যেখানে পথচলা শুরু পর্ব-২৩+২৪

0
260

#যেখানে_পথচলা_শুরু |২৩|
সাদিয়া মেহরুজ

নরম, তুলতুলে বিছানা। দুধের মতো সাদা চাদরটা আষ্টেপৃষ্টে সেঁটে আছে বিছানার সাথে।হলদেটে রঙা রৌদ্দুর বিছিয়ে আছে দুধ সাদা চাদরে। রৌদ্দুরের খুব একটা তেজ নেই, নিরুত্তাপ। উন্মুক্ত কপাট দিয়ে কেমন মিষ্টি মিষ্টি এক সুঘ্রাণ কক্ষ জুড়ে বিচরণ করছে। লম্বা কেশরাশির দল অবিন্যস্ত, অস্থিতিশীল তারা মুখোশ্রী জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। গভীর ঘুমে মগ্ন তীরু খানিকটা বিরক্তই হলো! চট করে ঘুম ঘুম ভাব উবে গেল। বাহির থেকে চাপা হৃষ্টচিত্ততার কলরোব। আলসেমি নিয়ে উঠে বসল ও। হাত দু’টো টান টান করে আড়মোড়া কাটাল। চোখ দু’টো খুলে স্পষ্টত দৃষ্টিটা সম্মুখে নিক্ষেপ করতেই ঠোঁটের কোণে থাকা মৃদু হাসিটা চওড়া হলো। বক্ষঃজুড়ে বইল শীতল হাওয়া।
ভ্যাটিকানে আসার আজ পূর্ণরূপে একদিন পেরুল তীরুর। সেদিন অরোন অনুমতি দিয়েছিল। নিজেই তদারকি করে, ছোটাছুটি করে তীরুকে পাঠালো শেষে। আসার পথে যদিওবা খুশির বদলে অন্তরাল ভার ভার ছিল। কারণটা বোধহয় দূর্বলতা। অরোন এর প্রতি তার দূর্বলতা! ভ্যাটিকানে পৌঁছে হোটেলে একটা দিন ঘুমিয়েই কেটেছে। এতোটা ক্লান্ত ছিলো!

কান এঁটো করা শব্দ হলো। তীরু চটপট গা থেকে তুলতুলে কম্বলটা সরিয়ে ছুটল। হোটেলের একজন কর্মচারী এসেছে। ব্রেকফাস্ট দিতে। ছেলেটা খাবার দিয়ে চলে যেতেই তীরু ফোন নিয়ে বসল। অরোন কে একটা কল দেয়া দরকার। একবার, দু’বার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো।

-” কি ম্যাডাম, মনে পড়লো আমায়? ভ্যাটিকান নিশ্চয়ই অর্ধেক দেখা শেষ। ”

পাংশুটে গলায় তীরু জবাব দিল,

-” অর্ধেক না ছাইঁ! ঘুমিয়ে ছিলাম আমি। পৌছেছি দুপুরে। এরপর আর হোটেল থেকে বের হইনি। ”

অরোন ভারী অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

-” অদ্ভুত! তুমি যেমন এক্সাইটেড ছিলে ভেবেছি গিয়েই ব্যাগ ট্যাগ ফেলে ছুটবে বাহিরে। ”

-” টায়ার্ড ছিলাম প্রচুর তাই আর কি। এখন খেয়ে বের হবো। ”

-” আচ্ছা। ”

তীরু হাসঁফাসঁ করছে! অরোনকে একটা কথা বলা দরকার। কিন্তু জড়তা, সঙ্কোচের প্রকোপে কন্ঠনালী দিয়ে শব্দ উচ্চারিত হচ্ছেনা। শেষে বহু চেষ্টা করে ম্লান কণ্ঠে বলল,

-” আপনিও চলে আসুন না অরোন। আপনারও তো ছুটি কাটানো হয়না কখনো। এখন এলেই তো পারেন। ”

অরোন কিঞ্চিৎ হাসল। বলে উঠলো,

-” পাগল! রেস্টুরেন্টে কতো চাপ। তাছাড়া পাসপোর্ট ভিসা এসব কি আর এক – দু’দিনে হয়ে যায় নাকি মেয়ে? ”

