#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৪৪
#Esrat_Ety
“ওয়েলকাম টু হোটেল গ্রান্ড প্যালেস।”
রিসিপশনের বা দিকটায় একটা স্ট্যাচু হোটেলের নেমপ্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে, তাতে ইংরেজির পাশাপাশি আরো দু’টো ভাষায় হোটেলের নাম লেখা। আলো লবিতে দাঁড়িয়ে স্ট্যাচুটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, স্ট্যাচুটির লি’ঙ্গ আলো বুঝতে পারছে না। এটা পুরুষ নাকি মহিলা? ভীষণ অদ্ভুত শ্বে’ত পাথরের ঐ মূ’র্তিটা। ঘাড় ঘুরিয়ে সামিন ইয়াসার মির্জাকে দেখে নেয় সে। সামিন হোটেলের রিসিপশনিস্টের সাথে কথা বলছে। রিসিপশনে মোট তিনজন লোক। দুজন মহিলা এবং একজন পুরুষ। মহিলা দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে চাইনিজ। একজন সামিনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। বারবার মাথা নেড়ে কি বলছে এতো?
আলো দূরেই দাঁড়িয়ে থাকে। তার পাশে তাদের দু’টো লাগেজ অনাদরে পরে আছে মেঝেতে। কিছুক্ষণ পরে সামিন চেক ইন এর ঝামেলা সামলে আলোর কাছে চলে আসে। তার হাতে রুমের চাবি। আলোর কাছে এসে লাগেজ দু’টো তুলে নেয় সে। তারপর বলে,”এসো।”
“দু’টো আপনি একা বহন করবেন কেনো? আমাকে একটা দিন।”
আলো একটা লাগেজ তুলে নিতে উদ্যত হয়। সামিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_ধন্যবাদ। আপনি একজন স্বনির্ভর মেয়ে সেটা আমি জানি। তবে আমি একজন দায়িত্বশীল এবং কেয়ারিং হাসবেন্ড সেটাও আপনাকে জানাতে চাচ্ছি।
আলো চুপচাপ সামিনের পিছু পিছু যায়। তাদের রুমটা ছয়তলাতে। সামিন আর আলোর রুম নাম্বার হলো “এল টুয়েন্টি ফোর”।
আরো কিছুদূর যেতেই ডানে মোড় নিলে তাদের রুম। আলো চারপাশে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে লোকজনকে দেখছে। বিভিন্ন দেশের লোকজন। মেয়েগুলো বেশ খোলামেলা পোশাক পরে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হেঁটে যাচ্ছে। আলোর হঠাৎ রেহেনার কথা মনে পরলো, আলোর গা থেকে ও’ড়না সরে গেলেই রেহেনা কান ম’লে দিতো আলোর, আম্মু এই দৃশ্য দেখলে তো নির্ঘাত এই মেয়েগুলোকে ঝা’টা নিয়ে দৌ’ড়ানি দিতো।
রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে লাগেজ দু’টো একপাশে দাড় করিয়ে রেখে সামিন পুরো রুমটা দেখে নেয়।
আলো সামিনের পিছু পিছু ঘরে ঢোকে।
ডাবল বেডের রুম। সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে মুখ হাসি হাসি করে বলে,”প্রথমে ডাবল বেড এভেইলেবল ছিলো না। ভীষণ দুশ্চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম এখানে কোলবালিশ পাওয়া যাবে কি না ভেবে, নাহলে তো বিছানায় আমাকে এলাউ করতে না তুমি। মেঝেতে থাকতে হতো আমার। সৌভাগ্য আমার ডাবল বেড পেয়ে গিয়েছি।”
আলো চুপচাপ একটা বিছানা দখল করে বসে পরে। সামিন ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকায়। এখান থেকে কিছুটা দূরেই মার্লিওন পার্কের স্ট্যাচুটা । সামিন আলোকে ডেকে স্ট্যাচুটা দেখিয়ে বলে, এটা কখনো দেখেছো কোথাও?
আলো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,”হ্যা । মুভিতে দেখেছি।”
_কথিত আছে যখন সিঙ্গাপুর আবিষ্কার হয়েছিলো তখন একটা অদ্ভুত প্রানী দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। যার অর্ধেক সিংহ এবং অর্ধেক মৎস্যকন্যা। এই স্ট্যাচু টা সেই পৌরাণিক কাহিনীর আদলে তৈরি।
আলো এবার বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে স্ট্যাচুটাকে।
সামিন হেসে বলে,”আজ রেস্ট নাও। কাল ডক্টরের কাছে আমাদের এপয়েন’মেন্ট আছে। তৈরি থেকো।”
কথাটা বলে সামিন রুমের দরজার দিকে যায়।
“কোথাও যাচ্ছেন?”
আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে আছে। সামিন মাথা ঘুরিয়ে আলোকে দেখে বলে,”দু’টো সিম*কার্ড কিনবো এবং মা’নি এক্স*চেঞ্জ করবো। কিছুক্ষণ পরে আসছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে তৈরি থেকো, আমরা লা*ঞ্চ করবো।”
_এখানে পশ্চিম দিক কোনদিকে বুঝতে পারছি না। একটু জেনে আসবেন?
সামিন আলোর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে আঙ্গুলের তর্জনী তুলে বলে ওঠে,”ঐ দিকে। আমি জেনে এসেছি রিসিপশন থেকে।”
সামিন বেরিয়ে যায়, বাইরে থেকে দরজা লক করে রেখে গিয়েছে। আলো বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তার দু’চোখ বন্ধ।
বিদেশে, সম্পূর্ণ অচেনা একটি শহরে, একটা সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের সাথে, তাকে ভরসা করে এসেছে সে। হ্যা, মানুষ টা অচেনাই তো। এই ইয়াসার মির্জাকে আলো চিনতে পারছে না যেনো। এই ইয়াসার মির্জা তার প্রতিটা পদক্ষেপে আলোকে চ’মকে দিচ্ছে। এই লোকটাকে আলো উপেক্ষা করতে পারছে না কেন? ঐ একটা কাগজের জো*র এতো?
আলোর নিজের মনের ওপর নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ খুঁজে পাচ্ছে না। কখনো তার ভেতর থেকে একজন স্ত্রী সত্তা বলছে,”আলো তুই বাড়াবাড়ি করছিস, সবকিছুর একটা সীমা থাকে, পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নে, তুই চাইলে সবটা সুন্দর হতে পারে। ইয়াসার মির্জা নিজেকে প্রমাণ করছে। তুই তো সুযোগ দিয়েছিলি, সে নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছে, তোকে ভোগ*বস্তু হিসেবে দেখেনি, তোকে সম্মানিত করছে, আর কি চাস তুই? ”
আবার কখনো মনের মধ্যে থেকে একজন কঠিন নারী সত্তা বলছে,”কিভাবে? কিভাবে? সত্যিই কিভাবে?”
মাথার মধ্যে সূক্ষ্ম য*ন্ত্রণা হচ্ছে। শেষমেশ কে কাকে হা*র মানাবে? তার কঠিন নারীসত্তা একজন স্ত্রী সত্তাকে নাকি একজন স্ত্রী সত্তা একজন কঠিন নারী সত্তাকে?
অনেকটা সময় নিয়ে গোসল সেরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে। ভেজা চুল গুলো মুছতে থাকে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ তার গলায় সামিনের দেওয়া লকেট টা চোখে পরে আলোর। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে সে। সে একটা মেরুন রঙের জামদানি শাড়ি পরেছে। সাথে মেরুন রঙের ব্লাউজ। প্রথম প্রথম বিরক্তি লাগলেও বর্তমানে শাড়ি আলোর অন্যতম প্রিয় পোশাক। সামিনের কিনে দেওয়া সালোয়ার কামিজ সেভাবেই আছে। ওসব আলোর পরতে ইচ্ছে করছে না। নিজেকে বৌ বৌ দেখতে তার খুব একটা খারাপ লাগছে না। বরং লজ্জা লাগছে , যেন শাড়িতে তার সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে।
***
দরজার নব ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে পরে সামিন। আলো নামাজ আদায় করছে। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আলোকে দেখে উঠে দাঁড়ায়। নিজে গোসল সেরে বেরিয়ে এসে দেখে তখনও আলো জায়নামাজে বসে আছে। ভদ্র ছেলের মতো চুপচাপ ডিভানে বসে আলোকে দেখতে থাকে। মোনাজাতে এতো কি চাইছে মেয়েটা?
নামাজ আদায় করে উঠে দাঁড়াতেই সামিনকে দেখে থ’মকে যায় আলো। এভাবে এতো দেখার কি আছে আলোকে? অস্বস্তি ছেয়ে যায় আলোর মুখে।
সামিন চোখ সরিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নরম গলায় বলে,”তোমাকে জায়নামাজে দেখলে খুবই নিষ্পাপ মনে হয়, মনেই হয়না তুমি এতো চমৎকার গালা*গাল জানো। একই সাথে দুটো মেইন*টেইন কিভাবে করো?”
