#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-২২
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
-এই!আমাকে বসিয়ে রেখে এখান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস?গায়ে সোয়েটার,শাল কিছু নেই।ভেতরে আয়!
সায়নের কথায় রূপন্তীর ঘোর ভাঙলো।সে এতক্ষন আসছে দিনগুলো কিভাবে সামাল দিবে সেটা ভাবছিলো।রাফি এহমাদ যে ভয়ংকর মানুষ এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই!কিন্তু একা এই মানুষটাকে ফেস করার সাহস সেও পাচ্ছে না।তবে কি পিছিয়ে আসবে?
এই কথাটা ভাবার সাথে সাথেই রিমির খিলখিল করে হাসতে থাকা চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। কানে বেজে উঠে দূর্বল গলায় বলা শেষ কথাগুলো,”ওরা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে আপু৷আমি কিছু করতে পারি নাই।কেউ আমাকে সাহায্য করতে আসেনি আপু, কেউ না!”
চোখের কোটর ভরে আসলো। এমন সময় মাথায় কারো হাতের ছোয়া পাওয়া গেলো।চোখ তুলে ঝাপসা চোখে দেখতে পেলো সায়নের উদ্বিগ্ন চেহেরাখানি।সাথে সাথেই কানে আসলো তার উদ্বিগ্ন কণ্ঠ,
– তোর কী হয়েছে রূপন্তী?কাঁদছিস কেন?আমাকে বল?
রূপন্তী নিজেকে সামলে নিলো।তার চোখ মুছতে মুছতে বলল,
– আরে কী হবে!শুকনো বাতাস হওয়ার কারণে চোখে ধুলা এসে পড়েছে, এজন্য চোখে পানি চলে এসেছে। চল ভেতরে যাই, শীত লাগছে।
ভেতরে এসে আবারো সোফায় বসতেই সায়নও পাশে এসে বসলো।এরপর রূপন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– তোকে কতটা বুঝি আমি জানি না। কিন্তু আমার এটা বুঝতে একদমই সমস্যা হচ্ছে না যে তুই গত এক সপ্তাহ ধরে আপসেট। এবং ব্যাপারটা তুই খালি নিজের মধ্যে চেপে রাখছিস।
রূপন্তী সায়নের কথাটা একদমই আমলে নিলো না।বরং ঠাট্টার সুরে বলল,
– বাব্বাহ!তুই আবার আমাকে এত পড়তে শিখলি কবে থেকে?
সায়ন হাল ছেড়ে দিলো।সে ভুলেই গিয়েছিলো যে যাকে নিয়ে তার মনে-শরীরে তীব্র অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে,সে মানুষটা বাস্তবে একটা শয়তানের নানি।হতাশ চোখে সে রূপন্তীর দিকে তাকালো।মেয়েটা দিব্যি ফোন টিপছে।অথচ ও এই মেয়ের চিন্তায় নিজের ঘুম হারাম করছে।
– বুঝলাম কিছু হয় নাই। এবার বল আজ সকালে এত কাঁদছিলি কেন?তুই একটু আগে বলতে গিয়ে চলে গেলি।।
রূপন্তী ফোনে চোখ রেখেই বলল,
– আরে, দেশে আসার পর প্রথম একটা পেশেন্ট মারা গেলো তো, এজন্য খুব ভেঙে পড়েছিলাম।
– কী হয়েছিলো।
– এক্সিডেন্ট।
সায়ন আর কিছু বলল না।মূলত বলার কিছু পেলো না।হাতে রিমোট নিয়ে টিভি অন করে দেখতে লাগলো।কিছুক্ষন পর রূপন্তী যখন উঠে গেলো রুমে যাওয়ার জন্য তখন খালি বলল,
– পরশু সাভার যাবো।নিউ ইয়ারে সেখানেই থাকবো।ছুটি নিয়ে রাখিস।
.
