প্রেমের উষ্ণ ধোঁয়াতে পর্ব-১৭+১৮

0
710

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব____১৭

নিশাতের শ্বাস নিতে ব্যাপক কষ্ট অনুভূত হচ্ছে। শীর্ণকায় দেহে খেলা করছে তরঙ্গ। ক্রমাগত জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে প্রহরের বক্ষস্থলে। প্রহর এক হাতে ওর নরম গাল চেপে ধরল আলতোভাবে। কিঞ্চিৎ নিজের মুখোমুখি রক্তবর্ণ মুখশ্রীটা তুলে ধরে প্রশ্ন করল। কণ্ঠে প্রবল তীক্ষ্ণতা মেশানো।

‘ তুই হাঁপানি রোগী কবে হলি রে নিশু?’

নিশাতের চোখের পাপড়ি নিমীলিত হয়ে আসছে বারংবার। গাড়ির একটুআধটু হলুদাভ রশ্মির ছোঁয়ায় সে ঠিকঠাক তাকাতে পারছে না প্রহরের পানে। চক্ষে ভাসছে শ্যামবর্ণ চেহারায় প্রশ্নাত্মক মুখোভঙ্গি অস্পষ্ট। হাঁপানি রোগী! হ্যাঁ! এই মুহূর্তে হাঁপানি রোগীর চেয়েও বড় কিছু ও। প্রহর ভাইয়ের বুকে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়া থমকে থমকে যাচ্ছে। হুটহাট করে আবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গতিহারা। ছোট থেকে হাজার, হাজার বার প্রহর ভাইয়ের সান্নিধ্যে এসেছে ও এবং ওর দেহ। কই আগে কখনো তো এমন হয় নি। ভয় জেগেছে প্রাণে,অভ্যন্তরে, তবে এমন অদ্ভুত অনুভূতি জাগে নি। ওর নিশ্চুপতা অসহনীয় ঠেকল হয়ত প্রহরের নিকট। ইচ্ছে করে জোরালো কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলল তার মুখের ওপর। তপ্ততায় মেখে দিল মেয়েটার কোমল বদন। সরু নাকটা ঈষৎ কুঁচকালো, মোটা দু অধর নড়ে উঠল,কপালে উপস্থিত দু এক গাছি রুক্ষ চুলের পাখনা গজালো বোধহয়। উড়ল একটুখানি। প্রহর কণ্ঠে তেজ ঢেলে বলে উঠল,

‘ তোর মতে আমার বুক সরকারি। এভাবে যে সরকারি বুকে গরম গরম নিঃশ্বাস ফেলছিস, একবারও কি ভেবেছিস বুকটা পুড়ে যাবে কিনা? তুই এত চালাক হয়েছিস নিশু? শেষ পর্যন্ত ফন্দি আটলি বুক পুড়িয়ে প্রতি-শোধ নিবি আমার করা তোর ওপর সকল অত্যা-চারের? যেন আমার বউ বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে না পারে? ‘

নিশাত ক্ষীণ একটা নিঃশ্বাস বিমোচন করল। তৎক্ষনাৎ সাহস সঞ্চয় করে আওড়ালো,

‘ আপনি আমায় ছেড়ে দিলে বুক পুড়বে না। ‘
‘ কি? তুই বলছিস তোকে ধরে রেখেছি বলে বুক পুড়িয়ে আঙরা,আঙরা করে ফেলবি?’
আরেকটু চেপে ধরল প্রহর নিশাতের দেহ। এবার আর নিঃশ্বাসও ফেলতে পারছে না সে। টেনে টেনে বলল,

‘ আর বলব না প্রহর ভাই। ‘
প্রহরের ঠোঁটের কোণে বাকি হাসি শোভা পায়। বলে,
‘ সরি বল। ‘
নিশাতের অল্পস্বল্প বুঝদার মন সরি বলতে রাজি না। কারণ সে কোনো দো*ষ করে নি। তবুও সগোক্তি করে,
‘ স,,সরি। ‘
প্রহরের ঠোঁট দুটো চওড়া হলো। বলল,

‘ আমার তোর ভয়ার্ত চেহারা দেখলে এত শান্তি লাগে কেন নিশু? মন চায় তুই সবসময় ভয়মাখা মুখ নিয়ে আমার সামনে বসে থাক,আমি তোর সেই চেহারা দেখে ভেতরটা ঠান্ডা করি। ভালো মানুষের বিপরীত শব্দ কি? ‘

বিনা সময় ব্যয়ে উত্তর দিল নিশাত,
‘খারাপ মানুষ। ‘

প্রহর সাথে সাথে বলল,
‘আমি সেটা। তাই বলেই,হাসির বদলে তোর ভয় ভয় চেহারা পছন্দ করি। ভাবিস না বিয়ে করলে তোর রেহাই, বরং উল্টো তোর খেল খতম। ‘

সহসা নিশাতের কণ্ঠ গলিয়ে প্রশ্ন এলো, ‘ খেল?’

