#আষাঢ়ে_প্রণয়_সন্ধি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩১
বিকাল পাঁচটা বাজে। নিশি, চিত্রা, রাফিন বের হয়েছে ঘোরাঘুরি করার জন্য। বাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটছে তিনজন রাস্তায়। রাফিন মাঝে দু’জন দুপাশে। হাঁটতে হাঁটতে তারা চিত্রার ভার্সিটির কিছুটা কাছাকাছি চলে এসেছে। কথা বলতে বলতে বুঝতেই পারেনি এতো দূর চলে এসেছে তারা। খেয়াল হতেই ভার্সিটি থেকে ঘুরে আসার চিন্তা করলো। তবে এখন থেকেও অনেকটা দূর ভার্সিটি। তারা ঠিক করলো রিকশায় চড়ে যাবে সেখানে। যেই ভাবা সেই কাজ। রাফিন রিকশা খুঁজতে লাগলো। পেয়েও গেলো। এবার উপরে কে বসবে এই নিয়ে তিনজন কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি করলো। অতঃপর দু’জনের চাপে পরে রাফিনকেই উপরে বসতে হলো।
রিকশা চলতে শুরু করলো। তিনজন ভার্সিটির সামনে এসে নামলো। ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। তিনজন হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। সেখানে আসতেই চিত্রার মাথা গরম হয়ে যায়। চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। সে রাফিন নিশিকে ছেড়ে এগিয়ে গেলো দ্রুত পায়ে। ছেলেটিকে পেছনে ঘুরিয়ে থাপ্পড় মেরে বসলো। সামনে থাকা মেয়েটি ভয়ে কাঁপছে।
“সাহস কি করে হলো ক্যাম্পাসে এসে মেয়েদের টিজ করার? মেয়েদের দেখলেই অসভ্যতামি করতে ইচ্ছে করে না”
ছেলেটা চোখ তুলে তাকালো চিত্রার পানে। রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে উঁচু গলায় বলে উঠলো,,
“হ্যাঁ করে তাতে তোর কি সমস্যা? আমি এই ভার্সিটির স্টুডেন্ট আমার যা ইচ্ছে তাই করবো। থাপ্পড় কেনো মারলি?”
ছেলেটা চিত্রাকে থাপ্পড় মারতে যায়। রাফিন এগিয়ে আসতে চায় চিত্রাকে বাঁচানোর জন্য তবে চিত্রা তার আগেই ছেলেটির হাত মুচড়ে দেয়। ছেলেটির সাথে থাকা ছেলেরা এগিয়ে আসতে নিলে তাদের সিনিয়র কয়েকজন ছেলে সেখানে উপস্থিত হয়। ছেলেগুলো চিত্রার শক্ত চোখ মুখ দেখেই বুঝে যায় কিছু একটা হয়েছে। ছেলেগুলো এসে চিত্রাকে সালাম দেয়। চিত্রা চিৎকার করে বলে,,
“এই বেয়াদব গুলো কোন ইয়ারের সাহস কি করে হলো এদের? তোমরা থাকতে এরা মেয়েদের টিজ করে কোন সাহসে। এরা কি আমায় চিনে নাহ”
কথাগুলো বলে রাগে ফুঁসছে চিত্রা। ছেলেগুলোর ভেতর একজন বলে,,
“আপু ওরা ফার্স্ট ইয়ারের। এখনো কেউ আপনায় চিনে না। আর এই সাইডটায় কেউ আসে না বিধায় সাহস পেয়েছে এগুলো করার। আমরা দেখে নিচ্ছি”
“এদের বুঝিয়ে দিও চিত্রা কি জিনিস। এখন আগের তুলনায় চুপচাপ আছি বিধায় ভেবো না চিত্রা কিছু করতে পারবে না। আর তুই তোর সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমি মেয়েদের হ্যারাস করেও বড় গলায় কথা বলিস”
