উষসী হাসবে বলে পর্ব-৩+৪

0
322

#উষসী_হাসবে_বলে (৩)
লিখা- Sidratul Muntaz

সেগুনবাগিচার জাতীয় চিত্রশালায় আজ উপচে পড়া ভীড়। সকালের দিকে এতো মানুষ থাকার কথা না। প্রদর্শনী চললেও বিকালের দিকে ভীড় বাড়ে। সকালটা নিরিবিলিই থাকে এখানে। তবে আজ যেন নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে। এর বিশেষ উদ্দেশ্য হলো প্রথমবার ইয়ামিন ইব্রাহীমের চিত্রকর্ম বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শিত হচ্ছে। সঙ্গীত প্রেমি মানুষেরা হুট করে চিত্রপ্রেমী হয়ে উঠেছে। সেই সুবাদে আজ ভবনে বাজছে ইয়ামিন ইব্রাহীমের গান।

উষসী স্থির ভাস্কর্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে একটা জায়গায়। তার শরীর পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। আশেপাশে এবং পেছনে এতো মানুষ ধাক্কাধাক্কি করছে তবুও উষসী নিজের জায়গা থেকে একচুল নড়ছে না। প্রীতি বিপর্যস্ত কণ্ঠে বলল,” অনেক হয়েছে উষু, আর কত দেখবি? বোঝাই তো যাচ্ছে এটা তুই না। চল এখান থেকে প্লিজ। ”

কয়েকটি উৎসুক দৃষ্টি প্রীতি আর উষসীর দিকে অবাক হয়ে তাকায়। প্রীতির অনুরোধ মোটেও কানে তোলে না উষসী। সে বিড়বিড় করে আগুন ঝরা কণ্ঠে বলল,” এটাই আমি। দ্যাখ… আমার নাকের তিলটায় পর্যন্ত মিল আছে।”

উপস্থিত জনতারা পেইন্টিং-এর ছবির সাথে উষসীর মুখখানি মেলাতে ব্যস্ত হয়। প্রীতিও অবাক হয়ে যায়। সত্যি, উষসীর নাকের ডগায় একটা ছোট্ট বাদামী তিল আছে যা পেইন্টিং এর নাকেও উপস্থিত। চমৎকার একটা ছবি। পানিতে সাতার কাটছে টানা চোখের সুন্দরী এক রমণী। তার রূপের আভিজাত্য দেখে মনে হচ্ছে পুরনো আমলের কোনো প্রিন্সেস। একটা শুকনো ঢোক গেলার চেষ্টা করে প্রীতি। সে জানে এই ছবির সাথে উষসীর মুখের আটানব্বই ভাগ মিল। তবুও ইচ্ছাকৃত ব্যাপারটা অস্বীকার করছে সে।

হঠাৎ একজন আগন্তুক এসে তুমুল উৎসাহী কণ্ঠে শুধাল,” এই পেইন্টিংটা কি আপনার? মানে আপনিই কি এই পেইন্টিং-এর মডেল?”

উষসী থতমত খেয়ে তাকায়। তার আশেপাশে মানুষের ভীড় বেড়ে গেছে। সবাই তাকে আগ্রহভরা দৃষ্টিতে এমনভাবে দেখছে যেন সে নিজেই আগাগোড়া একটা শিল্পকর্ম। কয়েকজন তো ক্যামেরা নিয়ে ছবিও তুলতে লাগল।

উষসী ত্বরিতে ওরনায় নিজের মুখ ঢেকে ফেলে। প্রীতি সবাইকে ধমক দিয়ে বলল,” এসব কি করছেন আপনারা ছবি কেন তুলছেন? এই পেইন্টিং-এর সাথে আমার বান্ধবীর কোনো সম্পর্ক নেই। আপনারা প্লিজ সরে দাঁড়ান।”

কোনমতে উষসীকে নিয়ে ভীড়-ভাট্টা থেকে বেরিয়ে আসে প্রীতি। সামনেই যুঁথি আর শম্পা ছিল। তারাও রীতিমতো হতভম্ব বনে গেছে। মূলত এই সাড়া পড়ে যাওয়া পেইন্টিং দেখার জন্যই আজ সকাল সকাল সবাই ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারিতে এসেছিল। দুইদিন ধরে এখানে এক্সিবিশন চলছে।

গতকাল চারুকলা ডিপার্টমেন্টের রিতু উষসীর ফোনে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল। পেইন্টিংটির ছবি নিজের ফোনে লুকিয়ে তুলে এনেছে সে। কারণ তার কাছে মনে হয়েছে এই পেইন্টিং এর পুকুরে সাতার কাটারত রমণীটি উষসী। সে কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে নয় বরং সরল মনেই আগ্রহ করে উষসীকে ছবিটি দেখায়। আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। ছবিটি দেখার পর থেকেই উষসী রেগে ঢোল হয়ে গেছে। সকাল সকাল বান্ধবীদের নিয়ে সেগুনবাগিচায় চলে এসেছে নিজের চোখে পেইন্টিংটি দেখবে বলে।

শম্পা আমতা-আমতা করে বলল,” এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই উষু। আমার মনে হয় এটা কাকতালীয় ব্যাপার। পৃথিবীতে কতই কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে যায়… তাই না?”

উষসী ক্রোধসিক্ত কণ্ঠে বলল,” তোর কাছে এটা কাকতালীয় ব্যাপার কেন মনে হচ্ছে? আমার নাকের তিল পর্যন্ত মিলে গেছে… এটাও কি কাকতালীয়? বল?”

যুঁথি ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,” আশ্চর্য, তুই কি বলতে চাস উষু? ইয়ামিন ইব্রাহীম ইচ্ছে করে তোর ছবি এঁকেছে? আরে উনি কি জীবনে কখনও তোকে দেখেছে নিজের চোখে?”

” সেটাই তো।” প্রীতি তাল মেলায়। উষসী নিশ্চুপ হয়ে যায়। সেদিন কটেজে কি হয়েছিল সেই ঘটনা এখনও বন্ধুদের বলা হয়নি। এতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার তারা বিশ্বাস করবে কি-না সেটাও এখন এক চিন্তা।

যুঁথি কাছে এসে বলল,” আমরা সিলেট থেকে ফিরেছি দশদিনও হয়নি। এই অল্প সময়েই কি উনি এতো ভালো একটা পেইন্টিং এঁকে ফেলেছেন? আমি শুনেছিলাম এই ধরণের ছবি আঁকতে কমপক্ষে দুইমাস সময় লাগে। আমার নিজের মামাও পেইন্টার। আমি জানি না?”

উষসী কটমট করে তাকাল। ক্ষুব্ধ গলায় জানতে চাইল,” তাহলে আমার চেহারার সাথে এই ছবির এতো মিল কিভাবে হয়? বোঝা আমাকে! এটা কি শুধুই কাকতালীয়?”