‘ ওইসব বুঝবি না তুই। বাবু,বাবু-ই থাক। ‘

‘ আমি বাবু না প্রহর ভাই। সতেরো বছর আমার। ‘

‘ সতেরো বছর দুই মাস দশদিন তোর। বুধবার রাতের শেষভাগের ৩ টায় তুই পৃথিবীতে এসে ওয়াও ওয়াও করছিলি। মাত্র এক আঙ্গুলের একটা শরীর ছিল তোর,ওজোন ছিল ৩ কেজি। আর কি কি শুনবি? তোর নাড়িভুঁড়ির খবর আমি জানি। তোর পিঠের উপরের দিকে কাছাকাছি দুটো তিল আছে, পেটের বা দিকে জন্মদাগ আছে। বাকিগুলো অন্যসময় বলব। কারণ তোর শোনার বয়স হয় নি। অপরিপক্ক তুই। তবুও কি শুনতে চাস?’

প্রহরের প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি। নিশাত মাথা নত করে ফেলল। তার ব্যাপারে এত এত কিছু কেন জানে এই লোক? পৃথিবীতে একটা প্রহর ভাই না থাকলে কি যে ভালো হতো! তাহলে লজ্জাদের সঙ্গে ওর সাক্ষাৎ হত না কভু।

প্রহর ওকে ছাড়ল ঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর পর। শরীরে ততক্ষণে তীব্র তাপদাহের বসবাস। প্রহর ভাইয়ের স্পর্শে জ্বর আসবে আসবে ভাব। তাকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে নিজে গাড়ির ভেতর ঘাপটি মেরে বসে আছে। ওর অভিলাষ জাগছে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখার ভিতরে কী করছে। কিন্তু উপায় নেই। সেই লোক জানালার দু ধারের কালো কাঁচ তুলে দিয়েছে। রাতের আলোআঁধারি খেলায় সবকিছু আবছা, স্পষ্ট নয়। ওর পেছনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে চারটা বডিগার্ড টাইপ লোক। লোক চারটা স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পলকও যেন নাড়াতে ভয় পাচ্ছে। মন্ত্রী, নেতা হলে হয়ত এভাবে বডিগার্ড রাখা যায়। ওকে পাহারা দিচ্ছে অথচ তার দিকেই তাকানোর নামধাম নেই। কি উদ্ভট পাহারাদার!

নিশাত ক্রমে ক্রমে অস্থির হচ্ছে। চারদিকে দৃষ্টি বুলাচ্ছে। তিনতলা একটা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ও। সেই যে প্রহরের দলের এক ছেলে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে গেল, আর নামার খবর নেই। এক স্থানে দাঁড়িয়ে না থেকে আলতো পায়চারি করেতে লাগল ও। দুনিয়ায় নাকি সকল মানুষের একটা দুর্বলতা নিহিত থাকে। কারোটা প্রকাশ পায়,আবার কারো ক্ষেত্রে গোপনে লুকিয়ে থাকে। তবে দুর্বলতা থাকেই। এ পৃথিবীতে কেউই সর্বদিক হতে শক্তিশালী, কঠোর হয় না। হতে পারে না। তার দুর্বলতাটা প্রকাশিত। সইতে না পেরে গুণে গুণে তিনটা কদম ফেলল সে। তক্ষুনি গাড়ির দরজা মেলার শব্দ প্রবেশ করল কর্ণকুহরে। চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবার জোগাড়। প্রহর কাপড় পরিবর্তন করেছে। ঘর্মাক্ত, ভেজা পাঞ্জাবি ছেড়ে নতুন আরেকটা হালকা শ্যাওলা রঙা পাঞ্জাবি জড়িয়েছে গায়ে। বাহ! হবু বউয়ের সাথে দেখা করার জন্য এত আয়োজন! হলদেটে অঙ্গ প্রত্যঙ্গে জ্বলন অনুভব করল ও। প্রহরের প্রশ্ন শুনে দু দফা অগ্নি বর্ষণ হলো অন্তস্থলে।

‘ কেমন লাগছে বল? ‘

নিশাত অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। সে কেমন করে বলবে আপনাকে মারা*ত্মক সুন্দর লাগছে প্রহর ভাই? এটা বলা তার পক্ষে কষ্টসাধ্য। তাছাড়া অন্য মেয়ের জন্য সাজগোছ একদম সহ্য হচ্ছে না। নিজের মধ্যে অকস্মাৎ এত হিংসার আবির্ভাব অনুভূত হওয়া মাত্র যারপরনাই অবাক হচ্ছে ও। মিনিট পেরিয়ে গেল,উত্তর না পেয়ে প্রহর রেগেমেগে আগুন,

