শান্তি সমাবেশ পর্ব-১১

0
772

#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১১

— দেখ সাফারাত আমার থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা কর। সেটা তোর জন্য ও ভালো আমার জন্য ও।

–সাফারাত? তুই আমাকে সাফারাত বলে কবে থেকে ডাকিস?

— যে দিন… বাদ দে। আমার জীবনে রাত নামক বন্ধু আগেই মরে গিয়েছে। এখন যে আছে সে শুধুই সাফারাত। সাফারাত মির্জা।

–পূর্ণ আমার কথাটা শুন। চাইলে আমরা এখনও…

— একদম চুপ জা*নো*য়া*রে*র বাচ্চা৷ চাইলে কি হ্যাঁ? কি? আমাকে মানুষ চিনাস তুই? তোর ঐ *** বাচ্চা বাপ’কে বলিস রাজনীতি করে সে চুল সাদা করলেও পূর্ণ’কে টেক্কা দিতে দম লাগবে।

— দেখ পূর্ণ মুখ খারাপ করবি না। ভালোভাবে কথা বল। বুঝি না এত গালি কবে শিখলি তুই?

— এই যা তো। যা।

বিরক্তির স্বরে পূর্ণ এটা বলতেই সাফারাত মজার ছলে চেয়ারটা পূর্ণ’র কাছে টেনে বসলো। ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে গেল পূর্ণ। সাফারাত এতে বেশ ভালোই চমকালো। এখন কি পূর্ণ তাকে এতটুকুও সহ্য করতে পারছে না? সাফারাত কিছু বলার আগেই জঘণ্য কান পঁচা গালি দিলো পূর্ণ। সাফারাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। গায়ের পাঞ্জাবি টেনে ঠিক করে বেশ শান্ত স্বরে বললো,

–আয় না পূর্ণ এককাপ চা খাই। অনেকদিন খাই না।

পূর্ণ মুখ খুলার আগেই সাফারাত বলে উঠলো,

— কাউকে গালি দিলে এমনকি সেটা মজা করে হলেও এক গালির বিনিময়ে একটা করে বিচ্ছু তৈরী হয় কবরে। আমাকে গালি দিলে ক্ষতি কিন্তু তোর হবে।

পূর্ণ নিজেকে দমন করার চেষ্টা চালালো। সে এমন নয়। কথা যথেষ্ট মেপে বলা ছেলে সে। বড় বড় শ্বাস টেনে নিজেকে ঠান্ডা করে বললো,

— আমার থেকে দূরে থাক সাফারাত। তুই সারারাত মির্জা আমার কাছে রাত না। রাত’কে যতটা ভালোবাসতাম ঠিক তার দ্বিগুণ ঘৃণা করি এখন এই সাফারাত’কে।

সাফারাতে’র মতো শক্ত পুরুষটার চোখে পানি জমলো। কথাটা বেশ ভারি। পূর্ণ কিভাবে বললো এতটা ভারি কথা? মুখটা কাঁপলো না। সাফারাতের ফর্সা মুখটা লাল হওয়া ধরলো যেটা পূর্ণ খেয়াল করেছে। হাতে থাকা পানির বোতলের পুরোটা ওর মাথায় ঢেলে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,

— জাস্ট দূরে থাকবি আমার থেকে।

কথাটা বলেই গটগট পায়ে চলে গেল। মৃত্তিকা’র সাথে দেখা করতে হবে। এছাড়াও আজ একজন সংসদ সদস্য ডেকেছে তাকে দেখা করতে পার্সোনাল ভাবে। পূর্ণ’র জন্য বড়সড় একটা অপরচুনিটি এটা যা কোনভাবেই মিস করা যাবে না।
পূর্ণ’র যাওয়ার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো সাফারাত। “পুরুষ কাঁদে না” কথাটা মিথ্যা করে দিয়ে সাফারাতে’র চোখ গলিয়ে আবারও পানি পরলো। একটু কাঁদা দরকার তার। ত্রস্ত পায়ে ছুটে গাড়িতে বসলো। স্টেরিং এ মাথা ঠেকিয়ে কেঁদেও ফেললো। এতবড় শরীরটা কান্নার প্রকোপে কেঁপে কেঁপে উঠল।

