আমি মায়াবতী পর্ব-৩৮+৩৯

0
394

#আমি_মায়াবতী
#পর্ব_৩৮
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

খাটের মাঝখানে আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে আছে সাবিহা।উদ্দেশ্য,মায়াকে খাটে শুতে না দেওয়া। আজ সাবিহা সংকল্প করে বসেছে। যে করেই হোক,মায়া আর কাব্যর প্রেমের শুরুটা জানতেই হবে। সাবিহা নিজের বেণী দুটো দোলাচ্ছে। মায়ার তাকে দেখে মনে হল, সে যেন একটা ছোট্ট বাচ্চা। যেন মায়ের কাছে কোন একটা জিনিসের আবদার করে বসেছে।মা সেটা দিতে না চাওয়ায়,ভুলভাল কাজ কারবার করছে। মায়া কয়েকবার ওকে বলেছে, যাতে ও সরে যায় ওখান থেকে। কিন্তু সাবিহা নাছোড়বান্দা। আজ সে কোনভাবেই মায়ার কোন কথাতেই চুপ করবেনা। তাকে সবকিছু জানতেই হবে। মায়া বিরক্ত হয়ে বলে,”আমার কিন্তু ঘুম পাচ্ছে সাবিহা। সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছি আমি। এখন না ঘুমোতে পারলে কিন্তু সকালে আমি কোচিং ক্লাসে যেতে পারবো না।”
সাবিহা হাতের উল্টো পিঠে কি যেন দেখে বলল,” প্রেম করা বুঝি খুব পরিশ্রমের কাজ?”
“উফ সাবিহা,তোকে নিয়ে হয়েছে আমার জ্বালা। প্রথমত ওই বেটার কথাগুলা শুনতে হবে। তার কথামতো বেশি খাবারও খেতে হবে।আবার বাসায় এসে তোর কাছে সবকিছু বলতে হবে। এখন তো শুধু তুই,কিছুদিন আগে তো কবিতাও ছিল। ভাগ্যিস, বেচারী প্রেম করছে।তাই এখন এর জ্বালাটা বুঝতে পারছে। যখন তুই প্রেম করবি তখন বুঝবি, এসব কেউ জিজ্ঞেস করলে কেমন লাগে।”
“আমার ওতো কিছু বোঝার দরকার নেই তো।আমি যেটা জানতে চাইছি তুমি সেটা বল। এই গোমরা মুখো রিজার জন্য তো আমি ভালোভাবে দিনে জিজ্ঞেসও করতে পারিনি। না জানি ও কখন বলে দেয় কাউকে।”
“বাদ দে তো।”
“না।বাদ দিব না। আজ তোমাকে বলতেই হবে।যে তুমি ওনাকে দেখি এত ভয় পেতে লজ্জা পেতে, হুট করে কি এমন হলো যে কলেজে থাকা অবস্থায় তোমরা প্রেমে জড়ালে?”
মায়া একবার মাথা চুলকালো।তারপর বলল,”আমার আসলেই অনেক ঘুম পেয়েছে সাবিহা। আমাকে একটু ঘুমাতে দিবি?”
“আমি কি তোমাকে না করেছি ঘুমোতে? তুমি অবশ্যই ঘুমাবে ,অবশ্যই। কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। বলে দিলেই তো হয় আর ডিস্টার্ব করবো না।”
মায় একবার সাবিহার দিকে তাকালো। এই মেয়েটা বড্ড একগুঁয়ে টাইপের। যেটা বলবে, সেটা করেই ছাড়বে। কিন্তু মায়া নিরুপায়। সবকিছু এখন বলা সম্ভব না। বিশেষ করে সাবিহাকে তো অবশ্যই না। তাহলে সোহাগের ব্যাপারটাও সে জেনে যাবে। মায়া চায় না সোহাগকে খারাপ বানাতে কারো কাছে। তাহলে বাবা আর সোহাগের বাবার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা মায়া চায় না।
“এই মায়াপু, বলো না।”
“বলবো, কিন্তু আজকে না। ”
“কেন?”
“সমস্যা আছে সাবিহা।”
“কি সমস্যা? ”
“দেয়ালেরও কান আছে রে সাবিহা। আমরা আমাদের ঘরের মধ্যে আছি। হতেও তো পারে বাইরে থেকে কেউ আমাদের ঘরে কান পেতে আছে। কেউ যদি জেনে যায়,তাহলে কি হবে?”
