোনা।অতঃপর সুনসান রাস্তায় কয়েকটা আওয়াজ কানে ভেসে আসলো তার।আওয়াজগুলো আরও জোরালো হলো।কাউকে থা!প্পড় মা!রার আওয়াজ।শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে কাউকে কসিয়ে চ*ড় মারলে যেরূপ আওয়াজ হয় ঠিক তেমনি।অতঃপর কানে তার ভেসে এলো একটা মেয়েলি আ!র্তনাদ।সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতর দহন য!ন্ত্রণা হলো তার।চিন্তারা মস্তিষ্ক চি!ড়ে খাচ্ছে।এই কন্ঠস্বরতো চাঁদের।সে দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগলো।যত এগোচ্ছে ততই হৃদযন্ত্রটা তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে।কে কার চেয়ে দ্রুতগতিতে চলতে পারে তারই প্রতিযোগিতা বোধহয়!অরণ আরেকটু সামনে যেতেই দেখতে পায় চাঁদের এক বাহু ধরে বিশাল দেহের অধিকারী এক মহিলা জড়িয়ে রেখেছে আর সামনে কালো পোশাকে আবৃত একজন একের পর এক চাঁদের গালে থা!প্পড় বসাচ্ছে।মুখটা র*ক্তিম হয়ে এসেছে চাঁদের।সে মহিলাটার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে করতে বলছে,

“আপু এমন করছেন কেন আপনি?প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন”

বাক্যখানা শেষ হতেই উচ্চ শব্দে কোনো নারীহাসির আওয়াজ ভেসে আসলো কানে।ক্রমাগতই তা বাড়ছে।হাসির শব্দ কানে ভাসতেই হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হলো অরণের।সে দৌড়ে চাঁদের নিকট আসতে চাইলো তবে পা তার চলছেনা।অসাড় হয়ে আসছে ক্ষণে ক্ষণেই।তবুও সে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নিজ পা জোড়া।এবং কর্ণকুহর হচ্ছে চিকন এক মেয়েলি কন্ঠস্বর,

“সিরিয়াসলি চাঁদ?আই মিন তোমার মতো বাঘিনী যে কিনা এতবড় মিস্ট্রি উন্মুক্ত করে ফেলেছো সে নিজের প্রাণভিক্ষা চাইছে?ওহ মাই গড!ইয়েস!আমিতো এটাই চেয়েছি।তোমার এভাবে আকুতি মিনুতিই তো আমি দেখতে চেয়েছি।সাহস কী করে হয় তোমার?আমার বাবার জমিদারীতে পা বাড়ানোর?কোন সাহসে তুমি বছরের পর বছর সাজানো আমাদের পরিকল্পনায় বাগড়া দিতে চেয়েছো?এর মাশুলতো তোমায় দিতেই হবে!আর কোথায় সেই ফোন?যেটায় সবকিছু রেকর্ড করেছো?এক্ষুনি দাও।দাও আমার হাতে!”

বলেই হাত পাতে মেয়েটা।মেয়েটার বাক্যগুলো শুনতেই ঝট করে অরণ পকেট থেকে ফোনটা বের করে জুতা খুলে মোজার ভেতর ভরে ফের জুতা পড়ে নেয়।হাটতে খানিক অসুবিধা হলেও সে দৌড়ে এসে চাঁদকে ধরতে গেলেই এক শক্তপোক্ত হাত তাকে ধরে ফেলে।অতঃপর সে উপলব্ধি করে অনেকগুলো হাত একসাথে তাকে আটকে দিচ্ছে।যখন সে বুঝে সে ধরা পড়ে যাচ্ছে এবং ছুটতে পারবেনা তখনই চেচিয়ে বলে,

“চাঁদকে তোমরা ছেড়ে দাও প্লিজ!মেয়েটার কোনো দোষ নেই।সবকিছুর প্ল্যানে মূলত ছিলাম আমি।ওকে তোমরা যেতে দাও”

অরণের কথা শুনে উচ্চশব্দে হেসে উঠেন অধিরাজ শেখ।অতঃপর ঘুরে ঘুরে অরণকে দেখতে দেখতে বলেন,

“তাই নাকি অরণ বাবা?তুমি না প্রণয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড?তো তারই গার্লফ্রেন্ডের দিকে নজর কীভাবে দিলে?বলতেই হয় কিছুতো একটা আছে এই মেয়েতে।নাহয় আমার ছেলেরাসহ তুমি,তোমার বন্ধু এবং কলেজের অর্ধেকাংশ ছেলেরাই কেন এই এক মেয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে?আর তাকে বাঁচাতে নিজের উপর আরোপ নিচ্ছো তুমি?”

