#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ২২
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
‘কোনো সম্পর্ক নেই’ কথাটি কানের মাঝে বিষের মতো ঝাঁঝরা করে দিলো যেনো শ্যামার।
সে স্তব্ধ হয়ে কথাটা হজম করার চেষ্টা করে কিছুক্ষণ,কান্না করতেও ভুলে গেছে যেনো সে হঠাৎ। সে পাল্টা প্রশ্ন করে,
“আজ থেকে আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই?আপনি এভাবে বলতে পারলেন অরণ্য? আমি কি শুধু আপনার কাছে টাকা দিয়ে কেনা চুক্তির বউ ছিলাম? আমাদের সম্পর্কের ভীত কি শুধু কিছু শর্ত ছিলো?আর কিছুই ছিলাম না আমি? তাহলে এতোদিনের অনুভূতি,দুজনের খুনসুটি,দুজনের কাছে আসা,দুজনের ভালোবাসা….এসব কি ছিলো? সব কি মিথ্যে ছিলো?”
“আমি কখনো তোমাকে বলিনি আমি তোমাকে ভালোবাসি”
“তাহলে আজ বলে দিন আপনি আমাকে ভালোবাসেন না,আমি এক্ষুনি এখান থেকে চলে যাবো”
অরণ্য নীরবে চোখের অশ্রু ফেলতে থাকে,কোনো জবাব দেয়না। শ্যামা একবার হাসার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে বলে,
“পারবেন না তো মিথ্যা বলতে? অরণ্য আমার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জমিয়ে রেখেছি আমি। আপনি কিভাবে আমি কখন কি করি সব জানতে পারেন?কেনো আপনি আমার ঘরে আসলে কখনো দড়জা খোলার আওয়াজ হয়না?কেনো জানালা বন্ধ থাকার সত্ত্বেও আপনি আসলেই একটি শীতল হাওয়ার ঝাঁপটা লাগে আমার শরীরে?আমি কেনো আপনাকে দেখতে পারবোনা?আপনি সবসময় এই ঘরে বন্দী থাকেন কেনো?কেনো দিনের আলো আপনার কাছে পৌছাতে দেন না?আপনি কিভাবে জেনে যান আমি বিপদে আছি?কিভাবে সেখানে পৌছে যান এত দ্রুত এখান থেকে?কিভাবে কারো স্মৃতি মুছে দিতে পারেন আপনি?কে আপনি? কি লুকাচ্ছেন আমার থেকে? আমি কখনো করিনি এই প্রশ্নগুলো কারণ আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন,আমার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে নেই আপনার।আপনি যখন আমাকে বলেছেন একদিন আমাকে সব বলবেন, তখন আপনি নিশ্চয়ই বলবেন সময় আসলে। কিন্তু খু’ন?আপনি আমার ভাইয়ের খু’নী এটা কিভাবে মেনে নিবো আমি? দিব্যকে আমিও ঘৃ’ণা করি,আমার দোষী সে। সেদিন যখন নিজের সম্ভ্রম হারানোর আতঙ্ক এতো কাছ থেকে অনুভব করেছিলাম আমি,সেদিনই ওকে মন থেকে মুছে ফেলেছিলাম আমি। ঠিক করেছিলাম কখনো মুখও দেখবোনা তার। সে ঘৃ’ণ্য বলে আমি ঘৃ’ণা করি তাকে,কিন্তু এখন আপনিও এমনি একটা কাজ করেছেন যা আমার কাছে ঘৃ’ণ্য। এটা মেনে নিয়ে কিভাবে চুপ থাকবো আমি?আপনি যদি এটা আমার কারণে করে থাকেন তাহলে তার জবাবদিহিতা করতে হবে আমার কাছে আপনার।
অরণ্য প্লিজ আর চুপ থাকবেন না। প্লিজ বলুন না কেনো এতোবড় পাপ নিজের হাতে নিয়েছেন?আমি অন্তত আপনাকে ঘৃ’ণা করতে চাইনা অরণ্য”
অরণ্য কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,”আমার কথার উপর এতো বিশ্বাস যখন একটা শেষ কথা রাখবে আমার?”
শ্যামা বিচলিত কন্ঠে বলে,”কি কথা?”
“আজ থেকে এই বাড়ির বাইরে যেওনা,এমনকি নিজের ঘরের বাইরে যেওনা শ্যামা। বাইরে অনেক বিপদ। আমাকে আরেকটু সময় দাও শুধু।”
শ্যামা বিতৃষ্ণার সাথে বলে উঠে,”ব্যস অরণ্য! অনেক হয়েছে। একটু আগে বললেন চলে যেতে এখন বলছেন ঘরের বাইরে যেওনা। আর আবার আমাকে অপেক্ষা করতে বলছেন?এসবের পরেও চুপ করে অপেক্ষা করতে হবে আমায়?”
“হ্যাঁ করতে হবে অপেক্ষা,আর বেশি সময় নেই শ্যামা,আরেকটু শুধু”
“পারবোনা অরণ্য,আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি এই অপেক্ষা শেষ হওয়ার পথ চাইতে চাইতে। এখন এই পর্যায়ে আছি আমি যেখানে আমার পরিবারের আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন,আর আমাকে আপনার থেকে শুনতে হচ্ছে অপেক্ষা করো। আমি আর করবোনা অপেক্ষা। আপনি আমাকে জবাব না দিলে আমি নিজ থেকে খুঁজবো জবাব।”
বলেই উঠে নিতে যায় শ্যামা,তখনি অরণ্য দ্রুত লয়ে বলে উঠে,”বাড়ির বাইরে পা রাখলে আর ফিরে আসতে পারবেনা কিন্তু শ্যামা। ভেবে নাও,আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে তুমি?”
“আসবোনা আর! আপনাকে ছাড়া থাকাও শিখে নিবো!”
বলেই দ্রুতকদমে চলে আসে সেখান থেকে,কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তার। রাগ অভিমান ভীড় করে মনে। কি পেয়েছেন তিনি তাকে?উনার কথা মানতে মানতে পেয়ে বসেছেন একেবারে, হুম’কি ধা’মকি দিচ্ছেন বাড়ির ভেতর বন্দী করার জন্য।
উনি তাকে মানুষই মনে করেন না,হুটহাট উনি যা খুশি করবেন,তাকে সবটা মেনে নিতে হবে কেনো?সে চলেই যাবে,দেখি কতটা দূর তিনি থাকতে পারেন তার থেকে।
শ্যামা এলোমেলো হাতে তার ব্যাগ আর ফোনটা নিয়েই বেরিয়ে আসতে চায়,তখন তার পায়ের নূপুরগুলোর দিকে চোখ পড়ে,যেগুলো অরণ্য নিজ হাতে তাকে পড়িয়ে দিয়েছিলো। রাগের মাথায় সে নূপুর গুলো খুলেই ছুড়ে মারে একপাশে। সে এই মুহুর্তে যতটা কষ্ট পাচ্ছে,অরণ্যকেও ততটা কষ্ট দিবে সে। একদম শুনবেনা তার কথা।
সিড়ি ভেঙ্গে নীচে নামতে গিয়ে সামশেরকে দেখতে পায়,শ্যামা তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে নিলে সে ইতস্তত কন্ঠে বলে উঠে,
“মনিবকে ভুল বুঝবেন না মালকিন,উনি যা করছেন আপনার ভালোর জন্য করছেন”
চকিতে থেমে যায় শ্যামা,তার দিকে ফিরে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে জবাব দেয়,”চাচা আপনার মনিব কি কখনো আমাকে বোঝার চেষ্টা করেছে?উনি কি আদোও আমাকে মানুষ মনে করেন?কখনো ভেবে দেখেছেন আমি আমার মনকে কি বলে বুঝ দিই?উনি যদি আমার ভালো করে থাকেন তাহলে তার কারণ উনি দিচ্ছেন না কেনো?”