আলো জায়নামাজ ভাঁজ করতে করতে বলে,” আপনি নিজের কথা ভাবুন। শুধু মাত্র শুক্রবার দলের ছেলেদের সাথে মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করে আসেন। তার মুখে এতো বড় বাতেলা মানায় না।”
_তোমার মতো গালি তো দেই না।
ক্ষে*পানোর উদ্দেশ্যে বলে আলোকে।
_আপনার মতো একটা অপকর্ম করে তারপর একটা মহৎ কাজ করে ব্যা*লেন্স করে তো চলিনা। আপনার দুই কাঁধের ফে*রেস্তা হিমশিম খেয়ে যায় আপনার কর্মকাণ্ড দেখলে। একবার দশ নেকি লেখে, পরক্ষনেই দশ নেকি কে*টে দেয়। আবার লেখে, আবার কে*টে দেয়।
_আর তোমার? তোমার তো দুই কাঁধে ফে*রেস্তাই নেই সম্ভবত। তোমার মুখের গা*লি শুনে ভেগে গিয়েছে।
আলো থম*থমে মুখে তাকিয়ে আছে সামিনের দিকে। সামিন কথার সুর পাল্টে নিয়ে বলে,”আচ্ছা ঠিকাছে। রিলিজিয়াস ব্যাপার গুলো নিয়ে এভাবে কথা না বলি। ”
_শুরুটা তো আপনিই করেছেন।
_ভুল হয়ে গিয়েছে, ক্ষ’মা করে দেন।
নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে সামিন। তারপর ওয়ালেট হাতে নিয়ে বলে,”ঝ’গ’ড়া না করি। চলো আগে খেয়ে নেই। খালি পেটে ঝ’গ’ড়া ভালো হয় না।”
***
করিডোরে বিভিন্ন ধরনের মানুষের আনাগোনা। সামিনের পিছু পিছু আলো লিফটের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে।
লিফটের কাছে এসে বোতাম টিপে দাড়িয়ে থাকে দুজন। এখন আশপাশটায় কোনো লোকজন নেই। কেমন অস্বাভাবিক নিস্তব্ধতা।
হুট করে লিফটের দরজা খুলে যেতেই, দুজনেই সামনে পা বাড়ায়। কিন্তু মুহুর্তেই লিফটের ভেতরের দৃশ্যটি দেখে আলো আর সামিনের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
পঁচিশোর্ধ বিদেশি কোনো কাপল লিফটের মধ্যে একে অপরকে আ*লিঙ্গন করে চু*ম্বনরত অবস্থায় আছে। আশে পাশে কি হচ্ছে তাদের কোনো হু*স নেই।
সামিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আলো হতভম্ব ভাব কাটিয়ে চেঁ*চিয়ে ওঠে,”নাউজুবিল্লাহ।”
সামিন চ’ম’কে উঠে আলোর দিকে তাকায়। আলো অসম্ভব জোরে চেঁ*চিয়ে কথাটি বলেছে যে লিফটের মধ্যে থাকা জুটির কানে তালা লেগে গিয়েছে। তারা হতভম্ব হয়ে আলোর দিকে তাকায়। চোখে মুখে আ*তঙ্ক ছেয়ে গিয়েছে তাদের।
সামিন আলোর হাত ধরে টেনে নিজের পেছনে নিয়ে আড়াল করে বিদেশী কাপলদের উদ্দেশ্যে বলে,”ডোন্ট মা*ইন্ড, প্লিজ ক্যারি অন।”
বিদেশীদের চোখে মুখে হত*ভম্ব ভাব। লিফটের দরজা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় পুনরায়।
সামিন আর আলো বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। আলো মাথা নিচু করে রেখেছে। কি একটা অ*সভ্য সমাজে এসেছে। লিফটের মধ্যেই? এরা কি রুম বুক করেনি!
সামিন ঘা*ড় ঘুরিয়ে আলোকে এক পলক দেখে। দু’জনেই ভীষণ বিব্রত।
কিছু সময় পরে সামিন বলে ওঠে,”এখানে এসব অহরহ দেখতে পাবে আলো। এভাবে রি*য়্যাক্ট করো না। চুপচাপ ইগনোর করে যেও। মাত্র কটা দিন আছি।”
_তাই বলে লিফটে? লিফট টা পাবলিকের জন্য, ওনাদের বেড*রুম না।
_আচ্ছা ঠিকাছে। মাথা ঠান্ডা করো, এবার চলো, খিদে পেয়েছে আমার।
***
পুরো রাস্তায় সামিন হেসেছে। রেস্টুরেন্টে ঢুকে খাবার অর্ডার করেও হাসছে। আলো চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে হাসি থামিয়ে সামিন বলে ওঠে,”যেভাবে চেঁ*চিয়ে নাউ*জুবিল্লাহ বলেছো, তাতে ওদের আত্মা খাঁচা*ছাড়া হয়ে গিয়েছে। কতটা আত*ঙ্কিত লাগছিলো ওই বিদেশিদের। ওরা সম্ভবত তোমাকে পাগল ভেবেছে।”
আলো চুপ করে বসে আছে।
টেবিলে গরম গরম খাবার পরিবেশন করে ওয়েটার হাসিমুখে চলে যায়। আলো খাবারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আশেপাশে দেখতে থাকে, সবাই চুপচাপ খাচ্ছে।
সামিন আলোর দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,”খাচ্ছো না কেন?”
