#প্রিয়_আসক্তি🔥
তিতলী
পর্ব ২
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
অমানিশার অন্ধকার কেটে পূর্ব আকাশে উদিত হয়েছে রবি।
স্নিগ্ধ রোদের সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আছে ঘরের প্রতিটি কোনা। চোখ খুলে আড়ামোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে প্রিয়তা। পাশেই ঘুমে আচ্ছন্ন বিভা। এই মেয়েটা প্রিয়তার থেকেও ঘুম কাতুরে। ফজরের নামাজের পর সাড়ে সাত টা পর্যন্ত ঘুমানো দুজনেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
প্রিয়তা এলোমেলো চুল গুলো কোনরকম হাতখোপা করে বেঁধে নেই। হাত বাড়িয়ে হালকা চাপ্পড় দিয়ে ডাকে বিভাকে।
:-এই বিভা ওঠ। তোর না কলেজে আজকে ইমপোর্টেন্ট ক্লাস আছে!! লেট হবে কিন্তু।
প্রিয়তার ডাকাডাকিতে চোখ খুলে তাকালো বিভা। চোখ কচলে উঠে বসে। ততক্ষণে প্রিয়তা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ২০ মিনিটে ফ্রেস হয়ে বাইরে আসে প্রিয়তা। ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে একেবারে নিচে নামে।
রোশনি আহমেদ টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করছেন। প্রিয়তাকে দেখে মিষ্টি হাসি টেনে বলেন
:-এসে পড়েছে আমার মিষ্টি মামনি টা। কাল রাতে তো না খেয়ে শুয়ে পড়লি। ডাকলাম এতো আসলি না। নে বোস। খেয়ে নে।
প্রিয়তা একটা চেয়ার টেনে বসে। রোশনি আহমেদ পরোটা আর ডিম ভাজি তুলে দেন প্রিয়তার প্লেটে।
বিভাও ততক্ষণে এসে বসে টেবিলে। সেও খাবার নিয়ে নেই।
একটু পরেই সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে থমকে যায় প্রিয়তা। বিভোর একেবারে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে নামছে। এ্যাস কালারের শার্টের ওপর কালো কালারের স্যুট,কালো প্যান্ট। বাম হাতে একটা ব্ল্যাক রিস্টওয়াচ,চোখে সাদা গোল ফ্রেমের চশমা,, চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা,পায়ে ব্ল্যাক লোফার সু,, একেবারে জেন্টলম্যান সেজে নিচে নামতে থাকা সুদর্শন সুপুরুষ টাকে দেখে প্রিয়তার নিঃশ্বাস আটকে আসে। বুকের ভেতর হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। অদ্ভুত এক অনুভূতিতে যেন মেরুদন্ড বেয়ে নেমে যায় এক ঠান্ডা স্রোত।
বিভোরের থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রিয়তা। মনে মনে ভাবে ( ছিছি প্রিয়তা তুই কিন্তু আজকাল কেমন একটা লুচু হয়ে যাচ্ছিস।এভাবে তাকিয়ে ছিলি এতক্ষণ বেহায়ার মতো।মানছি দেখতে হিরোর মত চোখ ধাঁধানো সুন্দর। কিন্তু লোকটা তো একটা খারুস, রাক্ষস। ভুলে গেলি কি করে)
বিভোর নিচে নেমে প্রিয়তার সামনাসামনি একটা চেয়ার টেনে বসে। রোশনি আহমেদ ছেলেকে জুস,গ্রিন স্যালাড,আর স্যান্ডউইচ এগিয়ে দেন।
বিভোর প্রিয়তার দিকে এক পলক দেখে খাওয়া শুরু করে। এর মধ্যে বিভোরের ফোন বেজে ওঠে। একহাতে ফোনটা রিসিভ করে বলে
:-হ্যা পিয়ুস বল।
