শব্দহীন প্রণয়কাব্য পর্ব-১২+১৩

0
388

(১৮+এলার্ট)
#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(বারো)
#Mst.Shah Mira Rahman
রাত প্রায় আটটা।মির্জা বাড়ি থেকে বেশ দূরে সিদ্ধান্ত গাড়ি দাঁড় করিয়েছে।ঢাকা থেকে মাত্র ফিরেছে তারা।সকাল হাসি মুখে তার থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্ধুত হতেই সিদ্ধান্ত হাত ধরে আটকালো তাকে।সকাল তাকাতেই দৃষ্টি বিনিময় হলো দুজনের। সকালের বুকটা ধ্বক করে উঠল।কি যেন ছিল ওই দৃষ্টিতে।সকাল কিছু না বলে তাকিয়ে রইল। সিদ্ধান্ত আলগোছে বুকে জড়িয়ে নিল তাকে।
“তোমার মনে হয়না এবার আমাদের তোমার পরিবার কে সবটা জানানো প্রয়োজন।”
সকাল কিছু বলল না ঘাপটি মেরে পড়ে রইল সিদ্ধান্তর বুকে।তার নিরবতা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিদ্ধান্ত।হাতের বাঁধন হালকা করবে তার আগেই সকাল বলে উঠলো,
“ঠিক আছে,আমি সময় বুঝে মাকে বলবো সবটা।”
সিদ্ধান্তর ঠোঁটে হাসি ফুটলো।হালকা হয়ে আসা হাতের বাঁধন দৃঢ় হলো। উৎফুল্ল মনে বলল,
“তোমায় বলতে হবে না।যা বলার বা করার আমি করবো।তুমি অপেক্ষা করো আমার জন্য।”
সকাল মাথা তুলে তাকালো সিদ্ধান্তর দিকে।চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে নরম গলায় উত্তর দিল,
“আচ্ছা।”
অনুভূতির জোয়াড়ে ভাসল সিদ্ধান্ত।টুপ করে সকালের ঠোঁটে চুমু খেল।সকাল হাসল।
“এবার যাই।”
“যাও।”
যেতে বললে ও সকাল কে ছাড়ল না সিদ্ধান্ত। ওভাবেই জড়িয়ে ধরে বসে রইল।বেশ কিছুক্ষণ পর রয়ে সয়ে বলল,
“আর একটু থেকে যাও।”
____
সকালে সালমানের আগে হায়াতের ঘুম ভাঙল।চোখ মেলতেই সালমানের ঘুমন্ত মুখশ্রী ভেসে উঠলো দৃশ্যপটে।তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।কিছুক্ষণ একধ্যানে সেদিকেই তাকিয়ে রইল হায়াত।অতঃপর কিছু একটা ভেবে হুট করে ওঠে ছুটে গেল ওয়াশরুমে। সালমান নড়েচড়ে আবার ঘুমালো।
ওয়াশরুম থেকে একবারে গোসল করে বের হলো হায়াত।চুল মুছতে মুছতে তাকালো সালমানের দিকে।এখনো ঘুমিয়ে আছে।হায়াতের সহ্য হলো না।রাতে তার ঘুম হারাম করে এখন নিজে পরে পরে ঘুমোচ্ছে।হায়াত ড্রেসিংটেবিলের দিকে এগিয়ে গেল।নিজের কাজল হাতে নিয়ে এগিয়ে গেল সালমানের দিকে। সালমান সোজা হয়ে শুয়ে আছে।তার কাছাকাছি বসল। খুব সাবধানে আঁকিবুঁকি শুরু করল তার মুখে।মুখের ওপর অদ্ভুত স্পর্শে ঘুম ভাঙল সালমানের।চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই খুব কাছ হতে এক মেয়েলি সুঘ্রাণ ভেসে এলো তার নাকে।চট করে চোখ মেলে তাকালো। হায়াত চমকালো।সরে যেতে চাইল। সালমান খপ করে হাত ধরে ফেলল তার।
“কি করছিস?”