অপরাধবোধে মোচড় দিয়ে উঠল অন্তঃকরণ। তীরু শূন্যে ফেলল দৃষ্টি। ভুলটা তার! দোষটাও তার! কি হতো অরোনকে কথাটা আগে বললে? ছেলেটা তো খারাপ নয়। তীরুকে যথেষ্ট সম্মান করে। তার চাওয়া পাওয়া সবকিছুই পূরণ করার চেষ্টা করে। কখনো কোনো কিছুতে না বলেনি। ভারী আফসোস হলো তীরুর! অবশ্য এখন আফসোস করেওবা কি?
কিছু তো আর ঠিক হওয়ার নয়।

কোনো কিছু মুখে না বললেও ফোনের এপাশ থেকে অরোন কিভাবে যেন তীরুর মনোঃবস্থাটা বুঝতে পারলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সে নিম্ন কন্ঠে শুধাল,

-” আপসেট হওয়ার কিছু নেই তীরু। আমি সাথে নেই তো কি হয়েছে? মূর্হতটা এনজয় করার ট্রাই করো। সবসময় সাথে কারো থাকা লাগবে বিষয়টা এমন না। একা থাকা, একা ঘোরাফেরায় এক ধরনের আলাদা আনন্দ রয়েছে। ফিল করার চেষ্টা করো তা। আমি, তুমি একসাথে ভবিষ্যতে অনেক ঘোরাঘুরি করতে পারবো। হতে পারে খুব শীগ্রই। আমাদের হানিমুনটাও কিন্তু এখনো হয়নি। এবং তোমাকে বড় আদর করাটাও হয়নি। আমি যে কি পরিমাণ পেইনে আছি তীরু..!” শেষোক্ত বাক্যদ্বয় টেনে বলল অরোন।

বাকরুদ্ধ তীরু। কোথাকার কথা কোথায় টেনে নিয়ে গেল এই ছেলে? আশ্চর্য! তড়িঘড়ি করে কল কেটে দিল। বুকে হাত রেখে শ্বাস টানছে। আপনমনে সে স্বগতোক্তি করল,

-” অরোনটা দিনকে দিন অশ্লীল হয়ে যাচ্ছে। ছিহ্! কথার কি শ্রী আল্লাহ মাবুদ। ”

_

পৃথিবীর সবথেকে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি। বলা বাহুল্য ঢাকা শহরের থেকেও ছয়শ গুন ছোটো এই দেশ। মাত্র একশ একুশ একর জায়গা নিয়ে এই ছোট্ট দেশটির উৎপত্তি। এই দেশ ইতালির রোমের মাঝে অবস্থিত স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই দেশের জনসংখ্যা মাত্র ৮০৬। কিন্তু গড়ে প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষ প্রতিদিন এখানে ঘুরতে আসে। তীরুর ইচ্ছে ছিল ঘোরাঘুরির এই যাত্রাটা শুরু করবে এই ছোট্ট দেশটার মাধ্যমেই। ভ্যাটিকানে সে কেবলমাত্র দুইদিন থাকবে। এরপর রোম শহরটা ঘুরে দেখেই ফিরবে প্যারিস।

সকালের নাস্তা শেষ করে তীরু চটপট বের হলো। উদ্দেশ্য ‘ সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকা ‘। পৃথিবীর সবথেকে বড় চার্চ হিসেবে এটিকে গণ্য করা হয়। পৌঁছাতে কিয়ৎক্ষণ লাগল তার। চার্চে প্রবেশের পর ঘুরেফিরে সবটা দেখতে লাগল বিমুগ্ধ নয়নে। চার্চ এর দেয়ালে কারুকাজ করা। চার্চের সিলিং গোল্ড প্লেটের কাজ করা। আশপাশের বেশকিছু স্ট্যাচু রয়েছে। চার্চ ঘুরে দেখতে বেশ খানিকক্ষণ লাগলো তীরুর। পুরোটা দেখা শেষ হলে চটজলদি বেড়িয়ে এলো। বেলা পড়েছে। আশপাশের আরো কিছু জায়গা দেখে হাঁটতে হাঁটতেই হোটেলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলো ও। ভ্যাটিকান খুব ছোট্ট দেশ হওয়ার দরুন দেখার মতো জায়গার খুব অভাব। তবে কিছু জায়গা রয়েছে যেগুলো আকর্ষণীয় হলেও সেখানে প্রবেশের অনুমতি নেই জন – সাধারণের কিংবা পর্যটকদের। কেবল মাত্র সেখানে কাজ করলে কিংবা কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে স্পেশাল ইনভাইটেশনের মাধ্যমে ভেতরে যাওয়া যায়। তীরু তার হলিডের প্ল্যান এভাবেই তৈরি করতে চাচ্ছিল। যাতে একসাথে অনন্তপক্ষে দু’টো দেশ দেখা হয় তার। অবশ্য এটা অন্যান্য হলিডেতে সম্ভব নয় কারণ ভ্যাটিকান সিটির মতো এত্তো ছোট্ট দেশ আর নেই।