পিয়ুসের নাম শুনতেই বিভার কান সজাগ হয়। মুহুর্তে কান মুখ গরম হয়ে লাল আভা ফুটে ওঠে। এই একটা মানুষ যার নামটা শুনলেও লজ্জায় লাল হয় বিভা। ষড়সী এই কন্যা ভালোবাসা কি বুঝতে শেখার পর থেকেই মন হারিয়ে বসে আছে পিয়ুস নামের পুরুষটিতে। যদিও তার মনের খবর থেকে সম্পূর্ণ বেখবর সেই পুরুষটি। তার মনে বিভাকে নিয়ে কি আছে জানে না বিভা কিন্তু বিভার পুরো সত্ত্বা জুড়ে রয়েছে শুধুই ওই পিয়ুস নামের পুরুষটা।
ফোনের ওপাশ থেকে কি কথা আসে কেউ শুনতে পায় না।
এমন সময় বিভোরের গলা শোনা যায়
:-হোক ইম্পরট্যান্ট। তুই মিটিং টা আধাঘণ্টা পিছিয়ে দে। আমি ওদের কলেজে পৌছে দিয়েই অফিসে আসছি।
আমি আসলেই মিটিং শুরু হবে।
:-_________
:-না আছে এখানে। ভালো আছে।
:-_______
:-আচ্ছা অফিসে দেখা হচ্ছে। বায়।
ফোন রেখে খাওয়া শেষ করে উঠে যায় বিভোর। মাকে বলে গটগট পায়ে বাইরে বের হতে হতে বলে
;-তোরা দুজন তাড়াতাড়ি আয়। লেট হচ্ছে।
বিভা আর প্রিয়তা তাড়াতাড়ি করে খাওয়া শেষ করে ফুপিকে বলে বিভোরের পেছন পেছন দৌড় দেয়।
গাড়িতে উঠে বসতেই বিভোর স্টার্ট দেয়। গাড়িতে আর কোন কথা হয়না । কলেজের সামনে গাড়ি দাড় করায় বিভোর। বিভার কলেজ এবং প্রিয় তার ভার্সিটির একটু আগে হওয়ায় নেমে যায় বিভা।
বিভা নেমে যেতেই বিভোর গম্ভীর গলায় বলে ওঠে,,
:-সামনে এসে বোস প্রিয়তা।
প্রিয়তা বিনা বাক্যব্যায়ে সামনে গিয়ে বসে পড়ে। এটাও তার রোজকার রুটিন।
ভার্সিটির সামনে আসতেই গাড়ি দাঁড় করায় বিভোর। প্রিয়তা গাড়ি থেকে নামতে নিলেই আচমকা হাত ধরে থামিয়ে দেয় বিভোর। বিভোরের হাতের ছোঁয়া পেতেই কেঁপে প্রিয়তা। এক পলক বিভোরের চোখের দিকে তাকিয়েই মাথা নিচু করে নেয়। কালকের ঘটনার পর যে তার মনে অভিমানের মেঘ জমেছে। প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে বিভোর।
কিছুটা কাছে টেনে নিয়ে আসে প্রিয়তাকে। হঠাৎ এমন হওয়ার হতচকিয়ে যায় প্রিয়তা। আবারো বুকের ভেতর ধকধক করে ওঠে। বিভোরের একটুখানি ছোঁয়াতেও যেনো অচেনা এক অনুভূতিতে আড়ষ্ঠ হয়ে যায় প্রিয়তা।
বিভোরের ডাকে হুঁশ ফিরে,,,
:-আমার দিকে তাকা প্রিয়।
বিভোরের মুখে “প্রিয়” ডাকটা শুনতেই অদ্ভুত শিহরণ খেলে যায় প্রিয়তার শরীরে। একপলক তাকাতেই দেখতে পায় দুটি সবুজাভ বিড়াল চোখ কেমন ঘোর লাগা চাহনি প্রিয়তার মুখের ওপর নিবদ্ধ।
বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না সে। চোখ নামিয়ে নেই। বিভোর আবারো এক হাত গালে রেখে প্রিয়তার মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে।
:-চোখ নামিয়ে নিলি কেনো? তাকা আমার দিকে!!
প্রিয়তা তাকায়।
:-রাগ করে আছিস আমার ওপর??
বিভোরের নেশা ধরানো কন্ঠে মিইয়ে যায় প্রিয়তা। জড়ানো কন্ঠে জবাব দেয়,,
:-ন,,না।
:-তাহলে রাতে খেতে ডাকলে আসলি না কেনো? সকাল থেকে মুখ গোমড়া করে বসে আছিস কেন?
:-এ, এমনই
:-তোতলাচ্ছিস কেনো তুই?? তুই কি ভয় পাচ্ছিস প্রিয়?
