#উষসী_হাসবে_বলে (২৫)
লিখা- Sidratul Muntaz
বাতাসের গতিতে বাড়ি থেকে বের হয়েছে উষসী। গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করতে গিয়ে আর সময় নষ্ট করেনি। মেইন গেইট থেকে বেরিয়েই রিকশায় উঠে গেল। তখন হঠাৎ মনে পড়ল সে হ্যান্ডব্যাগ আনেনি। এখন ভাড়া দেবে কি করে? নিজের উপর বিরক্তির সীমা রইল না।
এখন ফিরে যাওয়াও সম্ভব নয়৷ তাকে খুব দ্রুত হেড অফিসে পৌছাতে হবে। অনবরত ইয়ামিনের নাম্বার ডায়াল করছে সে। রিকশাচালক মামাকে তাগাদা দিয়ে বলল,” দ্রুত চলুন মামা। দ্রুত। একজনের জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমি যদি দ্রুত না যাই তাহলে বাঁচাতে পারব না তাকে।”
বৃদ্ধ রিকাশাচালক উষসীর কাঁদুনী অবাক হয়ে দেখছেন। বাচ্চা মেয়েটা অসহায়ের মতো কেমন যেন করছে। আহারে! মেয়েরা বাবা আর স্বামী ছাড়া কারো জন্য এমন উতলা হয় না। এই মেয়ের বিয়ে হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না। তাহলে কার জন্য তার এই আহুতি? বাবা না প্রেমিক?
উষসী বিদ্বিষ্ট হয়ে উঠল। ইয়ামিন কেন ফোনটা ধরছে না একবার? এই ছেলেটা যদি তার একটা কথাও শুনতো! এই শীতের মাঝেও উষসী ভীষণ ঘামছে। মাথা ভনভন করে ঘুরছে তার। অবশেষে ইয়ামিন ফোনটা ধরল।
উষসী প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠল,” আপনি কোথায়?”
ওই পাশ থেকে ইয়ামিনের চনমনে গলা শোনা গেল,” এইতো, তোমাদের এদিকেই আছি। বসুন্ধরা পান্থপথ। তোমার দুলাভাইয়ের অফিসের সামনে।”
এমনভাবে বলছে যেন শ্বশুরবাড়িতে জামাই আদর খেতে গেছে সে। অসহ্য! উষসী দাঁতে দাঁত পিষল। ভ*য়ে আর রাগে রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে বলল, ” ওখানে আপনি কি করছেন?”
ইয়ামিন বেশ স্বাভাবিক গলায় বলল,” একটা কাজে এসেছিলাম। আমার পরিচিত একজন প্রডিউসারের সাথে। কেন? তোমার কি হয়েছে উষু? আর ইউ অলরাইট? এভাবে হাঁপাচ্ছো কেন?”
উষসী বড় শ্বাস নিল। উত্তেজনায় যেন বুক ফেটে যাবে। ইয়ামিন এখনও ঠিক আছে এই ব্যাপারটাই বিশ্বাস হচ্ছে না। হঠাৎ সে অবাক হয়ে শুধাল,” প্রডিউসারের সাথে মানে?”
” হ্যাঁ। ওই তোমাদের কোম্পানির এডভারটাইজের জন্য। অনেকদিন ধরেই জাদিদ ভাই বলছিল বাংলাদেশে এলে যেন তার সঙ্গে দেখা করি। আমি শিডিউল মেলাতে পারিনি। আজকে হয়ে গেল হঠাৎ! তোমাদের অফিসে আসব এটা ভাবিনি।”
উষসী চুপসানো গলায় বলল,” ও। তাহলে এজন্য ভাইয়ার অফিসে এসেছেন আপনি?”
” তুমি কি ভেবেছো? বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি?” ইয়ামিনের কণ্ঠে উপহাস।
উষসী লজ্জিত হলো। অস্বস্তিতে মুখ এতোটুকু হয়ে গেল। শুকনো গলায় বলল,” আপনি তৃষাণ ভাইয়ের সাথে ছাদে কেন গেছিলেন?”
” শ্যুটিং রুফটপে করার প্ল্যান ছিল। তাই ছাদের এনভায়রনমেন্ট দেখতে যাওয়া। তুমি এতোকিছু কিভাবে জানলে? কোথায় তুমি?”
