বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে পর্ব-৩৭

0
1098

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৩৭
#Esrat_Ety

“আলো? তুমি কি শুনতে পাচ্ছো আলো? আলো?”

কানের কাছে কথা গুলো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বারবার। অপরিচিত নারীকন্ঠটি খুবই চমৎকার। কিন্তু তাকে ডাকছে কেন?
চোখের পাতা মেলে তাকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। তবুও সে হাল ছাড়লো না।

রুবির দিকে তাকিয়ে হে/ড নার্স শিলা বলে ওঠে,”ম্যাম চোখ খুলছে। বাড়ির লোককে ডাকবো? যদি চেঁচামেচি শুরু করে দেয়? সামলাতে পারবে।”

_না। কাউকে দরকার নেই। সামিন বলেছে সি ইজ আ স্ট্রং ওম্যান। দেখি কথাটা কতটুকু সত্যি।

অবশেষে সফল হলো সে, দু’চোখ মেলে আলো পিট পিট করে তাকাচ্ছে। নাকে কেমন ওষুধের তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ এসে লাগে। কোথায় সে? কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সে। মাথার ওপর সি/লিং ফ্যানটা চলছে না,কিন্তু পুরো ঘর শীতল। আলো ঘার ঘুরিয়ে দেখতে পায় দুজন অপরিচিত ভদ্রমহিলা তার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে। দুজনে এমন সবুজ রঙের একটা পোশাক পরা কেন? আলো কাত হয়ে ছিলো, চেষ্টা করলো চিৎ হবার। তখনি যন্ত্রনায় তীব্র আর্ত/নাদ করে উঠলো।

দরজার এপাশে দাঁড়িয়ে সামিন সাথে সাথে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে আলোর আর্ত/নাদ শুনে।

“রিল্যাক্স আলো। রিল্যাক্স। ইটস্ আ মাইনর ইন/জুরি। যাস্ট রিল্যাক্স।”

রুবি আরো ঝুঁকে যায় আলোর দিকে। আলো চাদর খা/মচে ধরে। যন্ত্রনায় পুরো মুখ নীল রঙের হয়ে আছে। দু’চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে। নাকের ডগা লাল হয়ে গিয়েছে। রুবি শিলাকে বলে,”ইন/জেক/শন টা দিয়ে দাও। ওয়াশ করতে হবে।”

শিলা মাথা নাড়ায়। আলো বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। দৃশ্য গুলো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তার গায়ে কিছু একটা পরেছিল। মূহুর্তেই শরীরটা যন্ত্রনায় পুরে যেতে শুরু করলো, সে উন্মাদের মতো লাফাচ্ছিলো। রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। এরপর আর কিচ্ছু মনে আসছে না।
তারপর হঠাৎ করে মনে আসে,কেউ বলছিলো,ওর জামা কা/টো। ওর পা ধরে রাখো।
হুট করে আলো চোখ মেলে চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। শরীরটা যেন শির/শির করে উঠলো।

রুবি আলোর কাছে এগিয়ে যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,”আমি ডাক্তার রুবি। তুমি আমাকে আন্টি বলো।”

আলো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। রুবি বলতে থাকে,”তোমার শরীরের ব্যাথা কমে গিয়েছে? এই ইন/জেক/শন টা ইউএস থেকে অর্ডার করে আনা হয়েছে। একটুও ব্যাথা করবে না দেখো । অনেক আরাম পাবে তুমি।”

আলো কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আমাকে কি ওটা এ/সি/ড ছোড়া হয়েছিলো?”

_হ্যা আলো।
রুবি ঠান্ডা গলায় বলে। মুহুর্তেই আলো আর্ত/নাদ করে ওঠে,”নাহহ। আমার মুখ! আমার মুখ!”

রুবি আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”কিছু হয়নি তোমার মুখে আলো। যাস্ট রিল্যাক্স!”

