#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে
®️ রিয়া জান্নাত
| পর্বঃ- ৩৪ |
ন্তু কলের আওয়াজ তিহার কান অব্দি যাচ্ছেনা। পারিজাত করিডোর দিয়ে স্টাডি রুমে যাচ্ছিলো। কলের আওয়াজ পেয়ে তিহার রুমে ঢুকলো। দরজাটা খোলা রেখেই তিহা ঘুমিয়েছে।
পারিজাত ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মোহনা আফা হোয়াটসঅ্যাপে কল করেছে। পারিজাত তিহাকে ডাক দিলো,,
” তিহা ভাবী তিহা ভাবী এই উঠো তোমার বান্ধবী কল করেছে? ”
” তিহা পারিজাতের হাতের স্পর্শে পেয়ে এমপি সাহেব মনে করে তন্দ্রাছন্নে বললো এমপি সাহেব আমার কাছে আরেকটু থাকেন না? ”
” তিহার মুখে এইকথা শুনে পারিজাত রেগে যায়। কর্কশস্বরে বলে আরে উঠ আমি তোর জামাই না? তোর জামাইতো অনেক আগে বেড়িয়ে গেছে। ”
” তিহা অচেতন চোখে মৃদুস্বরে বললো এমপি সাহেব আপনি হঠাৎ ষাঁড়ের মতো করে কথা বলছেন কেনো? আমাকে আরেকটু বুকে টেনে থাকেন না? ”
” পারিজাত তিহার কাছ থেকে হাতটা টেনে নিয়ে বললো? আমার এই হাত কিভাবে এমপি সাহেবের হাত মনে হয় তোর? কত সুন্দর মোলায়েম নরম তুলতুলে একটা হাত? আর তুই আমার ভাইয়ের শক্ত হাতের সঙ্গে তুলনা করছিস? আবার আমাকে ষাড় বলছিস? ”
ততক্ষণে ফোনটা আবার কেটে যায়,,,
” তিহা আবারো বন্ধচোখে হাই তুলে উল্টো কাৎ হলো। তা দেখে পারিজাত মনে মনে বললো শ্লা আমার ভাবীটাও আমাকে পাত্তা দিচ্ছেনা। সারারাত ভাইয়ার সঙ্গে দুষ্টুমি করে এখন বেলা করে ঘুমানো হচ্ছে। থাক ভাই তুই ঘুমা। আমি যাই। ”
” আবারো তিহার ফোনে কল আসলো। পারিজাত দেখলো এবারো কল করেছে মোহনা আফা। পারিজাত ষাড়ের মতো গর্জন করে বললো ভাবী উঠো তোমার কল আসছে। কলটা দরকারি হতে পারে? ”
” পারিজাতের চিৎকারে দ্রুত বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে তিহা? পারিকে দেখে বলে কি হয়েছে পারি? এতো জোড়ে চিৎকার করছো ক্যান? বাড়িতে ডাকাত আক্রমণ করছে নাকি? ”
” পারিজাত বলে ভাইয়া সেই কখন বেড়িয়ে গেছে। সকাল দশটা বাজতে চললো আর তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো? এইটা কি আদর্শ বউয়ের কাজ? কই সকালে উঠে জামাইয়ের জন্য নাস্তা বানাবে। জামাইকে আদর করে খাইয়ে দিবে? তা বাদ দিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো? ”
” পারির কথা শুনে তিহার চোখ কপালে উঠে? কি বলছো পারি দশটা বেজে গেছে? এমপি সাহেব কি খেয়ে বেড়িয়ে গেছে? ”
” হ্যা তোমার এমপি সাহেব কি সকালে খাওয়ার লোক? প্রতিদিনের ন্যায় না খেয়েই বেড়িয়েছে? ভাবলাম বউ আসলে ভাইটার পরিবর্তন আসবে। যত্ন করার মানুষ আসবে। কিন্তু এতো অলস বউকে যে ভাইয়া বিয়ে করবে ভাবিনাই। ”