হোটেলে সবেমাত্র ফিরেছে তীরু। মায়ের সাথে কথা বলে দেহ এলিয়ে দেয় বিছানায়। অরোনের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। ছেলেটার মিষ্টি কন্ঠ শ্রবণ করার জন্য মন আকুপাকু করছে। কিন্তু সকালের ঐ ঘটনা মনে পড়তেই নিজ ইচ্ছেকে দমন করলো সে। অরোন পাল্টা কল না দেয়া অব্দি সে তাকে ফোন করবেনা। কিছুতেই না।

চলবে~

#যেখানে_পথচলা_শুরু |২৪|
সাদিয়া মেহরুজ

এয়ারপোর্ট জুড়ে বহু মানুষের পদচারণ। কলরবে মুখরিত চারিপাশ। সকলে ভারী ব্যাস্ত। কারো দিকে কারো তাকানোর সময় নেই। যে যার মতো লম্বা পা ফেলে এগোচ্ছে নিজ গন্তব্যে। তাদের মাঝে কেবল জড় পদার্থের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে একটিমাত্র মানুষ, তীরু। এতো এতো মানুষের ভিড়ে তার কেমন যেনো অসহায় অনুভূত হচ্ছে। অস্বস্তিতে গাঁট হয়ে রয়েছে মন – প্রাণ! অস্থির, চঞ্চল আঁখি জোড়া স্থির নেই। আশপাশে ঘন ঘন দৃষ্টি ফেলে খুঁজছে কাওকে।উফ! মহা যন্ত্রণা তো! এতো দেরি কেন করছে মানুষটা? সেকি জানেনা বেপরোয়া তীরুর মনের বেহাল দশা? আরো একবার চির-পরিচিত নাম্বারটাতে কল দিলো সে। টোন বেজে উঠলো আশপাশেই। ফোন হতে দৃষ্টি হটানোর পরপরই তার চোখ দু’টোর সামনে ভেসে উঠলো কাঙ্ক্ষিত মুখোবয়ব। বাদামী বর্ণের শার্টটা আষ্টেপৃষ্টে প্রগাঢ়ভাবে লেপ্টে আছে ছেলেটার দেহে। ঘর্মাক্ত দেহ! সিক্ত কেশ লেপ্টে রয়েছে কপালে। পা বাড়াল তীরু। দাঁড়াল মানুষটার সামনে। কন্ঠে অভিমান মিশিয়ে শুধাল,

-” এতো দেরী হলো কেন অরোন? ”

বড্ড চিন্তিত দেখাচ্ছে অরোনকে। কপালে সাড়িঁ সাড়ি ভাজ। বিচলিত কন্ঠে ও বলে উঠলো,

-” ব্যাপার কি বলো তো? তুমি এখানে কিভাবে কি? ঘুমিয়ে ছিলাম আর ফোন দিয়ে বললে প্যারিসে এসেছ। জানো কতটা স্ট্রাগল করে আসতে হয়েছে? গাড়িতে তেল নেই। অর্ধেক পথে গাড়ি ফেলে ছুটে এসেছি। সাথে টাকাও ছিলনা। এমন পাগলামোর মানে কি তীরু? তুমি ঠিক আছো?

তীরু নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,

-” ঠিক আছি। ফিরে আসতে ইচ্ছে হলো তাই চলে এলাম। ”

অরোন ভ্রু কুঁচকাল! ” তোমার তো আরো দু’দিন পর ফেরার কথা। ”

-” আগেই ফিরলাম ইচ্ছে হলো তাই। কেন কোনো সমস্যা? ”

বিচলিত ভাবটা কেটে গেল। মুখোবয়বে এঁটেসেটেঁ থাকা চিন্তার রেশ এখন উধাও। নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে কন্ঠে গাম্ভীর্যতা টানল অরোন। বলল,

-” আসবে ইট’স ওকে। আগে থেকে ইনফর্ম করা উচিত ছিল না তোমার? তার ওপর ফোন দিয়ে এমন ভাবে কথা বললে আমি ভেবেই নিয়েছিলাম তোমার কোনো বি প দ হয়েছে। অযথাই আমাকে চিন্তায় ফেলে জ্বালানো বন্ধ করবে তীরু? ”