তখনই কালো পোশাকের সেই মেয়েটা বলে,

“ওহ ড্যাড!আর ইউ ইনসেন?অরণও তো চাঁদের সাথে জড়িত।দুজন মিলেইতো সবটা করেছে।এবং সেতো তাকে ভালোও বাসে।চোখের সামনে যখন ভালোবাসার প্রাণপ্রিয়াকে ম*রতে দেখবে কীভাবে সবটা নেবে ভেবেই কি যে শান্তি লাগছে!প্লিজ ড্যাড আমি এই মেয়েকে এক্ষুনি মে*রে দেই?মে*রে দেইনা?”

বেশ চেচিয়ে অরণ বলে,

“একজন মেয়ে হয়ে কী করে আপনি আরেকটা মেয়েকে মা!রার কথা মুখেও আনছেন?”

উচ্চস্বরে হেসে উঠে মেয়েটা বলে,

“মানুষ খু*ন করাতো আমার প্রিয় নেশা!এ কোনো ব্যাপার হলো?”

মেয়েটার কথাবার্তা শুনে গা ঘিনঘিন করে উঠে অরণের।কিছু বলার পূর্বেই মেয়েটা চাঁদের গলা চে!পে ধরে টান দিয়ে হিজাব খুলে ফেলে।অতঃপর চুলের মুঠি ধরতেই মৃদু আ!র্ত!নাদ করে উঠে চাঁদ।আরেক হাতে চাঁদের চোয়াল চে!পে ধরে মেয়েটা বলে,

“ভালো চাস তো মোবাইলটা দিয়ে দে”

চাঁদ বহু কষ্টে বলে,

“বাঁচবোনাতো আমি এমনিতেও।ঐটা আপনি কোনোদিনই পাবেন না।আপনার মতো নারী আল্লাহ কোনো মায়ের গর্ভে না দিক!”

কথাটা বলতে দেরি গালে চ*ড় পড়তে বিন্দুমাত্র বিলম্ব হলোনা চাঁদের।আর এবার চাঁদের গাল ফে!টে র*ক্তের ধারা বইলো।ঠোটও তার কে!টে গেলো।নিজেকে শক্ত রেখেই চাঁদ বললো,

“আপনিই আম্বিয়া আপুকে মে!রেছেন তাইনা?”

“হ্যা আমিই মে!রেছি।এই পর্যন্ত যাদের যাদের মে!রেছি সবাইকেই আমি মে!রেছি।বললাম না নেশা?নেশা আমার।জানিস?আমার ড্যাডের যাদের পছন্দ হয় ওদের সাথে কী করে?ভাবতে পারছিস তুই?তোর কী অবস্থা হবে?অতঃপর ম*রবি তুই আমার হাতে”

মেয়েটার কথা শুনে অরণ এক গাদা থুতু মাটিতে ফেলে বলে,

“আপনাকে মেয়ে বলতেও আমার ঘৃ!ণা হচ্ছে!”

অরণের কথা শুনে পিছু ঘুরে মেয়েটা বলে,

“জাস্ট শাট আপ অরণ!চুপ থাক..উন”

বলেই চাঁদের দিকে ঘুরে চাঁদের বুকের কাছে থাকা ওড়নাটা টে!নে খুলে ফেলে।জামার সাথে লাগোয়া সেফটিপিন ছুটে যেতেই কাধের কাছে তা বিঁধে যায় চাঁদের।সে দাঁতে দাঁত চে!পে বুকের ওড়না টেনে ধরে বলে,

“দয়া করে আমার সর্বনা!শ করবেন না আপু!”

অতঃপর চোখ ভেঙে কান্নারা উপচে পড়ে চাঁদের।অরণ নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে তবে সে বরাবরই ব্যর্থ।নিজেকেই নিজে ধিক্কার জানাচ্ছে।প্রণয়কে বলতে গিয়েও সে বলেনি।বন্ধুদের বললে অবশ্যই সাহায্য পেত।তবে রাগের বশত কাউকেই জানানো হয়নি।এখন বড্ড অপরাধবোধ হচ্ছে তার।সেও আকুতি করে বলে,

“মেয়েটাকে আপনারা ছেড়ে দিন প্লিজ।আমরা কেউই কাউকে কিছু বলবোনা।সব গোপন থাকবে।আর মোবাইলও চাঁদ আপনাদের দিয়ে দেবে।তাও তাকে ছেড়ে দিন!”

তখনই অনিন্দ্য ঘোষ বলেন,

“মোবাইলতো আমরা পেয়েই যাবো।আছেতো তোমাদেরই কাছে।কিন্তু এই মা*লটাকেতো এমনি এমনি ছেড়ে দেয়া যায়না।বহুদিনের শখ একবারের জন্য হলেও তাকে কাছে পাওয়ার।রূপ দেখেতো আমার ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে!উফ!”