” তিহা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো আসলেই দশটা বেজেছে। তিহা পারিকে বললো আমাদের ভার্সিটিতে ড্রপ না করেই চলে গেলো তোমার ভাই? দেখছো পারিজাত তোমার ভাই বউয়ের প্রতি কত দায়িত্ব জ্ঞানহীন? গতকাল রাতে ফিরোজ স্যার বলে দেওয়ার পরেও ওনি আগেভাগে পালিয়ে গেলো? ”
” পারিজাত দাঁতে দাঁত চেপে বললো নিজে মনে হয় কত দায়িত্বশীল? ফিরোজ ভাইয়া ফিহা ভাবী ভার্সিটি যাবেনা। তাই ভাইয়া বের হয়ে গেছে? ”
” তিহা মাথার চুল খোপা করে কাকড়া লাগিয়ে বললো কিছু বলবে তুমি? ”
” কিছু বলার নাই। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম তোমার রুমের দরজাটা খোলা। তোমার ফোনের রিং হচ্ছিলো বলে ঢুকে তোমাকে ডাক দিলাম? ”
” কে ফোন করেছে তোমার ভাইয়া? ”
” পারিজাত ভেংচি কেটে বললো তোমার বান্ধবী মোহনা আফা কল করেছে। ”
” সত্যি! ”
” হুম। হোয়াটসঅ্যাপ চেক দাও? ”
” তিহা হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকে দেখলো আসলেই মোহনা তিহাকে পাঁচবার কল করেছে। ”
” তিহা মোহনাকে কল করলো! মোহনা সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা ধরলো। তিহা হাস্যউজ্জ্বল মুখে বললো মোহনা তোরা ঠিকমতো পৌঁছেছিস? ”
” হ্যা, আমরা ঠিকমতো পৌছাইছি। এইতো কানাডা পৌঁছার চারঘন্টা হলো। ”
” আচ্ছা খাওয়া দাওয়া করছিস? ওখানে ফ্যামিলি সহ কোথায় উঠলি? ভাইয়া আগে যেখানে গেছিলো ওইজায়গাতেই গেছিস নাকি? ”
” আরে না অন্য জায়গায় আসছি? খাওয়া দাওয়া এখনো হয়নি? জানিস তিহা এইখানে এসেই কাব্য ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছে। কাব্য ভাইয়া কানাডাতে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য এসেছে। কাব্য ভাইয়া আমাদের থাকা খাওয়া সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিছে? ”
” কি বলিস ওই কাব্য আবার কবে কানাডা গেলো? আমরাতো কিছুই জানতে পারলাম না? ”
” আরে তাকে আমি এখানে দেখে তোর মতো ভীষণ অবাক হয়েছি। জানিস সে লাইফে অনেকটা এগিয়ে গেছে দেখছি! ”
পাশে থাকা পারিজাত কাব্যর নাম শুনে তিহার কাছ থেকে ফোনটা নেয়। এরপরে মোহনাকে বলে মোহনা আফা কাব্য ভাইয়া কই? সে কবে কানাডা গেলো? সে কি ওখানে বিয়ে করছে?
” তিহা পারিজাতের এমন আচরণে বেশ খানিকটা অবাক হয়। ”
” মোহনা পারিজাতকে বলে ঠিক ধরছো পারিজাত বিয়ে নয় তবে বিয়ের চেয়ে কমনয়? এইখানে একটি মেয়ের সঙ্গে থাকে। একরুম একবেড সবকিছু শেয়ার করে থাকে ওরা। তাহলে বলো এইটা কি বিয়ের চেয়ে কম? ”
” অভিনন্দন জানাইয়ো তাঁকে আপু। ”
” আচ্ছা পারিজাত তুমি কাব্যকে কি করে চিনো? ”
” পারিজাতের চোখের কোণে পানি জমে। বামহাতের আঙুল দিয়ে পানিটা মুছে ফেলে বলে,, ওইযে তার এক্সিডেন্টে ফিহা ভাবি সহ একদিন হসপিটালে খাবার নিয়েছিলাম তখন থেকেই চিনি এই আর কি? ”