” হতেই পারে কাকতালীয়। কাম ডাউন।”

উষসী মানতে পারছে না। লোকটা সেদিন তাকে যেভাবে খুঁটিয়ে দেখছিল… মনে হয় ইচ্ছাকৃতই এই কাজ করেছে। উষসীর মুখ কি তার নিজস্ব সম্পত্তি নাকি যে যখন ইচ্ছা পেইন্টিং-এ বসিয়ে দিবে? ব্যাপারটা হজম করতে পারছে না সে কিছুতেই। কেন এই ছবির সাথে তার মুখের এতো মিল? গায়ে অদ্ভুত জ্বালা ধরে যাচ্ছে।

প্রীতি পেইন্টিং কিনে নেওয়ার বুদ্ধি দিল। কিন্তু সেই বুদ্ধি কোনো কাজে লাগল না। কারণ পেইন্টিং-এর পাশে লাল দাগে লেখা ছিল, এই চিত্রকর্মটি বিক্রির জন্য নহে।

সেবারের মতো শান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে উষসী। এক্সিবিশন যেহেতু চলছেই… একবার না একবার নিশ্চয়ই ইয়ামিন ইব্রাহীম আর্ট গ্যালারিতে আসবেন। তখন উষসীও যাবে দেখা করতে। সরাসরি প্রশ্ন করবে এহেন কান্ডের অর্থ কি? যদি লোকটা অস্বীকার করে তাহলে উষসী ঘুঁষি মেরে তার নাক চ্যাপ্টা বানিয়ে দেবে। আর যদি স্বীকার করে তাহলে ভালো। অন্তত বন্ধুরা বুঝবে সে মিথ্যা বলেনি।

অপেক্ষায় দিন গুণতে থাকে উষসী। একদিন জানা যায় এক্সিবিশনের শেষদিন ইয়ামিন থাকবে। সেদিন আর্ট গ্যালারিতে একুশে বইমেলার চেয়েও বেশি ভীড় হয়েছিল। উষসীরা দশ বন্ধু মিলেই গিয়েছিল। ইফাত মজা করে বলছিল,” সিরিয়াসলি উষু, তুই এটা কিভাবে ভাবছিস যে ইয়ামিন ইব্রাহীম তোর পেইন্টিং আঁকবে? তার কি রুচির এতোই অভাব?”

উষসী রেগে ইফাতের চুল টেনে দিতে যায়। শম্পা তাদের থামিয়ে বলল,” ভাই, একটা ব্যাপার চিন্তা করে দ্যাখ… যদি সত্যি ওই পেইন্টিং উষুর হয় তাহলে আমাদের বান্ধবী কত ফেমাস হয়ে যাবে তাই না? সাথে আমরাও ফেমাস হয়ে যাবো।”

প্রীতম অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়। ফোঁস ফোঁস করে বলে উঠল,” তোর ফেমাসের গুষ্টি মারি আমি। যদি সত্যি ওটা উষুর পেইন্টিং হয় তাহলে ওই শা’লার হাত একটাও আস্তো রাখব না। ভেঙে গুঁড়ো করে দিবো একদম।”

বাকিরা হাসিতে ভেঙে পড়ে প্রীতমের কথায়। রোহান বিড়বিড় করে টিপ্পনী কাটে,” জেলাসির লেভেলটা দ্যাখ!”

যুঁথি চোখের ইশারায় তাকে চুপ করতে বলে। ভাগ্যিস উষসী কথাটা শুনতে পায় না। নাহলে এতোক্ষণে ঠিকই তেড়ে আসতো। তার অগোচরে বন্ধুরা প্রায়ই প্রীতম আর উষসীকে নিয়ে গসিপ করে। যা উষসীর কানে গেলে ভূমিকম্প শুরু হবে।

তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে কাটায়। কিন্তু ইয়ামিন ইব্রাহীম আসেনি। যারা অটোগ্রাফ আর একটা সেলফির জন্য সারাদিন অপেক্ষা করেছে তারা হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরে। উষসীর জেদের মাত্রা তীব্র হয়। সেদিন ডিনারে নিজের বড়বোনকে প্রশ্ন করল উষসী,” আচ্ছা আপু, তোমার কি অতীতের কথা মনে আছে?”

উষ্ণতা সালাদের জন্য শসা কাটছিল তখন। অবজ্ঞাসূচক ভঙ্গিতে জানতে চাইল,” অতীতের তো অনেক ঘটনাই আছে। কোন কথা জানতে চাইছিস বুঝতে পারছি না। স্পেসিফিকলি বল।”

উষসী খুব ইতস্ততবোধ করে। ইয়ামিনের কথাটা সরাসরি জিজ্ঞেস করতে তার এতো নর্ভাস কেন লাগছে! একটু উশখুশ করে বলে ফেলল,” তোমার একটা লম্বা করে স্টুডেন্ট ছিল না? কলেজে পড়তো যে? ওদের বাড়ি তখন পল্টনে ছিল। তুমি আর আমি একবার দাওয়াতে গিয়েছিলাম ওদের বাড়িতে।”

উষ্ণতা মুখে হাসি এনে বলল,” ইয়ামিনের কথা বলছিস?”

উষসী অপ্রতিভ হয়। মাথা নেড়ে হ্যাঁসূচক জবাব দেয়। উষ্ণতা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল,” হঠাৎ ওর কথা মনে পড়ল কেন তোর?”

” কারণ আছে। কিছুদিন আগে আমরা শ্রীমঙ্গল ট্যুরে গেলাম না? তখন উনার সাথে দেখা হয়েছিল। উনি তো এখন বাংলাদেশে আছেন।”

” তাই নাকি? ও তো এখন অনেক বড় শিল্পী-টিল্পী হয়ে গেছে। তোকে চেনার কথা না। চিনেছে নাকি? ”

” চিনতে পারেনি আপু।”

” সেটাই স্বাভাবিক। সেজন্য কি তোর দুঃখ লাগছে?”

উষসী প্রতিবাদে গর্জে উঠল,” মোটেও না। দুঃখ কেন লাগবে? বরং আমি খুশি হয়েছি। যদি চিনে ফেলতো তাহলে বরং আমি অস্বস্তিতে পড়ে যেতাম। তখন আমি কত ছোট ছিলাম! কত বোকা বোকা কান্ড করেছি…ভালোই হয়েছে যে আমাকে চিনতে পারেনি উনি।”

ছোটবোনের কথা শুনে উষ্ণতা হেসে ফেলল। টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে বলল,” হুম। অনেক ছোট ছিলি তুই। তোর বয়স তখন মাত্র আট কি নয় হবে…”

” তুমি তোমার সব স্টুডেন্টদের ব্যাপারেই গল্প করো। কিন্তু উনার ব্যাপারে কখনও গল্প করোনি তো? উনি কেমন ছিল ছাত্র হিসেবে?”

