#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে
পর্বঃ- ২৩ ও ২৪
নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখতে পারছেনা ফিহা। ফিরোজ দেশে এসেছে তিনদিন হলো। কিন্তু এখনো সে দেখা করতে ফিহার রুমে আসেনাই। তাই ফিহা শাফখাতের সেই উদ্ভোবনী আলোচনা সভায় দৌড়ে দৌড়ে ছুটে আসে। সবার ভীড় টেলে স্টেজের কাছে আসতেই দেখতে পায় ফিরোজ বসে আছে সবার সামনে। ফিরোজকে দেখে নয়নের জ্বল আর রাখতে পারছিলো না। গালবেয়ে টপাটপ পানি পড়ছে ফিহার।
শাফখাত নতুন এমপি হওয়ার দরুণ ক্ষমতায় বসেছে দুইদিন হলো। আজকের আলোচনা সভা ছিলো গ্রামবাসীর উপলক্ষে। শাফখাত সবার মাঝে ভাষণ দিচ্ছে। চারদিকে হাজার হাজার লোকের সমাগম। সবাই শাফখাতের স্পিস ও দেখা করার জন্য এই ভীড় জমিয়েছে।
আলোচনা সভায় খান বাড়ির সবাই উপস্থিত। শুধুমাত্র মহিলা সদস্যগণ ছাড়া।
প্রায় সাড়ে তিনমাস পর সখাকে কাছ থেকে দেখলো ফিহা। নিজের আবেগকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনা। অবুঝ শিশুর মতো দৌড়ে আসে ফিরোজের কাছে।
ফিরোজ চোখ থেকে কালো সানগ্লাস সড়িয়ে সামনে থাকা প্রেয়সীকে দেখে বিশ্বাস করতে পারছেনা। মনেমনে বলে আমি তো তোমাকে এভাবে দেখতে চাইনাই প্রেয়সী। আমি তোমার মধ্যে শুধু আমার অনুপস্থিতির আভাস দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি নিজের এই কি হাল করছো। ফিরোজ চেয়ার থেকে উঠে।
ফিহা আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলো না। সবার সামনে সখাকে, সামনে থেকে দুই বাহু দ্বারা ফিরোজকে জড়িয়ে ধরলো।
এই অবস্থা দেখে শাফখাত নিজের ভাষণ বন্ধ করে দেয়। খানবাড়ির সবার চোখ কপালে উঠে যায়। সামনে থাকা জনগন মূহুর্তের মধ্যে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি করে। সবাই বলতে থাকে এইখানে এসব কি হচ্ছে। এমপি সাহেবের ভাষণে সার্কাস করতে আসছে। কে কোথায় আছো এক্ষুণি এদের ধরো। জনগণের মধ্যে ধরমার কোলাহল পূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার জন্য কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে এমপি শাফখাত খান। সবাইকে বলে আপনারা চুপ করে থাকুন এইটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার। এরমধ্যে আপনারা হস্তক্ষেপ করবেন না। এইরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। শাফখাত নিজের লোককে ইশারা করে ফিহা আর ফিরোজকে এইখান থেকে বের করার জন্য।
শাফখাতের লোক ফিহাকে টার্চ করতে আসে। ফিরোজ সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে ব্যাস ওইখানেই দাড়ান। আমরা এইখান থেকে যাচ্ছি। ফিরোজ ফিহার বাহু আলগা করে পাজাকোলে করে কোলে নেয় ফিহাকে। ফিহা ফিরোজের গলা ধরে দুই হাত দ্বারা। ফিহা একদৃষ্টিতে ফিরোজকে দেখছে, আর ফিরোজ ফিহাকে কোলে করে নিয়ে হনহন করে স্টেজ থেকে নেমে ফিহাকে গাড়িতে তুলে দেয়। এরপরে নিজে গাড়িতে চড়ে বসে। গাড়ি স্টার্ট করে রওনা দেয় বাড়ির পথে।
ফাহিম ও ফুয়াদ একে অপরকে দেখছে। তারা এই মূহুর্তে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। সিয়াম মাথা নিচু করে বসে আছে। শাফখাত নিঃতেজ হয়ে যায় এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে। শাফখাত তার লোককে ইশারা করে এই খবর যেনো লীগ না হয়। সমস্ত রিপোর্টারকে ধরে আজকের এই মূহুর্তের ক্যামেরাবন্দি যেনো ডিলিট হয়। শাফখাতের লোক ইশারা পাওয়া মাত্রই কাজে লেগে যায়।