সামশের মাথা নীচু করে চুপ করে থাকে,শ্যামা শেষবারের মতো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধরে আসা গলায় বলে,
“উনার খেয়াল রাখবেন চাচা,উনাকে একটু আগে কেমন অসুস্থ মনে হলো। আমাকে তো উনি বলবেন না যেহেতু আমি কেউ না উনার,আপনি জানেন হয়তো। উনাকে দেখে রাখবেন সবসময়ের মতো”
সামশের বেদনাকাতর চোখে তার দিকে তাকায়,শ্যামা তা উপেক্ষা করেই চলে আসে। সামশের তাকে দিয়ে আসতে চাইলে সে কঠিন গলায় মানা করে দেয়।
এক বুক অভিমান নিয়ে বাড়ির বাইরে আসতেই গেইটের কাছে রিমুর সাথে দেখা হয়ে যায়। শ্যামা হঠাৎ তাকে এখানে দেখে অবাক হয়ে যায়।
নিজের চোখের পানি মুছে সংযত হয়ে বলে,
“কিরে রিমঝিম?তুই এখনো বাড়ি যাসনি?অন্ধকার হয়ে গেছে তো অনেক আগে।”
রিমুর হাতের টর্চ ধরে দাঁড়িয়ে তার দিকে চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠে,
“আমি চইলা যাইতেছি সেইটা বলার জন্যি আমি আপনার কাছে যাইতেছিলাম,কিন্তু উপর থেইকা হঠাৎ আপনার কান্নাকাটির আওয়াজ পাই সেখানেই দাঁড়ায় ছিলাম। পরে দেহি সামশের চাচা নামতিছে। তিনি আইসাই আমারে চইলা যাইতে কইলেন।
আমিও চইলা আসি বাইরে,কিন্তু আমার আপনার জন্যি কেমন চিন্তা হইতেছিলো,তাই আরেকবার ভেতরে যামু কিনা ভাবতেছিলাম আপনি ঠিক আছেন কিনা জানার জন্যি। কিন্তু আপনি এই সময় কই যাইতেছেন মালকিন?”
শ্যামা কিছুক্ষণ রিমুর দিকে তাকিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
“আমি ঠিক নেই রে রিমঝিম, ভালো লাগতেছেনা কিছু একদম। ভালোই হলো তুই অপেক্ষা করেছিস,আমার তোকেই খুঁজতে হতো। আমাকে তোদের গ্রামের সেই বুড়ির কাছে নিয়ে যাবি যার কথা তুই বলিস সবসময়?”
রিমু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে তাকিয়ে বলে,”কেনো নিয়ে যাবোনা,আপনি যাইতে চাইলেই নিয়া যামু,কিন্তু আপনি এই সময়ে বুড়ির কাছে যাই কি করবেন?”
“অনেক দরকার আমার রিমঝিম,আমাকে নিয়ে চল প্লিজ”
রিমু মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে শ্যামাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে থাকে,শ্যামা রিমুর পিছনে যাওয়ার আগে কি মনে করে একবার দোতলার শেষ জানালার দিকে তাকায়।
দোতলার শেষ জানালাটি খোলা হয়েছে,সেখানের ভারী কালো পর্দাটি খানিকটা সরানো,তাকে না দেখলেও বুঝতে পারে শ্যামা,সে তাকিয়ে আছে তারই দিকে,এই দৃষ্টি সে প্রতিনিয়ত অনুভব করেছে তার উপর। মনটা আনচান করে উঠে শ্যামার,সে মনে মনে বলে উঠে,
‘আমি চলে যাচ্ছি অরণ্য,আপনার নির্ধারিত সীমানা লঙ্ঘন করে অনেক দূরে। আপনি কি আজকেও শুধুই দেখে যাবেন?থামাবেন না আমাকে?’
—————————
গ্রামটা ঘুরে দেখবো দেখবো করে একটা মাস কাটিয়ে দিয়েছে শ্যামা,কখনো আর এদিকে আসা হয়নি। নির্জনা কুঠির প্রসস্থ মেঠো রাস্তাটি পেরোলেই যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু চাষের জমি,আরেকটু সামনে গেলেই একটা ইট বাধানো আঁকাবাকা রাস্তা চলে যায় গ্রামের দিকে।
রিমু তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় সেখানে। গ্রামটি মোটেও অজপাড়া গ্রাম নয়,সব ঘরেই বিদ্যুৎ আছে,লাইটের আলোয় আলোকিত সবার ঘর,তার থেকে খানিকটা আলো এসে বাহিরেও আলোকিত করে রেখেছে।
সন্ধ্যা সবে সাতটা বাজে হয়তো,মানুষজনের কোলাহল ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসছে। কেউ কেউ বারান্দায় বসে ছিলো। অপরিচিত মুখ দেখে কেউ কেউ রিমুকে কৌতুহলের সাথে জিজ্ঞেস করছে শ্যামার পরিচয়। শ্যামার এখন এসবে একটুও মন নেই। সে রিমুকে তাগাদা দেয় জলদি যাওয়ার জন্য। তার আবার ফিরেও যেতে হবে মা বাবার কাছে,না জানি কিভাবে সামলাচ্ছে নিজেদের তারা।
রিমু চলতে চলতে এক সময় একটি সেমি পাকা বাড়ির সামনে থেমে যায়। সে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
“এই বাড়িটাই মালকিন”
শ্যামার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় তীব্রগতিতে,অবশেষে সে হয়তো অরণ্য সম্পর্কে কিছু জানতে পারবে। হঠাৎ অনেক নার্ভাস লাগছে তার,সে একটি শুকনো ঢুক গিলে দড়জার দিকে এগিয়ে যায়। দড়জা খোলাই ছিলো। রিমু আগ বাড়িয়ে গিয়ে দড়জা থেকে ডাক দেয়,
“চাচী,ও চাচী….বাড়িতে আছো নাকি?”
রিমুর ডাক শুনে পাশেই রান্নাঘর থেকে একটি ২২/২৩ বছরের মহিলা বেরিয়ে আসে,
“আরে রিমু?এই ভর সন্ধ্যেবেলা ডাকতেছিস কেন?রান্না চাপাইছি,দেরি হইলে আবার আমারে কথা শুনন লাগবো।আর সাথে এটা কে রে?কোন বাড়ির বউ?”
“আরে সেইসব আমি তোমারে পরে কমু,বুড়ি ঘরে আছে?ইনি উনার সাথে দেখা করতি আসছে।”
মেয়েটি ভ্রু কুঁচকে একবার উপর নীচ পরখ করে নিলো শ্যামাকে। শ্যামা চুপচাপ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে,মনের বিতৃষ্ণায় সৌজন্যতামূলক কিছু বলতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা তার।
মেয়েটি তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বলে,
“তার ঘরেই আছে,নিজে গিয়া দেখা করো। আমার আবার মেলা কাম,আমি গেলাম।”
বলেই মেয়েটি বিড়বিড় করতে করতে রান্নাঘরে চলে যায়,রিমু তাকে বুড়ির ঘরে নিয়ে যেতে যেতে জানায় বুড়ির নাতবউ এই মেয়েটি। ঘরে আর কারো দেখা পেলোনা সে,হয়তো আর কেউ বাড়িতে নেই। রিমু কোনার দিকের রুমটার সামনে গিয়ে বুড়িকে ডাক দিতেই ভেতর থেকে বাজখাঁই খনখনে গলার স্বর ভেসে আসে,
“কে রে?রিমু নাকি?তুই আমার বাড়িত আসোছ কোন সাহসে?তুই সে শয়তানের বাড়ি কাজ করস,বাইর হ আমার বাড়ি থেইকা।”
রিমু এই ব্যপারে তাকে আগেই বলেছিলো,যে বুড়ি রিমুর উপর অনেক অসন্তুষ্ট তাদের বাড়ি কাজ করার কারণে।
শ্যামা আর দেরি না করে কোনো অনুমতির অপেক্ষা ছাড়াই ভেতরে ঢুকে পড়ে। সে ভেতরে ঢুকে একজন অতিশয় বৃদ্ধ মহিলাকে তজবি হাতে খাটে বসে থাকতে দেখেন। মুখে বয়সের বলিরেখা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার। তিনি তার বৃদ্ধ ঘোলাটে চোখে শ্যামাকে উপর নীচ পরখ করে বলে,
“কে রে তুই মেয়ে?তোকে তো এই গেরামের মনে হয়না?”
রিমু উত্তর দেয় তার পক্ষে,”বুড়ি ইনি হইলেন ওই বাড়ির নতুন বাসিন্দা যার লাইগা আমি কাজ করি।”
বুড়ি আঁতকে উঠে যেনো শুনে,”সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, বের হ এক্ষুনি বের হ আমার বাড়ি থেইকা। শয়তানের সঙ্গী তুই,যারা ও বাড়ি থাকে সবগুলা শয়তান। আমার বাড়িতে তোদের অশুভ ছায়াও পড়তে দিবোনা….”
