যেখানে পথচলা শুরু পর্ব-৩১+৩২

0
275

#যেখানে_পথচলা_শুরু |৩১|
#লেখনীতে_সাদিয়া_মেহরুজ

ভীষণ তাড়াহুড়ো করছে তীরু। তাকে দেখে বেশ অস্থির মনে হচ্ছে। স্থির হয়ে দাঁড়াচ্ছে না কোথাও। সে আছে ছোটাছুটির ওপর। একবার এই ঘর তো একবার ওই ঘর! পুরো বাড়িটাতে নিজের কদম ফেলা হতে বাদ রাখেনি। ভোরবেলা চিরশান্ত থাকা বাড়িটায় আজ নিঃশব্দতার ছুটি মিলেছে। তানহাকে ভারী বিরক্ত দেখাচ্ছে এই মূর্হতে। কি বিপদ! এতো বড় মেয়ে তীরু, কিন্তু আচরণ এমন করছে যেন সে দশ বছরের ছোট্ট একটা বাচ্চা। ঘুম থেকে ওঠার পর হতে নিজের সাথে মাকেও সামিল করেছে সে এই চঞ্চলতা, অস্থিরতার যুদ্ধে। বারংবার তানহাকে ডেকে ভারী বিরক্ত করছে। পাসপোর্ট কোথায়, তার প্রিয় নীল জামাটা পাচ্ছে না, ফোন কোথায়, চাবি কোথায়, অরোনের শার্ট কোথায়, এটা কোথায়… সেটা কোথায়… করে করে মাথা খেয়ে দিয়েছে তার। তানহা পারেননা তো তীরুকে ধরে এক্ষুণি চড় মেরে চুপটি করে বসিয়ে দেন। তীরুর এই এক বাজে স্বভাব। কোথায় যেতে নিলেই ভীষণ অস্থির হয়ে পড়ে ও!

-” মা…! আমার ফোনের চার্জার পাচ্ছি না। একটু খুঁজে দাও না। ”

রান্নাঘরে হাতের কাজ সাড়ছিলেন তানহা। তীরুর ফের ডাকে রাগটা যেন এবার উপচে পড়লো। তিনি চেঁচিয়ে বললেন,

-” তীরু এবার কিন্তু মারব আমি। কি শুরু করেছিস এসব? অরোন চলে যাচ্ছে, কই ওকে একটু ভালো মন্দ রেধে খাওয়াবো তা না ইচ্ছে মতোন বিরক্ত করা শুরু করেছিস। তুই কি চাস তোকে এখন জামাই এর সামনে ঠাস করে গালে চড় লাগাই? ”

ছোট্ট বাচ্চাদের মতোন ঠোঁট ফুলাল তীরু। অভিমান হলো তার! মা সারাক্ষণ কেন অরোন অরোন করতে থাকে? একবার তো তার দিকেও একটু ধ্যান দিতে পারে নাকি? চার্জারের জন্য তানহাকে আর ডাকল না ও। নিজের মতো খুজতে লাগল। কারণ এখন তানহাকে ডাকা মানা বিপদ! ভারী বিপদ! দেখা যাবে মা এসে সত্যি সত্যি গালে চড় মেরে দিল তাও অরোনের সামনে। কি ভয়াবহ লজ্জার ব্যাপার হবে তখন। ছিঃ!

হাত থেকে চায়ের কাপ নামিয়ে টেবিলে রেখে দিলো অরোন। তীরুর চেহারা দেখে হাসি পাচ্ছে। মেয়েটা এতো বড় তবুও যেন মাঝেমধ্যে বাচ্চা হয়ে পড়ে। তবে এই বাচ্চামো কেবল তার এবং তানহার সামনে সীমাবদ্ধ। বাহিরে সে একজন পূর্ণবয়স্ক, বুঝদার নারী। মানুষ কখনোই সম্পূর্ণ বড় হয় না। তার কিছু না কিছু শিশুসুলভ আচরণ ভেতরে রয়েই যায় যা সে কেবল নিজের প্রিয় মানুষের কাছে উজাড় করে দেয়! সকাল হতে সে তীরুর চঞ্চলতা নীরব দর্শক এর মতো দর্শন করছিল। তীরুটা এমনই! আসার সময়ও খেয়াল করছে। কোথাও যেতে হবে শুনলে অস্থির হয়ে পড়ে কেমন। আনন্দে নাকি তার অন্য কোনো কারণ জানা নেই। হাতের কাছে সবকিছু থাকলেও নেই, নেই বলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে মেয়েটা!

