হঠাৎ প্রণয় পর্ব-২৪+২৫

0
365

#হঠাৎ_প্রণয়
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

চতুর্বিংশ পর্ব

সকাল সকাল মানহার বাসায় এসে হাজির হলাম। আন্টি দরজা খুলে জানালো মানহা রুমে আছে৷

রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই দেখি কাঁথা জড়িয়ে আরামেই ঘুমাচ্ছে সে।

“মানহু?”

আলতো ডাকে কাজ হলো না। পাশে গিয়ে বসে কপালে হাত দিয়ে বুঝলাম জ্বর নেই। আবারো ডাকলাম,
“মানহু?”

চোখ খুলে আমাকে দেখে বলল,
“কিরে এতো সকালে?”
“আটটা বাজে, উঠে পড়।”

হাত উপরে উঠিয়ে স্ট্রেচিং করে আবারো শুয়ে পড়লো। আমি বললাম,
“অয়ন, বিয়েটা হতে দিবে না।”

হুট করে মানহার চঞ্চল চোখজোড়া যেন স্থির হয়ে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাই?”
“হুম।”

মানহা ধীরে ধীরে উঠে বসলো। আমি আবারো বললাম,
“ইত্তাজাকে কালকে কি বলছিলি?”
“কখন?”
“মেডিকেল সেন্টারে, হাত ধরে কিছু তো বলছিলি। আমি যেতেই থেমে গেলি।”

মানহা একটু ভেবে বলল,
“আসলে দাঁড়াতে চাচ্ছিলাম, একটু ধরতে বলেছিলাম আরকি।”

মি°থ্যাটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। মানহা মি°থ্যা বলছে, আমার সাথে মি°থ্যা বলছে। মানহার হাত ধরে বললাম,
“র°ক্তের সম্পর্কের বোনটাও আমার সাথে বে°ই°মা°নি করেছে, অথচ তুই নিরবে পাশে ছিলি। এখন কেন মি°থ্যা বলছিস মানহা?”

মানহার দৃষ্টি নত হলো। একটু শক্ত সুরেই বললাম,
“ইত্তাজার সাথে তোর ঘনিষ্ঠতা আছে?”

কিছু না বলে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। ইত্তাজা আর মানহার সম্পর্ক নিয়ে এখনো ধোয়াশা আছে আমার। ঠিক কেমন সম্পর্ক আর কবে এর সূত্রপাত হলো।

সারাদিনে বেশ কয়েকবার অয়নকে কল করলেও রিসিভ করলো না, কলব্যাকও করলো না। এতো ব্যস্ত কেন সে? আমার জন্য একটুও সময় নেই তার?

রাতের খাবারের পর প্লেট গুছিয়ে রেখে রুমে যাওয়ার সময় বাবার রুমের সামনে এসে থেমে গেলাম। অয়নকে নিয়ে ভিতরে কিছু তো কথা হচ্ছে।

দরজার কাছে গিয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলাম।

বাবা বলছে,
“এ কয়েকমাসে ছেলেটা প্রায় শতখানেক বার আমার অফিসে এসেছে, আজও এসেছিল। এখন তো মনে হচ্ছে তনুর জন্য অয়নই ভালো ছিল।”

“তুমিই তো বলেছিলে রুম্মান গিয়ে ইত্তাজার সাথে বিয়ের কথা বলেছে আর তুমি রিকুয়েষ্ট ফেলতে পারোনি।”

“হ্যাঁ, কথা ঠিক। তবুও..”

আম্মু রেগে বলল,
“কি তবুও? পরশু বিয়ে আর আজ এসব বলছো?”
“দেখো মিতু, সিদ্ধান্ত আমরা অনেক দ্রুত নিয়েছি আর পরে ভাবিও নি এসব নিয়ে। একটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। (একটু থেমে) অন্তত মেয়েটার ভালো থাকার কথা ভেবে হলেও অয়নের সাথেই বিয়ে দেয়া উচিত ছিল।”

দুজনেই চুপ করে আছে। বাবা আবারো বলল,
“ভুল করেছে বুঝলাম, কিন্তু অয়ন তো সেটা অস্বীকার করেনি। বারবার একই বিষয়ের ক্ষমা চাচ্ছে সে।”

আমি মুচকি হাসলাম। তারমানে আমার অজান্তে অয়ন বাবাকে নরম করার বড়বড় হাতিয়ার কাজে লাগিয়েছে। বাবা এখন প্রায় রাজি, শুধু বিয়েটা ভা°ঙার দূরত্ব। আহা, আমার অয়ন।

রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ভেবেছিলাম আজ হয়তো একটা শান্তির ঘুম হবে। কিন্তু হলো না। হবে কি করে? সারাদিনে অয়নের সাথে একবারও যে কথা হয়নি।

সকালে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসা শুরু করেছে। কোনো হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে না, তবুও এতো মানুষ কেন দাওয়াত দিলো?

