আবার প্রেম হোক ২ পর্ব-১৬+১৭

0
463

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

১৬.
“তার সাথে যোগাযোগটা সামাজিক মাধ্যমে হলেও,চিত্তজুড়ে তার আনাগোনা সেই প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছিলো।মেয়েদের সাথে কথাবার্তা না বলা অথবা এড়িয়ে চলা যেরকমটা সবাই দেখছে,এটা বর্তমান চৈত্র।পূর্বের চৈত্র মোটেও এমন ছিলোনা।আমি বেশ ফ্রেন্ডলিই ছিলাম।তবে কিছু কারণবশত আমার এই স্বভাব।মেয়ে দেখলেই র*ক্ত টগবগায়।আর গায়ে পড়া মেয়েগুলো বরাবরই বিরক্তিকর।তবে আমার রূপ ছিলো ভিন্ন,বেশ সহজ সরল,সাদামাটা মেয়ে।লাজুক প্রকৃতির।তার আর আমার পরিচয়টা একটা অনলাইন গেইমের দরুন হয়েছিলো।কথাবার্তা হতো সেখানেই।তার কন্ঠের প্রেমে পড়েছিলাম আমি।কোকিলের চেয়েও মিঠা সুর আমার রূপন্তিকার।তার কন্ঠের প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম আমি!এমনি এমনি তার প্রেমে পড়া।একজনের প্রেমেই বারবার পড়তে পড়তে তাকে ভালোবাসা আমার।সেও ভালোবাসতো আমায়।আদোতে বাসতো কিনা জানা নেই!বাসলে কি ছেড়ে যেতো?”

চৈত্র থামতেই প্রশ্ন করে রিহা,

“খুব ভালোবাসতেন রূপন্তিকাকে?”

চৈত্রের মোলায়েম কন্ঠস্বর,

“এখনো বাসি”

অতঃপর ফের সে বলে,

“রূপ আর আমার প্রথম দেখা পরিচয়ের বছর দেড়েক পর হয়েছিলো।তখনো সে জানতো না আমি তাকে ভালোবাসি।তার মনের খবর সম্পর্কেও আমি ছিলাম অনবগত।আমি নাকি তার লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট।এই কথাটা যদিও বা আমাদের রিলেশনের অনেক পরে জেনেছিলাম।আর এজন্যই আমি প্রেম জিনিসটা অপছন্দ করি।বিশেষ করে এই প্রেমে পড়া অথবা লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট টাইপের জিনিস।কারণও বলছি।দেখতে শুনতে তো আহামরি খারাপ না।চেহারার প্রেমেই নাকি সে পড়েছিলো।মন টা আমার দেখেনি।অনুভব করার চেষ্টাটুকুও কি করেনি?আমিতো তাকে ভালোবেসেছিলাম তাকে না দেখেও।সে কেনো আমায় দেখার পরই ভালোবাসতে হলো?নাকি কেবলই মোহ?তবে তাতে আমায় না জড়ালেই কি পারতোনা?ছেলেদের নাকি কোনো দুঃখ নেই,কষ্ট নেই।অথচ দিনের পর দিন আমি ছিলাম দুঃখে জর্জরিত।এখনো তাকে ভাবলে হৃদয়ে সূক্ষ্ম ব্যথা জাগ্রত হয়।কোথায়?কেউতো সে খবর রাখেনি।জানার চেষ্টা করেনি।হয়তো আমিই সেই সুযোগটা কাউকে দিইনি।আর দিতে চাইও না”

চৈত্র একটু থামতেই রিহা ফের প্রশ্ন করে,

“আপনাদের মাঝ…..”

রিহাকে থামিয়ে দিয়ে বেশ গুরুগম্ভীরভাবেই চৈত্র বলে,

“কথার মাঝে কথা আমি বেশ অপছন্দ করি”

“সরি”

অতঃপর চৈত্রই আবার শুরু করে,

“তারপর আমাদের দেখা হলো,কথা হলো,প্রেম হলো,ভালোবাসাও হলো।পরিশেষে আমায় নিয়ে বেশ ইন্সিকিওর্ড ছিলো।যার দরুন বিয়েটাও আমি তাকে করি।আড়ালে,গোপনে।সাক্ষীস্বরূপ তার নিজের ভাইবোনেরা তো ছিলোই চাঁদও ছিলো”

“চাঁদ জানতো সবটা?”

“হ্যা আমার ব্যাপারে সবকিছুই আমার বোনের জানা।আমরা বেশ কম জিনিসই একে অপরের থেকে লুকাই।ভাইবোন কম বন্ধু বেশি।তবে প্রণয়ের বিষয়টা কখনো চাঁদ আমায় বলেনি।হয়তো বড় ভাই এবং কিছু সীমাবদ্ধতা আছে বলেই!আড়ষ্টতা ছিলো বলেই হয়তো জানাতে পারেনি”

“তারপর কী হলো চৈত্র?ডিভো!র্স….”

“বলছি”

বলেই লম্বা শ্বাস টানে চৈত্র।অতঃপর ফের শুরু করে,

“বিয়ের পরপরও সব ঠিক ছিলো।তখনকার সময় পারিবারিক নানান সমস্যার জন্যই রূপকে ঘরোয়াভাবে বিয়েটা করতে পারছিলাম না।অতটা সচ্ছল পরিবারে তো আর বিলোং করিনা যে বউয়ের যেকোনো শখ-আহ্লাদ যখন তখন পূরণ করতে পারবো।তাই সময় নিয়েছিলাম।অপেক্ষা করছিলাম।আড়ালে আমাদের সংসারও ছিলো।আমাদের বিয়ের বছর খানেক গড়াবার আগেই তার মনে হলো সে বেশ ভুল করে ফেলেছে!বিয়েটা করা উচিত হয়নি।তার দোষ দিতে চাচ্ছিনা তবে দোষী তো আমিও তাকে মানি।সবচাইতে অবাক করা বিষয় ছিলো যেই রূপা আমায় তার সর্বস্ব উজাড় করে ভালোবেসেছে,সে কী করে ধোকা দেয়?এতটা সহজ সরলা মেয়ের মনে ধোকা জিনিসের উদ্ভবও হয় কী করে?আপনি জানলে অবাক হবেন কিনা জানিনা তবে সেই মেয়েটা নিজের কথা চিন্তা করার আগে বারবার কেবল আমার কথাই ভাবতো।এমনকি চাঁদের কথাও সে চিন্তা করতো।হুট করে তার কী হলো জানিনা।এক প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছিলো।তার ডি!ভোর্স লাগবে মানে লাগবেই!কারণ হিসেবে দাড় করিয়েছিলো কয়েকটা লেইম এক্সকিউজ।বিয়ে করেও ঘরে তুলছিনা,সংসার করছি পরিবারেও জানাচ্ছিনা,আমার মতো ছেলের সাথে নাকি তার যায়না।বড়লোক ঘর থেকে তার জন্য সম্বন্ধ এসেছে আর সে সেখানেই বিয়ে করতে চায়।আমার সাথে আর নাকি থাকতে পারছেনা।যদিও বলেছিলাম তাকে ঘরে তুলবো।তবে সে জানিয়েছিলো সে সত্যিই আর আমায় চায়না।আমায় নাকি আর ভালোবাসেনা।আমার উপর নাকি শুধু ক্রাশ খেয়েছিলো।সেই দরুনই প্রেমে পড়ে আবিষ্ট হয়েছিলো কেবল।ছেলেদের সাথেও এমন হয় বলুন?ভালো লেগেছিলো শুধু।আর এই ভালোলাগা কেই বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে সে নাকি বিরাট ভুল করেছে।বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা।তবে আমি তার পা পর্যন্ত ধরেছিলাম রিহা।জীবনে কেবল দুই নারীর জন্য কেঁদেছি আমি।এক আমার বোন, দ্বিতীয়ত রূপন্তিকা।মেয়েটা আমায় ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলো।আজও আমার জানা হয়নি ভুলটা কী করেছিলাম আমি?সাথে অবাকও হই এই ভেবে যে এতটা ভালোবাসার পরেও কেউ কাউকে কী করেই বা ছেড়ে যায়?কোনোদিক দিয়েই তাকে আমি কম ভালোবাসিনি অথচ সত্যিই সে আমায় ছেড়েছে।আর এমনভাবেই ছেড়েছে যে নারীদের প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করেই ছেড়েছে।শেষ পর্যন্ত কী বলেছিলো জানেন?আমি নাকি তাকে ভো*গ করছি!কী বি!শ্রী অপবাদ তাইনা?নিজের বিবাহিতা স্ত্রীকে কেউ ভো*গ করে বলুন?বিষয়টা মানতে পারিনি।আমার ব্যক্তিত্বের সাথে যায়নি।এরকম ব্যক্তিত্বের সাথে না যাওয়া বহুকাজ আমি তার জন্য করেছি।যা আজ অব্দি কারো জন্যই করা হয়নি।সর্বপ্রথম ছিলো তার পায়ে ধরে আকুতি করা।কতভাবে যে তাকে আটকানোর চেষ্টা আমি করেছিলাম!তবে সফল হইনি।শেষ পর্যন্ত সত্যি সত্যি সে অন্যকাউকে বিয়ে করেছিলো।আমায় কার্ড পর্যন্ত পাঠিয়েছিলো।গিয়েছিলাম তার বিয়েতে।তার বিয়ের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি,হয়তোবা মন গললো!কিন্তু পাষাণীর মন আর গলেনি রিহা!আর না সে আমার থেকেছে।আমার সামনেই অন্যকারো হয়েছে।আমি কখনোই চাইনি কেউ তাকে কোনো প্রকার অপবাদ দিক।সেদিনই আমাদের ডিভো!র্সটা হয়।আমি তাকে ডি!ভোর্স দেই।সেও সাইন করে,আমিও করি।অতঃপর আমাদের প্রেম বিচ্ছেদ,বিবাহবিচ্ছেদ,সর্ব বিচ্ছেদ ঘটে রিহা।আমার রূপন্তিকাকে আমি চিরতরে হারাই।আর কখনো তার সাথে আমার দেখা হয়নি।আমিই চেষ্টা করিনি।তবে এখনো আমি তাকে ভালোবাসি।অসম্ভবরকম ভালোবাসি।তার জায়গা টা অন্যকাউকে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।আমায় নিয়ে আপনি আর ভাববেন না প্লিজ!আসি”