শ্যামার মনে এমনিতেই একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো তখন,বুড়ির এমন কথা শুনে কি বলবে সে বুঝে উঠতে পারেনা। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সে বুড়ির পায়ের কাছেই লুটিয়ে পড়ে কেঁদে ফেলে। অনেক কষ্টেও নিজেকে সংবরণ করতে পারেনা,
“ও বুড়িমা,তুমিও ফিরিয়ে দিওনা আমাকে….অনেক আশা নিয়ে এসেছি তোমার কাছে। আমি জানতে চাই কোন মরিচীকার পিছনে ছুটছি আমি। তুমিও ফিরিয়ে দিলে ম’রে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা আমার”
বলতে বলতেই হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকে শ্যামা।
(চলবে)
#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ২৩
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
কুটনী বুড়িরও মন গললো হয়তো শ্যামার এমন আর্তনাদ শুনে। সে কন্ঠ আগের থেকে নরম করে সুধায়,
“ওই মাইয়া,কি হইছে তোর?এমন ভর সন্ধ্যেবেলা অমন ম’রাকান্না কাঁদতে নেই,ঘরে ভাগ্যলক্ষ্মী আসেনা। মা বাপে এইটুকুনও শেখায় নাই নাকি?কান্না বন্ধ কর দেখিনি!”
শ্যামা হেঁচকি তুলতে তুলতে খানিকটা ধাতস্থ হয়,বুড়ি এবার রিমুকে পাঠায় পানি আনতে। শ্যামা অনেক ভেঙ্গে পড়েছে এই অল্প সময়ের মধ্যে,তা তার চোখমুখে ফুটে উঠেছে। বুড়ির মন সদয় হয় খানিকটা। রিমু চলে যেতেই শ্যামার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“তার মায়ায় পড়লে আজীবন এমনি কান্দি ম’রতি হবে,এইটুকুনে হাঁপায় গেলে চলবো নাকি?”
শ্যামা চমকে উঠে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় বুড়ির পানে,
“এমন করে কেনো বলছো গো বুড়িমা?কি জানো তুমি আমার ব্যাপারে?”
বুড়ি ভাবুক হয়ে তার হাত দুটো টেনে ধরে বলে,
“তোর হাতের এই বালা জোড়া আমাগো জমিদারনি চারুলতার,এই বুড়াই যাওয়া চোখেও এই বালা জোড়া চিনতে কোনো সমস্যা হয়নাই আমার। এইগুলা তোর হাতে মানে সে তোরেও তার জালে ফাঁসাই নিছে।”
শ্যামা ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকায় তার হাতের বালার দিকে,খেয়াল না থাকায় সে সেগুলো খুলে রাখতে ভুলে গিয়েছিলো।সে চকিতে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“এগুলো আমার শাশুড়ী মায়ের বুড়িমা,আমার স্বামী দিয়েছেন আমাকে। আমি তার কথা ই তোমাকে জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম। তুমি আমার স্বামী আর তার পরিবারকে চিনো?”
বুড়ি ভারাক্রান্ত মনে বলে,”যারে তুই শাশুড়ী বইলা ডাকতেছোস সে আর সেই জমিদার বাড়ির সক্কলে সেই ১০৪বছর আগেই মা’রা গেছে। যে শয়তানরে তুই স্বামী বইলা ডাকতেছোস,সে নিজের হাতে শেষ করছে এই জমিদার বাড়ি। আমি অনেক আগে থেইকা জানতাম সেই শয়তান এখনো বাঁইচা আছে…”
শ্যামা তার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়,উৎকন্ঠায় রিতীমত কাঁপছে সে,কাঁপা কাঁপা গলায় বলে সে,
“তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে গো বুড়িমা,তুমি হয়তো অন্য কাউকে গুলিয়ে ফেলছো আমার স্বামীর সাথে। আমার উনি এতো খারাপ নয়,উনার নাম….”
“অরণ্য তালুকদার”, বুড়ি বিজ্ঞের ন্যায় ঘোষণা করে।
শ্যামা স্তব্দ হয়ে যায় অরণ্যের নাম বুড়ির মুখ থেকে শুনে,বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে থাকতে থাকতে ধপ করে বসে পড়ে মাটিতে।
বুড়ি এদিকে বলতে থাকে,
” দেখ মা,ও বাড়ির সাথে আমার অনেক ক্ষোভ,আমারে ছোডো বয়সে এতিম বানাইছে তোর স্বামী। কিন্তু তোরে দেইখা আমার ভালা মাইয়া মনে হইলো তাই তোরে সবটা খুইলা বলি আমি,এসব কথা আমি কোনোদিন কাউরে কইনা। তুই শুইনা বুইঝা বিচার করিস কি করবি তুই।”
শ্যামা নির্বাক হয়ে শুধু শুনে যাচ্ছে,তার এই মূহুর্তে কি প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত সে এখনো বুঝতে পারছেনা।
এদিকে বুড়ি তার কাহিনী বলতে শুরু করে,
“তোর স্বামীর বাপ জমির তালুকদার বহুত খারাপ মানুষ আছিলো। তার ক্ষমতা ধন-দৌলতের মেলা লোভ আছিলো,সে চাইতো আশেপাশের দশ গেরামের মইধ্যে তার জমিদারি সবার বড়ো হউক। কিন্তু আফিমের নেশায় বুদ হইয়া এমন গাল সবাই পাড়বার পারে,আসল কাজের বেলায় হেই কোনোদিন অন্য জমিদারদের সমানেও যাইতে পাইরতোনা। তার দৌড় শুধু নিজ গেরামের গরিব চাষিদের উপর খাজনা বাড়াই দিয়া অত্যা’চার কইরা নিজের সিন্দুক ভারী করা পর্যন্ত আছিলো। আর সে আছিলো চরিত্র’হীন, নারীলোভী। গেরামের এমন কোনো সুন্দরী বউ-ঝি নাই যার উপর সে নজর লাগাইতোনা।
কিন্তু সেই সুন্দরের পূজারি জমিদার যহন একদিন কৃষ্ণ বরণের এক মাইয়ারে জমিদারনি বানাইয়া বিয়া কইরা আনে সক্কলে তাজ্জব বনে যায়। এতো অষ্টম আশ্চর্য যেনো। মাইয়াডারে কোত্থেকে আনছে সে খবরও কেউ জানেনা। আমাগো দশ গেরামের কেউ চিনেনা জমিদারনি চারুলতারে,সবাই বলাবলি কইরতে থাকে জমিদার কোনো বিদেশিনীর মায়ায় পইড়া বিয়া করি আনছে তারে।
কিন্তু সে কালি জমিদারনীর কোল জুইড়া যহন চাঁদের ফালির মতো সুন্দর পুত্র সন্তান আসে সক্কলে আবার আশ্চর্য হই যায়। ছেলে মায়ের গায়ের বরণ একটুও পাইলোনা,জমিদার বংশে কস্মিনকালেও এমন সুন্দর পুত্র জন্ম নেয় নাই মুরুব্বিরা হলফ কইরা বলতো। সেই পুত্রের সৌন্দর্য যেনো বড়ো হইতে হইতে আরও বাড়তে আছিলো,দশ গেরামের মাইয়া ছাড়,বড়ো বড়ো ইংলিশ মেডামরাও তার রূপে মোহিত আছিলো।
শুধু রূপ নয়,তার শরীরে আছিলো অসীম শক্তি যেনো,যেমন তেজ তেমন সাহস,দুনিয়ার কোনো ভয়ডর তার মধ্যি আছিলো না।
কিন্তু রূপ গুণ থাকলে কি হবে যদি হৃদয় নামের জিনিসটা না থাকে তার মধ্যি? এটাই আছিলো অরণ্য তালুকদার। সেই ছেলে তার বাপ থেইকা আরেকধাপ আগায় আছিলো ক্ষমতালোভী হওয়ায়,হ্যাঁ তয় সেই আবার তার বাপের মতো নারীলোভী চরিত্রহীন আছিলো না।