আপু এসে দরজায় নক করলো। দরজা খুললে নাস্তা করে রেডি হতে বলল, কারণ মেহেদী দেয়া হবে। কাজিনরা সবাই এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে নিজেদের মাঝে।

ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি একটা ম্যাসেজ। ভেবেছিলাম হয়তো অয়ন। কিন্তু না, অয়ন নয়। ইত্তাজা ম্যাসেজ করেছে, দেখা করতে চায়। তারমানে কিছু হয়েছে।

আমি ড্রেস পালটে নিজেকে শান্ত রেখে গেলাম সোজা বাবার কাছে।
“বাবা?”
“জি, বাবা।”
“আমি একটু বাইরে যাবো। (একটু থেমে) মানহার জ্বর।”

বাবা একটু হেসে বলল,
“যাও।”

এতো সহজে রাজি হবে বুঝতেই পারিনি। নাস্তা না করেই বাসা থেকে বেরিয়ে ইত্তাজাকে কল দিলাম।
“ইত্তাজা, কোথায় আপনি?”
“তোমার পেছনে।”

পেছনে ঘুরে একটু দূরেই ইত্তাজাকে দেখলাম। বাইক নিয়ে এসেছে, আমাকে বলল,
“উঠো।”
“কেন ডেকেছেন সেটা বলেন, আমি চলে যাবো।”

ইত্তাজা ভারি সুরে গমগমিয়ে বলল,
“তোমার অয়ন রাগ করবে আমার সাথে বাইকে চড়লে?”

কথাটা শুনে অস্বস্থি হলো। বাইকে উঠে বসলাম। ইত্তাজা দ্রুত নিয়ে আসলো বাসাবো শ°হী°দ আলাউদ্দিন স্মৃ°তি পার্কের কাছে। বাইক থামিয়ে বলল,
“নামো।”

নেমে একটু সরে দাঁড়ালাম। ইত্তাজা হেলমেট খুলে বাইকের লুকিং গ্লাসে চুল ঠিক করছে। আমাকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
“অয়নের সাথে কতদিনের সম্পর্ক?”

চুপ করে রইলাম। ইত্তাজা আবারো বলল,
“অয়নের সাথে ঝ°গ°ড়া, রাগ হয়েছে নাকি যে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে।”
“পরিস্থিতিটাই এমন ছিল।”
“কেমন?”

চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললাম,
“কেমন আবার? বাধ্য হয়েছিলাম।”
“ইশ, পুরাই বাংলা সিনেমা।”

এবারে রাগটা মাথাচাড়া দিলো।
“কিসের সিনেমা? বাবা-মাকে কষ্ট দিতাম? অয়নের বাবা তো আপনার বাবার জন্যই..”

বলে থেমে যেতেই ইত্তাজা কান চুলকে বি°র°ক্তি নিয়ে বলল,
“এসবও বলেছে অয়ন? ফ্যামিলি মেটার বাইরের মানুষের সাথে কেন যে শেয়ার করে? (একটু থেমে) বাই দা ওয়ে, অয়ন জব করে, ভালো মানুষ। ওকে ছেড়ে হঠাৎ আমার সাথে কেন বিয়ে ঠিক হলো?”

চমকে উঠলাম। মাথানিচু করে ফেলতেই বলল,
“বাঙালি বাবা মায়েরাও পারে। সব ঠিক থাকবে, শুধু ছেলে বা মেয়ে প্রেম করলে দো°ষ।”

লোকটার কথায় অত্যাধিক ভণিতা। আবারো বলল,
“দেখো, আমি সবই জানি। এখন কথা হলো অন্যের প্রেমিকাকে বিয়ে করতে আমার রুচিতে বাঁধবে। কিন্তু..”

থেমে যাওয়াটা ভ°য়ের কারণ হলো আমার। ইত্তাজা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“কিন্তু অয়নকে কেন মেনে নেয়নি তা না জানা পর্যন্ত বিয়ে ভা°ঙ°ছি না।”

অয়ন এই লোককে কতটুকু বলেছে আমি জানি না। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়। কিন্তু চুপ থাকলে বিয়ে ভা°ঙ°বে না।

নিচুস্বরে বললাম,
“অয়নকে বাবা খারাপ মনে করে।”

ইত্তাজা কান বাড়িয়ে বলল,
“শুনিনি, জোরে।”

রাগ উঠলেও নিয়ন্ত্রণ করে বললাম,
“বাবা অয়নকে খারাপ মনে করে।”

ইত্তাজা হাসলো। বলল,
“হোয়াই? অয়ন খারাপ আর আমি ভালো?”

আবারো হেসে পকেট থেকে সি°গা°রে°ট বের করে জ্বা°লা°লো। আমি নাক ঢাকলাম। এতোদিন লোকটাকে ভালোই দেখে এসেছি অথচ আজ তার অন্যরকম আচরণ দেখছি।

“দেখো তন্বী, লাস্ট কয়েকমাসে আমি হাজার হাজার মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছি। এখন এসব আমার জন্য কোনো ব্যাপারই না। আর অয়ন ভীড়ের মধ্যেও জেনেবুঝে কোনো মেয়ের গায়ে হাত দেয় না।”

থেমে সি°গা°রে°টের একটা লম্বা টান নিয়ে বলল,
“কলেজ লাইফ থেকে সি°গা°রে°টে আ°স_ক্ত, অথচ অয়ন এসব ছুঁয়েও দেখে না।”

আমার কাছে একটু ঘে°ষে বলল,
“লিপকিস করে দেখোনি?”

ছি, মাত্রাতিরিক্ত হচ্ছে এবারে। সরে গেলাম আমি, ইত্তাজা হাসলো। আবারো আগের মতো আরামে সিগারেটে টান দিলো আর সাদা ধোঁয়া বাতাসে উন্মুক্ত করলো।

“আমি জানি, অয়ন এসব কিছু করবে না। অন্তত বিয়ের আগে তো না। এসব ছাড়াই প্রেম হয়েছে? পানসে লাগেনি?”