উষসী থমথমে গলায় বলল,” আহমেদ ভাই হঠাৎ ফোন করে আমাকে বললেন আপনি ভাইয়ার অফিসে এসেছেন। ভাইয়া আপনাকে নিয়ে ছাদে যাচ্ছেন। এসব শুনে কি ভ*য় পেয়ে গেছিলাম জানেন?”
” আহমেদ ভাই? মানে সুইজারল্যান্ডে এসেছিলেন উনি?”
” হুম৷ ভাইয়ার ডানহাত। উনি তো আপনাকে ভালো করে চেনেন। সম্ভবত আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারেও জানেন। নাহলে আপনাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন দিবেন কেন?”
” কিন্তু উনি জানলেন কিভাবে?”
” তা আমি জানি না। আচ্ছা, ভাইয়া কি বলেছে? আপনাকে চিনতে পেরেছে নাকি?”
ইয়ামিন ছোট্ট করে জবাব দিল,” হুম।
উষসী স্বস্তিময় হেসে বলল,” তারপর?”
” তারপর কিছুই না। জাদিদ ভাই কথা বলছিল। আর আমি চুপ করেছিলাম। কাজটা আমি নেইনি। অন্যকাউকে নেওয়া হবে সম্ভবত।”
” আপনি ইচ্ছে করেই নিষেধ করেছেন তাই না?”
” হুম।”
” কেন?”
রিকশা থেমে গেল ঠিক তৃষাণের অফিসের সামনে এসেই। ইয়ামিনও তখন মেইন গেইটের সীমানা পেরিয়ে বের হচ্ছিল। চোখাচোখি হয়ে গেল দু’জনেই। ইয়ামিন তাকে দেখেই হাত নাড়ল। উষসীও নাড়ল হাত। ইয়ামিন লম্বা পা ফেলে এগিয়ে দ্রুত। উষসী ঠোঁট উল্টে বলল,” দুশ্চিন্তায় ব্যাগ আনতে ভুলে গেছি। ভাড়াটা দিয়ে দিন।”
ইয়ামিন হেসে ওয়ালেট বের করল। উষসী আশেপাশে তাকাচ্ছে। তাদের আবার কেউ দেখে ফেলবে না তো? ভ*য় করছে খুব।
“কোথায় আপনার প্রোডিউসার!”
ইয়ামিন হালকা গলায় বলল,” ভেতরে আছে।”
” আপনি বের হয়ে এসেছেন কেন?”
ভাড়া মেটানোর পর রিকশাচালক চলে গেল। ইয়ামিন চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,” তোমার ফোন রিসিভ করার জন্য বের হয়েছি। এতোবার করে ফোন দিচ্ছিলে তুমি!”
“ও। আপনি কাজটা নিলেন না কেন? তাহলে ভাইয়ার সাথে সম্পর্কটা একটু ইজি হতে পারতো।”
ইয়ামিন একটু শুকনো হেসে বলল,”তোমার ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্ক ইজি হওয়ার মতো না উষসী!”
তার কণ্ঠ থেকে আক্ষেপ ঝরে পড়ছে। উষসীর মন খারাপ হয়ে গেল। ম্লান হাসল সে। ইয়ামিনের কথা শুনে মনে হচ্ছে, ইহজনমে তাদের মিলন সম্ভব নয়। পুনর্জন্ম বলে কিছু যদি থাকতো তাহলে বোধহয় সম্ভব হলেও হতে পারতো।
উষসীর মাঝে মাঝে চিন্তা করতে ভালো লাগে যে ইয়ামিন আর তার পরিচয়টা খুব অন্যরকম হলে কেমন হতো? তার পরিবারের সাথে ইয়ামিনের কোনো পূর্ব পরিচয় থাকতো না। ঝামেলাহীন প্রেম হতো তাদের। তারপর একদিন বিয়ে। জীবন হতো স্বপ্নময়।
অথচ এখন, চাইলেও তারা বিয়ে নিয়ে চিন্তা করতে পারছে না। সেই কথা ভাবলেও উষসীর বুকে রণঢাক বেজে ওঠে। সর্বনাশের ইঙ্গিতে কাঁপতে থাকে বুক। পাশে বসা ইয়ামিনের দিকে তাকায় উষসী।
উদাসীনের মতো ড্রাইভ করছে ইয়ামিন। তার দৃষ্টিতে বিষণ্ণতা। দেখে বোঝাই যাচ্ছে তার মন ভালো নেই। তৃষাণের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই এই অবস্থা। আচ্ছা, তৃষাণ কি তাকে এমন কিছু বলেছে যার মাধ্যমে সে বুঝতে পেরেছে তাদের বিয়ে কোনোদিন সম্ভব না? উষসীর প্রশ্ন করার সাহস হলো না।
মা অবিরত ফোন দিয়ে যাচ্ছেন। উষসী রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে ধমকে উঠলেন যুঁথি বেগম, ” কিরে উষু, ভার্সিটি থেকে ফিরেই কোথায় বের হয়েছিস আবার? ভাত পর্যন্ত খেলি না৷ ফোন দিচ্ছি তাও ধরছিস না? তোর সমস্যা কি?”