“কিছু না।”
সালমান তাকালো তার হাতের দিকে।হাতে কাজল দেখে সালমান চট করে উঠে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ালো।সাথে সাথে চোখ শক্ত হলো।চোখ গরম করে পেছনে ফিরতেই দেখল হায়াত নেই।পালিয়েছে। সালমানের রাগ বাড়ল।
“হায়াতের বাচ্চা, একবার তোরে পাই।কাঁচায় চাবাবো।”
হায়াত আর দেখা দিল না তাকে। সকালের খাবার সময় ও দেখল না। সালমানের চোখ মুখ শক্ত হলো।মেয়েটা কিভাবে তার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একবার জোরে জোরে নাম ধরেও ডাকল তবুও শুনলো না।শেষ পর্যন্ত রাগ করে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।রাতের খাবারের সময় হায়াত কে সামনে পেল। কিন্তু কথা বলল না।গুম ধরে থেকে খেয়ে দেয়ে উপরে চলে গেল। হায়াত দেখল তার যাওয়া।মনে মনে ভয় পেল।সকাল থেকে তাদের অবকোলন করছিলেন মাহিন মির্জা।রাতে ঘুমানোর সময় শাহানা হাতে তেলের বাটি নিয়ে এগিয়ে এলো মাহিনের পায়ে মালিশ করতে।কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মাহিন গুরুতর ভাবে আহত হোন। দীর্ঘদিন হসপিটাল ও তিন মাস বেড রেস্টে থাকতে হয় উনাকে।ধীরে ধীরে সুস্থ হলেও পায়ের সমস্যা টা বাজে ভাবে ধরা দিয়েছে।তিনি এখনও ঠিক মতো হাঁটতে পারেন না। বেশিক্ষণ হাটলে বা দাড়িয়ে থাকলে পা অবশ হয়ে যায়।ডাক্তারের চিকিৎসা চলছে এখনো।ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা কম বৈ কি।
মাহিন মির্জা শাহানা কে দেখে থমথম মুখে বললেন,
“মেয়েটার একটু খোঁজ রেখো শাহানা।কেমন আছে না আছে সেই দিকে একটু খেয়াল রাখবে।”
শাহানা তাকালো মাহিনের দিকে। শান্ত গলায় বলল,
“তুমি চিন্তা করো না।আমি মা তার।মেয়ের ভালো মন্দ আমি বুঝি। সালমান একরোখা জেদি হতে পারে কিন্তু আমাদের মেয়ের অযত্ন করবে না দেখো।”
মাহিন কিছু বলল না।অন্যদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল শুধু।
___
হায়াত ভয়ে সালমানের ঘরে গেল না।বিয়ের আগে হায়াত আয়াত এক ঘরেই থাকতো।হায়াত সেদিকে গেল।টোকা দিল দরজায়। আয়াত খুলল না।হায়াত এবার ডাক দিল,
“আয়াত দরজা খোল।”
“পড়তেছি আমি বিরক্ত করিস না।যা তো এখান থেকে।
আশাহত হলো হায়াত।সাথে রাগ ও। আয়াত দরজা খুলল না।খুলবেও না।তার ফোনে ইতিমধ্যেই হুমকিতে ভড়া মেসেজ এসেছে।
“খবরদার দরজা খুলবি না আয়াত।নইলে খবর আছে তোর।”
হায়াত এবার সকালের ঘরে গেল। সেখানে গিয়ে ও আশাহত হলো। সকাল যেন এখন বোনের রোল ছেড়ে ননদের রোল প্লে করছে।কান্না পেল হায়াতের।উপায় না পেয়ে সালমানের ঘরের দিকে এগোলো।ঘর অন্ধকার।শুধু বেডের পাশে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে। সালমান অন্যপাশে মুখ করে শুয়ে আছে।হায়াত চুপচাপ গিয়ে তার পাশে শুলো।সাথে সাথেই হামলা হলো তার ওপর। আচমকা সালমান ঘুরে এসে তার ওপর শুলো।হায়াতের আত্মা বেরিয়ে গেল।দম বন্ধ করে তাকিয়ে রইল সালমানের দিকে।
“কেন এলি এখন?সারাদিন কোথায় ছিলি?”