বলেই বুকে হাত রাখলেন অনিন্দ্য ঘোষ।বিশ্রীসব কথা শুনে গা ঘিনঘিন করে উঠে চাঁদ আর অরণের।চাঁদ ওড়না টানতে টানতেই বলে,

“আপনারা না আমার গুরুজন?আপনারা আমার সাথে এমন করবেন না প্লিজ!আমাকে যেতে দিন”

তখনই চাঁদের কাছে এসে অধিরাজ শেখ তার চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বলেন,

“আমার বুঝলে?মেয়েদোষ।আর তোমার মতো ধারালো রূপের অধিকারী মেয়েতো ইহজন্মে দেখিনি।প্রথম প্রথম হয়তো দেখতে পারতাম না কিন্তু যখনই দেখলাম আমার দুই ছেলেই তোমার জন্য পাগল,ভাবতে বাধ্য হলাম কিছুতো আছে তোমার মাঝে।এবং দেখো!কী চোখ ধাধানো সুন্দরী তুমি।উফ!আজতো আমার রাত বিগত সকল বছরের শ্রেষ্ঠ রাত হতে চলেছে!ভাবলেই সর্বাঙ্গ শিউরে উঠছে”

বলেই চাঁদের পিছু এসে ঘারের কাছটায় নাক ঘেষে ঘ্রাণ নিতে লাগে অধিরাজ শেখ।সেইসাথে হাত চালায় চাঁদের কোমড়ে।সঙ্গে সঙ্গে অন্তরাত্মা কে!পে উঠে চাঁদের।দম ব*ন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা!সে কেপে উঠে বলে,

“আল্লাহর দোহাই লাগে আমায় ছেড়ে দিন আংকেল!”

হোহো করে হেসে উঠে চাঁদের চুল সরিয়ে ঘাড়ে চুমু দিয়ে অধিরাজ শেখ বলেন,

“আংকেল?কিসের আংকেল?আজতো আমার রাতসঙ্গিনী তুমি।এই তোরা সকলে যা তো!এই মেয়েকে আমার একলাই লাগবে।কেউ ভাগে পাবিনা”

কথাখানা শুনতেই অনিন্দ্য ঘোষ এগিয়ে এসে বলেন,

“এটা কিন্তু কথা ছিলোনা স্যার।কথা হয়েছিলো গণধ!র্ষণ করবো ওকে।আপনি কথার খেলাপ করছেন”

চোখ গরম করে অধিরাজ শেখ তার দিকে তাকাতেই ফের অনিন্দ্য ঘোষ বলেন,

“এভাবে তাকালে হবেনা স্যার।এই মেয়েকে আমার লাগবে মানে লাগবেই”

মাহতিম স্যারও এগিয়ে এসে আমতা আমতা করে বলেন,

“স্যার আমি বলছিলাম যে….”

মাহতিম স্যারের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই অহনা বলে,

“এখন আবার তুমিও বলোনা যে তোমার নজরও এই মেয়ের পানে?”

“না মানে….”

মাহতিম স্যারকে আটকে দিয়ে অহনা বলে,

“ঠিক আছে।শুধুমাত্র এই মেয়ের ক্ষেত্রে ছাড় দিলাম।ওকে যতজন খু*বলে খাবে,আমার আত্মা ততই শান্তি পাবে।শুরু করো তোমরা!”

অধিরাজ শেখ গম্ভীরভাবে বলেন,

“তা কোনোক্রমেই সম্ভব না।আমি একলা ওকে নিয়ে উদযাপন করবো।অ্যান্ড দ্যাটস ফাইনাল”

তখনই কাশেম বাবুর্চি এসে বলেন,

“আমি বলছিলাম কী স্যার?আপনি একাই খান।আমরা নাহয় পরে একে একে?”

অধিরাজ শেখ গম্ভীরভাবেও হেসে উঠে বলেন,

“ঠিক আছে।এখন তোরা এখান থেকে সরে যা।আগে আমি ভোগ করি পরে তোরা এঁটোটাই খেয়ে নিস”

সকলের আলাপ আলোচনায় গা ঘিনঘিন করে উঠে চাঁদের।শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।সে কেবলই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছে।আকাশ পানে চেয়ে সে মনেমনে বলছে,

“আল্লাহ!হয় আমায় উদ্ধার করো নওতো মে*রে ফেলো এক্ষুনি!আর যে পারছিনা”

সকলে অন্যদিকে চলে যেতেই সেখানে কেবল দাঁড়িয়ে থাকে চাঁদ,অরণ,অহনা,অধিরাজ শেখ আর সেই মহিলাটি।অহনা আর মহিলাটি অরণকে ধরে রেখেছে আর চাঁদকে জাপটে ধরে আছেন অধিরাজ শেখ।অরণ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে দেখে একজন পুরুষ কর্মচারী এসে পেছন থেকে তাকে ধরে রাখে।চাঁদ অধিরাজ শেখের থেকে ছোটার চেষ্টা চালাচ্ছে তবে পারছেনা।এমনি সময় অধিরাজ শেখ হুট করেই চাঁদের বাহুতে খা!মচে ধরেন।অতঃপর জামার হাতাসহ হাত চি‌!ড়ে যায় চাঁদের।বাহু থেকে র*ক্ত ঝড়তে লাগে।চাঁদ আ!র্তনাদ করে বলে,

“দোহাই লাগে!আমার সর্বনা!শ করবেন না আংকেল!”