ঘৃ°ণা লাগছে ইত্তাজার প্রতি। এতো বাজে ভাষায় কেউ কিভাবে কথা বলতে পারে? আর এই ছেলেকে কিনা মানহা ভালোবেসেছে।

ইত্তাজা আবারো বলল,
“মানহা এখনো টিনেজার রয়ে গেছে। একটু আদুরে নামে ডাকলেই ভালোবাসি বলে ধরে নেয়।”

লোকটার গালে ক°ষি°য়ে দুটো চ°ড় মা°র°তে ইচ্ছা করছে আর বলতে ইচ্ছা করছে যা বলবি সরাসরি বল।

সি°গা°রে°টটা পায়ের নিচে পি°ষে ফেলে বলল,
“আমার আসল রূপটা দেখানো উচিত ছিল এবং বিয়ের আগেই উচিত ছিল। তাই দেখিয়ে দিলাম। (একটু থেমে) বললে না তো অয়নকে কেন খারাপ ভাবে তোমার বাবা?”

চশমা ঠেলে বললাম,
“অন্যের প্রেমিকাকে বিয়ে করতে না আপনার রুচিতে বাঁধবে? তবে বিয়ে ভে°ঙে দেন। আর কোনো কারণ আমি বলতে চাই না।”

ইত্তাজা দাঁত বের করে হাসলো। তারপর একহাতে আমার গাল চে°পে ধরে বলল,
“তোমার সাথে থেকে থেকেই আমার ছোট ভাইটা এতো ধা°রা°লো কথা শিখেছে। (একটু থেমে সরে দাঁড়িয়ে) বিয়ে ভা°ঙ°ছে না, অন্তত আমি তো ভা°ঙ°বো না। অয়ন যদি পারে তো ভে°ঙে দেখাক।”

হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললাম,
“অভদ্রতা কি র°ক্তে মিশে আছে?”
“এ র°ক্ত অয়নের মাঝেও বইছে।”

বাইকে উঠে চোখ টিপে হেলমেটটা পড়ে বলল,
“বাসায় চলে যাও, বাই।”

ইত্তাজা চলে গেল। আমি হেঁটে বাসার দিকে রওনা দিলাম। লোকটাকে কিছু কড়া কথা শুনাতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়ার ভয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বলিনি।

আবারো সে ফিরে এসে বলল,
“তানিমা ভাবিকে দেখতে এসে তোমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম, পেয়েছিলে?”

অবাকের এই পর্যায়টা হয়তো অবশিষ্ট ছিল। যে চিঠি রুম্মান ভাইয়া দিয়েছে বলে ধরে নিয়েছিলাম সেটা ইত্তাজা দিয়েছিল, তাও আমাকে।

“তোমাকে ভালো লেগেছে, তাই দিয়েছিলাম। ওকে, আসছি।”
চলে গেল। কিছুক্ষণ পেছন দিকে তাকিয়ে থেকে আবারো হাঁটা শুরু করলাম।

ফোন বেজে উঠলো, অয়ন কল করেছে।

রিসিভ করে ধ°ম°ক দিয়ে বললাম,
“কাল সারাদিনে কয়বার কল দিয়েছি দেখেছো?”

অয়ন আদুরে সুরে বলল,
“তনুশ্রী, সরি। আসলে অনেক বড় ঝা°মেলায় ফেঁ°সে গেছিলাম।”
“বাসায় কিছু হয়েছে?”
“অনেক কিছু হয়েছে। (একটু থেমে) ইত্তাজা ঝা°মেলা করেছে।”

আমি হাঁটা থামিয়ে দিলাম। বললাম,
“মাত্রই আমার সাথে দেখা করেছে।”
“কি বলেছে?”
“দেখা করো তুমি, কি বলেছো তুমি ইত্তাজাকে?”

অয়ন একটু চুপ থেকে বলল,
“ইত্তাজাকে আমি কিছুই বলিনি, বলার আগেই কাল সকালে এতো বড় ঝা°মেলা হয়েছে।”

কপাল কুঁচকে গেল আমার।
“তুমি বলোনি?”
“না।”
“তবে কি মানহা বলেছে? সবই জানে ইত্তাজা।”
“অফিস থেকে আজকে তাড়াতাড়ি বের হবো। দেখা করিস।”

কল কে°টে গেল। অয়ন যদি না বলে থাকে তবে ইত্তাজাকে কে জানালো এসব? মানহা?

বাসায় এসে দেখি মেহেদী দেয়ার ধুম পড়েছে। আমাকে দেখে আয়েশা আপু বলল,
“যাক, কনে অবশেষে এলো। বসো, বসো।”

প্র°তি°বাদ না করে মেহেদী দিয়ে নিলাম। বাসায় একটা রমরমা পরিবেশ বিরাজ করছে। বিয়ে বিয়ে ভাবটা চলে এসেছে।

সন্ধ্যার দিকে মানহা বাসায় আসলো। আমার রুমে এসে বলল,
“অয়ন ভাই কি বলেছে ইত্তাজাকে?”

আমি আড়চোখে তাকিয়ে বললাম,
“অয়ন তো কিছুই বলেনি। তুই কি কিছু বলেছিস ইত্তাজাকে?”
“না তো।”

মানহা ফোন বের করে একটা ভয়েজ ম্যাসেজ অন করলো,
“মানহামণি, ওহ মণি বললে তো আবার ধরে নিবে আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুনো মানহা, এভাবে ভালোবাসা হয় না। আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর এসব নিয়ে আর ভাববেও না।”

মানহার কান্না দেখে ওকে থা°প্প°ড় মা°র°তে ইচ্ছা করলো, যদিও মারলাম না। এরকম অ°সভ্য ছেলের প্রতি অনুভূতি কি করে আসতে পারে কারো?