হায়াতের রাগ হলো। সালমান হুট করে তার কাছে আসায় ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে।রাগে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“এসেছি বলে ভেব না মাথা কিনে নিয়েছো।হুটহাট কাছে আসবে না এভাবে।”
“শুধু মাথা কেন?দশ লক্ষ টাকা দেন মোহরে পুরো তুই’টাকেই কিনে নিয়েছি আমি।এখন তা সুদে আসলে মিটিয়ে নেওয়ার পালা।”
হায়াত চেয়ে রইল সালমানের দিকে।টেবিল ল্যাম্পের মৃদু আলোয় হায়াতের তেলতেলে মুখটা চকচক দেখালো।নেশা লাগল সালমানের চোখে।গলায় নাক ঘষতে ঘষতে মোহগ্রস্তের মতো আওড়ালো,
“আমার থেকে পালিয়ে বেড়াবি না হায়াত।একদম বেঁধে রেখে দেব।”
____(১৮+ অংশ _ প্রয়োজনে স্কিপ করুন)
রাত তখন গভীর।নীল রঙের ডিম লাইটের মৃদু আলো রুমের ভেতর আলো আঁধারির খেলায় মেতে উঠেছে।মীরাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে আছে সুলেমান।দুজনের কারো চোখে ঘুম নেই।মীরা নাক ঘষল সুলেমানের বুকে।সুলেমানের শরীর শিহরিত হলো।
“আপনি রেগে আছেন আমার ওপর।”
“কেন?”
“আমি আপনাকে অনেক কঠিন কথা শুনিয়েছি।কষ্ট দিয়েছি আপনাকে।”
“কেন কষ্ট দিয়েছ?”
মীরার চোখ জ্বলে উঠলো,
“আমি চাইনি আপনি আমার এই ত্রুটিময় জীবনে আবার ফিরে আসুন।”
সুলেমান চট করেই উঠে বসল।মীরার হাত ধরে টেনে তাকেও উঠিয়ে বসালো।দুই গালে হাত চেপে ধরে বলল,
“পেরেছো দূরে সরাতে?”
মীরা মাথা নাড়ল।পারে নি।
“পারবেও না।তুমি আমাকে আঘাত দিতে দিতে নিঃশেষ করে ফেললেও আমি শেষ নিঃশ্বাস অবধি তোমার কাছেই রবো।তুমি আমাকে এক পৃথিবী শূন্যতা দিলেও আমি সেই শূন্যতায় তোমার হাতটাই আঁকড়ে ধরবো।তোমার জীবন পুরোটাই ত্রুটিপূর্ণ হোক তবুও আমি তোমাকেই প্রয়োজন বোধ করবো মীরা।”
মীরা ফুঁপিয়ে উঠলো।মিশে গেল সুলেমানের বুকে।ধীর ও মিহি কণ্ঠে বলল,
“এতো কেন ভালোবাসেন?”
“জানিনা।”
“আমায় একটু আদর করবেন সুলেমান?”