অতঃপর রিহাকে আর কোনোকিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত না দিয়ে কফির বিল মিটিয়ে চলে আসে সেখান থেকে চৈত্র।আর রিহার সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজনবোধ করেনি।দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগটুকু পর্যন্ত তাকে দেয়নি।এড়িয়ে চলেছে সে রিহাকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সপ্তাহখানেক পরের কথা,
বেশিরভাগ সময়ই বাসায় থাকা পড়ে চাঁদের।বাইরে তেমন আসা যাওয়া করেনা।প্রণয়ই নিষেধ করেছে।তার সাথেও যেনো ঘনঘন দেখা করতে না যায় বলেও জানিয়ে রেখেছে।মন বেশ উদাস চাঁদের।বিছানার উপর পা তুলে বারান্দার দিকে চেয়ে আছে সে।পুরো রুম জুড়েই তার আর প্রণয়ের কতশত স্মৃতি!ঐ বারান্দায়ও তাদের প্রেমময় অহরহ স্মৃতি রয়েছে।যার কথা স্মরণে আসলেই চিত্ত জুড়ায় চাঁদের।প্রশান্তি ছায় হৃদয়ে।আজও প্রণয়ের সাথে দেখা করতে যাবেনা ভেবেই মন খারাপের মাত্রা বাড়ে তার।বেশ গোমড়াটে মুখশ্রী করে মুঠোফোন হাতে নিতেই মনে পড়ে দুপুরের ঔষধ এখনো খাওয়া হয়নি।ঝটপট বিছানা থেকে নেমে ভারী পেটে হাত রেখেই এগিয়ে যায় আলমারির দিকে।আলমারিতেই বেশ সাবধানে ঔষধের শিশিটা রাখা আছে।আলমারির কাছে পৌঁছাতেই তা খুলে সেখান হতে বোতলটা হাতে নিয়ে পাশে রাখা স্টিলের চামমের এক চামচ সিরাপ সে পান করে।অতঃপর মুখে চামচ রেখেই বোতলের মুখ আটকাতে গেলে শুনতে পায় মেয়েলি শীতল কন্ঠস্বর,

“চাঁদ?কী খাচ্ছো তুমি?দেখি”

পিছু ঘুরে রিহাকে দেখে মৃদু হাসে চাঁদ।অতঃপর চামচ মুখ থেকে বের করে ফের ঔষধের বোতল আলমারিতে রাখতে রাখতেই বলে,

“ঔষধ খাচ্ছিলাম আপু।দুপুরে ভুলে গিয়েছিলাম”

কপাল কুচকে সামনে এগুতে এগুতে রিহা প্রশ্ন করে,

“ঔষধ?প্রেগ্ন্যাসির শেষ সময়ে কীসের ঔষধ?”

“শুরু থেকেই খাচ্ছি আপু”

চাঁদের সামনে এসে গম্ভীরভাবে রিহা বলে,

“দেখি ঔষধটা?”

রিহার কথা মোতাবেক ঔষধের শিশিটা তার হাতে ধরিয়ে চামচ নিয়েই বেসিনের দিকে এগোয় চাঁদ।অতঃপর চামচ ধুতে ধুতে শুনতে পায় রিহার গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“এটা কে দিয়েছে তোমায়?আর কবে থেকে খাচ্ছো?”

“পূর্ণপু দিয়েছে।যখন থেকে প্রেগ্ন্যাসির খবর পেয়েছি তখনই দিয়েছে।একটা শেষ হয়েছে আরেকটা খাচ্ছি।এটাও শেষের পথে”

কপাল কুচকে রিহা বলে,

“কিন্তু ও তো আমায় কিছু বলেনি”

“বাবুর হেল্থে নাকি কিছু প্রবলেম ছিলো সেজন্যই আমায় এটা খেতে বললো।হয়তো ভুলে গেছে বলতে”

“দেখি আলাপ করবো ওর সাথে।ততদিন তুমি এটা খেয়ো না।প্রেগন্যান্সির শেষ সময়ে কোনোপ্রকার ঔষধ খাওয়া ঠিক হবেনা”

“ঠিক আছে আপু।কিন্তু তুমি এখানে?”

মৃদু হেসে রিহা বলে,

“তোমার চেকাপ করতে এসেছি।প্রণয় বিশেষ তলব দিয়েছে ক’দিন পরপরই যেনো তোমায় দেখে আসি”

“বাচ্চা নিয়ে একটু বেশিই ভাবছে তোমার বন্ধু”

“ভাববে না কেন?বাচ্চার বাবা ও”

অতঃপর চাঁদকে বিছানায় শুইয়ে কয়েকটা টেস্টের জন্য চাঁদের রক্ত নেয় আর চাঁদকে একটা শিশি দিয়ে কিছু একটা বলে চাঁদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।অতঃপর দরজার কাছে যেতেই চাঁদের রুমে চৈত্রকে প্রবেশ করতে দেখে হকচকায় রিহা।চৈত্রেরও বেশ অস্বস্তি হলেও সূক্ষ্মভাবে রিহাকে এড়িয়ে চাঁদের নিকটে যায়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হাজত হতে বেরিয়ে থানার ভেতরকারই এক মাঠের পাশে বসে আকাশপানে চেয়ে আছে প্রণয়।একধ্যানে সে পানে চেয়ে থেকে কিছু একটা ভাবছে সে।হঠাৎ পাশে কারো আগমণের অনুভূতি টের পেলেও নড়েনা।সেভাবেই বসে থাকে।আর পাশে বসা লোকটা খানিক কেশে প্রশ্ন করে,

“এত মগ্ন হয়ে কী ভাবছো প্রণয়?”