শাফখাত ভরা লোকের সামনে আবারো স্যরি বলে। এরপরে বলে আজকের এই মূহুর্ত যেনো কোথায় কেউ কিছু না বলো। কারন এমপি সাহেব চায়না তাদের পারিবারিক ব্যাপার মিডিয়ার লোকের কাছে আলোচনা হয়ে হাসির খোরাক হোক। এরপরে আজকের আলোচনা সভা এখানেই বন্ধ করে দেয়। সবাইকে সালাম দিয়ে খান বাড়ির সবাই যার যার মতো বাড়ির দিকে রওনা হয়।
★★★
কাব্য একটা হোস্টেলে বসে কোমলপানীয় এর পরিবর্তে ড্রিংক অর্ডার করে। ড্রিংক সার্ভ করে চলে যায় ওয়েটার। কাব্য নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা আলোচনা সভায় তার ভালোবাসার মানুষটি আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছে। তাও আবার অন্য কোনো পুরুষ নয়। তাদের ভার্সিটির হার্টথ্রোব লেকচারার ফিরোজ খানকে।
কাব্য ড্রিংক পান করে আর বলে ফিহা আমার ভালোবাসায় কি কম ছিলো? যারজন্য তোমার পিছনে ১.৫ টা বছর সময় দিয়েও তোমাকে পেলাম না। আমার নামের পাশে কোনো ট্যাগলাইন ছিলোনা বলে আমাকে ভালোবাসলে না? ট্যাগলাইন আমারো হবে শুধু অপেক্ষাটা ভালো সময়ের। কি আর বলবো তোমাকে তুমিতো আর আমাকে ভালোবাসো নাই।
তবে তোমার ভূল কি জানো ফিহা? আমার দুঘর্টনায় আমাকে এতোটাই কেয়ার দেখিয়েছিলে ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো? কিন্তু আমি ভূল ছিলাম ফিহা। আসলে এই পৃথিবীতে ওয়ান সাইডেট লাভারদের ম’দ গা’ঞ্জাই আপন হয়? কিন্তু আমি এই পৃথিবীকে ভূল প্রমাণ করবো।
হাতে থাকা ড্রিংকের গ্লাসটি টেবিলে ফেলে হোস্টেল থেকে বেড়িয়ে আসে কাব্য। এরপরে বলে আমারতো গ্রাজুয়েশন পরীক্ষা শেষ। ট্যাগলাইন লাগানোর নতুন অধ্যায় শুরু করলাম আজ। ভালো থেকো ফিহা। আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি বহূদূরে যেখানে গেলে পাবোনা তোমাকে। কাঁদাবে না তোমার স্মৃতি। ভূলে যাবো আজকের পরিস্থিতি। শুধুই এটাই মনে রাখবো ___
❝ আমার প্রেম মজিলো শুধু মরীচিকার সনে ❞
★★★
সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে ফিরোজ। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। পাশে বসে আছে ফিহা। তাদের দুইজনকে এইভাবে দেখে মায়া খান বলে ___
ফিরোজ কি হয়েছে? শাফখাতের আলোচনাসভা থেকে এত দ্রুত বাড়িতে ফিরলি কেনো? কিছু কি হয়েছে? আর ফিহা তোর পাশে বসে আছে কেনো? ওতো সারাদিন রুমে নিজেকে ঘরবন্দী রাখে। তাহলে ওকে কোথায় থেকে ধরে নিয়ে আসলি?
ফিরোজ ও ফিহা কেউ কোনো কথা বলছেনা। ফিহার মুখে বিষাদের ছায়া দেখে ফাতেমা বেগম বলে কি হয়েছে ফিহা? তুই আজকে কি করেছিস? সেইযে সপ্তাহে দুদিন করে ভার্সিটি যাস দুমাস থেকে। তাছাড়া তো তোকে বেড়োতে দেখিনা। আজকে কোথায় গিয়েছিলি। আজকেও কোনো অঘটন ঘটিয়েছিস নাকি?
এরপরে ফিরোজ ও ফিহা দুজনেই চুপ করে থাকে। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। ফিরোজ ফিহাকে কোলে করে গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার পর কোনো কথা বলে নাই দুজনে। বাড়ি থেকে আলোচনা সভা মাত্র পাঁচমিনিটের পথ ছিলো। এরপরে থেকেই দুজনে চুপ ছিলো, এখনো চুপ করেই আছে।
জেবা খান কিছুই বুঝতে না পেরে কিচেনে চা করতে যায়। পারিজাতের এইচএসসি চলছে। তাই নিরিবিলিতে বই পড়ছিলো। কিন্তু মায়া খান ও ফাতেমা খানের চিৎকারে লিভিং রুমে আসে দৌড়ে। এসে দেখতে পায় এই অবস্থা। এরপরে থেকে মাথা চুলকাতে থাকে নিজের নখ দ্বারা।
মায়া খান বলে ফিরোজ তোমরা দুজন এভাবে চুপ করে আছো ক্যান? এভাবে তোমাদের দেখেতো বহুত টেনশনে পড়ে গেলাম।
ফিরোজ খান এবার আড়চোখে ফিহার দিকে তাকায়। দেখতে পায় প্রেয়সীর চোখে জল টপটপ করছে। কিন্তু জলগুলো চোখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গালবেয়ে পড়ছে না। মুখটা পুড়ো বিষাদের ন্যায় কালো করে রাখছে। প্রেয়সীকে অনেকদিন পর এভাবে দেখে নিজেকে অপরাধী মনে করছে ফিরোজ। কারণ ফর্সা গোলগাল টাইপের সুন্দরী মেয়েটা যে তারজন্য নিজের শরীরের এভাবে অযত্ন করছে।