আলো টেবিলের দিকে তাকিয়ে একটা খাবারের দিকে তর্জনী আঙ্গুল তুলে বলে,”এটা কি?”
_এটা সাউথ ই*ন্ডিয়ান ফুড। আমরা একটা ইন্ডিয়ান রেস্টু*রেন্টে এসেছি।
আলো আবারও আশেপাশে তাকায়। সেজন্যই সবাইকে বাঙালি মনে হচ্ছে।
প্লেটের খাবারটা নাড়াচাড়া করে আলো বলে,”দেখে তো চিতই পিঠা আর শুকনো মরিচ ভর্তার মতো লাগছে।”
সামিন হেসে ফেলে। তারপর বলে,”এটা ইডলি। আর পাশের তরল টা সাম্বার। খেয়ে দেখো এটা খুবই মজার একটা খাবার। ইন্ডিয়া গেলে এটা আমি খাই, কেনো জানি খুব ভালো লাগে আমার কাছে।”
আলো খাবার টা টেস্ট করার জন্য একটু ভেঙে মুখে দেয়। তারপর চোখ মুখ কুঁচকে বলে,”অতটাও ভালো না। এটার দাম কতো?”
_বাংলাদেশী টাকায় তিনশো পঞ্চাশ টাকা ।
আলো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর বলে ওঠে,”তিনশো পঞ্চাশ? দুটো চিতই পিঠার মতো ইডলি না ফিডলি তিনশো পঞ্চাশ? আর আমাদের ঝিলবাড়ি মোড়ের সোবাহান কাকার চিতই পিঠা আর শুটকি ভর্তা এই খাবারটার থেকেও মজা, পঞ্চাশ টাকায় পেট ভরে খাওয়া যায়।”
সামিন হেসে ফেলে। আলোর দিকে তাকিয়ে শুধু হাসতেই থাকে। আলো সামিনের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে।
হাসি থামিয়ে সামিন বলে,”ঠিকাছে ইডলি ফিডলি খেতে হবে না। ওটা পছন্দ না হলে ফ্রাইড রাইস খাও,নয়তো এটা খাও, এই কাবাবটা খুব মজা।”
_এতো খাবার অর্ডার করেছেন কেন? খেতে পারবেন? এতো অপচয় আমি পছন্দ করি না।
কপাল কুঁচকে গৃহিণীদের মতো বলে আলো।
সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এতোটা সরলতা লুকিয়ে ছিলো কা*ঠিন্যতার আড়ালে সেটা এতদিন সে বুঝতেই পারেনি। কঠিন মনের মেয়েটির আড়ালে একটা সাদাসিধে নারী।
***
খাওয়া দাওয়া শেষ করে তারা আবারও হোটেলে ফিরে যায়।
সামিন তার বেডে বসে ডক্টরদের সাথে কথা বলছে। আলো জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে।
কথা বলা শেষ করে উঠে দাড়ায় সামিন, আলোর দিকে চোখ যেতেই থ’ম’কে যায় সে। খোলা চুল গুলো পিঠে ছড়িয়ে রেখেছে। এই মেয়েটার চুলগুলো সুন্দর। সামিন বারবার মুগ্ধ হয় দেখলে।
আলোর দিকে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে বলে ওঠে,”কি দেখছো?”
আলো ঘুরে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে ওঠে,”কিছুনা।”
কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে সামিন বলে,”একঘেয়েমি লাগছে?”
আলো আবারও সামিনের দিকে তাকায়। সামিন জানে আলো রাজি হবে না, তবুও বলে বসে, “চলো,তোমাকে একটা যায়গা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।”
আলো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সামিন ভেবেছে আলোর সম্মতি নেই তাই সে ঘুরে বিছানার দিকে যাচ্ছিলো তখনই আলো অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”অ’স’ভ্য কোনো যায়গা না হলে যেতে পারি। যেখানে এসব অ’স’ভ্য লোকজন থাকবে না।”
***
আলো চোখ বড় বড় করে চারপাশে দেখছে। সামিন আড়চোখে একপলক আলোকে দেখে বলে,”এটা গার্ডেন অব বে।”
বাচ্চাদের পার্ক। এখানে অ’স’ভ্য লোকজন নেই। ভালো লাগছে বাচ্চাদের দেখে?”