প্রতিত্তুর করল না তীরু। মৃদু হেঁসে তাকিয়ে রইলো। বিরক্তি, হতাশা দু’টোই ঘিরে ধরে অরোনকে। সে হাসার মতো কিইবা বলল? এখানে হাসার দরকারটা কি? তীরুর হাত থেকে ছো মে রে ব্যাগ দু’টো নিয়ে পা চালাল দ্রুত। রুষ্টতা ছেপে রয়েছে তার মুখোশ্রীতে। অরোনের রাগ দেখে তীরু পুনরায় হাসল। ছেলেটা তাকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করে কি? উঁহু! এ সময় চিন্তা করাটা স্বাভাবিক। কাল অনেকক্ষণ যাবৎ তাকে ফোনে পায়নি আর সকাল বেলা হুট করে ও কল দিয়ে বসল, সে প্যারিসে। এয়ারপোর্টে অপেক্ষারত! চিন্তা হওয়ারই কথা।

গাড়ি মাঝরাস্তায় আসতেই তীরু হটাৎ বেঁকে বসে বলে উঠলো,

-” বাসায় পরে যাই? আমার প্রচন্ড ক্ষুদা পেয়েছে। ”

অরোন তার দৃষ্টি এলিয়ে রেখেছিল বাহিরে। তীরুর কন্ঠ শ্রবণ মাত্রই তার পানে তাকাল। আশেপাশটায় একবার চোখ বুলিয়ে বলল,

-” সামনেই তো আমার রেস্টুরেন্ট। ওখান থেকে খেও। ”

রেস্টুরেন্টের সামনে আসার পর গাড়ি থেকে নামল দু’জন। ভাড়া মিটিয়ে দেয় তীরু। অরোন যদিওবা ইতস্তত বোধ করছিল। বারংবার বলছিল রেস্টুরেন্ট থেকে টাকা এনে ভাড়া মিটিয়ে দিচ্ছি কিন্তু তীরু শোনার পাত্রী হলে তো! ব্যাগ দু’টো হাতে নিয়ে ওরা সামনে এগোল। অরোনের রেস্টুরেন্টটা তিন তলা। ফার্স্ট ফ্লোর শুধু মাত্র কফি কর্ণার। সেকেন্ড ফ্লোর ফুড কর্ণার এবং থার্ড ফ্লোরে যাবতীয় মালামাল রাখার পাশাপাশি রয়েছে দু’টো রুম। একটি রুম যেখান হতে পুরো রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বসানো সিসিটিভি ফুটেজের জন্য তৈরি করা কন্ট্রোল রুম। দ্বিতীয় বিশাল আলিশান রুমটা তৈরি করা হয়েছে অরোনের জন্য। সেখানে বসেই যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে সে। লিফট এ করে অরোন তীরুকে নিজের কেবিন রুমটাতেই নিয়ে এলো। তাদের সাথে রয়েছে আরো দু’জন। ঐ দু’জন মূলত ওয়েটার। এখানকার এক ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে পার্ট টাইম জব করে ওরা। কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে ব্যাগ দু’টো নির্দিষ্ট স্থানে রেখে খাবারের অর্ডার নিয়ে ওরা দু’জন চলে গেল। তীরু গিয়ে বসল সোফায়। ক্লান্ত গলায় আদেশ করলো,

-” এসি অন করুন জলদি। ”

থাই গ্লাস টেনে দিয়ে অরোন এসি অন করে। হাত থেকে রিমোটটা পাশে ফেলে গিয়ে বসে তীরুর নিকটে। অতঃপর শুধায়,

-” এভাবে হুট করে চলে আসার কারণটা স্পষ্টত বললে না কিন্তু তীরু। ”

ডাগর ডাগর চোখ দু’টো দিয়ে অরোনকে একবার আপাদমস্তক দেখে নিলো তীরু। পরপর মুদে নিল চক্ষু জোড়া। জ্বালা করছে চোখ দু’টো। তপ্তশ্বাস ফেলে ও স্বগতোক্তি করল,

-” আপনাকে কিভাবে বোঝাই আমার হুট করে ফিরে আসার কারণটা একমাত্র আপনি। আমায় বড্ড জ্বালাচ্ছিলেন আপনি! জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একাকার করে ফেলেছেন। অতিষ্ঠ হয়ে তাই তো ফিরে আসা আপনার তরে। ”