চাঁদের কথা কেউই কানে নেয়না।অধিরাজ শেখ এক ঝটকায় চাঁদকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার উপর শোয়ার ভঙ্গিমায় গলার কাছে মুখ নিয়ে বলেন,

“উফ!সো মাচ হট ডার্লিং!”

অতঃপর চাঁদের জামার মাঝ বরাবর হাত রেখে ছুরি দিয়ে অল্প একটু কে!টে হাত দিয়েই তা দুখন্ড করে দেন।সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ আহাজারি করে চেচিয়ে বলে উঠলো,

“ও আল্লাহ গো!!”

চাঁদের গগণ বিদারী চিৎকারের পূর্বেই অরণ মুখ ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।শরীরের যেনো র*ক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায়।শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি।সে বোধহয় ম*রে যাচ্ছে।চোখজোড়া বুজেই নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে অরণ।তবে বারংবারই ব্যর্থ হচ্ছে।এবং আরও একবার কর্ণকুহর হয় চাঁদের আহাজারিরা,

“ও মা! মাগো!”

“আমায় ছেড়ে দেন।দোহাই লাগে!”

“দোহাই লাগে আল্লাহর!”

“ওহ আল্লাহ!আল্লাহ!মা……মাগো!”

“মা!”

“ও মা!”

আর শুনতে পারলোনা অরণ।জোড়াজুড়ি করতে লাগলো।এবং সে সফলও হয়েছিলো।কিন্তু ফের তাকে ধরে ফেলা হলো।কিয়ৎক্ষণ বাদেই আরেকবার আর্তনা!দ ভেসে আসলো চাঁদের।এবং এবার পুরো আকাশ,বাতাস,ধরণী বোধহয় কে!পে উঠলো,

“মা!”

ব্যাস!আর কোনো শব্দ ভেসে আসলোনা।নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো চারিপাশজুড়ে।কোথায় যেনো এক ধরা কাক ‘কা কা’ শব্দ করে ডেকে উঠলো।বাতাসে মিশে গেলো বিষাদতার রেশ।নির্মল প্রকৃতির সতেজ বাতাস পরিপূর্ণ হলো বিষাদতায়।ডানা ঝাপটে পাখিরা উড়ে বেড়ানো থামিয়ে দিলো।থমকে গেলো সময়।সূর্য তখন প্রায় ডুবে গিয়েছে।সন্ধ্যা হতে রাত নেমে গেছে।তখনও কিছুটা লালচে ছিলো গগণ।কেনো?আকাশ কি কান্না করছে?তার দৃষ্টিও কি র*ক্তিম?গাছের কয়েকটা পাতা মরমর শব্দ করে মাটিতে পড়ে গেলো।আহারে!প্রকৃতিও বুঝি নীরবে দুঃখ প্রকাশ করছে?দিতে চাচ্ছে অপরূপা চাঁদ নামক নারীকে সান্ত্বনা?

To be continued……
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৭৬.
“আপনিময়ী আমি আপনার থেকেই পালিয়ে বেড়াই,ইহাই কি জীবন ত…”