আলো মাথা নাড়ায়। সামিন ম্লান হেসে বলে,”কাল সেন্তোসা আইল্যান্ড নিয়ে যাবো। সিঙ্গাপুরের সবথেকে জনপ্রিয় টু*রিস্ট প্লেস।”
আলো কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটছে। এমন জায়গা বাংলাদেশে নেই। প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটা আর্টি*ফিশিয়াল জঙ্গল। মুগ্ধ হয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
হাঁটতে হাঁটতে একেবারে জঙ্গলের গহীনে চলে যায় তারা। এখানে লোকজনের ভীড় নেই খুব একটা। আলো চারপাশে তাকিয়ে বলে,”ঘোলাটে কেনো চারপাশ?”
_এগুলো ফেইক ফগ।
আলো অবাক হয়ে আবারও আশেপাশে তাকায়। সামিন বলে,”রাইডে চ*ড়তে চাও কোনো? দারুন কিছু রাইড আছে এখানে।”
_আমি বাচ্চা নাকি?
কথাটা বলে আলো সামনে এগিয়ে যায়। পার্কের একজন কর্মচারী একটা অদ্ভুত দেখতে নীল রঙের প্রানী কোলে নিয়ে তাদের দিকে আসছে। আলো কৌতুহলী হয়ে ইংরেজিতে তাকে জিজ্ঞেস করে,”এটা কি? এই প্রানীটার নাম কি?”
কর্মচারী মজার ছলে বলে,”আপনিই বলুন।”
সামিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রানীটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে,”এটা একটা কুকুর। আপনারা পশম তুলে ফেলে,রং মাখিয়ে, মেডি*সিন দিয়ে এমন করে রেখেছেন। এটা এক প্রকার অপ*রাধ। লজ্জা হওয়া উচিত আপনাদের।”
কর্মচারী ভী*ত চোখে সামিনের দিকে তাকায়। আলোও সামিনকে নকল করে কর্মচারীকে বলে,”লজ্জা হওয়া উচিত। একটা প্রানীকে এভাবে ক*ষ্ট দিচ্ছেন।”
কর্মচারী বোকার মতো কুকুরটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন আর আলো সামনে এগিয়ে যায়। কিছুদূর যেতেই তারা প্রযুক্তি দিয়ে নির্মিত কিছু আর্টি*ফিশি*য়াল পশু দেখতে পায়। বাচ্চারা সবাই বিস্ময় নিয়ে সেসব দেখছে। সামিন হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে,আড়চোখে আলোর দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় আলোও বাচ্চাদের মতো চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে দেখছে পশুগুলোকে, যেন ভাবছে ওগুলো আসলই। সামিন মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
সামিনের ফোন বেজে ওঠে। রাহাত ফোন দিয়েছে। বাচ্চাদের শোরগোলের শব্দে অসুবিধা হচ্ছিলো তাই কিছুটা দূরে গিয়েই সামিন কথা বলে নেয়। হঠাৎ আলোর চিৎকারে সামিন চ’ম’কে ওঠে। তাড়াতাড়ি ফোন কে’টে দিয়ে সামনে এগিয়ে যায় ছুটে। আলো আতংকিত মুখ নিয়ে তার দিকেই ছুটে আসছিলো। ছুটতে ছুটতে এসে সামিনের পেছনে নিজেকে লুকিয়ে নিয়ে তার পিঠের দিকের শার্ট খা*মচে ধরে হাঁপাতে থাকে। সামিন আশেপাশে তাকিয়ে নরম গলায় আলোকে প্রশ্ন করে,”কি হয়েছে?”
_সাপ……ওখানে সাপ।
কাঁ*পা কাঁ*পা গলায় বলে ওঠে আলো। সামিন দূরে তাকায়, তারপর হেসে ফেলে, আলোকে আশ্বস্ত করে বলে,”ওটা আর্টি*ফিশিয়াল সাপ আলো।”
আলো কাঁপছে, ধাতস্থ হতে পারছে না, ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে,” আসল হোক বা আর্টি*ফিশিয়াল। প্রানীটা সাপ তো।”
বাচ্চাগুলো আলোর বাচ্চামো দেখে হাসতে থাকে। তাদের অভিভাবকরাও হাসছে। আলো আবারও সামিনের পেছনে লুকিয়ে ফেলে নিজেকে,নিজের আ*তংকিত মুখটাকে।
সামিন হাসতে গিয়েও হাসে না। মহারানী যদি রে*গে যায়!