আলো উন্মাদের মতো হয়ে ওঠে,ব্যাথা/তুর শরীরে ছটফটও করতে পারছে না সে। বা হাত দিয়ে পুরো মুখ হাতিয়ে যাচ্ছে। উন্মাদের মতো কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে,”আমার মুখ। আমার মুখ। আমার মুখ।”

“কিচ্ছু হয়নি আলো। আয়না দেখবে তুমি? বোকা মেয়ে কিচ্ছু হয়নি।”

নার্স শিলা দৌড়ে গিয়ে একটা ছোট আয়না তুলে আলোর মুখের সামনে ধরে। রুবি বলে,”দেখো আলো। একটু তাকাও‌ । শান্ত হও। শান্ত হও তুমি।”

আলো শান্ত হতে পারে না। বা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে তড়/পাতে থাকে। রুবি জোর করে আলোর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,”দেখো। দেখো বলছি। দেখো তুমি।”

কিছুটা ধাতস্থ হয়ে পিটপিট করে চোখ মেলে আলো আয়নায় নিজের মুখটা দেখে।
রুবি মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে,”দেখলে তুমি? দেখলে?”

ফ্যালফ্যাল করে আয়নার দিকে তাকিয়ে আলো বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। রুবি আয়নাটা সরিয়ে বলে,”তুমি কার মতো দেখতে জানো? পুরো অম্রিতা রাও এর মতো দেখতে। ভারি মিষ্টি। কিন্তু তোমার কন্ঠটা বড্ড ফ্যাসফেসে আলো। এতো বি/কট চিৎকার দিও না। আমার কান ফেটে যাচ্ছে।”

আলো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। তার পুরো শরীর কাঁপছে। রুবি আলোর গায়ের চাদর টা সরিয়ে দিয়ে বলে,”পেটে, ডান হাতের কনুই, পিঠে একটু খানি লেগেছে তোমার। এগুলো পুরোপুরি সেরে যাবে। ”

আলো কাঁদছে। নিশ্চুপ কাঁদছে। রুবি ক্ষ/ত ওয়াশ করতে করতে বলে, “আমরা বেশিদিন এই প্রানোচ্ছল পাখিটাকে আটকে রাখবো না। তুমি খুব শিগগিরই উড়তে পারবে। ”

“কেন? আমার সাথেই কেন?”
ঝরঝর করে কেঁদে দিয়ে বলে ওঠে আলো।

রুবি কোনো উত্তর দেয়না। আলো বলে ওঠে,”আমি খারাপ মেয়ে। আমি খারাপ মেয়ে বলে।”

একই কথা বিড়বিড় করতে থাকে আলো। রুবি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শিলাকে বলে,”ঘুমের ইন/জেক/শন টা দিয়ে দাও।”

***
সামিন চুপ করে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। দূরে রেহেনা মিহি সুরে কাঁদছে। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে হিয়া,নৌশিন, শ্রাবনী। আজান আয়াত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তাদের পাশে।

দরজা খোলার শব্দ হতেই সামিন সেদিকে তাকায়। রুবি বেরিয়ে আসে। সামিনকে দেখে বলে,”যাবে তুমি? দেখবে? ”

সামিন মাথা নাড়ায়। তারপর বলে,”আমার শাশুড়ি যাবে।”

_উনি তো নিজেই ভেঙে পরেছে। উনি কি করবে গিয়ে?

সামিন চুপ করে থাকে। তার ভয়,আলো যদি এই অবস্থায় তাকে দেখে উত্তে/জিত হয়ে পরে। যদি রে/গে যায়। তাহলে তো আলোর ক্ষ/তি।

রুবি মৃদু স্বরে বলে,”ঘুমিয়ে পরবে এক্ষুনি। দেখে আসতে পারো। এরপর ট্রিট/মেন্ট চলবে। তখন যেতে দেবো না কাউকে।”

সামিন কিছুক্ষণ উ’শ’খু’শ করে ভেতরে ঢোকে। আলোকে ওদিকে ফিরিয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে। পা টিপে টিপে সামিন আলোর কাছে যায়। ঘুম ঘুম চোখে আলো বিড়বিড় করতে থাকে,”আমি খারাপ মেয়ে। আমার সাথে এটাই হওয়া উচিত। আমি খারাপ মেয়ে। আমি খারাপ মেয়ে। ”

সামিন থমকে যায়। আর এগোনোর সাহস নেই তার। একই কথা আলো বিড়বিড় করতে করতে অচেতন হয়ে যায় কিছু সময় পরে।

সামিন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে ওঠে,”তুমি খারাপ মেয়ে নও। তুমি আমার দেখা সবথেকে শুদ্ধতম মেয়ে আলো। সবথেকে বিশুদ্ধতম মেয়ে।”

***
“শেভ করছিস না কেনো?”

ফুয়াদ একপলক সামিনের দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলে। সামিন ড্রাইভ করতে করতে বলে,” সময় হয়ে ওঠে না। আজ করবো।”

