#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) [১৮+ এলার্ট]
#নুসরাত_জাহান_মিম
২৪.
দিগবিদিকশূন্য হয়ে কা*টা পা সহিতই দৌড়ে চলেছে পূর্ণতা।রাত তখন ঠিক এগারোটা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট।জনমানবহীন নিস্তব্ধ পাকা সড়ক দিয়েই ভুতুড়ে পরিবেশ সমৃদ্ধ এক নীরব এলাকায় এসে থামে সে।হাটুতে হাত রাখতে গেলেও কা*টা ডান হাত তার ব্যথায় টনটনিয়ে উঠে।লম্বা শ্বাস টানতে টানতেই দাঁতে দাঁত চেপে আকাশপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে সে,
“আল্লাহ গো!”
“ও আল্লাহ!সহায় হও”
হঠাৎ ই সে পিছু হতে শুনতে পায় জন দু’য়েক লোকের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“আল্লাহ আপনার প্রতি সহায় হবেন ভাবলেনও কী করে?”
“শুধু শুধুই নিজের ম*রণ ঘনিয়ে আনলেন না মিস পূর্ণতা?”
তৎক্ষনাৎ পিছু ঘুরে চায় পূর্ণতা।অতঃপর তারই সম্মুখে দুইপাশে দাঁড়ানো ফায়ান আর চৈত্রকে দেখে চোখদু’টো সামান্য বড় হয়।ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে সে প্রশ্ন করে,
“ফা….ফায়ান তুমি?তুমিও?”
“বেশ চমকে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে?”
ফায়ানের পাল্টা প্রশ্নে পূর্ণতা জবাব দেয়,
“তা….তুমি সব জানতে?”
পূর্ণতার পানে ধীরপায়ে এগুতে এগুতে ফায়ান বলে,
“আহা আপু!সব আর জানতাম কোথায়?তবে আপনার যেই ক্রি*মিনাল মাইন্ড এটা যদি আমার থাকতো নিশ্চিত দেশের এবং নিজের জন্য ভালো কিছু করা যেতো।কিন্তু আফসোস!আপনি কেবল অন্যের ক্ষ*তি করেই তৃপ্তি পেলেন।নাকি শুধু চাঁদের?”
নিজেও পিছু যেতে যেতে পূর্ণতা বলে,
“দা….দেখো যা চলে গেছে,গেছেই।তা….তোমরা শুধু….শুধুই আমার পেছনে পড়েছো”
তৎক্ষণাৎ প্রতিত্তোর চৈত্রের,
“শুধু শুধু তো কুকুরও আপনাকে কা!মড়াবেনা মিস অহনা।আমরাতো মানুষই”
চৈত্রের কথা শেষ হতেই ফায়ান বলে উঠে,
“আমার ভাবতেও অবাক লাগে আপনি আপনার বেস্টফ্রেন্ডকে পর্যন্ত ছাড়েননি।এতটা স্নিগ্ধ রূপের আড়ালে পৈশাচিক রূপ রয়েছে জানাই ছিলোনা”
পিছু ঘুরতে ঘুরতে পূর্ণতা বলে,
“আম….আমি এখানে এসেছি তোমরা কী করে জানো?”
জবাব আসে চৈত্র হতে,
“আমার বোনজামাই যে আপনার পায়ে বেশ সুন্দর কিছু উপহার দিয়েছে তার বদৌলতেই”
“আমি…..আমি কিন্তু চেচাবো!”
বলতে বলতেই ছুট লাগায় পিছু।তবে বেশিক্ষণ আর যেতে পারেনা।বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী কারো বুকের সাথে ধাক্কা লাগতেই পড়ে যায় পূর্ণতা।অতঃপর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই নজরে আসে শীতল চাহনী তার পানেই নিক্ষেপ করা প্রণয়কে।ভয়ার্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থেকেই পিছু যেতে যেতে পূর্ণতা বলে,
“দা….দেখ প্রণয়।আমা….আমায় তুই মাফ করে দে দোস্ত!আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি।আমায় তুই….আমায় তুই পুলিশের কাছে দিয়ে দে”
পূর্ণতার কথাসমূহ শান্ত ভঙ্গিতে শুনতে শুনতেই তার পানে এগিয়ে আসে প্রণয়।অতঃপর লম্বা হাতার হুডি কনুই অব্দি টেনে পূর্ণতার বাহু চেপে তাকে দাড় করায় এবং গম্ভীরস্বরে প্রশ্ন করে,
“তোর মনে আছে?দেখতো এই জায়গাটা।ঠিক এখানে দাড়িয়েই আমার চাঁদ আর অরণকে তুই ধরে রেখেছিলিস।মনে করে দেখতো মনে আদোতে তোর পড়ে কিনা!”
অতঃপর আশপাশে চোখ বুলাতেই পূর্ণতার স্মরণে আসে সত্যি সত্যিই এটা শহীদুল্লাহ হলের সেই পাশই যেই পাশে বছর সাতেক পূর্বে তারা তাদের জঘন্যতম কার্য ধারণ করেছিলো।প্রণয়ের পানে চেয়ে কিছু বলার পূর্বেই ব্যান্ডেজ করা কা*টা গালে বেশ শক্তপোক্তই থা*প্পড় পড়ে তার।প্রণয়ের পানে চাইতেই পরপর তার দুই গালে থা*প্পড়ের বর্ষণ হয়।এবং কর্ণগোচর হয় প্রণয়ের ঠান্ডাস্বর,
“আমার চাঁদের গালে ঠিক কতগুলো থা*প্পড় তুই দিয়েছিলি মনে আছে?আমি গুনে গুনে ঠিক ততগুলোই তোকে দেবো।গুনতে আরম্ভ কর।আই হ্যাভ নো এক্সট্রা টাইম ফর ইউ।হারি!বাড়ি ফিরতে হবে আমার।বউ অপেক্ষা করছে”
বাম হাত হুডির পকেটে গুজে ডানহাত দ্বারা একের পর এক উল্টো,সোজা দুইপিঠেই পূর্ণতার দু’গালে চ*ড় দিতে দিতেই উক্ত বাক্যসমূহ আওড়ায় প্রণয়।পূর্ণতার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই পালাবার।অথবা উপায়ও তার নেই।ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে চ*ড় পড়লেও র*ক্তে মাখোমাখো হয় তার কপোলদ্বয়।র*ক্তাক্ত হয় প্রণয়ের ডানহাতের দুইপিঠও।উল্টোপিঠ,সোজাপিঠ কোনোভাবেই থাপড়িয়ে ক্লান্ত হচ্ছেনা প্রণয়।বরং বিরক্ত হয়েই গাল হতে টেনে ব্যান্ডেজ তুলতেই মৃদু আ!র্তনাদ করে পূর্ণতা।এতক্ষণ কথা বলার সুযোগ না থাকলেও এবারে সে বলে,
“মা…মারবিই যেহেতু ড্রেসিং কেনো করেছিলিস?”