লম্বা শ্বাস টেনে দৃষ্টি মাটির দিকে করে প্রণয় বলে,

“গুনছি”

“কী?”

“দিন গুনছি মামা”

কপাল কুচকে লোকটা বলে,

“কীসের দিন?”

“আমার পুতুলের কান্না শোনার”

“মানে?”

লোকটার পানে চেয়ে কিঞ্চিৎ ওষ্ঠ প্রসারিত করে প্রণয় শুধায়,

“আরে মামা!আমার মেয়ের পৃথিবীতে আগমণের দিন গুনছি।আর মাত্র আড়াই মাস!তারপর আমি আমার ছোট্ট মেয়ের ছোট্ট,নরম তুলতুলে হাত-পা ধরার সুযোগ পাবো”

“ছয় মাস শেষ?”

“হ্যা।তখন হবে”

“মেয়ে খুব পছন্দের?”

“তেমন না কিন্তু আমার মেয়ে হলে ভিন্ন বিষয়।আর আমি জানি আমার মেয়ে ই হবে”

“আল্লাহ তোমার আশা পূরণ করুক বাবা”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দিন পাঁচেক পর,
চৈত্রের অফিসে এসে হাজির হয়েছে রিহা।চৈত্রের সাথে দেখা করতে চাওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে,কেউবা সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়েছে।তবে রিহা ঠিকই চৈত্রের ডেস্ক খুঁজে তার পাশে এসে দাড়িয়েছে।কম্পিউটারে কিছু কাজ করতে করতেই আকস্মিক রিহার পানে নজর গিয়েছিলো চৈত্রের।তবে সে তাতে তোয়াক্কা করেনি।কিন্তু বর্তমানে তার পাশ ঘেষে দাঁড়ানোয় খানিক মেজাজ খারাপ হয় চৈত্রের।গম্ভীরস্বরে সে বলে,

“স্টে আওয়ে” [দূরে থাকুন]

চৈত্রের কথায় খানিক সরে দাঁড়ায় রিহা।অতঃপর বলে,

“আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো”

“এখন আমার কাজের সময়।আর আমি সময় অপচয় পছন্দ করিনা কতবার বলতে হবে আপনাকে?”

চৈত্রের রুক্ষ ব্যবহারে মনঃক্ষুণ্ন হয় রিহার।তবুও নিজেকে সামলে সে বলে,

“বেশ জরুরী কথা।চাঁদকে নিয়ে”

এবারে ভ্রু যুগল কুঞ্চিত হয় চৈত্রের।কম্পিউটারের মাউস আর কি-বোর্ডে হাত চালানো বন্ধ হয় তার।অতঃপর কপাল কুচকে রেখেই প্রশ্ন করে,

“কী হয়েছে চাঁদের?”

“এখানে কীভাবে?”

ফের কাজের দিকে মনোযোগী হয়ে রিহার পানে না চেয়েই তাকে উদ্দেশ্য করে চৈত্র বলে,

“আরও ঘন্টা তিনেক অপেক্ষা করতে হবে।আপনি এখন আসুন।আমি আপনাকে মেসেজ করবো”

“ঠিক আছে”

কোনো দ্বিরুক্তি না করেই চলে আসে রিহা।

রিহার চেম্বারের সামনে হাজির হয়েছে রিদি আর রুবা।মূলত রুবাই জোর করে রিদিকে নিয়ে এসেছে।ক’দিন যাবৎ ই রিদির শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা।আর আজতো অজ্ঞানই হয়েছিলো ক্যাম্পাসে।মিরার থেকে এরূপ তথ্য শুনেই তৎক্ষনাৎ রিদির শ্বশুরবাড়ি গিয়ে তাকে নিয়ে দ্রুতই হাজির হয়েছে রিহার চেম্বারে।আপাতত রিহার সাথে আলাপ করলেই হবে।রুবা বেশ চিন্তিত রিদিকে নিয়ে।সাথে কিছু শংকাও আছে।অতঃপর ভেতরে এসে নিজেদের পরিচয় দিতেই তাদের ভেতরে যেতে অনুমতি দেয়া হয়।দু’জনে এসে দরজায় নক করতেই রিহাও হাসিমুখেই তাদের ভেতরে আসার অনুমতি দেয়।অতঃপর দু’জনই চেয়ারে বসলে রিহা প্রশ্ন করে,

“হঠাৎ তোমরা?”

রিদি কোনোকিছু না বলে অস্থির হয়ে ঘামছে বলে রুবাই জবাব দেয়,

“আসলে আপু রিদুর শরীরটা ক’দিন ধরে ভালো যাচ্ছেনা”

“কী হয়েছে রিদি?সেদিনও এসেছিলে।শরীর কি বেশিই খারাপ?”

রিদি আমতা আমতা করে,

“না মানে…..”

অতঃপর রুবাই তার কথা সম্পূর্ণ করে,

“হ্যা আপু।অনেকটাই খারাপ আজ সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো।আর এমনিতেও ইন্টার্নাল কিছু সমস্যা আছে”

অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে রিদির পানে চেয়ে কপাল খানিক কুচকে রুবা বলে,

“তুই কি বলবি?নাকি আমারই বলতে হবে?সমস্যা আমার না তোর?”

রিদি ফের ইতস্তত করে বলে,

“না মানে আসলে আপু কীভাবে বলি মানে…..”

আকস্মিক রিহার শান্তস্বরের প্রশ্ন,

“মিস গেছে?”

দ্রুত পলক ঝাপটে দৃষ্টি নত করে মাথা ঝুকায় রিদি।অতঃপর ফের শুনতে পায় রিহার চিন্তিত কন্ঠস্বর,

“কয় মাস?”

এবারে রিদি অতিরিক্ত লজ্জিত হতেই কপাল কুচকে রুবা বলে,

“দুই মাস আপু।আর তুই নতুন বউদের মতো এমন করছিস কেন?এটাতো সমস্যা নাকি?থা!পড়াবো।সোজা তাকা”

মৃদু হেসে রিহা বলে,

“টেস্ট করিয়েছিলে?এতে এত ভয় পাওয়ার কী হলো রিদু?এটাতো খুশির ব্যাপার।মির জানে?”

রিদিকে ফের চুপ দেখে মেজাজ খারাপ হয় রুবার।অতঃপর রিদির মাথায় ঢুশ মে*রেই বলে,

“আপু ও আসলে লজ্জা পাচ্ছে।কিন্তু আমিও বিষয়টা বলতে পারছিনা”

অতঃপর রিদির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসায় রুবা,

“আমার কাছে বলতে পেরেছিস আপুর কাছে বলতে কী সমস্যা তোর?”

রিদিও ফিসফিসায়,

“আপু কী না কী ভাবে!”

“যেটার ভাবার ছিলো অলরেডি সেটা ভেবে ফেলেছেই।তুই আপুকে ক্লিয়ারলি প্রবলেমগুলো বল।নাহলে কিন্তু আমার হাতে মা*র খাবি তুই”

“ব….বলছি”

ঢোক গিলে রিদি।অতঃপর ফের শুনতে পায় রিহার সন্দিহান কন্ঠস্বর,

“বেশি সিরিয়াস কিছু?”