উষসী নরম গলায় বলল,” প্রীতিদের বাসায় এসেছি মা। ও একটু অসুস্থ তো। ”
” সেটা আমাকে বলে গেলে কি হতো না? আমি ভাত বেড়ে বসে আছি সেই কখন থেকে। তারপর দারোয়ানের থেকে শুনলাম তুই নাকি বের হয়েছিস। আমাকে কি দুশ্চিন্তায় ফেলে মেরে ফেলতে চাস?”
” স্যরি মা৷ চিন্তা কোর না। আমি এই একটু পরেই আসছি।”
” ঠিকাছে জলদি আয়।” তিক্ত মেজাজ নিয়ে ফোন রাখলেন যুঁথি বেগম। উষসী হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। ইয়ামিন নিরস দৃষ্টিতে বলল,” তোমাকে কি বাসায় দিয়ে আসব?”
উষসী মাথা নাড়ল,” হুম৷ মা চিন্তা করবে নাহলে।”
“ঠিকাছে।”
এরপর আবারও নীরবতা। কারো মুখে রা নেই। শূন্যতা ভর করেছে হৃদয়ে। এতোদিন ইয়ামিনের কথায় উষসী যেই আত্মবিশ্বাসটুকু পেতো সেটাও এখন পাচ্ছে না আর। কেমন যেন উলোটপালোট লাগছে সবকিছু। অথচ এমনই তো হওয়ার কথা ছিল। চূড়ান্ত বিপদের আশঙ্কা থাকবে জেনেও তারা নিজেদের অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিয়েছিল। তাহলে আজ কেন এতোটা হতাশ লাগছে?
ইয়ামিন কিছুই বুঝতে পারছে না। উষসীর যেই উচ্ছল হাসির শব্দ তাকে এতোটা প্রেরণা যোগায়, যেই মায়াবী হাসির মায়ায় সে আটকে থাকতে চায় জনমভর, সেই জাদুময় হাসিই যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে লাভ কি তাকে পেয়ে? ইয়ামিন হাসি-খুশি, চঞ্চল উষসীকেই পেতে চায় নিজের জীবনে। মুষড়ে পড়া নিষ্প্রাণ উষসীকে নয়।
আর উষসী তার পরিবারকে যত ভালোবাসে তাতে মনে হয় না সে কখনও তাদের ছেড়ে থাকতে পারবে। কিন্তু তাদের না ছাড়তে পারলে যে ইয়ামিনের জীবনে সে কখনও আসতে পারবে না। সুতরাং তাদের একসঙ্গে হওয়া অসম্ভবই বটে।
ইয়ামিন হঠাৎ বলে ফেলল,” আচ্ছা উষসী, যদি তোমার ফ্যামিলি কখনও আমাদের রিলেশন না মানে তাহলে কি হবে?”
উষসী ভীত স্বরে বলল,” হঠাৎ এই কথা কেন বলছেন?”
” এমনি। ধরো কেউ মানল না। তখন কি করবে তুমি?”
উষসী কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। ইয়ামিন কেমন ভাবলেশহীন হয়ে বসে আছে। তার মুখে এমন প্রশ্ন মানাচ্ছে না। সে-ই তো উষসীকে আশ্বাস দিয়ে এসেছে এতোদিন। তাহলে আজ কেন সে নিজেই এতো হতাশ?
উষসী বলল,” জানি না। কখনও ভাবিনি এসব।”
ইয়ামিন দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বলল,” তখন কি তুমি সবাইকে ছেড়ে একেবারে আমার কাছে চলে আসতে পারবে?”
