পরাণ দিয়ে ছুঁই ২ পর্ব-২৪+২৫

0
304

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২৪
#Jhorna_Islam

কিছুসময় ইসরাতের মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপর ভাবে সোফায় এমন করে শুয়ে থাকলে পরে গিয়ে শরীরে ব্যাথা পাবে। তাই ইসরাত কে ডাকতে থাকে উঠার জন্য কিন্তু কিছুতেই উঠে না।অনেকক্ষন ডাকার পর চোখ ডলতে ডলতে রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে আবার মুখে বালিশ দিয়ে শুয়ে পরে।ইসরাতের মা এখনও মেয়ের মুখ দেখেনি দেখলে হয়তো তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলতো। ঐসময় এসেই মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে শুয়ে ছিলো আর এখন আসার সময় ও চোখ ডলতে ডলতে এসেছে যার দরুন খেয়াল করেনি।

এইদিকে নূর ইসরাত কে একের পর এক কল দিয়ে চলেছে কিন্তু মেয়েটা কল রিসিভ করছে না কিছুতেই। পৃথিবীতে মনে হয় এটা নিয়ম হয়ে গেছে দরকারের সময় কাউকে পাওয়া যায় না। নূর চাচ্চিলো ইসরাতের সাথে বিষয় টা শেয়ার করবে কিন্তু কিসের কি এই মেয়ে ফোন ই তুলছে না।আরো কয়েকবার চেষ্টা করে নূর আর কল দেয় না হয়তো এখনও পরে পরে ঘুমোচ্ছে। একটু সুযোগ পেলেই চলে ঘুম আর ঘুম। মেয়েটার ঘুম ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এসব কিছু ভাবনার মাঝে নূরের মাথায় আসে ফাতিহার কথা, ঐসময় রা’গের বশে ফাতিহার সামনেই কিসব বলেছে।পরোক্ষনে মাথায় আসে ফাতিহার বেদনাদায়ক অতীতের কথা। দৌড়ে গিয়ে আবার ফাতিহা কে খুঁজতে থাকে। এতোসময় যাদের সাথে খেলছিলো তাদের কারো সাথে নেই। এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে কোথায় গেলো মেয়ে টা। খুঁজতে খুঁজতে একপর্যায়ে যেইখানে দেখে গিয়েছিলো সেইখানে এসেই পায়।বসে বসে চোখ মুচ্ছে। নূর দৌড়ে ফাতিহার কাছে যায় গিয়ে পাশে বসে।

কি হয়েছে মাম্মা? তুমি কাঁদছো কেন? ব্যাথা পেয়েছো? দেখি দেখাও মাম্মা কে কোথায় ব্যাথা পেয়েছো বলেই অস্থির হয়ে নিজেই খুঁজতে থাকে।

ফাতিহা নিজের ছোট্ট হাত দিয়ে নূরের হাত দুটি আঁকড়ে ধরে করুন গলায় বলে উঠে,, “মাম্মা আমাকে কি তুমি ছেড়ে চলে যাবে আমার মায়ের মতো? ”

ফাতিহার একটি মাত্র প্রশ্ন মুহূর্তের মধ্যে নূর কে শান্ত করে দিলো।কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে ফাতিহার দিকে তাকিয়ে রয় নূর। ফাতিহার কেন মনে হলো নূর তাকে ছেড়ে চলে যাবে তার জানা নেই। শুধু জানে এই মেয়েটার এখন নূর কে প্রয়োজন খুব করে প্রয়োজন।নূর ফাতিহাকে নিজের বুকের মাঝে আগলে নেয়। নূর পারলে কলিজার ভিতর ঢুকিয়ে ফেলতো এই ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েটা কে।

” এসব কি কথা মাম্মা? আমি তোমাকে কেন ছেড়ে চলে যাবো? মায়েরা কি তার বাচ্চা কে ছেড়ে চলে যায় কখনো?”

“তাহলে আমার সোহানা মাম্মা কেন চলে গলো মাম্মা?”