পেছনে তার দলের কয়েকজন। জুহান পানির বোতলটা সাফারাত’কে এগিয়ে দিয়ে বললো,

–ভাই পানিটা খান।

___________________

— আপনার এই ভীত চাহনি আমার বেশ লাগে মৃত্ত।

কথাটা বলেই পকেটে ফোনটা রাখলো। মৃত্তিকা তখনও গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পূর্ণ একপলক মৃত্তিকা’কে দেখে নিলো। একপলক হলেও দেখেছে পুরোটা। মাথায় একটা ঝুঁটি করে নিজের কোঁকড়ানো চুলগুলো একসাথে আটকে রেখেছে। অবাধ্যগুলো কেও ছাড় দেয় নি। ক্লিপ দিয়ে আটকে রেখেছে। শ্যামলা মুখটা সুন্দর। ভয়ংকর সুন্দর। পূর্ণ’র হৃদয় পোড়ানো সুন্দর। হালকা রঙের গোল ফ্রকটা বেশ মানিয়েছে তাকে। পূর্ণ’র অবাধ্য পুরুষ মনটা বলে, “দে না পূর্ণ একটু ছুঁয়ে দে। কি হবে একটু ছুঁয়ে দিলে?”
পূর্ণ ধমকায় সেই অবাধ অনুভূতিকে, “মোটেও না। আমার সকালের অঝড়া ফুল এই মৃত্ত। একে ছুঁয়ে যদি ঝড়ে পরে?” ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো পূর্ণ।আজকাল অনুভূতি’রা জ্বালায় তাকে। একটু ঝুঁকতেই মৃত্তিকা পিছিয়ে গেলো। পূর্ণ বিরক্ত হলো বটে। আরেকটু এগিয়ে মৃত্তিকা’র চুলে আলগা হওয়া ক্লিপটা পট করে শব্দ তুলে লাগিয়ে দিলো। মৃত্তিকা স্বস্তি’র শ্বাস ফেললো। পূর্ণ ঘড়িতে একবার দেখে বললো,

— আজকে একটা মিটিং আছে মৃত্ত। আপনি কথা বলুন প্লিজ। আমার কান দুটো যে আপনার কন্ঠ শুনার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। একটু কিছু বলুন।

মৃত্তিকা ঢোক গিললো। এমনিতেই ভয় পায় পূর্ণ’কে। দুই দিন ধরে কেমন কেমন অনুভূতি গুলো জন্মালেও তা দমিয়ে রেখেছিলো। আজ সকালে ভার্সিটি আসার পরই সকল অনুভূতি গুলো ভয়ে রুপ ধারণ করেছে।

–ইশিতা আপু আ*ত্ম*হ*ত্যা করতে চেয়েছিলো। এর পেছনে কি আপনার হাত আছে?

ভয়ে ভয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললো মৃত্তিকা। পূর্ণ স্বাভাবিক ভাবে বললো,

— আমি কি খু*নি মৃত্ত?

সারাদেহ কেঁপে উঠল মৃত্তিকা’র। তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো,

— না না আমি সেটা বলি নি।

— তাহলে কি বলেছেন মৃত্ত?

— আ…আমি।

— আপনি আবারও তোঁতলাচ্ছেন কেন?

— কই নাতো।

— হু ভালো।

কিছুক্ষণ নীরবতা পালন হলো। বিস্তর এই নীরবতা ভেঙে পূর্ণ বলে উঠলো,

— শুনলাম গতকাল ওর কোন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। হয়তো সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করতে চেয়েছে।

একটু থেমে আবারও বললো,

— সেসব বাদ দিন মৃত। খারাপের সাথে খারাপ হবে। তাই না?

— কিন্তু।

— কোন কিছু না মৃত্ত। চলুন আমার সাথে।

মৃত্তিকা দাঁড়িয়ে রইলো ঠাই। মাথা খালি খালি লাগছে ওর। কিছুক্ষণ পরই খেয়াল করলো পূর্ণ গভীর চোখে ওকেই দেখছে। মৃত্তিকা হকচকালো।

–কি দেখেন?

পূর্ণ শীতলতা ঢালা গলায় বললো,

— আমি ম’রে গেলে রোজ আমার কবরে যাবেন মৃত্ত। আপনাকে দেখা আমার কোনদিন ও শেষ হবে না।

একটু থেমে জিজ্ঞেস করলো,

— বিচ্ছু ভয় পান মৃত্ত?

— না। আগে পেতাম। একদিন আব্বু মারা শেখালো।

— আপনার আব্বু ভালো একটা কাজ করেছে।

— কেন?

অবুঝ গলায় প্রশ্নটা করতেই পূর্ণ বলে উঠলো,

— আমার কবরে থাকা বিচ্ছু গুলো তাড়িয়ে দিবেন মৃত্ত। আমার ভয় লাগে ওটা। বলুন দিবেন? ওটা দেখতে পারি না আমি। ওটার সাথে কিভাবে থাকব আমি মৃত্ত। আপনি পাশে থাকলে ভয়টা কম লাগবে।

পূর্ণ’র র*ক্ষরণ কারী কথা শুনে হাত পা যেন আসার হয়ে আসছে। পূর্ণ’র কন্ঠে কিছু একটা ছিলো। কিন্তু কি? ছোট্ট বাচ্চার পাওয়া কোন ভয়? কান্না? আকুলতা? কি ছিলো? সহজ সরল মৃত্তিকা ঠিক ঠাওড় করতে পারলো না কিন্তু খেয়াল করলো ওর চোখ ভিজে উঠেছে৷ হয়তো পূর্ণ’র মৃত্যু’র কথা শুনে।

#চলবে…..