ব্যাস!আর কোনোকিছু লিখা নেই।অর্ধসম্পন্ন বাক্যটির মাধ্যমেই পুরো ডায়েরীটা পড়া সম্পন্ন হয় প্রণয়ের।এরপর বাকি পাতাগুলোতে আর কিছুই লিখা নেই।এবং এই বাক্যটিও যে পুরোপুরি লিখা হয়নি তা বেশ বুঝতে পারছে প্রণয়।আর তার মনে পড়ে সেই দুপুরের কথা,যেদিন ডায়েরীটার জন্য পাগলপ্রায় হয়েছিলো চাঁদ।হয়তো সেদিন পুরোটা লিখার পূর্বেই ডায়েরীটা ছিটকে পড়েছিলো তার হাত থেকে।পুরো ডায়েরীটা শেষ করতেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে প্রণয়ের।সে কোনোকিছুই আর ভাবতে পারছেনা,ঘেমে গেছে অনেকটাই।অগোছালো চুলগুলো ডান হাত দ্বারা টেনে ধরে আলমারিতে পিঠ ঠেকিয়ে চোখজোড়া বুজে নেয়।অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে অস্থিরচিত্ত হয়ে উঠে সে’ সন্ধ্যায় চাঁদ আর অরণের সাথে কী হয়েছিলো তা জানার জন্য।চাঁদ আর অরণের অতো মেলামেশার কারণ আজ অবশেষে সে উদঘাটিত করতে পারলো।কেনো তাদের তখন প্রায়ই একসাথে দেখা যেতো।এগুলো ভেবেই তার দম ব!ন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।কতটা ভুল সে ছিলো,কতটা অন্যায় সে তার প্রিয় দুজনের সাথে করেছে ভাবতেই শ্বাস ঘন হতে লাগলো।সবকিছুই ডায়েরীতে বর্ণিত থাকলেও শুধুমাত্র সে বিকাল হতে রাত অব্দি কোনো ঘটনাই বিবৃত নেই।প্রণয়ের মনে আশংকারা দানা বাঁধছে।সে যা ভাবতে চাচ্ছেনা বা যা ভাবা তার জন্য দুষ্কর বারংবার তাই মস্তিষ্কে উঁকি দিচ্ছে।কেনো চাঁদ পালালো?কী এমন তার সাথে হয়েছিলো যার দরুন তাকে ওভাবে পালাতে হলো?আর কেনোই বা অরণকে সে আ!ঘা!ত করলো?তবে কি সে রাতে ব!র্বর লোকেরা তাদের ধাওয়া করছিলো?চাঁদ কি ধরা পড়ে গেছিলো?অতঃপর?অতঃপর কী হয়েছিলো তার সাথে?উহ!আর ভাবতে পারলোনা প্রণয়।পাগলপ্রায় হয়ে যাচ্ছে,মরিয়া হয়ে উঠলো চাঁদের কাছে যাওয়ার জন্য।তার যে জানতেই হবে কেনো চাঁদ পালালো?তার থেকে মাইলের পর মাইল দূরে কেনো পালাতে হলো তাকে?কেবলই সে তাকে অপমান আর অবিশ্বাস করেছিলো সেজন্য?নাকি অন্য কোনো কারণ।দ্বিতীয় কারণটা প্রণয় ভেবেও যেনো ভাবতে পারছেনা,দম ব*ন্ধ ব*ন্ধ লাগছে।মাথায় অসহনীয় য!ন্ত্রণা হচ্ছে।ডায়েরীটা বন্ধ করে ফের তা আলমারিতে রেখেই সে ক্ষীপ্র গতিতে ছুটলো বাড়ির বাইরে।উদ্দেশ্য চাঁদের সাথে একটাবার দেখা করা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
উশ্মির অবস্থা বেগতিক দেখে চাঁদ ভয় পেয়ে গেলো।সে উশ্মিকে ধরে শান্ত করতে চাইলো।কিন্তু উশ্মি তা পারছেনা।ক্রমেই তার শ্বাস ফুলে উঠছে।সবকিছু ঝাপসা দেখছে।মাথা তার ঘুরাচ্ছে।চাঁদ কী করবে বুঝতে না পেরে উশ্মিকে ধরে তার কোলে শোয়ালো।অতঃপর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

“অস্থির হয়ো না উশ্মি।আমায় নিয়ে চিন্তা করবেনা।যা হওয়ার তা হয়েই গিয়েছে।আল্লাহ ভাগ্যে যা রেখেছিলেন তাই হয়েছে।তা নিয়ে আর আফসোস করিনা।তোমার কাছে একটাই রিকুয়েষ্ট,যত দ্রুত পারো ডি!ভোর্সের ব্যবস্থা করো।তার নামটাও নিজের নামের সাথে এক মুহুর্তের জন্য আর সহ্য করতে পারছিনা”

হঠাৎ করেই উশ্মি শোয়া থেকে উঠে বসলো।অতঃপর চোখের পানি মুছে লম্বা শ্বাস টেনে বললো,

“তোমাদের ডি!ভোর্স করাবো মানে করাবোই!এতে যদি ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয় তো হোক।তুমি ভেঙে পড়ও না ভাবি।আমরা সবাই চেষ্টা করছি”

“শোনো,আমি কিন্তু সত্যি ই ইচ্ছা করে গাড়িটা ব্রেক করতে চাইনি এমন কিছুই ছিলোনা।তোমায়তো সবটা বলেছি ই।তুমি প্লিজ আমায় এখান থেকে জলদি বের করো।যারা আমায় বাঁচিয়েছে তাদের ঋণ তো শোধ করতে পারবোনা তবে তাদের আমি বাঁচাতে চাই উশ্মি।আরেকটা কথা রিদিকে আপাতত মেডিকেলে যেতে দিও না।কেনো মানা করছি বুঝতেই তো পারছো?আগে আমি এখান থেকে বের হই।পরিস্থিতি বুঝি তারপর দেখছি কী করা যায়”

“ঠিক আছে ভাবি।তুমি টেনশন নিওনা।রিদির উপর আমি আঁচও আসতে দেবোনা”

মৃদু হেসে উশ্মির মাথায় হাত রেখে চাঁদ বলে,

“জানি।আর আমার কথাগুলো কাউ….”

চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই উশ্মি বলে,

“চোখের সামনে মৃ*ত্যুও এসে যদি হাজির হয় তোমার এই বিধ্বংসী সত্য আজীবন হৃদয়ে লালিত রাখবো ভাবি।কখনোও তা উন্মুক্ত হবেনা”

সবেমাত্র উশ্মি হাজত থেকে বেরিয়েছিলো আর দেখতে পায় এপ্রোণ গায়ে দেওয়া কয়েকজন ছেলে-মেয়েকে।অতঃপর সামনে যেতেই স্পষ্ট নজরে আসে প্রণয়ের বন্ধুমহলকে।জেলারের কাছে এসে মির বলে,

“মিস মুহাইমা বিনতে চাঁদের সাথে দেখা করা যাবে?”

জেলার সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে বলেন,

“আমরাতো কোনো ডক্টর ডাকিনি স্যার”

রিহা বেশ থমথমেভাবে জবাব দেয়,

“আমরা এখানে একজন কয়েদীর সাথে দেখা করতে এসেছি”

জেলারের প্রশ্ন,

“প্রণয় স্যারের পূর্বপরিচিত আপনারা?”

এবারে মিরা জবাব দেয়,

“আমরা মিস চাঁদের পরিচিত।তার বড় ভাইবোন।দেখা করতে চাচ্ছি,কোথায় সে?”

“মিস মিস বলছেন যে?এখানে কোনো মিস চাঁদ নেই”

তখনই উশ্মি এসে জেলারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

“সমস্যা কোথায় আপনার?আপনি কি জানেন আমার একটা ফোনকলে আপনার চাকরী নিয়ে টানাহেঁচড়া পড়ে যাবে?”

“হুমকি দিচ্ছেন আমায়?”

জেলারের মুখপানে চেয়ে দৃঢ় কন্ঠে উশ্মি বলে,

“আমি সত্য বলতে বিশ্বাসী মিস্টার?বিশ্বকুমার রায়”

শেষের দিকে জেলারের পোশাকের বুকের কাছটায় নেমপ্লেট দেখতে দেখতেই উশ্মি জবাব দেয়।উশ্মির কন্ঠ পেয়ে তার পানে তাকিয়ে মির বলে,

“চাঁদ কোথায় উশ্মি?”

“ঐতো ঐদিকটায়।তোমরা যাও আমি বরং আসছি”

মিরা জিজ্ঞেস করে,

“জামিনের ব্যাপারে কথা হয়েছে?”

“যেই পর্যন্ত বাচ্চার বাবা-মা কেস না উঠাচ্ছে আর প্রণয় ভাইয়া কিছু না বলছে জামিন নাকি হবেনা।প্রমাণ নাকি ভাবির বিরুদ্ধে,কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি”

মির বেশ থমথমেভাবে বলে,

“অরণের হাতে বহুবছর আগে একবার মা!র খেয়েছিলো তোমার ভাই।তাও কঠিনভাবে।এবার যদি আমার হাতে পড়ে সাবধান করছি ম*রে যাবে ও”

বেশ রুক্ষ কন্ঠে উশ্মি বলে,

“মে*রেই ফেলো!”

রিহা জিজ্ঞেস করে,

“তুমি কি কিছু করতে পারবে না?”

রিহার দিকে চেয়ে উশ্মি বলে,

“আমি চেষ্টা করছি আপু।তোমরা দুআ করও,আসছি।অনেক কাগজপত্রের কাজ বাকি”

“ঠিক আছে যাও”

উশ্মি চলে যেতেই মিরার নজর গিয়ে পড়ে হাজতের শিক দুই হাত দিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে তাদের পানেই এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা চাঁদের দিকে।অতঃপর দৃষ্টি মিলিত হয় দুজনের।নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে তারা একে অপরের পানে।দৃষ্টি সিক্ত হয় মিরার।সে এগিয়ে চলে চাঁদপানে।
চাঁদের কোনো পলক পড়েনা।যখন কারো হাতের স্পর্শ নিজ হাতে পেলো তখনই সে খানিকটা নড়চড়ে শ্বাস ফেলে বললো,

“আপু!”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিরা বললো,

“তোমার এ পরিণতি আমি কস্মিনকালেও চিন্তা করিনি চাঁদ!”

বলতে বলতেই গাল বেয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো মিরার।ঠোট কাম!ড়ে কান্না আটকাবার চেষ্টা চালাচ্ছে সে।কিন্তু সে বরাবরই ব্যর্থ।অতঃপর চাঁদের মুখের দিকে চেয়ে বলে,

“চেহারার এ দশা করেছো কেনো?”

চাঁদের কিছু বলার পূর্বেই মির সেখানে এসে বলে,

“তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর বদৌলতে করেছে আবার কী?”

মিরের কথা শুনে তার পানে তাকিয়ে মৃদু হেসে চাঁদ বলে,

“কেমন আছো মিরজাফর ভাইয়া?”