উষ্ণতা একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় এবার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,” হঠাৎ এসব কেন জানতে চাইছিস তুই?”

” এমনি কৌতুহল হচ্ছে। এতোবড় একজন শিল্পী তোমার স্টুডেন্ট ছিল। ব্যাপারটা কি গৌরবের না? আই এম সো প্রাউড অফ ইউ আপু। সেজন্যই জানতে চাইছি আর কি। তোমাদের সম্পর্ক কেমন ছিল, বলো না?”

উষ্ণতা রাশভারী কণ্ঠে বলল,” সে খুব অবাধ্য স্টুডেন্ট ছিল উষু। কখনও আমার কথা শুনতো না। ওই বয়সেই স্মোকিং করতো। খারাপ সঙ্গীদের নিয়ে চলতো। মূলত ওকে ভদ্র বানানোর জন্যই শিমলা আন্টি আমাকে রেখেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন আমি যেন শুধু ইয়ামিনকে স্টুডেন্ট হিসেবে না, ছোটভাইয়ের মতো মানুষ করি।”

” তারপর কি হয়েছিল? তুমি কি তাকে মানুষ করতে পেরেছিলে?”

উষ্ণতার কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ে আক্ষেপ,” পারিনি। উল্টো সে আমার জীবনটাই তান্ডব বানিয়ে দিয়েছে।”

” মানে?”

” ছাড় ওসব কথা।”

” প্লিজ আপু… বলো না! কি হয়েছিল?”

উষ্ণতা কয়েক মুহূর্ত চেয়ে থেকে বলল,” সে আমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল।”

উষসী রীতিমতো আৎকে উঠল। যদিও ব্যাপারটা সে একটু-আধটু জানেতো। তবুও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,” বলো কি? তারপর?”

” তারপর আর কি? তোর তৃষাণ ভাইয়ের সাথে আমার তখন দুই বছরের সম্পর্ক চলে। এসব জেনে নানান ধরণের পাগলামি শুরু করে দেয় সে। তার বয়সটাই ছিল ওইরকম।আমি ইয়ামিনকে পড়ানো ছেড়ে দিয়েছিলাম। তার কিছুদিন পর তৃষাণের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়। একদিন প্রিয়ন্তী আপুর কাছে শুনেছিলাম ইয়ামিন নাকি লেখাপড়ার জন্য বিদেশ চলে গেছে। আর কোনোদিন দেখা হয়নি আমাদের।”

কথা শেষ করে উষ্ণতা কেমন একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। ওই ঘর থেকে তার শাশুড়ি ডোনা ডাকলেন,” উষ্ণতা, তোমার ছেলে কি করছে দেখো। পড়া-শুনা রেখে ভিডিও গেইম খেলছে। ওর হাতে মোবাইল দেয় কে?”

উষ্ণতা যেতে নিলেই হাত ধরে তাকে থামাল উষসী। একটু অন্যরকম গলায় বলল,” আচ্ছা আপু, ধরো যদি ওই সময় তৃষাণ ভাই তোমার জীবনে না থাকতো… তাহলে কি তুমিও ওর প্রেমে পড়ে যেতে?”

উষ্ণতা এই কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায়। ধমকের স্বরে বলল,” এটা আবার কেমন প্রশ্ন? ওকে আমি ছোটভাইয়ের মতো দেখতাম। এগুলো কখনও চিন্তাও করিনি।”

উষ্ণতা হাত ছাড়িয়ে চলে যায়। উষসী দাঁড়িয়ে থাকে সটান হয়ে। একটু পর ফিসফিস করে বলে,” ভেরি ট্র্যাজিক লাভস্টোরি।” হঠাৎ তার মস্তিষ্কে হানা দেয় একটা প্রশ্ন। প্রিয়ন্তী আপুকে জিজ্ঞেস করলে কি ইয়ামিন ইব্রাহীমের বাড়ির ঠিকানা পাওয়া যাবে?

গাজীপুরের একটা বাগানবাড়িতে আজ তিনদিন ধরে অবস্থান করছে ইয়ামিন। তার নিরিবিলি জায়গা খুব পছন্দ। নীরবে বসে গান লিখতে তার কখনও খারাপ লাগে না। এখানে তাকে বিরক্ত করার জন্য কেউ না থাকলেও সে বিরক্ত হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে তার প্রচন্ড সর্দি আর গলা ব্যথা। দিন-রাত আদা চা খাচ্ছে, কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করছে। তবুও লাভ হচ্ছে না। আগামীকাল তার একটা রেকর্ডিং আছে। সেটা মনে হয় ক্যান্সেল করতে হবে। মেজাজটা চড়ে আছে।

সকালে তার ঘুম ভেঙেছে কোকিলের সুর শুনে। কুহু কুহু ওই ডাকটা অসহ্যবোধ হওয়ার দ্বিতীয় কারণ। বসন্ত না আসতেই এখানে কোকিল চলে এসেছে কেন কে জানে? এখনও শীতের আমেজ কাটেনি৷ সকালে ঘুম ভাঙলে কুয়াশাময় ঝাপসা পৃথিবী দেখা যায়।

ইয়ামিন ঘরে এসে বিছানায় পা তুলে বসল। ল্যাপটপ কোলে নিতে যাবে তখনি নজর গেল দক্ষিণপাশের দেয়ালে ঝোলানো পেইন্টিং-এর দিকে। যেটি সে নিজের হাতে খুব যত্নে এঁকেছে। ইয়ামিন কিছুক্ষণ পেইন্টিং এর দিকে তাকিয়ে রইল। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত রমণীর মুখটি কল্পনা করতে সফল হয়েছে সে। কিন্তু এই মুখে কোনো হাসি নেই। কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেয়েটি তাকিয়ে আছে তার দিকে। যেন খুব বিরক্ত সে।

ইয়ামিনের অস্বস্তি লাগছে। এই ছবিটি তার খুব ব্যক্তিগত। তাই সে এটা এক্সিবিশনে পাঠাতে চায়নি। কিন্তু মিসেস শিমলা ছবিটি এতো পছন্দ করেছেন যে ছেলের অগোচরেই ছবিটি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই কথা জেনে তো ইয়ামিন মহাবিরক্ত হয়েছিল। কিন্তু শিমলা বললেন,” দেখিস, এই বছরের সেরা ছবি হবে এটা।”

ইয়ামিন এক্সিবিশন শেষ হতেই ছবিটি আনানোর ব্যবস্থা করেছে৷ তারপর নিজের শোবার ঘরের দেয়ালে টানিয়ে রেখেছে। মিসেস শিমলার ধারণা সত্যি হয়েছিল। ছবিটি এক্সিবিশনের সেরা পেইন্টিং হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। কত মানুষ কিনতে চেয়েছে। কিন্তু ইয়ামিন তো বিক্রি করবে না। এই পেইন্টিং এর সাথে তার হৃদয়ের একটা যোগসূত্র তৈরী হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আচ্ছা যোগসূত্রটা কি খালি পেইন্টিং এর সাথে? নাকি পেইন্টিং এর ওই অপরূপ চিত্ররূপসীর সাথে?