ফিরোজ খান কারো কথার উত্তর না দিয়ে প্রেয়সীকে বলে, নিজের এ কি অবস্থা করছো? সাড়ে তিনমাস পর তোমাকে এভাবে দেখবো কখনো ভাবিনি। চোখের নিচে কালসিটে দাগ। নিজের শরীরের প্রতি অযত্ন। ফর্সা গোলগাল চেহেরাটাকে এভাবে পান্ডুর বানিয়েছো ক্যান? আমি কি মরে গেছি। যে আমার অনুপস্থিতে নিজেকে আজব করে গড়ে তুলছো।
সখার মুখে মরার কথা শুনে কেঁদে ফেলে ফিহা। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফিহা।
ফিরোজ টি টেবিলে থাকা জগ থেকে এক মগ ক্লাস ঢেলে প্রেয়সীর ঠোঁটের সামনে ধরে। এরপরে বলে পানি খাও নাহলে হেচকি থামবেনা।
ফিহা ফিরোজের মুখশ্রীর টা আবারো দৃষ্টিপাত করে। ফিরোজের হাতে থাকা গ্লাসের পানিটুকু খেয়ে ফেলে। সাহস করে কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারছেনা ফিহা। আবারো ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদা শুরু ফিহা।
ফিহার চোখের এক ফোঁটা পানি ফিরোজের হৃদয়ে তোলপাড় হচ্ছে। এরপরে সোফা থেকে একটু কুজা হয়ে চিত করে উঠে,নিজের প্যান্টের পিছন পকেট থেকে রুমাল বের করে। এরপরে ফিহার হাতে দিয়ে বলে চোখের পানিটা মুছে ফেলো ফিহা। তোমার কান্না আমার সহ্য হচ্ছেনা।
ফিহা ফিরোজের রুমাল নিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে। কিন্তু ফিহার অবাধ্য চোখগুলো আজ বাঁধা মানছে না। ক্রমাগত কেঁদেই চলেছে।
ফিরোজ এতক্ষণ নিজের আবেগকে খুব কষ্ট করে সংবরন করে রেখেছিলো। কিন্তু ফিহার চোখের পানি তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। অজান্তেই ফিরোজের চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি পড়ে। খুব দ্রুত হাতের তালু দিয়ে মুছে ফিহাকে বলে তুমি কাঁদা বন্ধ করবে না। আমি আবার চলে যাবো যুক্তরাষ্ট্র?
ফিহা ফিরোজের চলে যাওয়ার কথা শুনে হেচকি তুলে কাঁদা শুরু করে আবার। ফিরোজের দিকে তাকিয়ে চোখগুলো দিয়ে মানা করছে ফিহা। চোখ দিয়েই যেনো বলছে এবার তুমি কোথাও গেলে আমি মারাই যাবো।
প্রেয়সীর করুণ দৃষ্টিপাত ফিরোজকে বারবার দুর্বল করে দিচ্ছে। এরপরে আবারো এক গ্লাস পানি ফিহার হাতে দিয়ে বলে এটা খেয়ে নাও। আমি চলে আসছি। আর কোথাও যাচ্ছিনা।
মূহুর্তের মধ্যে ফিহার মুখ উজ্জ্বল হয়ে আসে। ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আবারো এক গ্লাস পানি শেষ করে ফিহা।
ছেলেমেয়ের এই অবস্থা দেখে মায়া খান ও ফাতেমা খান রীতিমতো শকড।দুইজনেই দুজনের দিকে দেখছে। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বেড়াচ্ছে না দুজনের। পারিজাত বুঝতে পারলো ফিহার আপুর এতদিনের কষ্টের কারণ তাহলে ফিরোজ ভাইয়ার অনুপস্থিতি। এই কথাটি খুব সহজেই বুঝে গেলো পারি।
সদর দরজা দিয়ে ফাহিম খান, সিয়াম খান, ফুয়াদ খান এক সঙ্গে প্রবেশ করে। ফাহিম খান ঢুকতে না ঢুকতেই বলে কি হলো মায়া তোমরা শকড নাকি?
হ্যা ছেলেমেয়ে দুটোর কি হচ্ছে এসব কিছুইতো বুঝতে পারছিনা।
সিয়াম খান মায়া খানের মুখ ভাঙ্গিয়ে বলে বড়ভাবি আমি ভাবতেছি তুমি ছেলের মা হলে কি করে? মানে তুমি তো এতোটাই ছোট নয় এসব বিষয় বোঝার মতো যথেষ্ট বুঝদার তুমি?
মায়া খান বলে কি বলছো সিয়াম ভাই আমি আসলেই কিছুই বুঝতেছি না। ওরা দুজন এরকম করছে ক্যান?
সিয়াম খান ফিক করে হেসে বলে তুমি আর ফাতেমা বিয়াইন হতে যাচ্ছো বুঝলে?
এই কথা শোনামাত্রই মায়া খানের মুখশ্রী কালো হয়ে গেলো।
ফাতেমা ফুয়াদের দিকে তাকায়। এরপরে মনে মনে বলে ফিহা এইটা তুই কি করলি মা? শেষ পযর্ন্ত ফিরোজকেই তোকে পছন্দ করতে হলো?