দুনিয়ার কোনো সৌন্দর্য তার মনে জায়গা করতি পারতোনা। কেমনে করবে?তার জন্যি তো একটা মন একটা হৃদয় থাকা দরকার। অরণ্য তালুকদারের তা ছিলোনা। সে ছিলো অসীম বলবান এবং ততোটাই নির্দয়। বাচ্চা-বৃদ্ধ কারো কান্না তার কান অবধি পৌছাইতো না। জমির তালুকদারের আরও গিন্নি আছিলো,তাদেরও পুত্র আছিলো,কিন্তু কেউই তার এই ছেলের সমান হইতে পারেনাই। জমির তালুকদার বেশ খুশি আছিলো ছেলের প্রতি,তাইতো জমির তালুকদার ছেলের হাতেই সব তুইলা দেয় এতো তাড়াতাড়ি, আর তার গুণধর ছেলে তারে নিরাশ করেনাই। গেরামের পর গেরামের জমিদারি দখল করছে সেই ছেলে নিজের ক্ষমতায়। তার আচরণ এতোটাই নির্দয় আছিলো যে গেরামের মানুষ তখন কানাঘুষা শুরু করে তহন। জমিদারনি শয়তানের কাছে নিজের আত্মা বেঁইচা দিছে,তন্ত্রসাধনা করে ওই নারী,নয়তো এমন শয়তানের অবতার ছেলে কেনো জন্ম নিবে। তয় জমিদারনিরে লইয়া কানাঘুষা গুলান কতটুক সত্যি জানিনে আমি। এই সব কথা তহন লোকমুখে শুনছি আমি। আমি তহন ছোডো যহন অরণ্য তালুকদারের জমিদারি চলতেছিলো গেরামে। বাপের সাথে জমিদার বাড়ি খাজনা দিতে গিয়া বহুবার জমিদারনির সাথে দেখা হইছে আমার। ছোট খাটো গড়নের কৃষ্ণ বর্ণের মহিলা আছিলেন তিনি। যতবার জমিদার বাড়ি গেছি,তারে আমি সবসময় পুকুর ঘাটে বইসা এক দৃষ্টিতে পুকুরের পানির দিকে তাকাই থাকতে দেখতাম,তারে যে সবাই পিশা’চি’নী,ডা’ই’নী ডাকে,তারে দেখলে আমার মনে হইতো না তিনি এতো খারাপ মানুষ। এহন ভাবলে বুঝি তার দৃষ্টিতে কেমন একাকিত্ব আর জীবনের প্রতি অনীহা কাজ কইরতো। তিনি আমারে প্রতিবার দেখলে মিষ্টি হাইসা আমারে কাছে ডাকতেন,হাতে চুপিচুপি পেয়ারাটা,জলপাইটা গুঁজে দিতেন খাওয়ার জন্যি। এমন অমায়িক তার ব্যবহার আছিলো,এহনো ভাবলে প্রাণ জুড়াই যায়। তার পেডে যে এমন শয়তান জন্ম নিছে আজও ভাবলে আশ্চর্য লাগে আমার। আমারে বাপে অনেকবার মানা করছিলো ওই ডা’ই’নী থেইকা দূরে থাকি,কিছু দিলে ফেলাই দি। কিন্তু আমি শুনতাম না,লুকাই লুকাই ঠিকই যাইতাম তার সাথে দেখা কইরতে। তার সাথে দেখা করতে গেলে সে সবসময় খুশি হই যাইতো,কথা বলার মানুষের বড়ো অভাব আছিলো তার। একটা ছেলে,সেও তারে মাইনা চলেনা। বড্ড মায়া মায়া লাগতো আমার জমিদারনিরে। বুঝলি মেয়ে?জমিদারনির সাথে আমার বহুতবার সাক্ষাৎ হইছে,তাই তোর হাতের ওই বালা জোড়া চিনতে আমার কোনো ভুল হয়নাই।”
শ্যামা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শুনছিলো সবটা,সে যেনো হারিয়ে গিয়েছে ১০০বছর আগের সে সময়ে,তারপর কি হয়েছিলো?হঠাৎ থেমে যাওয়ায় সে ঘোর লাগা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“তারপর?কি হয়েছিলো তারপর?”
বুড়ি তার দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“তারপর ই সব শেষ হই যায় রে মেয়ে। সেই শয়তান জমিদারি হাতে নেওয়ার পাঁচ বছর পর হঠাৎ লোকমুখে গুঞ্জন উঠে জমিদার অরণ্য তালুকদারের বহুত খারাপ অসুখ হইছে,সে অসুখ মনে হয় সারবো না। সেই গুঞ্জন আরও প্রকট হই উঠে যহন জমিদাররে আর লোকচোক্ষে দেখা যাওয়া বন্ধ হইয়া যায়।
তারপর আইলো সেই দিন,আমার বয়স মাত্র আট বছর তহন। এক ভরসন্ধ্যা বেলায় এলাকার কিছু লোকজন আমার বাপরে ডাইকা নিয়া যায়। যাওয়ার আগে বাজান শুধু বলি গেছিলো রাত কইরা ফিরবে,তোমরা ছিটকিনি দিয়া ঘুমাই যাইয়ো।
কিন্তু সেই রাত বাজান আর ফিরেনাই। সকাল সকাল মানুষের হইচই পড়ি যায় জমিদার বাড়িতে ঘটনা ঘটছে। যে যার মতো ছুঁটছে সেদিকে। আমিও সবার দেখাদেখি ছুটে যাই সেদিকে। সেইখানে গিয়া আমি সেই বয়সে যেই দৃশ্য দেখছি,আজ এতো বছর পরেও আমার কলিজা কাঁপি উঠে ভাবলে। বাড়ির গেইট থেইকা পুরা বাড়ি সীমানা জুইড়া ছড়াই ছিটায় আছে অগনিত মানুষের ছিন্নভিন্ন লা’শ, কিছু কিছু মানুষ আবার আগুনে পুড়ায়া মা’রা হইছে। এই লা’শের স্তুপে অনেকেই তাদের বাপ ভাইরে খুঁইজা পায়,আমিও পাইছিলাম আমার বাপরে….”
বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠে বুড়ি,তারপর রাগমিশ্রিত স্বরে বলতে থাকে,
“ওই জমিদার বাড়ির মানুষও একটাও পাওয়া যায়নাই এরপর থেইকা,সবাই ভাবছে ম’রি গেছে সব সেই ঘা’ত’কের হাতে।কেউ ভয়েও আর ওদিকে পা মাড়ায় নাই এই ঘটনার পরে। কিন্তু আমি গেছিলাম। বাজানরে হারাইয়া এতিম তহন আমি,মার দিশেহারা অবস্থা,ভাইটাও ছোডো,না খেতে পাই ম’রতে হবে কিছু না করলে। দিনের বেলায় ওদিক দিয়া কেউ যাইতে দিতোনা। তাই আমি গেছিলাম রাইতের বেলা,চুপিচুপি। এতোবড় জমিদার বাড়ি,সেখানে চাইল ডাইল তো নিশ্চয়ই থাকবো।
কিন্তু চাইল ডাইলের সাক্ষাৎ পাওয়ার আগে তারে দেখিছি আমি। সেই শয়তানরে। সেই পুকুরপাড়ে হাঁটু গাইড়া বইসা ম’রাকান্না কাঁদতে দেখছি। আমি তারে দেইখাই পালাই আসছি জান হাতে নিয়া। সবাই ম’রলে সে কেমনে বাঁচি আছে?মনের মধ্যে খালি এইটাই চলতেছিলো,লোকে ঠিকই বলতো। সে খোদ শয়তানের অবতার,আমি জানি সে ই মে’রেছে আমার বাপরে,সবাইরে। নিজের মা রেও ছাড়েনাই সেই শয়তান….”
“ব্যস!” চকিতে উঠে দাঁড়ায় শ্যামা।
“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ গো বুড়িমা,তুমি আমাকে যতটা জানো বলে সাহায্য করেছো। আমি সত্যি কৃতজ্ঞ তোমার প্রতি। হয়তো ঠিক বলছো তুমি। সে হয়তো নির্দয়,সে শয়তান,সে হয়তো সাধারণ কেউ নয়,সে হয়তো আসলেই তোমার বাবাকে আর সেসব মানুষকে মে’রেছে। সে হয়তো সত্যি অনেক বড়ো অমানুষ ছিলো কিন্তু সে এতো বড়ো অমানুষও নয় যে সে নিজের মাকে নিজের হাতে হত্যা করবে। আমি অরণ্যকে আপনার মতো সাক্ষাৎ দেখিনি,কিন্তু অনুভব করেছি আমি। সে থেকে থেকে কয়েকবার তার মায়ের কথা বলেছে। আমি ওর কন্ঠে অনুভব করেছি ও ওর মা কে অনেক ভালোবাসে।”
“ভুল জানিস রে তুই মেয়ে,এতো কিছু শোনার পরেও যদি তোর চোখ খুলে না থাকে তাহলে বলতে হবে,সেই শয়তান তোকে পুরোপুরি তার মায়াজালে বন্দী করেছে। তুই ই ভাব,সে সাধারণ কেউ হলে সে এতো বছর কেমনে বাঁচি আছে,কেন তারে লোক সম্মুখে দেখা যায়না?এখনো সময় আছে,চলে যা এইখান থেকে। কখনো ফিরে আসিস না। তোর জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে সেই শয়তানের হাতে। সে তোরে কোনো উদ্দেশ্যে এই পর্যন্ত বাঁচাই রাখছে,নয়তো যে তার নিজের মায়েরে ছাড় দেয়নাই,সে তোরে ছাড়বো নাকি?”