সাবিহা এবার হাই তুলতে তুলতে হাল ছেড়ে দিয়ে বলে,”বুঝেছি। তুমি বলবে না। এইজন্য এতো বাহানা।”
“একদিন আমি অবশ্যই বলবো সাবিহা। কিন্তু আজকে না। ”
“কবে বলবে বলো। আমাকে তারিখটা বলো।”
“আমাদের যেদিন বিয়ে হবে, তখন বলবো।”
সাবিহা মুখ বেঁকিয়ে বলে,” হয়েছে। এসো তুমি। ঘুমিয়ে পড়ো। আমি আর জানতে চাইবোনা।”
সাবিহা ধপ করে উঠে এসে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ে নিজের জায়গায়।
মায়া কিছুক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকে। বাইরে থেকে চাঁদের আলো আসছে। সাবিহার মুখে পড়ে ওর মুখটা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। এই মেয়েটা খুবই ঘুমকাতুরে। কোনো এক জায়গায় শুলেই ঘুমিয়ে পড়ে। হুট করে লাইট বন্ধ করে দেওয়ায় কিছুক্ষণ মায়া কিছুই দেখতে পারে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর অন্ধকার সহ্য হয়ে গেছে। মায়া ধীরে ধীরে উঠে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। এই ঢাকার শহর সবসময়ই জেগে থাকে। কখনোই মনে হয় ঘুমোয় না। মায়ার ভীষণ ইচ্ছে করছে এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে। কিন্তু ভীষণ আলসেমিও লাগছে। ফ্লোরে বসে পড়ে মায়া। তার জীবনটা নিয়ে তার হাজারটা অভিযোগ। কেন এমন হলো তার সাথে? কি উদ্দেশ্যে সে জন্মেছে কে জানে? মায়ার ইচ্ছে করে তাদের প্রেমের সম্পর্কের কথা সাবিহাকে জানাতে। কিন্তু সাবিহাকে জানালে সবকিছুই বদলে যাবে। বাবা অনেক আশাবাদী সবাইকে নিয়েই। এখন গ্রামেও আসা-যাওয়া করে। সোহাগ ভাইয়ের বাবাকে সে গ্রামের সবার চাইতে বেশি ভরসা করে। সে যদি জানে এইসব তাহলে অনেক কষ্ট পাবে। সুন্দর অনেক মুহুর্তের কথা মনে পড়ছে মায়ার। ভাবতেই লজ্জা লাগে তার এখনও যখন সে কাব্যর সাথে সামনাসামনি এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছিল। অতীতের কথা ভাবতে তার ভালো লাগে। এই সোহাগটার জন্যই মাঝেমধ্যে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তার। তবুও সবগুলো স্মৃতিই সুন্দর। জীবন্ত। মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলে। মনে পড়ে যায় ৬ মাস আগের কথা। সেদিন…..
ফ্ল্যাসব্যাক…..

রিজা নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। সাবিহার স্কুলেই তাকে ভর্তি করে দিয়েছে। সাগরিকা তাকে সোহাগ আসার সময়ই একটা কোচিং ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছে। তবে, এখন রিজা আর আগের মতো সাজগোজ করেনা। সিম্পল থাকে। সে হয়তো বুঝে গিয়েছে সাজগোজ করে কারো মন জয় করা যায় না। কিন্তু আজ সে কোচিং বা স্কুল কোথাও যায়নি। মায়া কলেজ থেকে ফিরে তাকে সোফায় বসে থাকতে দেখেই আঁতকে উঠে। আজকে তো সোহাগ ভাইও আসবে। রিজা তাকে দেখে হাসতে হাসতে বলে,”এসে গেছো আপু? আজকে আমিও তোমাদের সাথে পড়বো সোহাগ ভাইয়ের কাছে?”
মায়া খুব স্বাভাবিকভাবেই বলে,”কেন? তোকে তো কোচিং এ দেওয়া হয়েছে। সেখানে পড়ানো হয় না?”
“আরেহ, হয় তো। কিন্তু আমাদের কোচিং এ পরীক্ষা আছে কালকে। আমি অনেক কিছুই পারি না। স্যার বলে দিয়েছে আর কাউকে কিছু বোঝাবে না। একদম পরীক্ষার পরই সবকিছু বুঝিয়ে দিবে। তাই আমি আজ সোহাগ ভাইয়ের কাছে থেকে বুঝে নিবো।”
“অহ, আচ্ছা।”
“আচ্ছা তুমি যাও। গোসল করে নাও।”
“আম্মা আর ফুপি কই রিজা?”