ফিরোজ আর ফিহা মুহূর্তের মধ্যেই লজ্জায় পড়ে গেলো। কারণ আজকে তারা এভাবে ধরা পড়বে ভাবিনি।
সিয়াম খান ফিরোজকে বলে তা বাবা কতদিন থেকে এসব চলছে? ভার্সিটিতে লেকচারার হিসাবে যোগদানের পর ছাত্রীর ভালোবাসায় হাবুডুবু খাচ্ছো নাকি এই বাড়িতে আসার পর।
চাচ্চুর মুখে এই কথা শুনে ফিরোজ আবার লজ্জায় পড়ে যায়। লজ্জায় দুজনের মুখ লাল হয়ে যায়।
সিয়ামের এমন খোলামেলা কথা শুনে রেগে যায় ফাহিম।সিয়ামকে থামিয়ে দিয়ে জেবাকে ডাক দেয়। জেবা সবার জন্য চা এনে সার্ভ করে। সবাই সোফায় বসে আয়েশী ভাবে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। পারিজাতকে ফাহিম বলে তোমার দাদুভাই আর দাদিকে ডেকে নিয়ে আসো।
পারিজাত দাদা দাদিকে ডাকতে যায়।
মায়া খান বলে দেখো ফিরোজের বাবা তুমি যা ভাবছো তা আমি কিছুতেই ঘটতে দিবো না। তুমি ভালে করেই জানো এই মেয়ের জন্য ডিলনাসিনের অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। জামাই আমার মেয়েকে এখনো মেনে নেয় নাই। আদৌও তার সংসার হবে কিনা সন্দেহ। আজ যদি আমার মেয়েটার কিছু হয়? তার জন্য শুধুমাত্র দায়ী ফিহা। আর ফিহাকে ঘরের বউ করার কথা ভূলেও ভেবো না।
মায়া খানের মুখে এই কথা শুনে ফিরোজের চোখ লাল হয়ে যায়। ইচ্ছে করছে সামনে থাকা জগটি আর গ্লাসটি এক্ষুনি ছুড়ে ফেলে দিই। কিন্তু সবাই সামনে থাকায় ভদ্রতার খাতিরে এমন কিছুই করলো না ফিরোজ।
ফিহা যে বড়আম্মুর মুখে নিজের সম্পর্কে এমন কিছু শুনবে তা আগে থেকেই ধারণা করে রেখেছিলো। এরপরেও ফিহার মাথায় ব্যাথা করে এই কথা শুনে।
ফাহিম খান মায়া খানের উপর রাগীদৃষ্টি নিক্ষেপ করে। এরপরে মায়াকে বলে সববিষয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলার স্বভাব বন্ধ করো মায়া।
মায়া খান রেগে যায় ফাহিমের কথা শুনে। এরপরে বলে ছেলেটা আমি পেটে রাখছি, ছেলেটা আমারো। আমার এ বিষয়ে কথা বলার যথেষ্ট মতামত আছে।
ফাহমিদুল আর জাদেজা খান লিভিং রুমে এসে বলে ফাহিম ডাকছিস ক্যান বাবা?
এরপরে সিয়ামকে ইশারা করে সবটা বলার জন্য। সিয়াম তার বাবার কানে কানে সবটা বলে। তা দেখে জাদেজা বলে আমি ক্যান আসলাম আমাকে কেউ কিছু বলবে না? তখন জেবা খান এসে শাশুড়ীকে সবটা বলে।
দুই মুরব্বি একসঙ্গে মাশাআল্লাহ বলে উঠে।
মায়া খান মুখ কালো করে বলে তিনরাত পালিয়ে থাকা মেয়েকে আমি ছেলের বউ করবো না এই বিয়েতে আমার মত নেই।
ফিরোজের এই মূহুর্তে তার মায়ের উপর রাগ উঠছে। রাগ নিবারণ করতে পারছেনা। দাতে দাঁত চেপে বলে মা ফিহা আমাকে ভালেবাসে বলে অন্যকারো সঙ্গে বিয়ে করতে পারে নাই। এইবিয়ে থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ফিহা পালিয়ে গেছে। ফিহার অন্যকোনো অ্যাটেনশন ছিলোনা।
মায়া খান ছেলেকে বলে তুইতো যুক্তরাষ্ট্র গেছিস তুই কি আর এসব জানিস। ও কোথায় গেছে?
হ্যা মা আমি সব জানি, কারন ফিহাকে এই বিয়ে থেকে পালানোর সাহায্য শাফখাত করেছিলো। আর শাফখাতই হোস্টেল বুক করে দিছে।
তাহলে ফিরোজ ফিহার এই লিটুকে বিয়ে করার নাটক করতে হলো ক্যান? এই নাটক টা না করলেও তো পারতো? তাহলে ডিলনাসিন মানে তোর বোন এভাবে ফাঁসতো না এই বিয়েটায়।
শাফখাত এমন সময় আলোচনা সভা থেকে লিভিং রুমে প্রবেশ করে মায়া খানের এই কথাটি শুনতে পায়। এরপরে শাফখাত বলে বড়আম্মু তুমি এসব খবর জানো না? যারজন্য বাড়াবাড়ি করছো?
কি জানিনা শাফখাত? ও তোরা সবাই এক হয়েছিস এই বিয়েটার জন্য তাইনা?
বড়আম্মু! ছিহহ! তোমার মন এতো কুঠিল হলো কিভাবে? আজকে তোমাকে একটা কথা না বলে পারছিনা। কথাটি না বললে তুমি ফিহার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেই যাবে এভাবে।
ফিহা অনেকক্ষণ পর মুখ খুলে শাফখাতকে বলে থাকনা ভাইয়া এসব বলার দরকার কি?
শাফখাত চোখ শাশিয়ে বলে না ভাবী এসব বলতেই হবে এবার।
ফিহা নিজের অধরে কামড় দেয় দন্ত দ্বারা। মনে মনে বলে এমপি সাহেবের মাথাটা গেছে। সবার সামনে এভাবে লজ্জা দেওয়ার দরকার কি তার?