” তিহা কিছুই বুঝতে পারলো না! পারিজাতের দিকে সন্দেহর চোখে তাকাতেই পারি তিহার হাতে ফোন দিয়ে বললো ভাবি এই নেও কথা বলো। ”
” তিহা ফোনটা হাতে নিয়ে মোহনাকে হ্যালো বললো। পারিজাত দ্রুত রুম থেকে চলে গেলো। তিহা পারিজাতের হঠাৎ সেন্টি খাওয়ার কারণ বোঝার চেষ্টা করলো। ”
” মোহনা তিহাকে ডাক দিয়ে এই তিহা তুই চুপ কেনো? তোর এমপি সাহেব কোথায়? ”
” তিহা মোহনার কথার জবাব দিয়ে বললো আচ্ছা মোহনা কাব্য ভাইয়ার সঙ্গে কি ওই মেয়েটার মাখোমাখো কোনো অবস্থা দেখলি? ”
” আরে হ্যা কাব্য ভাইয়ার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যে কাব্য ভাইয়া ফিহাকে ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে নিয়ে ভাবতো না। সে এখন কানাডায় এক বাঙালি মেয়ের সঙ্গে একই ছাঁদের তলায় থাকে? ইমরান এই কথায় বললো। এখানে আসার আগ থেকে ইমরান এসব জানতো। আমিও স্বচক্ষে তাই দেখলাম? ”
” বেশ ভালোতো। সবাই সবার জীবনে এভাবেই এগিয়ে যাক। কিন্তু বিয়ে না করে এক ছাঁদের তলায় কিভাবে সম্ভব ? ”
” আরে এইটা কানাডা বাংলাদেশ নয়। কানাডাতে সবই সম্ভব। বাদ দে কাকে নিয়ে পড়লি? ফিহার রুমে একটু যা না কথা বলি? ”
” তিহা বিছানা থেকে উঠে ফোনটা বামহাতে নিয়ে মুখের সামনে ধরে বললো দুইমিনিট ধর যাচ্ছি? ”
★★★
পারিজাত নিজের রুমে যেয়ে কাব্যর বাঁধানো একখানা অ্যালবাম রেখেছিলো আলমারিতে। আলমারি থেকে অ্যালবামটি বের করে ফ্লোরে ফেলে দিলো। অ্যালবাম খানা ভেঙ্গে কাচ ছড়িয়ে পড়লো। ছবিখানাতে আগুন ধরিয়ে দিলো। এরপরে কাব্য নিয়ে যে ডায়েরিতে কবিতা লিখেছিলো সেই ডায়েরিটা আগুনে ফেলে দিলো। এরপরে মোবাইল থেকে সোস্যাল সাইট থেকে কাব্যর যতগুলো পিক কালেক্ট করেছিলো সব ডিলিট দিলো? ফেসবুকে যেয়ে কাব্যর আইডি আনফলো করে দিয়ে কাঁদতে লাগলো।
দম বন্ধ বন্ধ অবস্থা হয়ে আসলো পারিজাতের। বুকের মধ্যে অজানা এক ব্যাথা শুরু হলো। মনে মনে বললো,,
❝ আমি কাকে ভালোবেসে বুনলাম স্বপ্ন। সে আগে থেকে হয়ে আছে অন্যকারো। ❞
ফ্লোরে বসে আর্তনাদ করলো। কিন্তু এই আর্তনাদ কারো কান অব্দি গেলো না। কারণ পারির রুমের জানালা দরজা সব বন্ধ।
★★★
” আচ্ছা মোহনা ইমরান ভাইয়া আন্টি আঙ্কেল তোর শাশুড়ী ওরা কই? কেউ থাকলে দেতো কথা বলি? ”
” ফিহা ওরা বুড়ো লোক প্লেন জার্নিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই সকলেই ঘুমাচ্ছে। আর ইমরান ডক্টরের সঙ্গে দেখা করতে গেছে সঙ্গে কাব্য ভাইয়া গেছে! ”
” ফিহা বললো ও? ”
” তিহা বললো এই মোহনা অনেক কথা হলো? এখন তুই বাজার করে কিছু রান্না কর। নাহলে ওখানে না খেয়ে মরবি!”