অরোন তীরুর নিকটে এগোল। সন্নিকটে দাঁড়িয়ে মিহি গলায় শুধাল,

-” আমি হেল্প করবো ব্যাগপ্যাক করতে? ”

তীরু চট করে উত্তর দিলো, ” দরকার নেই সরুন। মা দেখলে আবার আমায় বকবে, তার আদরের জামাই কে কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। ”

ব্যাস্ত তীরুকে পেছন হতে জড়িয়ে ধরলো অরোন। কাঁধে থুতনি রেখে শীতল গলায় বলে উঠলো,

-” রাগ করেনা তীরু। মায়ের রাগ করাটা স্বাভাবিক না বলো? কতবার মাকে ডেকেছ তুমি চিন্তা করেছ? জিনিসপত্র আশপাশেই রয়েছে। মা সবকিছু গুছিয়ে রেখে গিয়েছে। হয়তো তোমার নড়াচড়ায় কোনো কিছু একটু এদিক সেদিক সরে গিয়েছে। তুমি ধৈর্য ধরে ঠিকমতো খুঁজলেই তো পেয়ে যাবে। বারবার মাকে ডেকে বিরক্ত কেন করছো? হু? ”

স্থির হলো তীরু। অন্তরালে যে উথাল-পাতাল ঝড় চলছে তার তা বোঝাবে কি করে সে? তানহা যাচ্ছে না প্যারিস। কঠোর গলায় নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে সে। মাকে একবার না দু’বার না বারংবার বুঝিয়েছে তীরু, অরোন। কাজ হয়নি। তানহার এক কথা সে তার স্বামীর ঘর, বাবা – মায়ের সৃতি লেগে থাকা গ্রাম থেকে বেরুবে না। তানহার আর বাঁচবেই বা ক’দিন? শেষ নিঃশ্বাসটা জন্মভূমির মাটিতেই ফেলতে চায়। এসবই বলছিলেন তিনি। ওরা দু’জন ক্লান্ত। এদিকে যাওয়ার দিনও ফুরিয়ে এসেছে। মা যাবেনা সাথে ভাবতেই তো পীড়াদায়ক শূন্যতা তাকে আষ্টেপৃষ্টে ঝাপটে ধরেছে।তানহা তার মতোই জেদী। তিনি একবার যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতেই শেষ পর্যন্ত অটল থাকবেন তা বেশ ভালো করেই জানে ও। তীরু তপ্তশ্বাস ফেলল। চোখ দু’টো বুঁজে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অরোনের বুকে পিঠ এলিয়ে দিলো। ক্লান্ত লাগছে! ভীষণ ক্লান্ত! ও বেশ নিম্নস্বরে শুধাল,

-” মা যাচ্ছে না…, এটা আমায় কতটা যন্ত্রণা দিচ্ছে তুমি কি জানো অরোন? ”

তেরো বার! এই নিয়ে তেরো বার একই প্রশ্ন একই আঙ্গিকে জিজ্ঞেস করলো তীরু। অরোন প্রতিবার বেশ বুঝিয়ে – শুনিয়ে তীরুকে শান্ত করে এই প্রশ্নের প্রতিত্তোরে। কিন্তু এবার করলো না। তীরুটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইল। অরোনের মৌনতা পালন দেখে তীরু পুনরায় বলল,

-” সবসময় নতুন কোনো জায়গায় যেতে হলে আমি আনন্দে ছোটাছুটি, অস্থিরতা তৈরি করতাম নিজের মাঝে। কিন্তু এবার…, এবারের বিষয়টা ভিন্ন। এবার অস্থিরতা তৈরি হয়েছে আসন্ন শূন্যতার হাহাকার অনুভব করে। ”