উষসী বিস্মিত হয়ে চাইল। এই কথা কল্পনাও করতে পারে না সে। ইয়ামিন গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে। উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে তার দিকে। উষসী কথা বলতে পারছে না। যেন গলায় একশো একটা কাঁটা আটকে রয়েছে তার। গাঢ় নীরবতা বিচ্ছিন্ন করে ফোন বেজে উঠল।
উষসী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ইয়ামিন রিসিভ করল তার ফোন। ওই পাশ থেকে কে কি বলল তা উষসী শুনল না। তবে ইয়ামিন মুহুর্তেই খুব বিচলিত হয়ে উঠল,” হোয়াট? আবার! আচ্ছা, আমি এখনি আসছি।”
ফোন রাখা মাত্রই উষসী জিজ্ঞেস করল,” কোনো ব্যাড নিউজ নাকি?”
ইয়ামিন ক্লান্ত গলায় বলল,” আমার জীবনটাই ব্যাডবাজ হয়ে গেছে উষসী। বিপদ একের পর এক লেগেই আছে।”
সিটে মাথা ঠেঁকিয়ে কপালে হাত রাখল সে। যেন ভীষণ বিরক্ত! উষসী কোমল গলায় শুধাল,” কি হয়েছে? আমাকে বলুন!”
ইয়ামিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল একটা। সে ভেবেছিল এই সমস্যা নিজেই সমাধান করে ফেলবে। কিন্তু দিনকে দিন এটা জটিল রূপ ধারণ করছে। উষসীকে না জানালে পরে আরও জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই সে স্পষ্ট করেই বলল,” ফাবিয়াহ নামের একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আরও তিনমাস আগের কথা। আমাদের সুইজারল্যান্ড যাওয়ারও আগে।”
উষসী চমকে তাকাল। ইয়ামিন বলল,” মায়ের রিকয়েস্টে আমি মেয়েটার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গিয়েছিলাম৷ তুমিও ছিলে সাথে। মনে আছে? সেদিন তোমার গাড়িতে করে যে গিয়েছিলাম?”
উষসী ধীরগতিতে মাথা নাড়ল। তার কপালের কুঞ্চন গাঢ় হলো। ইয়ামিন তিক্ত গলায় বলল,” সেদিন হয়তো কোনো সাংবাদিক ওখানে ছিল৷ আমাদের ছবি তুলে পেপারে ছাপিয়ে দিয়েছে। এমন আজে-বাজে নিউজ করেছে যে ফাবিয়াহ এসব সহ্য করতে পারছে না। সে এই নিয়ে দুইবার সুইসাইড এটেম্পট করেছে। এই মাত্র মা ফোন করে হসপিটালে যেতে বলল। ফাবিয়াহ অসুস্থ! আমি কি করব উষসী? এই সবকিছুর জন্য বাবা আমাকে ব্লেইম করছে। কিন্তু আসলেই কি এসবে আমার কিছু করার ছিল?”
উষসী পুরোপুরি নিশ্চুপ। তার বুকের ভেতর উদ্দাম বেগে দামামা বাজতে শুরু করেছে। সবকিছু কেমন ঝাপসা লাগছে। মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে। ইয়ামিন রাগে স্টেয়ারিং-এ তীব্র আঘাত করল। কিড়মিড় করে বলল,” যে এই ক্যান্ডালটা বের করেছে সেই স্টুপিডকে খুঁজে পেলে আমি নিজের হাতে খু’ন করতাম। আই স্যুয়্যার!”
উষসী ঢোক গিলল একটা। তারপর মিনমিন করে বলল,” আমি বাসায় যেতে চাই।”
চলবে
#উষসী_হাসবে_বলে (২৬)
লিখা- Sidratul Muntaz
ঢাকা মেডিকেলের নির্দিষ্ট কামরায় শায়িত অবস্থায় আছে ফাবিয়াহ। তাকে সেলাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। শরীর ভীষণ দূর্বল। তিনদিন ধরে সে একদমই খাওয়া-দাওয়া করছে না। নির্ঘুম রাত্রীযাপনের কারণে চোখের নিচে কালো বলিরেখা সৃষ্টি হয়েছে।
ইয়ামিনকে দেখেই ফাবিয়াহর বাবা ডিআইজি মুশফিক মির্জা এগিয়ে এলেন। উষসী আর ইয়ামিন হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। মুশফিক ইয়ামিনের বাহু ধরে টেনে তাকে নিজের মেয়ের কেবিনের সামনে এনে বললেন,” দেখো আমার মেয়ের অবস্থা। জ্যান্ত লাশের মতো হয়ে গেছে। যদি আমার মেয়ের কিছু হয়.. তোমাকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো। স্কাউন্ড্রেল!”