পর পর বলে ওঠে,”আচ্ছা চলো। আমরা বের হই এখান থেকে। বে-এর সাইড থেকে ঘুরে আসি। সন্ধ্যায় ডিনার সেরে একেবারে হোটেলে ঢুকবো।”
***
দু’জনে চুপচাপ হাঁটছে। বে-এর সাইডেও প্রচুর লোকজন। ঠান্ডা হাওয়া বইছে। আলোর গা শিরশির করতে শুরু করে। কিছুক্ষণ আগেই সন্ধ্যা হয়েছে। যত অন্ধকার নেমে আসছে সিঙ্গাপুর সিটি ততো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। উন্নত দেশটার সৌন্দর্য যেন অন্ধকারেই বেশি ফুটে উঠছে।
সব হাজবেন্ড ওয়াইফ কিংবা প্রেমী যুগল হাত ধরে,একে অপরকে আগলে নিয়ে হাঁটছে। সেসব ঘুরে ঘুরে দেখতে গিয়ে হঠাৎ আলোর গায়ের সাথে একটা লোকের ধা”ক্কা লেগে যায়। লোকটা আলোকে সরি বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। সামিন দাঁড়িয়ে পরে, আলোর হাত ধরে টেনে তার সামনে নিয়ে বলে,”এবার আমার সামনে সামনে হাটো, নয়তো কিছুক্ষণ পরে দেখবো কেউ তোমাকে পকেটে ভরে নিয়ে গিয়েছে।”
আলো লজ্জা পেয়ে যায়। এবার সে সামিনের সামনে সামনে হাঁটছে। সামিন তার বডি*গার্ডের মতো তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পিছু পিছু হাঁটছে।
***
একটা ইটালিয়ান রেস্টু*রেন্ট। একটা অল্পবয়সী মেয়ে চিকন গলায় কিছু একটা গাইছে, ওটা কোনো গান কি না আলো সেটাই বুঝতে পারছে না। কেমন অদ্ভুত শুনতে। মনে হচ্ছে শব্দ করে আড়মোরা ভা*ঙছে, একটা লম্বা আড়মোরা।
সামিন খাবার অ*র্ডার করে আলোর দিকে তাকায়, তারপর বলে,”খিদে পেয়েছে খুব?”
আলো মাথা নাড়ায়। দীর্ঘ সময় দু’জনে চুপচাপ বসে থাকে। রাত তখন বেশ হয়েছে। রেস্টুরেন্ট পুরো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যায় দুজনে বে-এর পাশে অনেকটা সময় নিয়ে ঘোরাঘুরি করেছে।
ওয়েটার এসে তাদের টেবিলে খাবার সাজিয়ে দেয়। তারপর তাদের সামনে দু’টো গ্লাসে একটা পানীয় ধরনের কিছু রাখতেই সামিন কপাল কুঁ’চকে বলে ওঠে,”ওয়েট। এটা কি?”
ওয়েটার হাসিমুখে বলে,”ও’য়া’ইন স্যার।”
আলো হ’তভম্ব হয়ে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায়। সামিন শান্তভাবে ওয়েটারকে বলে,”আমি কি অ’র্ডার দিয়েছি?”
ওয়েটার হেসে বলে,”না স্যার। এখানে রাত দশটার পরে যারা আসে তাদের আমরা দিয়ে থাকি। আপনারা স্পে’শাল গেইস্ট।”
সামিন কোনো সি’ন’ক্রিয়েট না করে ওয়েটারকে বলে,”ঠিকাছে। এটা নিয়ে যান। আমাদের প্রয়োজন নেই। ”
“খাবো না, আমি এই রেস্টুরেন্টে খাবোই না।”
চেঁ’চিয়ে ওঠে আলো। সামিন আলোর দিকে তাকায়। ওয়েটার অবাক চোখে আলোকে দেখছে। আলো চেঁ’চাতেই থাকে,সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”বলেছি না খাবোনা? উঠুন। চলুন এখান থেকে।”
সামিন বুঝতে পেরেছে আলোকে শান্ত করা যাবে না। চুপচাপ বিল মিটিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ওয়েটার ইংরেজিতে বলে,”অসুবিধা কি হয়েছে স্যার? এই খাবার গুলো কি করবো?”