বাঁধন হালকা হয়ে এলো। অরোন পেছন হতে এসে সামনে দাড়িয়ে তীরুর গাল নিজের রুক্ষ হাতের মাঝে নিয়ে ভরসা দিল,

-” আমরা ফিরে আসবো। তুমি চাইলে একেবারের জন্য আমরা এখানে ফিরে আসবো। বলো তুমি কি চাও? ”

তীরুর চক্ষুদ্বয়ে দ্বিধার প্রলেপ। গভীর মনে ভাবনায় মত্ত হলো ও। অরোন তার দ্বিধার প্রহরে ভাটা দিয়ে বলল,

-” যাই চাও না কেন তুমি তো বুঝতে পারছো তীরু আমাদের ওখানে এখন যাওয়াটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অনন্তপক্ষে ভালোভাবে ফিরে আসার জন্য হলেও আমাদের এখন যেতে হবে। জানি, যেতে নিষেধ নেই তোমার। কিন্তু এভাবে মন খারাপ করে থেকো না। আমার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। ”

তীরু ঘন ঘন মাথা নাড়ল। আচানক সে অরোনের বুকে মাথা রেখে আবদার করলো,

-” আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে? আমার একটু শান্তি প্রয়োজন। একটুখানি মানষিক শান্তি। ”

__

বিদায়বেলায় মায়ের ওপর অভিমানটুকু যেন আর ধরে রাখা হলো না। তীরু ভেবেছিল যাওয়ার আগে মায়ের দিকে ফিরেও তাকাবে না। অথচ পুরো রাস্তা জুড়ে তানহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল। তানহা ঘন ঘন মাথায় হাত বুলিয়ে এটা সেটা বলে মেয়ের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার সকল চেষ্টা বিফলে গিয়েছে। তীরুটা বারংবার তার সাথে যাওয়ার আবদার জুড়ে দিচ্ছিল।

-” জেদ করে পড়ে রইলে তো। দেখো তুমি, আমি তোমার কাছে ফিরে আসব। অবশ্যই আসবো। ”

তীরু কথা শেষ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। তারা অপেক্ষা করছে তনুর জন্য। তনু যাচ্ছেনা তাদের সাথে। এতো অল্প সময়ে ভিসা, পাসপোর্ট সংগ্রহ করা অসম্ভব প্রায়। তাছাড়া যাবতীয় কাগজপত্রও নেই। ভিসা, পাসপোর্ট তৈরি করা তাই অসম্ভব! সে আপাতত তানহার সাথেই থাকবে। সবকিছু গুছিয়ে নেয়া হয়ে গেলে তনুও চলে যাবে অরোনের কাছে।

কিয়ৎক্ষণ পর তনু এলো। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে ও। পায়ে মারাত্মক আ ঘা ত পেয়েছিল। অন্তিক তাকে হেঁটে আসতে সাহায্য করছে। অরোন এগোল। কাছে গিয়ে নম্র সুরে বলে উঠলো,

-” আপা তোকে আসতে বারণ করেছিলাম। ডাক্তার দেখিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেলেই পারতি। তোর কষ্ট হয়েছে না খুব? ”

তনু অরোনের গালে হাত রাখল। মৃদু হেঁসে বলল,

-” একদমই না। একটুও কষ্ট হচ্ছে না। তোকে আবার কবে না কবে দেখব তাই এলাম। সাবধানে থাকিস। তীরু আর নিজের খেয়াল রাখিস। ”

মনমরা তীরুকে দেখে তনু পুনরায় বলল,

-” তীরু কি আন্টির না যাওয়ার ব্যাপারে এখনো মন খারাপ করে আছে? ”

অরোন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ” হ্যা। কি করবো বল তো? এতো করে বোঝালাম। ”

-” মন খারাপ করাটাই স্বাভাবিক। বুঝিয়ে লাভ হবে না। ”

তীরু এগিয়ে এসে তনুকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-” তোমায় খুব বেশি মনে পড়বে আপা। ”