সকাল সকাল গ্যারেজ থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে উষসী। একা একাই ড্রাইভ করে চলে যায় মতিঝিল। সেখান থেকে একে একে যুঁথি, প্রীতি আর শম্পাকে নিয়ে রওনা দেয় মূল গন্তব্যস্থলে।

শম্পার ঘুম তখনও কাটেনি। সে চোখ ডলতে ডলতে ভারী বিরক্ত গলায় প্রশ্ন করল,” কি এমন জরুরী দরকার পড়ল তোর যে এই সকাল সকাল আমাদের গরুর মতো ঘুম থেকে তুলে আনলি?”

উষসী কোনো উত্তর দেয় না। একমনে ড্রাইভ করে যায়। সে ড্রাইভিংটা ভালোই আয়ত্ত করেছে। তার দুলাভাই তাকে ড্রাইভিং শিখিয়েছে ছোটবেলা থেকেই। আঠারো বছর হতেই উষসী লাইসেন্স পেয়ে গেছে।

প্রীতি কৌতুহল নিয়ে বলল,” আমরা কোথায় যাচ্ছি উষু? এটা অন্তত বল!”

উষসী শীতল গলায় উত্তর দিল,” ইয়ামিন ইব্রাহীমের বাড়িতে।”

যুঁথি তখন ব্রেডে কামড়ে বসাচ্ছিল। কথাটা শুনে খাবার তার নাকে-মুখে আটকে যায়। সকালে সে ব্রেকফাস্ট করেনি। ক্ষিদেও চলে যায় কথা শুনে। উত্তেজনা মিশ্রিত কণ্ঠে জানতে চাইল,” সত্যি বলছিস তুই? নাকি ফাজলামি করছিস?”

” আমি মোটেও ফাজলামির মুডে নেই যুঁথি। একদম সত্যি বলছি।”

প্রীতি বলল,” তুই উনার বাসার ঠিকানা কি করে জানলি?”

” কালেক্ট করেছি এক জায়গা থেকে। ”

উষসী এমনভাবে কথা বলছে যেন এগুলো কোনো ব্যাপারই না তার কাছে। যুঁথি মাথায় হাত চেপে ধরল। তুমুল বিস্ময় নিয়ে বলতে লাগল,” ও মাই গড! আগে বলবি না? তাহলে একটু ফিটফাট হয়ে আসতাম। এই যোগিং এর আউটফিটে চলে আসতাম না। দেখতে আমাকে কেমন লাগছে বলতো!”

শম্পা হেসে ফেলল। প্রীতির ভয় লাগছে। সে আতঙ্ক নিয়ে শুধাল, ” কেন যাচ্ছি আমরা ওখানে? গিয়ে করব?”

উষসী নিস্তরঙ্গ কণ্ঠে বলল,” তোরা কিছুই করবি না। যা করার সব আমি করব। ওই লোকটার বাড়ি থেকে আমার পেইন্টিং নিয়ে আসব।”

যুঁথিসহ বাকিরা চোখ বড় করে চাইল। শম্পা উষুর মাথায় গাট্টা দিয়ে বলল,” পাগল হয়েছিস? ওটা যে তোরই পেইন্টিং তার কি প্রমাণ আছে?”

” চুপ করে বসে থাক। প্রমাণ পড়ে বুঝবি।”

প্রীতি করুণ গলায় বলল,” উষু বাড়াবাড়ি করিস না। উনি তোকে ওই পেইন্টিং কেন দিবে? শত শত মানুষ ওটা কিনতে চেয়েছে। কাউকে দেওয়া হয়নি৷ আর তুই চাইলেই তোকে দিয়ে দিবে?”

যুঁথি বলল,” তার চেয়েও বড় কথা আমরা দেখা করতে পারব কি? আমাদের যদি বাড়িতেই ঢুকতে না দেয়?”

উষসী হাসে। কারো কথার কোনো জবাব দেয় না। নীরবে ড্রাইভ করতে থাকে।

চলবে

#উষসী_হাসবে_বলে (৪)
লিখা- Sidratul Muntaz

বিশাল বড় মাঠ দিয়ে ঘেরাও করা উঁচু প্রাচীর সমৃদ্ধ বাড়িটির পেছনে টলটলে ঝিল। বাড়ির নাম নিঝুম নীড়। এমন একটা জায়গায় এতোবড় বাড়ি আছে ব্যাপারটাই কল্পনাতীত। উষসী একেবারে মূল ফটকে এসে থামল। বিকট শব্দে হর্ণ বাজিয়ে আশেপাশের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইল। ইউনিফর্ম পরিহিত নাদুসনুদুস দেখতে একজন দারোয়ান এগিয়ে এলো তখন। বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল,” অযথা হর্ণ বাজাবেন না। ওইদিকে দেখুন।”

উষসী ও তার বান্ধবীরা দেখল প্রকান্ড গেইটের সামনের সাইনবোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা,”বাড়ির সামনে হর্ণ বাজানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এছাড়াও শ্রুতিকটূ শব্দ উৎপন্ন করা থেকে বিরত থাকুন। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করুন।
নিবেদান্তে, কর্তৃপক্ষ।”

প্রীতি ফিসফিসিয়ে বলল,” এজন্যই বুঝি বাড়ির নাম নিঝুম নীড়? সবকিছু নিস্তব্ধ… নিঝুম!”

উষসী প্রশ্ন করল,” ইয়ামিন ইব্রাহীম আছে? দেখা করা যাবে?”

দারোয়ান গম্ভীর মুখে সালাম দিল সবার উদ্দেশ্যে। উষসী বলল,” দ্রুত উনাকে খবর দিন। নিচে আসতে বলুন।”

শম্পা অবাক হয়ে বলল,” তোর কি মাথা ঠিকাছে? ইয়ামিন ইব্রাহীম আমাদের জন্য নিচে আসবেন? উল্টো আমাদের উপরে যেতে হতে পারে।”

দারোয়ান হাসি হাসি মুখে শুধাল,” আপনাদের কি কোনো এপয়েন্টমেন্ট ছিল?”

উষসী রাগী রাগী মুখে জবাব দিল,” এপয়েন্টমেন্ট থাকতে হবে কেন? উনি কি প্রাইম মিনিস্টার যে দেখা করার জন্য এপয়েন্টমেন্ট লাগবে! আজব ব্যাপার তো!”