রাত প্রায় ৮ টার দিকে অয়ন কল দিলো।
“তনুশ্রী, বাইরে আয়।”

বলাটা যত সহজ, বের হওয়াটা এতো সহজ নয়। তবুও মানহার সাহায্য নিয়ে বের হতে পারলাম। বাসার সামনের রাস্তায় কতগুলো ইট আর শুকনো কাঠ এনে রাখা হয়েছে, বড়বড় হাড়িও চলে এসেছে। কালকের রান্না এখানেই হবে।

প্রথমে অয়নকে খুঁজে না পেলেও পরক্ষণেই দেখি গ্যারেজের ভিতরেই সে দাঁড়িয়ে আছে। দৌড়ে তার কাছে গিয়ে বললাম,
“অয়ন? আজ রাতটাই তো শুধু।”

অয়ন হেসে দিলো। আমার দুগালে হাত দিয়ে বলল,
“এতোদিন অপেক্ষা করেছিস, তবে আজকের রাতটাও অপেক্ষা কর। ইত্তাজা কি বলেছে?”

একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানহার দিকে তাকালাম। মানহা দাঁড়িয়ে ফোন টি°পছে৷

“মানহাকে ভয়েজ ম্যাসেজ দিয়েছে।”
“তোকে কি বলেছে?”

মাথানিচু করে বললাম,
“আমাদেরকে নিয়ে বলেছে। তোমাকে কেন বাসায় মানেনি জিজ্ঞাসা করেছে?”
“কি বলেছিস?”
“তেমন কিছু না।”

অয়ন চুপ করে থাকায় আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“গতকাল সকালে বাসায় এসে কি এক তুলকালাম করলো। আব্বু-আম্মুর সামনে আমার সাথে এমনভাবে কথা বলল যেন আমি তার বউকে কি°ড°ন্যা°প করেছি।”

আমি হেসে উঠতেই বলল,
“রাগ আমারও উঠে গিয়েছিল। বড়-ছোট দেখিনি, দিয়েছি মুখে একটা।”
“ঘু°ষি দিছো?”
“হুম, ধা°ক্কা দিয়ে বের করে দিছি। তারপর যদিও আব্বু আমাকে শান্ত হতে বলে। বড়চাচা কালকে বারবার কল দিতেছিল তাই ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।”

হঠাৎ লোডশেডিং, বাসাবাড়ি অন্ধকার হলো সাথে পুরো গ্যারেজ এক অদ্ভুত আঁধারে ঢেকে গেল। কি হয়েছে কে জানে, তবে জেনারেটরটা চললো না।

অয়নের হাত ধরে বললাম,
“অয়ন?”
“হুম।”

অন্ধকারে তার মুখটা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আমি যে তার খুব বেশি কাছে চলে তা অনুভব করলাম।

“ইত্তাজা তোমার বড়চাচার মতোই ফালতু স্বভাবের।”
“কি করেছে আবার?”
“জিজ্ঞাসা করেছে..”

আমি থেমে গেলাম। কথাটা ঠিক বলে উঠতে পারলাম না। অয়ন আমার নাকে নাক ঘ°ষে বলল,
“বল।”

ওর শার্টটা খা°ম°চে ধরলাম। নিশ্বাসের গতি বেড়ে গেল। হয়তো আমার অবস্থাটা বুঝে সে সরে গেল। আমি তার শার্ট ধরে টে°নে কাছে নিয়ে আসলাম।

“জিজ্ঞাসা করেছে আমরা একে অন্যকে..”

আমি থেমে যেতেই বলল,
“ভণিতা করছিস কেন?”

একহাতে অয়নের গালে হাত দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলটা ওর ঠোঁটে স্পর্শ করালাম। হয়তো সে বুঝেছে আমি কি বলতে চাচ্ছি।

“ওর গালে দুটো চ°ড় দিতে পারিসনি?”
“না।”
“আমার সাথেই ফটর ফটর চলে শুধু?”
“অধিকার তো এখানেই।”

কোমড় জড়িয়ে আরো কাছে নিয়ে গেল। এ কোন লজ্জায় ডুবাতে চাচ্ছে সে আমাকে।

“অয়ন, কাল সব ঠিক হয়ে যাবে তো?”
“ধরে নে সব ঠিক হয়ে গেছে।”
“ইত্তাজা যে বলল বিয়ে ভাঙবে না।”

আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ধৈর্য রাখিস তুই, অধৈর্য হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিস না। এইটুকু অনুরোধ রাখিস।”
“আদেশ করে যাও।”

এতো কাছে চলে আসলাম যে একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনছি। আমি ফিসফিসিয়ে বললাম,
“অয়ন, সময়টাকে বন্ধ করে দাও। আজ রাতটা শুধু আমাদের থাকুক। আমরা কাছে আসলেই সময় কেন দ্রুত চলে যায়?”
“সময়ও একবার থামবে, যখন তোকে নিয়ে যাবো তখন।”
“মুভির নায়কদের মতো আমাকে নিতে এসো।”

অয়ন হেসে বলল,
“সারাদিন মাথায় শুধু মুভিই চলে?”
“হ্যাঁ তো।”
“আচ্ছা, তবে তোর এ ইচ্ছাও পূরণ হবে।”

জেনারেটর চালু হওয়ায় দুজনে একটু সরে গেলাম। কাল কি হবে জানি না। তবে ভালো হোক সবকিছু।

অয়ন মানহার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
“ইত্তাজাকে কি মানহা বলেছে?”
“না।”
“আমিও বলিনি, মানহাও বলেনি। তবে জানালো কে আর কতটুকু জানে সে?”