ফের পূর্ণতার ডান গালে হাতের উল্টোপিঠের চ*ড় শেষে থামে প্রণয়।অতঃপর বাম গালে সোজাপিঠে থা*পড়িয়ে আগের ন্যায়ই থা*প্পড়ের বর্ষণ ঝড়াতে ঝড়াতে বলে,
“মায়া জন্মেছিলো খানিক।যতই হোক বোন তথা বান্ধবী লাগিস।রিহু অথবা মিরুর তুলনায় কোনো অংশে কম তোকে দেখিনি।অথচ তুই কী করলি?আমাদের পিঠেই ছু*ড়ি চালিয়েছিস।প্রণয় কখনো ভাঙেনি।তবে তুই তাকে বহুবার ভেঙেছিস।বুকের ভেতর থাকা হৃদপিণ্ড আমার চি*ড়ে গিয়েছিলো বিশ্বাস কর!প্রথমবারের ন্যায় হৃদয়ে যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়েছিলো তখন,যখন আমার ভালোবাসার দুইজনের উপর দেওয়া তোর সেসব আরোপসমূহ আমি নিজ আঁখি সহিত দেখি!পরেরবার অরণের মৃ*ত্যুশয্যা এবং চাঁদের ধো*কা একইসঙ্গে মানতে পারছিলাম না।তৃতীয়বার কী হয়েছিলো বলতো?”
বলেই খানিকক্ষণ থামে প্রণয়।র*ক্তাক্ত হাত পূর্ণতার গাল হতে নামিয়ে ফের বলে,
“কী বলতে পারছিস না?আমিই বলছি”
বলেই গলা চে!পে ধরে পূর্ণতার।অতঃপর ঘাড় বাকিয়ে চৈত্রপানে চেয়ে বলে,
“ভাইয়া,ফায়ানকে নিয়ে ঐদিকটায় যান।দেখে আসুন”
“হ্যা যাচ্ছি।চলো ফায়ান”
বলেই ফায়ানকে নিয়ে হাটতে হাটতেই আরও খানিক নিটোল পরিবেশ সমৃদ্ধ এলাকায় হাটা ধরে চৈত্র।ফায়ানও কোনোকিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,
“আমরা কোথায় যাচ্ছি ভাইয়া?”
“মিস পূর্ণতার জন্য প্রণয় যা সাজিয়ে রেখেছে তার ব্যবস্থা নিতে”
ভ্রু কুচকে ফায়ান প্রশ্ন করে,
“কী সাজিয়ে রেখেছে?”
ফায়ান আর চৈত্র যেতেই পূর্ণতা প্রশ্ন করে,
“চাঁদের রে*পের ব্যাপারে ফায়ান কিছু জানেনা?কাউকেই বলিস নি তুই তাই কিনা?”
সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ণতার গলায় রাখা হাত শক্ত করেই চে!পে ধরে দেয়ালের সঙ্গে পূর্ণতাকে মিশিয়ে র*ক্তিম দৃষ্টি তার পানে নিক্ষেপ করে প্রণয় বলে,
“শাট ইওর ব্লা!ডি মাউথ!আরেকটা বাজে বিষয় আমার চাঁদের নামে বলবি তোর জিভ এখানেই টেনে ছি*ড়ে দেবো”
বাম হাত দিয়ে গলায় রাখা প্রণয়ের হাত টানতে টানতে বহু কষ্টে পূর্ণতা আওড়ায়,
“তব….তবে তোর চাঁদ…..চাঁদ যে ধর্ষি!….ধ!র্ষিতা এ তো সত্যি!”
গলা চে!পে রেখেই হুডির পকেট হতে ধারালো এক ব্লে*ড বের করে প্রণয়।অতঃপর ব্লে*ডের কাগজ রাস্তায় ফেলে পূর্ণতার দিকে তা এগোতে নিলেই চোখজোড়া বড় বড় হয় তার।এবং প্রণয় যখন তার গলা হতে হাত সরায়।ভয়ার্ত কন্ঠে পূর্ণতা বলে,
“তা……তুই….তুই কা….কী করবি প্রণয়?দা…. দেখ আমি তোর বোনের মতো আমার সাথে তুই এমন…এমন করতে পারিস না”
পূর্ণতার কথা শেষ হতেই তার চোয়াল চে!পে রেখে প্রণয় বলে,
“তুইতো আমার বোনই পূর্ণ!তোকে আমি আমার ছোটবোনদের তুলনায় অধিক ভালোও বাসতাম।তবে সেই বোনের মর্যাদা তুই রাখতে পারিস নি।যেদিন আমার চাঁদের সাথে করা তোদের অমানবিক নি!র্যাতন সম্পর্কে অবগত হই সেদিনই মস্তিষ্ক ভেবে নিয়েছিলো অহনা নামক মেয়েটাকে ততটা ভয়াবহ শাস্তিই দিতে হবে যতটা দিলে তার রুহ পর্যন্ত কেপে যাবে।তবে যখন রিহুর কাছে জানতে পারি তুই ই অহনা!তুই ই সমস্ত কিছুর মূলে,এক পর্যায়ে সত্তা নড়ে গিয়েছিলো আমার।মনোবল টগবগিয়ে ছিলো খানিক।যার জন্য ঘৃণার পরিমাণটা ছিলো সর্বাধিক,সে যদি নিজেরই বোনের ন্যায় বান্ধবী বের হয় কীরূপে শাস্তি দেবো?আদোতে দিতে পারবো ও?নানান চিন্তা জেগেছিলো।তোকে খু*নটা কী করে করবো চিন্তায়ও আনতে পারছিলাম না!নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলো সমস্ত পরিকল্পনা।পরবর্তীতে সর্বসহজ মৃ*ত্যুটাই দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু নিজের কাল তুই নিজেই ডাকিয়েছিস রিহুকে খু*ন করে।রিহাকে মা*রা তোর সত্যিই উচিত হয়নি।মেয়েটা এসবের একাংশেও ছিলোনা।তবুও তাকে তুই খু*ন করেছিস।তোর ভেতর যে পৈশাচিক আত্মা বিদ্যমান সেদিনই টের পেয়েছি যেদিন তুই নিজেই আমার চাঁদের ফেসমাস্ক লাগিয়ে আরেকটা ছেলের সঙ্গে…..সঙ্গে বিছানায় গিয়েছিস!সেসব ভিডিও করে…..করে আবার আমায় পাঠিয়েওছিস।কতটা নোংরা এবং বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী হলে নিজেরই বন্ধুর নামে অপবাদ ছড়াতে তার ফেসমাস্কসহ নিজে চাঁদের মাস্ক লাগিয়ে আমারই চোখের সামনে তুই!…….তুই ছিহ!তোকে বন্ধু বলতেও সত্তায় বাঝে আমার।সেজন্যই ফের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়।তোকে সহজ মৃ*ত্যু দেয়ার কথা ভাবলেও নিমিষেই স্মরণে আসে তুই বন্ধু হওয়া দূর বলারও যোগ্য নস!এবং তুই সেই অধিরাজ শেখেরই মেয়ে যার জন্য আমার চন্দ্রের সাজানো,সহজ জীবন অন্ধকারে ঘনিয়েছিলো।যার সর্বমূলে ছিলিস তুই!তোকে তো এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায় না রে পূর্ণ!তোর প্রতি মায়া না,বরং ঘৃণা ব্যতীত অন্যকিছু আসার সম্ভাবনাই নেই!”