“মামী তো আজকে সাব্বিরকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে আর মা তো কাজে গিয়েছে।”
“উফফ, তোকে আর কতবার বলবো যে ফুপি কাজে যায় না। কাজ শিখতে যায়।”
“একই হলো।মা তো কিছুদিন পর কাজ করবেই। ”
“হুমম। ”
“আমারও অনেক ইচ্ছে আছে সেলাইয়ের কাজ করার।”
“আমার ও আছে।”
“তোমার পরীক্ষার পর কি শিখবে আপু? আমিও তাহলে শিখবো তোমার সাথে। তখন তো অনেকদিন বন্ধ থাকবে। ”
“নাহ রিজা। আমার ভর্তি কোচিং করতে হবে।”
“তাহলে এসএসসির পর কেন শিখো নি?”
“আমি তখনও কোচিং করেছি। কলেজে ভর্তির জন্য। ”
“অহ। বুঝেছি।”
“হুমম। ”
“আজকে কি কবিতা আপু আসবে?”
“হ্যাঁ, আসবে। একটু পরই আসবে। ”
“ওকে। তাহলে আজকে অনেক মজা করবো।”
“আচ্ছা।”
মায়া ভিতরে গিয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করেই আম্মাকে কল দেয়। ওপাশ থেকে সাগরিকা কল রিসিভড করলে বলে,”তুমি আজই কেন গিয়েছো আম্মা? রিজা বাসায় আছে। কোচিং-এ যায়নি। ও আজকে সোহাগ ভাইয়ের কাছে পড়বে।”
সাগরিকা অবস্থা বুঝে বলে,” আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবো মা। চিন্তা করিস না। আর শোন, রিজার ব্যাপারটা এখন তোর বাবাকে জানানো উচিত। কিছু একটা করে বসলে সব দোষ আমার ঘাড়েই পড়বে।”
“আমি বুঝতে পারছি আম্মা। তুমি যতো তাড়াতাড়ি পারো চলে আসো। আর হ্যাঁ, সাবধানে এসো।”
“ওকে।”
কল কেটে দিয়ে মায়া কল দেয় কবিতাকেও। কবিতাকেও তাড়াতাড়ি আসতে বলে।ভয়ে মায়ার হাত পা কাঁপতে থাকে। না জানি আজ রিজা কি কি করবে। ওকে বোঝানোও মুশকিল। একটা কথা বললে বুঝবে অন্য একটা।
★★★
“অনেক দিন পর তোমাকে দেখলাম সোহাগ ভাই। আমার তো কোচিং থাকে। তুমি যেই সময়ে আসো, সেই সময়ে আমি কোচিং-এ থাকি। তাই আসতে পারি না।” বেশ দরদ নিয়ে কথাগুলো বলে রিজা।
সোহাগ বিরক্তি চেপে রেখে বলে,”হুমম, বুঝেছি। এখন অংক কর।”
“আমি মোটামুটি সবই পারি এখন। তাইনা বলো সোহাগ ভাই?”
“হুমম। ভালোই পারিস। কিন্তু এতো কথা বললে সবই ভুলে যাবি।”
“হুমম।”
কবিতা মায়াকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,”আমার তো সবকিছু গন্ডগোল লাগছেরে মায়া। এই রিজাকে তো আমি খুব শান্তশিষ্ট ভেবেছিলাম। আমাদের সাথে থাকলে তো এতো কথা বলেনা। আর এখন তো মনে হচ্ছে খই ফুটেছে মুখে। কেস তো জন্ডিস।”
“হুমম, এইজন্যই তোকে ডেকেছি আগে আগে। ভাইয়াকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস কর। যাতে ও কথা বলার সুযোগ না পায় বেশি।”
“মাইয়া তো ডুইবা ডুইবা জল খাইতাছে। যেমন তুই আমার ভাইয়ের প্রেমে খাইতাছোস।” বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসে কবিতা।
মায়া ওর দিকে চোখদুটো সরু করে বলে,”আর আপনি যেরকম আপনার বড় ভাইয়ের বন্ধুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন।”
“হইছে, থাম।”
“ঠ্যাস মারা কথা বন্ধ কর।”
“কেন বন্ধ করবো? তুমি যখন আমার ভাইয়ের প্রতি কাকলির কেয়ার দেখে রাগে কলম ভেঙে ফেললে, তখনই বুঝেছিলাম তুমি ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছো মনা আমার। শেষমেষ আমার কাছে ধরা পড়েই গেলে।”
“আস্তে কথা বল। শুনবে।”
“অনেকদিন আমরা একসাথে কোথাও যাইনা, সোহাগ ভাই। আমাদের নিয়ে যাবে কোথাও?”