মনে মনে সাহস সঞ্চার করে রিদি তার নজর কামিজ পানে রেখে তা চেপে ধরেই রিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আসলে আপু!মানে….তুমি যা ভাবছো তেমন না।মানে আমার আর মিরের মানে অন্য হাজবেন্ড ওয়াইফের মতো আমাদের সম্পর্কে তেমন!বুঝতে পারছোনা তুমি”

কপাল কুচকে রিহা বলে,

“বুঝতে পারছিনা মানে?তোমাদের বিয়ের ক’দিন বাদে এক বছর হবে আর তুমি ঠিক কী বোঝাতে চাচ্ছো রিদি?তোমাদের মাঝে কোনো সমস্যা চলছে?”

দ্রুত মাথা তুলে রিহার পানে চেয়ে ডানে বায়ে ইশারা করে রিদি বলে,

“না না আপু।কোনো সমস্যা নেই”

“তাহলে সমস্যাটা কোথায়?”

অতঃপর নিজেকে শান্ত করে রিদির সাথে সহজ হতে রিহা বলে,

“দেখো রিদি।আমি প্রথমত কী?একজন ডাক্তার তাইতো?আর তুমি আমার পেশেন্ট।তো আমাদের সম্পর্ক কী অথবা তুমি আমার কে,আমি তোমার কী এসব কিছুক্ষণের জন্য বাদ দাও।তুমি আমার বন্ধুর ওয়াইফ এটাও মাথায় রাখতে হবেনা।জাস্ট ভাবো আমি শুধুই ডাক্তার যে তোমার ট্রিটমেন্ট করবে।আর তুমি নিজেও কিন্তু মেডিকেল স্টুডেন্ট।আর আমাদের প্রথম শর্তই হচ্ছে পেশেন্টকে নার্ভাস ফিল না করানো।আর পেশেন্টেরও উচিত ডাক্তারকে সব প্রবলেম খুলে বলা,কোনোকিছু না লুকানো।তাই হেজিটেট হয়ো না”

লম্বা শ্বাস নিয়ে রিহার দিক হতে দৃষ্টি সরিয়ে ডেস্কের পানে চেয়ে রিদি বলে,

“আপু সেদিন তো তোমায় সমস্যার কথা বলেছিলামই।কিন্তু দুই মাস যে মিস গেছে এটা লজ্জার জন্য বলতে পারিনি কী না কী ভাবো!সরি”

রিহা প্রতিত্তোর করেনা,কেবলই শোনে।খানিক থেমে ফের রিদি বলে,

“আর মির বা আমার মাঝে তেমন সম্পর্কও মানে…..এখনো মানে তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন না।তো তারপরেও প্রবলেম গুলা কেনো হচ্ছে?সেজন্যই চিন্তিত।আজ সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম।সবাই অন্যকিছুই মিন করছে,রুবাও।কিন্তু সেরকম কিছুই না আপু।তুমি প্লিজ একটু মানে….. একটু দেখো না আমার কী হলো?”

বলেই রিহার পানে চায় রিদি।নিজের পানে রিদিকে চাইতে দেখে মিষ্টি এক হাসি উপহার দেয় তাকে রিহা।অতঃপর বলে,

“এজন্য এত লজ্জা?এরকম সমস্যা তো অহরহ মেয়েদের হয়।আমার বেশিরভাগ রোগীই এই সমস্যার জন্য আসে।চিন্তা করোও না”

অতঃপর রুবার দিকে চেয়ে রুবাকে বলে,

“রিদিকে নিয়ে ভেতর দিকটায় যাও।আমি আসছি,কিছু চেকাপ করবো”

রুবা শান্তস্বরে বলে,

“ঠিক আছে আপু”

বলেই রিদিকে নিয়ে ভেতরে কাপড়ে আড়াল করা রুমের মতো দেখতে জায়গাটায় নিয়ে এগুতেই দেখে একটা হাসপাতালের বেড।অতঃপর ইশারায় রিদিকে বলে সেখানে বসতে।আর নিজে তার পাশেই দাঁড়িয়ে কথা বলে তার সাথে।

ঘন্টা খানেকের মতো রিদির কিছু চেকাপ করে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হাতের মোবাইলটায় সময় দেখে তা রিদির বেডের বালিশের পাশেই রেখে বাইরে আসে রিহা কিছু কাজের জন্য।রিহা সেখান থেকে যেতেই লক হওয়া স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠে।লক করা ফোনে হঠাৎ কোনোকিছুর আওয়াজ পেতেই রুবার কপাল কুঞ্চিত হয়।সে ভাবে হয়তো কেউ কল দিয়েছে।অগ্যতা ফোন হাতে নিয়ে রিহার কাছে যেতে নিলেই চোখে পড়ে ‘চৈত্র’ লেখা নাম্বারটার দিকে।কুচকানো ভ্রু মাত্রাতিরিক্ত কুঞ্চিত হয় রুবার।সে মোবাইলের পানে ভালো করে মনোযোগ দিতেই দেখে মেসেজ এসেছে চৈত্রের নাম্বার হতে।অতঃপর রুবার মন খচখচাতেই সংকোচবোধ সহিতই সে মোবাইলের শাটার নামিয়ে চৈত্রের মেসেজ খানা পড়ে।যাতে স্পষ্ট লেখা ছিলো তারা কোথায় এবং কখন দেখা করবে।সাথে আরও ছিলো ‘বেশি দেরি করবেন না!’

হঠাৎ করেই রুবার মনে আশংকার দানা বাঁধে।সে হতাশার শ্বাস ফেলে মোবাইলটা আগের জায়গায়ই রেখে দেয়।অতঃপর কাউকে কিছু না বলে রিদিকে রিদির বাসায় পৌঁছিয়ে ফোন করে শিফার নিকট।শিফা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই রুবা প্রশ্ন করে,

“কোথায় তুই?”

উত্তর আসে শিফার বিরক্তিকর কন্ঠে,

“জানিস না কোথায় থাকি?”

রুবাও তিরিক্ষি মেজাজে বলে,

“সোজা সোজা জবাব দিতে পারিস না?”

নিজেকে দমিয়ে ধীরকন্ঠে শিফা বলে,

“টিউশনে।কী হয়েছে তোর?রিদুর ব্যাপ……”

শিফাকে থামিয়ে রুবা প্রশ্ন করে,

“টিউশনের আর কতক্ষণ?”

“শেষই প্রায়।কী হয়েছে তোর?”

“তোকে আমি এড্রেস মেসেজ করছি ঐখানে জলদি আসবি,এক্ষুনি।বেরুবো আমরা”

“হঠাৎ কোথায়?”

“যেতে যেতে বলবো”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সবে রেস্টুরেন্টের ভেতরে শিফার হাত ধরে ঢুকতে নিয়েছিলো রুবা।তখনই চৈত্র আর রিহাকে মুখোমুখি বসা দেখে খানিক ঢোক গিলে শিফার সহিতই তার পাশের টেবিলে বসতে গেলে শুনতে পায় চৈত্রের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“আপনাকে আমি এক মাসের সময় দিচ্ছি।যদি একমাসে আপনার জন্য আমার বিন্দু পরিমাণ সহানুভূতিও জাগ্রত হয়।আপনাকে নিয়ে আমি ভেবে দেখবো”

চৈত্রের চোখের দিকে একধ্যানে চেয়ে থেকে তৎক্ষনাৎ শিফার হাত ধরেই ছুটে আসে রুবা।ভুলবশত দৌড়াতে গিয়ে পাশের টেবিলে রাখা পানির এক বোতলে রুবার হাত লেগে তা ফ্লোরে পড়ে গেলে রুবা তা নিচ হতে টেবিলে তুলে যেতে যেতেই বলে,

“সা….সরি সরি!”

