#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৫
[পর্বটা একটু রোম্যান্টিক। চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
নির্বাচন অতি নিকট। শোয়েব মির্জা যথাযথ চেষ্টা চালালেও লাভের লাভ কিছুই হলো না। জনগণ সহ বড় বড় নেতারা পূর্ণ’র উপর। শোয়েব মির্জা যোগাযোগ বৃদ্ধি করলেন। টাকা ঢাললেন। সবকিছু যখন বিফলে যাচ্ছে তখন তার মস্তিষ্ক চিড়বিড় করে উঠলো। ভেবেছিলেন সাফারাত হয় তো তার ডানহাত হবে কিন্তু লাভ হচ্ছে না এতেও। সেই ঘুরে ফিরে একই কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। দিকবিদিকশুন্য মানুষ যা করে তিনিও তাই করলেন। ফোন করে বেফাঁস যা পারলেন পূর্ণ’কে বললেন। অবাক করা বিষয় পূর্ণ চুপ ছিলো। কিছু বলে নি। শোয়েব মির্জা রাগ ঝেড়ে ধপ করে বসে পরেন। আজ বাদে পরসু নির্বাচন। অথচ চোখে তিনি অন্ধকার ব্যাতিত কিছুই দেখতে পারছেন না।
মৃত্তিকা পূর্ণ’র বুক থেকে মুখটা তুলে প্রশ্ন করলো,
— কে কল করেছিলো?
পূর্ণ হাত চালালো মৃত্তিকা’র ভেজা চুলের ভাজে। কপালে চুমু খেয়ে ঠান্ডা গলায় বললো,
— শোয়েব মির্জা।
— আল্লাহ! ঐ এমপি না?
— হু।
— আপনি চিনেন তাকে?
চোখে হাসে পূর্ণ। নাদান মৃত্ত তার। কত কত মন্ত্রী’র সাথে পূর্ণ উঠা বসা করেছে অথচ তার ভোলাভালা বউটা এই অল্প শুনেই আশ্চর্য হলো। পূর্ণ আদুরে হাত বুলালো মৃত্তিকা’র গালে। কপালে। শিউড়ে উঠে মৃত্তিকা। পূর্ণ তাকে নিয়েই উঠে বসলো। মৃত্তিকা দেনামনা করে বললো,
— উঠলেন যে?
— কেন আরো আদর চাই?
— চুপ থাকুন। খারাপ লোক।
— হাহ। বউয়ের কাছে অবশ্যই কেউ সাধু থাকে না মৃত্ত। এমনকি সাধুরা ও না৷
— ঘুমাব আমি।
–আপাতত সেটা সম্ভব না।
— কেন?
উত্তর করে না পূর্ণ। উঠে দাঁড়িয়ে একটা পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে ভেজা চুল গুলো বেঁধে দেয় মৃত্তিকা’র। নিজে একটা জ্যাকেট পড়ে মৃত্তিকা’কে একটা শাল পেঁচিয়ে কান টুপি পড়ালো৷ তার উপর একটা ওভার কোর্ট। মাথায় একটা উড়না পেঁচিয়ে দিয়ে বললো,
— একদম। আমার বউ লাগছে। চলুন।
বলেই হাতটা মুঠোয় নিলো। মৃত্তিকা গোঁ ধরে বললো,
— না বললে চলব না। কোথায় যাচ্ছি? রাত ২ টা বাজে তো।
— প্রেম করতে।
মৃত্তিকা থমকে যায়। পূর্ণ তাকে ধরে ধরে নিয়ে বাইরে আসে। মৃত্তটা তার নাজুক৷ তাকে সেঁতে সেঁতে রাখতে হয়। আদরের পরবর্তী সময়টা দূর্বল থাকে কিছুটা। তাই তো এখন এমন ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
.
বাইকে পূর্ণ’কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে মৃত্তিকা। ভালোই হয়েছে চুলে ক্লিপ’টা মারায় না হলে এতক্ষণে নাকে মুখে চলে যেত।
সড়কটা খোলা। মাঝে মধ্যে শাঁ শাঁ করে দুই একটা গাড়ি যাচ্ছে। বাইকই বেশি। টুংটাং শব্দ করে রিক্সা চলছে তবে তুলনা মূলক কম। কেই বা প্রয়োজন ছাড়া এই সময় বউ নিয়ে প্রেম করতে বের হবে?