_দাড়ি রাখলে রেখে দিতে পারিস। তোকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগবে। পলিটিশিয়ানদের সাথে দাড়ি মানায়।

সামিন চুপ করে থাকে। হসপিটাল রোডের মোড় ঘুরে সামিন গেইটের ভেতর ঢুকে পার্কিং লটে গাড়িটা পার্ক করে রাখে। তারপর গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালের ভেতরে ঢোকে।

আজ পনেরো দিন হয়ে গিয়েছে। ট্রিটমেন্ট শেষ হয়েছে। আলোকে আজ রিলিজ করে দেয়া হবে। ক্ষ/ত প্রায় শুকিয়ে গিয়েছে।

আলোর কেবিনের বাইরের করিডোরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। সামিন দ্রুতপায়ে হেটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আজান মাথা তুলে তাকিয়ে বলে,”আম্মু গিয়েছে ভেতরে। আপু কথা বলছে।”

মাথা ঘুরিয়ে সামিন আলোর কেবিনের দরজার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
তারপর হেটে ডাক্তার রুবির কেবিনে যায়।

“মেয়েদের এতো গলাবাজি করা ঠিক না আম্মু। বেশি গলাবাজি করার পরিনতি দেখলে?”

আলো নিস্তেজ কন্ঠে বলে। রেহেনা মেয়ের হাত ধরে চু/মু খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”একদমই না আম্মু , একদমই না,এমন কথা বলবি না।”

আলো কোনো কথা বাড়ায় না। মাথা ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। তার কেবিনের জানালার বাইরে একটা চমৎকার জারুল গাছ আছে। তার ডালে কিছু পাখি বসে আছে। সে এক দৃষ্টে পাখি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

***
” শরীরের যেসব জায়গায় লেগেছে। সা/র্জা/রি করাটা অনেকটাই সহজ। মুখ হলে আমরা রি/স্ক নিতে চাইতাম না। এখন তোমার সিদ্ধান্ত, আই মিন আলোর সিদ্ধান্ত বাকি টা।”

সামিন রুবির দিকে তাকিয়ে আছে। রুবি বলতে থাকে,”আজ নিয়ে যেতে পারো। আর যেটা ইম্পরট্যান্ট নোট দিতে চাই সেটা হলো, ওর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবে। আই থিংক তুমি বুঝেছো।”

সামিন মাথা নাড়ায়। রুবি বলতে থাকে,”একটার পর একটা দূর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে তাই ওর মনে হচ্ছে সবকিছু যেহেতু ওর সাথেই হচ্ছে তাহলে নিশ্চয়ই ওর দোষ। ও আসল অপ/রাধী। এটা থেকে ভবিষ্যতে ভয়াবহ মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওকে খুব দ্রুত কোনো সাই/ক্রিয়া/টিস্টের কাছে নিয়ে যেও। ডাক্তার ফজলে রাব্বী বেস্ট এই ব্যাপারে।”

সামিন উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে। রুবি বলতে থাকে,” হুট হাট অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করলে ভয় পেয়ো না। কি বলো তো, মেয়েরা নিজের শরীর, ত্বকের ব্যাপারে খুব সেন/সেটিভ। ওর কাছে মনে হতে পারে ও এখন কুৎসিত হয়ে গিয়েছে অনেকটা, ওর সৌন্দর্য কমে গিয়েছে। তাই ডি/প্রে/শ/নে হুট হাট কান্নাকাটি করতে পারে, রা/গ দেখাতে পারে।”

রুবি সামিনের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,”খেয়ে নাও।”

সামিন পানিটা খায়। রুবি বলতে থাকে,”কি অবস্থা করেছো নিজের। ”
ম্লান হেসে হাতের গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে সামিন উঠে দাঁড়ায়। তারপর সোজা হেটে আলোর কেবিনের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।‌ কিছুক্ষণ কেবিনের বাইরে জড়তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দরজা ঠেলে পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢোকে।

কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে আলো মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখে সামিন। সামিন তার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আলো বেডে আধশোয়া হয়ে ছিলো। কয়েক পলক সামিনের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা ঘুরিয়ে আবারো জানালার বাইরে চোখ রাখে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা চেয়ার টেনে সামিন বসে পরে। তারপর আলোর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে গলা খাঁকারি দেয়। আলো তাকায় না। ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেই নিস্তেজ কন্ঠে বলে,”সবসময় অন্যের ভুলের মাশুল কেনো আমাকে গুনতে হয় বলতে পারেন?”