চৈত্রের নজরে শিফা আর রুবা পড়েছিলো ঠিকই।তবে তার ভাবনা মোতাবেক হয়তো কাজে এসেছিলো তারা!কিন্তু রুবাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে কপাল সামান্য কুঞ্চিত হয় চৈত্রের।একধ্যানে সে চেয়ে থাকে রুবার যাওয়ার পানে।এখানে রিহা যে তাকে কিছু বলছে সেদিকে খেয়াল নেই।অতঃপর ধ্যান ভাঙতেই রিহার পানে খানিকের জন্য চেয়ে বাইরে দরজার দিকে তাকিয়ে সে বলে,

“কিছুনা”

To be continued……

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

১৭.
সময়টা শরতের শেষের দিকের।বৃষ্টির প্রকোপ কমেছে অনেকাংশ।শীত শীত আমেজ ধরণীজুড়ে।দখিনা হাওয়া বয় মাঝে মন্দে।শরৎ চলে গেলে আশ্বিনের ভারী মনঃক্ষুণ্ণ হয়।তাকেও যে চলে যেতে হবে!তার জায়গাখানা নেবে অগ্রহায়ণ।আনাগোনা হবে হেমন্তের।হেমন্ত নাকি প্রেমময়ী মাস।হেমন্তের সনে প্রেমেরও আনাগোনা ঘটে জীবনে।এ কথা ঠিক কতটুকু সত্য?আদোতে এর কোনো ভিত্তি আছেও?কোন মূর্খ প্রেমিক এই মূর্খ বার্তা প্রেরণ করেছিলো কে জানে!তবে হেমন্তের সনে রুবার জীবনেও যদি প্রেম আসে খুব কি ভুল হবে?তার প্রেমপুরুষই যদি তার হয় কোনো ভুল কি সত্যিই হবে?কেনো অবচেতন মন অসম্ভাব্য কল্পনায় নিজেকে মত্ত রাখে?মস্তিষ্কজুড়ে কেনো সেই মানবেরই আনাগোনা যাকে নিয়ে আর কোনো আকাঙ্ক্ষাই রুবা রাখতে চায়না।যাকে পাওয়ার চেষ্টাটুকুও করতে সে ভয় পায়।কেনো এই ভয়?যাকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে তাকে নিয়ে ভাবতেও আজকাল বড্ড যাতনা অনুভব করে অন্তঃস্থলে।চৈত্রের রিহাকে বলা সেদিনের সেই শেষের বাক্যে হৃদয় পু*ড়েছিলো,জ্বলেছিলো আঁখিজোড়া।আজ তার দশ দিন অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।না চৌধুরী বাড়ি গিয়েছে রুবা আর না রিদির শ্বশুরবাড়ির ধারেকাছে।ফলস্বরূপ চৈত্রের সনেও আর দেখা হয়নি।আর না পরিচিত কারো সাথে।রুবা ই চেষ্টা করেনি কারো সহিত কোনোরূপ দেখার।হোস্টেল থেকে ভার্সিটি,ভার্সিটি থেকে কোচিং অতঃপর ফের হোস্টেল এই পর্যন্তই তার নিত্যদিনকার রুটিনে পরিণত হয়েছে।দেখা সে তার অতি ঘনিষ্ঠ প্রিয় সখীদের সনেও আর করেনি।অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে নিজের ভাবনা জগৎ থেকে বের হয় রুবা।হাতের ধোয়া ওঠা কফির মগে পরপর কয়েকবার চুমুক বসায় সে।অতঃপর বারান্দার বিপরীতপাশে ঘন জঙ্গলের ন্যায় স্থানে একধ্যানে পলকহীন চায়।অতঃপর কফির মগে ঠোট চেপে রেখেই মনে মনে সে শুধায়,

“আপনি আমার সর্বসুন্দর মোহ প্রেমপুরুষ।যেই মোহ আমি কখনোই কাটিয়ে উঠতে চাইনা।আমি জানি আপনি অন্যের হবেন না।যদিও বা হন,মনে মনে কেবল রুবারই রবেন”

অতঃপর সেখানে দাড়িয়েই হাতে থাকা মোবাইলের ডায়াললিস্টে গিয়ে ডায়াল করে চাঁদের নাম্বারে।কয়েকবার রিং হতেই অপরপাশ থেকে ভেসে আসে মেয়েলি চিকন কন্ঠস্বর,

“হ্যালো?”

“কেমন আছো ভাবি?আর আমার পুচকু কি খুব জ্বালায়?”

“কেমন আছি ভাবি না?পুচকুর জ্বালাতন থেকে বাঁচানোর জন্য হলেও আসা উচিত ছিলোনা তোমার?তোমাকে কত করে বলেছি এখানে চলে আসো।তোমার ভাইয়া নেই আমার সাথেই নাহয় থাকবে।শিফাকেও বলেছি সেও নাছড়বান্দা।তুমি আসলে অবশ্যই ও ও আসতো।কিন্তু তুমি তো আমার সাথে দেখাই করতে আসছোনা।হয়েছে কী?”

“আস্তে আস্তে ভাবি!আমার পুচকু হয়রান হয়ে যাবে না?”

“নাস্তা করেছো?আজ ভার্সিটি যাও নি নাকি?”

“না ভাবি যাইনি”

“শরীর খারাপ?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবা বলে,

“মন খারাপের সাথে পাল্লা দিয়ে হয়তো শরীরও খারাপ করবে ভাবি”

“কী বলছো?তুমি এক কাজ করো বাসায় আসো।ভালো লাগবে।ক’দিন থেকে যাবে”

“আপাতত আসতে পারছিনা।তবে প্রণয় ভাইয়ার সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম।তুমি কি ভাইয়ার সাথে আজ দেখা করবে?”

“তোমার ভাইয়াতো সপ্তাহে শুধু একদিন বরাদ্দ রেখেছে তার সাথে দেখা করার।পরশুই দেখা করে এসেছি।আজ গেলে…..”

“তুমি ভাইয়াকে ভয় পাচ্ছো?”

“ভয় কেনো পাবো?ভয় না,আসলে আমারও হাটাচলা করতে বেশ অসুবিধা হয়”

কন্ঠের দৃঢ়তা খানিক ধীর হয় রুবার,

“দেখাটা তো তোমার সাথেই মূলত করার ছিলাম ভাবি”

“তো বাসায় কী হলো?”

“ওখানে আসা যাবেনা”

“কেনো যাবেনা?”

রুবার নিশ্চুপতার মাঝে চাঁদই আবার বলে,

“কেনো যাবেনা হা?তোমার আসলে কী হয়েছে বলবে?কোনো সমস্যা?কেউ কি প্রবলেম করছে?”

“না না তেমন কিছুনা।আসলে ওখানেতো তোমার সাথে কতজনই দেখা করতে আসে।তোমায় তো আর একা পাবোনা”

মৃদু হেসে চাঁদ বলে,

“পাবেনা কেন?রোজ রোজ কি সবাই আসে?”

“সবাই না আসলেও কেউ না কেউ তো আসেই!”

সন্দিহান কন্ঠে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“তুমি ঠিক কার কথা বলছো?আমি কোনো মিথ্যে শুনবোনা।সত্যিটা সরাসরিই বলবে”

লম্বা শ্বাস টেনে রুবা জবাব দেয়,

“তোমার ভাই”

“আমার ভাই?”

অতঃপর ফের বিস্মিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে চাঁদের,

“আমার ভাইয়ের কথা বলছো তুমি?”

“হ্যা।আমি মিস্টার চৈত্রের কথাই বলছি”

“কিন্তু ভাইয়ের সাথে কী হয়েছে তোমার?কথাইতো হয়না তোমাদের।ভাইও তো কারো সাথে কথা বলেনা”

“হ্যা তোমার ভাই কারো সাথে কথা বলবে কেন?ডিরেক্ট দেখা করবে”

“মানে?”