শীতের প্রকোপ আরো বেড়েছে।এই যে একটা হুডির উপর শাল পড়েও রূপন্তীর হাত পা বরফ হয়ে গেলো।নাকে ডগাটাও মনে হয় বরফ হয়ে গেছে। অবশ্য এখন ভোর। ভোর না বলে মাঝ রাতে বললে ভালো হয়।সাড়ে চারটা বাজে। আর এখন তো ভোর দেরিতে হয়।
রূপন্তী মূলত সারা রাত ঘুমাতে পারেনি।বিছানায় গড়াগড়ি করেছে।এত দুশ্চিন্তার মাঝে ঘুমানো যায় না। এরমধ্যে রাতে খবর পেয়েছে রাফি এহমাদ দেশের বাহিরে। আসতে দেরি আছে। ততদিন তাকে এরেস্ট করা যাবে না।রিমির পোস্টমর্টেম রিপোর্ট কাল দিবে।কেস আদালতে উঠা ছাড়া মেয়টার জানাজাও পড়ানো যাবে না।কাউকে কিছু বলাও যাচ্ছে না।সব মিলিয়ে অসহ্যরকমের একটা পরিস্থিতি।
কাল সাভারে চলে যাবে। জানুয়ারিতে ওরা কয়েকজন ফ্রেন্ডরা মিলে কক্সবাজার যাবে। সায়ন যেতে ইচ্ছুক।
ঠিক করলো সাভারে গিয়ে সায়নকে সব খুলে বলবে।ওকে নিশ্চয়ই কেউ কিছু করতে পারবে না।
ঠিক করলো রাফি আসা না পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনো দুশ্চিন্তা করবে না।বছরের শেষ সময়টুকু সুন্দর মতো কাটাবে।
ভাবনার মাঝেই ফজরের আজান দিয়ে দিলো। অজু করে নামাজ পড়ে নিলো।তারপর আলমারি খুলে বহুদিন পর নিনের জিম স্যুট গুলোর একটা বের করলো।
একটি ওয়ার্ক আউট করে মেডিটেশনে বসবে।তাহলে মন মেজাজ একটু ভালো হবে।
সাড়ে পাঁচটায় ওয়ার্ক আউট শেষ করে মেডিটেশনের আগে পানি নেওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলো।রান্নাঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটার মুখোমুখি হলো।
সায়ন বের হয়েছে হাটতে যাওয়ার জন্য।গায়ে ট্র্যাক স্যুট। সে যখন রুম থেকে বের হয়েছে ঠিক তখনই রূপন্তী রান্নাঘর থেকে বের হয়েছে।
রূপন্তীকে দেখে সায়নের গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।চোখ দুটো বেহায়া হয়ে পড়লো।রূপন্তীর শরীরে তখন স্পোর্টস ব্রা আর স্পোর্টস ট্রাউজার।গলা,ঘাড়,বুকের খাজ ঘামে সিক্ত।কপালের চুলগুলো ভিজে লেপ্টে আছে।
এমন আবেদনময়ী রূপ দেখলে যে কেউই স্তব্ধ হতে বাধ্য।আর সেখান সায়নের মনে রূপন্তীর প্রতি রয়েছে তীব্র অনুভূতি, তীব্র আসক্তি।
অন্যদিকে রূপন্তী লজ্জায় জমে গেছে। হুশ ফিরতে এক দৌড় দিয়ে রুমে চলে গেলো।
সায়ন ঘোর থেকে বেরিয়ে আসার পর সবটা ভাবতে ঠোঁট কোণে ঢেউ খেলে গেলো।রূপন্তীর প্রতি নিজের অনুভূতি আরো এক ধাপ বাড়াতে বাড়াতে বেরিয়ে গেলো।
.
সকালে দুজনে যখন নাস্তা করতে বসলো তখন সব স্বাভাবিক।যদিও রূপন্তী ভেতরে ভেতরে অসস্তি অনুভব কতছিলো।কিন্তু সায়ন পুরাই স্বাভাবিক।
খাওয়া শেষে দুজনেই যখন রেডি হলো বেরোনোর উদ্দ্যেশ্যে, তখন রূপন্তী সায়নকে জিজ্ঞেস করলো,
– তুই কি আজ একটু আগে বের হতে পারবি?
– কেন?