আমি নিরব রইলাম। অয়ন আবারো বলল,
“আর কিছু বলেছে ইত্তাজা?”
“হুম, তোমার প্রশংসা করেছে।”

অয়ন মাথা নেড়ে হাসলো। আমি বললাম,
“আবার আমার গালে হাত দিয়েছে।”

নিজের গালে হাত দিয়ে বললাম,
“এভাবে ধরেছে।”

অয়ন হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর বলল,
“ইত্তাজা কোনোকালেই মেয়ে°বা°জ ছিলো না। তবে লাস্ট কয়েকমাসে সে পালটে গেছে। এখন ওকে আমিই চিনি না।”
“টাকা হলো আর পালটে গেল?”
“হুম, আচ্ছা এখন যাই তবে?”

ওর হাত ধরে চুপটি করে চেয়ে রইলাম ওর চেহারার দিকে। আমার দুগালে হাত দিয়ে ডানগালে খুব গভীর করে একটা চু°ম্ব°ন করলো। ওর ও°ষ্ঠ°দ্ব°য় গালে লাগিয়েই বলল,
“ইত্তাজার এতো সাহস যে আমার তনুশ্রীর গালে স্পর্শ করে।”

চলবে…..

#হঠাৎ_প্রণয়
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

পঞ্চবিংশ পর্ব

বিকাল চারটায় বর আসবে বলে জানানো হয়েছে৷ ভোর থেকেই বাসার সবাই ব্যস্ত। ঘুম তো আমার এমনিতেও নেই।

সকাল আটটায় নাস্তা করে এসে রুমে বসলাম। কথা বলার মতো পাশে কেউ নেই, মানহাও আসেনি এখনো। চিন্তায় চিন্তায় বে°প°রোয়া হয়ে আসছে আমার মন।

অয়নের নাম্বারে ডায়াল করলাম। দুইবারে রিসিভ হলো।
“অয়ন?”

অয়নের কন্ঠ পেলাম না। তবে বাসার একাধিক মানুষের কন্ঠ শুনলাম।

“ইকরাম, তুমি বাড়াবাড়ি করছো।”

ইকরাম তো অয়নের বড়চাচার নাম আর কন্ঠটা আমি ভুল না করলে আনোয়ার আংকেলের। মানে ওদের বাসায় আবারো গ°ন্ডগোল লেগেছে।

এবারে ইত্তাজার কন্ঠ শুনলাম।
“কাকা, এবারের সমস্যার কারণ আপনার ছেলে। এটা স্বীকার করুন।”
“কি করেছে অয়ন?”
“তন্বীর সাথে ওর সম্পর্ক ছিল, সেটা কেন গোপন করেছে সে।”

এবারে অয়ন বলল,
“ইত্তাজা ভাই, চুপ করো। জন্মের পর থেকে এই পরিবারে ঝা°মেলা দেখেই আসছি। সেই ঝা°মেলায় ঘি ঢালতে চাইনি বলেই চুপ ছিলাম।”

“এখনের ঘি টা কে ঢেলেছে, অয়ন?”

আনোয়ার আংকেল বলল,
“প্লিজ থামো। এতো চেঁ°চামেচি সহ্য হয় না আমার।”

বড়চাচা বলল,
“ইত্তাজাকে কেন মে°রে বাসা থেকে বের করেছিলে অয়ন? তুমিও তো তোমার বাবার মতোই নিমরা শ°য়°তা°ন।”

অয়ন শক্ত কন্ঠে বলে,
“আব্বু, তুমি রুমে যাও। আর ইত্তাজা ভাই আর চাচা আপনারা বের হন বাসা থেকে। ওইদিনের মতো ঘাড় ধরে বের করতে চাই না। ভালোয় ভালোয় বের হয়ে যান। এই মেইন দরজাটা হলো লক্ষ্মণরেখা, এটা পার হয়ে এইদিকে যেন আর না আসেন।”

“বিয়ে কি করে আটকাও তুমি আমিও দেখবো।”
“প্রতিযোগিতা না এটা চাচা। সারাজীবনের সিদ্ধান্ত এমন কম্পিটিশনের মত কেন নিবেন?”
“এটাই কম্পিটিশন।”

একটু পরে অয়ন বলল,
“ইত্তাজা ভাই, তুমি অন্তত ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিও।”

ধুম করে একটা শব্দ হলো। হয়তো দরজা বন্ধ করেছে। চুপচাপ শুনছি আমি। এতো সব ঘটনার জন্য আমিই দায়ী, যদি রুম্মান ভাইয়াকে আগেই সবটা বলে দিতাম তবে হয়তো এতো কিছু হতোই না।

আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যাই। কারণটা হলো জাহানারা আন্টির কথা,
“একটা মেয়ের জন্য সংসারে আবারো অ°শান্তি। ছেলেটাও হয়েছে আমার, যেন দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ে নেই। আজ আবার মেয়েটার বিয়ে ভা°ঙতে যেও না। ওই মেয়ে বাসায় আসলে আমি থাকবো না।”
“আম্মু, হইছে তো অনেক। থামো।”