একটা জোড়া ব্রিজের ঠিক মাঝখানে এসে থামলো পূর্ণ। রাতের আলোয় ঝলমল করছে ব্রিজের নীচের পানিগুলো। ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এই দিকটাতে লাইটিং করা তাই হয়তো সৌন্দর্য বেড়েছে বহুগুণ। অবাক নয়নে সবটা অবলোকন করে মৃত্তিকা। ঠান্ডা বাতাসে যখন তার মাথার ওরণা টা পড়ে গেলো পূর্ণ সুন্দর করে তা আবারও মাথায় টেনে নিলো। পেছন থেকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ দিয়ে বললো,
— বলেছিলাম না বিয়ের পর প্রেম করব। সেই ওয়াদাগুলো এখন থেকেই পূরণ করে যাব মৃত্ত।
— আমার কেমন জেনো লাগছে পূর্ণ।
— ঠিক কেমন?
— এলোমেলো সবটা। এত সুখ কোথায় রাখব আমি?
— আপনার বুকে রেখে দিন আমাকে মৃত্ত। সেখানেই আমার সমাধি দিবেন।
রাগ হয় মৃত্তিকা’র। এগুলো প্রেমের কথা? সরে যেতে নিলেই পূর্ণ আটকালো৷ গভীর চাহনি দিয়ে ঘায়েল করলো মৃত্তিকা’কে। দু’জনের ঠান্ডা র*ক্তহীন ওষ্ঠাধর মিলিত হলো অতি শিঘ্রই।
এই ঠান্ডার মাঝে মাঝ ব্রিজে তাদের এহেন আলিঙ্গনের সাক্ষী রইলো রাতের কুয়াশা সাথে ঝিলের রঙহীন পানি।
___________________
ফোনে নারী কন্ঠে এই নিশুতি রাতে মগ্ন সাফারাত। এত ঠান্ডার মাঝেও সে ফ্লোরে খালি গায়ে শুয়ে আছে। অপর পাশ থেকে কিছু বলা হলো। সাফারাত হাসলো তবে শব্দহীন। ফিচেল গলায় বললো,
— কিভাবে চিনো এতটা আমায়?
অপরপাশ থেকে পুণরায় কথা বললো। সাফারাত কথা বাড়ালো না। তবে নারীটিও দমলো না। না পেরে ফ্লোর থেকে বিছানায় শায়িত করলো তার বড়সড় দেহটাকে। ফোনের স্ক্রিনে চুমু খেয়ে বললো,
— এবার ঘুমাই তাহলে?
হয়তো সম্মতি এলো তাই কলটা কেটে তা পাশে ছুঁড়লো সাফারাত। চক্ষু মুদন করে ঘুমাতে চাইলো।খোলা জানালা দিয়ে শীতের বাতাস ফুড়ফুড় করে ভেতরে এলো। সেদিকে হুস নেই সাফারাতের। সে মেতে আছে মিষ্ট জগৎ এ। এই জগৎ এ তার, একান্ত তার সঙ্গী মাশরুহা।
~ বাবা’কে বরাবর সমীহ করে চলে সাফারাত। এই যে কানাডার মাটিতে পরে আছে সে। মোটেও ইচ্ছা ছিলো না মা’কে ছেড়ে এখানে আসার। বাবা রাজনৈতিক নেতা। শত্রুর অভাব নেই। না চাইতেও মা পাগল ছেলেটা পারি জমায় এই ভিন দেশে। তবে পিছিয়ে যায় পড়াশোনায়। ইয়ার গ্যাপ পড়ে কয়েকটা। বড়লোক বাপের নিকট তা নিছক ব্যাপার। যদিও তিনি চাইতেন পড়াশোনা শেষে ছেলেকে রাজনৈতিক দায়িত্ব দিবেন তবে তার খেলাপ ছিলো সাফারাতের মা। কোন ভাবেই ছেলেকে এ পথগামি হতে দিতে নারাজ তিনি। সাফারাতের ও ততটা ঘনিষ্ঠতা ছিলো না রাজনীতি’র সাথে। মা ছেড়ে এই ভিনদেশে তার সঙ্গী হয় পূর্ণ। একই কলেজের তাদের পড়াশোনা। তবে দূর্ত পূর্ণ ঐ দেশেই রাজনীতি