‘ তোকে কি আট আনা পয়সা দেওয়া হয়েছে মুখ না খোলার জন্য? সত্যি করে বল নিশু। তোর মুখে কি গন্ধ? যখনই কাছে এসে কিছু জিজ্ঞেস করি চুপ হয়ে যাস। গন্ধ হলে বল। আমি ভালো ব্র্যান্ডের টুথপেষ্ট কিনে দেবো। শত হোক মামুর মতো কিপ্টে নই আমি। যে কিনা এক বেলা খাওয়ানোর ভয়ে সম্পর্ক ছিন্ন রেখেছে। ‘

নিশাত বিমূঢ় চাহনি নিক্ষেপ করল। লজ্জায় মাথা নুইয়ে যাওয়ার উপক্রম। এরকম লজ্জা আর কত দিবে মানুষটা! কম্পনমিশ্রিত ধ্বনি,

‘ দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমার ফিরতে হবে। নইলে পিংকি সন্দেহ করবে। ‘

‘ তুই আমাকে সময়ের মূল্য শেখাচ্ছিস? আমি সময় অপচয় করি বলছিস? আজ সারা রাতেও যেতে পারবি না তুই। এটা তোর শা*স্তি। ‘

‘ শা*স্তি?’– শব্দটা উচ্চারণ করতেই গলা ধরা এলো নিশাতের। প্রহর একবার বলেছে মানে নিস্তার নেই।

আর কিছু বলবে তার পূর্বেই ওকে টেনে রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয় তলায় হাজির হলো প্রহর। প্রথম তলায় মানুষে গিজগিজ অবস্থা দেখলেও এখানে একটা শাড়ি পরিহিতা মেয়ে বাদে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না নিশাত। ঠান্ডা, শান্ত পরিবেশ। ফুল হাতা ব্লাউজের সঙ্গে কালো একটা পাতলা জর্জেট শাড়ি মেয়েটার সুশ্রী কায়ায়। ডান হাতে এক মুঠো কালো চুড়ি। খোপায় একটা বেলি ফুলের মালা জড়ানো,কপালে কালো টিপ, ব্যস। আর কোনো প্রসাধনী, অলংকার মেয়েটার সুন্দর দেহে ঠাঁই পায় নি।

নিশাতের মুখ হা হয়ে গেল। খুব কাছ থেকে দেখল মেয়েটার চুলগুলোতে হালকা নীল কালার করা। চেহারায় বিদেশিনী ভাব। প্রহরকে দেখেও মেয়েটার চেহারায় বিশেষ পরিবর্তন আসে নি। স্রেফ বলল,

‘ একবার কফির কাপগুলো গুণে নিন প্রহর সাহেব। ‘

প্রহর নিশাতের হাত ছেড়ে দিয়ে চেয়ার টেনে বসল। নির্বিকার, নিরলস অভিব্যক্তি তার,

‘ জাস্ট সেভেন কাপ এন্ড ওয়ান মোর ইন ইউর হ্যান্ড। ‘

তনুজা কফির কাপটা টেবিলে কিঞ্চিৎ শব্দ করে রাখল। ধীর, নম্র কণ্ঠস্বর,

‘ আমি কখনোই কারো জন্য এত অপেক্ষা করি নি। আপনিই জীবনে প্রথম ব্যক্তি। তবে মজার ব্যাপার কি জানেন? জীবনের প্রথম কারো জন্য অপেক্ষায় আমি সামান্য পরিমাণও বিরক্ত হই নি। উল্টো যত সময় পার হচ্ছিল, ততই আমার ভেতরে একটা বিশেষরকম ভালো লাগা কাজ করছিল। আপনি কি ম্যাজিকম্যান?’

‘ ফ্লার্ট করার জন্যই কি সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে আসা?’

তনুজা মাথা নত করে নেড়ে লজ্জাবতী হয়ে জবাব দিল,

‘ উঁহু, আপনার জন্য ছুটে আসা। আমি ভিনদেশে, অন্যরকম কালচারে বড় হলেও কখনো কারো প্রেমে পড়ার মতো ফিলিং জাগে নি। কথা প্যাঁচাতে পছন্দ করি না। তাই সরাসরি বলব,আপনার প্রতিও প্রেম নেই। কিন্তু সমীরণ ভাইয়ার অপজিটে যেদিন আপনাকে দেখলাম একটা নিউজে বেশ ভালো লাগার জায়গা দখল করলেন। সেদিনই সেকেন্ডের কাটায় জীবনের বড়রকম সিদ্ধান্ত টা নিলাম। আপনার জীবনসঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত। আমার এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে আমার পুরো পরিবার। সমীরণ ভাইয়া কথা বলে না আমার সাথে। বাবার বড্ড আদুরে, তাই তিনি নত হলেন। প্রস্তাব পাঠালেন। আপনাকে আমি তীব্রভাবে চাই রাজনীতিবিদ প্রহর সাহেব। আপনি ভাবতে পারেন শ*ত্রুর বোন হয়ে এভাবে চাওয়ার পেছনে অস*ৎ উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। কিন্তু তা নয়। কারণ আমার প্রাণ কোনো রাজনীতির অংশ নয়। আমি শুধু আপনাকে চাই। ‘