সামিন আলোর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলে,”চা খাবে? হসপিটালের বাইরে একটা ছোট চায়ের দোকান আছে। ওদের চা চমৎকার। আমি ফ্যান হয়ে গিয়েছি। এখানে এসে রোজ খাই।”

আলো মৃদু স্বরে বলে ওঠে,”কেনো আসেন?”

সামিন একটা হাই তুলে বলে ওঠে,”চা খেতে।”

আলো কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে,

_ডি/ভো/র্সের নোটিশ পাঠানোর কথা ছিলো সেদিন। পাঠিয়েছিলেন?

সামিন মাথা নাড়ায়। আলো কাঁ/পা কাঁ/পা গলায় বলে,”কেনো?”

_কেউ আটকে দিয়েছিলো।

_কে?

_কলম। কলমের কালি শেষ হয়ে গিয়েছিলো।

_আর কোনো কলম নেই পৃথিবীতে?

_আছে। কিন্তু কোনো কলমের ক্ষমতা নেই।

আলো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”আপনার প্রতি আমার রা/গ নেই। যত রা/গ সব নিজের প্রতি। আপনি চলে যান।”

সামিন নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,”আর আমার হিসেব?”

আলো ঘুরে তাকায়। অবাক হয়ে বলে,”কিসের হিসেব?”

মুহুর্তেই সামিন চোখ মুখ কুঁচকে বলে ওঠে,”শর্ত মানোনি। শা/স্তি পেতে হবে তোমাকে।”

_শর্ত? শা/স্তি? কি বলছেন আপনি।?

_বাজিতে কি শর্ত ছিলো?

আলো আমতা আমতা করে বলে,”আমরা জিতলে আপনি আমার কথা শুনবেন আর আপনি জিতলে আমি আপনার কথা শুনবো।”

_কে জিতেছে?

_আপনি।

_হ্যা, আমি জিতেছি। আর শর্ত অনুযায়ী তোমাকে ভালো থাকতে বলা হয়েছিলো। ভালো থেকেছো তুমি?

আলো চুপ করে থাকে। সামিন গম্ভীর কন্ঠে বলে,”শর্ত ভে/ঙে/ছো তুমি। শা/স্তি পেতে হবে তোমায়। ”

আলো সামিনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিন বলতে থাকে,”আর তোমার শা/স্তি হচ্ছে তুমি বাধ্য মেয়ের মতো তোমার স্বামীর ঘরে ফিরবে।”

আলো বলে ওঠে,”অসম্ভব। অসম্ভব। বাজি। শর্ত। এসব ভুলে যান। আমি কোথাও যাবো না।”

সামিন একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে আলোর দিকে। আলোর চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরে।‌ অস্ফুট স্বরে বলে,
_প্রত্যেকটা পুরুষের কাম্য তার স্ত্রীর নিখুঁত একটা শরীর। আমি কোনো পুরুষকে গ্রহণ করার পরিস্থিতিতে নেই। আপনার দয়া দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি কারো চোখে আমার জন্য দয়া দেখতে চাইনা। আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন।

সামিন একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে আলোর দিকে। আলো চোখের পানি মুছে নিয়ে বলে,”কি হলো। বলেছি তো চলে যান।”

_যাবো। তবে আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে।

_ইয়াসার মির্জা।
আলো রা’গ দেখিয়ে বলে ওঠে।

_হ্যা বলো আছিয়া।

_বাড়াবাড়ি করছেন।

সামিন অদ্ভুত ভাবে হাসতে থাকে। আলো চেঁ/চিয়ে ওঠে,”আব্বু। আব্বু তুমি কোথায়?”

আতাউর আলম কেবিনের ভেতরে ঢোকে। তার পিছু পিছু ঢোকে রেহেনা, আজান আয়াত, আলোর বান্ধবীরা, ফুয়াদ, ইশিতা, জামিল, দলের ছেলেরা। সবাই।

আলোর গায়ে হসপিটালের পোশাক। চুলে দুটো বেনী করা। আতাউর আলমকে দেখে আলো বলে ওঠে,”উনি কি বলছে? ”

“কি বলছে?”
আতাউর আলম গা ছাড়া ভঙ্গিতে বলে।

আলো চেঁচিয়ে বলে,”আমাকে নিয়ে যেতে চাইছে।”

_হ্যা। তো?
নিচু স্বরে বলে আতাউর আলম।

আলো অবাক হয়ে বলে,”হ্যা তো মানে?”