দারোয়ান কেমন শাণিত দৃষ্টিতে উষসীকে দেখল। যুঁথি মিনমিন করে বলল,” ভদ্রভাবে কথা বলা যায় না উষু? তোকে বুঝতে হবে আমরা একটা সেলিব্রিটির বাড়িতে এসেছি। তাও যেন তেন সেলিব্রিটি না। ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের সেলিব্রিটি!”

উষসী খিটমিট করে বলল,”সেলিব্রিটি মাই ফুট। মানুষের মুখ চুরি করে ছবি আঁকে, সে আবার কিসের সেলিব্রিটি?”

দারোয়ান ইন্টারকমে ফোন দিতে গেল। একটু পর ফিরে এসে বলল,” স্যার দেখা করতে পারবেন না।”

উষসী ক্ষ্যাপা কণ্ঠে বলল,” কেন পারবেন না? আপনি বলুন বিষয়টা জরুরী।”

দারোয়ান পেছনে হাত গুটিয়ে নিল। ভাব দেখে মনে হচ্ছে বাড়ির মালিক সে নিজেই। বেশ শান্ত ভঙ্গিতে জানতে চাইল ” আপনার নাম কি? স্যার কি আপনাকে চেনেন? কি পারপাসে এসেছেন?”

উষসী মিইয়ে গেল। নাম বললে তো চেনার কথা না। এতো বছর আগের অতীত ইয়ামিন নিশ্চয়ই মনে করে বসে থাকবে না। তবে মুখ দেখলে সে অবশ্যই চিনবে। নাহলে কি ওমন নিখুঁতভাবে পেইন্টিং আঁকতে পারতো? উষসী বলল,” নাম বললে চিনবে না। তবে আমার মুখ দেখলে অবশ্যই চিনবে৷ আমার নাকের তিল পর্যন্ত উনার মুখস্ত।”

দারোয়ানের ভাব দেখে মনে হলো উষসীর অহেতুক কথা শুনে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা তার নেই। হাই তুলে বিরস মুখে বলল,”আপনারা অন্যদিন আসুন। আজকে স্যার ব্যস্ত আছেন।”

অতঃপর উত্তরের প্রতীক্ষা না করেই ভেতরে ঢুকে লম্বা গেইট বন্ধ করে দিল দারোয়ান। মুখের ওপর এতোবড় অপমান সহ্য করতে না পেরে থমথমে ফ্যাকাশে রূপ ধারণ করল উষসীর চেহারা। যুঁথি, শম্পা আর প্রীতি কেবল ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। যেন তারা জানতো এমন কিছুই হবে। আর এজন্য তারা প্রস্তুতও ছিল।

উষসী নিঃশব্দে ড্রাইভিং শুরু করল। প্রীতি কিছুক্ষণ উশখুশ করে বলল,” এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে। সেলিব্রিটি মানুষ বলে কথা। এতো সহজে দেখা দিলে কি আর মানুষ হাজার হাজার টাকার টিকিট কেটে উনাকে দেখতে আসতো?”

শম্পা বলল,” ইন্টারকমে ফোন করার পরই বেটার ব্যবহার বদলে গেছে। সাথে গাড়ি আর উষুর ভাব দেখে মনে হয় আমাদের ভিআইপি ভেবেছিল প্রথমে। দেখলি না কেমন সালাম দিয়ে হাসি মুখে কথা বলছিল?”

যুঁথি নিশ্বাস ছেড়ে বলল,” তারপর ফোন করে যখন বুঝল আমরা কিছুই না তখনি মুখের উপর গেইট লাগিয়ে দিল। আমার খুব লজ্জা লাগছে। এভাবে হুট করে ওখানে যাওয়াটা উচিৎ হয়নি।”

সবার কথা শুনে রাগে ফুঁসছে উষসী। তার মুখ ক্রমশ লাল বর্ণে রঞ্জিত হচ্ছে। ছোটবেলার কথাগুলো একে একে মনে পড়ছে হঠাৎ। প্রায় নয়বছর আগে প্রথমবার উষ্ণতা আপুর সাথে ইয়ামিনের বাড়িতে এসেছিল সে। তখন থেকেই শুরু হয়েছে অপমানের রেলগাড়ি। পরতে পরতে উষসীকে অপমান করে গেছে ইয়ামিন নামের সতেরো বছরের রগচটা, বদমেজাজি, নাক উঁচু রাক্ষস ধরণের ভয়ংকর ছেলেটা। তার জন্য কত সাফার করতে হয়েছিল তাদের। একবার তো ইয়ামিন মাঝ সড়কে উষসীকে গাড়ি থেকেই নামিয়ে দিয়েছিল।

সেই বীভৎস দিনের কথা মনে পড়লে উষসী এখনও শিউরে ওঠে। ভয় পায়। যদি সেদিন তার কিছু হয়ে যেতো? এই সব অপমানের জেদ বুকে পুষে বড় হয়েছিল একদিন সঠিক জবাব দিবে বলে। কিন্তু সেই আশাতেও গুঁড়ে বালি। লোকটা তাকে বরাবরের মতো এবারও অপমান করে বাড়ির গেইট থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। উষসী ভুলবে কিভাবে এতোবড় ঘটনা? তার গায়ের প্রতিটি শিরা বেজে উঠছে, কাঁপছে মস্তিষ্কের নিউরন। প্রচন্ড রাগে সে স্তম্ভিত, ক্রোধান্বিত।

এমন অবস্থায় আগুনে ঘি ঢালার মতো যুঁথি বলে উঠল,” তোর মাথায় বুদ্ধি বলতে কিচ্ছু নেই উষু। কেন যেচে পড়ে অপমান করতে আমাদের এখানে আনলি বলতো? কাজটা একদম ঠিক হয়নি।”

উষসী উন্মত্ত কণ্ঠে বলল,” কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সেটা তোদের থেকে জানার কোনো দরকার নেই আমার।”

যুঁথিও এবার রেগে গেল,” তাই যদি হয় তাহলে একাই আসতি। আমাদের কেন সাথে করে এনেছিস? এতোই যখন তোর সাহস নেক্সট টাইম তাহলে একা একা আসবি। দেখি কতবড় কলিজা তোর।”

উষসী তার কণ্ঠে রাগের ফোয়ারা নিয়ে বলল,” তোদের কি মনে হয় আমি একা উনাকে ফেস করতে পারব না বলে কাউন্টার হিসেবে তোদের এনেছি?”

শম্পা মৃদু গলায় বলল,” আচ্ছা বাদ দে, তোরা এবার ঝগড়া শুরু করিস না।”

যুঁথি উষসীর পাশেই বসা। সে শম্পার কথা কানেও তুলল না। ঠান্ডা স্বরে বলল,” তা ছাড়া আর কি? তুই একা আসতে ভয় পাচ্ছিলি বলেই আমাদের এনেছিস৷ এটা কি মিথ্যা?”

