#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৯
মৃন্ময়ীর মেজাজ গরম হয়ে আসছে। লোকটা শুরু করেছে কি? ব্ল্যাকমেইল করে রাতের বেলায় নিচে নামিয়ে এনে নাটক শুরু করেছে। বাবাকে মিথ্যা বলে এসেছে ও। উনি যদি জানেন প্রত্যয়ের জোরাজুরিতে বাহিরে যাচ্ছে তাহলে আজ রক্ষা নেই। প্রত্যয়কে তিনিও পছন্দ করেন না,একদমই না। তাছাড়া মৃন্ময়ীর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর পারসোন হলো প্রত্যয়,রাজনীতিবিদ প্রত্যয় এহসান। এত টিপটপ হয়ে রেডি হয়ে আসতে হলো একমাত্র সুন্দর একটা মিথ্যে বেশ গুছিয়ে সাজিয়ে বলার জন্য। বাবার সামনে অতি ভদ্রতার সহিত বলে আসে বাবা আমি একটু প্রয়োজনীয় নোটস আনতে বের হবো৷ এখনই যেতে হবে। খুবই দরকার। সাথে তিমু ও কাজল যাবে। বেশিদূর না,কাছেই বান্ধবীর বাসা। নিচের ফ্ল্যাটে এসে তিমু ও কাজলকে সবটা খুলে বলে ঘরের আলো নিভিয়ে বাহির থেকে দরজা তালা লাগিয়ে দেয়। এছাড়া কোনো উপায় ছিল না। নয়ত বাবা বুঝে যাবে সাথে ওরা যায় নি।
প্রত্যয় দুটো আইসক্রিম নিয়ে আসল। হাসিমুখে একটা বাড়িয়ে দিল মৃন্ময়ীর দিক। নাকের ডগা ফুলে উঠল মৃন্ময়ীর। হাত বাড়িয়ে আইসক্রিম টা নিয়ে সোজা রাস্তায় ছুঁড়ে মা র ল। ঘটনার আকস্মিকতায় পা থমকে গেল দু একজন পথচারীর। সেসব তোয়াক্কা না করে আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল,
‘ হ্যাভ ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড? দেখছেন না পরিবেশ ঠান্ডা? ঠান্ডায় আইসক্রিম খাব আমি? এই ফালতু কাজের জন্য ব্ল্যাকমেইল করে এনেছেন? ফালতু লোক! ‘
প্রত্যয় কোনো কথা না বলে আইসক্রিমের প্যাকেট ছিঁড়ে দুই ঠোঁট আলগা করে আইসক্রিম টা ঢুকিয়ে দিল মুখে। ভাবুক হয়ে ময়লা ফালানোর জায়গা খুঁজতে লাগল। না পেয়ে আইসক্রিমের প্যাকেট টা হাতে নিয়েই দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,
‘ কি একটা অবস্থা! একটা ডাস্টবিন পর্যন্ত নেই। নিজের চাচা মেয়র হয়ে ঢাকা শহরের এ হাল,ধিক্কার জানানো উচিত নিজেকে। উনারই বা কি দোষ, একদল চো”র”দের দিয়ে ঠিকঠাক কাজ পর্যন্ত করানো যায় না। এবার ভাই আসলে সবগুলোর গর্দান কা”টানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ‘
মৃন্ময়ীর গা পিত্তি জ্বলে উঠল। এই যে ও এখন লোকটাকে এত অপমান করল পাত্তা পেয়েছে? পাই নি। কেন বুঝে না ঘৃ ণা করে ও এই মানুষ টাকে,ঘৃ ণা। কঠিন কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
‘ কেন ডেকে এনেছেন আমাকে?’