“আপনি গি’লুন বোকারাম।”
কপাল কুঁ’চকে ওয়েটারকে কথাটি বলে সামিন আলোকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।
শহরের একটা ব্যাস্ত রাস্তা ধরে হাঁটছে দুজন । এখানে এখনো প্রচুর লোকজন, রাতের সিঙ্গাপুর উপভোগ করছে সবাই।
সামিন আড়চোখে আলোকে দেখে বলে,”এই আছিয়া! স্ট্রিট*ফুড খাবে? এখানে খুব ভালো চাইনিজ,কোরিয়ান স্ট্রিট*ফুড পাওয়া যায়।”
_হ্যা ঐ ব্যাঙ সে*দ্ধ আর সা*পের কাবাব? না ভাই, মাফ করুন।
সামিন হেসে ফেলে। তারপর বলে,”না না, ওসব না। ভেজ কিছু। খেয়ে মুগ্ধ হবে।”
_আমি কিছু খাবোই না। আমার ব*মি পাচ্ছে।
_আচ্ছা চলো একটা ইন্ডিয়ান রেস্টু*রেন্টেই ঢুকি। প্লিজ চলো। আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে।
আলো সামিনের দিকে তাকায়, লোকটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে হঠাৎ। অনেকটা সা*ফার করছে আলোর জন্য। অথচ কতো শান্ত এবং স্বাভাবিক আচরণ করছে। এতো ধৈর্য্য পুরুষের থাকে?
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আলো নরম গলায় বলে ওঠে,”চলুন।”
একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট খুজে বের করে দু’জনেই রাতের খাবার খেয়ে নেয়। এখন হোটেলে ফিরতে হবে। কাল সকালে ডক্টরের কাছে এপয়েন*মেন্ট।
দু’জনে হাঁটছে। আলো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”আমি সবকিছু নিয়ে একটু বেশি সিন*ক্রিয়েট করি তাই না?”
সামিন আলোর মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকায়, তারপর বলে,”না তো। তবে গালা*গাল টা বেশি দাও।”
আলো নিশ্চুপ । সামিন একটা ক্যা*ব বুক করতে চায়। আলো সামিনকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আমি হাঁটতে চাচ্ছি। পরিবেশ টা ভালো লাগছে।”
সামিন হাসে। দু’জনে আবারও হাঁটতে থাকে। এই রাস্তাটা নিড়িবিলি। এখান থেকে তাদের হোটেলে যেতে বিশ মিনিট সময় লাগবে।
চারপাশে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আলো দাঁড়িয়ে পরে। রাস্তার একপাশে কিছু মেয়েরা অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েগুলো অল্পবয়সী, দৃষ্টিকটু পোশাক পরে, মেইক আপ করেছে। সামিন আলোকে দাঁড়িয়ে পরতে দেখে নিজেও দাঁড়িয়ে পরে। তারপর আলোকে বলে,”কি দেখছো?”
_ওরা এভাবে সেজেছে কেনো? এভাবে দলবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে কেনো? কোনো ফেস্টি*ভ্যাল ওদের আজ?
সামিন আলোর কথায় মেয়েগুলোর দিকে তাকাতেই থতমত খেয়ে যায় । আলো কৌতুহলী দৃষ্টিতে দেখছে মেয়েগুলোকে। সামিন নিচু স্বরে বলে ওঠে,”ওরা ব*দ মেয়ে আলো, চলো এখান থেকে।”
আলো অবাক হয়ে বলে,”ব*দ মেয়ে মানে? কেমন ব*দ মেয়ে?”
_প্র*স্টি*টিউট।
গলার স্বর আরো নিচু করে সামিন বলে। আলো চ’ম’কে ওঠে। এতো সুন্দর সুন্দর মেয়েগুলো বাজে মেয়ে! কত হবে বয়স , আলোর বয়সী মনে হচ্ছে। আলোর হতভম্ব ভাব কাটছে না। সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”ওরা এই কাজ করে কেনো, ওরা পড়াশোনা করে না?”
আলোর শিশুসুলভ প্রশ্নে সামিন আলোর চোখের দিকে তাকায়। তারপর বলে,”পড়াশোনা করে সম্ভবত, পড়াশোনার পাশাপাশি এসব করে।”
_পড়াশোনার পাশাপাশি এসব করবে কেনো? আরো অনেক কাজ আছে। এতোই যখন টাকার দরকার, এরা উদ্যোক্তা হতে পারে না?