বুড়ির শেষের দিকে বলা কথাগুলো পুরো শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় যেনো শ্যামার। সে রাগের মাথায় আর এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে।
তার এখানে আসাই উচিত হয়নি। এই কুটনী বুড়ি সবটা বানানো কথা বলছে। অরণ্য তার মায়ের খু’নী?এই কথা তাকে বিশ্বাস করতে হবে?কি জানে উনি অরণ্যের ব্যাপারে?কতটা বুঝেন উনি অরণ্য কে?
অরণ্য থেকে থেকে কয়েকবার তার মায়ের স্মৃতিচারণ করেছে তার সামনে। তাকে নিয়ে বেশি কিছু না বললেও সে বুঝতে পেরেছিলো সে তার মাকে কতটা ভালোবাসে,সবসময় সে কেমন বেদনাকাতর হয়ে উঠতো মায়ের কথা উঠলে। আর ওই বুড়ি বলছে অরণ্য তার মাকে নিজ হাতে খু’ন করেছে?
আর অরণ্য তাকে ভালোবাসে,সে হৃদয়হীন নয়,তাদের ভালোবাসা মিথ্যে নয়। এই বুড়ির কথা পুরোপুরি সত্য হতেই পারেনা।
গ্রামের সেই আঁকাবাঁকা পথ ধরে বেশ খানিকক্ষণ জোরে হাঁটার পর হাঁপিয়ে উঠে রাস্তার পাশে বসে পড়ে শ্যামা। বুকটা তার এতো জোরে ধুকপুক করছে যেনো এক্ষুনি ফেটে বেরিয়ে আসবে। সে কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সে চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে বলে উঠে,
“আমি জানি আপনি সবটা শুনছেন অরণ্য। ওরা আপনাকে আপনার মায়ের খু’নী বলছে,আমার প্রতি আপনার ভালোবাসাকে মিথ্যা বলছে। আপনি তার কোনো প্রতিবাদ করবেন না?আমার কিচ্ছু যাই আসেনা আপনি কোনো শয়তান হোন,পিশাচ হোন বা কোনো খারাপ কিছু। আমার জন্য আমার অরণ্য,আমার স্বপ্নপুরুষ আপনি। আমি আপনাকে সব রূপে ভালোবাসি,আমরণ বাসবো। আপনার উদ্দেশ্য যদি আমার ক্ষতি করা হয়ে থাকে,তাহলে আপনাকে ভালোবেসে ম’রতেও রাজি আছি আমি।
শুধু একবার আমার সামনে আসুন,আমার কাছে আপনার সত্যিটা খুলে বলুন। আপনি যা চাইবেন তাই দিবো আমি আপনাকে।”
বলতে বলতে চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে শ্যামার।
অরণ্য আসলেই শুনেছে সবটা,সে অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজে নিজেই বিড়বিড় করে উঠে,
“আমি যা চাই তোমার কাছে তা শুনলে তুমি কখনো দিতে চাইবেনা আমাকে”
(চলবে)
#শ্যামারণ্য
#পর্বঃ২৪
লেখনীতেঃ #ফাহমিদা_মেহেজাবীন
শ্যামা যখন ট্রেন থেকে নামে তখন রাত বারোটা পার হয়েছে ইতোমধ্যে। হেনা আবার ফোন করেছিলো,বলেছে নীলার নাকি লেবার পেইন উঠেছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শ্যামা অরণ্যের ব্যপারে আপাতত ভাবতে চায়না,কারণ যতোই ভাবছে ততোই এলোমেলো লাগছে সবকিছু তার।
তাই এখন সে আপাতত সামনের পরিস্থিতিটা সামাল দেওয়ার চিন্তায় আছে। মা বাবা দুজনেই ভেঙ্গে পড়েছেন,হেনার অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। যদিও সে নিজেও কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার পরিস্থিতিতে নেই,তবু তাকে সবসময়ের মতো এবারও সবটা শক্ত হাতে সামলাতে হবে।
তবে এই মুহুর্তে এই নিশুতি রাতে তার এভাবে একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতেও ভয় লাগছে। স্টেশনের বাইরে সিএনজি স্টেশনের কোনো সিএনজি যেতে চাইছে না। অগত্যা সে অপেক্ষা করছে অন্য গাড়ির জন্য। কিছুটা দূরেই একদল ছেলে তার দিকে কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে কিসব বলাবলি করে হাসাহাসি করছে। শ্যামার অনেক ভয় লাগছে এই মুহূর্তে।
হঠাৎ কোথা থেকে একটা বাইক এসে শ্যামার সামনে ব্রেক করলো, আচমকা একটি বাইক তার সামনে এভাবে এসে দাঁড়ানোতে ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠে শ্যামার,বাইক আরোহীর চেহারা হেলমেট থাকায় বুঝা যাচ্ছেনা। সে ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়।
তখন বাইক আরোহী পরিচিত কন্ঠে হেলমেট খুলতে খুলতে বলে,
“আরে শ্যামা,ভয় পেয়ো না, এটা আমি।”
হেলমেট সরাতে সৌরভের চেহারা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শ্যামা,
“ওহ সৌরভ ভাইয়া,আসলে আপনাকে এই সময় এখানে দেখবো আশা করিনি।”
“আমি আমার এক বন্ধুকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছিলাম। তা তুমি এখানে?শুনলাম তোমার ভাই খু’ন হয়েছে,পুরো দেশ জুড়ে এই কেসটার কথা চলছে। তুমি স্টেশনে কি করো?”
সৌরভ শ্যামাকে উপর নীচ পরখ করতে করতে জিজ্ঞেস করে।
খয়েরি জমিনের একটা শাড়ি পরে আছে শ্যামা যা তার উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকে কেটে বসেছে যেনো,গলায় পাতলা সোনার চেইন,হাতে স্বর্ণের বালা যেনো সে সৌন্দর্যকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে,লম্বা চুল গুলো এলোমেলো এক পাশে বিনুনি করা,এটুকুই যেনো যথেষ্ট তার শরীরে কামনার ঝড় তোলার জন্য। কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই শুকনো ঢুক গিললো সে।
শ্যামা সৌরভের গভীর দৃষ্টিতে ইতস্তত বোধ করে,লোকটার তাকানোটা কেনো যেনো পছন্দ হলোনা শ্যামার। সে গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয়,
“আমি চাকরি সূত্রে বাইরে থাকি তাই আসতে দেরি হলো,গাড়ির অপেক্ষা করছি।”
সৌরভ স্মিত হেসে বলে,”বাইকে উঠো,আমি দিয়ে আসছি।”
শ্যামা তড়িঘড়ি করে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানায়,
“আরে না না ভাইয়া,আমি ঠিক সিএনজি নিয়ে চলে যাবো,আপনার কষ্ট করা লাগবে না।”
“কষ্ট কেনো হবে?তোমার পরিচিত হিসেবে হোক আর ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবেই হোক,দুদিক থেকেই এটা আমার কর্তব্য। উঠে পড়ো জলদি। এই সময় একা একটি মেয়ের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ভালো দেখায় না।”
শ্যামার কথাগুলো যৌক্তিক মনে হলেও মনে কেমন জানি খচখচ করতে লাগলো। এদিকে তাকে ইতস্তত করতে দেখে সৌরভ বলে উঠে,
“কি হলো শ্যামা?তুমিতো এভাবে নার্ভাস হচ্ছো যেনো তুমি এই প্রথম আমার বাইকে উঠবে?মনে আছে আগে আমরা প্রায়ই একসাথে যাতায়াত করতাম আমার বাইকে।”
বলার সাথে সাথেই একটা জোর হাওয়ার ঝাপটা আছড়ে পড়ে সৌরভের উপর,টাল সামলাতে গিয়ে কোনো মতে বাইকের হ্যান্ডেল ধরে পড়ে যাওয়া ঠেকায় সৌরভ। সে হঠাৎ এমন হওয়ায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
শ্যামার কয়েক সেকেন্ড লাগে বিষয়টা বুঝতে,বোঝার সাথে সাথে মনের ভেতর চেপে রাখা অভিমানটা আবার দাউদাউ করে জ্ব’লে উঠে।
শ্যামা শান্ত কন্ঠে বলে,”ঠিক বলেছেন ভাইয়া,আপনি তো ঘরের ই মানুষ। চলুন ভাইয়া, আমাকে একটু হাসপাতালে দিয়ে আসবেন।”
“হ্যাঁ অবশ্যই,উঠে ভালো করে শক্ত করে ধরে বসো।”