রাগে উষসীর চোখ কুঞ্চিত হলো। ভদ্রলোক ইয়ামিনের সাথে এভাবে কেন কথা বলছেন? এখানে তো ইয়ামিনের কোনো দোষ ছিল না। উষসীর জন্য হয়েছে সব। তারই বকা খাওয়া উচিৎ।
ফাবিয়াহ’র মা নেই। ছোট থেকেই সে ফুপুর কাছে মানুষ। ডিভোর্সের পর থেকে ফুপু জবেদা খানম আজীবনের জন্য ভাইয়ের বাসায় থেকে গেলেন। মায়ের আদর দিয়ে বড় করতে লাগলেন আদরের ভাতিজিকে।
জবেদা একপাশে মুখে আঁচল চেপে বসে আছেন। মিসেস শিমলা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনিও কিছু বলছেন না দেখে উষসী সত্যি আশ্চর্য হলো। ইয়ামিন কেবিনের ভেতরে ঢুকল। উষসী মূর্তির মতো এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।
ফাবিয়াহ দরজার দিকে চেয়ে ছিল। ইয়ামিনকে দেখেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল অন্যদিকে। ইয়ামিন অপরাধী স্বরে বলল,” আই এম স্যরি ফাবিয়াহ। আমার জন্য তোমার ক্যারিয়ারের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। বাট ডন্ট ওরি। আমি সব ঠিক করার চেষ্টা করছি।”
” তাতে কি হবে? আমার গায়ে লাগা কলঙ্ক মুছে যাবে?”
মুখ ঘুরিয়ে সরাসরি ইয়ামিনের চোখের দিকে তাকাল ফাবিয়াহ। ইয়ামিন ইতস্তত করে বলল,” এখানে আমারও যথেষ্ট হ্যারেসমেন্ট হয়েছে। তোমার জন্য ব্যাপারটা যত অসম্মানজনক.. আমার জন্যও তাই। ট্রাস্ট মি, আমি কখনোই চাইনি এমন কিছু হোক।”
ফাবিয়াহ থমথমে গলায় বলল,” আমার আপনাকে কিছুই বলার নেই।”
ইয়ামিন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বের হয়ে এলো। উষসী বাইরে তখনও দাঁড়িয়ে আছে একভাবে। তার খুব কষ্ট লাগছে। এই সবকিছুর জন্য একমাত্র সে দায়ী! একটা মেয়ের জীবন বিপণ্ণ হওয়ার পথে কেবল তার জন্য! শিমলা করিডোরের জানালা থেকে বাইরে তাকিয়ে বললেন,” তোর বাবা এসেছে ইয়ামিন।”
উষসী দেখল বড় একটা গাড়ি পার্কিং লটের কাছে এসে থেমেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত হলেন ইহতেশাম সাহেব। তিনি ইয়ামিনকে এক নজর দেখলেন। সে তখন উষসীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি উষসীকেও এক নজর দেখলেন। তারপর তাদের কারো সাথে কোনো কথা না বলেই ডিআইজি মুশফিক মির্জার থেকে ফাবিয়াহর খোঁজ নিতে শুরু করলেন,” ফায়া মা কেমন আছে এখন?”
মুশফিক মাথা নেড়ে বললেন,” ভালো। এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে শারীরিক সুস্থতার চেয়েও মানসিক সুস্থতা ওর জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
কথাটা বলতে বলতে মুশফিক তাকালেন ইয়ামিনের দিকে। ইহতেশামও আঁড়চোখে চাইলেন। তারপর একটা দম নিয়ে বললেন,” আমি একটু ফায়া মায়ের সঙ্গে দেখা করব।”
” হুম।”
মুশফিক আর ইহতেশাম ভীষণ ঘনিষ্ট বন্ধু৷ ইয়ামিনও ছোট থেকে ভদ্রলোককে ভালো করে চেনে। এর অবশ্য কারণ আছে। প্রায় আট-নয় বছর আগে একবার অন্য কলেজের ছেলেদের সাথে মা’রামারি করায় ইয়ামিনকে থানায় যেতে হয়েছিল। তখন মুশফিক মির্জা নানান উপদেশ দিয়েছিলেন ইয়ামিনকে।
” তোমার বাবা সমাজের একজন অতি সম্মানীয় ব্যক্তি। তার একমাত্র ছেলে হয়ে এমন গুণ্ডামি, বদমাইশি করা কি তোমাকে মানায়?”