সামিনের বড্ড হাসি পাচ্ছে। সে তার হাসি চাপিয়ে রেখে বলে,”উদ্যোক্তা হয়ে কি করবে? তোমার মতো জলপাই আর চালতার আচার বানিয়ে বিক্রি করবে? কিন্তু সিঙ্গাপুরে আচারের চাহিদা নেই আলো।”
_তাহলে অন্যকাজ করবে, খেটে খাবে। সম্মানের কোনো কাজ করবে।
_ওরা এসব করেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে আলো, কেউ কেউ শখের বসেও করে।
আলো চুপ করে থাকে। তার মাথা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে ঐ সব মেয়েদের এমন বি*কৃ*ত রুচিবোধের কথা শুনে।
সামিন বলে,”চলো হোটেলে ফেরা যাক, আরেক সময় ওদের সাথে দেখা হলে তুমি উদ্যোক্তা হবার পরামর্শ দিও ওদের।”
হাঁটতে হাঁটতে দু’জনে অনেক দূরে চলে যায়। প্রায় হোটেলের কাছাকাছি। রাস্তায় কোনো লোকজন নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র তারা দূজন। দূরে কিছু চাইনিজ লোক দাঁড়িয়ে আছে তাদের দিকে তাকিয়ে।
আলোর দিকে কেমন লোভা*তুর দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আলো নিজেকে সামিনের পেছনে লুকিয়ে হাঁটতে থাকে। সামিন বুঝতে পেরে হাতের ফোনটা বন্ধ করে আলোর হাত ধরে, আলো চ’ম’কে উঠলেও শান্ত হয়ে থাকে। তারা দুজন চাইনিজ গ্যাং অতিক্রম করতেই যাচ্ছিলো , তখনই তাদের মধ্যে থেকে একজন ইংরেজিতে বলে ওঠে,”দাঁড়াও।”
সামিন আর আলো দাঁড়িয়ে যায়। লোকগুলো দ্রুতপায়ে হেঁটে সামিনদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে । ওদের মধ্যে যে দলপতি সে সামিনকে ইংরেজি তে বলে,”কোথা থেকে এসেছো।”
_তাতে তোমাদের কি? পথ ছাড়ো।
দলপতির চামচা গুলো আলোকে দেখছে, সবার চোখে মুখে লা*লসা। আলোর গা ঘিন*ঘিন করছে, দাঁতে দাঁত চেপে বাংলায় বলে,”চোখ উ*পড়ে একেবারে গুলতি খেলবো ইঁদুর খেকো লা*ফা*ঙ্গার দল।”
সামিন আলোর দিকে তাকায়। চাইনিজ গ্যাং এর দলপতি কৌতুহলী হয়ে ওঠে, সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”কি বলছে তোমার ওয়াইফ? বলো বুঝিয়ে।”
_ও বলছে, ভাইয়ারা আমাদের যেতে দিন।
দলপতি বলে,”দেবো, যেতে দেবো। আগে ক্যা*শ বের করো।”
সামিন দাঁত খিচিয়ে এগিয়ে দলপতির মুখোমুখি দাঁড়ায়, তারপর বলে,”এখান থেকে কে*টে পর। এক্ষুনি।”
সামিনের হুমকিতে সবাই হাসতে শুরু করে। সাথে সাথে পকেট থেকে চা*কু বের করে আলো আর সামিনকে দেখাতে থাকে।
আলো চ’ম’কে ওঠে।
দলপতি সামিনকে বলতে থাকে,”এটা কি তোমার ওয়াইফ? নাকি কিনেছো আজ রাতের জন্য? কোন দেশের? দাম কত পরেছে?”
কথাটা বলে দলপতি শেষ করতে পারে না সামিন তৎক্ষণাৎ তার নাক বরাবর একটা ঘু*ষি মে*রে দেয়।
দলপতির নাক দিয়ে র*ক্ত ঝরছে। তার সাঙ্গপাঙ্গরা এসে সামিনকে ধরে ফেলে, আলো আ’ত’ঙ্কে জমে যায়, চেঁচিয়ে বলে,”ছেড়ে দাও । ছেড়ে দাও ওনাকে।”
_দেবো। তোমার গোল্ড গুলো আমাদের দিয়ে দাও।
সামিন দুজনের সাথে ধস্তাধস্তি করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে। আলোর ভ*য়ার্ত দৃষ্টিতে দলপতির দিকে তাকিয়ে থাকে। দলপতি বলে,”গোল্ড গুলো দাও। তোমার গলার ওই লকেট টা দাও।”
আলো আ*তঙ্কিত মুখে এদিক ওদিক তাকিয়ে লকেট টা খুলে দেয়। সামিন তখনও ধস্তাধস্তি করে যাচ্ছে। দলপতি বিরক্ত ভঙ্গিতে আলোকে বলে,”তোমার স্বামী শুধু শুধু এতো পরিশ্রম করছে, আমাদের গোল্ড গুলো দিয়ে দিলেই আমরা চলে যাবো।”
আলো সামিনের দিকে তাকায়। দলপতি বলে,”তোমার হাতের গোল্ড গুলো দাও।”
আলো অসহায়ের মতো একবার সামিনকে, একবার দলপতিকে দেখে, তারপর নিজের হাতের বালা দুটোর দিকে তাকায়।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠে,”এগুলো নিবেন না প্লিজ, এগুলো আমার শাশুড়ি মায়ের। এই দুটোর সাথে আমার স্বামীর ইমোশন জরিয়ে আছে।”
চলমান…….