হকচকিয়ে উঠে মায়া রিজার কথা শুনে। সোহাগ এইবার বিরক্ত হয়ে বলে,”আমার সামনে পরীক্ষা আছে। তোকে নিয়ে ঘুরার সময় আমার নেই। ফ্যাঁচফ্যাঁচ করিস না। তোর যদি অংক করার থাকে, তাহলে কর। না হলে আমায় ওদেরকে পড়াতে দে। তিনমাস পরেই ওদের পরীক্ষা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা৷তোর তো এখনও সময় আছে। আর তাছাড়া তোর যে ম্যাথ, সেগুলো মায়াও পারবে। ওর কাছে থেকেই করিস।”
মায়া রিজার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। হয়তো কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু মায়া জানে মেয়েটা এখানেই থাকবে। হলোও তাই। কিছুক্ষন মাথা নিচু করে অংক করলো সে। আবার কিছু মুহূর্ত পরেই সোহাগকে বিরক্ত করা শুরু করলো।
“আজকে আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। আমাদের একটা দাওয়াত আছে।” আনমনে বলে কবিতা।
“অহ, তাহলে আজ তো বেশিক্ষণ পড়তে পারবে না?” কবিতাকে জিজ্ঞেস করে সোহাগ।
“আর কিছুক্ষণ থাকবো।”
সোহাগ তড়িঘড়ি করে বলে,”সমস্যা নেই। আজ আমারও তাড়া আছে। এই ম্যাথটা শেষ করো। তারপরই চলে যাবো।”
মায়া সহসাই তাকায় সোহাগের দিকে। সে এই মুহুর্তে কিছুতেই সহ্য করতে পারছেনা রিজাকে। মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল তার। রিজা মেয়েটা কিছু না বুঝেই কথা বলে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে থাকে সে। যতোই হোক, রিজা তারই বোন। এতোটা অপমান সে সহ্য করতে পারবে না। মেয়েটা যদি বুঝতো, তবে কি এইভাবে কথা বলতো সে?
★★★
” এইটা তুই কি করেছিস কবিতা? আমাদের নিয়ে মেসেঞ্জারে গ্রুপ কেন খুলেছিস তুই?” ফোনে কবিতাকে জিজ্ঞেস করে মায়া।
“রাত ১২ টার জন্য অপেক্ষা কর।”
“মানে কি? আমি কিন্তু লিভ নিবো।”
“কতবার নিবি? যতোবার নিবি ততোবারই এড দিব তোকে।”
“পাগল হয়ে গেছিস তুই?”
“পাগল তো তোরা আমাকে বানিয়েছিস। একদিকে তুই কল করে জ্বালাতন করছিস আরেকদিকে ভাইয়া সমানে আমার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে। আমি দরজা আঁটকে বসে আছি।”
“কি করতে চাইছিস তুই বল তো? উল্টাপাল্টা কিছু করবি না কিন্তু। ”
“তোদের এই বেশি কথার জন্যই আমি উল্টাপাল্টা কাজ করবো। ১২ টা বাজতে আর মাত্র ১০ মিনিট আছে কিন্তু তোদের আগ্রহ কতো শোনার৷ ফোন রাখ। ”
মায়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। এই কবিতা কি করবে কে জানে। সে চোখ বন্ধ করে থাকে। কিন্তু সময় যেন যায়ই না। উত্তেজনায় সারাঘর জুড়ে পায়চারি করতে থাকে সে।