ইয়ামিন চোখ-মুখ শক্ত করে বলেছিল,” আমাকে কিসে মানায় তা আমি ভালো করেই জানি। আপনার থেকে উপদেশ নেওয়ার প্রয়োজন দেখছি না।”
সেদিন থেকেই মুশফিক তাকে ‘বেয়াদব’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তবে বয়সে ছোট বলে মাফও করে দিয়েছিলেন। তিনি কখনও চাননি ইয়ামিনের মতো ছেলের সাথে নিজের আদরের মেয়েটাকে বিয়ে দিতে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে বিয়ে না দিয়েও উপায় নেই। তাছাড়া সবথেকে বড় কথা, ফাবিয়াহ এই বিয়েতে রাজি। স্ক্যান্ডাল ভাইরাল হওয়ার আগে থেকেই সে রাজি ছিল।
কিছুক্ষণ শিমলা এবং ইহতেশাম কেবিনের ভেতর ফাবিয়াহর সাথে সময় কাটালেন। ইয়ামিন বলল,” এখানে আর আমাদের থেকে কাজ নেই। তোমাকেও বাসায় ফিরতে হবে। চলো, আমরা বরং চলে যাই।”
উষসী পা নাড়াতে পারছে না। তার ভেতর বিষাক্ত একটা জড়তা কাজ করছে। সে কি করবে? কিভাবে সত্যিটা জানাবে ইয়ামিনকে? অন্তত ফাবিয়াহর কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ। তার ভুলের জন্য একটা নিষ্পাপ মেয়ে কেন শাস্তি পাবে? ইয়ামিন উষসীর হাত ধরে হসপিটাল থেকে বের হয়ে যেতে উদ্যত হলো। তখনি পেছন থেকে ইহতেশাম ডাকলেন,” ইয়ামিন, এদিকে এসো। তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।”
ইয়ামিন উষসীর হাত ধরেই এগিয়ে গেল। ইহতেশাম উষসীর দিকে চেয়ে রুঢ় বাচ্যে বললেন,” আমি আমার ছেলের সাথে ব্যক্তিগত কথা বলতে চাই।”
উষসী দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইল৷ কিন্তু ইয়ামিন সেটা হতে দিল না। শক্ত করে সে ধরেই রাখল হাতটা। অস্বস্তির সীমা রইল না উষসীর। মুখটা হতাশায় ছেয়ে গেল। ইয়ামিন কঠিনমুখে বলল,” আমার জীবনে উষসীর থেকে ব্যক্তিগত কিছু নেই বাবা। তুমি যা বলার ওর সামনেই বলো। নাহলে বলার দরকার নেই।”
ইহতেশামের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। তবে তিনি ধৈর্য্যচ্যুত হলেন না। ছেলের জেদ সম্পর্কে তিনি অবগত। জেদের বশে ছেলে কি করতে পারে, কতটা পারে, তা তিনি ভালোই জানেন। তাই আপাতত ঠান্ডা মাথায় বললেন,” বাড়ি গিয়ে কথা হবে।”
এইটুকু বলেই তিনি চলে যেতে নিচ্ছিলেন। তখন ইয়ামিন দরাজ গলায় বলল,” যেই বাড়িতে আমার মতের কোনো দাম নেই, সেই বাড়িতে আমি কখনও ফিরব না।”
ইহতেশাম কেবল দাঁড়িয়ে শুনলেন। তারপর চলে গেলেন লিফটের দিকে। উষসী ইয়ামিনের হাত ছাড়িয়ে বড় করে দম নেওয়ার চেষ্টা করল। তার কেমন দম বন্ধ লাগছে আজ।
” আর ইউ অলরাইট?” ইয়ামিন উৎকণ্ঠা প্রকাশ করল। আদুরে ভঙ্গিত হাত রাখল উষসীর গালে। উষসী মাথা নেড়ে আশেপাশে চাইল। তারপর অনুরোধের স্বরে বলল,” আমি কি একটু ফাবিয়াহ আপুর সাথে দেখা করতে পারি? প্লিজ”
ইয়ামিন অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করল,” তুমি ওর সাথে দেখা করে কি করবে?”
” আমি দেখা করতে চাই!”