আবারো বিভোরের চোখের দিকে তাকায় প্রিয়তা। আটকে যায় যেনো সেই চোখে।
:-তউই বল কাল তোর দোষ ছিলো না?? কতটা টেনশন দিয়েছিস তোর ধারনা আছে?? কতটা ভয় পেয়েছিলাম জানিস তুই??
বিভোরের কন্ঠেই যেনো ভয় আঁকড়ে ধরে আছে। প্রিয়তা অবাক হয়ে বিভোরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখ দেখেই বুঝতে পারে প্রিয়তা কাল সত্যিই বিভোরের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। কেমন অনুশোচনায় দগ্ধ হয় প্রিয়তার মন। সত্যিই অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে কাল। বিভোরকে ইনফর্ম করা উচিত ছিল তার। মাথা নিচু করে অপরাধীর গলায় বলে,,
:-সরি বিভোর ভাইয়া। আর কখনো এমন হবে না।
প্রিয়তার মুখে ভাইয়া শব্দ টা শুনেই বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেলে বিভোর। তবে মুখে কিছু বলে না।
প্রিয়তার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,,
:-যা। লেট হচ্ছে।
প্রিয়তা আর কিছু না বলে চুপচাপ নেমে যায়। বিভোর প্রিয়তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিটে মাথা এলিয়ে দেয়। ঠোঁট গোল করে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে চলে যায় অফিসের দিকে।
ইন অফিস
__________
বিভোর অফিসে ঢুকতেই এমপ্লয়িরা সব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। বিভোর অ্যাটিটিউড নিয়ে ঢুকতেই সবাই সালাম দিয়ে গুড মর্নিং বলে। বিভোর রিটার্ন জবাব দিয়ে কেবিনে ঢুকে যায়। এমপ্লয়িরা যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
কিছুক্ষণ পরেই কেবিনের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে পিয়ুস।
বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,,
:-খুব বেশি সময় নেই। এখনই মিটিং শুরু করতে বলি!!
:-হ্যা সব রেডি তো??
:-আছে ফিকার নট মেরে ভাই। আমি থাকতে কোন চিন্তা নেই।
বিভোর হাসে। আমার মুখ শক্ত করে বলে,,
:-জানিস তো চৌধুরী গ্রুপের চেয়ারম্যান নাহিদ চৌধুরী আর তার লোকেরা কতটা নিচে নামতে পারে এই ডিলটার জন্য।
পঁয়ত্রিশ কোটি টাকার লাভের এই ডিলটা পেতে যে ওরা তা কিছু করতে পারে সেই বিষয়ে নিশ্চয় তোর ধারনা আছে।
:-সে আবার জানি না!! আজ এতো গুলো বছর ধরে ওরাই আমাদের বিজনেস রাইভাল। ওদের প্রত্যেকটা গতিবিধির উপর নজর আছে আমাদের লোকেদের। ওরা কিছুই করতে পারবে না ডিলটা আমরাই পাবো। তুই নিশ্চিন্তে থাক।
:-আচ্ছা ইন্ডিয়া থেকে মি. লাহিড়ি কি পৌঁছে গেছেন মিটিং স্পটে!! তুই খোঁজ নিয়েছিস??
:-আছে সব কিছু ওকে। এখন শুধু আমরা গেলেই মিটিং শুরু হবে। চল আর লেট করে কাজ নেই।
জরুরি ফাইলপত্র নিয়ে মিটিংএর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যাই বিভোর আর পিয়ুস।
ইন মিটিং স্পট
__________
শহরের একটা নামী দামী রেসর্টের লনে সুইমিং পুলের পাশেই একটা টেবিলে বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব একজন পুরুষ। কফি কালারের স্যুট প্যান্ট পরে গলায় মোটা স্বর্নের
চেইন,,মাথায় টাক চকচক করছে,,মাথার উপরে ছাতা ধরে আছে একটা হ্যাংলা পাতলা লোক। অপেক্ষা বিভোরদের।
বিভোর আর পিয়ুস এগিয়ে গিয়েই হাস্যজ্জল মুখে বলে ওঠে।
:-হ্যালো মিস্টার লাহিড়ী,,,হাউ আর ইউ??
:-হ্যাল্লো ইয়ং ম্যান,,,আই এ্যাম অলওয়েজ ফীট এন্ড ফাইন।
আপ দোনো কেইসা হ্যায়?