হঠাৎ মোবাইলটা টুং করে উঠে। সে তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে কবিতা একটা মেসেজ পাঠিয়েছে গ্রুপে। মেসেজটা পড়ে তো ওর মাথা পুরোই নষ্ট হয়ে যায়। ইশশ” কি লজ্জা। এখন কাব্য স্যারের সামনে যাবে কিভাবে সে? কবিতা লিখেছে,”জনাব কাব্য এবং জনাবা মায়া, আপনারা আমাকে কিছু কথা গোপন করতে বলেছিলেন। আমি গোপন করেছি। কিন্তু আমাকে তো আপনারা চিনেনই। আমি কতটা কথা বলতে ভালোবাসি। কথা না বললে আমার পেটের ভাতই হজম হয় না। তবুও আমি আপনাদের কথা ভেবে অনেকদিন গোপন করেছি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমার পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে। আর বদহজম তো আছেই। আমার বয়স খুবই কম। এই বয়সে গ্যাস আর বদহজম এর জন্য মৃত্যু হলে, আমি লজ্জা পাবো ভীষণ। আপনারাও নিশ্চয়ই চাইবেন না আমি এতো কম বয়সে মারা যাই। তাছাড়া এই বদহজমের কোনো মেডিসিন নেই। এই রোগ সারার একটাই উপায়। সেটা হচ্ছে কথাগুলো বলে দেওয়া। কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷ আমি মোটেও বলতে পারবো না।কিন্তু, আমি বলতে চাই৷আর আপনাদের দুজনের কথাই এক৷ তাই আর নিজেদের মধ্যে চেপে রেখে আপনাদের পেটেও গ্যাসের সৃষ্টি করবেন না। আপনারা যে একে অন্যকে ভালোবাসেন, সেটা এখন জানিয়ে দিন একে অপরকে৷ আমি আর আপনাদের সিক্রেট বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারছিনা। বেটার হবে, আপনারা একে অন্যকে জানিয়ে দিন। নিজেদের মধ্যে কথা বলুন।
আর হ্যাঁ, আমি কিন্তু আপনাদের বলিনি এইসব। বলিনি মানে সামনা-সামনি বলিনি। আপনারা বলতে মানা করেছিলেন। তাই বলিনি। তাই মেসেজ করলাম। যদিও আমার চাইনিজ খাওয়া এখন থেকে বন্ধ হবে। ফুসকা খাওয়া বন্ধ হবে। ফ্রি ফ্রি আর কেউ খাওয়াবে না। তবুও বললাম। আমাকে ক্ষমা করবেন। কিন্তু নিজের জান বাঁচানো আগে ফরজ ।”
মায়া বসে পড়লো ফ্লোরে। লক্ষ্য করে কাব্য স্যারও মেসেজটি সিন করেছে। ইশশ! কি লজ্জা। মায়া ডাটা অফ করে অফলাইন হয়ে পড়ে।
★★★
“তুই এমন কেন করলি কবিতা? আমি এখন যাবো কিভাবে উনার সামনে? আমি ক্লাসে যাবো কিভাবে? কোচিং-এ যাবো কিভাবে?”
“আজাইরা প্যাঁচাল বন্ধ কর। জানিস কালকে আমি কি দেখেছি? তুই জানলে চমকে যাবি।”
“কি দেখেছিস?”
“ভাইয়া তোকে ভালোবাসে। আর তুইও ভাইয়াকে ভালোবাসিস। তাহলে সমস্যা কি?”
“কি দেখেছিস তাই বল।”
“কালকে লিফটে নামার সময় সোহাগ ভাই সময় দেখার জন্য ফোন বের করেছিল। তখন তার মানিব্যাগটা পড়ে গিয়েছিল পেছনে। আমি উনাকে ওটা উঠাতে গিয়ে তার মানিব্যাগের মধ্যে কি দেখেছি জানিস?”
“কি?”
“তোর ছবি।”
মায়া প্রায় চিৎকার করে উঠে বলে, “মানে কি? ”
“মানে যেটা বললাম সেটাই। সে তোকে পছন্দ করে।”
মায়া স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে পড়ে করিডোরে। কি শুনলো সে এটা? হঠাৎ সে দেখে কাব্য স্যার এইদিকেই আসছে। সে ভয় আর লজ্জায় ছুটে যায় সেখান থেকে। কিন্তু সে যদি পিছনে ফিরে একবার দেখতো, তাহলে দেখতে পেতো কাব্যও তার মতোই লজ্জা পাচ্ছে। আর কবিতা কাব্যর দিকে তাকিয়ে বিটকেল মার্কা হাসি দিচ্ছে।
চলবে…….