আন্টি ধমক দিয়ে বললেন,
“কি থামবো? বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও তো মেয়েটাকে তুই বাসায় এনেছিলি। অথৈয়ের বিয়েতে মিতুকে দাওয়াত দিয়েই ভুল করেছি। আমার সাদাসিধা, ভালো ছেলেটাকে ফাঁ°সিয়ে…”

আন্টির কথার মাঝেই কলটা কে°টে গেল। আমার কান্না পেল। টেবিলের উপরে থাকা আমার ডায়েরিটা নিয়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম।

এই ডায়েরিতেই আমার অয়ন আর আমার সবচেয়ে সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো। বারান্দায় বসে গতরাতের ঘটনাগুলোও লিখছি। হয়তো এটাই শেষ লেখা। এমনসময় অয়ন কল দিলো।

কন্ঠকে যতটা পারি স্বাভাবিক করে বললাম,
“অয়ন, বাসায় আবারো ঝা°মেলা হয়েছে?
“এগুলো তো প্রায়ই হয়।”

অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“চাচা তো কোনো কথা শুনতেই রাজি না৷ ইত্তাজা ভাই বুঝবে হয়তো।”
“ইত্তাজা কালকে কি করেছে ভুলে গেছো? তুমি বেশি ভালো মানুষ অয়ন।”
“এতোটাও না, শুধুমাত্র বাবা অসুস্থ বলে…”

ওর কথার মাঝেই বললাম,
“আন্টি আমাকে কোনোদিনও মেনে নিবে না। আমার কারণে তোমার সাথে আন্টির দূরত্ব হবে।”

অয়ন একটু চুপ করে থেকে বলল,
“হইছে তো, এবারে একটু থাম।”
“বি°র°ক্ত হচ্ছো তুমি?”
“না, কিন্তু সবাই সকাল থেকে যা খুশি তাই আমাকে বলছে।”

রাগ দেখিয়ে বললাম,
“তবে এসো না আমাকে নিতে, তবে কেউ আর কিছু তোমাকে বলবে না।”

অয়নের কন্ঠ আরো নরম হয়ে গেল,
“তনুশ্রী, কালকে আমি বলেছিলাম তোকে ধৈর্য রাখতে। কেন অধৈর্য হচ্ছিস?”
“আর তো মাত্র কিছুক্ষণ…”

কথা শেষ না করেই কান্না করে দিলাম। অয়ন চুপ, আমি কাঁদছি আর থেমে থেমে ফুঁপিয়ে উঠছি।

অনেকটা সময় পর অয়ন বলল,
“তনুশ্রী আমার, শান্ত হ। এসব তো আমাদের জীবনেরই অংশ৷ এরকম ভালো-খারাপ চক্রাকারে চলতে থাকে। পুরোটা জীবন একরকম হবে না। আজ যদি ইত্তাজার সাথে তোর বিয়ে হয়েও যায় তবু মেনে নিতে হবে এটাই নিয়তি।”

আমি চুপ করে গেলাম। কান্নাটাও বন্ধ হয়ে গেল। অয়ন যেহেতু বিয়ে নিয়ে সংশয়ে আছে তাই আমার চিন্তাটা আরো বাড়লো।

“তনুশ্রী, যা হবে সবটা আগে থেকেই নির্ধারিত। জন্ম, মৃ°ত্যু, বিয়ে আমাদের হাতে নেই। বিচ্ছেদ তো সকলের জীবনেই থাকে। কখনো সাময়িক আর কখনো চিরস্থায়ী।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“এখন বলবো ধৈর্য রাখ।”

হাত পা কাঁপছে আমার। অয়নের কথাগুলো গুলিয়ে ফেলছি।

“ইকরাম চাচা আগে থেকেই বোধহয় সব জানতো আর জেনেশুনেই বিয়েতে মত দিয়েছে।”
“কিভাবে বুঝলে?”
“শুনলি না, কি বলল। বিয়েটা তার কাছে কম্পিটিশন।”

চোখ মুছে বললাম,
“কিন্তু উনি কিভাবে জানলো?”
“সেটা জানি না। আমি শিউর নই আর শিউর হয়েও লাভ নেই।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,
“অয়ন, আমার তোমাকেই লাগবে।”
“পাগলামি করিস না।”

কল কে°টে দিলাম। আমি কাঁদছি না। চোখে বড় বাঁধ তৈরি করতে ইচ্ছা করছে৷

ড্রইংরুমে বাবার কাছে গিয়ে বুঝলাম বাবা খুব ব্যস্ত। শুধু বাবা নয়, মামা, খালু, চাচ্চু, ফুপা সবাই ব্যস্ত। বিয়ের জন্য এতো সমারোহ, অথচ বিয়েটাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে।

গোসল করে আমাকে বিয়ের শাড়িটা পড়িয়ে দেয়া হলো। মূলত বিয়ের দুটো শাড়ির মধ্যে কোনটাতে ভালো লাগবে সেটাই দেখছে আমার বোনেরা। মানহাকে মিস করছি, সে এখনো আসেনি।

তানিমা আপু থেকে থেকে কথা বললেও আমি কোনো জবাব দিলাম না।

ফারিহা আপুকে ডেকে বললাম,
“আপু, আমাকে একটু একা থাকতে দিবে? ভালো লাগছে না।”
“কি হয়েছে? শরীর খারাপ?”
“না, প্লিজ একা থাকতে দাও কিছুক্ষণ।”

ফারিহা আপু সবাইকে বুঝিয়ে বাইরে নিয়ে গেল। তানিমা আপু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দেখেও না দেখার ভাণ করলাম। আপু চলে গেল।

রুমে চুপচাপ বসে আছি। এরমধ্যে অয়ন আবারো কল দিলো। রিসিভ করে গাড়ির শব্দ পাচ্ছি, মানে সে বাসার বাইরে আছে।

অয়ন শান্ত গলায় বলল,
“আমি গাজীপুর যাচ্ছি, তনুশ্রী।”
“কি বলছো তুমি? কেন?”

উত্তেজনায় একপ্রকার চেঁ°চিয়ে উঠলাম আমি। অয়নের সেই শান্ত সুর রইলো।
“কারণ গভীর। বিয়ের সময়ের আগে না ফেরার সম্ভাবনাই বেশি।”

চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করলো। কিন্তু কাঁদলাম না।

“এমন করো না অয়ন। তোমার তনুশ্রী ম°রে যাবে।”
“তনুশ্রী তো এখন আর আমার নেই।”

কথা থেমে গেল, হুট করে কলটাও কে°টে গেল। কি শুনলাম আমি? কি হচ্ছে এসব আমার সাথে? গতকাল অয়ন বলল সব ঠিক হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগেও তো আমাকে ধৈর্য রাখতে বলল অথচ এখন এ অবস্থা, তাও এমন হঠাৎ করে। কেন?

অনেকটা সময় একা একা রুমে কা°টালাম। অয়নকে ছাড়া বাকিটা জীবন কিভাবে কা°টাবো? কুড়ি বছরে কারো মৃ°ত্যু হয় না? হয় তো। তবে আমার কেন হচ্ছে না?

আমার ডায়েরি আর অয়নের দেয়া চিঠিটা নিয়ে নিচে নেমে আসলাম।

এটা হতে পারতো তনুশ্রীর ডায়েরি। সে সব প্রেমিকের জন্য নিদর্শন হতে পারতো যারা কথা দিয়ে কথা রাখে না, সে সব পুরুষের জন্য শিক্ষার হতে পারতো যারা তাদের ভালোবাসাকে আগলে রাখতে পারে না। সে সব মেয়েদের জন্য উদাহরণ হতে পারতো যারা অপেক্ষা করতে পারে না, বেকার প্রেমিকের অবস্থার কথা বুঝে না। কিন্তু তা হয়নি। তা হতে পারেনি এটা ডায়েরীর ব্য°র্থতা নয়, এ তো ডায়েরি লেখিকার ব্য°র্থতা।

বড় চুলাটা সদ্যই জ্বা°লানো হয়েছে। এখানেই আজকের অনুষ্ঠানের জন্য কোনো একটা পদ রান্না হবে। এখনো হাড়ি চাপেনি। রান্নার স্থানে আমাকে আসতে দেখে অবাক হয়েছে অনেকে, এখনো যে আমার পড়নে বিয়ের বেনারসি। বাবুর্চি আংকেলরা অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে আবারো নিজের কাজে চলে গেলেন, পাছে বাবার ধমকের ভ°য়ও তো আছে।

ডায়েরিটা ছুঁড়ে ফেললাম আ°গুনে। দপ করে আ°গুন জ্ব°লে গেল। দা°উ°দা°উ করা আ°গুনের সাথে পু°ড়ে গেল আমার প্রেমকথন। আমার ভালোবাসার ছোট ছোট অংশগুলো দিয়েই আজ বিয়ের রান্না হবে। চিঠিটাও ছুঁড়ে ফেললাম। অয়নের চাকরি পাওয়ার খবরটা তো ওই কাগজের টুকরোই নিয়ে এসেছিল।

দুচোখ আর কত বাধা মানবে, আর কত থেমে থাকবে লোনা জল। চোখ ছেড়ে, গাল বেয়ে টুপটুপ করে পড়ছে ওরা। মুছবো না আর, বাধাও দিবো না। এ জল মুছেও কোনো লাভ নেই। এ আবারো পড়তে থাকবে। ততক্ষণ পর্যন্ত পড়বে যতক্ষণ না ওই আগুনে আমি ভষ্ম হচ্ছি অথবা অয়ন আসছে।

বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছি আমি। কি করছি নিজেও হয়তো বুঝতে পারছি না। যখন বুঝলাম ততক্ষণে আমার ডায়েরিটা পু°ড়ে গেছে, অয়নের স্মৃ°তিচিহ্ন হারিয়ে গেছে।

চুলায় হাত দিতে গেলে তানিমা আপু দৌড়ে এসে আমাকে ধরে সরিয়ে নিয়ে বলে,
“তনু, কি করছিস?”

আমি হাত ছাড়িয়ে নিলাম। কিছুই বললাম না। রাগটা যে আপুর উপর আরো বেশি।

ভিতরে যেতে নিয়েই রুম্মান ভাইয়ার সামনে পড়লাম। হঠাৎ করে সামনে চলে আসায় বেশ চমকে উঠলাম। আমার চেহারার দিকে একটু তাকিয়ে আপুর দিকে তাকালো। আমি ভাইয়াকে পাশ কাটিয়ে বাসায় চলে আসলাম, আপুও আমার সাথেই এলো।

কিছুক্ষণ পর ভাইয়া বাসায় ঢুকেই আমাকে বলল,
“তন্বী, একটু বাইরে চলো তো।”

আমি কিছু বলার আগেই তানিমা আপু বলল,
“কেন? মাত্রই তো এলাম।”
“তানিমা, তুমিও আসো। এতো প্রশ্ন করো না।”

সকলের মাঝে দিয়ে দুজনে ভাইয়ার সাথে বেরিয়ে গেলাম। আমাদের নিয়ে ছাদে আসলো ভাইয়া।

আপু বলল,
“কি হয়েছে, রুম্মান?”

ডানহাতে ভ্রু চুলকে ভাইয়া বলল,
“অয়নের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে, তন্বী। অথচ এ খবরটা গোপন রেখে তুমি তারই কাজিন ইত্তাজাকে বিয়ে করছো? কেন?”

ভাইয়া ঠিক কোথা থেকে খবর পেয়েছে আমি জানি না। তবে আজ যে অনেককিছু হওয়া বাকি সেটা ভালোই বুঝতে পারছি।

তানিমা আপু বলল,
“রুম্মান, ও আবেগের বশে..”

আপুর কথার মাঝেই ভাইয়া ধ°ম°ক দিয়ে বলল,
“তানিমা, চুপ করো। সবটা তুমি জানতে, জেনেশুনে কেন এমনটা হলো?”

আপু মাথানিচু করলো। আমি চোখ মুছে বললাম,
“ভাইয়া, শান্ত হন। বিষয়টা গুরুতর আমি জানি। আমি আগেই আপনাকে সব জানাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপু আর আম্মু আমাকে নিষেধ করেছে।”

ভাইয়া আড়চোখে আপুকে একবার দেখে বলল,
“কেন?”
“আপনার অপমান হবে বলে। আপনার অপমান হলে আপুর সাথে আপনার সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে।”

ভাইয়া কপাল কুঁচকে বলল,
“এখন কি সম্পর্কের উন্নতি হবে মনে হয়? (একটু থেমে আপুর দিকে তাকিয়ে) তন্বী, বাসায় যাও।”
“জি।”

ছাদের দরজার কাছে আসতেই ভাইয়ার একটা কথা শুনলাম,
“আমাকে কি মনে করো তুমি, তানু? সামান্য বিষয় নিয়ে আমি তোমাকে কষ্ট দিবো, ভাবলে কি করে?”

পিছনে ফিরে দেখি একটা টবে জোরে লা°থি দিলো ভাইয়া। মুহূর্তের মধ্যেই টবটা ভে°ঙে গেল। আপুকে আমি আগেও বলেছিলাম কোনোকিছু অপ্রকাশিত থাকবে না।

সিঁড়ির কাছে এসে আবারো ফিরে গেলাম।
“ভাইয়া?”

ভাইয়া আমার দিকে তাকালো। একটা ঢোক গিলে বললাম,
“একটা অনুরোধ করবো, ভাইয়া?”

উনি মাথা নাড়লেন। আমি নাক টেনে বললাম,
“প্লিজ, বিয়েটা ভে°ঙে দেন।”
“অয়ন আসবে না?”
“উহু, অয়ন গাজীপুর যাচ্ছে৷ কেন আমি জানি না।”

ভাইয়া কিছু বললেন না। আমি নিজে থেকেই ইত্তাজার বলা সব কথা আর ওর ব্যবহার ভাইয়াকে বলে দিলাম। যতই বলছি, ততই তার কপাল কুঁচকে যাচ্ছে।

“তন্বী, ইত্তাজা একটু রাগী, এটা আমি জানি। ওর সি°গা°রে°টের অভ্যাস আছে তাও জানি। কিন্তু মেয়েদেরকে ও অনেক সম্মান করে। তিতুমীর কলেজে আমিও পড়েছি, কাছ থেকে দেখেছি ওকে। সব বিশ্বাসযোগ্য হলেও ও মেয়েদের অসম্মান করে এটা মানতে পারলাম না।”

কথাটা অদ্ভুত ঠেকলো। কাল অয়ন বলল ইত্তাজা মেয়ে°বা°জ না, আজ ভাইয়া বলছে। তারমানে ইত্তাজা ভালো, আমার সামনে এসব কেন বলল তবে?

“হ্যাঁ, লাস্ট কয়েক মান্থে ও একটু অদ্ভুত বিহেভ করেছে। আংকেলের কথায় উঠাবসা শুরু করেছে। মানে একদম আংকেল হ্যাঁ বললে হ্যাঁ আর না বললে না। আগে ও এমন করতো না।”

অয়নকে জানানো উচিত মনে হলো। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“ভাইয়া, আপুর দো°ষ নেই। আমার কারণে নিজেরা অ°শান্তি করবেন না।”

জানি না আমার কথা ভাইয়া কতটুকু বুঝেছে। কিন্তু উনি বুঝবে বলেই মনে হয়। আমি বাসায় চলে আসলাম।

অয়নের নাম্বারে একের পর এক কল দিচ্ছি, কিন্তু বারবার ফোনের সুকন্ঠী নারী জানান দিচ্ছে সে ব্যস্ত আছে, মানে কল কে°টে দিচ্ছে। অয়নের কি হলো যে এভাবে গাজীপুর যাচ্ছে? এদিকে ঘড়ির কা°টাও অবিরাম ঘুরছে। সময় থামবে না, সময় যাবে আর আমি অয়নকে হারিয়ে ফেলবো। ভালোবাসা হারানোর য°ন্ত্র°ণায় আমি জ্ব°ল°ছি, পু°ড়°ছি কিন্তু শেষ হচ্ছি না।

চলবে……..