শ্যামা তা ই করলো,বাইকে উঠে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে বসলো সৌরভকে,শ্যামার হাতের স্পর্শে পুরো শরীরে যেনো কাঁপুনি দিয়ে উঠে সৌরভের। এদিকে অরণ্যের রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়।
বাইক ছেড়ে দেওয়ার সময় সৌরভ মনে মনে বলে,
‘তোকে শিকার করার মোক্ষম সুযোগ ছিলো রে আজ শ্যামা পাখি। কিন্তু এই মুহূর্তে তোকে ভোগ করার চেয়েও জরুরি কিছু পাওয়ার আছে তোর থেকে। তোর ভাইয়ের কেইসের সাথে কোনো মতে জড়িয়ে পড়লে নেতা হিসেবে ভালোই প্রচার হবে,নামডাক বাড়বে আমার।
একবার সব ঠান্ডা হোক,তারপর তোকে নিজের করেই ছাড়বো।’
বাইক চলে যায় তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। অরণ্য কিছুটা দূরে একটি গাছের আলোছায়ায় গাছের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখমুখ রাগে শক্ত হয়ে আছে তার,সে আপন মনে বিড়বিড় করে বলে উঠে,
“কাজটা ঠিক করলেনা তুমি শ্যামা”
————————
নীলা একটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছে। শ্যামা ভেবে কূল পাচ্ছিলো না মা বাবাকে কিভাবে সামলাবে,এই পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিত।
কিন্তু মা দিব্যর ছেলেকে পাওয়ার পর অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। তিনি যেনো বাচ্চাটির মাঝে নতুন করে তার ছেলেকে খুঁজে পেয়েছেন। আদর করে নাম রেখেছেন রওনক।
রওনককে সকল ফর্মালিটি পূরণ করে এক সপ্তাহ পর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। ওর জন্য দাইমা রেখেছেন মা।
এদিকে সৌরভ রোজ নিয়ম করে এসে বাবার সাথে কেইস সামলাচ্ছে,বাবাও কেমন ভরসা করা শুরু করে দিয়েছেন লোকটির উপর। পুরো কেইসটা সৌরভ নিজ দ্বায়িত্বে সামলাচ্ছে,অবশ্য তার বেশি কিছু করা লাগেনি। নীলার জন্য কেউ উকিল নিয়োগ করেনি,সরকারি উকিলও তার পক্ষে কোনো প্রমাণ যোগাড় করতে পারেনি। নীলার এখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো চান্স নেই ধরতে গেলে। সে এখানে এসে কিছুই করতে পারেনি।
কয়েকবার তার মনে এসেছিলো তাদের থামানো উচিত,কিন্তু সত্য টা এতোটাই আধ্যাত্মিক যে কেউ বিশ্বাস করবেনা,আবার তার মনের একটি কোণা চায় যেনো নীলার শাস্তি হোক। সেদিন অরণ্য তাকে রক্ষা না করলে এই মুহুর্তে হয়তো দিব্যর জায়গায় লা’শটা তার হতো,কিন্তু তারা নির্দোষ সেজে ভালো মানুষের মুখোশ লাগিয়ে ঘুরে বেরাতো তখন। ভাবলেই গা শিউরে উঠে তার, নীলার প্রতি তার মনে কোনো অনুশোচনা কাজ করেনা এসব ভাবলে।
এভাবেই কেটে গেছে পনেরোটা দিন। সবাই যে যার মতো সামলে উঠেছে। সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে আবার। সকলে আবার তাদের নিত্য জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, শুধু শ্যামা ছাড়া।
অরণ্য তার কাছে সবকিছু খুলে না বলায় অভিমান করে চলে এসেছিলো তার কাছ থেকে। আসার সময় বড় মুখ করে বলেও এসেছিলো তাকে ছাড়া থাকাটা শিখে নিবে।
কিন্তু আদোও কি শ্যামার অরণ্যকে ছেড়ে থাকা সম্ভব?অসম্ভব।
কিন্তু অরণ্য তার কথা রেখেছে। এই পনেরো দিনে একবার ফোন করে তার অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করেনি।
শ্যামা প্রথম প্রথম নিজেকে ব্যস্ত রেখে তাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করলেও রাত নামলেই সেই অসহ্য শূন্যতা ঠিক অনুভব করতো।
তখন থেকে থেকে ঘুম আসলেও ব্যস্ততা কমার সাথে সাথে তার একাকিত্ব পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে যেনো।
রাত নামলেই ফোনের স্ক্রিনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাটা যেনো অভ্যেসে পরিণত হয় তার। কিন্তু নাহ তার সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষের ডাক আসেনা। এতোটা পাষাণ সে কিভাবে হতে পারছে?
এদিকে তার কন্ঠ শোনার,তার শরীরের সুবাস পাওয়ার আঁকুতি এতোটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে সে অরণ্যের সুগন্ধ বিভিন্ন সুগন্ধিতে খুঁজে বেড়িয়েছে,র’ক্তজবা গাছ খুঁজে ফুল পেড়ে এনে রেখেছে তার ঘরে। কিন্তু তাতে শুধু অরণ্যের স্মৃতি গুলো আরও বেশি করে ঝেঁকে ধরে তাকে,তার অপূর্ণতা পূরণ হয়না।
শুধুমাত্র তাকে জ্বা’লানোর জন্য সৌরভ লোকটা গায়ে পড়ে সখ্যতা করতে আসলে সেও হেসে হেসে দু চারটা কথা বলে তার সাথে,আশা হয় যদি অরণ্য রেগে গিয়ে হলেও তাকে বকা দেওয়ার জন্য হলে একবার তাকে ফোন করে,অন্তত উনার কন্ঠটা তো একবার শুনতে পাবে।
কিন্তু না অরণ্য সত্যিই এক কথার মানুষ দেখছি,তিনি কি তাকে সত্যিই তাকে আর মেনে নিবেন না?
অভিমানের পাল্লা কমে গিয়ে তীব্র আতঙ্কের পাল্লা ভারী হয়ে উঠে। প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয় আষ্টেপৃষ্টে ঝেঁকে ধরে শ্যামাকে।
প্রতিরাত কাঁদতে কাঁদতে এই অতিষ্ঠ আতঙ্কের মধ্যে বাস করা আর সহ্য করতে না পেরে ষোলো তম রাতে শ্যামা অরণ্যকে নিজ থেকে ফোন করে।
অপর প্রান্তে রিং হয়,দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করতে থাকে শ্যামা,তার মানুষটার সাথে অবশেষে এবার কথা হবে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে ফোনটা কেউ রিসিভ করলোনা।একবার,দুইবার,তিনবার এমনকি চতুর্থবারেও অপর প্রান্তে রিং হতে হতে যখন থেমে যায় তখন চরম হতাশা তাকে ঝেঁকে ধরে, কাঁদতে কাঁদতে নিজের কাছেই মনের সব ক্ষোভ সব অভিমান ঢেলে দেয়,ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে উঠে,
“শয়তান,পি’শাচ কোথাকার! তোর মনে মায়া দয়া বলতে কিছু নেই?আমাকে তোর মায়ায় বন্দী করে কোন পেত্নীর সাথে ফুর্তি করছিস তুই যে আমার ফোনটা ধরার সময় হয়না তোর?তুই পাষাণ,তোর মধ্যে আসলেই হৃদয় নামের জিনিস নেই। নয়তো তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারতেছিনা,তুই কেমনে থাকতেছোস আমাকে ছাড়া?ঠিক আছে থাক তুই আমাকে ছাড়া,আসতে হবেনা আমার কাছে। আমি ম’রলেও আসিস না। আমিতো ম’রেই যাবো,তুই শান্তিতে থাক তোর পেত্নী ডা’ই’নী পিশা’চিনীগুলার সাথে। আর আসবিনা আমার কাছে।”
হাতের ফোনটা ছুড়ে ফেলে একপাশে। উঠে ড্রয়ার খুলে তার ঘুমের ওষুধ সবগুলো হাতে নেয়। এমনিতেই পনেরোদিন ধরে ঠিকমতো ঘুম হয়না,আবেগের বশে শ্যামা সত্যি সত্যিই উদ্ধত হয় সবগুলো ওষুধ খেয়ে ফেলার।
সাথে সাথে অরণ্য পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শ্যামাকে,হাত থেকে ফেলে দেয় ওষুধগুলো,তারপর চুলে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠে,
“এতো জেদ এতো পা’গ’লামি করো কেনো বলোতো?তোমাকে আগে মানা করেছি না এমন পা’গ’লামি না করতে?