নূর এই প্রশ্নে থমকায় তার কাছে তো এর কোনো উত্তর নেই। হুট করে বাচ্চা মেয়েটা কিরকম বড়দের মতো কথা বলছে। তোমার সোহানা মাম্মা চলে গেছে দেখেতো আল্লাহ তোমার মাম্মার জায়গায় আমাকে পাঠিয়েছেন, যেনো আমার ফাতিহা মামনি তার মাম্মা কে পায়। তুমি তো আমার আদরের বাচ্চা। মাম্মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে।

ফাতিহা ও তার মাম্মা কে অনেক ভালোবাসে। ফাতিহা বলেই নূরের গালে চুমু খায়।

হ্যা সব ভালোতো তোমরা মা মেয়ে দুইজন দুইজনকে বাসো তাই না? আমিতো কেউ না বা’নের জলে ভেসে এসে পরেছি তোমাদের কাছে।আজ কেউ নাই বলে,, বলেই সৌন্দর্য মুখটা গোমরা করে বুকে হাত বেঁধে অন্য দিকে তাকায়।

উফফফ মি. ওয়াহিদ তুমি খুব হিংসুটে লোক বলেই কোমরে হাত রাখে ফাতিহা।তারপর আদেশের সুরে বলে,,,নিচু হও দেখি যেই লম্বা তুমি, তোমার কাছে তো আমি পৌঁছাতেই পারবো না। সৌন্দর্য ফাতিহার কথা শুনে নিচু হয়। ফাতিহা সৌন্দর্যের গালে চুমু খেয়ে বলে,,ফাতিহা লাভ’স ইউ এ লট মি.ওয়াহিদ। এন্ড মাম্মা অলসো লাভ’স ইউ। তাই না মাম্মা?

নূর এতোসময় বাবা মেয়ের কথায় হাসলেও এখন ফাতিহার কথায় শুকনো মুখেই বিষম খায়। মনে মনে বলে,, কি সাংঘাতিক প্রশ্নরে বাবা। নূর এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে। কি করে দেবে নূর এই প্রশ্নের উত্তর? প্রশ্ন শুনেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা।

সৌন্দর্য হয়তো নূরের বিষয় টা বুঝতে পারছে তাই নিজেই পরিস্থিতি সামলে নেয় সব সময়ের মতো।

“মাম খিদে লাগে নাই তোমাদের? বেলা কতো হলো সেই দিকে খেয়াল আছে? ”

“তুমিই ঘুম থেকে উঠতে লেট করছো আমরা না।আমি আর মাম্মা তো সেই সকালে উঠেছি।জানো সকালে উঠে কতো মজা হয়েছে? ”

আচ্ছা তাই নাকি? চলো খেতে খেতে শুনবো। সৌন্দর্য নূরকে ও চোখের ইশারায় আসতে বলে এগিয়ে যায়। নূর বরাবরের মতো স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।

কিন্তু খেতে গিয়ে লাগে আরেক বিপত্তি। সব ঠিকঠাকই ছিলো খাওয়ার টেবিলে বসে নূর খাচ্ছে মাঝে মাঝে ফাতিহার মুখে ও তুলে দিচ্ছে। অপর দিকে সৌন্দর্য ও একই ভাবে নিজেও খাচ্ছে ফাতিহার মুখে ও তুলে দিচ্ছে। এরমধ্যে ফাতিহা নিজের আবদার নিয়ে বসে সৌন্দর্য কে নূরকে খাইয়ে দিতে হবে, নূরকেও সৌন্দর্য কে খাইয়ে দিতে হবে। এরকম আবদার শুনে নূরের বলতে ইচ্ছে করলো আর কতো লজ্জায় ফেলবি মা? এসব আবদার কেউ করে?কিন্তু কিছুই পারলো না। এবার সৌন্দর্য ও কোনো বাহানা দিয়ে বিষয় টা কাটাতে পারলো না। ফাতিহা বলেছে খাইয়ে দিতে হবে মানে দিতে হবে কোনো বাহানা চলবে না।ফাতিহা নিজেই ঠিক করে দেয় কে আগে খাইয়ে দিবে। সৌন্দর্য প্রথম নূর কে খাইয়ে দিবে তারপর নূর সৌন্দর্য কে।

সৌন্দর্য হাতে লোকমা বানিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরে।সৌন্দর্য কে দেখে মনে হচ্ছে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার সে আগেও করেছে। নূর মুখ হা করছে না দেখে ফাতিহা হাতে ধরে ধাক্কাতে থাকে। নূর ছোট্ট করে হা করে। সৌন্দর্য লোকমা নিয়েছে বড় নূরের ছোট্ট করে হা করাতে কিছুতেই পুরোটা মুখে ঢুকবে না।সৌন্দর্য পুরো লোকমা ঠেসে মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়। এইদিকে এতো বড় লোকমা যে নূরের চিবুতেও কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্টে গিলে।এবার নূরের পালা নূর লোকমা ধরে সৌন্দর্যের মুখের কাছে নিতেই সাথে সাথে সৌন্দর্য মুখে নিয়ে নেয়। কিন্তু সাথে ব্যাথা ও পায় সৌন্দর্য আঙ্গুলে কামড় দিয়েছে। চোখ মুখ কোচকে সৌন্দর্যের দিকে তাকাতেই বলে এতো ছোট লোকমা তো মনে হয় ফাতিহার মুখে ও লাগবে না। ভবিষ্যতে বড় বড় লোকমা দিবে আর নিজেও খাওয়ার জন্য তৈরি থাকবে বলেই চোখ মা’রে সৌন্দর্য ।

নূর মনে মনে বলে,,সখ কতো ভবিষ্যতে তোকে আমি খাইয়ে দিবো নাকি অসব্য সুন্দর মানুষ।

**************
ইসরাত সেই যে ঘুমিয়েছে আর কোনো খবর নেই। এখনও পর্যন্ত ঘুমিয়েই যাচ্ছে। ইসরাতের মা আর বাবা একটা কাজে বের হয়েছে। বের হওয়ার আগে ইসরাতের মা কয়েকবার ডেকেছে কিন্তু উঠে নি।শেষ মেষ ধাক্কা দিতেই ঘুমু ঘুমু কন্ঠে হু বলেছে।ইসরাতের মা ভেবেছে উঠেছে তাই বলে যায় উনারা একটু বের হচ্ছে আসতে লেট হবে। দরজা লাগিয়ে যাচ্ছে সাবধানে যেনো থাকে।

ইসরাতের ঘুম ভাঙে কলিং বেলের শব্দে।প্রথমে ভেবেছিলো উঠবেনা পরোক্ষনে মাথায় আসলো মা বাবা ও হতে পারে। এখন গিয়ে না খুললে মা আজ আস্তো রাখবেনা। তারাতাড়ি দৌড়ে যায় দরজা খুলতে।

দরজা খুলে বাইরে কে আছে না দেখেই উল্টো ঘুরে যেতে যেতে বলে এতো তারাতাড়ি তোমাদের কাজ শেষ? কি এমন কাজ করতে গেলে শুনি?

” ইসরাত?”

ডাক শুনে ইসরাত থমকে দাঁড়ায়।

“কি হলো?”

ইসরাত ভুল শুনছে ভেবে কানে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দেয়।

ইসরাত আমি ডাকছি তোমায়।

নাহ্ ভুল শুনছে না। কিন্তু ঐ লোকটা এখানে কি করে কি? ভাবতে ভাবতেই পিছনে ফিরে তাকায়।
তালহা ইসরাত কে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। এসব কি দেখছে চোখে মুখের কি অবস্থা। ইসরাত ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তালহার দিকে। বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কিছু সময়ের জন্য ঐ ঘটনাটা মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।এখন আবার কষ্ট শুরু হয়ে গেছে।

একি হয়েছে তোমার? চোখে মুখের এই অবস্থা কেন? তুমি কি অসুস্থ?

–আ-আপনি এখানে? আপনি এখানে কি করছেন?
— তুমি আগে আমার কথার উত্তর দাও।তুমি কি অসুস্থ?
— বলতে বাধ্য নই আমি।

তোমাকে আমি এক জায়গায় দেখা করতে বললাম তুমি কি করলে ঐখানে গিয়েও ফিরে এসেছো তাও আমার সাথে দেখা না করে। এসবের মানে কি?

ইসরাত তোতলাতে তোতলাতে বলে আ-আমাকে আপনি কো-কোথায় দেখেছেন?