” অবশ্যই মিথ্যা। তোদের এনেছিলাম কারণ তোরা তো ওই দাম্ভিক লোকটার ডাইহার্ড ফ্যান। কত না বলতি উনি অনেক আন্তরিক, বিনয়ী, সেলিব্রিটি হিসেবে কোনো অহংকার নেই… অথচ এখন তো বাড়িতেই ঢুকতে দিল না।”

যুঁথি গম্ভীর মুখে বলল,” সেটাই স্বাভাবিক। দেশে উনার লক্ষ-কোটি ফ্যান আছে। সবাইকে যদি ঢুকতে দেয় তাহলে তো উনার বাড়িটা লঙ্গরখানায় পরিণত হবে।”

উষসীর ফোন বেজে উঠল। প্রীতমের নাম্বার দেখে সে রিসিভ করার গরজ দেখাল না। তাছাড়া সে ড্রাইভে ব্যস্ত ছিল। যুঁথিই ফোনটা রিসিভ করল। ওই পাশ থেকে প্রীতম বলল,” তোরা কোথায়? শুনলাম সব নাকি একসাথে বেরিয়েছিস?”

যুঁথি বলল” এইতো, গাজীপুরের দিকে আছি।”

” উষু কোথায়? তুই ওর ফোন ধরলি যে?”

” আছে। ড্রাইভ করছে ও।”

” ওহ। তা গাজীপুরে কি করছিস তোরা?”

যুঁথি পুরো ব্যাপার বিস্তারিত জানাল। প্রীতম এসব শুনে প্রচন্ড রেগে গেল। রেগে থাকলে তার কথায় আঞ্চলিক টান চলে আসে। সে বিরক্ত গলায় বলতে লাগল,”তোরা মাইয়া মানুষ বড় আজব কিসিমের প্রজাতি ভাই। বুঝলাম যে পেইন্টিং এর সাথে উষুর থোবড়ার হালকা একটু মিল আছে। তাই বইলা এই ফাতরা বিষয় নিয়া গ্যাঞ্জাম করতে সোজা গাজীপুর চইলা যাবি? কোনো মানে হয় এইসবের?”

যুঁথি শান্ত গলায় বলল,” আমরা তো যাওয়ার আগে জানতাম না। উষু গাড়িতে ওঠার পর আমাদের জানিয়েছে।”

” এই মাইয়ার সবকিছুতে বাড়াবাড়ি। নাকের ডগায় তেজ খালি গড়াগড়ি খায়।”

” একটু সাবধানে কথা বল। ফোন কিন্তু লাউডস্পিকারে আর উষু সব শুনছে।”

প্রীতম চুপসে গেল। বিড়বিড় করে বলল,” ধূর, শা’লি… আগে বলবি না?”

উষসী গমগমে স্বরে বলল,” ফোন রাখ যুঁথি। আগামী একমাস যেন ও আর আমাকে ফোন না করে। তাহলে আমি মোবাইল আছাড় দিবো।”

উষসীর রাগান্বিত কণ্ঠ শুনে প্রীতম নিজেই ভয়ে ফোন রেখে দিল। প্রীতি আর শম্পা এই ঘটনায় চাপা শব্দে হাসতে লাগল। উষসীর মুখ তখনও থমথমে। রাগে সে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। ইয়ামিন ইব্রাহীমের মুখোমুখি হয়ে এই অপমানের জবাব না দেওয়া অবধি তার শরীরের র-ক্ত ঠান্ডা হবে না।

মিসেস শিমলা সকাল সকাল অনেক বাজার নিয়ে এসেছেন। নিজে তদারকি করে তাজা মাছ, মাংস, সবজি কিনেছেন। ছেলেটা এতোবছর পর বিদেশ থেকে ফিরেছে। তিনি ছেলের মনোরঞ্জনের জন্য প্রতিদিন নতুন কিছু করতে চেষ্টা করেন। তবে আজকের আয়োজনের পেছনে একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে আছে। যা ইয়ামিনকে এখনও জানানো হয়নি।

ঘুম ভেঙেই সকালে ইয়ামিন এক কাপ দুধ-চিনি বিহীন আদা চা খায়। তারপর গানের অনুশীলনে বসে৷ খুব শীঘ্রই তার একটা এলবাম বের হতে যাচ্ছে। ইদানিং সে অনেক ব্যস্ত। গান লিখে আর সুর তৈরী করেই তার সকাল কাটে। সেজন্য নীরব পরিবেশ দরকার। কিন্তু আজ সকাল থেকে এতো হল্লা হচ্ছে কেন বাড়িতে? বার-বার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে যাচ্ছে। ইয়ামিন একবার ভাবল বাইরে গিয়ে দেখে আসবে। কিন্তু তার প্রয়োজন হলো না। মিসেস শিমলা নিজেই এলেন। ঘরে ঢুকেই তিনি সর্বপ্রথম প্রশ্ন করলেন,” বাবা, বিয়ে করবি?”

ইয়ামিন হতভম্ব হলো। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে হাসি মুখে উত্তর দিল,” নিশ্চয়ই করব মা। কেন করব না?”

শিমলা নিভলেন। ইতস্তত ভঙ্গিতে বললেন,” আমি কিন্তু মজা করছি না।”

ইয়ামিন বলল,” আমিও না।”

শিমলা কাছে এসে বললেন,” তুই সত্যি বিয়ে করবি?”

ইয়ামিন সহজ-স্বাভাবিক গলায় বলল,” হ্যাঁ। বিয়ে তো একদিন করতেই হবে।”

” আমি যদি বলি আজকেই করতে হবে?”

ইয়ামিন মাথা নেড়ে বলল,” তাহলে আজকেই করব।”

শিমলা বিশ্বাস করতে পারছেন না। নিশ্চিত হতে আবার জানতে চাইলেন,” সত্যি বলছিস? সত্যি তুই বিয়ে করবি?”