– বাসার সবার জন্য গিফট কিনবো।
– দুপুরে জানাবো।
– আচ্ছা।
রূপন্তী চলে যেতে নিতেই সায়ন আবার ডাক দেয়।রূপন্তী সায়নের কথা শুনার জন্য দাঁড়াতেই সায়ন নিজের শরীরে বডি স্প্রে মারতে মারতে বলল,
– নিজের জন্যও জামা কাপড় কিনিস।পুরুষ মানুষের সঙ্গে থাকিস। মৌমাছি তো মধু আহরণে যাবেই।পরে আমাকে জেলের ঘানি টানতে হবে।
রূপন্তী বাকহারা হয়ে গেলো।কি বলবে সে? সায়ন ওর দিকে এক নজর তাকিয়ে বলল,
– তোর কিনতে মন না চাইলে সমস্যা নেই।আজ সকালের পর থেকে তোর বডি সাইজ আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। আমি কিনে নিয়ে আসবো।
রূপন্তীকে এবার লাল নীল হতে দেখা গেলো।সায়নের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই সায়ন কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
– কী? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?আই নো আমি সুন্দর।আই ওলসো নো ইউ লাভ মি।
রূপন্তীকে কিছু বলতে না দিয়ে সে বেরিয়ে গেলো।এরপর রূপন্তী কিছু বুঝে উঠার আগেই ফেরতে এসে গালে টুপ করে একটা চুমু খেলো।”সকালে এত অসাম একটা সিন দেখানোর গিফট এটা!”বলতে বলতে আবার হাওয়া হয়ে গেলো।
রূপন্তী গুনে গুনে পাঁচ মিনিট একই ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।যতক্ষনে সে সবটা বুঝতে ততক্ষনে তার কপোল রক্তিম আভায় ছেয়ে গেছে। দীর্ঘক্ষনপর তার মুখ থেকে একটা শব্দই বের হলো,
– অশ্লীল!
#চলবে।
#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-২৩
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
– না এটা সুন্দর না, এটা কিনবি না।
– এটা সুন্দর সায়ন। আব্বুকে মানাবে।
– না মানাবে না।
রূপন্তী হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করে বলল,
– তুই যে এরকম একটা গ্যাঞ্জাম হবি জানলে জীবনেও তোকে আনতাম না।
– তোর আনা লাগতো না।আমিই আসতাম।
– আমি আব্বুর জন্য এটাই কিনছি।
– তাহলে আব্বুকে বলিস এটা সায়ন পছন্দ করেছে।
রূপন্তী তখন চোখ ছোট ছোট করে সায়নের দিকে তাকালো। ওর চাহনি দেখে সায়ন ঠোঁট উলটে বলল,
– আমার বাপ মা এখন আর আমারে গুনে না।আমার আদরের ভাগটা তোকে দেয়।যদি জানে তুই সবার গিফট পছন্দ করে কিনেছিস,তাহলে নিশ্চিত আমাকে গোয়ালঘরের গরুর মতো ট্রিট করবে।
– গরু না ষাড়।
– ওই একই কথা!
রূপন্তী আর কথা বাড়ালো না।তারিফ সাহেবের জন্য সুয়েটার টা নিয়ে নিলো।সে আর সায়ন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে যমুনা ফিউচার পার্ক এসেছে।উদ্দেশ্য বাসার সবার জন্য টুকিটাকি কিনা।সীমন্তী আর জয়ার টা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। এখন বাবার টা হলো।আর বাকি রুহি আর রায়ান ভাইয়া।
দোকানটা থেকে বের হয়েই রূপন্তী সায়নকে একটু দাঁড়াতে বলে আবার একই দোকানে ঢুকলো।মিনিট সাতেক পর বের হয়ে দেখলো সায়ন গায়েব।খুঁজে না পেয়ে ফোন দিলো সায়নকে,
– কোথায় তুই? দুই মিনিট একটু অপেক্ষা করতে পারলি না?
– দুই মিনিট?সাতটা দশ এ গেছিস। এখন একুশ বাজে। আমি সি ব্লকের এদিকে। আড়ং এ রুহির জামা দেখছি।আয়!