:-উইল বি ফাইন। তো মিষ্টার লাহিড়ী আমাদের কম্পানি সম্পর্কে নিশ্চয় ভালো মতো সানভিন করেছেন। ডিল সম্পর্কে এনি ডাউট ??
:-আছে নেহি নেহি। হাম লোগো কা কই ডাউট নেহি হ্যায়।
হাম তো পেহলে ছেই তৈয়ার হ্যায় ইছ ডিল কে লিয়ে। আপ লোক বাস সাইন কার দিজিয়ে।
:-তো ডিল ফাইনাল!!
:-জি পাক্কা।ইছমে কই সাক নেহি।
মিস্টার লাহিড়ির কথা শুনে রহস্যময় বাঁকা হাসে বিভোর।
পিয়ুসের দিকে তাকায়। পিয়ুস ইশারা বুঝতে পেরেই হাতের ফাইলটা এগিয়ে দেয় মি. লাহিড়ির দিকে। আর তাদের ফাইলটা টেনে নিয়ে সাইন করে বিভোরের হাতে দিয়ে দেয়।
সাইন শেষেই উঠে পড়ে বিভোর। মি.লাহিড়ীর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,,,
:-ফের কনগ্রাচুলেশন মিস্টার লাহিড়ী। আমাদের কোম্পানির সাথে এক দীর্ঘ সময় পাড়ি দেয়ার জন্য স্বাগতম। আশা করি আশাভঙ্গ হবে না।
:-আপ লোগো কোন ভি মুবারাক হো।
:এ্যান্ড নাইচ টু মিট ইউ।
:-থ্যাঙ্কইউ এ্যান্ড সেম টু ইউ।
মিটিং থেকে বেরিয়ে পিয়ুস অবাক হয়ে বিভরের দিকে তাকিয়ে বলে ,,,
:-কি ব্যাপার বলতো? তুই হঠাৎ মিটিং এর জায়গা চেঞ্জ করলি কেন??
:-কৌশল ব্রো কৌশল!! আমি জানতাম অফিসের মিটিং ফিক্স করলে চৌধুরী গ্রুপের কোন স্পাই যে কোন ভাবে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে। আর আমি চাইছিলাম না চৌধুরী গ্রুপের কেউ সামান্য টুকু কোন তথ্য কালেক্ট করতে পারে।
:-মাইরি বলছি দোস্ত !!তোর বুদ্ধির তারিফ করতে হয়!!
:-সে যাই হোক!! মা কাল তোর কথা জিজ্ঞাসা করছিল!!কবে যাচ্ছিস ওবাড়ি??
:-আরে ইয়ার!! এই ডিল টার জন্যই তো ছোটাছুটি করতে গিয়ে যাওয়ার সময় পাইনি। আজকে ফ্রি তো চল আজকেই যাই!! তাছাড়া ফুপির হাতের ডেলিশাস খাবার মিস করা যায় নাকি!!
:-হাহাহা,,, তুই পারিসও বটে!! ওই বাড়িতে মে তোর বোন রয়েছে মন রয়েছে সেই কথা তো বলবি না।
মাথা নিচু করে হাসে পিয়ুস।
:-তুই আছিস তো আমার আর চিন্তা কি!!
:-আচ্ছা তুই গাড়ি নিয়ে চলে যা! আমি যাই প্রিয়তাদের ভার্সিটি থেকে পিক করতে হবে!!
:-হোয়াট ইজ দিস ব্রো!! আমি কেন চলে যাবো??
চল দুজন একসাথেই যায়।
অগত্যা দুজন গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় ভার্সিটির সামনে গিয়ে দেখে গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা
বিভরের গাড়ি দেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে নিতেই রাস্তার মাঝখানে গাড়ি আসতে দেখে দাঁড়িয়ে যাই প্রিয়তা। রাস্তা পার হতে তার বরাবরই ভয়। বিভোর সেটা খুব ভালো করেই জানে। গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে জোরে জোরে বলে,,
:-তোকে একা আসতে হবে না। ওখানেই দাঁড়াও আমি আসছি!!