নিয়ে বেশ চর্চা করতো। বিভিন্ন ছোট খাট কাজে তাকে দেখা যেত। বড়দের সাথে সাথে থাকা চলা তার নিকট স্বাভাবিক ই বটে। সাফারাত তার সিনিয়র হলেও একসময় বন্ধুত্বটা এতটাই গাঢ় হলো যে ব্যাপারটা দুদভাতে পরিণত হলো। পূর্ণ’র বাসায় যাতায়াত বাড়লো। সাফারাত থাকত হোস্টেলে সেখান থেকে পূর্ণ’র বাবা-মা এর জোড় করাতে সিফ্ট হলো তার বাসায় পেন গেস্ট হিসেবে। এতসব বাংলাদেশে কেউ জানত না। মাশরুহা’র সাথে সম্পর্ক টাও তখনই গড়ায়। হতে হতে বছর গড়ায়। রঙ পাকা হয়। বাসায় পূর্ণ’র বাবা-মা ও ব্যাপারটা জানতে পারে। তবে পুরোটাই আন্দজ। মাশরুহা হলো বাচ্চা বাচ্চা আচরণ করার মেয়ে। এক মেয়ে হলে যতটা জেদী হয় ঠিক ততটা। সেই জেদী মেয়েটাকে শুধু মাত্র হটাতে পারত সাফারাত। মাশরুহা’র রাত।প্রণয়ের প্রায় বছর দুই-এক পর তাদের লুকিয়ে বিয়েটা হয়। ততদিনে প্রায় রমরমা প্রেম তাদের।
তাদের লুকিয়ে বিয়ের খবরটা বাসায় কেউ ই জানত না। হয়তো সম্পূর্ণ নতুন ভাবে বিয়ের আগে কখনো কেউ জানতো ও না যদিও না একটা কালোরাত তাদের দাঁড়গোড়ায় এসে হানা দিতো।
বিয়ে হয়েছে প্রায় তখন ছয়মাস চলে গিয়েছে। তাদের চলাচলটা ঠিক আগের মতোই যেন কিছুই হয় নি কিন্তু মাশরুহা’র সৌন্দর্যে রোজ করে হারাতো সাফারাত। না চাইতেও আগের ভালোবাসাটা শুধু আসত না বরং তা সময়ের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছিলো। এই যে আগে যেখানে একদম ই কদাচিৎ মাশরুহা’র ঠোঁটে চুমুটা খাওয়া হতো তা এখন হয় না বরং প্রায় সময়ই এটা হয়ে উঠে। সাফারাত যেন পাগল পাগল হয়ে যায়। মজা লুটে মাশরুহা। সাফারাতকে হেনস্তা করে সে বড্ড মজা লুটতো।
রোজকার ন্যায় সেদিন ও রাত নামলো। আঁধারে ঘনঘটা তখন কানাডার শহর। পূর্ণ বাবা-মা সমেত গিয়েছিলো কোন এক ফাংশনে। মাশরুহা যায় নি। তার শরীর ভালো না। মেয়েটার অল্প সল্প জ্বর। পাশের বাড়ীর প্রতিবেশী প্লাস পূর্ণ’র বাবা’র কলিগ না হলে বোধহয় মেয়েকে রেখে তারা যেতেন ও না।
তবুও সাফারাত থাকায় সস্তি।
ডিনার শেষে সারারাতের কল আসে। মা কল দিয়েছে। রিসিভ করে ভিডিও কলে কথা হয়। মাশরুহা’কে ওর মা চিনে। সাফারাত দেখিয়েছে। মায়ের অনেক ক্লোজ কি না। মাশরুহা যাওয়ার পরও প্রায় ঘন্টা খানিক মায়ের সাথে কথা বলে সাফারাত। কল রেখে একবার খোঁজ নিতে যায় মাশরুহা’র। না জানি জ্বর বাড়লো কি না। সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বারদুয়েক ডাক দিলো সাফারাত,
— রুহা? জান? একা রুমে চলে এলে?
জবাব এলো না। সাফারাত দরজা ধাক্কা দিয়ে আনমনে বলতে থাকে,
— বার্ড কতবার ডাকছি….