ছেলেটা মাথা নিচু করে বলে,,,
“দুঃখিত আপু এরপর থেকে আর হবে নাহ। ক্ষমা করবেন আমাদের।”
চিত্রা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
“মেয়েদের সম্মান করতে শিখো। এই মেয়েরাই কিন্তু তোমাদের মা বোন এবং স্ত্রী হবে”
তারপর মেয়েটির দিকে ফিরে বলে,,“আর তুমি নিজে প্রতিবাদ করতে শিখো। কারণ আমি আজ তোমাকে বাঁচিয়েছি বলে ভেবো না সবাই এইভাবে তোমায় বাঁচাতে আসবে”
ছেলেগুলো মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে স্থান ত্যাগ করলো।মেয়েটিও তাকে ধন্যবাদ দিয়ে, এবং তার কথা মাথায় রাখবে বলে স্থান ত্যাগ করলো। এদিকে এমন রণচণ্ডী চিত্রাকে দেখে রাফিন এবং নিশি হা করে তাকিয়ে আছে। চিত্রা তাদের দিকে এগিয়ে আসতেই রাফিন বিষ্মিত কন্ঠে শুধালো,,
“কি রে ভাই তুই ওই ছেলেটার সাথে পারলি কিভাবে?”
“আমি সব জানি। বাবা আমায় ফাইট শিখিয়েছে। নিজের প্রতিরক্ষা করার জন্য। এখন এগুলো নিজের জন্য এবং এরকম মেয়েদের সাহায্য করার জন্যও কাজে লাগে”
তিনজন সেখান থেকে ঝালমুড়ি খায় এরপর রিকশায় করে আবার এলাকায় আসে। এখানে একজন ফুসকা বিক্রি করে। যা খুবই পছন্দ করে চিত্রা। তাই ওদেরও নিয়ে আসলো। ফুসকার ওর্ডার দিয়ে তিনজন বসলো পাশে রাখা চেয়ার টেবিলে। তখনই চিত্রার ফোনে মেসেজ আসলো আষাঢ়ের। আষাঢ় জিজ্ঞেস করেছে তারা কোথায়? চিত্রাও বলল তাদের ঠিকানা। ফুসকা খাওয়ার মাঝেই আষাঢ় উপস্থিত হলো। আষাঢ়কে দেখে চিত্রা বলল,,
“চলে এসেছেন আপনি। বসুন। ফুসকা খাবেন?”
আষাঢ় চিত্রার পাশের চেয়ারে বসে বললো,,“নাহ আপনি খান”
চিত্রা আষাঢ়কে রাফিন এবং নিশির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। আষাঢ় টুকটাক কথা বললো। নিশি তেমন একটা কথা বললো না। আষাঢ় যদিও বুঝতে পেরেছে কেনো। তবে সে কি করতো তার অতিরিক্ত ফাজলামি পছন্দ নয়। এখন এসেছে শুধু মাত্র চিত্রার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে তা ছাড়া আর কিছু না। রাফিনের সঙ্গে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে কিছুক্ষণ কথা বলে। ফুসকা খাওয়া শেষ হতেই আষাঢ় বিল দিতে চাইলো।
চিত্রা মানা করলেও শোনেনি আষাঢ়। সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে ততক্ষণে। চিত্রা একটু ফাঁকা জায়গায় এসে দাড়িয়েছে। তখনই নাহিয়ান তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
চিত্রা কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। হঠাৎ কেউ সামনে এসে দাঁড়ানোর জন্যই চমকে উঠেছে। নাহিয়ান চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
“কেমন আছো চিত্রা?”
চিত্রা বিরক্ত হয়ে বলে,,
“কে আপনি? আমি কি চিনি আপনায়? অপরিচিত মানুষের কাছে এসে ভালো আছি কি না এটা জিজ্ঞেস করছেন? এটা কোনো ভদ্রতা?”