শাফখাত উপস্থিত থাকা সকলেই লিটু আর ডিলনাসিনের প্রেমের কথা বলে। মূলত ডিলনাসিনের ভালেবাসার পূর্ণতা দিতেই ফিহা এই স্টেপ নিছে।
এই সত্যিটা জানার পর সবাই একটু শকড খায়। ফাহমিদুল খান বলে সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। তাহলে একটা ভালো দিন দেখে ফিরোজ ও ফিহার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করি। এদের দ্রুতই বিয়ে দিতে হবে নাহলে এরা আবার কি না কি অভিমান করে বাইরের লোকের কাছে হাসির পাত্র করবে আল্লাহ জানে।
ফিরোজ মিঠি মিঠি হাসে দাদুর এই কথা শুনে। এবং প্রেয়সীর মুখপানে চায়। মনেমনে বলে যাক আমাকে কিছু করতে হলোনা সবতো প্রেয়সীই করে দিলো?
ফাহমিদুল খান শাফখাতকে বলে রিপোর্টারদের মানা করছো ক্যামেরার দৃশ্য ভাইরাল না করতে?
শাফখাত বলে দাদু এসব নিয়ে চিন্তা করার লাগবে না? সব করে রাখছি আমি।
ফিহা চোখ বন্ধ করে বলে এগুলা আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো? আমার এতদিনের ইচ্ছে এত তাড়াতাড়ি পূরণ কি আসলেই হচ্ছে? তবুও আবার এতো সহজে কেউ বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে না।
মায়া খান ফাহিমকে বলে তাহলে ফাহিম আমার বোনের মেয়েকে যে আনতে চেয়েছিলাম?
ফাহিম বলে তোমার বোনের মেয়েকে আমার ছেলে ভালোবাসে না। আমার ভাইয়ের মেয়েকে ভালোবাসে সো এসব আশা বাদ দাও মায়া।
মায়া এবার চুপ করে যায়।
ফাহিম খান ফুয়াদকে বলে কিরে ভাই তোর আপত্তি আছে নাকি? তোর মেয়েকে আমার ছেলের বউ বানাতে?
আরে ভাইয়া তুমি এসব কি বলছো? যেখানে তোমাদের মত আছে আমার না করার শক্তি আছে। সর্বশেষ কথা হলো ওরা দুজন দুজনকে ভালোভাসে। ভালোবাসার দহনে তো বাবা আমাকে পুড়িয়েছিলো? একই কাজ ওদের সঙ্গে কিভাবে করি?
ফাহিম খান ফাতেমাকে বলে তোমার অমত আছে নাকি ফাতেমা।
না, ভাইজান! আমার গর্ব হচ্ছে কারণ মেয়েটা আমার কাছেই থাকছে। বিয়ের পর অন্য কোথাও যাচ্ছেনা। এটা আমার জন্য ভারী আনন্দের সংবাদ ভাইজান।
সবাই মুচকি হাসি দেয়।
ফিহা আড়চোখে ফিরোজের দিকে চায়। মনেমনে বলে এবার দেখি আমাকে রেখে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্র যান? সখাকে বাঁধনে বেঁধে রাখবো। মনেমনে বলে ক্যান যে একাই একাই এই কষ্ট ভোগ করলাম। ভাবতেও পারিনাই বাড়ির লোক এতো সহজে রাজি হবে।জানলে তো আমি এই বিষয়ে চিল থাকতাম।
ফিরোজ আল্লাহর কাছে লাক লাক শুকরিয়া জ্ঞাপন করে। এতোদিনের পছন্দের মানুষটা অবশেষে তার কাছে ধরা দিছে। মুখে দুষ্ট হাসির রেখা ফেলে ফিহার দিকে একপলক দেখে।
শাফখাত দুজনের এমন চাহনি দেখে সংকেত দেয় উহুম বলে। ফিরোজের কানের কাছে এসে বলে সবাই দেখছে। এইরকম ড্যাবড্যাব ভাবে দুজনে তাকিয়ে থাকিস না?
পারিজাত মনে মনে বলে হলো কি হলো এটা? বিয়েটা এরা এতো সহজে মেনে নিলো? আমি একটু ফ্লিমি ফ্লিমি চেলাম ফিহা আপু আর ফিরোজ ভাইয়ার প্রেমটা। কিন্তু এরা খুব সহজেই এভাবে মেনে নিলো যা সব স্বপ্ন মাটি আমার।
জেবা পারিজাতকে এখানে দেখে বলে পরশু তোমার পরীক্ষা। পড়াশোনা বাদ দিয়ে বড়দের কথার মাঝে কি করছো। যাও পড়তে বসো?
মায়ের এমন কাঠকাঠ গলা শুনে পারিজাতের হালকা রাগ হলো। কিন্তু পারিজাতের মনে পড়লো ম্যাথ পরীক্ষা। এমনিতে ম্যাথ পারিনা, এখন যদি ম্যাথ না করি ডাব্বা ফেইল মারবো। তাই পারিজাত দ্রুত রুমে চলে আসে।
ফাহিম খান বলে, তা বাবা আগামী শুক্রবার বিয়েটা হোক তুমি কি বলো?
মানে আর সাতদিন। সাতদিনে তোমরা পারবে সবরকমের আয়োজন করতে? বিয়েতে কোনো খামতি রাখা যাবেনা কিন্তু। বাড়ির ছেলেমেয়ের বিয়ে বলে কথা!!
শাফখাত খান বলে দাদু এসব চিন্তা করিয়ো না। এমপি সাহেব আছেনা? সব নিজ হাতে করবে। তুমি শুধু মতটা দিয়ে দাও?
আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে আগামী শুক্রবার ফিহা ও ফিরোজের শুভ বিবাহ।
ফিহা আর ফিরোজ বাকিকথা উপেক্ষা করে ছাঁদে চলে আসে। প্রেয়সীর নিজের শরীরের এতো অযত্নের গল্প শুনতে । প্রেয়সী তোমার নিজের সৌন্দর্য নষ্টের কারণ কি তাহলে আমার ভালোবাসা?
চলবে,,,,
®️রিয়া জান্নাত
#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_২৫
হিমশীতল বাতাস বইছে। আজকের তাপমাত্রা খুবই কম। আকাশ মেঘলা মেঘাচ্ছন্ন। ছাঁদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে দুজন মানব – মানবী।কারো মুখে কোনো কথা নেই। দুজনের মাঝে স্থিররতা বিরাজ করছে।
ফিহা ছাঁদে লাগানো গোলাপ গাছের বুলবুলি পাখিটির দিকে নজর দৃষ্টিপাত করে আছে। ফিরোজ রাস্তার পাশে চলা যানগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করে রেখেছে। এতদিনপর দুজনেই কিছু সময় পেলেও কারো মুখে কথা নাই।
ফিরোজ গাড়িগুলোর দিকে নজর সরিয়ে প্রেয়সীর মুখপানে চায়।প্রেয়সীর মুখ দেখেই ফিরোজের কলিজা ছ্যাত করে উঠে। বুকের পা বাঁশে চিনচিন ব্যাথা অনুভূত করে। মনথেকে নিজেকে অনেকবড় কয়েদী মনে হলো।
এরপরে প্রেয়সীকে বলে আমার অনুপস্থিতি তোমার এতো পীড়ার কারণ হবে জানলে, কখনো তোমাকে রেখে যুক্তরাষ্ট্র যেতাম না।
সখার কথা শুনে বুলবুলি পাখিটির দিকে নজর সরিয়ে ফিরোজের মুখপানে চায়। এরপরে মিঠিমিঠি হাসি দেয় ফিহা।
ফিহার এই হাসি রহস্যজনক মনে হলো ফিরোজের কাছে। প্রেয়সীকে জিজ্ঞেস করলো এতো কষ্টে থাকার পরেও মিটিমিটি হাসি কিভাবে আসে? আমাকে কি সত্যি তুমি ভালোবাসি প্রেয়সী?
ফিহার মুখে মিটিমিটি হাসি বিলীন হয়ে যায়। সখার এই প্রশ্ন অদ্ভুত লাগলো ফিহার কাছে। ফিহা নিজের এলোমেলো চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে সখাকে বললো এমন প্রশ্ন করে আমাকে হৃদয় টাকে ক্ষত বিক্ষত করবেন না।
ফিরোজ অনুভব করলো প্রেয়সীর হৃদয়ে শুধু ফিরোজ নামটা বিরাজ করছে। এমন প্রশ্ন প্রেয়সীর হার্টে আঘাত করছে।
ফিহা আর ফিরোজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে একে অপরকে নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ফিরোজের কোমল হৃদয় কেপে উঠলো প্রেয়সী অযন্তে বেড়ে উঠা রুপ দেখে ।
ফিহাকে জিজ্ঞেস করে এত অযন্ত ক্যান করছো নিজের?
ফিহা অভিমানমিশ্রিত স্বরে বলে আপনি যে আমার থেকে অনেক দূরে ছিলেন? তাহলে কারজন্য করবো নিজের যত্ন? কথা ছিলো একবছরের জন্য দূরে যাবেন। জানেন আমার কাছে এই সাড়ে তিনটা মাস সাড়ে তিনবছরের মতো মনে হয়েছে। আপনি একবছর আমার থেকে দূরে থাকলে আমাকে আর খুঁজে পেতেন না?
প্রেয়সীর এই কথা ফিরোজের কানে কর্ণগুহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, প্রেয়সীর অধরে ডানহাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো। এরপরে বললো ___
❝ কিছু কিছু দুরত্ব ভালোবাসার সৃষ্টি করে।
কিছু কিছু দুরত্ব হৃদয় টাকে ক্ষত বিক্ষত করে ।
কিছু দুরত্ব একে অপরের কাছে আসার জন্য হয় । ❞
আমাদের সম্পর্কে এই দুরত্বটা প্রয়োজন ছিলো ফিহা। এই দুরত্বের কারণে আজ আমরা এতো কাছাকাছি। প্রত্যেকের দুরত্বটা হোক ভালোবাসার মিছিল জয়লাভ করার জন্য। এই দুরত্বের কারণে আজকে দুটি দেহতে এক প্রাণ বিরাজ করছে। ভূলেও মুখ দিয়ে এসব কথা বের করবেনা।
সখাকে অনেকদিন পর কাছে পেয়ে সখার আঙুলের স্পর্শের অনুভূতি নিজের অধরে কাঁপুনির সৃষ্টি করে। শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ জাগে। শরীরের লোমকূপ গুলো দাড়িয়ে যায়।
ফিহা দ্রুত ফিরোজের আঙুল নিজের ঠোঁট থেকে সড়িয়ে নেয়। কারণ আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে সখার কাছে দুর্বল হয়ে পড়বে ফিহা।
গোলাপগাছে থাকা বুলবুলিটি উড়িয়ে যায় আকাশের মেঘপানে। বুলবুলিকে উড়তে দেখে ফিহার মন আনন্দ কেঁপে উঠে। নিজেকে বুলবুলি মনে করে কল্পনাতে আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন আকছে আখিতে।