“কিছুনা।যদি তোমার ভাই তোমার সাথে থাকে অথবা যায় আমি আসতে পারবোনা ভাবি”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভীরভাবেই চাঁদ বলে,

“আগামীকাল এসো।অনেকদিন ভাই আসেনা আজ আসবে বলেছিলো”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
প্রণয় আর পূর্ণতা ব্যতীত তাদের বন্ধুমহলের সকলে আড্ডার আসর জমিয়েছে রবিনের বাড়ি।মূলত রবিন আর তার গার্লফ্রেন্ড অমৃতার বিয়ে ঠিক হওয়ার খুশিতেই রবিনের বাড়িতে তাদের গেট-টুগেদার।বেশ অনেক বছর পর সকলের একসাথে হওয়ায় আলাদাই এক আমেজ কাজ করছে সকলের মাঝে।তারপরেও বন্ধুমহল পূর্ণ না হওয়ায় খানিক মন খারাপের রেশও রয়েছে।রিহা আর মিরা সকলের জন্য ট্রে তে করে নাস্তা নিয়ে বিছানার উপর রাখতেই সর্বপ্রথম অরণই হালিমের বাটি হাতে নেয়।রবিন নিয়েছে নুডলস আর মিরের হাতে স্যুপের বাটি।সবকিছুই রিহা আর মিরার একা হাতের কাজ।ভ্রু যুগল কুচকে রেখেই বিছানার পাশে বসতে বসতে মিরা বলে,

“জীবনে কোনোদিন খাস নাই নাকি?তোদের এখনই দিতাম না আমি?”

রবিন নুডলসের এক চামচ মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতেই বলে,

“এত মেহমানদারি করা লাগবেনা।এই শা*লিতো প্রেমে পড়ে এতই দেওয়ানা হয়েছে যে আজকাল গ্রুপকলেও আসেনা।না নিজে থেকে কোনো ফোন টোন দেয়।ওর হাতের নুডলসের সৌভাগ্য জুটেছে না খেয়ে যাই কই?আসছে আমার মেহমানগিরি করতে”

মিরাও স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে তা এক চামচ চুমুক দিয়ে বলে,

“হ্যা রে তুই চৈত্র ভাইয়ার প্রেমে পড়লিও কীভাবে?মানে এতবছর কাউকে ভালো লাগেনি হঠাৎ চাঁদের ভাইয়ের প্রতি মন আসলো কী করে তোর?”

রবিন তাল মেলায় মিরার,

“সেম কুয়েশ্চন”

মির স্যুপ খেতে খেতে ভাবলেশহীনভাবেই বলে,

“প্রেমে পড়েও কী লাভ?চৈত্র ভাই তো আর ওকে পাত্তা দেয়না”

মিরের কথায় নুডলস খেতে খেতেই চোখ রাঙায় রিহা।অতঃপর শুনতে পায় অরণের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“কারো প্রেমে পড়া তো আর বলে কয়ে হয়না।কখন,কীভাবে হবে আমরাতো আর জানিনা।কিন্তু আমার মনে হয়না চৈত্র ভাই রিহুকে নিয়ে আদোতে কিছু ভাবেনও!”

রবিনের প্রশ্ন,

“তোর এমন মনে হয় কেন?”

“পার্সোনালি চৈত্র ভাইকে তেমন চিনিনা আমি।তোরা যতটা তাকে জানিস অথবা দেখেছিস।তবে এই কয়মাস তার সাথে আমার যতটা পরিচয়ই হয়েছে আমার কখনোই মনে হয়নি এই লোকটা প্রেম ট্রেমে ইন্টারেস্টেড অথবা কোনো মেয়ের দিকে তাকায়ও।মানে আমারও মেয়েদের নিয়ে অত ভাবনা নেই।তারপরেও ভুলবশত চোখতো কারো না কারো উপর পড়ে যায়ই।কিন্তু চৈত্র ভাই!উনাকে আমি ইচ্ছাকৃততো কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেখিনিই।ভুল করেও কারো উপর তার চোখ পড়েনা ভাই।আর রিহাকেতো আরও আগে থেকে চিনতো।তাহলে ওর দিকে চোখ গেলে আরও আগে যাওয়ার কথা ছিলো।যায়নি মানে হি ইজ নট ইন্টারেস্টেড।রিহু তুই বরং চৈত্র ভাইকে নিয়ে ভাবা বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বিয়েশাদির চিন্তা কর।একসাথে দু’টো বিয়ে খাই।এমনিতেও দুই শা*লার বিয়েতে ছিলাম না।দেখতে পর্যন্ত পারি নাই!রবিনের সাথে তোর বিয়েটাও সেরে ফেল।ঐ দেবদাস চৈত্র ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করে বুড়ি হওয়ার কী দরকার?”

অরণের প্রথম কথাগুলো ভালো লাগলেও শেষের কথাসমূহ শুনে ভ্রুযুগল মাত্রাতিরিক্ত কুঞ্চিত হয় রিহার।সে ঝটপট রাগী দৃষ্টির সহিতই অরণের দিকে তেড়ে গিয়ে তার বাহুতে বারকয়েক থা!পড়ায়।রিহা ব্যতীত অরণসহ সকলেই হেসে দেয় অরণের কথা শুনে।আর অরণ হাসতে হাসতেই রিহার কব্জি ধরে বলে,

“এই মা*র জামাইর জন্য বাঁচিয়ে রাখ খালা”

রিহা অরণের কাছে থেকে সরে আসতে আসতে বলে,

“সর শা*লা!মরণ থেকে বেঁচে আসছিস তাও তোর নাটক কমেনা না?”

মির অরণের কাধ চাপড়িয়ে বলে,

“তুই কি কিছু পো*ড়ার গন্ধ পাস অরণ?মনে হয় কারো মন টন পু*ড়ে যাচ্ছে।কী বলিস এসব?মেয়েটা নতুন নতুন প্রেমে পড়লো।আর তুই কিনা কুফা দিস?ছি ছি অরণ!ব্যাড ম্যানার্স”

অতঃপর ফের তারা হাসতে গেলেই রিহা মিরের পানে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“নিজেতো ভালোবেসে বিয়ে করেছিস।তাও আবার বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ে।যেইখানে এতদিন ফুপি ডাক শোনার কথা ছিলো সেখান…… ”

বলতে বলতেই থামে রিহা।ভুলবশত ভুল জায়গায় ভুল কথা সে বলে ফেলেছিলো।ভাগ্যিস শেষ পথে থেমেছে!নাহয় এতক্ষণে কপালে তার শনি ছিলো।ভাবতে ভাবতেই ঢোক গিলে মিরের পানে চায় রিহা।অতঃপর তার কুঞ্চিত ললাট নজরে আসতেই আমতা আমতা করে বলে,

“কী আমার প্যাঁচাল পারছিস তোরা?বিয়েতো রবিনের ওদের নিয়ে বল কিছু!অমি ভাবিতো চাঁদের খালাতো বোন।এই অরণ তুই জানিস অমি ভাবির সাথেই প্রণয় আর এই রবিন্না মিলে বিয়ের নাটক সাজিয়ে চাঁদকে প্ল্যান ট্ল্যান করে বিয়ে করেছিলো”

রিহার পরপর গম্ভীরভাবে মির বলে,

“কথা ঘুরাবিনা রিহা।কী কথা বলছিলিস তুই?”

কপাল কুচকে অজানা থাকার চেষ্টায় রিহা বলে,

“কোন কথা?”

“কোন কথা জানিসনা না?”

“দেখ মির!রিদিকে কিছু বলবিনা।এমনিতেই মেয়েটা বেশ লাজুক আর তোকে খুব ভয় পায়।যদি ওকে কিছু বলেছিস তো খবর আছে তোর!”

কপাল অতিরিক্ত কুচকে মির প্রশ্ন করে,

“তুই রিদির সাথে এসব ব্যাপারে কথা বলিস?”