আর আমার জীবনে ফুর্তি করার জন্য পেত্নী,ডা’ই’নী,পিশা’চিনী বলতে একজনই আছে,আমার বউ। সেটাও রাগ করে বাপের বাড়ি এসে পড়ে রয়েছে,তবুও শান্তি নেই আমার।
প্রতিনিয়ত জ্বা’লিয়ে মা’রছে আমাকে। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনা,ঘুমায়না, নিয়ম করে পরপুরুষের সাথে হাসাহাসি করে,আবার দিনশেষে অপবাদ দেয় আমি ফুর্তি করে বেড়াচ্ছি” শেষের কথাগুলো বলার সময় অরণ্যের সেই গা জ্বা’লানো হাসির কম্পন অনুভব করে শ্যামা।
থমকে যায় শ্যামা সেখানেই হঠাৎ প্রিয় মানুষটির স্পর্শ পেয়ে,তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষটির কন্ঠ শুনে,তার নাকে ভেসে আসে অরণ্যের আতরের সুবাস,ব্যস এটুকুই যথেষ্ট তার বিক্ষিপ্ত মনটাকে শান্ত করার জন্য। শ্যামা আবেশে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দেয় অরণ্যের বুকে,এতোদিনের জমানো অভিমান গুলো অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে চোখ থেকে।
শ্যামা অভিমানী কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“কেনো এসেছেন এখন?আমি কেউ হই নাকি আপনার?আমি বেঁচে আছি না ম’রে গেছি তাতে কি যায় আসে আপনার?পনেরোটা দিন পার হয়ে গেলো,একবার ফোন করেও জিজ্ঞেস করলেন না কেমন আছি আমি। আমি ফোন করলাম তাও ধরলেন না।
আপনার শর্তগুলো আমাদের ভালোবাসা থেকেও বড়ো হয়ে গেলো,যে আমাকে আপনি এভাবে শাস্তি দিলেন?”
“বিশ্বাস করো শ্যামা,তুমি যতোটা কষ্টে ছিলে তার চেয়ে হাজার গুণ কষ্ট আমার হয়েছে। আমার এই অস্বাভাবিক জীবনে তুমি ছাড়া আর কে ই বা আছে?তোমার থেকে দূরে থাকাটা আমার কাছে কোনো শাস্তির চেয়ে কম নয়।”
“তাহলে কেনো দূর করছেন আমাকে নিজের থেকে?আমিতো বলেছি আমি সব রূপে ভালবাসবো আপনাকে,তাহলে আমাকে সব বলতে সমস্যা কি অরণ্য?”
অরণ্য ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শ্যামার কানের কাছে নাক ঘষতে ঘষতে বলে,
“আমি এক্ষুনি তোমাকে সবকিছু বলতে চাইনি শ্যামা। সবকিছু তুমি যতটা ভাবছো তার চেয়েও অনেক জটিল,এখন সব জানলে অনেক কষ্ট পেতে হবে তোমাকে। তবে যতো দিন যাচ্ছে জটিলতা আরও বেড়ে চলেছে। এমনিই কিছু কারণেই আমাকে তোমার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হয়েছে। কিন্তু তুমি সেটাও হতে দিলেনা। আমি আমার জীবনের সব সত্যি তোমাকে বলতে রাজি আছি শ্যামা,কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে তুমি এসব সহ্য করতে পারবেনা।”
“আপনার সত্যিটা যতোই কঠিন হোক,আমি ঠিক সামলে নিতে পারবো অরণ্য”
অরণ্য আবার একটি তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বলে তাকে,
“তাই যেনো হয়…কাল রাত বারোটায় আমি নিজে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো শ্যামা,কাল তুমি তোমার পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে তোমাদের বাড়ির ছাদে অপেক্ষা করবে আমার জন্য। আমি এখন তোমাকে সবকিছু বোঝাতে পারবোনা। শুধু এটুকু জেনে রাখো তোমার প্রাণ সংকটে আছে। আমি আসার আগ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করবে,কারো সাথে বাইরে যাবেনা,যতোই প্রয়োজন হোক না কেনো। কাউকে বিশ্বাস করবেনা।”
শ্যামার মনে অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম নেয়,অরণ্যের এমন কথা শুনে,কিন্তু সে সেগুলো করলোনা। অরণ্য যখন বলছেন উনি বলবেন সবকিছু,তাহলে আর খানিকটা নাহয় অপেক্ষা করলো।
শ্যামা চকিতে ফিরে তাকায় অরণ্যের দিকে,আজকে তার চোখে কোনো কাপড় বাধা নেই। রুমে নীল রঙের একটি ড্রিম লাইট জ্বলছে শুধু। অরণ্য লাইটের দিকে পিঠ দিয়ে থাকায়। অন্ধকারে তার মুখটা বোঝা যাচ্ছেনা। এই প্রথম মাথায় আসলো ব্যাপারটা তার,আজ অরণ্য আর তার মধ্যে অরণ্যের সৃষ্ট দেওয়ালটা নেই।
ভাবনাটা মস্তিষ্কে বারি খেতেই হৃদস্পন্দন দ্রুতগামী হতে লাগলো। মন ও মস্তিষ্কের ভাবনার এই প্রথমবার সন্ধি হলো,দুটোয় সায় দিলো তার প্রিয় মানুষটিকে একবার দুচোখ ভরে দেখার সুপ্ত বাসনার প্রতি।
আবছা অন্ধকারে অরণ্যের কায়া পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো শ্যামা। অরণ্য তার থেকে বেশ খানিকটা লম্বা,তা সে আগেই বুঝেছিলো যতোবার তার সান্নিধ্যে এসেছে সে। যতোবার তিনি তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছেন ততোবার টের পেয়েছে তার শক্ত পুরুষালী গঠন।
মনের এই টুকু প্রতিচ্ছবি আর তার সম্মোহনী কন্ঠ,তার শরীরের সুবাস যথেষ্ট ছিলো তার প্রাণ জুড়ানোর জন্য। কিন্তু আজ চোখের কোনো বন্ধনী ছাড়া এটুকুতে কেনো যেনো সন্তুষ্ট থাকতে চাইলোনা মন। তাকে একবার দুচোখ ভরে দেখার লোভ বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে লাগলো। একদৃষ্টিতে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনমনেই তার হাতটা চলে যায় অরণ্যের গালের উপর,যেনো অনুভব করতে চাইছে তার মুখের আদল।
অরণ্য তার মনের আকুতি বুঝতে পারলো যেনো,ঠোঁট প্রসারিত করে মুচকি হাসলো সে।
অরণ্য তার গালের উপর রাখা হাতের উপর নিজের এক হাত রেখে অপর হাত দিয়ে শ্যামার কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে কাছে টেনে নিলো,
তারপর নেশাক্ত কন্ঠে শুধালো,
“কি দেখছো এভাবে শ্যামা?”
“আপনাকে”, ঘোর লাগা কন্ঠে বলে শ্যামা।
” আজ কোনো দেওয়াল তুলবেন না আমাদের মাঝে?”
“উম হু” অরণ্য অসম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়,তারপরেই বলে উঠে সেই বাক্যটি যা শোনার অপেক্ষায় শ্যামা দিনরাত প্রহর গুণেছে,
“আজ থেকে কোনো দেওয়াল নয়,কোনো শর্ত নয়,কোনো কিছু লুকাবোনা তোমার থেকে”
বলতে বলতেই ঘরের নেভানো লাইটটা জ্বলে উঠে,আলোয় আলোকিত হয় ঘরের প্রতিটা কোণা। কিন্তু দুনিয়ার সকল আলো,সকল সৌন্দর্য যেনো ব্যর্থ তার সামনে দাঁড়ানো এই সুদর্শন পুরুষটির সামনে।
কালো প্যান্টের উপর একটি হালকা নেভি ব্লু ঢিলেঢালা শার্ট পড়ে আছেন অরণ্য,এমন ঢিলেঢালা পোশাকও তার সুঠাম দেহের গঠন একটুও ম্লান করতে পারেনি,তার ফর্সা লোমশ পুরুষালি হাতের শক্ত বেষ্টনী যেনো নতুন করে আবেগের ঝড় তুললো তার মনে, শ্যামা এক দৃষ্টিতে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে আছে অরণ্যের মুখের দিকে। ঘন কালো অগোছালো চুল যা তার মনে নিজ হাতে আরও খানিকটা অগোছালো করে দেওয়ার বাসনা জাগায়,ফর্সা মুখশ্রী, দাঁড়ি বিহীন তীক্ষ্ণ চোয়াল,ঘন কালো ভ্রুর নীচে কালো নেত্রপল্লব তার কালো চোখ জোড়ার উপর খানিকটা ছায়া ফেলেছে কিন্তু তা তার প্রাণবন্ত দৃষ্টির গভীরতা যেনো আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে,এই দৃষ্টি এই পর্যন্ত প্রতিনিয়ত অনুভব করেছে সে নিজের উপর,সরাসরি এই দৃষ্টির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না,তার নির্লজ্জ লাগামহীন ভাবনাগুলোও যেনো পড়ে নিতে পারে সেই দৃষ্টির গভীরতা,কিন্তু অবাধ্য মন ফের তাকায় সেই সর্বনাশা চোখের দিকে,সাথে রয়েছে তার গোলাপি পাতলা ঠোঁটের সেই গা জ্বা’লানো হাসি যা আজ শুধু মুগ্ধ করতে পেরেছে তাকে। একধ্যানে এভাবে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অস্ফুট সুরে মুখ থেকে একটি শব্দ বেরিয়ে আসে,
“সুন্দর…”
অরণ্য চমকালো,ভীষণভাবে চমকালো। হৃদস্পন্দন তীব্র হতে লাগলো। লজ্জায় কানের লতি লালচে আভা ধারণ করে তার। এই জীবনে তার রূপের প্রসংশা সে বহুবার শুনেছে,বহু সুন্দরী রমণী এমনি ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার প্রতি কামনা প্রকাশ করেছে,বিনিময়ে তাদের প্রতি একরাশ ঘৃ’ণা আর বিদ্রুপ অন্য ছাড়া কোনো অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারেনি তারা তার মনে। কিন্তু এই মুহুর্তে তার সামনে দাঁড়ানো এই মেয়েটি আলাদা,সবার থেকে আলাদা। এখন এই মুহুর্তে তার সামনে যদি সে দুনিয়ার সবচেয়ে কদাকার মানুষটিকেও অরণ্য হিসেবে দেখতে পেতো,তখনও সে এভাবেই বলতো “সুন্দর”। কারণ সে তার রূপকে নয়,অরণ্যকে ভালোবেসেছে।
এজন্যই হয়তো এই মানুষটি তার একান্ত প্রিয় মানুষ,আর প্রিয় মানুষের প্রশংসা অন্তরে অনুভূতির ঝড় তুলবে সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?