হঠাৎ ফিহাকে চোখবন্ধ করে রাখতে দেখে ফিরোজ ফিহাকে প্রশ্ন করে সামনে থাকা মানুষটিকে দেখতে ইচ্ছে করছে না প্রেয়সী। আমি তোমাকে বিরক্ত করছি এভাবে চোখ বন্ধ করে আমার হৃদয়ে আঘাত করোনা। তোমার কাঠিন্যেতা নিতে না পারলে আবার উড়ে যাবে ওই মুক্ত পাখিট ডানার ন্যায়। তখন আমাকে খুঁজলেও খুজে পাবেনা। হারিয়ে যাবো অতল দেশে।
ফিহা দ্রুত কল্পনা থেকে বেড়িয়ে চোখজোড়া মেলে তাকায় সখার মুখপানে। সখার এই কথা ফিহার হৃদপিণ্ডে কম্পনের অনুভূতি তৈরি করে। বুক মধ্যে ধরাস ধরাস শব্দ করতে শুরু করলো। হৃদপিণ্ডের কম্পন তীব্রতর হলো। খুব সহজে ফিরোজ কর্ণগুহ করলে এই শব্দ শুনতে পাবে।
ফিহাকে এভাবে তাকাতে দেখে ফিরোজ বলে হারাবো না আমি আমার প্রেয়সীকে। প্রেয়সীর জন্য ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি আমার শরীরের সব অঙ্গ প্রতঙ্গে। প্রেয়সীকে হারালে আমি নিজেই হয়ে যাবো অচল। প্রেয়সী যে আমার শরীরের সব জায়গায় বিরাজ করছে।
ফিহা সামনে থাকা মানুষটিকে রহস্যজনক লাগলো। কারণ ঘুঘুর ন্যায় কথাগুলো শুধু পরিবর্তন করছে। এরপরে বুকে সাহস এনে সখার চোখে চোখ রেখে বলে ___
আপনিতো একবছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন? তাহলে সাড়ে তিনমাসে ফিরে আসলেন কেনো?
ফিরোজ ছাঁদের রেলিং ধরে নিচু হয়ে রাস্তার ট্রাফিক নোয়েজ গুলো শ্রবণ করা শুরু করলো। কারণ ফিরোজ বুঝতে পারলো প্রেয়সী ঠিক এখন এইরকম প্রশ্নগুলোই করবে। তাই স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেওয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা।
প্রেয়সীকে বলে একবছর পর ফিরলে ভালো হতো নাকি?
আমিতো জানি দুরত্বটা আপনি এমনি এমনি তৈরি করেন নাই। আমার হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করা আপনার মেইন উদ্দেশ্য ছিলো। কিন্তু সখাকে যতদূর চিনি সেতো আর এই কারণের জন্য শুধু শুধু যুক্তরাষ্ট্র যাবেনা।
ফিরোজ তপ্তশ্বাস ছেড়ে বলে নিজের নামের পাশের নতুন অভিজ্ঞতার ট্যাগলাইন ছিলো মূল উদ্দেশ্য।
আমি জানতে পারি সেই কারণ কি?
ফিরোজ আনমনে ফিহাকে সবটা বলার জন্য তৈরি হলো। এবং সহজভাবেই বলা শুরু করলো। আমি তোমাকে হারাতে চাইনা প্রেয়সী। আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। কিন্তু আমার কাছে দুর্বলতা প্রকাশ করতে চাওনাই। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, তোমার দুর্বলতা প্রকাশ করতে হলে ভার্সিটি থেকে আমাকে দূরে থাকতে হবে। যাতে তুমি আমাকে কাছ থেকে দেখতে না পাও। তাই ভার্সিটি থেকে প্রিন্সিপালের নির্দেশে নতুন সার্টিফিকেট অর্থাৎ তিনমাসের নতুন অভিজ্ঞতা পারমেন্টলি নিজের নামে করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া।
ফিহা তপ্তশ্বাস ছেড়ে বললো তাহলে ভার্সিটির সবাই বলাবলি করছে ক্যান আপনি নাকি রেজিকনেশন নিবেন ভার্সিটি থেকে। এই কথা জানার পর প্রিন্সিপালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম ওনিয়ো দুইমাস আগে সেই আভাস কেন দিলো? বলেন না এগুলো গুজব।
ফিরোজ মুচকি হেসে বললো আমার এই ভার্সিটি থেকে রেজেকনেশন নেওয়ার মূল কারণ তুমি ফিহা?
ফিহা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে ফিরোজের দিকে । কি জিজ্ঞেস করবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা।
ফিরোজ ফিহার দৃষ্টি দেখে বুঝে যায়। ফিহা কি বলতে চায় । তাই সহসা সবগুলো বলা শুরু করলো ফিরোজ।
দেখো শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। সেই পেশাতে অশালীন ভাবে কেউ আঙুল তুলুক আমি চাইনা। আমি তোমাকে এখন বিয়ে করলে চারদিকের মানুষ, ভার্সিটির ছাত্র_ছাত্রী, বাকিসব শিক্ষকরা বলবে স্যার হয়ে আমি ছাত্রী পটিয়েছে। আমি এমন মন্তব্য কারো কাছে নিতে পারবোনা। তুমি এখনো সেই ভার্সিটিতে অধ্যয়নরত। আমি সেই ভার্সিটিতে চাকরি নিয়েছিলাম শুধুমাত্র তোমার কারণে। তোমাকে তো পেয়ে গেছি তাহলে সেইখানে চাকরি করার কোনো মানে হয়না। আর ফিরোজ খানের স্ত্রীর দিকে আঙুল তোলার সাহস এবং ফিরোজকে কাঠগড়ায় দাঁড় করার সাহস থাকবেনা কারো?