বাকিকথাগুলো গিলে নেয় সাফারাত। স্লিভলেস একটা ব্লাউজের সাথে শাড়ী পড়ে আছে মাশরুহা। সাজ বলতে গাঢ় লিপস্টিক। পাগল করা ব্রাউন, কালো চুলগুলো ছড়িয়ে রাখা। সাফারাতের দম বন্ধ হয়। এমনিতেই ইদানীং বিয়ের পর থেকে মাশরুহা’র প্রতি ভিন্ন টান আসে। হালাল একটা ভাইব আসে। কাছে টানতে মন চায়। কিন্তু এই রুপ দেখে সামলাবে কিভাবে। ওর ধৈর্যের যেন ভয়ংকর পরিক্ষা হলো সেদিন। মাশরুহা আবেদনময়ী রুপে তাকে নিকটে ডাকলো। দিকভ্রান্ত সাফারাত এগিয়ে যায়। যথাযথ ধুকপুকানি তার বুকে। বহু কষ্টে আওড়ায়,
— রুহা.. কলিজা! আমার জান এটা ঠিক হচ্ছে না। বার্ড না আমার। ট্রাই টু…
বলতে দেয় নি সাফারাতকে। নিজের ওষ্ঠের সাহায্যে আটকে দেয়। কিছুক্ষণ তাদের গভীর থেকেও গভীর ভালোবাসা আদান প্রদান হতেই হুসে ফিরে সাফারাত। ছিটকে সরে যেতেই মাশরুহা আটকায়। ছলছল তার চোখ জোড়া। সাফারাত জাপ্টে তাকে বুকে চেপে ধরে মিনতির সুরে বলে,
— বার্ড, ডোন্ট ডু দিস। আই কান্ট কনট্রোল।
— ডোন্ট নিড।
— ইউ উইল রিগর্রেট জান।
— আই উইল নট রাত।
মোহনীয় স্বর সাথে একাকীত্ব। সবচেয়ে বড় তকমা হালাল। এসবেও যখন সাফারাত নিজেকে গুটাতে ব্যার্থ তখনই ওর সবচেয়ে দূর্বল জায়গায় আঘাত হানলো রুহা,
— তোমার বাবা মানবে না তাই না? নিশ্চিত বাংলাদেশে কেউ আছে রাত? আমার সাথে চিট করছো? টাইম পাস করছো তাই না।
ব্যাস সাফারাত এই কথাটাই শুনতে পারে না। বাইরে তখন তুষাড় ঝর উঠেছে।পূর্ণ’র পরিবার আটকা পড়ে তাতে। এদিকে বেসামাল সাফারাত মাশরুহা’কে বেসামাল করে তুললো। পাগলের ন্যায় মেতে উঠলো ওষ্ঠাধরে। গাঢ় রঙের লিপস্টিকটা ছড়িয়ে গেলো চারদিকে। আঁচল গড়িয়ে ফ্লোরে ছুঁয়ে দিলো। এই ঠান্ডা বৈরী আবহাওয়ায় দুইজন হলো দু’জনের উষ্ণতার চাদর। মাখামাখি হলো দুটি দেহ। হুষ্ঠপুষ্ঠ সাফারাতের বক্ষতলে পেষণ হলো মাশরুহা’র নারী দেহ। বাইরে ঝড় থামলো না তবে একটা সময় থামলো দুই জনের উন্মাদনা। দুই বাহুতে মাশরুহাকে বেঁধে নিয়ে কপালে, সারামুখে চুমু খেল সাফারাত। নিভু নিভু চোখে মাশরুহা তখন তাকে দেখে হাসছে। জড়ানো, ব্যাথিত গলায় শুধায়,
— রাত পেইন হচ্ছে।
.
ঝট করে চোখ মেলে সাফারাত। এই ঠান্ডায় ঘামছে সে। এমন স্বপ্ন নতুন নয়। প্রায় সময়ই আসে। যখনই আসে তখন নিজেকে পাগল পাগল লাগে সাফারাতের। ঘড়িতে ভোর চারটা। আচমকা বাতাসে শরীর শীতলতায় ছেঁয়ে গেলো তার। তার কলিজা টা নেই তার পাশে। অতীত গুলো স্বপ্নে আসে তার। একদম বাস্তব। যা ঘটেছিলো সবটা আসে। আসে না শুধু তার রুহা। দুই হাতে চুল খাঁমচে ধরলো সাফারাত। ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিলো পূর্ণ’কে।
#চলবে…..