আতাউর আলম অবাক আলোকে হতভম্ব করে দিয়ে বলে,”তোমার স্বামী তোমাকে নিয়ে যাবে, আমাকে বলছো কেনো আম্মু? আমি কে তোমাদের মধ্যে কথা বলার।?”

আলো ঘুরে ঘুরে কেবিনের মধ্যে থাকা প্রত্যেকের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,” ওও সবাই একজোট হয়েছো? ”

সবাই চুপ করে থাকে। আলো বলে,”আমি যাবো না। আমি কোথাও যাবো না। চাই না কারো দয়া। যাস্ট লিভ মি অ্যালোন। আমি ক্লান্ত।”

সামিন মুখে চ কারন্ত শব্দ করে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,” আমি এখন আমার বৌকে আমার সাথে আমার বাড়িতে, তার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। এখানে যদি কারো আপত্তি থাকে তাহলে সে তিন সেকেন্ডের মধ্যে আমার সামনে আসুক।”

তিন সেকেন্ড অতিবাহিত হয়। সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধ একটা হাসি দেয়। তারপর বলে,”দেখলে কারো আপত্তি নেই‌।”

তারপর শার্টের হাতা ফোল্ড করতে থাকে সে। আলো বলে ওঠে,”কি করতে চাইছেন আপনি?”

সামিন ফুয়াদের দিকে গাড়ির চাবি দিয়ে বলে,”স্টার্ট কর গিয়ে।”

ফুয়াদ হেসে বলে,”জো হুকুম মেরে আকাহ!”

আলো বলতে থাকে,”কি করতে চাইছেন আপনি?”

_ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।
গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে সামিন।

_মানে?

_মানে তোমার মতো ত্যা/ড়া মেয়েদের সাথে যেটা করা উচিৎ। যেটা না করলেই নয়।

সামিন আলোর দিকে এগিয়ে যায়। আলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবার সামনে তাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয় সামিন। আলো বাঁধা দিতে চেয়েও পারছে না। সেই শক্তি তার গাঁয়ে অবশিষ্ট নেই। সামিন এগিয়ে যায়। পেছনে না ফিরে রাহাত আর জামিলকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হসপিটালের সবাইকে পেট ভরিয়ে মিষ্টি খাইয়ে বাসায় আসবি। সবাইকে বলে দিবি, আজ সামিন ইয়াসার মির্জার বিয়ে। পাত্রী তার স্ত্রী।”

ইশিতা রেহেনা আর আতাউর আলমের থেকে বিদায় নিয়ে ভাইয়ের পিছু পিছু যায়।
আগন্তুকেরা সবাই অবাক চোখে সামিনকে দেখছে। মেয়র তার স্ত্রীকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে কেনো! ভীড় জমে গিয়েছে করিডোরে।

আলো নিশ্চুপ চোখের পানি ফেলে সামিনের বুকে কি/ল ঘু/ষি মারতে থাকে। দোতলা থেকে সিড়ি বেয়ে নেমে সামিন হসপিটাল থেকে বের হয়। ফুয়াদ গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সামিন এসে দাড়িয়ে ফুয়াদকে বলে,”নেতা হিসেবে আমাকে সবসময় তুই জিরো দিস, স্বামী হিসেবে কত দিতে চাস।”

_দশে আট।

_কেন? আর দুই মার্কস কা/টা কেন?

_মাত্র একতলা সিঁড়ি বেয়ে নেমেছিস। আর এতেই হাঁপিয়ে গিয়েছিস!

সামিন ম্লান হেসে বলে,”হাপাবো না? এক হাজার পঞ্চাশ কেজি বয়ে নিয়ে এসেছি।”

“এক হাজার পঞ্চাশ কেজি মানে?”
ফুয়াদ অবাক হয়ে জানতে চায় ।

সামিন হেসে বলে,”পঞ্চাশ কেজি ওর শরীরের আর এক হাজার কেজি ওর আত্মসম্মানের ওজন। তুই বক বক না করে গাড়ির দরজা খোল নয়তো এটাকে এখানেই ফেলে দেবো। ওহহ হো, ভুল বলেছি। ওজন মনে হচ্ছে সত্তর কেজির কাছাকাছি। হাই ডো/জের ওষুধ খেয়ে খেয়ে বিশ কেজি বাড়িয়েছে। হাত ব্যাথা হয়ে গেলো!”