প্রতিটা বাক্য আওড়াবার সময় কন্ঠে খাদ নামে প্রণয়ের।এবং তার সমাপ্তি ঘটতেই পূর্ণতার ঠোটজোড়ার মাঝ বরাবর ধা*রালো ব্লে!ড ছুইয়ে ক্যাচ করেই টান দেয় প্রণয়।তৎক্ষনাৎ চোখজোড়া বড় বড় হয় পূর্ণতার।র*ক্তে ভাসে চিবুকসহ গলা এবং বুকের কাছও।চোখের সামনে সমস্ত কিছু অন্ধকার ঠেকে তার নিকট।কথা পর্যন্ত বলার আর সুযোগ মেলেনা।নোনাজলের ধারা গড়ায় আঁখি হতে।ছটফটায় যন্ত্রণায়।অতঃপর উপলব্ধি করে ড্রেসিং করা তার হাতের ব্যান্ডেজ খুলছে প্রণয়।পরিশেষে চোখজোড়া বুজে আল্লাহকে স্মরণ করতেই শুনতে পায় প্রণয়ের শীতল কন্ঠস্বর,
“পালা,তোকে বাঁচার আরেকটা সুযোগ দিলাম।আমার হাতে আর কখনো পড়িস না।জানে মে*রে দেবো”
বলেই সরে আসে পূর্ণতার সম্মুখ হতে।এবং পূর্ণতা সত্যি সত্যিই ছুট লাগায় দূর হতে দূরান্তে।পূর্ণতার যাওয়ার পানে ঠোট মৃদু বাকিয়ে পলকহীন চেয়ে থাকে প্রণয়।অতঃপর নিজেও পিছু নেয় তার।
অনেকখানি পথ পেরিয়ে হাপিয়ে উঠে পূর্ণতা।হাপাতে হাপাতেই তার নজরে আসে কোনো এক জঙ্গলের ন্যায় এলাকায় সে এসে পড়েছে।খানিক ভয় জন্মালেও নিজেকে সামলানোর চেষ্টায়ই সুনসান নীরব মাঠের মাঝ বরাবরই সে বসে পড়ে।সমস্ত বদন তার যন্ত্রণায় টনটনাচ্ছে।বেঁচে থাকার ইচ্ছেটুকু ক্ষণে ক্ষণেই খোয়াচ্ছে।তবুও যেনো বাঁচার আকুল প্রচেষ্টা!মৃ*ত্যু যন্ত্রণা কি এতটাই বেদনাদায়ক?এতদিন যে কতশত মানুষ সে মে*রেছে তারাও কি এতটাই কষ্ট ভোগ করে দেহ ত্যা*গ করেছে?ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ নজরে আসে তার সম্মুখেই চৈত্র আর ফায়ান দাঁড়িয়ে।কিয়ৎক্ষণ বাদে প্রণয়কে সেথায় আসতে দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে পূর্ণতার।ঘাম ছুটে গিয়েছে সমস্ত বদনজুড়ে।আর বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগছেনা।এবারে সত্যি সত্যি মৃ*ত্যুকে আলিঙ্গন করার চিন্তা মস্তিষ্কে আসতেই নজরে আসে সামনেই এক খাচার ভেতর হিংস্র কিছু প্রাণী।চোখজোড়া বড় বড় হয় পূর্ণতার।শরীরের উষ্ণার*ক্তসমূহ নিমিষেই যেনো শীতল হচ্ছে।অতঃপর ভয় তার মাত্রাতিরিক্ত বাড়ে যখন নজরে আসে প্রণয় সেই খাঁচা খুলে পূর্ণতাকে তাক করেই দূর হতে লাইটের আলো ছড়ায়।সঙ্গে সঙ্গে নরখাদকগুলো ছুটে আসে পূর্ণতার নিকট।অতঃপর খুবলে খে*তে আরম্ভ করে বদনের প্রতিটা অংশ।র*ক্তে রঞ্জিত হয় মৃত্তিকা।যন্ত্রণায় ধরণী কাপানো আ!র্তনাদে ভাসে চারিপাশ।ধীরপায়ে এগিয়ে যায় প্রণয় সেথায় এবং শুনতে পায় পূর্ণতার আহাজারিসমূহ,
“মা!ও মা!”
“আল্লাহ,ও আল্লাহ!আল্লাহ গো!”
“প্রণয়!প্রণয়রে!আল্লাহ!”
“ও আল্লাহ!”
পৈশাচিক এক আনন্দানুভূতি জাগে সমস্ত সত্তাজুড়ে প্রণয়ের।ঠোট মৃদু বাকে তার।এবং পূর্ণতা সহিতই প্রাণীগুলোর চারিপাশে তরল জাতীয় কিছু চক্রাকারেই ঢালে সে।অতঃপর পিছু যেতে যেতে খানিক উচ্চস্বরেই বলে,
“তুই এই নরখাদক প*শুর তুলনায়ও নিকৃষ্ট পূর্ণ।তোর ঐ নোংরা দেহ পবিত্র মাটিকেও অপবিত্র করে তুলবে।এবং সেজন্যই তোর দেহাবশেষ পর্যন্ত আমি এই ধরণীজুড়ে থাকতে দেবোনা,দিতে পারিনা।তোর দেহের একাংশও কেউ কখনো খুঁজে পাবেনা।তার অস্তিত্বই থাকবেনা।তোর পৈশাচিক আত্মার পরিসমাপ্তি আমি এখানেই ঘটাবো।এবং মনে রাখবি প্রণয় তোকে ঘৃণা করে”
বাক্যসমূহ আওড়িয়ে কিয়ৎক্ষণ বাদে যখন নজরে আসে পূর্ণতার আর কোনো চিৎকার ভাসছেনা এবং নরখা*দকগুলো মাটিতে পড়ে থাকা কোনোকিছু টুকিয়ে খাচ্ছে।ঠোট ফের বাকে প্রণয়ের।এবং উপলব্ধি করে তার চাওয়া সত্যিই পূর্ণ হয়েছে।অতঃপর চট করেই হুডির অপর পকেট হতে গ্যাসলাইটার বের করে চক্রাকারে ঢালা কেরোসিনের উপরই জ্বালিয়ে তা ছু*ড়ে মারে।এবং দাউদাউ করে সেথায় নিমিষেই জ্ব!লে উঠে আগুনের ফুল্কিরেখা।প্রাণীগুলো ছুটে তাদের নিকট আ*ক্রমণের পূর্বেই জ্বলে ভ*স্ম হতে আরম্ভ করে।আর প্রণয় সেই আগুনের অগ্নিকান্ডেই চেয়ে থেকে হুডির পকেটে দুই হাত গুজে শীতলস্বরে আওড়ায়,
“অতঃপর পৈশাচিক তান্ডবের সমাপ্তি হয়তো এভাবেই ঘটে”
অতঃপর বিড়ালাক্ষীজোড়া হাসা বন্ধ হয় তার।আঁখি মৃদু সিক্ত।বুকের ভেতর কোথাও এক চাপা যন্ত্রণা সৃষ্টি হচ্ছে।হতাশার শ্বাস নির্গত হতে চেয়েও যেনো পারছেনা।ঘাড় উচিয়ে দৃষ্টি তার অন্ধকারাচ্ছন্ন গগণ পানে স্থির করে মনে মনে সে আওড়ায়,
“তোর বেস্টফ্রেন্ডকে মে*রে দিয়েছি বলে কি রাগ করবি রিহু?”