গম্ভীরভাবে মির বলে,

“আমি এখানে তোমার সাথে রঙ তামাশা করতে আসিনি।তোমাকে ছাড়াতে এসেছি।প্রণয়ের বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দিয়ে তোমায় নিয়ে যাবো”

বেশ গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,

“কারো দয়ায় বেঁচে থাকা আমার পছন্দের নয় ভাইয়া।পূর্ণ সম্মানে বেরুতে না পারলে এখানেই পঁচে গলে ম*রে গেলেও আমার আফসোস নেই”

মির ধমকে উঠে,

“জাস্ট শাট আপ”

রিহা বলে,

“এখনো সেই দাম্ভিক চাঁদই রয়ে গেছো?”

“দাম্ভিক নই আপু।সম্মানে লেগে গেলে ওটা মেনে নিতে পারবোনা”

মিরের প্রশ্ন,

“প্রণয়কে মানছো কী করে?পদে পদে হেনস্তা করে তোমায়”

চাঁদের পাল্টা প্রশ্ন,

“তোমরা কেনো করোনা?অরণতো তোমাদেরও বন্ধু ছিলো”

রিহা জবাব দেয়,

“তুমি যে অরণের সাথে জেনেবুঝে কিছু করোনি তা আমরা বেশ ভালো করেই জানি চাঁদ”

রিহার কথা শুনে মিরার পানে চেয়ে চাঁদ বলে,

“মিরাপু?মিরাপুতো বিশ্বাস করেনা।সেও প্রণয়ের মতোই ভাবে আমার জন্য অরণের এই দশা”

মিরার হঠাৎ প্রশ্ন,

“তবে তুমি কেনো বলোনা সেদিন প্রণয়ের সাথে ঝগড়ার পরে তুমি যে ছুটে গেলে অরণও তোমার পিছু গেলো।তারপরের কয়েক ঘন্টায় কী এমন ঘটে গেলো যে তোমাদের অবস্থা র*ক্তাক্ত ছিলো?অরণের মাথায় তোমায় আ!ঘা!ত করা লাগলো?এবং শেষমেশ পালিয়ে গেলে?”

ফের চাঁদের দম ব*ন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে সে বললো,

“কিছু তিক্ত সত্য আড়ালেই থাকুক নাহয়?সেগুলো প্রকাশ্যে এলে বাঁচা দুষ্কর।তবে তোমায় আমি কথা দিচ্ছি।অরণও ঠিক হবে,আমার সাথে প্রণয়কেও আর দেখা লাগবেনা তোমাদের।এবং আমি যে অরণের সাথে কিছু করিনি তার প্রমাণও তোমাদের দেবো”

বলেই মিরের পানে চেয়ে বলে,

“ভাইয়া আমার একটা কথা রাখবে?”

মির ভ্রু কুচকে বলে,

“কী কথা?”

কিছুক্ষণ ভেবে চাঁদ বলে,

“না থাক কিছুনা”

বেশ একরোখাভাবে মির বলে,

“বলো?”

“আজ না অন্যদিন।সময় হোক”

মির বেশ মেজাজ দেখিয়ে বললো,

“তোমার আর তোমার বিড়াল মানবের কোনোদিনও সঠিক সময় আসবেনা,আসেনা”

চাঁদ হঠাৎ হেসে বলে,

“বিয়ে করছোনা কেন তুমি?”

চাঁদের হঠাৎ প্রশ্নে থতমত খায় মির।সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে,

“বুড়ি হয়ে যাচ্ছো অথচ ভীমরতি কমছেনা?”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“বুড়ি আমি?সিরিয়াসলি ভাইয়া?তাহলে তুমিতো বুড়োদের সর্দার”

মিরও পাল্টা কিছু বলতে নিলে চাঁদ আবারও জিজ্ঞেস করে,

“রবিন ভাইয়া কোথায়?”

চাঁদের প্রশ্নের জবাব দেয় রিহা,

“তোমার সাথে এতবড় অন্যায় করার পরেও তোমার সামনে দাড়ানোর সাহস আছে ওর?”

কথাখানা বলতে গিয়ে দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে যায় রিহার।অতঃপর আরও পাঁচ মিনিটের মতো চাঁদের সাথে আলাপ আলোচনা করে তারা চলে আসে।ফের চাঁদ একলা হয়ে পড়ে।এবং বুক চি!ড়ে বেরিয়ে আসে এক কঠিন দীর্ঘশ্বাস!কী জীবন কী হয়ে গেলো তার?একটা ভুলের জন্য কতকিছুইনা সহ্য করা লাগলো এবং এখনো লাগছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদের সাথে দেখা করার পূর্বে প্রণয় ফায়ানের কাছে আসে তার কেবিনে।প্রণয়কে দেখেই কপাল কুচকে ফায়ান বলে,

“আপনার এ অবস্থা কেনো ভাইয়া?চেহারার এমন বেহাল দশা কেনো?কী হয়েছে?”