“তোর মতো সবাইকে খা*টাশ মনে করিস বেকুব?আমার চেম্বারে এসেছিলো।তখন কথায় কথায়…..”

রিহাকে থামিয়ে মির প্রশ্ন করে,

“তোর চেম্বারে গিয়েছিলো কেন?”

কপাল কুচকে রিহা প্রশ্ন করে,

“তুই জানিস না?”

তখনই মিরা বলে,

“আসলে সেদিন রুবা এত তাড়াহুড়োয় রিদুকে নিয়ে যায় যে আমি তোকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।রিদু যেদিন সেন্সলেস হলো সেদিনেরই কথা”

মির আর কিছু বলেনা।গম্ভীরভাবে বসে থাকে।সবাইকে মৌন দেখে অরণই কথা বাড়ায়,

“তো রিহু কী বলছিলিস?অমৃতা ভাবি চাঁদের বোন?কেমন বোন?”

রবিন জবাব দেয়,

“খালাতো বোন”

“বড় নাকি ছোট?”

এবারে জবাব দেয় রিহা,

“ছোট”

কপাল কুচকে হালিম শেষ করতে করতেই অরণ বলে,

“তাহলেতো দেখা যায় চাঁদেরও ছোট।আর এই শা*লার জন্য এই ছোট মেয়েকে ভাবি ডাকা লাগছে?”

রবিন অরণের পানে চেয়ে ট্রে হতে হালিমের বাটি নিয়ে এক চামচ মুখে পুড়তে পুড়তে বলে,

“তো বলা লাগলে বলবি না?”

রবিনের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অরণ বলে,

“আমিও কোনো পুচকে পাচকে বিয়ে করবো।তারপর বলিস তোরা ভাবি”

আকস্মিক রিহা প্রশ্ন করে,

“তুই বিয়ে করবি সিরিয়াসলি?”

রিহাকে খোচা মেরে অরণ বলে,

“কেন তোর ঐ দেবদাসের মতো বিয়ে না করে দেবদাস থেকে বুড়ো হবো নাকি?”

“দেখ অরণ!মেজাজ খারাপ করবিনা”

রবিনও কটাক্ষ করে,

“ইশ যেই না ঢং!যেনো এখনই বিয়ে করছে সে”

অরণও রিহার পানে চেয়ে শান্তস্বরে বলে,

“দেখ রিহা তোর ভালোর জন্য বলছি।অযথাই সময় নষ্ট করছিস।তোর এক মাসের অলরেডি দশ দিন চলে গিয়েছে কিন্তু চৈত্র ভাই তোর দিকে তাকায় পর্যন্ত না।তার জন্য বসে থাকবি তুই?যে তোর কদরই করেনা তার পেছনে সময় নষ্ট করার মানে হয় বল?”

রিহা বিরক্ত হয়ে বলে,

“ঐ লোকের মতো কথা বলিস নাতো অরণ!এমনিতেই আমাকে এড়িয়ে চলতে খুব পছন্দ তার।তার উপর সেদিন মিথ্যা বলে রেস্টুরেন্টে নেওয়ায় অতিরিক্তই রেগেছে।চাঁদকে নিয়ে মিথ্যা বলেছি বলে কথা পর্যন্ত বলছেনা।নেগেটিভ কথাবার্তা আর ভালো লাগছেনা।থাম”

একইসঙ্গে মির এবং মিরা বলে উঠে,

“এড়িয়েতো সব মেয়েকেই চলে।তুই বেশি ভাবছিস।তাছাড়া অরণের কথায় যুক্তি আছে”

“অনেকটা পাগলের কাছে শান্ত থাকার আবদার আরকি!যে নিজ জীবনে যা ফলাতে পারেনা,অন্যকে উপদেশ দেওয়া কি খুব দরকার?”

মিরার কথায় তৎক্ষনাৎ তার পানে চাইতে বাধ্য হয় অরণ।কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে আর কেউ না বুঝলেও অরণ আর মির ঠিকই বুঝেছে।তবে মির ভাবলেশহীন আর অরণ গম্ভীর।প্রসঙ্গ পাল্টাতে রবিন বলে,

“তোরা সেসব বাদ দে।পূর্ণকে বলেছিলাম,শা*লি যেনো সময়ই পায়না।মানে ওর এত কীসের কাজ বুঝিনা।রিহাও তো একই সেক্টরে।তো ওর এত কী?”

তাদের আরও কিছুক্ষণ আড্ডার মাঝে হঠাৎ ই রিহা বলে,

“আচ্ছা শোন অনেক্ক্ষণ তো থাকলাম।এবার আমি উঠি কাজ আছে”

রবিন বিরক্ত হয়ে বলে,

“ঐ যে!আবারও কাজ।মানে তোরা দুইটা কী প্রমাণ করিস আমরা বেকার?কোনো কাজ করিনা?”

রবিনের কাধে হাত রেখে রবিনকে এক পাশ দিয়ে জড়িয়ে রিহা বলে,

“আরে মামা!সেটা কখন বললাম?আসলে কাজটা আর্জেন্ট,যেতে হবে”

কপাল কুচকে মিরা প্রশ্ন করে,

“কী কাজ এখন তোর?”

মিরও বলে,

“আজতো আমরা সবাই ছুটি নিয়েছি,তো?”

রিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“আসলে চাঁদের কিছু রিপোর্ট ছিলো।সেগুলো কয়েকদিন আগেই আনার ছিলাম কিন্তু ব্যস্ততার জন্য আনা হয়নি।কালও সময়ের জন্য যেতে পারিনি।আজ আবার তোরা ডাকলি,ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়।পূর্ণর কথা বলায় মনে পড়লো।যাই রে দোস্ত!বেশ দরকার।যেতেই হবে।রাগীস না প্লিজ।থাকলাম তো সারাদিন”

অরণ বিছানা ছাড়তে ছাড়তে বলে,

“চল তোকে দিয়ে আসি আমি”

“না লাগবেনা।সামনেই যেতে পারবো।তোরা আড্ডা দে।আর আমায় আপডেট জানাস”

অতঃপর রিহা তার ব্যাগ হাতে যেতে নিলেই মিরা তাকে কাছে ডাকে।রিহা আসতেই তাকে মাঝে রেখে বাকি চারজন একে অপরকে জাপটে ধরে।সুখের অশ্রু জমে চোখের কোনে রিহার।সেও সব বন্ধুকে দু’হাতে জড়িয়ে বলে,