ইয়ামিন তাকিয়ে রইল। তারপর কি যেন ভেবে ঠোঁট উল্টে বলল,” ঠিকাছে যাও। কিন্তু কেউ যেন না দেখে।”
জবেদা শিমলার সাথে একটু দূরে বসে আছেন। মুশফিক সাহেব এখানে নেই। সম্ভবত তিনি ফাবিয়াহর জন্য খাবার আর ঔষধ আনতে গেছেন। উষসী এই সুযোগেই ভেতরে ঢুকল। খুব আস্তে-ধীরে শব্দহীন গতিতে পা টিপে টিপে কাছে যেতেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করল ফাবিয়াহ গুণগুণ করছে।
মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর। মাথা ভরা কালো- কোঁকড়া চুল, ফরসা- নিখুঁত গায়ের রঙ। চোখের চশমাটা আপাতত নেই। তার মুখ দেখে মোটেই মনে হচ্ছে না যে সে দুঃখী। বরং বেশ সুখে বসে মোবাইল টিপছে আর গুণগুণিয়ে গাইছে,” তুমি আমার মনের মানুষ, মনেরই ভেতর…”
উষসীর বিস্ময়ের সীমা রইল না। এই মেয়ের নাকি মানসিক অবস্থা প্রচন্ড দূর্বল? সে নাকি আজ সকালেই আত্ম’হননের চেষ্টা করেছিল? অথচ সে কি-না এখন দিব্যি ভালো মানুষের মতো মনের সুখে গান গাইতে গাইতে মাথা দোলাচ্ছে? অবিশ্বাস্য ব্যাপার! উষসী আশ্চর্য হয়ে ফাবিয়াহর কান্ড দেখতে লাগল। হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেল ফাবিয়াহর পঞ্চইন্দ্রিয়। সে একটু ঘুরে তাকাতেই উষসীকে দেখে চমকে উঠল। বিরক্ত গলায় বলল,” কে আপনি?”
” লামিয়া ইমরোজ উষসী। শর্ট ফর্মে সবাই উষু বলে ডাকে আমাকে।”
উষসীর স্পষ্ট জবাব শুনে ফাবিয়াহ বিব্রত হলো। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল৷ ধীরে ধীরে তার ভ্রু এর কুঞ্চন মিলিয়ে যায়। মুখের পেশি টানটান হয়। সে খানিক বিদ্বেষপূর্ণ গলায় বলল,” ও, তুমিই তাহলে ইয়ামিনের গার্লফ্রেন্ড?”
উষসী মুচকি হাসল৷ তার হাসিতে আত্মগৌরব! এতো ভালো লাগে কেন যখন কেউ তাকে ইয়ামিনের গার্লফ্রেন্ড বলে সম্বোধন করে? পুরো শরীরে একটা আনন্দের স্রোত বয়ে যায়। ভীষণ শান্তি অনুভব হয়। সে ফাবিয়াহর ঠিক বরাবর একটা চেয়ার টেনে বসল। হৃষ্টচিত্তে জিজ্ঞেস করল,” কেমন আছো?”
” ভালো। ” ফাবিয়াহ সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল। এই মুহূর্তে তার মেয়েটাকে সহ্য হচ্ছে না। সে উষসীর সাথে কথোপকথন দীর্ঘ করতে চায় না। তাই ফোন নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করল।
উষসী হাসি মাখা গলায় বলল,”তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি যে তুমি ভালো আছো। শুধু শুধুই এতো টেনশন করছে সবাই। কিন্তু তুমি তো বেশ মনের আনন্দেই আছো। গান গাইছো। এই প্রথমবার আমি কোনো আত্ম’হত্যার চেষ্টাকারীকে এতো খুশি দেখলাম।”
ফাবিয়াহ জবাব দিল না। উষসী একটু ঝুঁকে এসে বলল,” পুরোটাই নাটক, তাই না? ইয়ামিনকে বিয়ে করার জন্য এতোকিছু? ”
ফাবিয়াহর মুখ পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেল। সে এবারও জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। উষসী মেরুদণ্ড সোজা করে বসল। ফুঁস করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বলল,” অযথাই তোমার উপর সিমপ্যাথি কাজ করছিল আমার। ভেবেছিলাম তোমাকে স্যরি বলব। খারাপ লাগছিল খুব নিজের কাছে। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে তোমারই স্যরি বলা উচিৎ সবাইকে। তোমার জন্য অযথা টেনশন করছে সবাই। একবার নিজের মা-বাবার অবস্থা দেখেছো? তারা কত কষ্ট পাচ্ছে! তোমার মা করিডোরে এখনও বসে কান্নাকাটি করছেন।”
ফাবিয়াহ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,” উনি আমার মা না, ফুপু হয়।”
” যেই হোক, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন। নিজের ভালোবাসার মানুষদের এভাবে ঠকাতে বিবেকে বাঁধছে না?”