‘ আমার দুই চোখ ব্যথা করছিল তাই। ‘
কণ্ঠে দ্বিগুণ তেজ ওর,’ আমি কি চোখের ডাক্তার? ‘
প্রত্যয় দ্রুত আইসক্রিম শেষ করল। হাত বাড়িয়ে মৃন্ময়ীর একটা হাত ধরল,অত্যন্ত আলতোভাবে। সেকেন্ডও অতিক্রম হলো না মৃন্ময়ী এক প্রকার ঝামটি মে রে ছাড়িয়ে নিল হাত টা। প্রত্যয়ও নাছোড়বান্দা। সাথে সাথেই শক্ত করে চেপে ধরল। টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসল। বড্ড কাতর শোনাল তার কণ্ঠস্বর,
‘ ভালোবাসি তোমাকে মৃন্ময়ী। তোমাকে না দেখতে পেলে ভালো ঘুম হয় না আমার। দুশ্চিন্তা হয় তোমাকে হারানোর। ‘
স্থির দৃষ্টে চেয়ে আছে মৃন্ময়ী প্রত্যয়ের ছলছল নেত্রদ্বয়ে। মেয়েটার কি একটুও অনুভূতি নেই? কিভাবে পারছে এত সাহস করে চোখে চোখ রাখতে! মানুষ নাকি নিজের ভালোবাসার মানুষের চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না। কিভাবে পারছে ও। পুনরায় প্রমাণ হলো নেই অনুভূতি, কোনো অনুভূতি নেই। প্রত্যয় নিজেই দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিল। তবে হাতের বাঁধন শিথিল হলো না। ইতোমধ্যে মৃন্ময়ী মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে তাকিয়েই বলল ,
‘ আমার চোখের ব্যথার কারণ হয়ে থেকো না আজীবন প্লিজ। ভালোবাসা কি ভিক্ষা চেয়ে নিতে হয়? তাহলে আমি ভিক্ষা চেয়ে নেবো। বুকের ব্যথা,চোখের ব্যথা ভীষণ কষ্ট দেয় আমাকে। মনটা একটু নরম করো না মৃন্ময়ী। ‘
‘ আর ইউ ফোর্সিং মি টু লাভ? ছিঃ! ভালোবাসা মন থেকে সৃষ্ট হয়। আপনার জন্য হচ্ছে না,হবেও না। আমাকে ছাড়ুন। আমি সাধারণ ঘরের মেয়ে,আপনাদের মতো রাজনৈতিক পরিবারের না। এখন যদি আপনাকে কেউ চিনে নেয় বড়সড় স্ক্যান্ডাল হয়ে যাবে। এতে আমিও ফেঁসে যাব। আমাকে রেহাই দিন দয়া করে। আপনার জন্য শান্তিতে ঘুমোতে পারছি না,নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি না,ভার্সিটিতে ক্লাস করতে পারছি না। এমন জীবন তো আমি চাই নি। ‘
যত সময় গড়াচ্ছে মৃন্ময়ীর কথায়, আচরণে প্রত্যয় অবাক হচ্ছে। মৃন্ময়ীর হাত টা আরও টেনে দেহটা একেবারে নিকটস্থে নিয়ে আসল। কাজলে আঁকা চক্ষে দেখল আগ্নেয়গিরি। স্পষ্টত প্রকাশ পাচ্ছে প্রত্যয়ের স্পর্শ গায়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে ওর। অসহায় হয়ে অনুরোধ করল,
‘ এই মৃন্ময়ী,,, এই। একটু ভালোবাসো, একটু। বিশ্বাস করো আমি খারাপ নই,রাজনীতি করি বলে এমন করছো? ছেড়ে দেবো আমি,করব না রাজনীতি। তবুও আমাকে এভাবে তিলে তিলে মে রে ফেলো না। ‘
তাচ্ছিল্যভরা কণ্ঠে জবাব এলো,
‘ আমি আপনাকে এমনিতেই পছন্দ করি না। এতদিন রাজনীতির বিষয়টা শুধু অজুহাত ছিল আপনাকে রিফিউজ করার। এন্ড নাও ট্রুলি স্পিকিং আই হেইট ইউ, আই হেইট ইউ। এত ঘৃ”ণা নিয়ে বাঁচার চেয়ে দূরে সরে ভালো থাকুন। ”
‘ কিন্তু আমি ঘৃণা হজম করেও তোমাকে চাই। ‘
মৃন্ময়ী আর কিছু বলতে পারল না। কত তর্ক করা যায়? প্রত্যয় বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে। এখন রুমে গিয়ে সোজা গোসলখানায় ঢুকবে ও। প্রত্যয়ের স্পর্শ নিয়ে ঘুমোতে পারবে না,কখনও না।
বিচ্ছিরি একটা স্বপ্ন দেখল নিশাত। হলদেটে চেহারায় ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা জমেছে। চুলের গোড়া ভিজে উঠেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ। পুরো রুম আলোকশূণ্য। বিছানা ছেড়ে বাহিরে এলো। এত খারাপ একটা স্বপ্ন কি করে দেখল সে! হয়তো ইদানিং প্রহর ভাইকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবায় এমন বিচ্ছিরি কান্ড ঘটল স্বপ্নে। আলতা এদিকেই আসছিল। ওকে দেখে হাসিমুখে বললেন,
‘ কিরে ঘুম শেষ? পিংকি, শিমুল তোকে খুঁজছে। যা শিমুলের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। নিচে খাবার দিচ্ছি। তোর ফুপা এসেছে। ‘
নিশাত শুষ্ক কণ্ঠে টেনে টেনে জিজ্ঞেস করল,
‘ ক’টা বাজে ফুপি?’