ফুয়াদ হেসে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। আলোর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,”দয়া চাই না। চাইনা।”

সামিন আলোকে বসিয়ে দিয়ে আলোর পাশে বসে পরে। ফুয়াদ ড্রাইভিং সিটে, ইশিতা তার পাশে‌। গাড়ি চলতে শুরু করে। আলোর ছট/ফটানি কমছে না। তেজ নিয়ে বলতে থাকে,”কি ভেবেছেন? আলো দয়া নেওয়ার পাত্রী? লাগবে না। আমাকে আমার বাবা মায়ের কাছে দিয়ে আসুন। আসুন বলছি।”
সামিনকে ধাক্কাতে থাকে আলো। সামিনের বলিষ্ঠ শরীরে তার কোন প্রভাব পরে না। আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”চুপ করে বসে থাকো। ব্যাথা লাগবে তোমার।”

আলো থামেনা। সামিনের হাত খা/মচে ধরে বলে,”গাড়ি থামাতে বলুন। বলুন‌।”
সামিন আলোর কথা না শুনে ডান হাত দিয়ে আলোর দুহাত আকরে ধরে রেখেছে।

আলো নিজের হাত ছাড়ানোর প্রানপন চেষ্টা করে। কিন্তু সে অপারগ। হুট করে আলো এক কান্ড করে বসে। সামিনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে না পেরে সামিনের হাতে
কা/মড় বসিয়ে দেয় । ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে সামিন আর্তনাদ করে ওঠে। ফুয়াদ গাড়ির ব্রেক কষে দেয়। মাথা ঘুরিয়ে সামিন চোখ বড় বড় করে আলোকে দেখতে থাকে। আলো তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ক’ট’ম’ট দৃষ্টি দিয়ে। ফুয়াদ বলে ওঠে,”ভাই আমি গাড়ি ঘুরাচ্ছি। এটাকে মেন্টাল হসপিটালে দিয়ে আসবো। তোর এর সাথে সংসার করার দরকার নেই। খুব রিস্কি হয়ে যাবে ভাই, তোর প্রান/নাশের ভয়।

সামিন হতভম্ব হয়ে আলোর দিকে তাকিয়েই থাকে বেশ কিছুক্ষণ। তারপর ফুয়াদকে ঠান্ডা গলায় বলে,”পাগলের চিকিৎসা আমি দিতে জানি। তুই গাড়ি স্টার্ট কর।”
তারপর ইশিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”ফোন করে ওদিকে জানিয়ে দে।”

ইশিতা মাথা নাড়িয়ে ফোনে রিতুর নাম্বার ডায়াল করে। ফোন রিসিভ হতেই বলে ওঠে,”মেজো ভাবী। মির্জা বাড়ির বড় বৌ ফিরছে। বধূবরণের তৈয়ারি করো।”

নিস্তেজ শরীরটা নিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে আলো। ইশিতা মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বলে,”ভাবী স্টপ। অনেক হয়েছে। অনেক করেছো তুমি, অনেক।”

_আমি খুব খারাপ আপু। আমাকে একা ছেড়ে দাও। কারো দয়া চাই না আমার। কারো দয়া না।

***
“তুমি আমার দেখা সবথেকে সুন্দর বিয়ের কনে। আকাশী রঙের হসপিটালের ড্রেস। চুলে দুটো বেনী। তোমাকে পুরো অপ্সরার মত লাগছে বড় ভাবী।”

আলোকে জরিয়ে ধরে রিতু বলে। আলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখের পানি শুকিয়ে গালে লেপ্টে আছে। ইশিতা ভেতরে ছুটে গিয়ে একটা বড় ফুলের তোড়া নিয়ে এসে আলোর সামনে দাঁড়ায়। তারপর খুশি খুশি গলায় বলে,”ওয়েলকাম ব্যাক ভাবী। আমার বড় ভাবী, আমাদের বড় ভাবী।”

আলো ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশিতা আলোকে আগলে নিয়ে বলে,”তোমার বাড়িতে পদধূলী দাও এবার। আমাদের বাঘিনী তুমি, একটু কথা শোনো আমাদের।”

সামিন আলোর পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলে,”কোলে করে নিতে হবে?”

আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে বাড়ির সবার দিকে তাকায়। পরী এসে আলোর হাত ধরে বলে,”এসো আমাদের সাথে ভাবী। এসো বলছি!”

টানতে টানতে আলোকে সামিনের ঘরে নিয়ে যায় ওরা।
রিতু দাঁড়িয়ে পরে, সামিনের দিকে তাকায়। সামিন ফিসফিসিয়ে রিতুকে বলে,”আগে মাথার স্ক্রু ঢিলা ছিলো। এখন পুরো পুরি খুলে গিয়েছে। একটু সামলে রাখো। আমি রে/ঞ্জ নিয়ে আসছি।”

কথাটা বলে সামিন ফুয়াদকে নিয়ে বেরিয়ে পরে। সবকিছুর ব্যাবস্থা করতে হবে তাকে।

আলো বিছানার উপর গুটিয়ে বসে আছে। ইশিতা,পরী দুজনে তার সামনে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। বিছানার ওপরে একটা শাড়ি। কিছুক্ষণ আলোর দিকে বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থেকে ইশিতা মুখে চ কারন্ত শব্দ করে বলে,”বড্ড বেশি সাফার করাচ্ছো ভাবী তুমি আমাদের। এরপর যখন রাই বাঘিনী ননদিনী হয়ে শো/ধ তুলবো তখন কিছু বলতে পারবে না বলে দিলাম।”

আলো নিশ্চুপ। ইশিতা বলে,”ভাইয়া কোথাও বেরিয়েছে। চুপচাপ শাড়িটা পরে নাও। নয়তো এসে আমাদের কথা শোনাবে।”

আলোর কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ইশিতা বলে,”দাঁড়াও। ভাইয়াকে ডেকে আনছি।”

পরী আর ইশিতা চলে যায়। আলো ঘরে চুপচাপ বসে থাকে। তার দৃষ্টি ঘুরে ফিরে ঘরের চারপাশটা দেখতে থাকে। সবকিছু ঠিক আগের মতোই আছে। সে যেমনটা রেখে গিয়েছিলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে তার জন্য রাখা প্রসাধনী। ঘরের এক কোণে তার ব্যাবহার করা তিনটা শাড়ি আলনায় ঠিক সেরকম রাখা আছে যেরকম সে রেখে গিয়েছিলো। সামিনের টেবিলের ওপর আলোর রেখে যাওয়া কিছু বই,যা সে এ বাড়ির লাইব্রেরী ঘর থেকে এনেছিলো, সেগুলো ঠিক সেভাবেই রাখা আছে যেভাবে সে রেখে গিয়েছিলো। তবে কি লোকটা জানতো আলো এবাড়িতে ফিরবে? কেনো রেখে দিয়েছে এখনো এসব? কিসের জন্য?

***
“শাড়িটা পরে আসো”

আলোর সামনে বসে আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে সামিন। আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিন নরম গলায় বলে,”পরে এসো। তোমার প্রতি ক/ঠিন হতে ইচ্ছে করে না আছিয়া। একদম করে না।”

“ক/ঠিন হয়ে কি করবেন? মা/র/বেন আমাকে?”
আলো দৃঢ় ভাবে বলে। সামিন ম্লান হাসে। তারপর অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে নিচু স্বরে বলে,”না। নিজের হাতে শাড়িটা পরিয়ে দেবো।”

আলো চ’ম’কে ওঠে। সামিন বলতে থাকে,”আমি তোমার জীবনের একটা ক্ষ/ত। আমাকে না হয় ক্ষ/ত হিসেবেই রাখো। তবুও রাখো। ধীরে ধীরে না হয় মিলিয়ে যাবো আছিয়া।‌ সময় দাও,সুযোগ দাও।”

আলো চুপচাপ তাকিয়ে থাকে সামিনের দিকে। সামিন আলোর একটা হাত মুঠি করে ধরে আলোর চোখে চোখ রেখে ব্যাকুল কন্ঠে বলে ওঠে,” সুযোগ প্রার্থী আমি। আমাকে ভোট নয়, আপনি একটাবার সুযোগ দিন আছিয়া। আপনার একটা সুযোগে একজন অপ/রাধী আলোর পথে ফিরতে পারবে। রাষ্ট্রের প্রতি কি এতটুকু দায় নেই আপনার? অপ/রাধ সংশোধনের সুযোগ দিন, তরুণ সমাজ বাঁচান।”

আলো কোনো কথা বলে না। কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ থাকে। সামিন বলে,”দশ মিনিট সময় তোমাকে দিলাম। যদি এই শাড়িটা পরো, তাহলে ধরে নেবো তুমি একটা অপ/রাধীকে সুযোগ দিচ্ছো।”

_আর না পরলে?
ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করে আলো।

সামিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”তাহলে বার বার আপনার কাছে সুযোগ চেয়ে যাবো। আমি বড্ড বেহায়া আছিয়া। ইউ নো দ্যাট!”