” আল্লাহ ফিহা, তিহা। কথা শেষ করে ফোন কেটে দিলো মোহনা। ”
তিহা মোহনাকে বলে,,,
” তুই কিছু জানিস? ”
” কি জানবো? ”
” পারিজাত মনে হয় কাব্যকে ভালোবাসতো । কাব্যর অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে আছে। কথাটি শুনে মেয়েটা অনেক কষ্ট পেলো। ”
” ফিহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,, এসব ভালোবাসা কিছুই না। কষ্ট করে লাভ? আমি পারিজাতকে আগেই বলেছি স্বপ্ন বুনো না। কাব্য কখনো তাকে নিয়ে ভাববে না। আজকে এই কথাটি বাস্তবে পরিণত হলো। তবে আমার অনেক ভালো লাগছে। কাব্য নিজের জীবনকে গুছিয়ে নিছে। ”
” কিন্তু পারির মনের অবস্থা টা তো বুঝবি? ”
” বুঝে কোনো লাভ নাই? আমরা ভাবি হিসাবে জাষ্ট শান্তনা টুকু দিতে পারি? বাকিটুকু তাকেই বুঝতে হবে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা। সে তার জন্য ক্যান কষ্ট পাবে? মানুষটাতো তার কোনোদিন ছিলোই না? ”
” ঠিক বলছিস ফিহা। ”
এমন সময় ফিহার ফোন বেজে উঠলো। ফিহা বিছানায় থাকা ওড়নাটা বুকে টেনে নিলো। এরপরে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ফিরোজ ফোন করছে। ফিহা ফোনটা রিসিভ করে হাস্যমুখে বললো, তুমি কি গ্রামে পৌঁছে গেছো?
পাশে থাকা তিহা এই কথাটি শুনে মিঠি মিঠি হাসে।
” কিন্তু ফোনের মধ্যে ফিরোজ এর কোনো কথা আসছে না? কোলাহলের শব্দ ভেসে আসছে। ফিহার মনে হলো অনেক লোকের সমাগমের মাঝে ফিরোজ দাঁড়িয়ে আছে। তাই ফিহা বললো তুমি কোথায়? এতো লোকের মাঝখানে কি করছো? একটু সাইটে এসে কথা বলো না? ”
” ফোনের ওপাশ থেকে এলো এক অপরিচিত পুরুষালীর কন্ঠস্বর। আপনি কি মিসেস ফিরোজ খান? ”
” হুম। ফিরোজ কোথায়? তার ফোন আপনার কাছে কেনো? আপনি কে? ”
” কিভাবে যে বলি ম্যাডাম? কিন্তু বলতে তো হবে? আপনার স্বামী সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এক্সিডেন্ট করেছে। ”
” এই কথা শুনে ফিহার কানগুলো ভারী হয়ে যায়। মুখ থেকে আর আওয়াজ বেড়ায় না। ফিহাকে স্তব্ধ দেখে তিহার কান থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের কানে দিয়ে বলে কে বলছেন? ”
” ডক্টর তখন তিহাকে সবটা বলে। তিহা তখনি চিৎকার দিয়ে বাড়ি কাপিয়ে ফেলে। বাড়ির সবাই দৌড়ে আসে ফিহার রুমে। সবাই এসে বলে বউমা কি হয়েছে, এতো জোড়ে চিৎকার করলে ক্যান? ”
” মা ফিরোজ ভাই সাড়ে নয়টার দিকে এক্সিডেন্ট করেছে। তাকে হসপিটালের নেওয়ার আগেই ___ ”
” তুই চুপ তিহা আমার ফিরোজের কিছু হয়নি। মানুষটা রাতেই আমাকে বক্ষে টেনে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখাইছে। সেসব স্বপ্ন পূরণ না করে ওনি এভাবে যেতে পারেনা। ফিহার চোখের কোণে পানি জমে আছে। বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে ওয়াল থেকে টাঙ্গানো অ্যালব্যামখানা হাতে নিয়ে বলে,, বলোনা তুমি ঠিক আছো? ওরা সবাই ভূল বলছে। এই ফোনকল টা প্রাঙ্ক ছিলো? কিগো তুমি চুপ কেনো? এভাবে পাথরের মতো হয়ে থাকবে। আমাকে সত্যিটা বলে বুকে টেনে নাও না? ”
এমন সময় খান বাড়িতে পুলিশের গাড়ি এলো। সাথে মিডিয়ার অনেক লোক। বাড়ির সব লোক নিচে আসলো। এসে যা দেখলো কস্মিনকালেও এই দৃশ্য দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। মায়া খান অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।
চলবে,,,