‘ দশটা বাজে। প্রহর যাওয়ার সময় বলে গেল তুই নাকি ওর রুমে ঘুমিয়ে পড়েছিস। আজ ভয়ানক একটা কান্ড ঘটল তোর বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। তাই আর আমি ডাকি নি। ‘
প্রহর ভাইয়ের নাম শুনে নিশাতের স্বপ্ন টা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। বিড়বিড় করে প্রশ্ন করল,
‘ উনি কোথায়?’
‘ কে প্রহর?’
‘ হু,প্রহর ভাই?’
‘ একটা কাজে বাহিরে গেল। রাজনীতি করে পরিবারের জন্য সময় কই? ‘
‘ আমি শিমুলের রুমে যাই ফুপি। ‘
‘ যা। ‘
রুমে এসে দেখে অবস্থা বেগতিক। শিমুল,পিংকি শাড়ি পড়েছে। দু’জনের চোখেই গাঢ় করে কাজল। মাঝে সিঁথি করে খোঁপা,চিকন অধরযুগলে গোলাপি লিপস্টিক, দুই ভুরুর মধ্য স্থানে নীল টিপ,পরনে নীল পাড়ের গোলাপি তাঁতের শাড়ি। অসম্ভব নজরকাঁড়া, হৃৎস্পন্দন ক্ষণিকের জন্য থমকে দেওয়া দু’জন শাড়ি পড়া কন্যা দাঁড়িয়ে। হতভম্ব হয়ে বলল,
‘ তোরা এভাবে সেজেছিস কেন?’
দু’জনে সমস্বরে বলে উঠে,’ ছবি তুলব। তুইও ফটাফট রেডি হয়ে নে। ‘
‘ এই রাতের বেলায়?’
‘ হ্যাঁ। সবসময় কি আমরা একসাথে হতে পারি? রাতটা স্মরণীয়, আনন্দদায়ক হতে হবে। দেরি করিস না। আমরা এখনই তোকে ডাকতে যেতাম। এতক্ষণ ভাইয়ার বাহিরে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। ভাইয়া কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে গিয়েছে তোর নিজ থেকে ঘুম না ভাঙলে আমরা যেন না ডাকি। ‘
‘ উনি কখন বের হয়েছেন?’
শিমুল এগিয়ে এসে নিশাতের হাতটা টেনে ধরে বলল,
‘ একটু আগে,এখন আয় শাড়ি পড়বি। ‘
নীল রঙের একটা শাড়ি পড়িয়ে দিল নিশাতকে। আঁচলে কাশফুল আকাঁ। শাড়িটা হ্যান্ড পেইন্টেড। পড়েই অনুভূত হচ্ছে নীল অম্বরের নিচে ঘন কাশফুল বাগানে দাঁড়িয়ে আছে সে। ভিতরের আনন্দ উত্তেজনায় দু চক্ষু মুদে আসছে। অদৃশ্য হাওয়া এসে আলিঙ্গন করছে পুরো অঙ্গ। চুলটা খোঁপা করে তাতে আর্টিফিশিয়াল শুভ্র গাজরা গুঁজে দিল শিমুল। হাত সামান্য উপরে তুলতেই কোমরের তীল টা স্পষ্ট হলো। ফুপি আবারও আসলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলেন তিনজনকে। আদুরে, আহ্লাদি স্বরে উচ্চারণ করলেন,
‘ তিনটা পরী অবস্থান করছে এই কক্ষে। আমি কোথায় লুকিয়ে রাখব পরীদের? যদি বদনজর লেগে যায়?’