সুলেমানের বুক ধ্বক করে উঠলো। কিছুক্ষণ স্থির বসে থেকে দুই হাতে মীরার মুখ তুলে চুমু খেল কপালে।
“করছি তো।”
মীরা এবার আবদারের সুরে তুলল,
“না এভাবে নয়।আরো বেশি আদর করুন।আমি আপনাকে কাছে পেতে চাই সুলেমান।মিশে যেতে চাই আপনার সাথে ।”
নিস্তব্ধ নির্জন এই অন্ধকার রাতে প্রিয় নারীর করা আবদারে সুলেমানের বুক ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠল।শরীরি আকাঙ্ক্ষা গুলো হুড়হুড় করে বেড়ে গেল।একদৃষ্টে চেয়ে রইল মীরার দিকে।মীরা দেখল সেই দৃষ্টি।অতঃপর নিজেই এগিয়ে গেল। সুলেমানের দুই গালে চুমু দিয়ে ঠোঁটে চুমু খেল।সরে আসতে নিলে বাধা পরল।সুলেমান আটকে দিল তাকে।আলগা হওয়া ঠোঁট জোড়া আবার মিশিয়ে নিল।নিজের পুরু ঠোঁট দ্বারা দংশন করল মীরার নরম কোমল ঠোঁট জোড়া।মীরা এক হাতে সুলেমানের চুল খামচে ধরল সমান তালে তাল মেলানোর চেষ্টা করল নিজেও।তিন বছরের তৃষ্ণায় ছটফট করা মন যেন এবার উন্মাদ হলো। উন্মাদনায় ছেয়ে গেল শরীর মন।স্পর্শ গুলো হলো বন্য এক অদম্য সুখ খোঁজায়।মীরা হাঁপিয়ে উঠল।সরাতে চাইল‌ সুলেমান কে।সুলেমান সরল না।বরং হাতের বাঁধন দৃঢ় করল।মীরা হাঁসফাঁস করল।দম বন্ধ হয়ে এলো।হাত দিয়ে খামচালো ঠোঁটে কামড় বসালো।এপর্যায়ে তাকে ছাড়ল সুলেমান।মীরা দম ফেলল। হাঁপাতে হাঁপাতে তাকালো সুলেমানের দিকে। সুলেমান ব্যস্ত হাতে নিজের শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলল দূরে। মীরাকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পরল সাথে সাথে।ঘন ঘন শ্বাস ফেলে তাকালো একে ওপরের দিকে।দৃষ্টি বিনিময় হলো দুজনের।মাদকতা ঘিরে ধরল।দুরত্বে থাকা ঠোঁট জোড়া আবার মিলিত হলো।সাথে এলোমেলো হলো সুলেমানের হাতের স্পর্শ।মীরা বেকাবু।চড়ুই পাখির মতো ছটফট করল সুলেমানের বলিষ্ঠ দেহের নিচে। সুলেমান ঠোঁট ছাড়ল।মুখ ডোবালো মীরার গলদেশে।অতঃপর তার বক্ষ বিভাজিকায়।মীরা কেঁপে উঠলো।চুল খামচে ধরলো সুলেমানের।সুলেমান ধীরে ধীরে গভীর থেকে গভীরে ডুব দিল।সাক্ষী হলো দীর্ঘ কয়েক রজনীর পর এক সুখময় রজনীর।
চলবে🌺

#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(তেরো)
#Mst.Shah Mira Rahman
মীরার ঘুম ভাঙল প্রায় সাতটায়।চোখ মেলে আশে পাশে তাকিয়ে সুলেমান কে পেল না।এদিক ওদিক চোখ বোলালো।সুলেমানের শার্ট টা তার পাশে ফ্লোরে পড়ে আছে।তুলে নিয়ে ওটা গায়ে গলিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।সুলেমান কিচেনে।কফি করছে।মীরা দেখল।সুলেমানের উদোম শরীর।কোমড়ের নিচ অবধি জিন্স।পেটানো শরীরটা নজরে পড়তেই কাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল মীরার।এই শক্তপক্ত শরীরটার নিচে কাল তার ছোট্ট দেহটা পিষ্ট হয়েছে।শিউরে উঠলো সে। লজ্জায় কান মুখ লাল করে যেভাবে বেরিয়েছিল ওভাবেই আবার ঘরে ঢুকে পরল।সুলেমান দেখল তার যাওয়া।অতঃপর নিজে নিজেই হেসে দিল।অসাধারণ সেই হাসি।
____
ওয়াশরুম থেকে একবারে গোসল করে বের হলো মীরা।চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তার সামনে কফির মগ ধরল সুলেমান।মীরা নিল।সুলেমান তার হাত থেকে টাওয়েল নিয়ে চুল মুছে দিতে লাগল।মীরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক বসালো।
“বেরোতে হবে আমায়।আজ আর ফিরতে পারবো না।”
মীরা আয়না দিয়েই তাকালো সুলেমানের দিকে।অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কেন?”