-” আমারও খুব মনে পড়বে তোমায়। এতো অল্প সময়ে এতোটা কাছের কেও হয়ে গেছো। তুমি চলে যাবে ভাবতেই খারাপ লাগছে। নিজের খেয়াল রেখ কিন্তু। আমাদের হয়তো শীগ্রই দেখা হবে। ”

-” জলদি চলে আসো আর নিজের খেয়াল রেখো। ”

সময় ফুরিয়ে এসেছে। তীরু, অন্তিক, অরোন শেষ বারের মতো বিদায় নিয়ে ভেতরে চলে যায়। তানহার আঁখি দ্বয় সিক্ত হয়ে উঠেছে। তনু তার কাঁধে হাত রাখল। ক্রমেই চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো ওরা তিনজন।

চলবে~

#যেখানে_পথচলা_শুরু |৩২|
#সাদিয়া_মেহরুজ

প্যারিসে এখন বসন্তকাল। বসন্তের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে আনাচে – কানাচে। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে মণ্ডিত প্যারিসকে দেখে তীরুর বক্ষঃস্থলে আনন্দের ঢেউ ওঠে। রাস্তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে তীরু দেখে পরিবর্তিত প্যারিসকে। এই শহর কখনো একই রূপে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সময়ের সাথে সাথে নিজের রূপ পাল্টায়। ঠিক তার মতোন না? সময়ের সাথে তার নিজেরও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। একসময়ের ভীরু তীরু একদিন চট করে বড় হয়েছে ভয়কে জয় করতে শিখেছে। পৃথিবীর সমস্যাগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে লড়াই করতে শিখেছে। স্বপ্ন পূরনের জন্য এশিয়া থেকে ইউরোপে পাড়ি দিয়েছে। শেষে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনের বিশাল এক যুদ্ধ এর ময়দানে জয়লাভ করেছে। আঠাশটা বসন্ত পার করেছে সুখ, দুঃখ, বিজয়, হার নিয়ে। এক্ষেত্রে বলা বাহুল্য তার জয়লাভের হার বেশি নয় কি? নিজের দেশের অজপাড়াগাঁ থেকে আজ ইউরোপের এক বিলাসবহুল দেশ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সে তার ছোটখাটো এক আসন তৈরি করে নিয়েছে। নিজের পরিচয় গড়েছে। নিজের ক্যারিয়ার গড়েছে। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছে। এতটুকুই তো কত!

ছোটবেলায় সে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘোরার স্বপ্ন দেখত। তবে স্বপ্নের দারপ্রান্তে এসে স্বপ্নপূরণের ইচ্ছেটাই যেন মারা পড়লো। কখনোই সংসারের আচলে বাঁধা পড়ার ইচ্ছে না থাকা মেয়েটাই দিনকে দিন হয়ে উঠছে পাক্কা সংসারী নারী। এর জন্য দায়ী অরোন। তীরুর সকল স্বপ্ন, আহ্লাদা, ভালোবাসা , ভালোলাগা, আবদার এখন অরোন। অরোন এবং মা ব্যাতীত পৃথিবীর সবকিছু আপাতত ফিকে তার নিকট। কোনো মানুষের প্রতি এতোটা দূর্বল হয়ে পড়া অপছন্দ ছিল তার। কারণ তানহা। বাবার প্রতি মা ভীষণ রকমের দূর্বল ছিল। যার দরুণ বাবার মৃত্যু এর পর তিনি ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। তবুও তীরু এর জন্য নিজেকে সময়ের তালে গড়ে নিয়েছেন শক্ত করে। তীরু মায়ের মতো শক্ত নয়। প্রিয় মানুষ এর প্রস্থান তার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব হতো না। তাইতো নিজেকে ছাড়া অন্য কাওকে অত্যান্ত গভীর ভাবে অন্তরালে ঠাঁই দেয়া তার অপছন্দ ছিলো।কিন্তু তাই তল হয়ে গেলো, মনের অজান্তে, অনিচ্ছায়!