মায়ের কথায় ভীষণ লজ্জা পেল শিমুল। মুখ দুই হাতে ঢেকে বলে উঠল,’ থ্যাংকস ডাক্তার সাহেবা। ‘
‘ ওকে ওকে। খাবেন না আপনারা? ফটোসেশানে কমছে কম তিন ঘন্টা তো লাগবেই। এক জনের এক ঘন্টা করে। একশ একটা ছবি তুলার পর মনে হবে ভালো হয় নি। তারপর আবার তুলবেন। এভাবে পুরো রাতই না খাওয়া থেকে যাবেন,আসুন খেয়ে নিন। নিচে রাজনীতিবিদ উজ্জ্বল সাহেব ও প্রহর অপেক্ষা করছে। ‘
নিশাত শুকনো গলায় ঢোক গিলল। শাড়ি পড়ে ও প্রহর ভাইয়ের সামনে কিভাবে যাবে? স্বপ্ন টার কথা মনে পড়ে গেল পুনর্বার। মিনমিন করে আওড়ালো,
‘ আমি খাব না ফুপি। ‘
‘ কেন?’
‘ খিদে নেই। ‘
‘ বাতাসে উড়ে যাওয়াটাই বাকি তোর। মনে হয় কতকাল খাস না। আর বলছিস খিদে নেই? খেতে হবে। আমার বাড়িতে না খেয়ে থাকা যাবে না। তোর ফুপা অপেক্ষা করছে। ‘
ফুপির কঠিন কণ্ঠে না গিয়ে উপায় পেল না। নিচে আসতেই শরীর বরফের মতো জমে যেতে লাগল। প্রহর ভাই ফুপার সাথে কথা বলছিলেন। ওদের আসার আওয়াজে চক্ষু জোড়া তুলে চুপ করে রইলেন খানিক সময়,কয়েক মিনিট। তৎপরে শিমুলের উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘ তোরা রাতের বেলায় এমন পেত্নী সেজেছিস কেন?’
বাবা থাকলে শিমুলের একটু আধটু সাহস বাড়ে। জোরেসোরে চেঁচাল, ‘ আমরা ছবি তুলব ভাইয়া। ‘
প্রহর চোখ রাঙিয়ে তাকাল। তবে বোনের দিকে নয় সোজা নিশাতের পানে। এহেন চাউনিতে হতবাক নিশাত। দ্রুত চেয়ারে বসে ফুপাকে সালাম দিল। জিজ্ঞেস করে,
‘ কেমন আছেন ফুপা?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ মা৷ তোমরা এসেছ শুনে খুব খুশি হয়েছি। তোমার দ/জ্জা/ল, ডা/কাত,এনাকোন্ডা বাপ টার জন্য ফুপির বাড়িতে বেড়াতে আসতে পারো না। ভালোই হলো এনাকোন্ডা টা গ্রামের বাহিরে গিয়েছে। ‘
শিমুল,পিংকি,নিশাত সকলে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল। হাসল না কেবল প্রহর। কাঠখোট্টা মানুষদের মুখে হাসি খুব একটা দেখা যায় না। ফুপা প্রায় নিশাতের বাবাকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। এক কালে ভালো বন্ধু ছিলেন দু’জনে। নিশাতের পাতে রোস্টের বড় একটা পিচ দিলেন আলতা।কিন্তু সে খেতে পারছে না। সমুখে নিজের জীবনের মস্ত বড় ভয় বসে থাকলে খাওয়া যায়? যেই না মুখে একটু ভাত দিল প্রহর চেঁচিয়ে বলল,