“দুদিন যাবৎ বাসায় যাচ্ছি না।মা চিন্তা করছে।তাকে সময় দেওয়া প্রয়োজন।”
মীরা কফির মগ ড্রেসিংটেবিলের ওপর রেখে ঘুরে দাঁড়ালো সুলেমানের দিকে। উৎফুল্ল গলায় বলল,
“তাহলে আমাকেও নিয়ে চলুন বাড়িতে।আপনাকে আর এদিক ওদিক করতে হবে না।”
সুলেমান তাকালো মিরার দিকে।দুই হাতে মিরার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিল।মুখের ওপর আসা এলোমেলো ভেজা চুল গুলো একহাতে গুছিয়ে দিল।
“একবার বলেছি না সময় আসুক আমি নিজেই নিয়ে যাবো।তার আগে এ নিয়ে আর একটা ও কথা নয় মীরা।”
মীরা মনক্ষুণ্ণ হলো।মন খারাপ করে নিজেকে ছাড়িয়ে সরে আসতে চাইল।পারল না। সুলেমান আটকে নিল।
“কোথায় যাচ্ছ?”
মীরা অন্যদিকে তাকিয়ে রইল,
“হসপিটালে যেতে হবে আমায়।ছাড়ুন।”
“তোমার ডিউটি নয়টা থেকে।এখন সাড়ে সাতটা। এখনো অনেক সময় আছে।”
“রান্না করতে হবে আমার।”
“আমি করে নিয়েছি।”
মীরা অবাক চোখে তাকালো,
“কখন উঠেছেন আপনি?”
“অনেক আগেই।”
হেরে যাওয়া সৈনিকের মতো চোখ নামিয়ে নিল মীরা।অতঃপর পুনরায় চঞ্চল চোখে তাকালো সুলেমানের দিকে,
“এই আপনি সত্যি করে বলুন তো আপনি কি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন?বাড়িতে আপনার দ্বিতীয় বউ আছে এ জন্যই আমায় নিতে চাচ্ছেন না তাই না?আমি না থাকায় আপনি অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে গেছেন?”
চোখে মুখে আতংক মীরার। সুলেমান হাসল মীরার এমন কথায়।হাতের বাঁধন দৃঢ় করে বলল,
“কতবার বলতে হবে মীরা, আমার জীবনের প্রথম ও শেষ নারী তুমি।দ্বিতীয় কোনো নারীর স্থান নেই আমার জীবনে।”
মীরা চোখ ছোট ছোট করে সন্দেহের দৃষ্টি ফেলল সুলেমানের দিকে।সুলেমান দেখল মীরাকে। মুহূর্তেই বড্ড আদুরে লাগল তাকে।টুপ করে চুমু খেল মীরার নাকে।মীরার চোখ বড় বড় হলো।গরম চোখে তাকালো তার দিকে। সুলেমান আবার চুমু খেল ঠোঁটে।মীরা চেঁচিয়ে উঠলো,
“অসভ্যের মতো করছেন কেন?”
সাথে সাথে মীরা কে কোলে তুলে নিল সুলেমান।মীরা ছটফট করল। ছোট্ট শরীরটা বিছানার ওপর ফেলে তার ওপর চড়াও হলো সুলেমান। মীরার চোখে চোখ রেখে কৌতুক স্বরে বলল,
“স্বামীরা অসভ্যতামি ই করে।”
মীরা এলোমেলো হলো। জড়িয়ে আসা গলায় উচ্চারণ করল,
“হসপিটালে যেতে হবে।”
“আধা ঘন্টা লেট গেলেও হবে।”
_____
সালমানের বিয়ের পর এবার সন্ধ্যা সকালের পেছনে লেগেছে। ইতিমধ্যে ঘর দেখাও শুরু করে দিয়েছে। দুইদিন আগে একটা পেট মোটা টাকলু লোক এনে হাজির করালো সকালের সামনে। সকাল নাক মুখ কুচকালো।রাগী চোখে তাকালো মায়ের দিকে। সন্ধ্যা মুখ বাকালো।বলল,
“এই বয়সে এসে এখন এরম জামাই ই জুটবে কপালে।”