ইয়ামিন মায়ের হাত ধরে নরম গলায় বলল,” যদি তুমি এতেই খুশি হও তাহলে করব। জীবনে তোমার কোনো কথা শুনিনি। সবসময় অবাধ্যতা করেছি। তাই আজকে সবকিছুর মূল্য একসাথে পরিশোধ করব। যাও, তোমার কথা রাখতে প্রয়োজনে আজকেই বিয়ে করব আমি।”

আনন্দে শিমলার চোখে পানি চলে এলো। তিনি এতোটাও আশা করেননি। ভেবেছিলেন ছেলেকে বিয়েতে রাজি করাতে না-জানি কত কাঠ-খড় পোড়াতে হয়! কিন্তু ছেলে যে এমন একবাক্যে রাজি হয়ে যাবে তা কে জানতো? শিমলা খুশি হয়ে ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। ইয়ামিন বলল,” এখন একটু নীরবতা চাই মা। আমি একটা গানের লিরিক্স লিখছি যে…”

শিমলা ছেলেকে ছাড়লেন। নিজেকে ধাতস্থ করে চোখ মুছে বললেন,” ঠিকাছে, তুই লিরিক্স লিখ। তবে একটা কথা বলে রাখি। আমি অনেক খুশি হয়েছি। পাত্রী আমার বন্ধবীর মেয়ে। আজ আমি তাদের লাঞ্চে ইনভাইট করেছি। যদি তোর মত থাকে তাহলে আজকেই আকদ করিয়ে ফেলব।”

ইয়ামিন মৃদু হেসে বলল,” শুধু আমার মত থাকলেই হবে? তোমার বান্ধবীর মেয়েরও তো কনসেন্ট থাকতে হবে।”

শিমলা আত্মগরিমায় ঝনঝন করে উঠলেন,” এটা কি কখনও সম্ভব? পৃথিবীর কোনো মেয়ের সাধ্য নেই আমার রাজপুত্রকে রিজেক্ট করবে। তাছাড়া মানতাশা তোকে খুবই পছন্দ করে। তোর গানের সব এলবামের নাম ওর মুখস্ত!”

দুপুরের মধ্যে মানতাশার পরিবার চলে এলো। মানতাশার বাবা, মা, বড়বোন, দুলাভাই মিলে মোট পাঁচজন তারা। প্রথম দেখাতেই বলে দেওয়া যায় মানতাশা রূপবতী রমণী। তবে স্বভাবটা তার একটু বেশিই গায়ে পড়া। সে প্রথম দেখাতেই ইয়ামিনকে বলে বসল,” আপনি আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষ। ”

হবু বরকে ধাম করে মুখের উপর যে হ্যান্ডসাম বলে দিতে পারে সে হয় খুব বেশি বুদ্ধিমতী নয়তো খুব বোকা। মানতাশার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যাপারটা সত্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ মেয়েটা প্রচুর কথা বলে। বুদ্ধিমতী মেয়েরা এতো কথা বলে না। মাত্র আধঘণ্টায় সে নিজের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সব বলে ফেলেছে। তার থেকে একটু নিস্তার পেতে ইয়ামিন নির্জনে এসেছিল। সেখানেও মানতাশা তাকে খুঁজে বের করে ফেলেছে।

এক কথায় ইয়ামিন যেখানে যাচ্ছে, চিনির পিঁপড়ের মতো মানতাশাও সেখানেই ছোঁকছোঁক করে বেড়াচ্ছে। মাত্র এতোটুকু সময়েই ইয়ামিন যথেষ্ট অতিষ্ট। তাহলে সে সারাজীবন এই নির্বোধ মেয়ের সাথে থাকবে কি করে? মেয়েটা এতোক্ষণেও বুঝতে পারেনি যে ইয়ামিন তার কান্ডে বিরক্ত হচ্ছে। একে মুখে বললেও বোঝার কথা না।

ইন্টারকমে টেলিফোন বেজে উঠল। ইয়ামিন তখন লিভিংরুমে ছিল। মানতাশা তার পাশে দাঁড়িয়েই বকবক করে যাচ্ছিল। মূলত তাকে থামানোর উদ্দেশ্যেই ইয়ামিন ফোন হাতে নিল,” হ্যালো।”

নিচ থেকে দারোয়ান বলল,” স্যার, সেদিন একটা ম্যাডাম এসেছিল যে… উনি আজ আবার এসেছেন। বলছেন খুব জরুরী দরকার।”

ইয়ামিন যেন মানতাশার থেকে নিস্তার পাওয়ার একটা বাহানা খুঁজে পেল হঠাৎ। চট করে বলল,” ঠিকাছে… তুমি তাকে ভেতরে এনে বসাও। আমি আসছি।”

ফোন রাখতেই মানতাশা প্রশ্ন করল,” কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

মাত্র ত্রিশমিনিটেই সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়েটি তাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করেছে। যেন তার ত্রিশবছরের বিয়ে করা বউ! ইয়ামিন অস্বস্তি ঠেঁকিয়ে বলল,” নিচে। আমার সাথে দেখা করতে একজন ভিজিটর এসেছে।”

” ছেলে নাকি মেয়ে?”

ইয়ামিন ধৈর্য্য নিয়ে জবাব দিল,” গিয়ে দেখতে হবে।”

উষসী হাত ভাঁজ করে বসে আছে। অপেক্ষায় পা নাড়ছে। তার অদ্ভুত স্বভাব হলো উত্তেজিত অথবা দুশ্চিন্তিত অবস্থায় অনবরত পা নাড়ানো। তাকে বাগানের সোফায় বসতে দেওয়া হয়েছে। এই জায়গাটা বেশ সুন্দর। বৃষ্টি হলে এই সোফাগুলো কি সরিয়ে ফেলা হয়? কে জানে? আজকে আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। এইখানে বসে কফি খেতে দারুণ লাগার কথা। ঠান্ডা বাতাস চারদিকে। ফুলের গন্ধে মো মো করছে। যদিও উষসীর এই মুহূর্তে এসব ভালো লাগছে না। পেছন থেকে একটা নিরেট কণ্ঠ বলে উঠল,” এক্সকিউজ মি।”

উষসী উঠে দাঁড়িয়ে গেল। পেছনে ফিরে ইয়ামিনকে দেখে সে সামান্য অপ্রস্তুত হলো। ইয়ামিন বিস্মিত কণ্ঠে বলল,” আরে… আপনি? সেদিন তাহলে আপনিই এসেছিলেন?”

উষসী বিব্রত ভঙ্গিতে গায়ের ওরনা ঠিক করতে লাগল। তার হঠাৎ নর্ভাস লাগছে কেন বুঝতে পারছে না। ইয়ামিন কাছে এসে খুব আন্তরিক ভঙ্গিতে বলল,” বসুন প্লিজ। ”

এই কথা বলে সে নিজেই বসল। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে বলল,” তারপর হঠাৎ কি মনে করে? সেদিন তো বলেছিলেন আমার মতো সেলিব্রিটিদের নাকি আপনি ভাউ দেন না? তো আজ হঠাৎ আমাকে এতো পাত্তা? একদম বাড়িতে চলে এসেছেন! কি লাগবে, অটোগ্রাফ নাকি সেলফি?”

ইচ্ছে করেই ফোঁড়ন কাটল ইয়ামিন। উষসী চোয়াল শক্ত করে বলল,” আপনি খুব ভালো করেই জানেন আমি কেন এসেছি। অযথা নাটক করবেন না।”

” মানে? কেন এসেছেন আপনি?”