– ঠিকাছে।
ওরা কেনাকাটা শেষ করতে করতে নয়টা বাজালো।প্রথমে মার্কেটের ফুড কোর্টে ডিনার করে নিবে ভাবলেও পরে ঠিক করলো গুলশানের দিকে গিয়ে খাবে।
খাওয়া দাওয়া সেড়ে বাসায় আসতে আসতে বাজলো সাড়ে দশটার বেশি।কাল সকালেই চলে যাবে। তাই এখন গোছগাছ করতে হবে।সায়ন রূপন্তীর হাতে সব শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে লাগেজ গুছাতে গিয়ে রূপন্তী খেয়াল করলো আরং এর তিনটা ব্যাগ। হিসেবে দুটো থাকার কথা। একটা রুহির আরেকটা রায়ানের।ওদের দুটো ব্যাগ সরিয়ে রেখে আরেকটা হাতে নিয়ে সায়নের কাছে গেলো।সায়ন তখন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।
রূপন্তী ডাকতে গেলো, পরে কি মনে করে আর ডাকলো না।এগিয়ে গিয়ে ঠাশ করে সায়নের পিঠে একটা থাপ্পর মারলো।সায়ন কোনো রিয়েকশন দিলো না।মথাটা ঘুরিয়ে ঠান্ডা চোখের চাহনি দিতে দিতে ঠান্ডা গলায় বলল,
– তোর সমস্যা কী?
রূপন্তী তখন ওকে ধাক্কিয়ে সরাতে সরাতে বলল,
– আমার কোনো সমস্যা নেই।দেখি আমাকে একটু বসতে দে।
সায়ন বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো।রূপন্তী তখন ওর সামনে ব্যাগটা রেখে বলল,
– দেখ! বলদের মতো আরেকজনের ব্যাগ নিয়ে এসেছিস।
সায়ন এবারেও কোনো অভিব্যক্তি দেখালো না।বরং ব্যাগটা খুলে একটা সাদা সালওয়ার কামিজের সেট বের করলো।তারপর সেটা উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো।রূপন্তীও উৎসাহিত ভাবে এগিয়ে এলো। নিজের হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল,
– অনেক সুন্দর তো কামিজটা!
সায়ন তখন নির্বিকার কণ্ঠে বলল,
– হ্যা।বলতে হয় যে কিনেছে তার চয়েজ অনেক ভালো।
– হ্যা, তা তো বটেই।
– তোর ভালো লেগেছে?
– না লাগার মতো তো না!
– ঠিক আছে তাহলে নিয়ে যা।
বলে ধপ করে আবার শুয়ে পড়লো।রূপন্তী একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। সায়নের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ গলায় বলল,
– নিয়ে যাবো মানে?
– ওটা তোর। তোর জন্য আমি কিনেছিলাম।
সারা শরীরে অন্যরকম এক শিহরণ বয়ে গেলো কি!
ড্রেসটা হাতে নিয়ে রূপন্তী চলে গেলো।পিছন থেকে সায়ন তখন চিৎকার করে বলল,
– অকৃতজ্ঞ কোথাকার! একটা ধন্যবাদ তো বলবি..
কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই রূপন্তী এসে ঠাশ করে জেন্টল পার্কের একটা ব্যাগ সায়নের মুখে ছুঁড়ে মারলো।তারপর ‘ধন্যবাদ’ বলে হাওয়ার বেগে নিজের রুমে চলে গেলো।
সায়ন একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।এরপর উঠে বসে ব্যাগটা খুললো।একটা বোটল গ্রিন হাই নেক টিশার্ট। সায়নের এক দেখায় সেটা পছন্দ হয়ে গেলো।এই কালারটা ওকে অনেক মানায়।অজান্তেই ঠোঁটের কোণে ঢেউ খেলে গেলো।
.
পরেরদিন দুজন যখন রেডি হয়ে বের হলো,দুজনই অবাক হয়ে গেলো।যে ব্যাপারটা আগে তারা খেয়াল করেনি সেটা হলো ওদের ড্রেস ম্যাচিং হয়ে গেছে।সায়নের দেওয়া কামিজটা সাদা,কিন্তু ওরনা আর সালোয়ার সবুজ।রূপন্তী কি মনে করে সেই জামাটা পড়েছে।উপরে একটা শাল জড়ানো।অপর দিকে সায়নের গায়েও রূপন্তীর দেওয়া গেঞ্জীটা।
রূপন্তী তড়িৎ চোখ পাকিয়ে সায়নের দিকে তাকালো। সায়ন একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে জিজ্ঞেস করলো “কী?”