সকাল হতাশ হলো।মা কি সিদ্ধান্ত কে দেখেনি?লোকটা কত সুদর্শন সুপুরুষ একজন।এরকম সুদর্শন পুরুষ তার জীবনে থাকতে টাকলু জামাই জুটবে কেন তার কপালে? সকালের রাগ হলো।সন্ধ্যার ওপর নয় সিদ্ধান্তর ওপর।সেদিন তাকে‌ বলেছিল অপেক্ষা করতে ।বলেছিল সে আসবে।কিন্তু আসেনি।ফোন ও ধরে না। সকালের কান্না পায়। অভিমান হয় সিদ্ধান্তর ওপর।জঘন্য পুরুষ ঠকিয়েছে তাকে। সকাল কাঁদতে কাঁদতে সুলেমানের কাছে আসে। সুলেমান বাগানে ফুলের গাছে পানি দিচ্ছিল।বাগান টা মীরা করেছিল। বাড়ির সামনের এই জায়গাটা ফাঁকা থাকায় মীরা সবার পছন্দের ফুল গাছ এনে এখানে লাগিয়েছিল।সকাল বিকাল পানি দিত গাছে।সবসময় যত্নের মাঝে রাখতো।খুব অল্প সময়ে বাগানটা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।মীরা যাওয়ার পর দ্বায়িত্বটা সুলেমান নিজের কাঁধে তুলে নেয়।প্রিয় নারীর প্রিয় শখ কে আগলে রাখে খুব যত্নে।যেদিন সুলেমান কাজের চাপে সময় পায় না পানি দেয়ার ওইদিন সন্ধ্যার কাঁধে পড়ে এই দায়িত্ব। সুলেমান কে গাছগুলোর এতো যত্ন‌ নিতে দেখে সকাল ফুঁপিয়ে উঠলো।ভাই কত ভালোবাসে তার ভাবিকে অথচ সিদ্ধান্ত!সে ঠকালো তাকে। সুলেমান তাকালো সকালের দিকে।জিজ্ঞেস করল,
“কিছু বলবে সকাল।”
সকাল না বোধক মাথা নাড়ালো।সিদ্ধান্ত বলেছে তাকে অপেক্ষা করতে।সে করবে অপেক্ষা।
____
ঝোঁকের বশে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল সিদ্ধান্ত। সকাল কে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলে ঝামেলা বাড়বে বৈ কমবে না। কিন্তু এই কথাটা সে সকালকে কি করে বোঝাবে?এত দিন এত বছর পর যখন সকাল নিজ হতে ধরা দিয়েছে তাকে তখন সিদ্ধান্ত পিছিয়ে যাচ্ছে।আসবো বলে কথা দিয়েও কথার খেলাপ করেছে। অপেক্ষা দীর্ঘ করেছে তার নারীর।সিদ্ধান্তর বুক‌ অস্থিরতায় ছেয়ে আছে সকাল কে দেখার জন্য।সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে সকালের আর্ট ইনস্টিটিউটের সামনে।আগে এখানেই স্টুডেন্ট ছিল সকাল।আর এখন টিচার। সিদ্ধান্ত হাঁসফাঁস করল।কি করে মান ভাঙাবে ভাবতে লাগল।অবশেষে তাকে শান্ত করতে বেরিয়ে এলো সকাল। সিদ্ধান্ত ছুটে গেল সেদিকে।হুট করে সিদ্ধান্ত সামনে চলে আসায় ভয় পেল সকাল।বুকে থু থু দিয়ে তাকালো সিদ্ধান্তের দিকে।চোখ মুখ শক্ত হলো।মুখ ফিরিয়ে উল্টোদিকে হাঁটা ধরল। সিদ্ধান্ত পিছু নিল তার।
“সকাল? সকাল আমার কথা শুনো।এতো কেনো রেগে যাচ্ছো সকাল?”
সকাল থামলো। তাকালো সিদ্ধান্তের দিকে।
“আমি যেতে চেয়েছিলাম আপনার কাছে? বলেছিলাম আপনাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না?পেতে চেয়েছিলাম আপনার সান্নিধ্য?তাহলে কেন এভাবে অপমান করলেন আমায়?অপেক্ষা করতে বলে কেন‌ এলেন না আপনি?এখন কেন এসেছেন?অযুহাত দিতে?”