অরণ্য তড়িৎ গতিতে তার বড়সড় হাতের তালু দিয়ে ঢেকে দেয় শ্যামার চোখ,তার চোখের শান্তিতে ভাটা পড়ায় বিচলিত হয় শ্যামা। অরণ্য ইতস্তত করে বলে,
“এভাবে তাকিয়ে থেকোনা,আমার শ্বাস নিতে সমস্যা হয়”
শ্যামা অবাধ্য হাতে সরিয়ে দেয় অরণ্যের হাত,তারপর দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে তার চোখে চোখ রেখে বলে,
“আমার এভাবে তাকিয়ে থাকার অভ্যাসটা করে নিন তাহলে,কারণ আমার মনে হয়না এক জনমে আপনাকে দেখার স্বাধ মিটবে আমার। আমার কল্পনা থেকেও অনেক বেশি সুন্দর আপনি অরণ্য।”
অরণ্য পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তার বাহুতে থাকা তার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর রমণীটির দিকে,যাকে হারানোর ভয় তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছে,এই মানুষটিকে হারালে পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে সে। তাকে হারানোর আশঙ্কা আবার মনে আসতেই শ্যামার ঘাড়ের চুলে হাত গলিয়ে কাছে টেনে নেয় তাকে অরণ্য,অধরে অধর মিলিয়ে গভীরভাবে চুম্বন করে,যেনো সে বাঁধন একটু আলগা করলেই হারিয়ে যাবে মেয়েটি।
শ্যামাও এতোদিনের দূরত্বের পর তার প্রিয় মানুষটিকে কাছে পেয়ে কাছে টেনে নেয় তাকে,সেও কাটিয়ে দিতে চায় তাদের মাঝের এই দূরত্ব। অরণ্যের ঘন কালো এলোমেলো চুল মুঠো করে ধরে সেও সাড়া দেয় অরণ্যের ভালোবাসার প্রতি।
দীর্ঘ সময় পর অবশেষে চুম্বন যখন ভঙ্গ হয় তখন তারা দুজনেই হাঁপাচ্ছে,নিজেদের মাঝে দূরত্ব একটুও বাড়তে দিলোনা দুজনের একজনও,চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের,লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে দুজনেই। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে একে অপরের ঘাড়ে মুখ লুকোয় দুজনে। ঘ্রাণ নেয় একে অপরের শরীরের,ধাতস্থ হয় অনেকটা তাদের অশান্ত মন।
অরণ্য ই প্রথম ঘোর লাগা কন্ঠে বলে উঠে,
“তোমাকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দিন দিন সংবরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে শ্যামা। কিন্তু আমি তোমাকে অন্ধকারে রেখে আমাদের সম্পর্কটা সামনে আগাতে চাইনা। তোমার আগে সবকিছু জানতে হবে।”
শ্যামা অরণ্যের কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে লজ্জায় মিইয়ে যেতে চায় অরণ্যের বুকে। অরণ্য তার বাহুবন্ধনী খানিকটা আলগা করে শ্যামাকে তার মুখোমুখি করে।শ্যামা তখনও মাথা নীচু করে রয়েছে,অরণ্যের চোখের দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে।
অরণ্য শ্যামার লজ্জামাখা মুখশ্রী দেখে স্মিত হাসলো।শ্যামার গালের একপাশে নিজের একটা হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে উঠে,
“আমি আমার জীবনে অনেকগুলো ভুল করেছি,অনেকগুলো পাপ করেছি,ভুল মানুষগুলোকে বিশ্বাস করেছি,কাছের মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়েছি।”
শ্যামা চকিতে চোখ তুলে তাকায় অরণ্যের চোখের দিকে,একরাশ সুক্ষ্ম বেদনা যেনো তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছে। মনটা কেমন যেনো করে উঠলো শ্যামার তার সেই ব্যাথাতুর চাহনি দেখে। অরণ্য তার পরের কথাটি বললো তখন,
“কিন্তু তোমাকে ভালোবাসাটা আমার জীবনের করা সবচেয়ে সুন্দর সবচেয়ে পবিত্র ভুল ছিলো। আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি শ্যামা।”
অবাক নয়নে চেয়ে থাকে শ্যামা অরণ্যের পানে,এই প্রথম তিনি মুখ ফুটে তার ভালোবাসার কথা বলেছেন,কিন্তু এভাবে বলছেন কেনো তিনি?তাদের ভালোবাসা ভুল হতে যাবে কেনো? অরণ্য হয়তো বুঝতে পারলো তার প্রশ্নবোধক চাহনি,তাই হয়তো সে বলে উঠলো,
“আজ কোনো প্রশ্ন করোনা”
ঠিক আছে করবেনা প্রশ্ন,কোনো প্রশ্ন করবেনা।শুধু একদিন প্রমাণ করে দিবে শ্যামা আর অরণ্যের ভালোবাসা কোনো ভুল ছিলোনা,মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে শ্যামা।
অরণ্য থেকে দূরে সরে দাঁড়ায় শ্যামা,অরণ্য কিছু বলার আগেই সে বলে উঠে,
“এখানে চুপটি করে বসুন,আমি খাবার গরম করে আনছি,নিশ্চয়ই এখনো খাওয়া হয়নি আপনার।”
বলেই অরণ্যের জবাবের অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে আসে রুম থেকে,পিছনের দড়জাটা বন্ধ হতেই চোখের অবাধ্য অশ্রুগুলো গড়িয়ে পড়ে।
অরণ্য ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে।
কিছুক্ষণ পর শ্যামা যখন ফিরে আসে তখন দুজনেই স্বাভাবিক। একটু আগের বিষয়টা নিয়ে কেউ আর কোনো কথা বলেনি।
শ্যামা আজকে নিজ হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দিয়েছে অরণ্যকে,তৃপ্তি ভরে দেখেছে তাকে চোখের সামনে খেতে। খাওয়া শেষে নিজের ওড়না দিয়ে মুখটাও মুছে দিয়েছে।
তারপর কপালে গালে চোখে অজস্র ছোটো ছোটো চুমু খেয়ে বলেছে,
“আমিও আমার অরণ্যকে অনেক বেশি ভালোবাসি”
তা শুনে অরণ্য পুলকিত হৃদয়ে তাকে কাছে টেনে নিয়েছে।
লাইট বন্ধ করে শ্যামাকে বুকে নিয়ে শুয়ে চুলে বিলি কাঁটতে কাঁটতে অরণ্য শেষবার সাবধান করে দেয় শ্যামাকে,
“কালকের দিনটা সাবধানে থেকো,বাড়ির চৌহদ্দি পার করোনা আমি আসার আগে।”
শ্যামা মৃদু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়,তারপর তলিয়ে যায় গভীর ঘুমে। আজকে অনেকদিন পরে শান্তিতে ঘুমাবে সে।
(চলবে)