উষসী সরুদৃষ্টিতে তাকাল। রাগে গজগজ করে বলতে লাগল,” শ্রীমঙ্গলে আপনি আমার পোর্ট্রেট আঁকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি অনুমতি দেইনি। ব্যাপারটা এখানেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ আপনি কি করলেন? এর দশদিন পরেই নিজের পেইন্টিং-এ আমার মুখ বসিয়ে দিলেন?”

” আপনার মুখ আমার পেইন্টিং-এ বসিয়েছি মানে?”

” একদম অস্বীকার করবেন না। আপনার পেইন্টিং এর পুকুরে সাতার কাটা ওই মেয়েটির মুখের সাথে আমার মুখের সম্পূর্ণ মিল। সবাই মিল পেয়েছে। আমার বন্ধুরাও একই কথা বলেছে। আপনার যদি সাহস থাকে তাহলে নিয়ে আসুন ওই পেইন্টিং। এখনি প্রমাণ দিচ্ছি আমি।”

মানতাশা ততক্ষণে বাগানে হাজির হয়েছে। তারা যেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে তার থেকে একটু দূরে মানতাশা দাঁড়াল। খুব কৌশল করে সে কথার শোনার চেষ্টা করছে। ইয়ামিন ব্যাপারটা টের পেতেই উঠে দাঁড়িয়ে গেল। উষসীর কাছাকাছি এসে কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে হঠাৎ বলল,” প্রমাণ লাগবে না। ওটা আপনারই পেইন্টিং।”

উষসী অগ্নিশর্মা রূপ ধারণ করল মুহূর্তেই। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,” আপনি এতোবড় একটা কাজ কিভাবে করতে পারলেন তাও আমার অনুমতি ছাড়া? কেন করলেন?”

” কারণ ভালোবাসি।” ইয়ামিন সাবলীল ভঙ্গিতে বলল।

“কি?” উষসীর চোয়াল ঝুলে পড়ল। চোখ দু’টো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসবে।

ইয়ামিন কাছে এসে তার হতভম্ব চেহারাটা সময় নিয়ে দেখল। তারপর চিবুক ধরে মুখটা উপরে তুলে বলল,” প্রথম দেখাতেই আমি প্রেমে পড়ে গেছি। ভালোবাসি তোমাকে৷ বলতে পারো লভ এট ফার্স্ট সাইট… বা হোয়াটএভার। মেলোডি আর লিরিক্স ছাড়া যেমন গান কল্পনা করা যায় না তেমন তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কারো মুখ কল্পনা করতে পারি না। তুমি আমার রঙতুলির একমাত্র চিত্ররূপসী।”

উষসী হতচকিত। গলায় জমাট বেঁধে গেল শব্দ। এর মধ্যেই ইয়ামিন তার ডানগালে খুব আলতো করে একটা চুমু দিয়ে ফেলল। উষসীর তখন বিস্ময়ে হিঁচকি ওঠার উপক্রম। হৃদয়ে আশ্চর্য অনুভূতিদের হিড়িক পড়ে গেছে।বড় বড় চোখে সে তাকিয়ে নির্ণিমেষ।

এদিকে মানতাশা এইসব দেখে রেগে-মেগে ঘরের দিকে চলে যাচ্ছে। ইয়ামিন তার যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল। সে পুরোপুরি চোখের আড়াল হতেই উষসীকে ছেড়ে তিনহাত দূরে সরে দাঁড়াল ইয়ামিন। তীব্র অস্বস্তিতে আমতা-আমতা করে বলল,” আই এম স্যরি। কিন্তু আমি হেল্পলেস। এটা আমি বাধ্য হয়ে…”

ইয়ামিন তার সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে পারল না। একজন গৃহ পরিচারক ট্রে-তে করে দুইকাপ কফি নিয়ে এসেছিল। সেখান থেকে একটা কাপ তুলে উষসী সটান করে ইয়ামিনের মুখে ছুঁড়ে মারল। যন্ত্রণায় কাতরে উঠল ইয়ামিন। পুড়ে গেল তার গ্রীবাদেশ থেকে বক্ষস্থল।

উষসী নিজের ডান গালটা মুছে খরখরে শুকনো গলায় উচ্চারণ করল,” স্কাউন্ড্রেল!”

সে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না। দ্রুত পায়ে বাইরে চলে এলো। গাড়িতে উঠেই হাত দিয়ে কয়েকবার নিজের গাল ডলতে লাগল। যেন গালের চামড়া তুলে ফেললেও মেজাজ ঠান্ডা হবে না! হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল। যুঁথির নাম্বার ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে। উষসী কাঁপা হাতে ফোন সিরিভ করল। ওই পাশ থেকে যুঁথি প্রবল আগ্রহ নিয়ে শুধাল,” কিরে, আজকেও নাকি তুই গেছিস? ঢুকতে দিয়েছে ভেতরে?”

উষসী অস্ফুট স্বরে আওড়াল,” হুম।”

যুঁথি উত্তেজিত হয়ে বলল,” রিয়েলি? কি হলো তারপর? ইয়ামিন ইব্রাহীমের সাথে দেখা হলো?”

রাগে, ক্ষোভে উষসীর চোখ ফেটে তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। যুঁথি কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারছে না। তুমুল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেই চলল,” উনাকে পেইন্টিং-এর ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিস? কিছু বলেছে?”

কপট রাগ নিয়ে উষসী বলল,” ওটা আমারই পেইন্টিং ছিল।”

” কি? সিরিয়াসলি?”

” হুম। উনি বলেছেন উনি নাকি আমাকে ভালোবাসেন। সেজন্য আমার ছবি এঁকেছেন। আমার মুখ ছাড়া অন্যমুখ নাকি কল্পনাও করতে পারেন না। এসব বলে আমার গালে চুমু দিয়েছেন…”

শেষ কথা বলার সময় উষসীর কণ্ঠ নিভে এলো৷ গালে হাত রাখল সে পুনরায়। আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখল। ওদিকে যুঁথি হাসতে হাসতে ভেঙে পড়ছে। রুদ্ধ কণ্ঠে বলল,” তারপর? এই ঘটনা কি ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছিস নাকি জেগে থেকেই?”

উষসী প্রত্যুত্তর করল না। সে বুঝতে পারল যুঁথি তার কথা ফাজলামি ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বাস করেনি মোটেও। তাছাড়া এটা বিশ্বাসযোগ্য কোনো ঘটনাও নয়। কিন্তু উষসী তার চোখের পানি সামলাতে পারছে না। ফিসফিস করে সে ইয়ামিনকে অভিশাপ দিল,” বদমাশ,তোর ঠোঁট পুড়ে যাক, জীভ ঝলসে যাক!”

চলবে