অতঃপর বুক চি*ড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসার পূর্বেই পেছন হতে চিৎকার ভাসে কানে,
“প্রণয়!”
পিছু ঘুরে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই চাঁদকে নজরে আসতেই চোখজোড়া কিঞ্চিৎ বড় হয়ে আবার শিথিল হয় প্রণয়ের।ছুটে আসে সে চাঁদের নিকট।স্তব্ধ হওয়া চাঁদকে টেনে বক্ষপটে আলিঙ্গন করে শুধায়,
“হিশ!কিচ্ছু হয়নি,কিচ্ছু হয়নি চন্দ্রময়ী”
অতঃপর ইশারায় ফায়ান আর চৈত্রকে কিছু বলতে নিলেই চাঁদের পিছু অরণকেও নজরে আসে প্রণয়ের।অরণের দৃষ্টি আগুনে পু*ড়তে থাকা পূর্ণতার শেষ দেহাবংশপানে।এক নিমিষের জন্যও পলক তার পড়েনা।একধ্যানেই চেয়ে আছে অগ্নিপানে।চোখের কালচে মনিদ্বয়ে যেনো তারই প্রতিচ্ছবি ভাসছে।অতঃপর চাঁদকে যখন বুকের কাছেই ঢলে পড়তে দেখে,পিঠ এবং হাটুর নিচে আলতো হাতে চে!পে কোলে তুলে তাকে।এবং সাবধানতার সহিতই কোলে নিয়ে হাটা ধরে অরণপানে।বন্ধুর পাশে এসে ধীরকন্ঠে প্রণয় শুধায়,
“আমি জানি তুই পূর্ণকে ভালোবাসিস না”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বেশ কয়েকমাস সময়ই চাঁদ আর অরণের ব্যয় হয় কালো অধ্যায়ের কালচে সত্য হতে বেরিয়ে আসতে।প্রণয়ের মুখেই যখন সর্বসত্যিটা তারা জানে সেই মুহুর্তের তুলনায় কষ্টদায়ক মুহুর্ত আর কখনোই বোধহয় তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।এবং তারা নিজেও রিহার ন্যায়ই বাকিদের থেকে সত্যসমূহ আড়াল করে।যেই পীড়া নিজেদের সহ্য করতে হয়েছে,একই পীড়া বাকি বন্ধুদের দিয়ে গ্লানি নিয়ে বাঁচতে তাদের না দেয়ার দরুনই এই পদক্ষেপ।থাকুক না বাকিরা একটুখানি সুখী?
নিত্যদিনকার ন্যায় হাসপাতাল থেকে ফিরেই বিছানায় বসে থাকা চাঁদের কোল দখল করে মাথা এলিয়ে পা গুটিয়েই শোয় প্রণয়।অতঃপর পেটের কাছে মুখ গুজে বাহু দ্বারা আলিঙ্গন করে শুধায়,
“বউ সর্বদা প্রণয়মগ্ন থাকে কিনা?”
চাঁদ হতে কোনো জবাব আসেনা বিধায় ফের প্রণয় শুধায়,
“চাঁদ?চন্দ্র?”
অতঃপর কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে উদর হতে মুখ সরিয়ে ঘাড় বাকিয়ে চাঁদপানে চেয়ে বলে,
“এই লালগোলাপ?চাঁদ?”
“চন্দ্রময়ী?”
প্রণয়ের বারকয়েক ডাকে ধ্যানভগ্ন হতেই তার পানে চেয়ে চাঁদ বলে,
“জ্বি?”
“কী ভাবছেন?”
হতাশার শ্বাস ফেলে উত্তর দেয় চাঁদ,
“ভাবছি,জীবন বড়োই অদ্ভুত।কতকিছু হয়,আপনার কি মনে হয়না অরণের এখন উচিত মিরাপুকে সত্যিটা বলে দেয়া?”
“ওদের টা ওদেরই সামলাতে দিন”
বলেই ফের মুখ গুজে চাঁদের পেটের কাছে।অতঃপর সশব্দেই চুমু খায় সেথায়।
______________________________
আজকাল বেশ উদাসীন থাকা পড়ে মিরার।একে একে দুই বান্ধবীকে খুইয়ে কেমন যেনো মনমরা হয়েই থাকে সর্বদা।বড্ড একাকিত্ব অনুভব হয় তার।যদিও বা বেশিরভাগ সময়ই আশেপাশে রিদি থাকে।তবুও কোথাও যেনো শূন্যতাটা রয়েই যায়।এমনি এক দিনে মিরার পাশে তারই বিছানায় বসে খাবার খাচ্ছিলো রিদি।তাকেও দু’এক লোকমা খাইয়ে দিচ্ছে এবং নানান কল্পনা-জল্পনা শোনাচ্ছে।অতঃপর হঠাৎ বলা রিদির বাক্যে টনক নড়ে মিরার,
“আপু আমার….আমার মনে হয় মানে….আমি…..মানে আমি প্রেগন্যান্ট!প্রেগন্যান্ট হয়তো মানে!”
কপাল কুচকে অদ্ভুত দৃষ্টি রিদির পানে নিক্ষেপ করেই মিরা প্রশ্ন করে,
“কী বললে?”
“বললাম যে!না মানে হয়তো আমি প্রেগন্যান্ট?”
গম্ভীরস্বর মিরার,
“মির জানে?”
জিভ দ্বারা ঠোট ভিজিয়ে খানিক ঢোক গিলে রিদি বলে,
“না,এখনও বলিনি কিছু”
“তবে এত দ্রুত বিষয়টা…..”
কন্ঠে খাদ নামিয়ে রিদি বলে,
“আপু মির কি আমায় বকবে?”
মৃদু হেসে রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে মিরা বলে,
“চিন্তা কীসের?আমি আছি না?বাবুর ফুপি।মির কী করে না করে জানিনা তবে আমি বেশ খুশি রিদু!আজই টেস্ট করিয়ে আসবো কেমন?”
ইতস্তত করে রিদি,
“কিন্তু মির?”
“ওর কথা বাদ দাও”
মাস পাঁচেক পরের কথা,
রিদিকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে আজ মাস খানেক হলো।বর্তমানে সে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।রিদির সাথে মিরও এসে হানা দিয়েছে বন্ধুর বাড়ি।দু’জনকেই আলাদা রুমে থাকতে দেয়া হয়েছে।বেশকিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করে তারা রওয়ানা হয়েছে শেষবারের ন্যায় আলট্রাসনোগ্রাফি করতে।রিহা আর পূর্ণতার কেউই যেহেতু বর্তমানে জীবিত নেই গাইনী ডাক্তার হিসেবে পরিচিত কেবল লিমা।এবং লিমার কাছেই তাদের যাওয়া।অতঃপর পজিটিভ রিপোর্ট আসতেই চিন্তিত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে থাকা রিদির ফোলা পেটের কাছে হাটুগেরে বসে চুমু খেয়ে মির বলে,
“তুমি আমার শূন্য জীবনে ভালোবাসার পূর্ণ প্রতীক”
To be continued…..
#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
২৫.
“আমি এখনো একটা ছেলেকে অসম্ভবরকম ভালোবাসি”
বাক্যখানা কর্ণপাত হতেই পাশে বসা রুবা অরিনের পানে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিসহিতই চাইতে বাধ্য হয়।অতঃপর মৃদুশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করে,
“কাকে ভালোবাসতে আপু?”
দৃষ্টি দেয়ালে ঝুলন্ত সিলিং ফ্যানে নিবদ্ধ করে পা দু’টো বিছানায় মেলে ঠোটজোড়ায় মৃদু হাসি এঁকে জবাব দেয় অরিন,
“সে আমার হৃদয় হরণকারী প্রথম পুরুষ।প্রথম আর শেষ ভালোবাসা আমার সে ই”
“খুব ভালোবাসো তাকে?”
রুবার প্রশ্নে তার পানে খানিকের জন্য চেয়ে বালিশে হেলান দিতে দিতে অরিন বলে,
“তাকে ভালো না বাসলে দম বন্ধ লাগে রুবা”
“সে কি তোমায় ভালোবাসেনি?”
রুবার মলিনস্বরের বাক্যে তার পানে ফের চেয়ে হাসিমুখে অরিন বলে,
“আগে বেশ পাগলামি করেছি রুবা,ঠিক তোমার মতোই।তবে আমি ভুল ছিলাম।সে আমার জন্য কখনো তৈরিই হয়নি।যদি হতো অবশ্যই ভালোবাসতো আমায়।তবে সে ভালোবেসেছে তার অতি প্রিয় নারীকে।এবং এতটাই ভালোবেসেছে যে আমার পক্ষেও ততটা তাকে ভালোবাসা সম্ভব হয়নি।তবুও আমি তাকে ভালোবাসি।তার মতো প্রেমিক পুরুষকে ভালোবাসতে পেরেছি এইতো ঢেড়।নাইবা পেলাম তার ভালোবাসা।আমার ভালোবাসা,তার ভালোবাসার সাথে সুখে আছে আমি তাতেই তৃপ্ত”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দৃষ্টি অরিন হতে সরিয়ে সম্মুখপানে করে রুবা বলে,
“আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমরা সর্বদা যা চাই তা পাইনা।সবসময় যা চেয়েছি সর্বচেষ্টায় পেয়েছিতো সেজন্যই পাগলামিগুলো বেড়ে গিয়েছিলো।মিস্টার চৈত্রের ভালোবাসাকে আমি সম্মান করি।সে অন্য কাউকে ভালোবাসলেও তার জীবনী টা ভিন্ন।এবং আমায় যে অতি যত্নের সহিত তা বুঝিয়েছে মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম কেবল।এভাবেও বুঝি কাউকে ভালোবাসা যায়?তার প্রতি থাকা ভালোলাগাটা কবে যে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হলো বুঝতেই পারিনি।তোমার ন্যায় আমিও এক যুগ পর বলতে চাই ‘আমি এখনো একটা ছেলেকে অসম্ভবরকম ভালোবাসি’।তাকে ভালো না বাসার কতশত বাহানা খুঁজেছি।জানো আপু?আমার চৈত্র যেই মেয়েটাকে ভালোবাসে,সে মাত্রাতিরিক্ত লাকি।আমি যদি তার জায়গায় মিস্টার চৈত্রের জীবনে প্রথমে যেতাম কখনোই নিজ হতে তাকে দূর হতে দিতাম না।তার ভালোবাসা এতটাই স্নিগ্ধ যে বছরের পর বছর গড়ায় অথচ মেয়েটার প্রতি তার ভালোবাসা কমেনা।ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা না পাওয়া সত্ত্বেও সে তার রূপন্তিকাকেই ভালোবাসে।ইশ!আমি যদি তার প্রথম হতাম!শেষটা আমিই থেকে যেতাম আপু।মেয়েটা স্বেচ্ছায় এক আকাশ ভালোবাসা,বিশাল সুখের সমুদ্র হারিয়েছে।আমার মানতেও বেশ কষ্ট হয় কেউ কাউকে এতটা ভালোবাসার পরেও ভালো কী করে না বেসে বিনিময়ে দুঃখ দিতে পারে?রূপ মেয়েটা সত্যিই অভাগী,আবার ভাগ্যবতীও।চৈত্রের ন্যায় প্রেমিক পুরুষ সে পেয়েছে।যদি আমি সত্যিই তার হতাম!”
অতঃপর বুক চি*ড়ে রুবার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতেই শুনতে পায় অরিনের শীতল কন্ঠস্বর,
“রূপন্তিকা হা?”
মাথা ঝাকিয়ে জবাব দেয় রুবা,
“হিম।ভালোবেসে তাকে রূপন্তিকা বলেই সম্বোধন করে সে।ভালো নাম রূপা”
“রূপার বদলে সত্যিই রুবা তার জীবনে প্রথম আসা উচিত ছিলো।তবে তুমি কেনো এতদূর চলে এলে?ভাইয়াকে ভালোবাসো না?”
ফের হতাশার শ্বাস ফেলে রুবা বলে,
“বাসি।তবে সে আমায় বাসেনা,হয়তো কখনো বাসতে পারবেও না।আমি চাইনি তার ভালোবাসার বদলে ঘৃণা অথবা বিরক্তির কারণ হতে।সে আমায় ভালো নাই বাসুক।সমস্তকিছু বাচ্চামেয়ের পাগলামি ভেবে ভুলেই যাক!সে নাহয় নাই জানুক তাকেও কেউ খুব করে চায়,ভালোবাসে।সেও যে কারো হৃদয়জুড়ে বসবাস করে তা হতে আজন্ম সে আড়ালেই থাকুক”
“মাসের পর মাস তাকে দেখোনা কষ্ট হয়না?”
“তুমিও তো দেখোনা,তোমার হয়না?”
“সেথায় অন্যের সাথে দেখার তুলনায় এখানে ঢেড় ভালো আছি।তারা সুখী হোক আমি তাই চাই”
“তুমি প্রণয় ভাইয়াকে ভালোবাসো,আমি কি ঠিক?”
ঘাড় বাকিয়ে দৃষ্টি রুবার পানে স্থির করতেই কর্ণগোচর হয় ধীরস্বরের অপ্রত্যাশিত বাক্য,
“আমি জানি,লুকোতে হবেনা।বুঝি আপু”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরিন বলে,
“চাঁদ আপুই কেবল প্রণয়কে ডিজার্ভ করে।অন্য কেউ না রুবা”
“সে জানি আপু।তাদের দু’জনকে দেখলে যুগযুগ ধরে কেবল একজনকেই ভালোবেসে যেতে ইচ্ছা করে।তারাও তো বছরের পর বছর আলাদা থেকে,এত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়েও একে অপরকে ভালোবেসেছে”
“হিম।তবে তুমি আমার সাথে এতদূর থাকার ডিসিশন না নিলেই পারতে।সেখানে থেকেও সুন্দর ক্যারিয়ার হতো তোমার”
লম্বা শ্বাস টেনে রুবা বলে,
“তার আশেপাশে থাকলে লুকিয়ে চুরিয়ে তাকে দেখার তীব্র বাসনা আজন্মই থেকে যেতো আপু।তাছাড়া আমার উপস্থিতি সে পছন্দ করেনা”
অতঃপর খানিক থেমে ফের বলে,
“তোমার আর আমার গন্তব্যতো একই।তোমার থেকে বেশকিছু শেখার আছে আমার।তুমি আমার আইডল আপু।জীবনের বাকি সময়টুকু তোমার সাথেই নাহয় কাটাই?”
রুবার গালে হাত রেখে মৃদু হেসে অরিন বলে,
“বোকা মেয়ে।জীবন থেমে থাকেনা”
“তোমারটা কেনো প্রণয় ভাইয়াতেই আটকে আছে?”
রুবার কথায় গাল হতে হাত আলগা হয় অরিনের।মুখশ্রী হয় থমথমে।দৃষ্টি নত করে অন্যপানে চাইতেই ফের শোনে রুবার শান্তস্বর,
“যা নিজের জন্য অসাধ্য,অন্যের জন্য সাধিত করতে চেও না”
অতঃপর নজরাবন্দী হয় কানে ইয়ারফোন গুজে বালিশে হেলান দেওয়া রুবাকে।রুবার চোখ বোজা দেখে তাকে আর বিরক্ত করতে ইচ্ছা হয়না অরিনের।ধীরপায়ে সে এগিয়ে যায় বারান্দার পাশের জানালা ধারে।অতঃপর লম্বা শ্বাস টেনে জানালা হতেই দূর হতে দূরান্তে কেবলই চেয়ে থাকে পলকহীন।পেরিয়ে গেছে মাস ছয়েকের বেশি সময়।যখন রুবাসহিত নিজেও রাঙামাটি বদলি হয়ে অরিন চলে আসে তার মাসখানেক পরেই জানতে পারে রিদির প্রেগন্যান্সি সম্পর্কে।তখন প্রথমবারের ন্যায় অবাক হয়েছিলো অরিন,যখন সে উপলব্ধি করতে পেরেছিলো বোকা রুবা সত্যিই বড় হয়ে গিয়েছে।নিজের সর্বপ্রিয় বান্ধবীর বিশেষ মুহুর্তে তার পাশে যাওয়ার ইচ্ছেটুকু বিন্দুমাত্র পোষণ করেনি।মেয়েটা কি ভয় পায়?ফের সেই মানবের সম্মুখে দাড়ালে শক্তপোক্ত সত্তাটা তার নড়ে যাবে বলে?নাকি দুর্বল হয়ে ফের কোনো ভুল কান্ড সে করে ফেলবে বলে?অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার রেলিং ধরে মনে মনে অরিন শুধায়,
“ভালোবাসার বিনিময়ে কেনো ভালোবাসা পাওয়া যায়না?আমরা যাকে ভালোবাসি কেনো তারা সর্বদাই অন্যের ভালোবাসায় মত্ত হয়?”
কোনো জবাব মেলেনা অরিনের।বুক চি*ড়ে কেবলই তার দীর্ঘশ্বাসের মেলা বয়।অপরদিকে তারই বিপরীতে বিছানায় হেলান দেয়া রুবারও একই প্রশ্ন,
“ভালোবাসায় এত বিরহ কেনো?”
অতঃপর আঁখি বদ্ধবস্থায়ই কানের কাছে গুজে তার কিছু বিষাদময় পঙক্তি,
♪♪♪…দূর হতে আমি তারে সাধিব,
গোপনে বিরহডোরে বাধিব…♪♪♪
নিত্যদিনকার ন্যায় আজও চাঁদ হাসপাতালের ডিউটি শেষে কলেজে এসেছে সেকেন্ড আর থার্ড ইয়ারের ক্লাস দরুন।প্রথমে তার থার্ড ইয়ারের ক্লাসই থাকে।অতঃপর সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শেষে প্রণয়ের সাথেই ফেরত আসে চাঁদ।বর্তমানে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসেই সে বিদ্যমান।নিজ স্টুডেন্টদের লেকচার দিতে দিতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় খানিকক্ষণ বসে থেকে হোয়াইটবোর্ডে লেখা লেকচারগুলো নোট করতে নির্দেশনা দিয়েছে তাদের।এরই মাঝে হঠাৎ সে প্রশ্ন করে,
“তোমাদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কবে থেকে?ডাক্তার ব্যতীত অন্যকিছু হওয়া যেতো না?”
তার কথার প্রেক্ষিতে লেখা রেখে অনেকেই তার জবাব দিতে উদ্যত হতেই খানিক সোরগোলের আওয়াজ ভাসে কানে।মৃদু হেসে হাত উঁচিয়ে চাঁদ বলে,
“সাইলেন্ট।তোমরা কি এখনো বাচ্চা?একজন একজন বলো”
অতঃপর এক ছেলে হাত তুলে বলছে,
“ম্যা’ম আয় হ্যাভ আ কুয়েশ্চন”
চেয়ারে বসে থেকেই চাঁদ প্রতিত্তোর করে,
“ইয়েস,শিওর”
ছেলেটা বেঞ্চ হতে উঠতে গেলে চাঁদ বলে,
“দাড়াতে হবেনা,বসো”
“থ্যাংক ইউ ম্যা’ম”
বলেই ছেলেটা ফের বেঞ্চে বসে আমতা আমতা করে,
“আসলে ম্যা’ম আপনি কথাটা কীভাবে নেন বুঝতে পারছিনা!”
কপাল কুচকে চাঁদ প্রশ্ন করে,
“কেনো কী বলবে?”
ছেলেটা হকচকিয়ে আমতা আমতা করেই বলে,
“আ….আসলে!আসলে ম্যা’ম….ম্যা’ম আপনি…..আপনি আমার…আপনি আমার ক্রাশ ম্যা’ম!”
শেষের বাক্যখানা বেশ তাড়াহুড়োয়ই আওড়ায় ছেলেটা।সঙ্গে সঙ্গে হাসির রোল পড়ে সেথায়।তবে নিমিষেই তা থেমেও যায়।ছেলের কথা শেষে হাসির উচ্চস্বর কর্ণগোচর হতেই বসা হতে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর কালোরঙা ডাস্টার দিয়েই শব্দ তুলে উচ্চস্বরে চাঁদ আওড়ায়,
“সাইলেন্ট!আয় সেইড সাইলেন্ট!”
তৎক্ষনাৎ নিস্তব্ধ হয় কামড়া।ছেলেটা নিজেও বেশ ভয় পাচ্ছে।দৃষ্টি তুলে চাঁদপানে দূর কোনোদিকেই তাকাতে সে সক্ষম হচ্ছেনা।অতঃপর চাঁদের গম্ভীরস্বর কানে ভাসতেই ঢোক গিলে ছেলেটা,
“নাম কী তোমার?”
“রা…রাফি রাফি ম্যা’ম”
“আমি তোমার ক্রাশ?”
মাথা তুলে হকচকিয়ে রাফি বলে,
“জা….জ্বি….না।না মানে….না….না আসলে…ম্যা’ম ম্যা’ম…..”
কথার মাঝেই কথা বলে চাঁদ,
“তো রাফি,তুমি কি জানো আমি কার ওয়াইফ?”
“জা…জ্বি ম্যাম!প্রণয় স্যারের….আই মিন ভাইয়ার!”
“এক্সেক্টলি!আর প্রণয় যদি জানে তুমি তারই ওয়াইফের উপর ক্রাশ খেয়েছো এবং তা কনফেজডও করেছো কী হবে তোমার বলোতো?”
ছেলেটা মাত্রাতিরিক্ত ভয়ে তুতলিয়ে বলে,
“সা…সা..সরি ম্যা’ম!ভেরি সর….”
অতঃপর কর্ণগোচর হয় চাঁদের উচ্চশব্দের হাসির স্বর,
“কিছুই হবেনা!ক্রাশ খেতেই পারো নট আ বিগ ডিল।তবে আমি তোমার তুলনায় একটু বেশিই সিনিয়র।বসো,ভয়ের কিছু নেই”
অতঃপর তৎক্ষনাৎ কিছু মেয়েলি স্বর ভাসে চাঁদের কানে,
“ম্যা’ম আপনি কিন্তু তত বড় নন যতটা বোঝাচ্ছেন।যথেষ্ট ইয়াং আপনি,আর প্রণয় স্যারতো উফ!”
মেয়েদের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীরস্বরে আওড়ায় চাঁদ,
“প্রণয় স্যার কী?”
“কা…কিছুনাতো ম্যা’ম!”
“নজর সঠিক করবে।বিশেষ করে আমার প্রণয় হতে নজর যথেষ্ট বাঁচিয়ে রাখবে।ভুলবশতও যদি তার দিকে নজর চলেও যায় দশবারের বেশি ‘আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া’ বলে স্মরণ করবে।ওয়েল,অনেক আউট টপিকে কথা চলেছে।ফারদার কারো কাছ থেকে অদ্ভুত কোনো কথা শুনতে ইচ্ছুক নই।লেকচার নোটেড রাখবে।মঙ্গলবার টেস্ট নেবো।আসছি”
বলেই হাতে ব্যাগ সহিত ক্লাস হতে বেরুতে নিলে আকস্মিক মাথা চক্কর দেয় চাঁদের।সেথায়ই সে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে অবচেতন হয়।হঠাৎ চাঁদের সেন্সলেস হওয়ায় সকলেই হকচকায়,ভয় পায়।অতঃপর ধরাধরি করে রেস্টরুমে চাঁদকে নিয়ে আসতেই খবর পেয়ে ছুটে আসে হাসপাতাল হতে প্রণয়।আসে অরণ আর মিরাও।দু’জনই হাসপাতালে ছিলো।অগ্যতা তাদের কানেও খবর গিয়েছে।
বর্তমানে চাঁদ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে গাইনী সেক্টরেই কেবিনের ভেতর শোয়াবস্থায় সেন্সলেস রয়েছে।এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি।প্রণয় আর মিরাই কথা বলছে ডাক্তারসহিত।অরণ বাইরে বসে তাদের অপেক্ষারত।ডাক্তারের সাথে কিছু কথা শেষে মিরাকে বাইরে পাঠিয়ে নিজেই ডাক্তার সহিত আলোচনা করে প্রণয়,
“চাঁদের বেশ কয়েক মাস ধরেই প্রবলেম হচ্ছে।তাছাড়া আপনাকেতো ইনফর্ম করা হয়েছে মিসক্যারেজের সময় অপারেশনে তার গর্ভাশয়টা ফে!লে দেয়া হয়েছিলো।আপনি বলেছিলেন বিশেষ কোনো প্রবলেম হবেনা।তাহলে এত সমস্যা দেখা দিচ্ছে কেনো?স্টিল তার জ্ঞান ফেরেনি,কাইন্ডলি চেক করুন।আদারওয়াইজ অন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে”
“ডোন্ট বি হাইপার ডক্টর প্রণয়।দেখছি,চিন্তা করবেন না।গ*র্ভাশয় না থাকলে বাচ্চা প্রাসঙ্গিক বিষয় ব্যতীত অন্য কোনো প্রবলেম তো আদোতে হওয়ার কথা না।তবুও আমরা চেষ্টা করবো।আপনি চিন্তিত হবেন না”
“চিন্তামুক্তও হতে পারছিনা।চেষ্টা না,যা করার দ্রুত করুন”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদের প্রেগন্যান্সির খবরে বাকিসবাই খুশিতে পুলকিত হলেও চাঁদ আর প্রণয় নিজেই গম্ভীর।তাদের ধারণামতে এমনটা হওয়ার কথা না,কস্মিনকালেও তা সম্ভব না।চিন্তিত তাদের সহিত অরণও।কোনোভাবেই কোনোকিছুর গরমিল মেলানো যাচ্ছেনা।পূর্ণতা যদি চাঁদের গর্ভাশয় ফে!লেই দেয় তবে চাঁদ প্রেগন্যান্ট হয় কী করে?ভুলবশত প্রণয় কি ফের চাঁদকে সন্দেহ করবে?অথবা তাদের সাংসারিক জীবনে আর কোনো সমস্যা হানা দেবে কি?নানান কিছু চিন্তার দরুনই সে চৌধুরী বাড়ি প্রণয়ের সাথে দেখা করার তাগিদে হাজির হয়েছে।আপাতত প্রণয়ের থেকে কোনোপ্রকার ভুলভাল সিদ্ধান্ত সে মানতে ইচ্ছুক নয়।
হলরুমে সোফার উপর বসেছিলো অরণ।বেশকিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খানিক বিরক্ত হয়েই এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতেই বাগানের দিকে হঠাৎ মন টানে তার।অগ্যতা বাগানপানে ছোটে সে।অতঃপর খালি পায়ে কিয়ৎক্ষণ সেথায় হাটতে হাটতেই পায়ে কিছু বিধলে পা উঁচাতেই নজরে আসে পায়ে তার কাচ বিধে কে*টে গিয়েছে।কপাল কিঞ্চিৎ কুচকে আশপাশ খুঁজে ঝোপের আড়াল হতে ভাঙা এক ফটোফ্রেম নজরাবন্দী হয় অরণের।এবং সে তা হাতে নিতেই পূর্ণতার হাস্যোজ্জ্বল এক ছবি দৃষ্টি সম্মুখ ভাসে।খানিকের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপরের দিকে চাইতেই দৃষ্টি যায় প্রণয়ের বারান্দা পানে এবং কোনোপ্রকার অসুবিধা তার হয়না ছবিটা যে আক্রোশে প্রণয়ই ফেলে দিয়েছে।সযত্নে ভেঙে গুড়ো হওয়া ফ্রেমটা হাতে তোলে অরণ।কাদামাটি ছবিতে যদিও বা পড়েছে,সে সেটা নিয়েই ফের হলরুমে ফেরত আসে।অতঃপর সোফায় বসে হাত দ্বারাই তা পরিষ্কার করতে আরম্ভ করে।