#আমি_মায়াবতী
#পর্ব_৩৯
#লেখনীতে_তাহমিনা_মিনা

একটা রেস্টুরেন্টে চুপচাপ বসে কাব্য আর মায়া। পিছনের টেবিলে বসে নিজের ইচ্ছেমতো খাবার খেয়েই যাচ্ছে কবিতা। আজই হয়তো তার শেষ খাবার খাওয়া হবে এই দুজন মানুষের তরফ থেকে। মনে মনে একটু আফসোস হচ্ছে তার। খাবারটা মিস হয়ে যাবে এখন থেকে। কি আর করার? অহেতুক জীবনে সোহাগের মতো ঝামেলা টেনে আনতে চায় না সে। এমনিতেই মায়া জীবনে অনেক কষ্ট ভোগ করেছে। আর কষ্ট পাক, সেটা সে চায় না। কিন্তু এই মানুষ দুটো এসে বসে আছে তো আছেই। কেউ কোনো কথা বলতে পারছেনা। মনে হচ্ছে দুজন মানুষই চাইছে তার বিপরীত পাশে বসে থাকা মানুষটা কথা শুরু করুক। বিরক্ত লাগছে কবিতার দুজনের উপরই। দুজনই বসে বসে ইতস্তত করছে। কবিতার ইচ্ছে করছে কাব্যর মাথায় বাড়ি মারতে। গরুটা জীবনেও মানুষ হবে না। ইডিয়ট একটা। একসময় প্রচুর বিরক্ত হয়ে কবিতা পিছন থেকে বলেই ফেলে,” আমি এইখানে কারো সং সাজা দেখতে আসিনি। আমাকে ফকিন্নি বলবেন না কেউ ভুলেও। আমি খাওয়ার জন্য আসিনি। আপনারাই আমাকে বলেছেন খাবার খেতে। আপনারা কথা বলা শেষ করলে আমি বাসায় যেতাম।”
মায়া আর কাব্য দুজনেই হকচকিয়ে উঠে কবিতার কথা শুনে। এইরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যে হবে, সেটা কাব্য ভালোভাবেই জানতো, কিন্তু সেটা যে এতো তাড়াতাড়ি, সেটা সে ভুলেও আন্দাজ করতে পারেনি। জড়তা ভেঙে কাব্যই প্রথমে বলে,”মায়া।”
মায়া মাথা নিচু করে বলে,”জ্বি, স্যার।”
“লুক এট মি, মায়া।”
মায়া একবার কাব্যর দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে বলে,”বলুন স্যার। ”
কাব্যর ইচ্ছে করছিল মায়া যাতে তারদিকে একটা বারের জন্য তাকিয়ে কথা বলুক। কিন্তু সে মায়ার অবস্থা বুঝতে পারছে। তাই আর ঘাটালো না তাকে। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বললো,”শোনো মায়া, জীবনকে শুধুশুধু জটিল বানানোর কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। সোজা কথা সোজা ভাবে বলাই ভালো। তুমি সবটাই জানো। কবিতা তোমাকে সবই বলেছে। জানো তো তুমি?”
মায়া মাথা নিচু করেই মাথা নেড়ে জবাব দেয়,”হুমম।”
“তো, কি করার ইচ্ছে এখন?”
“জানিনা।”
কাব্য হঠাৎ প্রায় অধৈর্য হয়ে বলে,” ঐ সোহাগ তোমাকে আর কতদিন পড়াবে?”
” পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই। ”
“শোনো, একটা কথা শোনো মায়া। এখন চুপচাপ বাসায় চলে যাবে। কিছুদিন পরেই তোমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। তখন থেকেই সোহাগের চ্যাপ্টার ক্লোজ। ওর কথা ভুলেও আর মাথায় আনবে না। বুঝলে?”
মায়া কিছুই বললো না। কাব্য আবার বললো,”যখন তোমার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে, তখন আমরা বাইরে দেখা করবো। এর আগে না। এখন আমার কথাও মাথা থেকে মুছে ফেলবে। পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার কথা ভাববে। আমার জন্য তোমার পরীক্ষা খারাপ হোক, সেটা আমি চাইনা।”
“হুমম।”
কাব্য উঠে দাঁড়ালো। কবিতার কাছে গিয়ে বললো, ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বাসায় আসবি।”
কবিতা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,” যথাআজ্ঞা, স্যার।”
কাব্য রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে বের হয়ে যায়। মায়া মাথা উচু করে কাব্যর চলে যাওয়া দেখে। কবিতা নিজের টেবিল থেকে উঠে এসে মায়ার টেবিলে গিয়ে বলে,” হয়েছে আপনার ? চলেন ম্যাডাম। আপনার স্যার আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে আপনার বাসায়। আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমাকে বাসায় যেতে হবে।”
মায়া শুকনো মুখে উঠে এসে কবিতার সাথে রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরে আসে। সারা রাস্তা কবিতা ওকে টিটকারি করেছে কিন্তু মায়া কোনো কথারই জবাব দেয়নি।
বাসায় ফিরে মায়ার মনে এক অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছিল। সে এতসব ঘটনার মাঝে থেকে বুঝতে পেরেছে, আজ যে মানুষটার সাথে সে একটা সুন্দর সম্পর্কের সমীকরণ তৈরি করে এসেছে, সেই মানুষটার সাথে সে তার সারাজীবন কাটাতে পারবে তার চোখের দিকে তাকিয়ে। সে তার ফোনটা হাতে নিল। তার ফোনে কাব্যর নাম্বার আছে। মেসেঞ্জারে এড আছে। মায়ার ইচ্ছে করছে তাকে মেসেজ করতে, কল করতে। কোনোভাবেই সে নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে পারলোনা। শেষমেষ নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে কাব্যকে কল দিয়েই বসলো। কিছুসময় পর অপর প্রান্তের মানুষটা কল রিসিভড করতেই তার কণ্ঠস্বর শুনে সে কল কেটে দেয়। ইশশ! কি লজ্জা। কি আদেখলাপনাই না সে করেছে। কি ভাববে তাকে সে?