ফায়ানের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফায়ানের কাছে গিয়ে তার দু’হাত নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে তার সামনে হাটুগেরে বসে প্রণয় বলে,

“ভাই!ভাইরে তুমি গতকাল মধ্যরাতে যেই বাচ্চাটাকে আনা হয়েছে তাকে বাঁচাও প্লিজ!বাচ্চা ছেলেটাকে ম*রতে দিওনা।বাঁচিয়ে নাও প্লিজ!তার অপারেশনটা কেবল তুমিই সাকসেসফুল করতে পারবে আরফিদ”

প্রণয়ের কান্ডে হকচকিয়ে উঠে ফায়ান তাকে বসা থেকে উঠিয়ে বলে,

“কী করছেন ভাইয়া?পাগল হয়েছেন?বাচ্চাটার অপারেশন আমিই করেছিলাম এবং তাকে এখনও অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।যদিও বাচ্চাটার প্রাণ নিয়ে কেউ আশাবাদী নয় তবে আমার বিশ্বাস বাচ্চাটার কিছু হবেনা।অমন নিষ্পাপ বাচ্চার কিছু হতে পারেনা।তবে এমন নি!র্মম এক্সিডেন্টটা করলো কে?”

ফায়ানের সকল কথাই প্রণয়ের হৃদয়ে শীতলতা ছেয়ে দিলেও শেষের কথাটা ঘনকালো মেঘে আধার করে দিতে কালবিলম্ব করলোনা।এবং সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সমস্ত কিছু ফায়ানকে বলতেই ফায়ান গর্জে উঠলো তার উপর।অনেকরকম কথা শুনিয়ে তার কলার পর্যন্ত ধরলো তবে প্রণয় টু শব্দটুকুও করলোনা।সে কেবলই শুনে গেলো সবটা।

ফায়ানের কাছে অপমানিত হয়ে প্রণয় এসেছে চাঁদের সাথে দেখা করতে,একটুখানি কথা বলতে।প্রণয় থানায় ঢুকেই জেলারের থেকে পার্মিশন না নিয়ে ক্ষীপ্র গতিতে ছুটে আসলো চাঁদের নিকট।হাজতের বাইরে থেকে তার নজরে আসলো হাজতের ভেতরে উঁচু স্থানে সটান হয়ে উপরের দিকে এক ধ্যানে পলকহীন চেয়ে শুয়ে থাকা চাঁদকে।ডান হাতটা ঝুলে আছে নিচের দিকে।বারংবার পেটটা উঠানামা করছে দ্রুত।যার অর্থ ঘনঘন শ্বাস নেওয়া হচ্ছে।চাঁদের এরূপ চিত্র দেখে বুকটা হাহাকার করে উঠলো প্রণয়ের।বুকের ভেতর জ্বলুনি শুরু হলো তার।অতঃপর হাজতের শিকগুলোয় হাত রেখে চাঁদপানে চেয়ে সে অতি বিষাদতা মিশ্রিত কন্ঠে ডেকে উঠলো,

“চন্দ্রময়ী!”

বুকের ভেতর তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠলো চাঁদের।নিশ্বাসের গতি আরও তীব্র হলো।তবে সে পলক ফেললোনা,তাকালোনা কোথাও।এক ধ্যানে সেভাবেই থাকলো।ফের শুনতে পেলো প্রণয়ের মলিন কন্ঠস্বর,

“আমি আপনার অপরাধী চাঁদ!আমায় মা!রুন,কা!টুন যাই করুন তবুও একবার আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলুন প্লিজ!হৃদয় তৃষ্ণার…..”

প্রণয়ের বাক্য সম্পন্ন হবার পূর্বেই চাঁদ সেভাবে থেকেই গর্জে উঠে,

“হৃদয় মরুভূমিতে পরিণত হয়ে পানির অভাবে ম*রে যাক!তবুও চাঁদের বিন্দুমাত্র আফসোস হবেনা।চাঁদ এক ভুল একবার করে,দুইবারও করে তবে তৃতীয় বারের ন্যায় সেই ভুল আর কস্মিনকালেও করেনা,করবেওনা।চলে যান,আমার ত্রিসীমানায়ও আপনাকে আর দেখতে চাইনা আমি”

সেভাবে থেকেই কথাগুলো বলে চোখজোড়া বুজে নিলো চাঁদ।দুইপাশের কার্নিশ বেয়ে দু’ফোটা অশ্রুবিন্দু গড়ালো তৎক্ষনাৎ।এবং তা ভিজিয়ে দিলো কানের পাশে থাকা চুলসমূহ ও ঘোমটা দেওয়া ওড়নাটাকে।এক হতাশার শ্বাস ত্যাগ করে ঝুলন্ত হাত উপরে উঠিয়ে হাজতের বাইরের দিকে পিঠ করে শুয়ে জামাটা ভালোভাবে শরীরের সাথে টেনে নিয়ে পাশে থাকা চাদরটা গায়ে জড়ালো চাঁদ।

To be continued……