কথা শেষ করে তনুজার নজর গিয়ে পড়ল অসহায় এর ন্যায় দাঁড়ানো নিশাতের পানে। জানতে চায়,

‘ কে সে?’
প্রহর আঁড়চোখে চেয়ে বলে,
‘ কাজিন। ‘
তনুজা হাসিমুখ করে জিজ্ঞেস করে,
‘ আমার সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছেন?’
‘ ইয়েস। হবু বউ দেখতে কি খালি হাতে আসা যায়? ভাবলাম সঙ্গে কাউকে নিয়ে আসি। আফটার অল কারো তো শুরুতে দেখা উচিত আপনি কতটা সুন্দর। ‘

অত্যধিক খুশিতে চকচক করতে লাগল তনুজার মুখাবয়ব। স্পষ্টত, প্রহরের করা একটুখানি প্রশংসায় সে ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছে। নিজে ওঠে গিয়ে পাশের টেবিল থেকে চেয়ার এনে নিশাতকে বসার জন্য সাধতে আরম্ভ করল,

‘ সিট। ‘

দোনোমোনো করছে নিশাত। বসতে মন চাইছে না। কোনো ইচ্ছে নেই প্রেমালাপ শোনবার। এছাড়া উপায়ও নেই। সম্মান করতে গিয়ে বসতে হলো। তনুজা পুনরায় জিজ্ঞেস করল,

‘ তুমি আমার খুব ছোট হবে। সেজন্য তুমি করেই বলি,ওকে? হোয়াটস ইউর নেইম? ‘

নিশাত মুখ খোলার আগে প্রহরের কণ্ঠের শব্দ উভয়ের কর্ণধারে পৌঁছায়, ‘ নিশাত। ‘

‘ সুন্দর নাম। আমি নিশি বলে ডাকব। সে কি সবসময় আপনার সাথে থাকে?’

‘ আপাতত সাথে রাখছি। সামনে ইলেকশন,সেকারণে স্লোগান লিখার কাজ করবে নিশু। খুব ভালো স্লোগান বানাতে পারে। ‘

নিশাত কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বিব্রত দৃষ্টিতে তাকাল প্রহরের দিক। তনুজা আগ্রহী কণ্ঠে বলল,

‘ পিচ্চি মেয়ে স্লোগান বানাতে পারে? আমি এ মুহূর্তে একটা শুনতে চাই। প্লিজ,,’

কণ্ঠে অনুরোধের ছোঁয়া। প্রহর অগ্রাহ্য করল না। বরঞ্চ ক্রুর হেসে নিশাতকে আদেশ করল,

‘ একটা স্লোগান শুনিয়ে দে নিশু তোর ভাবীকে। ‘

হাত-পায়ের তালু গরম হয়ে উঠল নিশাতের। স্লোগান আর ভাবী! কোনোটাই মেনে নিতে পারছে না ওর মন। প্রহরের চোখ রাঙানিতে বাধ্য হয়ে আচমকা মুখে যা আসল তা-ই বলে ফেলল,

‘ এক বড় না দুই বড়,,,
প্রহর ভাইয়ের মন বড়,,
প্রহর ভাইকে বানালে নেতা
রাস্তায় রাস্তায় পাবেন কাঁথা। ‘

#চলবে,,,!

#প্রেমের_উষ্ণ_ধোঁয়াতে
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___১৮