“তোরা আমার প্রাণ।তোদের ছাড়া আমি একেবারেই নিশ্চল”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিহা এসেছে তার পরিচিত এক হাসপাতালে।মূলত এখানেই সে চাঁদের রক্ত আর ইউরাইন পরীক্ষা করতে দিয়ে গিয়েছিলো।সাথে চাঁদকে যেই ঔষধটা পূর্ণতা দিয়েছিলো সেটাও দিয়ে গেছে।কেনোনা সে যতবার নিজেদের ওখানে পরীক্ষাগুলো করিয়েছিলো ফলাফল হিসেবে পজিটিভ জিনিসই পেয়েছে।কিন্তু সেদিন চাঁদকে সেই ঔষধটা খেতে দেখে খানিক সন্দেহ জেগেছিলো মনে।প্রণয়ের চিন্তাকে সে গাঢ়ভাবে দেখতে আরম্ভ করে।এক কেজি পর্যন্ত ওজন না বাড়ার কারণ কী?বাচ্চার ওজনই তো দেড় থেকে দুই কেজি থাকার কথা।তাহলে?যদি বাচ্চার ওজন নাই বাড়ে তবে পেট ফুলছে কী করে?আল্ট্রাসনোতেও তো বাচ্চার প্রতিবিম্ব রিহা দেখেছে।সবকিছুইতো নরমাল আছে।তাইতো রিপোর্টে দেখেছিলো।তাহলে সমস্যা টা আসলে কোথায়?ওজন কেনো বাড়ছেনা?তাছাড়া ইদানীং চাঁদ বেশ শুকাচ্ছেও।জিনিসগুলো বেশ ভাবায় তাকে।তাই সে পূর্ণতার সাথেও আর কথা বলেনি।তাকে না জানিয়েই কাজগুলো সে করেছে।চাঁদকেও জানায়নি রিহা।শুধু শুধুই চিন্তা করবে বলে।চেয়ারের উপর বসে থেকেই নানান জিনিস ভাবতে ভাবতে হৃদস্পন্দন বাড়ে খানিক রিহার।দুশ্চিন্তারা হানা দেয় মন,মস্তিষ্কে।বিভিন্ন উল্টাপাল্টা খারাপ ইঙ্গিত মনে আসছে।তারপরেও নিজেকে সামলাচ্ছে রিহা।হিসাব নিকাশ মেলানোর চেষ্টা করছে।সবকিছু এতটা পেঁচানো,এত জটিল কী করে হয়?কিছুতেই কিছু মেলানো যাচ্ছেনা।অতঃপর মাথা চেপে ধরে ফ্লোর পানে চোখবন্ধবস্থায়ই ঘাড় নিচু করে রাখে রিহা।মিনিট পাঁচেকের মাঝেই তার নাম ধরে ডাকা হলে সে সামনে গিয়ে কয়েকটা রিপোর্ট হাতে নেয়।অতঃপর রিপোর্টগুলো দেখে কপাল কুঞ্চিত করে আস্তেধীরে সবগুলো রিপোর্ট চেক করে পরিশেষে শেষের রিপোর্টটায় নজর বুলাতেই চোখজোড়া বড় বড় হয় রিহার।তৎক্ষনাৎ ঘাম ছুটে তার।অস্থিরচিত্তে শ্বাস বাড়ে।বারংবার ঢোক গিলেও শুকানো গলা ভেজাতে পারছেনা।নিজেকে ধাতস্ত করে রিপোর্টগুলো হাতে নিয়েই নিজ চেম্বারের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় রিহা।

রাত তখন আটটা,
চৌধুরী বাড়ির গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে চৈত্রের সাথে দেখা হয় রিহার।রিহাকে চিন্তিত আর অস্থির দেখে কোনোকিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই চৈত্রকে উপেক্ষা করে রিহা বাড়ির ভেতরে ঢুকে।রিহার এরূপ ব্যবহারে খানিক ভড়কায় চৈত্র।যেই মেয়ে সর্বদা তাকে দেখলে বিনিময়ে হাসি উপহার দেয় অথবা কুশলাদি জিজ্ঞেস করে সে এতটা বিচলিত কেনো?তাকে কি খেয়াল করেনি?নাকি বেশ জরুরী কাজে এসেছে?বিষয়গুলো ভাবতে ভাবতেই বের হয়ে আসে চৈত্র।অতঃপর সমস্ত চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে অগ্রসর হয় নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।

হঠাৎ কোনো খবরাখবর না দিয়ে আকস্মিক রিহার আগমণে বেশ চমকায় চাঁদ।অতঃপর বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে,

“আপু হঠাৎ এত রাতে?”

অস্থির ভঙ্গিতে হাপাতে হাপাতে রিহা বলে,

“উঠোনা,শুয়ে থাকো।কিছু চেকাপ করবো তোমার।জরুরী”

“কিন্তু এত রাতে?”

“সারাদিন সময় পাইনি।ওদের সাথে একটু আড্ডায় বসেছিলাম আজ”

ফের বালিশে হেলান দিতে দিতে চাঁদ বলে,

“মির ভাইয়াদের?”

“হ্যা।তুমি বরং শুয়ে পড়ো”

অতঃপর চাঁদকে স্বাভাবিক দেখে দরজার বাইরে গিয়ে দুইজন লোক নিয়ে ভেতরে আসে রিহা।তারা চাঁদের বিছানার পাশেই দূরত্ব বজায় রেখে রুমের মাঝে বড় এক মেশিন রেখে বের হয়ে যায়।আর রিহা কিছু কারসাজি শেষে দরজা আটকে দিয়ে চাঁদের নিকটে দাঁড়িয়ে তার কামিজ ধরে উঁচিয়ে রাখতেই চাঁদ প্রশ্ন করে,

“আলট্রা করবে?এত রাতে?আমায় বললে আমিই ভাইয়ের সাথে তোমার চেম্বারে যেতাম।এত কষ্ট করে সবকিছু আনলে কেনো আপু?”

চাঁদের কথা শুনে তার গালে হাত রেখে ধীরকন্ঠে মুচকি হেসে রিহা বলে,

“কষ্ট কোথায় চাঁদ?তোমার জন্য এইটুকু কষ্ট কিছুই না আমার বন্ধুর চন্দ্রময়ী,আমার ভাবি চাঁদ?নাকি ছোট্ট বোন চাঁদ?”

বলেই চাঁদের কপাল বরাবর চুমু খায় রিহা।অতঃপর গালে হাত বুলিয়ে বলে,

“চিন্তা করবেনা একদম”

বলেই মিষ্টি করে হাসে রিহা।অতঃপর চাঁদের পেটে আলতো হাতে জেল লাগিয়ে কিছুক্ষণ শুকাতে রেখে আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান শুরু করে।অতঃপর মিনিট দশেক বাদে চাঁদের দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে বলে,

“ঐদিকে ঘুরে থাকো।দেখতে হবেনা।নাহয় আবার মেয়ে হচ্ছে নাকি ছেলে জেনে যাবে”

রিহার কথায় হাসে চাঁদও।মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে,

“চশমা ছাড়া এতদূরের জিনিস বুঝবো নাকি আপু?”

মনে মনে বেশ চিন্তিত থাকলেও মেকি হাসার চেষ্টাস্বরূপ রিহা বলে,

“তাও কথা।তবে তুমি ঐদিকেই তাকিয়ে থাকো।সাবধানের তো মার নেই!”

বলেই আবারও কিঞ্চিৎ হাসে।চাঁদও অন্যদিকে চেয়ে চোখ বুজে রাখে।আধঘন্টার মাঝে আলট্রাসনোগ্রাম শেষ হতেই সেখানে কিছুক্ষণ বসে রিহা।দ্রুতই রিপোর্ট বানায়।অতঃপর চাঁদকে বলে,

“তুমি মেশিনগুলো আমার চেম্বারে পাঠানোর ব্যবস্থা করোও।কাজ আছে আমার একটু”

প্রথমে চশমা না থাকায় ততটা খেয়াল না করলেও বর্তমানে স্পষ্ট রিহাকে একটু বেশিই অস্থির দেখে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“কী হয়েছে আপু?স্ক্যান করে কী দেখলে তুমি?আর এত ঘামছো?খারাপ কিছু দেখেছো কি?আর রিপোর্টে কী হলো?”

নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে খানিক হেসে রিহা বলে,

“না তেমন কিছুনা।আসলে জরুরী কাজ আছেতো, পেশেন্ট নিয়েই।তাই একটু চিন্তা করছিলাম।তার অবস্থা একটু ক্রিটিকাল”

“ও তাহলে যাও।মেশিনের চিন্তা করোনা”

চাঁদের কথার আর কোনো জবাব না দিয়ে এক হাতে রিপোর্ট নিয়ে অপরহাতে কাউকে কল করতে করতেই ফোন কানে ধরে বের হয় রিহা।আর চাঁদ কপাল কুচকে রেখে কেবলই চেয়ে থাকে রিহার দ্রুতগতিতে পা চালিয়ে অস্থির ভঙ্গিমায় যাওয়ার পানে।

To be continued…..

[বিঃদ্রঃগল্পটা কাল্পনিক।তাই ভুলসমূহ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ]