শান্তি সমাবেশ পর্ব-৪২

0
666

#শান্তি_সমাবেশ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪২

সকলের মুখেই শোয়েব মির্জা নিয়ে বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। হওয়ার ই কথা। তিনি যে হেডমাস্টারকে টাকা দিয়ে দমিয়ে রেখেছিলেন তা ও জনসম্মুখে উপস্থিত। জনগণ যেন খলবলিয়ে উঠেছে৷ এত বছর যাকে এতটা মেনে চললো তার এহেন রুপ জনগন সহসা মনে নেয় নি। বিভিন্ন সংবাদে তাকে নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছিলো। শোয়েব মির্জা সংসদ সদস্য ও ছিলেন যা হতে তাকে অতিসম্প্রতি বহিষ্কার করা হবে শুনা যাচ্ছে। এতসবে নির্বিকার সাফারাত। শোয়েব মির্জা একদম চুপ করে আছেন। এর কারণ জানা নেই কারো। মাহিন মিয়া সারাদিন চেষ্টা করলেও তার স্যারের সাথে কথা বলার সুবিধা করতে পারলেন না। রাত তখন আটটা। শোয়েব মির্জা আবার সময় নিষ্ঠ মানুষ। বউ তার সব সময় এশার নামাজের পর পরই খাবার বেড়ে দিতেন। সেই অভ্যাস এখনও ভুলেন নি তিনি হয়তো কোনদিন ভুলবেন ও না। নির্বিকার ভাবে সালাতটা রুমেই আদায় করে বের হলেন। আজ মসজিদে গেলে নিশ্চিত কেউ তাকে ছেড়ে কথা বলবে না। যদি ক্ষমতা তার হাতে থাকত তাহলে হয়তো ব্যাপারটা ভিন্ন হতো। খাবার টেবিলে তাকে আসতে দেখেই কাজের বুয়া চটজলদি সবটা গুছিয়ে দিলেন। মাহিন মিয়া তখনও ঠাই দাঁড়িয়ে তার স্যার পাশে। কি বলবেন তা সুবিধা এখনও করতে পারছেন না। শোয়েব মির্জা খাওয়া শেষে যখন টিস্যুতে মুখ মুছলেন তখন মাহিন মিয়া ধীমি স্বরে ডাকলেন

— স্যার?

— বাঘ যখন এক পা পিছনে নেয় তখন সকলের বুঝা উচিত ঐ বাঘ চার পা এগিয়ে এসেই থাবাটা বসাবে।

মাহিন মিয়া’র যেন ঘাম ঝরছে এই ঠান্ডার মধ্যে। সাফারাত রুম থেকে বের হতে হতেই বাবা’র কথাগুলো শুনেছে। মনে মনে আওড়ায় সাফারাত,

— বাঘের বাচ্চা বাঘই হয়। আমি ঠিক এক আহত বাঘ যে কিনা শিকারকে খুবলে খাওয়ার অপেক্ষায়।

বেশ শান্ত এবং ঠান্ডা পরিবেশ বিরাজমান রইলো মির্জা বাড়ীতে। সাফারাত খেয়ে উঠে যেতেই শোয়েব মির্জা বাড়ী ত্যাগ করলেন। একাই গাড়িটা নিয়ে আজ বের হয়েছেন। তার প্রিয় নারীটির পানে পিপাসিত তার হৃদয়। এই হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাতে এখন তার প্রিয়তমা’র দিদার পাওয়া দুষ্কর কিন্তু এক তরফা কথা তো বলা যাবে সেটাই ঢের।

নিজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে বাবা’র গাড়িটা যেতে দেখলো সাফারাত। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠলো,

— তুমি তো এক তরফা হলেও নিজের স্ত্রী’র সাথে কথা বলো বাবা কিন্তু হতভাগা আমি। জানিই না কোথায় আছে আমার স্ত্রী, সন্তান।

_____________

পূর্ণ মৃত্তিকার পূর্ণ’দের বাড়ী ফিরেছে আজ প্রায় দুই দিন। পূর্ণ’র ক্ষত অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে। তবুও তার বউ চাই। চাই মানে চাই। একদম বাড়াবাড়ি রকমের চাওয়া যাকে বলে। এই যে সেবা পাওয়ার নাম করে পানিটা পর্যন্ত সে বউয়ের হাতে খাবে। ওর বাবা যদি আবার এতে বউ পাগলা বলে তাহলে সে রেগেমেগে উঠে। দু চারটা কথা বাবা’কে শুনাতেও পিছুপা হয় না সে। খাটে বসে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছে পূর্ণ। ভাব হাব গম্ভীর্যপূর্ণ যেন সে খুবই চিন্তিত। তার এই চিন্তার অবশ্য কারণ দুটি। এক তার আজকে একটা সমাবেশে যেতে হবে। ছাত্র রাজনীতি’র সাথে সম্পর্কযুক্ত সেটা। এমপি হয়ে নিজ গোড়া ভুলার ছেলে আবার পূর্ণ নয়। অন্য চিন্তা হলো তার বউ নেই তার কাছে। কোথায় তার পূর্ণ্যময়ী? ওর ভাবনার মাঝেই মৃত্তিকা শাড়ীর আঁচলটা কোমড়ে গুজে হাঁটা দিলো ওয়াসরুমে। পূর্ণ টের পেলো মৃত্তিকা গ্রিজার অন করছে। পূর্ণ’কে গোসল করাবে এখন সে। বাঁকা হাসে পূর্ণ। চোখে তার দুষ্টামির আনাগোনা। গোসল সে মোটেও একা করবে না। মৃত্তিকা’কে ও ভিজিয়ে ছাড়বে।
মৃত্তিকা ওকে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকতেই রোজকার ন্যায় তাই ঘটলো। মুখে বিরক্তি ভাবটা আবার মৃত্তিকা’র আসে না। পূর্ণ’টার প্রতি তার কোনদিন ই বিরক্তি আসে না। মানুষ কি নিজের অস্তিত্বের উপর বিরক্ত হয়? না তো। তাহলে মৃত্তিকা কিভাবে তার পূর্ণ নামক অস্তিত্বের উপর বিরক্ত হবে? এ কি আদৌ সম্ভব?
.
ভরা মজলিস। চারদিকে জনসমাগম। মাইকে কেউ একজন বার্তা দিচ্ছে। জানান দিচ্ছে নব নির্বাচিত এমপি সাহেবের উপস্থিতি। পূর্ণ আহত তা বুঝার দুঃসাধ্য। পরণে তার সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি, পায়জামা গায়ে একটা কালো শাল পেঁচিয়ে রাখা। মুখ জুড়ে তার গম্ভীর্য ভাব। চুলের গোছানো ভঙ্গিটাও যেন বেশ ভিন্ন। একদম আলাদা। হাঁটার ধাঁচটাই তার আলাদা। জনগন যেন তাতেই মুগ্ধ হয়। বেশ ঠাটবাট বজায় রেখে স্টেজমুখী হলো পূর্ণ। ভদ্রতার সহিত সালাম জানিয়ে সে বেশ সংক্ষিপ্ত এক ভাষণ প্রদান করলো। জনগণের মাঝে হৌ হুল্লোর বাড়লো। পূর্ণ’র এই গুণটা কারো মাঝে দেখা যায় না। সে সর্বদা সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবে। ঐ সকল নেতাদের মতো না যারা ঘন্টার পর ঘন্টা ভাষণ দিবে অথচ কাজের বেলায় ঠনঠনাঠন। পূর্ণ “কথা কম কাজ বেশি” এই মন্ত্রে বিশ্বাসী। জনগণের নিকট তা প্রমাণিত ও হয়েছে বেশ কয়েকবার।

স্টেজ থেকে নেমেই পূর্ণ পার্টি অফিসে যায়। এদিকে আজ মিছিল হবে জয়ের তবে পূর্ণ যেতে পারবে না। শাজাহান খান তাকে তলব করেছে। কারণটা জানা নেই। তবে পূর্ণ’কে অবাক করে দিয়ে তার ফোনে কল এলো মৃত্তিকা’র। হাসি মুখে কলটা রিসিভ করতেই মৃত্তিকা বলে উঠলো,

— আপনার জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে পূর্ণ। শাজাহান খানের ছোট মেয়ের জন্য। ডালা সহ বাসায় এসেছে। পাত্র আপনি। চলে আসুন শিঘ্রই।

পূর্ণ থমকে যায় কিয়ংকাল। কিছুটা অতীত চোখে ফুটে। মৃত্তিকা কতবার বলেছে অনুষ্ঠান টা বড় করে করতে তবে সময় সুযোগের অভাবেই তা করা হলো না। এই অভিমানির অভিমান কিভাবে ভাঙাবে পূর্ণ? সে তো পারে না এসব!

#চলবে….

[ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথাঃ
“শান্তি সমাবেশ” আর দুই কি তিন পর্ব যাবে। অতঃপর শেষ? না। প্রথম পরিচ্ছেদ শেষ হবে। দ্বিতীয় পরিচ্ছদ কবে, কোথায়, কিভাবে আসবে তা জানিয়ে দিব। আপাতত এটা নিয়ে ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে আছে। আশা করি সাপোর্ট করবেন যেমনটা সবসময় আমাকে করেছেন।
আর হ্যাঁ অবশ্যই নতুন গল্প শুরু করবো ইনশা আল্লাহ।]