নাহিয়ান নিচু স্বরে বলে,, “তুমি আমায় ভুল বুঝো না চিত্রা। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। তাছাড়া কিছুই না। আমি জানি আমি অনেক বড় খারাপ কাজ করেছি আর এখন তার শাস্তিও পাচ্ছি”
“হয়েছে এবার যেতে পারেন আপনি”
ততক্ষণে আষাঢ় এসে চিত্রার পাশে দাঁড়িয়েছে। আষাঢ় পুরুষটি কে হতে পারে বুঝলো না। তবে চিত্রার বিরক্তিভাবটা বুঝলো। নাহিয়ান আবার বলে উঠলো,,,
“ক্ষমা করেছো তো তুমি?”
চিত্রা এক পলক আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। এরপর নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,
“ধন্যবাদ আপনায় আমাকে সেদিন ঠকানোর জন্য। কারণ আপনি না ঠকালে আমি আজ এই চিত্রায় পরিনত হতে পারতাম নাহ। আর না আষাঢ় সাহেবের মতো কাউকে জীবনে পেতাম। তাই ধন্যবাদ আপনাকে”
আষাঢ় বুঝলো ছেলেটি কে হতে পারে। তবে সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো চিত্রার পানে। নাহিয়ান ছেলেটা যাওয়ার আগে একটা কথায় বলল,,
“কেউ কাউকে ঠকিয়ে ভালো থাকতে পারে না চিত্রা,
আমিও ভালো নেই। তুমি সুখী হও”
নাহিয়ান চলে যেতেই আষাঢ় বললো,,“এই তবে নাহিয়ান”
চিত্রা নির্লিপ্ত কণ্ঠে শুধালো,,,“হ্যাঁ”
“আপনি কি আজও তাকে মনে করেন চিত্রা?”
চিত্রা রাস্তায় চলাচলকৃত গাড়িগুলো দেখছিলো। ব্যস্ত শহরীর মানুষগুলোকে দেখছিলো। আষাঢ়ের মলিন কন্ঠ শুনে তাকায় তার দিকে। এরপর মৃদু স্বরে বলে,,,
“তাকে মন থেকে ঘৃনা করি আমি। সে আমার সাথে জঘন্যতম কাজ করেছে। তাকে মনে রাখার কোনো প্রশ্নই উঠে না। তবে আমি আপনায় পছন্দ করি এবং আপনার সাথেই থাকতে চাই। আপনার সঙ্গ ভালো লাগেে আমার”
আষাঢ়ের বোধ হয় ভালো লাগলো। সে হাসলো। চিত্রার হাতটা শক্ত করে ধরার খুব ইচ্ছে জাগলো। তবে এখনো সম্পূর্ণ অধিকার নেই তার। বিয়ের পর না হয় ওই হাত দুটো ধরে হাঁটবে। হাঁটবে শহর জুড়ে। চিত্রা আষাঢ়কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“ওরা দু’জন কোথায় আষাঢ় সাহেব?”
“ওরা চলে গিয়েছে”
“আচ্ছা চলুন বাড়ির দিকে যাওয়া যাক। অনেকটা সময় বেরিয়েছি বাড়ি থেকে ক্লান্ত লাগছে আমার”
আষাঢ় সম্মতি দেয়। দু’জন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। চিত্রা বেশ ক্লান্ত। ওদের সাথে মজা করতে করতে অনেক হেঁটেছে আজ। আষাঢ়ের সাথে টুকটাক কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো চিত্রা। নাহিয়ান দূর থেকে এই দৃশ্য দেখছিলো। সে যায়নি এখনো। এই মেয়েটা তাকে আগে পাগলের মতো ভালোবাসতো আর এখন তার চোখে মুখে ঘৃনা ছাড়া কিছু দেখতে পায় না নাহিয়ান। আল্লাহ ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না। তাকে ও সে ঠকিয়েছে।
#চলবে~