-” হাহ্! ” তীরুর দীর্ঘশ্বাসে ধ্যান ছুটল অরোনের। ও মাথা উঁচু করে তাকাল তীরুর পানে। ভ্রুকুটি কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়ল,

-” কি হলো আবার তোমার? একা একা কি ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছো? ”

তীরু উদাস গলায় জবাব দিল, ” ভাবছি তো অনেক কিছুই। ”

-” আমাকে বলা যায়? ”

-” যায়। অবশ্যই যায়। তোমাকেই তো বলতে হবে। শোনো আমি ঠিক করেছি আমিও তোমার সঙ্গে এই রেস্টুরেন্টে কাজ করবো। কোম্পানির জব আমার আর ভালো লাগছে না। আমাকে বরং তুমি তোমার রেস্টুরেন্টের ওয়েটার বানিয়ে দাও। ভালো হবে না?”

-” খুবই বাজেঁ হবে। যেখানে আছো ভালো আছো। এসব উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।”

কাস্টার্ড বানানো শেষ। অরোন হ্যান্ড গ্লাভস গুলো খুলো রেখে কিচেন এপ্রোনটা খুলে রাখল। হাতের কাজ শেষ হতে না হতেই তার ওপর অতর্কিত হামলা চালাল তীরু। কলার টেনে নিচু তাকে নিচু করে নিয়ে বলল,

-” কেন? কি সমস্যা? আমি আশেপাশে থাকলে ভালো লাগবে না তোমার? কাজের পাশাপাশি আমি তোমাকেও টাইম দিতে পারবে না। বউয়ের সাথে রোমান্স করার এক্সট্রা টাইম পেলে আবার একজন ওয়েটারের খরচও কমলো। এক ঢিলে দুই পাখি। এতো দারুণ একটা অফার হাতছাড়া করছো কেন? গাধা তুমি? অফার সীমিত সময়ের জন্য কিন্তু। ”

অরোন সন্তপর্ণে তীরুর হাত ছাড়িয়ে নিলো। মৃদু হেঁসে শুধাল,

-” আমার এতোটাও খারাপ দিন আসেনি যে বউকে ওয়েটার বানিয়ে রেস্টুরেন্ট চালাব। উম… তবে যদি আমার কোনো কোম্পানি হতো, তবে আমি তোমায় নিজের এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে নিজের কাছে বেঁধে রেখতাম। তবে ওয়েটার বা যাই বলো না কেন এই কাজে আমি সায় দিতে পারছি না। তুমি উচ্চশিক্ষিত তীরু। কেনো নিজের মূল্যবান সময় এই রেস্টুরেন্টে অপচয় করবে? এখানে কেও শখের বশে কাজ করতে আসেনা। সবাই বাধ্য হয়ে কাজ করে। আর রইল রোমান্স… ” কথার মাঝে কিয়ৎ বিরতি নিলো অরোন। তীরু ভ্রু কুঁচকায়! অরোন তার বাহু ধরে টান দিয়ে সন্নিকটে নিয়ে আসে। কানের ওপর নরম অধরজোড়া স্থাপিত করে শীতল কন্ঠে শুধায়,

-” আমার স্বল্প সময়ের স্পর্শেই তো তুমি দূর্বল হয়ে যাও। এখন যদি সারাদিন যাবৎ রোমান্স করতে থাকি তাহলে তো শাশুড়ী মা আমার নামে মার্ডার এর কেস দিয়ে দেবে। সাংঘাতিক ব্যাপার না বলো?”

তীরু কাঁপল! তিরতির করে কাঁপা ঠোঁট দু’টো বেশ কড়া কথা শোনাতে চাইল অরোনকে। তবে সে ভারী টের পেল, অরোনের এই গা শিরশির করা চাহনির জন্য সে এখন টু শব্দটি করতে পারবে না। এর চেয়ে এই স্থান ত্যাগ করাই শ্রেয়। তীরু বল প্রয়োগ করে অরোনকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুতপদে এই অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে ছুটে পালাল। অরোন হাসল! লাজুক তীরুর লজ্জা পাওয়ার মূর্হতটুকু এতোটা সুন্দর কেন?

চলবে~