রোমে তীরু ছিল তিন দিন৷ ঘুরেফিরে দিন কাটছিল তার। তবে এতোদিনের পূরণ হওয়া স্বপ্নের জন্য যে অনুভূতিটা তার প্রথমবার তৈরি হয়েছিল তা উবে গেছে অরোনকে ছেড়ে আসার পরদিনই। বিষয়টা উপলব্ধি করেছে তীরু দেরীতে। ঘুরেফিরে যখন ক্লান্ত শ্রান্ত দেহটা নিয়ে হোটেলে ফিরে আসতো, ভীষণ ক্লান্ত চোখ দু’টি যখন একটুখানি ঘুমোতে চাইতো ঠিক তখনি অরোনটা এসে জ্বালাতন করত! তীরুকে ঘুমোতে দিত না। ঠিকমতো ঘুম না হওয়ার দরুন বেহাল দশা ছিল তার। অতঃপর সে উপলব্ধি করলো, এইযে ছিমছাম গড়নের সুঠাম দেহের পুরুষটা! একে ছাড়া তার জীবন অচল। সে একদম ভেঙে পড়বে অরোনের ছায়াটা যদি তার আশেপাশ হতে সরে যায়।
তীরুর উত্তর না পেয়ে ওকে আর ঘাটাল না অরোন। চুপচাপ উঠে গেল। থাক না মেয়েটা তার মতো! ফিরে এসেছে তারই তো ভালো।এইযে এই কয়েকটা দিন সে প্রাণহীন শুষ্ক বৃক্ষের মতো ছিল, এবার তার জীবনের প্রাণ নিজে এসে দুয়ারে কড়া নেড়েছে এটাই তো যথেষ্ট নাকি?

খাওয়াদাওয়া শেষ করে তীরু প্রায় ঘন্টাখানেকের মতো ওখানে বসে থাকতে হলো। অরোন কাজে ব্যাস্ত ছিল। বাড়ি ফেরার সুযোগ নেই। তাকে অবশ্য বলেছিল বাড়ি চলে যেতে কিন্তু তীরু শুনলে তো! একসাথে ফিরবে বলেছে ঐটাই তার শেষ কথা।

-” চলো তীরু। অন্তিক গাড়ি নিয়ে এসেছে। ”

নিচে নামার পর অন্তিক হাসি মুখে এগিয়ে এলো। তীরুকে দেখা মাত্র চটপট জিজ্ঞেস করলো,

-” ভাল আছেন ভাবী? কতদিন পর দেখলাম। সুস্থ আছেন তো? ”

তীরু নম্র গলায় জবাব দিলো,

-” ভাল আছি অন্তিক। তুমি ভালো আছো? ”

-” আলহামদুলিল্লাহ ভাবী। ”

আলাপচারিতা শেষ করে ওরা গাড়িতে উঠে বসল। পৌঁছাতে বেশ খানিকক্ষণ লাগল। বাড়ি থেকে এই রেস্টুরেন্টের দূরত্ব বেশ ভালই! রাত হয়েছে। বাড়ি ফিরে প্রিয়র সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তীরু উপরে এলো। অরোন তখন পোশাক পাল্টে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তীরুকে দর্শন করার পর শুধাল,

-” ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ো। রাত হয়েছে। ”

-” জি। ”

তীরু হাতে পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। তড়িঘড়ি করে শাওয়ার নিয়ে বেরুতেই দেখলো রুম অন্ধকার। অর্থাৎ অরোন ঘুমে কুপোকাত। হাতের তোয়ালে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে বিছানায় গেল সে। বাহির হতে আসা রশ্মিতে অরোনের ঘুমন্ত মুখোশ্রী স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। আচানক কি যেন হলো তীরুর! নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সে টপাটপ অরোনের গালে চুমু দিয়ে বসল। ততক্ষণে চোখ খুলে নিয়েছে অরোন। দৃষ্টিতে তার বিভ্রম। আকাশ’সম লজ্জা, সঙ্কোচ নিয়ে তীরু দূরে যেতে নেবে তৎক্ষনাৎ তাকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরে অরোন। কানের কাছে ফিসফিস করে মিহি কণ্ঠে শুধায়,

-” আজ অন্তত দূরে যেও না তীরু। আই নিড ইউ। আমার আর ধৈর্যের পরিক্ষা নিও না। ”

লাজুক তীরু দূরে গেল না। বাধা দিলনা অরোনকে। লতাপাতার ন্যায় জড়িয়ে রইল অরোনের সাথে।

চলবে~