— তালহা দায়সারা ভাব নিয়ে বলে আমিও বলতে বাধ্য নই।

আজব লোক তো।এখানে কি করতে এসেছেন? কোনো দরকার কি? তারাতাড়ি বলে বিদায় হোন।

– তোমার কি হয়েছে বলোতো এরকম ভয়েসে কেন কথা বলছো?

কিরকম ভাবে কথা বলবো আপনার সাথে? এখন কি আপনার থেকে নতুন করে কথা বলাও শিখতে হবে?

তালহা চোখ ছোট ছোট করে বলে,,মনে হচ্ছে ঝগড়া করার মোডে আছো।

— আমি যার-তার সাথে ঝগড়া করি না।

ফরগেট ইট! আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ঐখানে গিয়েও কেন আমার সাথে দেখা করলে না?

— বললাম না আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই?

তালহার এবার রাগ উঠে যায়।ইসরাতের হাত শক্ত করে ধরে বলে,, তুমি বলতে বাধ্য আলবাত বাধ্য।আমি তোমাকে ডেকেছি তোমাকে বলতেই হবে।

ইসরাত এক ঝটকায় তালহার হাত থেকে নিজের হাত ছারিয়ে নেয়।
খালি বাড়িতে একজন মেয়ে মানুষের হাত ধরা এসব কি ধরনের অ’সভ্যতা স্যার?

ইসরাতের কথায় তালহা ভাষা হারিয়ে ফেলে। এ কোন ইসরাত কে দেখছে সে?

#চলবে,,,,,

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২৫
#Jhorna_Islam

কি হয়েছে কি তোমার ইসু? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

আমার কি হয়েছে সেটা জেনে আপনার কি কাজ স্যার? নিজের কাজ করুন। শুধু শুধু আমার জন্য ভেবে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। আমি ছাড়া ও আপনার অনেক কিছু আছে ভাবার বলেই ইসরাত অন্য দিকে তাকায়।

তালহা কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে কিছু সময় ইসরাতের দিকে তাকিয়ে রয়। হয়তো ইসরাতের মাঝে সেই পাগলামো গুলো খোঁজার চেষ্টা করছে। এই জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছে তালহা বদলে যেতে কিন্তু ইসরাতের বদলে যাওয়া আশা করেনি।এটা খুবই পী’রা দায়ক।বুকের কোথাও সূ্ক্ষ ব্যাথা অনুভব করছে। কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামলে নেয়। তারপর হাত বাড়িয়ে ইসরাতের মুখের সামনে পার্সটা ধরে।

ইসরাত তাকিয়ে নিজের পার্সটা ছো মেরে নিয়ে নেয়।

মাটিতে পরে ছিলো।আমি কয়েকবার কল দেওয়ার পর রিং হয়েছে কিন্তু কোথায় হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না।এরপর অন্য কেউ হয়তো কল দিয়েছে তারপর দেখতে পাই।এদিক ওদিকে তাকিয়ে কাউকে না পেয়ে পার্সটা আসলে কার সেটা জানার জন্য খুলতে হয়েছে। তারপর জানতে পারি সেটা অন্যকারো না তোমারই। এটা দিতে এসেছিলাম সাথে এটাও জানতে যে তুমি ঐখানে গিয়েও কেন দেখা না করে চলে এসেছো।কিন্তু তুমি তো ঠিক করে রেখেছো কিছু বলবে না আমাকে।

” আমি,,,,,, ইসরাত আর কিছু বলার আগেই মায়ের কন্ঠে নিজের নাম শুনে শুকনো ঢুক গিলে। এইরে কাজ সেরেছে তালহা স্যার কে খালি বাসায় ইসরাতের সাথে দেখে মা কেমন চোখে দেখে কে জানে। ”

ইসরাত তুই কার সাথে কথা বলছিস রে দরজা খোলা রেখে? বলতে বলতেই ইসরাতের মা আর বাবা এগিয়ে আসে।