তাহলে আপনি কোথায় চাকরি করবেন?
হয়ে যাবে। কোথাও না কোথায়? এগুলা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা প্রেয়সী।
ফিহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে আমি বুঝতেই পারিনাই আমাদের সম্পর্কে ভিলেন ছাড়াই পরিণতি পাবে। আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। সাড়ে তিনমাসের দুরত্বের পর এতো সহজে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন এখনো রয়ে গেলো?
” বলো ”
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর আমার মুখ আপনার দেখতে ইচ্ছে করেনাই। আপনি শাফখাত ভাইয়ার কাছ থেকে এতো জানার পরেও কিভাবে এতো কাঠিন্যে হতে পারলেন?
ফিরোজ মুচকি হাসি দিয়ে বলে। আজ কাঠিন্যে হয়েছি বলে সাতদিন পর পরিণতি পাচ্ছি। আশা করি এসব প্রশ্ন করে আমাকে আর বিব্রতবোধ করবে না। ভালোবাসি তোমাকে প্রেয়সী। আমার হৃদয় জুড়ে শুধু প্রেয়সীর আভাস। হৃদয় জুড়ে শুধুই ফিহা।
ফিহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ছেলেদের দ্বারা এতো কঠিন কঠিন কাজগুলো সহজে হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ইগনোর নামক গুণ থাকে। যা আমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র নাই। আমিয়ো আপনাকে ভালোবাসি সখা।
ফিরোজ এক টুকরো হাসি দিয়ে ফিহাকে আলিঙ্গন করতে দুই বাহু এগিয়ে দেয়।
ফিহা ফিরোজকে বলে বৈধতা বলে একটি বিষয় আছে। সম্পর্কের বৈধতা নিয়ে বাহু এগিয়ে দিয়েন। আমার পালানোর কোনো সুযোগ তখন থাকবে না। ফিহা ফিরোজকে রেখে দ্রুত পালায় ছাঁদ থেকে।
ফিরোজ ফিহার কথায় নিজেকে আহাম্মক বলে দাবী করে। মনে মনে বলে এ আমি কি করলাম ছিহ!! আবার মুখে শয়তানি মেকি হাসির রেখা ফেলে বলে এক সপ্তাহ তো প্রেয়সী কেটে যাবে শ্রীঘই। তখন এভাবে পালালে ঠিক হাতের বাহু দ্বারা চেপে ধরবো তোমায়। আর বলবো ভালোবাসি প্রেয়সী। আমাকে ভালোবাসার কাঙাল না বানিয়ে ভালোবাসা ছড়িয়ে দাও হৃদয়ের গহীন তলে।
★★★
সবার সম্পর্কের তো পরিনতি পাচ্ছে এমপি সাহেব! আমাদের বিষয়টা এবার বাড়িতে তোলার দরকার নয় বলুন? তাছাড়া বাড়িতে রোজই কোনো না কোনো সমন্ধ ঘটক নিয়ে আসছে। কতগুলো সমন্ধ আরো ভাঙ্গলে আপনাকে পাবো এমপি সাহেব।
শাফখাত তিহাকে বলে কেবলতো ক্ষমতায় বসলাম তিহা। আমার এখনো অনেক কাজ বাকি। বিয়ের মতো সিরিয়াস বিষয়টা সময় নিয়ে করতে হয়। আর এই মূহূর্তে আমার কাছে সেরকম সময় নেই। কারণ রাজনীতিতে নড়বড়ে জায়গা গুলো শক্ত করে নিতে হবে। ফিরোজ ভাইয়ার বিয়েটা হোক। তোমার অর্নাস শেষ হোক। ততদিনে আমার সমস্যা গুলো সমাধান হয়ে যাবে। তারপরে নাহয় বিয়েটা করবো তোমাকে?
এগুলা অযুহাতে আর কতদিন। দুইটা বান্ধবী ছিলো আমার। মোহনার বিয়ে হয়েছে সাড়ে তিনমাস। খবর নিয়ে জানতে পারি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হলেও অনেক সুখে আছে সে। ফিহার বিয়ে আর কিছুদিন পর। এদিকে আমি নানান অযুহাতে বিয়ে ভেঙ্গে চলেছি। এভাবে আর পারছিনা এমপি সাহেব। আপনার দ্রুত এই বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত।
শাফখাত খানের ফোনে দল থেকে একজন ইর্মাজেন্সি ফোন করেছে। তিহাকে বলে ব্যস্ততা কাটলেই সব হয়ে যাবে তিহা। আমি ফোনটা রাখছি। আমাকে কল করেছে একজন জরুরি দরকার তার ফোনটা রিসিভ করতেই হবে এখন। আল্লাহ হাফেজ।
তিহা দেখতে পেলো শাফখাত ফোন কেটে দিছে। তিহার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেলো। যখন থেকে শাফখাত এমপি হয়েছে। তিহা আর শাফখাতের সম্পর্কের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যস্ততা।
চলবে,,,,
®️ রিয়া জান্নাত