– তুই আমাকে কপি করেছিস কেন?
– এহ!আমি কেন কপি করতে যাবো?
– তাহলে তুই আজকেই এটা পড়তে গেলি কেন?
– মন চেয়েছে। তুই কেন এটা পড়তে গেলি?
– আমারও মন চেয়েছে।কিন্তু তুই এটা পড়বি কেন?
ব্যাস! শুরু হলো দুজনের কথা কাটাকাটি। সেই কাটাকাটি চলল গাড়িতে উঠা পর্যন্ত। তারপর আবার দুজনই স্বাভাবিক হয়ে গেলো।কে বলবে এরা দুজন এতক্ষন তুমুল ঝগড়া করেছে?
ওর রওয়ানা দিয়েছিলো সকাল ৯টায়।সাভার পৌঁছালো সাড়ে বারোটায়।মাঝখানে নাস্তা করার জন্য এক ঘন্টার ব্রেক নিয়েছিলো।
বাড়িতে ঢুকতেই জয়া এসে ছেলে-ছেলের বউকে জড়িয়ে ধরলেন।সীমন্তীও শ্বশুরবাড়ি। আগামীকাল আসবে।তারিফ সাহেব সকালে ঢাকায় গেছেন।
ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে খালি ওনারা তিন জন লাঞ্চ করলেন।তবে মায়ের সাথে দুজন জমিয়ে আড্ডা দিলো।লাঞ্চ শেষে জয়া জানালেন ওনার একটু অফিস যাওয়া লাগবে। বাসায় কাজের মেয়েটা আছে। কিছু লাগলে ওকে বলতে।
জয়া বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।তারপরই সায়ন নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো আর রূপন্তী সীমন্তীর রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ঠিক চারটার সময় এসে সায়ন রূপন্তীকে ঘুমে টেনে তুললো।রূপন্তীর মেজাজ ততক্ষনে সপ্তম আসমান ছুঁয়েছে।রাগে গজগজ করতে করতে জিজ্ঞেস করলো,
– সমস্যা কী তোর?
রূপন্তীর কণ্ঠ শুনে হোক কিংবা তার ঘুমু ঘুমু চেহারা দেখে হোক,সায়ন মিইয়ে গেলো।নরম কণ্ঠে বল,
– হাঁটতে যাবো।
– তো যা না! আমাকে টানাটানি করছিস কেন?
– তোকে নিয়ে যাবো।
– আমি যাবো না।ঘুমাবো!
বলে ধপ করে আবার শুয়ে পড়লো।সায়ন তখন নিজে নিজে বিড়বিড়ালো,
– আর আমি তোর আদুরে ভাব দেখে নিজেকে কন্ট্রোলহীন করবো?!নো ওয়ে!