রিদির ডেলিভারি ডেট দিন পঁচিশেক পরে দেওয়া হয়েছে বিধায় মিরের বদলে রিদির সহিত এখন মিরাই থাকছে।এতদিন বন্ধুর বাসায় পড়ে থাকা বেশ দৃষ্টিকটুই ঠেকে মিরের নিকট।মূলত ভাইয়ের জন্যই মিরার চৌধুরী বাড়ি আসা।চাঁদ আর প্রণয়ের জন্যও বেজায় খুশি সে।সেদিন হাসপাতাল হতে ফেরত এসে মিরাই চাঁদের প্রেগন্যান্সির বিষয়টা সকলকে জানিয়েছিলো।তবে বাকিরা খুশি হলেও খুশি ছিলোনা প্রণয় আর চাঁদ।বেশ গম্ভীরই নজরে এসেছে তাদের।রিদির জন্য দুধ গরম করতে গিয়ে চাঁদের জন্যও করে মিরা।অতঃপর এক গ্লাস চাঁদকে দিয়ে নিচে এসে রিদির রুমের দিকে এগোতে নিলে নজরে আসে হলরুমে বসে থাকা অরণপানে।হাত দিয়ে কিছু একটা করছে সে।কপাল কুচকে অরণের পিছু হতে উঁকি দিতেই নজরে আসে অতি সাবধানে পূর্ণতার ছবিতে হাত বুলাচ্ছে অরণ।বুকের ভেতর হঠাৎ করেই যন্ত্রণার উৎপাত হয় মিরার।হঠাৎ ই হৃদয় অশান্ত হয় তার।আজও ছেলেটা এই এক মেয়েকেই ভালোবেসে হৃদয়ে আগলে রাখে স্মৃতি,ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ভাসে মিরার।খানিকের জন্য টলমলায় সে।হাতে থাকা গ্লাসদু’টো পড়ে যেতে নিলে ট্রেতেই সামলে নেয় মিরা।কোনোকিছুর আওয়াজ পেয়ে পিছু ঘুরে চাইলেই মিরার অবয়ব নজরে আসে অরণের।অতঃপর ভালো করে সে পানে তাকাতেই মিরার সিক্ত আঁখিজোড়া এড়ায় না তার।হকচকিয়ে পিছু ঘুরে মিরাকে সে বলে,
“তুই যেরকম ভাবছিস সেরকম কিছু না মিরু”
সামান্য হেসে মিরা বলে,
“কোথায় কিছু ভাবছি?কিছুই ভাবছিনা।তুই বস আমি আসি,রিদুকে গ্লাসটা দিয়ে আসি”
বলেই পিছু ঘুরে যেতে নিলে সোফার অপরপাশ দিয়েই হাত ধরে মিরার অরণ।কপাল কুচকে মিরা বলে,
“গ্লাসদু’টো পড়ে যাবে।বললাম তো আসছি,তুই বস”
“কোথাও যেতে হবেনা।এদিকে দে”
বলেই অপরহাতে ট্রে নিয়ে সোফার উপর রেখে মিরার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার কব্জি ধরাবস্থায়ই অরণ বলে,
“কাদছিস কেনো বোকা?”
দৃষ্টি আড়ালের চেষ্টায় ইতস্তত করে মিরা বলে,
“কোথায় কাদছি?কাদবো কেনো আমি?ছাড়,যাবো”
বলেই অরণ হতে হাত ছাড়াতে চাইলে বাম হাতের তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মিরার থুতনী চেপে তা উঁচিয়ে চোখে চোখ রেখে অরণ বলে,
“এদিকে তাকা,তাকা বলছি।দেখ মিরু আমি পূর্ণকে ভালোবাসিনা।তুই….. ”
অপর হাত দিয়ে অরণের হাত থুতনী হতে সরিয়ে মিরা বলে,
“আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি?তুই কী করিস না করিস আমি তা জানতে ইচ্ছুক নই।ছাড়”
“এদিকে তাকা।তাকাতে বলেছি মিরা”
অরণের গম্ভীরস্বরে তার পানে না চাইতেও দৃষ্টি স্থির হয় মিরার।অতঃপর শান্তস্বরে অরণ বলে,
“পূর্ণর ছবিটা আমি বাগানে পেয়েছি,ভাঙাবস্থায়।সেখান থেকেই তুলেছি।এর বেশি কিছুনা মিরু”
“আমি এক্সপ্লেনেশন চেয়েছি?”
“কথা শেষ হতে দে।তোর মতো বোকাপ্রাণী আদোতে আমি দেখিনি।ডাকিনী হতে ভেজা বিড়ালিনী হয়ে গেছিস পুরোই!”
“অযথা বাজে বকবিনা।হাত ছাড়তে বলেছি আমি”
“আমার শোকে কি তুই এই আট বছরে সত্যিই বোকা হয়ে গিয়েছিস মিরু?”
কপাল কুচকে অরণপানে চেয়ে মিরা বলে,
“তোর জন্য শোকাহত হতে আমি বসে রয়েছি তো”
“তাই ই মনে হচ্ছে।এতটাই বোকা হয়েছিস যে এখনো অব্দি কিছুই বুঝতে পারিস নি”
“কী বুঝিনি আমি?”
“তোকে যা বোঝানোর চেষ্টা করেছি”
“দেখ অরণ,মেজাজ এমনিতেই ভালো নেই।ছাড় ভালো লাগছেনা”
“ছেড়ে দেবো তবে শেষবারের ন্যায় তোকে কিছু বাক্য আওড়িয়েছিলাম আমি।মনে আছে?নাকি আমার ম*রণশোকে সব ভুলে বসেছিলি?”
মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হয় মিরা,
“তুই ছাড়তো অরণ”
বলেই হাত ছাড়াতে নিলে অরণও মিরার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,
“নে ছেড়ে দিলাম”
অতঃপর সত্যি সত্যি মিরা চলে যেতে নিলে একহাতে ফের তার কব্জি চেপে নিজের দিকে টেনে অপরহাত কোমড়ের কাছে রেখে আলতো চেপে বুকের কাছে ঠেকিয়ে মিরার চোখে চোখ রেখে শীতলস্বরে অরণ আওড়ায়,
“এই মিরু,প্রণয়ের মামি হবি তুই?”
To be continued……