“তুমি আমাকে কিসের জন্য স্যরি বলতে এসেছো? এসবের সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই। তুমি চাইলেও ইয়ামিনের সাথে আমার বিয়ে হবে আর না চাইলেও হবে। কারণ এটা ফাইনাল।”
উষসী তাচ্ছিল্য হাসল। বেদনায় কাতর কণ্ঠে বলল,” তুমি এভাবে প্রেশার দিয়ে কাউকে বিয়ে করতে পারো না। এমন কিছুই হয়ে যায়নি যে কারণে তোমাদের বিয়ে করতেই হবে। এভাবে যদি তোমাদের বিয়ে হয়েও যায় তাহলেও ইয়ামিন কখনোই তোমাকে ভালোবাসবে না। কারণ সে আমাকে ভালোবাসে।”
ফাবিয়াহ মৃদু হেসে বলল,” সময়ই বলে দেবে সেই কথা। দেখা যাক কি হয়!”
” তুমি ভুল করছো ফাবিয়াহ। এভাবে টর্চার কোর না ওকে প্লিজ। ইয়ামিন এমনিতেও প্রচন্ড ডিস্টার্বড। ওর বাবা-মায়ের সাথে ওর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। তবুও ও তোমাকে কখনও বিয়ে করবে না কারণ ও আমাকে ভালোবাসে। হি ইজ অনলি মাইন।”
উষসী তার কথা শেষ করল একটা গৌরব মাখা হাসি দিয়ে। ফাবিয়াহ কিছু বলছে না। গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে। উষসী উঠে চলে যেতে নিচ্ছিল। তখনি হঠাৎ পেছন থেকে ফাবিয়াহর কাটা কাটা গলা শোনা গেল,” ভাগ্যের কথা বলা যায় না উষসী। এতো কনফিডেন্স থাকা ঠিক না। তোমার সাথে ইয়ামিনের উত্তাল প্রেম থাকা সত্ত্বেও মিডিয়ার সামনে সেটা প্রকাশ পায়নি। কিন্তু আমাদের অফিসিয়ালি দেখা হয়েছে মাত্র একবার। সেটাই হুট করে ভাইরাল হয়ে গেল কি চমৎকারভাবে! এটা লাক ছাড়া আর কি? ইয়ামিনের ক্যারিয়ারের সাথে আমার নামটা জুড়ে গেছে। আর আমাদের ফ্যামিলি তো আগে থেকেই ঘনিষ্ট ছিল। এবার শুধু ইয়ামিনের ‘হ্যাঁ’ বলাটা বাকি। সেটা ও খুব শীঘ্রই বলবে। তুমি কিচ্ছু চিন্তা কোর না।”
ফাবিয়াহর এতো আত্মবিশ্বাস দেখে উষসী বাকরুদ্ধ হলো। তারপর হঠাৎ করেই হেসে ফেলে বলল,” তোমার কথা একদিক দিয়ে ঠিকই। আসলেই তুমি খুব লাকি। আর আমি আনলাকি। নাহলে কি নিজের খোঁড়া গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়?”
” মানে?”
” তোমাদের ছবিগুলো আমি তুলেছিলাম।” উষসী অকপটে স্বীকারোক্তি প্রদান করল।
ফাবিয়াহ প্রচন্ড অবাক। উষসী দুঃখের সাথে বলতে লাগল,” খুব বড় বোকামি করেছি আমি। এটা আমার করা উচিৎ হয়নি। সেজন্য ভেবেছিলাম তোমাকে স্যরি বলব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার স্যরি’র কোনো দরকার নেই তোমার। বরং তোমারই উচিৎ আমাকে থ্যাঙ্কিউ বলা। কি সুন্দর নিজের হাতে তোমাদের বিয়ের পথটা সুগম করে দিলাম! তাই না?”
উষসীর কণ্ঠে একই সাথে উপহাস এবং আক্ষেপ। ফাবিয়াহ দরজার দিকে তাকাল। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল উষসীও। সাথে সাথে তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ইয়ামিন। তার চোখে-মুখে ঘোর বিস্ময়।
চলবে