কথাটা বলে সামিন চুপচাপ চলে যায়।

***
বাড়ির সবাই আয়োজনে ব্যাস্ত। শান্তিনীড়ে আলোর ফেরা উপলক্ষে ছোটো খাটো একটা অনুষ্ঠান হবে।
লিভিং রুমে কাজী বসে আছে। তার পাশেই আতাউর আলম। সামিন এসে খুবই বিনয়ী হয়ে আতাউর আলমের পাশে বসে। তারপর আতাউর আলমের দিকে তাকিয়ে বলে,”তিন লক্ষ টাকা কাবিন ছিলো। আপনি চাইলে সংশোধন করে আরো বাড়াতে পারি।”

আতাউর আলম ম্লান হাসে, তারপর বলে,”আমি পেশায় একজন সাংবাদিক। ব্যবসায়ী নই।”

কাজী কাগজ পত্র রেডি করে আতাউর আলমের সামনে রাখে। বিয়ের কাগজে সা/ক্ষী সংশোধন করে মেয়ের বাবাকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে। আতাউর আলম সাইন করে চুপচাপ বসে থাকে। সামিন এক দৃষ্টে বিয়ের কাগজের দিকে তাকিয়ে আছে। আতাউর আলম বলে,”আমার মেয়েকে আনো। ওকে দেখতে চাই।”

সামিন হাতের ঘড়ির দিকে তাকায়। দশমিনিটের যায়গায় পনের মিনিট হয়ে গিয়েছে। সে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দোতলায় চলে যায়।

ঝর্না ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে আছে আলো। সামিনের দেওয়া শাড়িটা ওয়াশ রুমের সাথে লাগোয়া একটা আয়নার সামনে রাখা। শাড়িটার রং কমলা।

পানির ঝর্না বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। তারপর হাত বাড়িয়ে শাড়িটা নিয়ে গায়ে জরিয়ে নিতে থাকে। কুচি গুলো কোমরে গুজে নিয়ে আঁচল বুকে তুলতে যাবে তখনই আয়নায় চোখ যায় তার। পেটের ডানপাশটা দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। শরীরটা ধীরে ধীরে অ/সাড় হয়ে যাচ্ছে। ভেজা ঠোঁট দুটো কাঁপছে। চোখের কার্নিশে পানি জমেছে। কাঁপতে কাঁপতে অনেকটা সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় সে। আঁচল টা হাত থেকে ছেড়ে দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পিঠের দিকটা দেখার চেষ্টা করে আয়নায়। থমকে যায় সে। কিছু সময় চুপ থেকে বিকট শব্দে চিৎকার দিয়ে ওঠে।

সামিন ঘরের ভেতর পা রাখতেই থ/মকে যায়। ওয়াশ রুমের ভেতরে আলো উন্মাদের মতো আর্তনাদ করে যাচ্ছে। দ্রুতপায়ে ওয়াশ রুমের দরজার কাছে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে থাকে। আলো কেঁদেই যাচ্ছে। সামিন কিছুক্ষণ দরজায় ধাক্কা দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরে। তারপর থেমে যায়। নরম গলায় ডাকতে থাকে,”প্লিজ বেরিয়ে এসো। কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার। আমি জানতে চাই। আমার জানার অধিকার আছে আলো। আমার হাতে সেই অধিকারের সনদ।”

আলো কাঁদতেই থাকে। সামিন ব্যাকুল হয়ে বলে ওঠে,”অত টুকু
পু/ড়ে গিয়েছে বলে কষ্ট পাচ্ছো? আছিয়া, তুমি তো পু/ড়ে গিয়েছো। এখন আমাকে পো/ড়াচ্ছো। আর পু/ড়িও না আমাকে। দরজা টা খুলে দাও। বেরিয়ে এসো। আমায় দয়া করো এবার।”

চলমান……