‘ মা তোমার পিঁপড়ের মতো অল্প অল্প করে খাওয়া মেহমানদের জন্য এত কষ্ট করে বেশি বেশি রান্না করতে গেলে কেন? পিঁপড়ের খাওয়া দেখে আমার খাওয়ার ইচ্ছে মিটে যাচ্ছে। যারা বেশি খায়, মোটাসোটা তাদের দেখলেই না খাওয়ার আগ্রহ বাড়বে। অথচ সামনে তুমি পিঁপড়ে বসিয়ে দিলে। না খেয়ে চিকন হলে এর দায়ভার কে নেবে? তোমার চিকনি চামেলি ভাইঝি? ‘
প্রহরের কথা শুনে বড়সড় লোকমা দিতে লাগল নিশাত। ফুপুসহ সবাই হাসলেন। কোথায় এলো! খেতে বসেও শান্তি নেই মেয়েটার। কোনোরকমে খেয়ে শাড়ি ধরে ছাদে আসল পিংকি ও শিমুলের সঙ্গে। ছাদের লাইটিং বেশ ভালো। ছবিও সুন্দর আসে। ৫০-৬০ টা ছবি তোলার পর শিমুল বলে উঠল,
‘ আমার রুম থেকে একটা উপন্যাসের বই নিয়ে আয় নিশু। বই নিয়ে ছবি তুলব তিন জন। ‘
‘ আমি? পিংকিকে সাথে নিয়ে যাই?’
‘ ও সাথে গেলে আমি একা ভয় পাব। তুই যা না প্লিজ। ততক্ষণে আমি পিংকির ছবি তুলে দেই। ‘
অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিশাতের নিচে আসতে হলো। এখন প্রহর ভাইয়ের সামনে না পড়লেই হয়৷ শাড়িতে উনার সামনে হাঁটু কাপে,মস্তিষ্কের নিউরন সব তালগোল পাকিয়ে যায়। বিড়বিড় করে দোয়া করতে লাগল,’ সামনে পড়বেন না,সামনে পড়বেন না। ‘
নিমেষে ভরাট কণ্ঠের প্রশ্ন, ‘ কে সামনে আসবে না বলে বিড়বিড় করছিস? ‘
শিমুলের রুমের সামনেই প্রহরের মুখোমুখি নিশাত। পা পিছিয়ে টুপ করে রুমে ঢুকে গেল। ভয়ার্ত স্বরে প্রতুত্তরে জানায়,’ কে,,,কেউ না। ‘
প্রহরও ঢুকল পিছু পিছু। নিশাত টেবিলের ওপর থেকে বই নিয়ে কেটে পড়তে চাইলে রাস্তা আগলে দাঁড়াল। শ্যামলা চেহারায় ভ্রু জোড়া কুঁচকে আছে,পাঞ্জাবির দু হাতা ভাঁজ করা কনুই পর্যন্ত। টেবিলের সাথে লেগে গেল নিশাতের দেহ। প্রহর হাত বাড়াতেই তড়িৎ বেগে শাড়ির কুঁচি চেপে ধরল ও। হাত থেকে বইটা নিয়ে প্রহর কুঁচির দিকে তাকাল। ফিচেল কণ্ঠে বলল,
‘ ছোটবেলার মতো পেটিকোটের ফিতা ঢিল নাকি রে? খুলে যাবার ভয়ে চেপে ধরেছিস? ‘
এই ভয় টাই তো পাচ্ছিল মেয়েটা। তৎক্ষনাৎ মনে পড়ে গেল একবার শাড়ি পরেছিল ও। সেটা ক্লাস ফাইভের কথা। শখ করে ফুপির বাড়িতে এসে এভাবেই শাড়ি পড়েছিল। পেটিকোটের ফিতা ঢিল করে বাঁধায় পুরো শাড়ি খুলে গিয়ে, পেটিকোটও মেঝেতে পড়ে যায়। পড়নে থাকল শুধু হাফপ্যান্ট। খয়েরী রঙের ছিল হাফপ্যান্টটা। আর ঘটনা টা সম্পূর্ণ প্রহর ভাইয়ের সামনেই ঘটে। আজ এটাই স্বপ্নে দেখেছিল,আবারও কি বাস্তব হতে যাচ্ছে! এবার তো নিচে কিছুই নেই।
#চলবে~