রূপন্তীকে আবার টান মেরে বসিয়ে দিলো।রূপন্তী রাগে চিৎকার করবে তার আগেই সায়ন ওকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।তারপর পানির ঝাপটা মারলো রূপন্তীর চোখে মুখে।
কাচা ঘুম থেকে উঠে সবটা বুঝতে রূপন্তীর একটু সময় লাগলো।যখন ঘুম পুরোপুরি চলে গেলো ততক্ষনে সায়ন ওকে রেখে চলে গেছে।রূপন্তী আর কী করবে!হাত মুখ ধুয়ে গায়ে থাকা টিশার্টের উপর একটা জ্যাকেট আর মাফলার পেঁচিয়ে বের হয়ে এলো।ততক্ষনে সায়নও চলে এসেছে।
সায়ন সুন্দর করে নিজের হাতের মুঠোয় রূপন্তীর হাতটা নিয়ে হাঁটতে লাগলো।রূপন্তী ভেবেছিলো সায়নের সাথে একটু চোটপাট করবে। কিন্তু কি মনে করে সে চুপচাপ সায়নের পাশে হাঁটতে লাগলো।রাস্তায় আসতেই সায়ন বলল,
– চল।আগে একটু হেঁটে আসি। তারপর নামাজ পড়ে আবার সামনের মোড়ে যাবো।ওইখানে অনেক রকমের স্ট্রিটফুড বসে। সেগুলো খাওয়াবো তোকে।
রূপন্তী কিছু বলল না।তবে কিছুক্ষনের মধ্যে দুজনের গল্প জমে উঠলো।রূপন্তী উষ্ণতার খোঁজে রীতিমতো সায়নের গা ঘেষে হাঁটছে যেটা সায়নের জন্য মেঘ না চাইতেও জল।এরপর বাড়ি ফিরে দুজনেই নামাজ পড়ে আবার বের হলো নাস্তা খেতে।এবার সাথে নিলো তানিয়াকে, যে জয়াকে কাজে টুকটাক সাহায্য করে।
ফুচকা খেতে খেতে রূপন্তী তানিয়ার সাথে অনেক গল্প করলো।পিচ্চিটা ক্লাস নাইনে পড়ে। ফাইনাল এক্সাম শেষ। আগামীকাল রেজাল্ট। এজন্য বাচ্চাটার মুখ চিন্তায় শুকিয়ে আছে।
তানিয়া মূলত বাড়িতে আগে একজন মহিলা কাজ করতো,তার মেয়ে। মা মারা যাওয়ার পর এখানেই থাকে।জয়া তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে।কথায় কথায় জানা গেলো সে বায়োলজি খুব পছন্দ করে।তবুও তার কিছু চ্যাপ্টারে সমস্যা। ঠিক সেই মুহুর্তে রূপন্তী সায়ন এক সাথে বলল,
– বই নিয়ে আসিস, বুঝিয়ে দিবো।
এক,দুই,তিন!
ঠিক তিন সেকেন্ডের মাঝে দুজন আবার লেগে গেলো।তানিয়া তখন হা করে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে।
শেষ পর্যন্ত রূপন্তীই জিতলো।কারণ তানিয়া তার কাছে পড়তে চায়।
সত্যি সত্যি বাড়ি ফিরে রূপন্তী তানিয়াকে নিয়ে বসলো। এক চ্যাপ্টার বোঝানো শেষ করতে করতে জয়া,তারিফ সাহেব দুজনই চলে এলেন। বেশ বড় চ্যাপ্টার ছিলো,বুঝাতে সময় লেগেছে।তাই শেষ করতে করতে নয়টা বেজে গিয়েছে।
রূপন্তী উঠে দাঁড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য। সায়নকেও দেখে না অনেক্ষন। রুম থেকে বের হবে, ঠিক সেই মুহুর্তে ফোনে একটা মেসেজ আসলো।বিদেশি নাম্বার। বুঝতে দেরি হলো না কে! ম্যাসেজটা ওপেন করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো,
“আবারও বলছি, কেসটা তুলে নাও।পুলিশ আমার কিছুই করতে পারবে না।অযথা একটা ভেজাল আমার জন্য।”
উত্তরে রূপন্তী লিখলো,
– ভয় পাচ্ছেন নাকি?
– ইয়েসে বেবি গার্ল! তোমার জন্য!
– মানে?
– মানে নেই।শ্বশুরবাড়িতে দিন কেমন যাচ্ছে? হাজবেন্ডকে নিয়ে খুব ভালো আছো মনে হচ্ছে!
রূপন্তীর শিড়দাড়া বেয়ে হঠাৎ ঠান্ডা কিছু বয়ে গেলো।এই লোকের মতলব ভালো না।ঠিক তখনই ফোনে আরেকটা ম্যাসেজ আসলো,
“লাস্ট ওয়ার্নিং! আমার কানেকশন তুমি জানো না। আবারো বলছি কেসটা তুলে নাও।আমি কিন্তু সরাসরি কোনো ধাক্কা দেই না।আমি যেভাবে ধাক্কা দেই সেটা তুমি সইতে পারবে না।তাই বলছি নিজের রাস্তা মাপো।নিজের ভালোর জন্য না হলেও অন্যের ভালোর জন্য!
#চলবে।