ইসরাত তারাতাড়ি মায়ের কাছে গিয়ে বলে,,মা দেখো ইনি আমার কলেজের স্যার তালহা স্যার বলেই হাসার চেষ্টা করে । ইসরাতের মা তালহার দিকে তাকাতেই তালহা সালাম দেয়। ইসরাতের মা সালাম নিয়ে ইসরাতের দিকে তাকায় যার মানে কলেজের স্যার হঠাৎ বাড়িতে।কিছু বলার আগে নিজেই বলে,,,আসলে হয়েছে কি সকালে আমি বের হয়ে ছিলাম না? আমার পার্স আর মোবাইল ফোন টা হারিয়ে গেছে। স্যার পেয়েছে ঐটাই দিতে এসেছে।
ইসরাতের মা হাসার চেষ্টা করে বলে,, হারিয়ে যাওয়া জিনিস কেন ফিরিয়ে আনতে গেলে বাবা? ভালোইতো হয়েছিল মোবাইল টা হারিয়ে গিয়েছিল। আমার দোয়াটা কবুল হয়েছিল।

তালহা কিছু না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,, মানে আন্টি?

ইসরাতের মা বলে,,ও কিছু না বাবা তা দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো বসো। ইসরাতের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,, উনাকে বসিয়ে কিছু খেতে না দিয়ে এখানে শংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা কিছু খাবার টাবার নিয়ে আয়। ইসরাত মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। ইসরাতের মা তালহা কে নিয়ে সোফায় বসায়। তালহা বুঝলো ইসরাত এমন ছটফটে স্বভাব টা তার মায়ের কাছ থেকেই পেয়েছে। মনে মনে খুব হাসি পেলো এটা ভেবে মোবাইল যেনো হারিয়ে যায় তার জন্য দোয়া করেছে বলে। ইসরাতের বাবা চুপচাপ বসে আছে এদের কান্ড দেখছে চশমার ফাঁক দিয়ে।

ইসরাত চা আর বিস্কুট এনে দেয়। তালহা নিতে না চাইলেও জোর করে দেয় ইসরাতের মা। তালহা মাত্র চা ফু দিয়ে মুখে নিবে কিন্তু ইসরাতের মায়ের কথা শুনে বিষম খায়।

বুঝলে বাবা তুমি তো স্যার মানুষ। ভালো মন্দ বুঝো বর্তমানে সবকিছু নিয়েই টেনশন থাকে। ভেবেছিলাম মেয়ে কে পড়াশোনা শেষ করে,,,, কিছু বলতে গিয়েও থেমে ইসরাতের দিকে তাকায় ইসরাত তখন মায়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। উনি এক ধমক দিয়ে বলে,, তুই এখানে বড়দের মাঝখানে কি করছিস? দেখছিস না আমরা বড়রা কথা বলছি? যা গিয়ে হাত মুখ ধোয়ে আয় ঘুমিয়ে চেহারার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস। ইসরাত মায়ের মতিগতি কিছুই বুঝলো না। আর তালহার কাছাকাছি থাকতেও কষ্ট হচ্ছে তাই সে ওখান থেকে চলে যায়। ইসরাতের মা এবার নড়েচড়ে বসে বলে,,ভেবেছিলাম পড়াশোনা শেষ করিয়ে বিয়ে দিবো কিন্তু একটা খুব ভালো সম্বন্ধ পেয়েছি বুঝলে? তাই আমি আর ইসরাতের বাবা দেখতে গিয়েছিলাম আজ ।

আহ্ হচ্ছে কি? উনি স্যার মানুষ একটা উপকার করেছে আর তুমি কিসব কথা শুরু করে দিলে বলোতো? ইসরাতের বাবা বলে।

তো কি হয়েছে? বাবা তুমি কিছু মনে করেছো?