বিভোর সাবধানে রাস্তা পার হয়ে প্রিয়তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। গরমে প্রিয়তার মুখ ঘেমে নাকের ওপর বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রিয়তার হাত থেকে ব্যাগটা নেয় বিভোর। তারপর এক হাতে প্রিয়তার হাত ধরে সাবধানে রাস্তা পার করে নিয়ে আসে।গাড়িতে উঠতেই ভাইকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় প্রিয়তা।
:- ভাইয়াআআআ,,, তুমি কখন আসলে??? কেমন আছো তুমি??
:-আরে আরে শান্ত হ বোনু। আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস??
:-আমিও খুব ভালো আছি ভাইয়া!!
পিয়ুস হেসে বোনকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।
সামনে বসেই লুকিং গ্লাসে এতক্ষণ প্রিয়তার উৎফুল্ল হওয়া হাসিমুখের দিকে তাকিয়েছিল বিভোর। নিমিষেই ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গেছে তার। মুগ্ধ চোখে প্রিয় তার ঠোঁটের হাসি অবলোকন করতে থাকে বিভোর। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে যাই বিভার কলেজের দিকে।
বিভার কলেজের সামনে আসতেই উঁকি দিয়ে কলেজের গেটের দিকে তাকায় পিয়ুস। তাকাতেই দেখতে পাই বিভাকে। গায়ে হালকা আকাশী কালারের থ্রি পিস মাথায় কালো হিজাব আর গরমে ক্লান্ত হওয়া ঘামে ভেজা মুখ। সব মিলিয়ে বেস আদুরে লাগছে বিভা কে।
ভাইয়ের গাড়ি দেখেই বিভা এগিয়ে এসে আনমনে গাড়ির দরজা খুলে উঠে বসতে নিলেই পিয়ুসকে দেখে ছিটকে বেরিয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলল,,
:-সরি আমি দেখতে পাইনি!! এদিকে বিভার বুকের ভেতরে ড্রাম বাজানোর শব্দ হচ্ছে ।যেন বুকের ভেতরে হৃদপিণ্ডটা লাফিয়ে বাইরে চলে আসবে। গরমের উপরে আরো বেশি গরম লাগছে বিভার। হাঁসফাঁস করে বিভা।
বিভাকে এমন অপ্রস্তুত হতে দেখে নেমে যাই পিয়ুষ তারপর বিভোরের সাথে ফ্রন্ট সিটে বসে পড়ে।
এতক্ষণে আটকে রাখার শাঁস ফেলে বিভা। স্বাভাবিক হয়ে প্রিয়তার পাশে বসে পড়ে। মনে মনে ভাবে (পিয়ুস ভাইয়া কি আমাদের বাসায় যাচ্ছে!! আজকে আমাদের বাসায় থাকবে) ভাবতেই পুলকিত হয় বিভা।
ইন হোম
__________
পিয়ুসকে দেখে রোশনি আহমেদের খুশি যেন উপচে পড়ে। এতদিন পর ভাইপোকে কাছে পেয়ে হাসি আনন্দে ভরে উঠেছে বাড়ি।
সবাই ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে বসে। রোশনি আহমেদ টেবিলে খাবার সাজায় তারপর একসাথে সবাইকে নিয়ে বসে গল্পে মেতে ওঠে।
পিয়ুস তার ফুপির সাথে আড্ডায় মেতে ওঠে একপর্যায়ে বলে,,
:- আচ্ছা ফুপি ফুপা কবে আসবে ইউএস থেকে??
বিভোর এর বাবা সাজিদ খান বিজনেস এর কাজে দেশের বাইরেই কাটান বেশিরভাগ সময়। বিভোর দেশেরটা সামলায়।
:-এইতো সামনের মাসের ১০ তারিখের মধ্যেই আসবে হয়তো!!
এদিকে গল্পের মধ্যে প্রিয়তা উঠে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায় প্রিয়তার কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
আস্তে আস্তে সবাই উঠে যায়।রোসনি আহমেদের পায়ে কয়েক দিন ধরে ব্যথা করছে। ব্যথার জন্য তিনি রেস্ট নিতে চলে যান।এ বাড়িতে পিয়ুসের আলাদা রুম আছে। এখানে আসলেই সেই রুমে থাকে।সেও তার রুমে চলে যায়।
প্রিয়তাকে যেতে দেখে আস্তে করে উঠে যায় বিভাও পিছু নেই প্রিয়তার।
বিকেলের গোধূলি বেলায় পিয়ুস ছাদের দিকে যায়। এই সময়টা ছাদের খোলা হাওয়ায উপভোগ করতে ভালো লাগে তার। ছাদে যেতেই চোখে পড়ে বিভা কে।
ছাদে অনেক ফুল ফলের গাছ রয়েছে। পাশে একটা বেশ বড় দোলনাও আছে। সেই দোলনাতেই আনমনে বসে আছে বিভা।
ছাদের সিঁড়ি পেছনের দিকে হওয়ায় বিভাগ পিয়ুসকে দেখতে পায় না। পিয়ুস আস্তে করে বিভার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হালকা কাশি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আনমনে বসে গধুলীর আকাশ দেখছিলো বিভা। পেছনে কারো আওয়াজ পেয়েই চমকে ওঠে। তড়িঘড়ি দাড়িয়ে যায়।
পিয়ুস সেটা দেখে এগিয়ে যায় বিভার দিকে। বলে,,
:-রিল্যাক্স,,এটা আমি। এতো ভয় পাওয়ার কি আছে!!
বিভা আমতা আমতা করে বলল,,
:-আসলে হঠাৎ করে শব্দ পেয়েছি তো তাই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তা ছাড়া কিছু না।
পিয়ুস গিয়ে দোলনার এক পাশে বসে ।তারপর বিভার দিকে তাকিয়ে বলে ,,
:-কাম &সিট ডাউন।
বিভা বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে,,,
বিভার দিকে তুড়ি বাজিয়ে পিয়ুস বলে,,,
:-কি রে বিভাবতি কি ভাবিস? বসতে বললাম তো।
বিভার বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো। পিয়ুসের মুখে এই ঠাট্টা যেনো হিম ধরিয়ে দেয় তাকে। পিয়ুস বিভাকে সবসময় এই নামেই ডাকে। আর কেউ নয়। শুধুই পিয়ুস।এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে সামান্য দুরত্ব রেখে জড়সড় হয়ে বসে।
তা দেখে বিভার আড়ালে হেসে দেয় পিয়ুস। এই মেয়েটা যে তার সামনে এসেই কেমন গুটিয়ে যায় সেটা সে ভালো করেই বুঝতে পারে। পিয়ুস বোঝে না কি কারনে এতো লজ্জা পায় মেয়েটা।
তবে বিভার লজ্জা রাঙ্গা মুখটা দেখতে বেশ ভালোই লাগে তার।
:-পড়াশোনা কেমন চলছে তোর??
:-জি,,ভালো। অতি আস্তে করে বলে বিভা।
:-তো এই বিকাল বেলা একা একা ছাদে কি করছিস তুই??
:-এমনি এসেছিলাম। ভালো লাগে বিকেলে ছাদে আসতে।
:-আচ্ছা। তো কাকে বলছিস কথা গুলো?? ওই গাছ গুলোকে??
পিয়ুসের বাঁকা কথায় থতমত খায় বিভা। আসলে সে পিয়ুসের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কথা বলেছিলো।
:-আমার এদিকে বসে কথা বলছি আর তুই আমাকে তোর সাদা পিঠ দেখিয়ে ওদিকে কি কথা বলছিস??
পিয়ুসের কথায় দারুন চমকে যায় বিভা। কথার মর্ম বুঝেই লজ্জায় লাল হয়ে যায়। তড়িঘড়ি পিঠের উপর চুল গুলো মেলে দেয়। জামার পাঠের দিকে বড় করে কাটা বলে পিঠটা হয়তো বেশিই দেখা যাচ্ছিলো।
পিয়ুস আরো কিছু বলতে নিবে তার আগেই চোখ যায় পাশের বাসার ছাদের দিকে। একটা ছেলে আনাগোনা করছে আর বিভার দিকেই তাকাচ্ছে। এটা দেখেই পিয়ুসের মাথা গরম হয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে ফেলে মুখ শক্ত করে গম্ভীর গলায় বলে।
:-নিচে যা বিভাবতি।
পিয়ুসের গম্ভীর কন্ঠে কেঁপে উঠলো বিভা। ঠিক বুঝতে পারলো না হঠাৎ কি হলো তার। বুঝতে না পেরে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।
বিভাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরো রাগ তরতর করে বেড়ে গেল পিয়ুসের। হুট করে বিভার হাত ধরে টেনে চললো নিচে।
চলবে,,,,,