যদিও কাব্য বলেছিল মায়াকে যে তাদের মধ্যে দূরত্ব রাখতে কিছু সময়ের জন্য, কিন্তু মায়া তার কথা শুনেনি। নিজের জীবনে সবকিছু হারানোর পর আবার কাব্যকে পেয়েও হারাতে চায়না সে মোটেই। কোনোভাবেই না। ক্লাসের মেয়েরা কাব্যকে নিয়ে কথা বললে তার সহ্য হয়না। কোনোভাবেই সে নিজেকে থামাতে পারেনা। যদিও কাব্যর সেইসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু মায়া নিজেকে বোঝাতে পারে না। কথায় বলে না, ঘরপুড়া গরু আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয়ে কেঁপে উঠে, মায়ারও হয়েছে সেই দশা। যে মায়া কাব্যর সামনে আসতেও লজ্জা পেতো, সে এখন কাব্যর সামনে দাঁড়িয়ে তাকে উপদেশ দিতেও ছাড়ে না। মায়ার মাঝেমধ্যে নিজেকে দেখেই অবাক লাগে কিভাবে সে এতোকিছু করেছে। কাব্যও তাকে আগলে আগলে রেখেছে। দুজনের প্রতি দুজনের ভরসা আর বিশ্বাসের জোরেই তারা এতোটা কাছাকাছি আসতে পেরেছে।

“মায়া আপু, এখানেই সারারাত ঘুমিয়েছো নাকি? মশায় তো তোমাকে চু*ম্মা* দিতে দিতে গাল লাল করে ফেলেছে।
ধড়মড়িয়ে উঠে মায়া। কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। কিন্তু দ্রুতই মস্তিষ্ক সচল হয় তার। চোখ ডলে ভালোভাবে সামনে তাকিয়ে দেখে সাবিহা দাঁড়িয়ে আছে। আর সে বারান্দাতেই শুয়ে আছে। কাল রাতের কথা মনে পড়ে তার। সে তবে অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে এখানেই শুয়ে পড়েছিল? ইশশ! কি লজ্জা। সাবিহা এখন কি না কি ভেবে বসবে। সাবিহা আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে বলে,” আসলে কিভাবে যে এখানে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি। তুই আম্মা বা বাবাকে বলিস না সাবিহা।।আমাকে মেরেই ফেলবে।”
“বুঝেছি। নতুন নতুন প্রেমে পড়লে এইরকম কত কিছুই হয়। তোমাকে দেখে শিখে রাখছি। আমি প্রেম করলে আগে থেকেই বারান্দায় একটা বালিশ আর কম্বল নিয়ে রাখবো। আমার আবার বালিশ ছাড়া ঘুম আসেনা।” বলেই হাই তুলতে তুলতে সাবিহা চলে যায়।
মায়া ভীষণ লজ্জিত হয়ে রুমে চলে আসে। অনেক পড়া বাকি আছে। আবার কোচিং-এও যেতে হবে। কয়টা বাজে সেটা দেখার জন্য মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখে কাব্যর মেসেজ। মুহুর্তেই মনটা ভালো হয়ে যায় তার। একটা মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে তার মুখে। এক জীবনে প্রিয় মানুষটার থেকে এতোটা কেয়ার ছাড়া আর কি-ই বা চাইবার আছে?
★★★
“পরীক্ষা কেমন হয়েছে মায়া?” গাড়ি চালাতে চালাতে প্রশ্ন করে কাব্য।
“মোটামুটি। ”
“কি মনে হয়? চান্স হবে কোথাও?”
“আশা তো রাখছি। দেখা যাক কি হয়।”
“চান্স না পেলেও মন খারাপ করোনা। কেমন? সামনে আরো পরীক্ষা দিতে হবে।”
“হুমম। ”
“তুমি কি ভাগ্যে বিশ্বাসী মায়া?”
“অবশ্যই। কিন্তু পরিশ্রমও তো করতে হবে। এটাতেও বিশ্বাসী। ”
“গুড।”
মায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। আজ সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে কাব্যকে তার মায়ের ব্যাপারে জানাবে। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। বারবার বলতে চেয়েও সে বলতে পারছেনা। মায়ার এইরকম ভাব দেখে কাব্য নিজে থেকেই বলে,”কিছু কি বলতে চাও মায়া?”