তালহা এমন অস্বস্তিতে মনে হয় জীবনে পরে নি। পাখা ছাড়া সত্যেও ঘাম বের হচ্ছে শরীর দিয়ে। গলা খেঁকারি দিয়ে বলে,,কিন্তু আন্টি এখন বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে? ইসরাত তো পড়াশোনায় খুব ভালো সামনে ওর ব্রাইট ফিউচার।( তালহা)

ওরা বলেছে পড়াশোনা করাবে বিয়ের পর ও সমস্যা নেই বলেই ইসরাতের মা হাসি দেয়।

তালহা আমতা আমতা করে জানতে চায় ইসরাত? ইসরাত কি এই বিয়ে তে রাজি? মনে মনে তালহা কি উত্তর শুনতে চাচ্ছে সে নিজেও জানে না।

ওর তো কোনো আপত্তি নেই। আমরা যা করি তাই আগেই জানিয়ে দিয়েছে এই কথা বলে ইসরাতের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে উনি কেমন করে তাকিয়ে আছে। ইসরাতের মা চোখ রাঙায়।

তালহা চা রেখেই হুট করে উঠে দাঁড়ায়। আমার জরুরি কাজ আছে বলেই তারাতাড়ি করে বেরিয়ে যায়।

ইসরাতের বাবা তার মাকে বলে,,মিথ্যা কেন বললে? ইসরাত এই বিয়ে তে রাজি? বিয়ের কথা জানতে পারলে কি কান্ড ঘটায় দেখো একবার।

তুমি চুপ থাকো এতো ভালো সম্বন্ধ আমি কিছুতেই হাত ছাড়া করবো না। আর তাছাড়া ওর সমানের অনেকেরই বিয়ে হয়েছে। নূর নূরেরও হয়েছে ওর কেন হবে না? বলেই উনি চলে যায়। ইসরাতের বাবা বসে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

*************

সারাদিন সকলের সাথে অনেক মজা করেছে ফাতিহা। সৌন্দর্য আর নূরের সাথে ঘুরে বেরিয়েছে। রাতে তিনজন এক সাথে ডিনার করেছে। রুমে ঢুকতেই ফাতিহা বিছানার উপর নাচতে নাচতে বলে,,কি মজা কি মজা আজ আমরা তিনজন এক সাথে ঘুমাবো ইয়েএএএ।
ফাতিহার কথা শুনে নূরের যেনো মাথা ঘুরতে লাগলো।সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে দেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মনের ভিতর কি চলছে কে জানে।এই আশায় আছে লোকটা কিছু বলবে কিন্তু নূর কে অবাক করে দিয়ে সৌন্দর্য ও ফাতিহার কথায় সায় জানায়।

ফাতিহা কে মাঝখানে দিয়ে দুইজন দুই সাইডে শোয়।কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে ফাতিহা বলে সে এক সাইডে ঘুমাবে,মাঝখানে ঘুমালে তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। নূর তো অবাক বলে কি মেয়ে। নূর মানা করলে ফাতিহা কান্না জুড়ে দেয়। সৌন্দর্য তো ফাতিহার চোখের পানি দেখলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। নূরকে একটু গম্ভীর গলায় বলে,,সমস্যা কি নূর? তুমি এই সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মেয়ে কে কাঁদাচ্ছো? আমার মেয়ে যা বলে তাই হবে।

বাবা মেয়ে বিছানা ঠিক করে বালিশ বিছিয়ে দিচ্ছে। নূর শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সব গুছিয়ে নূর কে ডাক দেয় ফাতিহা। প্রথমে সৌন্দর্য তারপর নূর আর তারপর ফাতিহা।নূর শোয়ার সাথে সাথে ফাতিহা ঝাপটে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে শুয়ে পরে।খালামনির কথা ভেবে হাসে,,একটু আগে তার তূর খালামনি ফোন দিয়ে এসব বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছে। সে জানেনা কেন তূর তাকে দিয়ে এসব করিয়েছে শুধু খালামনি বলেছে আর সে করেছে।

সৌন্দর্য শোয়ার সাথে সাথে নূরের পিঠে একটু ছোঁয়া লাগে ব্যস শুরু হয়ে যায় নূরের কাঁপা কাঁপি। সৌন্দর্য কিছু সময় নূরের পিঠের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,,”কতো তাপমাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে আল্লাহ ই জানে। আল্লাহ এমন দূর্যোগ থেকে এই অসহায় বান্দা কে রক্ষা করো।”

সৌন্দর্যের কথা নূরের কানে যেতে ভুল হয় না। ইচ্ছে করছে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিতে। অ’সভ্য সুন্দর মানুষ।

#চলবে,,,,,,,