পরিবেশ শান্ত,নিরবতার মোহে আচ্ছন্ন। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত স্থানে এত নিশ্চুপতা নিশাতের অন্তঃকরণে ভয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেই ক্ষণে তার মাথায় কিছু আসছিল না। বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। শূন্য মস্তিষ্কে যা এসেছে মুখে দিয়ে উগড়ে দিল ফটাফট। না জানি এই স্লোগান আজ ওর জন্য কালবৈশাখী ঝড় বয়ে আনে! মনে মনে প্রবল আকুতি ঝড়ের মাত্রা তীব্র না হোক। চক্ষুকোলে ভয়ের হানা,কোণা দিয়ে প্রথমত পরখ করল প্রহরের মুখোভঙ্গি। থমথমে অবস্থা আদলের,ঠোঁটের কোণ ঈষৎ বাঁকানো, ধা*রালো চাউনি। ওর অভ্যন্তরে বাজ পড়ল আগত তুফানের পূর্বাভাস পেয়ে। কিন্তু ভেতরকার সত্তা কঠিন প্রতিবাদ করে উঠল,’ একদম ভয় পাবি না প্রহর ভাইকে। উনি সবসময় তোর অপ*মান করে। বেশ করেছিস স্লোগানের মাধ্যমে পাল্টা অপ*মান করে। এখন যদি এই লোক কিছু বলতে আসে আরো কথা শুনিয়ে দিবি। আর কত বেক্কল, গাধী পদবি নিয়ে ঘুরঘুর করবি তুই নিশু? লজ্জা লাগে না তোর? গ্রো আপ ল্যাডি। বি স্ট্রং। এটা মানুষ, তোর প্রহর ভাই, জল্লা*দ না। ‘

ক্ষনিকের নিমিত্তে জোগানো সাহস ঠুনকো প্রমাণিত হলো। ফোঁস করে উড়ে গেল, প্রহর সশব্দে চেয়ার সরিয়ে ওঠে দাঁড়াতেই। তনুজাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ আমাকে যেতে হবে মিস তনুজা। একটা মিটিং আছে। পরে কথা হবে। ‘
তনুজা এতক্ষণ গালে হাত দিয়ে বসেছিল, নিস্তব্ধতাকে মুহূর্তে সঙ্গী বানিয়ে নিয়েছিল সে। অল্প সময়ের পরিচিত কণ্ঠস্বর ভেসে আসা মাত্র অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। তাজ্জব বনে গেল নিশাত। তনুজার হাসিতে মনে হচ্ছে রেস্টুরেন্ট সহ কাঁপছে। কি বিদঘুটে হাসি! সুন্দরী নারীরও ত্রুটি থাকে। এই যে তনুজার হাসি শুনলে মানুষের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠবে,মাথা ধরে যাবে সাথে সাথে।

অতিরিক্ত হাসির কারণবশত তনুজার অক্ষিকোটরে জলের সঞ্চার। হাত দিয়ে প্রহরকে দাঁড়ানোর জন্য ইশারা করে। টেবিল থেকে পানির বোতল উঠিয়ে কয়েক ঢোক পান করেই ক্ষান্ত হলো সে। অতঃপর রয়েসয়ে, ধীর গলায় বলে উঠল,

‘ নিশির স্লোগান টা অনেক সুন্দর ছিল। আপনার কাজিন খুব ট্যালেন্টেড প্রহর সাহেব। আরেকটু হলে শিউর স্ট্রোক হয়ে যেত আমার। ভাবছি সমীরণ ভাইয়ার জন্য একে হায়ার করব। আমার ভাইয়ারও ইলেকশনের জন্য এরকম একজন ট্যালেন্টেড ব্যক্তি প্রয়োজন। আমি চাই সমীরণ ভাইয়া মুহূর্তে মুহূর্তে হার্ট অ্যাটাক করুক। নিশি আমার ভাইয়ার স্লোগানিস্ট হবে? ‘

এহেন প্রস্তাবে নিশাত ঘাবড়ে গেল,অপ্রতিভ হলো তক্ষুনি। তনুজা কি মজার ছলে বলছে! নাকি সিরিয়াস! দ্বিধাদ্বন্দ্বের পাঠ তনুজা চুকিয়ে দিল। বলল পুনশ্চঃ

‘ হেই,আমি কিন্তু সিরিয়াস। তোমার ট্যালেন্টটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আরেকটু প্র্যাক্টিস করলে খুব ভালো ভালো স্লোগান লিখতে পারবে। প্লিজ,বিকাম মাই ব্রাদারস স্লোগানিস্ট। ‘
অনুরোধসূচক বাক্যটা উচ্চারণ করে নিঃশ্বাস পর্যন্ত ফেলতে পারল না সে। প্রহরের ঝাঁঝালো কণ্ঠ শুনে ভড়কে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে গর্জন করে প্রহর,

‘ নো,শি ইজ অনলি মাইন। তাকে কখনও অন্য কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না। স্লোগান কেন? কোনো কিছুতেই না। প্রিয় মানুষ, প্রিয় জিনিসের ভাগাভাগি করি না আমি। ‘

তনুজার শ্বেত বর্ণ চেহারায় মলিনতার স্পর্শ লেগে গেল। প্রহরের এমনতর ব্যবহার ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করে নি সে। নিষ্প্রভ স্বরে নিজেকে বুঝ দিতেই বলে উঠল,

‘ ওহ,বুঝেছি। ভাইয়ার সাথে আপনার শ*ত্রুতা বলে শেয়ার করবেন না। ইট’স ওকে। আমি মজা করছিলাম। বাই দ্যা ওয়ে শি ইজ সো কিউট। আর ছোট ছোট কাজিনগুলো সবসময় বেশ প্রিয় হয়। আলাদা মায়া কাজ করে তাদের প্রতি। বোনের জন্য ভাইয়ের মায়া কাজ করবে না তো কার করবে? তাছাড়া প্রতিপক্ষের ফেভারে বোনকে ব্যবহার করা যায় না। ‘
‘ কাজিন উচ্চারণ করেছি,একবারও কি “বোন” শব্দটা ব্যবহার করেছি?’