সিদ্ধান্ত শুনলো সকালের কথা।বুক ফুড়ে গেল তার। কিন্তু এসবের পরও সত্যিই সে মিথ্যে অজুহাত দেখালো।
“ভুল হয়েছে আমার সকাল।তোমাকে পাওয়ার ঝোঁকে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি।সামনে ইলেকশন।এখন তোমাকে নিজের কাছে আনলে তুমি কষ্ট পেতে সকাল।দুই পক্ষের লড়াই তোমার জন্যই কঠিন হয়ে যেত।”
“ওহ, তারমানে আপনি উঠেপড়ে লেগেছেন আমার বাবাকে হারানোর জন্য।আপনার প্রথম চাল টা বুঝি আমি ছিলাম।যদি এরকম হয় তো আপনি ভুল চাল দিয়েছেন মি.সিদ্ধান্ত।এতো সহজে ভাঙার মেয়ে আমি নই।তাই আপনাকে আপনার ইলেকশনের শুভেচ্ছা।”
সকাল হাঁটা ধরল। সিদ্ধান্ত তার পিছু নিতেই আবার ফিরে তাকালো তার দিকে,
“আমি আপনার মুখ ও দর্শন করতে চাই না সিদ্ধান্ত।দয়া করে একা ছাড়ুন আমায়।”
সিদ্ধান্ত থেমে গেল।সকাল চলে গেল।রাগ হলো সিদ্ধান্তর।পকেট থেকে ফোন বের করে কল করল পরিচিত এক নাম্বারে। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই চেঁচিয়ে উঠলো সিদ্ধান্ত।
“সব আপনার জন্য হয়েছে।আপনার জন্য ই বিয়ে করেও দেবদাসের মতো ঘুরছি আমি। দুদিন পর হয়তো ডিভোর্স ও হয়ে যাবে। এবার খুশি তো আপনি?নিজে তো আমার বোন কে নিয়ে ওখানে খুশিতে সংসার পেতেছেন।আর আমার বেলায়?আরে একটু তো দয়া করুন আপনার বোন ও।”
“সিদ্ধান্ত?”
কথা থেমে গেল সিদ্ধান্তের।রাগে হাঁপাতে লাগলো।কিছুক্ষণের ব্যাবধানে আবার ঠাণ্ডা গম্ভীর কণ্ঠস্বরটি ভেসে এলো ওপাশ থেকে,
“কোন ফোন দিয়ে ফোন দিয়েছ?”
সিদ্ধান্ত কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখল।সাথে সাথে রাগে দুঃখে মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক ইংরেজি শব্দ বেরিয়ে এলো।ওপাশ থেকে খট করে লাইন কেটে গেল। সিদ্ধান্ত চুল টেনে ধরল নিজের।রাগের মাথায় কতবড় ভুল করে ফেলেছে।তার এই নাম্বার সবসময় ট্রেস করা হয়।শেষে তীরে এসে তরী না ডুবে যায়।নয়তো তাদের এতোদিনের কষ্ট পরিকল্পনা সব বিফলে যাবে।
____
বড় বড় নেতাদের হাতে রাখার জন্য তাদের রাতের মনোরঞ্জন হিসেবে মেয়েদের ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় প্রফেসনাল প্রস্টিটিউডদের সাথে তার ওঠাবসা।কথাটা জানতে পেরে তিক্তায় ভরে গেল শাহিন মির্জার মন।ছেলেটাকে উনি ভালো ভেবেছিলেন। বিরোধী দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও মনে মনে স্নেহ করত তাকে।শুধু যে তাদের বাড়ির লক্ষী মীরার ভাই তাই নয় ছেলেটার ব্যবহার অমায়িক।বেশ মনে ধরেছিল তাকে।তার জনসেবা বুদ্ধিমত্তা দেখে ভেবেছিলেন এবার হয়তো সমানে সমানে লড়াই হবে।তবে তার ধারণা ভুল। সিদ্ধান্তর এই সত্যিটা বিতৃষ্ণায় ভড়িয়ে দিয়েছে তার মন।তাকে হারাতে যে সিদ্ধান্ত এতো নিচে নামতে পারে তা ভাবেননি উনি।তবে মনে মনে বেশ পণ করলেন, রাজনীতির রং এবার উনি সিদ্ধান্ত কে দেখিয়েই ছাড়বেন।
চলবে🌺