মায়া একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”হ্যাঁ, বলতে চাই।”
“কি বলতে চাও? বলো। কোনো কিছু লুকাবে না কখনোই আমার থেকে।”
“হুমম। ”
“বলো কি বলতে চাও।”
“আসলে কথাটা কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা। বিষয়টি আমার পরিবারকে নিয়ে। আপনাকে বলা উচিত হবে কি-না আমি জানিনা। কিন্তু আপনাকে জানানোটা জরুরি।”
“তোমার পরিবার আমারও পরিবার মায়া। নির্দ্বিধায় বলো।”
“আগে আমাকে বলুন।।আমাকে আপনি ভুল বুঝবেন না। আমাকে ছেড়েও যাবেন না।”
কাব্য একবার আড়চোখে তাকায় মায়ার দিকে। মেয়েটার চোখে পানি টলমল করছে। কাব্য কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাস্তার এক পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে,”এবার বলো, মায়া।”
মায়া কিছুক্ষন মাথা নিচু করে থেকে বলে,”বিষয়টা আসলে আমার মা কে নিয়ে।”
মায়া হয়তো আরো কিছুই বলতো কিন্তু তার আগে মায়াকে অবাক করে দিয়ে কাব্য বলে,”তোমার মোহিনী মাকে নিয়ে?’
মায়া হকচকিয়ে গেল। তবে কি কাব্য সব জানে? কবিতা কি সব বলে দিয়েছে? কাঁপাকাপাঁ গলায় মায়া জিজ্ঞেস করে, “আপনি জানেন কিভাবে? ”
“কি মনে হয় তোমার?”
“কবিতা জানে। কিন্তু ওর তো বলার কথা না৷ ও বলেনি। আমি ওকে বিশ্বাস করি। কিভাবে জানেন সব?”
“ভালো লাগলো তুমি আমার বোনকে বিশ্বাস করো জেনে। আমি অনেক আগে থেকেই জানি।”
“কিভাবে জানেন?”
“যেদিন তোমাদের বাসায় প্রথম গিয়েছিলাম। সেদিন জানতে পেরেছি।”
“মানে?”
“তোমার আম্মার নাম সাগরিকা। তোমার বাবার নাম রিজভী। তাইতো?”
“হুমম।”
“সেদিন রাতে বাসায় ফিরে আমার বাবাকে তোমার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম৷ উনি তোমার বাবা আর আম্মার নামে অনেক সুনাম করেছিলেন। কিন্তু আমি তোমার আইডি কার্ডে তোমার মায়ের নাম দেখেছি মোহিনী। পরে তোমার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছি। বুঝতে পেরেছো কিভাবে জেনেছি? ”
মায়া মাথা নিচু করে রইলো। নিজেকে ভীষণ তুচ্ছ মনে হতে লাগলো তার।।যেন সে একটা পাপ। হঠাৎ ঢুকরে কেঁদে উঠলো সে। কাব্য দুহাতে আগলে নিলো তাকে। মেয়েটার মনের অবস্থা সে বুঝতে পারছে। মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,”কারো ভুলের শাস্তি আমি তোমাকে পেতে দিবো না মায়া। খুব তাড়াতাড়িই আমরা একত্র হবো। খুব তাড়াতাড়ি। কথা দিচ্ছি আর কোনো কষ্ট পেতে দিবো না তোমাকে।”
মায়া পরম নির্ভরতায় মাথা রাখে কাব্যের বুকে। সে জানে এই মানুষটা তার। সবরকম বিপদে সে তাকে আগলে রাখবে। কিন্তু ভয় যে তার পিছু ছাড়ে না। যদি মায়ের করা পাপের শাস্তি সে পায়। যদি কাব্য তাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যায়। না, না সে আর ভাবতে পারছেনা। মায়া ঠিক করে বাবাকে সব জানাবে। কিংবা আম্মাকে। বা নান-নানীকে। তারাই বাবা আর আম্মাকে জানাবে। সোহাগ নামক কোনো ঝামেলা আসুক সেটা সে চায় না। কিংবা আর কোনো উটকো ঝামেলা। মায়া আজ বাবার কষ্ট বুঝতে পেরেছে। এতোদিন কাব্যর সাথে এতো ভালো সময় কাটিয়েও সে যে কোনো শান্তি পায়নি। মনে হয়েছে কাব্য হয়তো সব জেনে যাবে। তাকে ছেড়ে যাবে। সে তো মাত্র ৬ টা মাস সহ্য করেছে। তাহলে বাবা ১৭ টা বছর কিভাবে সহ্য করেছে?
চলবে…….