দৃঢ়, ভারী গলা শুনল নিশাত ও তনুজা। তনুজার মস্তিষ্কের নিউরন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। খানিক পূর্বের প্রহরের সঙ্গে বর্তমান প্রহরকে মিলাতে পারছে না। মনোমধ্যে রচিত করল সমীরণের সাথে পরিচিতির পথ প্রচন্ড কাঁটাযুক্ত বলেই তার নাম শুনে মেজাজ চড়ে গিয়েছে প্রহরের। বুঝানোর ভঙ্গিতে বলতে লাগল,
‘ আপনি কিছু মনে করবেন না, প্লিজ। এখনই চলে যাবেন? একটু থাকলে হয় না? ‘
‘ আপনি কি জানেন না আমার অর্ধাঙ্গিনী হলে আপনাকে এই অল্প সময়েই স্যাটিসফাইড হতে হবে?’
‘ জানি। রাজনীতিবিদের বউয়ের জন্য সময় কম হবে,এটা স্বাভাবিক ধরে নিলাম আমি৷ পরে দেখা হবে তাহলে। ওহ হ্যাঁ, আরেকটা কথা। পরশু দিন আপনাদের সবার দাওয়াত আমাদের বাড়িতে। তুমিও এসো নিশি। ‘

প্রহর কোনোরকম বাক্য বিনিময় করল না। যেই পথে নিশাতকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসেছিল সেই পথে ওর কোমল কব্জি চেপে ধরে চলল ফের। যাওয়ার সময় বিল চুকিয়ে গেল। নিশাত একবার ফিরে তাকিয়েছিল তনুজার দিকে।মায়া হয় নি। বরং তনুজার অপ্রস্তুত, বিষন্ন চেহারা দেখে বেশ শান্তি পেয়েছে ভেতরে ভেতরে। প্রহরের অলক্ষ্যে, অগোচরে নিঃশব্দে হেসেছে। মাথায় শুধু একটা শব্দ কিলবিল করছে অনেকক্ষণ যাবত সে তার প্রহর ভাইয়ের প্রিয়, প্রিয় মানুষ। নিজ চক্ষে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ঘটনাটা, ভুল শুনেছে যেন কান দুটো। বার বার মনে পড়ছে,অদ্ভুত সুখ সুখ অনুভূতিপ্রবণ মুহূর্তটা স্মৃতি হয়ে রবে চিরকাল ওর মনের ক্ষুদ্র কুঠুরিতে।

গাড়ির কাছে এসে প্রহর ওকে পুনর্বার বাহিরে দাঁড় করিয়ে পাঞ্জাবি পাল্টে নিল। আগের সফেদ পাঞ্জাবিটা জড়ালো সৌষ্ঠবপূর্ণ দেহে। নিশাত হতবুদ্ধি, নির্বাক। এটা যখন পড়বেই তাহলে শ্যাওলা কালার পড়ে যাওয়ার কী দরকার ছিল! তিনি কি জানেন? শুভ্র পাঞ্জাবিতে নারীর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া থমকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি। প্রবল আগ্রহ থেকে জিজ্ঞেস করে বসল,
‘ আপনি এটা পড়ে যান নি কেন?’
প্রহর তীক্ষ্ণ নজর নিক্ষেপ করল। ত্যা*ড়া প্রশ্ন করে পাল্টা,
‘ কেন? তোর কোনো সমস্যা? ‘
নিশাত সাফাই গাইতে লাগল,
‘ না,না। এমনি জানতে চাইলাম আরকি। ‘
‘ তনুজা আমায় সামনাসামনি সাদা পাঞ্জাবি পড়া দেখলে যদি অতিরিক্ত ক্রাশ খেয়ে বেহুঁশ হয়ে যেত? সেজন্য পড়ি নি। কারণ আমি জানি আমি কতটা সুন্দর। তোর কু দৃষ্টিও কিন্তু দেখি আমার ওপর। এভাবে তাকিয়ে আমাকে বেসামাল করিস না। আমি বেসামাল হলে পরে তোর ভাই,পরিবার মাম*লা দিবে আমার নামে ঠিক আগের মতো। ‘

নিশাত লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। সে নাহয় তাকায় প্রহরের দিক,কিন্তু কু দৃষ্টিতে নয়। বরঞ্চ সুন্দরের চক্ষে। শেষের কথাটা ঠিকঠাক বুঝে নি ও। প্রহর ভাইয়ের কিছু কিছু কথা তার মাথার উপর দিয়ে অতিক্রম করে,স্থায়ী হয় না মস্তিষ্কে। গাড়ি এসে ব্রেক কষে পিংকির শ্বশুর বাড়ির কাছে। ও নেমে দাঁড়াতেই প্রহর যাওয়ার রাস্তায় বাঁধা হলো। লহু কণ্ঠে স্পষ্ট বলল,
‘ রাস্তায় আসন পেতে বস। ‘
নিশাত স্তব্ধ হয়ে পড়ে। সেকেন্ড খানেকের মাথায় জিজ্ঞেস করে,
‘ কেন প্রহর ভাই? ‘
প্রহর হাসল মৃদু। হাসিটা প্রচন্ড পৈশা*চিক মনে হলো ওর। ঝড় কি তবে আগমন ঘটিয়েছে! অন্দরমহলে চিন্তাদের মেলা বসলেও বাহ্যিকভাবে শক্ত থাকল। ভয় পেলে ভয় আরও জেঁকে ধরে। সে পণ করেছে ভয় প্রকাশ করবে না আর।

‘ তুই সুন্দর একটা স্লোগান দিয়ে বাজিমাত করেছিস। আমার তখনই তোকে একটা নোবেল দিতে ইচ্ছে জেগেছিল। যেহেতু রাস্তায় রাস্তায় কাঁথা দিলে বড় মন্ত্রী হতে পারব,তাই শুরুটা তোকে দিয়েই করা হোক। বসে পড়। ‘

ঠাঁই দাঁড়িয়ে নিশাত। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করল, ‘ বসব না। ‘
প্রহর হিসহিসিয়ে উঠল। ক্রুদ্ধ চাহনি ছুঁড়ে মা*রল। কাঠিন্য মেশানো গলায় বলল,
‘ তাহলে সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থেকে পা ব্যথা বানিয়ে ফেল। ‘
ফুঁপিয়ে ওঠে নিশাত। অসহ্য লাগছে ওর প্রহরকে। এত কঠোরতা সহ্য হয় না। স্বর কেঁপে কেঁপে ওঠে,
‘ আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন?’
প্রহরের আলস্যহীন জবাব,’ শান্তি পাই তাই।’
নিশাত দমল না। নড়ল ওষ্ঠযুগল ঈষৎ,
‘ শান্তি? ‘
‘ হু। ‘
বডিগার্ডদের মধ্য হতে একজন একটা কাঁথা নিয়ে হাজির হয়। নকশিকাঁথা। সুন্দর ফুল করা তাতে। প্রহর কাঁথাটা হাতে নিয়ে ছেলেটাকে লক্ষ্য করে আদেশ করল,
‘ তোমরা গাড়ি নিয়ে গলির মোড়ে থাকো,আমি আসছি। ‘
‘ ওকে স্যার। ‘
নিশাত নত মস্তকে দাঁড়িয়ে রইল। পরক্ষণেই চমকে গেল ও। বিস্ফোরিত নয়নে তাকাল নিম্ন তলে। ওর সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসেছে প্রহর। ইশারা করছে মুখোমুখি বসবার,চোখভর্তি মুগ্ধতা। উপেক্ষা করতে পারল না ও সেই ইশারা। দ্রুত বেগে বসে পড়ে সামনে। তাড়াহুড়োয় ব্যথাও পেল একটু। প্রহর ব্যতিব্যস্ত গলায় অনবিরত জিজ্ঞেস করে,
‘ কোথায় ব্যথা পেয়েছিস?’

নিশাত বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চাইল এক পলক। প্রহর ভাই চিন্তা করছে ওর জন্য? এটা সত্যি? প্রহর ভাইকে একটা চিমটি মে*রে দেখতে হবে স্বপ্ন কি-না! মনগড়া ইচ্ছে বাস্তবায়ন করে ফেলল মুহূর্তেই। গোপনে হাত বাড়িয়ে আস্তে একটা চিমটি কা-টল সুপুষ্ট বা হাতের বাহুতে। প্রহর ব্যথা পেয়েছে বলে মনে হয় নি,উল্টো বলে,
‘ এত আস্তে চিমটি কা*টলি, মনে হচ্ছে তোর শরীরে মশা মা-রারও শক্তি নেই। পরের বার জোরে দিবি যেন বদলে তোকে সুদে-আসলে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ইচ্ছে জাগে। এখন কাঁথাটা নিয়ে সোজা বাসায় ঢুকবি৷ সাবধান, ওই পাখিওয়ালার সাথে কথা বলবি না। নয়ত একদিন দেখবি তোকে পাখি বলে বিক্রি করে দিয়েছে। বুঝেছিস?’
সে বাধ্য মেয়ের ন্যায় প্রতুত্তরে জানায়,’ জি। ‘

গেইট অব্দি গিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে চাইল নিশাত। প্রহর তখন গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। হাতে জ্বলন্ত একটা সিগা*রেট যোগ হয়েছে। আচ্ছা কাল দেখা পাবে সে এই মানুষটার? গ্রামে আর কবে যাবে? মনের ঘরে দশ থেকে বিশ খানেক প্রশ্ন সমেত নিজের প্রস্থান ঘটায় ও।
———————————————-

সময়টা হেমন্তকাল। মেঘের ভেলা চলছে বিশালাকার আকাশে। চারিধারে সাদা মেঘের উপস্থিতি। নিশাত স্কুল থেকে ফিরে এসে রান্নাঘরে উঁকি দিল। রোকেয়া,ছোট ফুপি,পিংকির আম্মা ব্যস্ত হাতে পিঠা বানাচ্ছেন। বিকেলে পিংকির শ্বশুর বাড়ির লোক আসবে। সেই যে বৌভাতের পর এলো, আর আসে নি গত এক মাসেও। এই এক মাসে ওর সতেরো বছরের জীবনে এক অপ্রত্যাশিত, অদ্ভুত ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এক মাস যাবত সে অপ্রিয় হতে প্রিয় হওয়া একটা মানুষের সাক্ষাৎ পাচ্ছে না। সেদিন পিংকির বৌভাতে দেখে নি ও মানুষটাকে। নিজের অনুভূতি দমিয়ে না রাখতে পেরে হাজার হাজার বার মোবাইল চেইক করেছে ফোন,মেসেজ এলো কিনা। টুনিকে অসংখ্য বার জিজ্ঞেস করা হয়ে গিয়েছে ওর নামে কোনো বেনামী চিঠি এলো কিনা সেদিনের ন্যায়। বাকি থাকল শুধু শিমুল। কয়েকদিন ধরে সে স্কুলে আসছে না। একটাবার ফোন দিয়ে স্কুলে না আসার কারণ জিজ্ঞেস করার বাহানায় সেই ব্যক্তির খোঁজ নিলে মন্দ হয় না। রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ না করেই বুকের উচাটন নিয়ে কল দিল। রিসিভ হওয়া মাত্র কণ্ঠে উৎকন্ঠা,

‘ স্কুলে আসছিস না কেন?’
‘ ভালো লাগছিল না। কাল থেকে যাব। তুই হঠাৎ ফোন দিলি?’
‘ না,এমনি। ‘
‘ আচ্ছা কাল এসে কথা বলব। ‘
নিশাত অস্থির হয়ে গেল। অনেক কষ্টে গুটি তিনেক শব্দ মিলিয়ে একটা বাক্য আওড়ালো ‘ একটা কথা ছিল। ‘
‘বল। ‘
কীভাবে জিজ্ঞেস করবে ও বুঝতে পারছে না। কিন্তু মনকেও আর মানাতে পারছে না। ব্যক্ত করেই ছাড়ল,
‘ প্রহর ভাই গ্রামে আসেন না?’
শিমুল সঙ্গে সঙ্গেই গলা উঁচিয়ে বলল,
‘ সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে? নিশু জিজ্ঞেস করছে প্রহর ভাইয়ের কথা! যেটা এতবছরে প্রথম হলো। ভাইয়ার তিলবতী কি ভাইয়াকে মিস করছে?’
নিশাত নিজেকে আঁটকে রাখতে ব্যর্থ হলো। তড়তড় করে বলে ওঠে,
‘ প্রহর ভাইকে ছাড়া হঠাৎ আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন শিমুল? ঘুমাতে পারছি না,খেতে গেলে বমি আসে। উনার দেওয়া কাঁথাটা গায়ে দিয়ে ঘুমালে মনে হয় আমার দেহে তাঁর সুবাস লেগে আছে। উনি কেন আসেন না গ্রামে? আমার মতো উনি আমাকে মিস করেন না বলে? আমি ভুলে গিয়েছিলাম তাঁর তো তনুজা আছে। ‘
শিমুল আফসোসের সুর তুলল,’ আগে বলতি ভেবে দেখতাম। এখন তো ভাবি ঠিক হয়ে গেছে। এ মাসেই ভাইয়ার এনগেজমেন্ট, দাওয়াত দিতে আসবে বোধহয় মামার বাড়িতে। ‘

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)