উষসী হাসবে বলে পর্ব-৩১+৩২

0
260

#উষসী_হাসবে_বলে (৩১)
লিখা- Sidratul Muntaz

শীতের সময় রাত দশটা মানেই গভীর রাত। সড়ক নিস্তব্ধ হতে শুরু করে। উষসী বারান্দায় বসে আছে। তার হাতে মোবাইল ফোন। ইয়ামিনের নাম্বার এখনও বন্ধ দেখাচ্ছে। উষসী মেঘপূর্ণ আকাশে তাকিয়ে আছে উদাস দৃষ্টিতে। সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি বলে ক্ষুধায় পেট মোচড় দিচ্ছে।

আজ থেকে বাড়িতে রীতিমতো বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। যুঁথি বেগম সবকিছু জানার পর থেকে উষসীর সাথে একটাও কথা বলছেন না। তৃষাণ বলেছে তাকে না জানিয়ে উষসী যেন ঘর থেকে একদম বের না হয়। উষ্ণতা এই বিষয়ে এখনও কোনো কথা বলেনি। ফারজানা বানু একবার উষসীকে খাওয়ার জন্য ডেকেছিল। উষসী যায়নি।

ধীরে ধীরে রাত গভীর হচ্ছে। আজও উষসীর ঘুম হবে না। মনের মধ্যে অশান্তির পাহাড়। সে একটু শুয়ে থাকার চেষ্টা করল। তখনি দরজায় শব্দ হলো। উষসী বিরক্ত স্বরে বলল,” ফারজানা আপা, তোমাকে তো বললাম আমি খাবো না। যাও এখান থেকে। ”

ওই পাশ থেকে মোলায়েম কণ্ঠে জবাব এলো,” ফারজানা না, আমি। দরজা খোল।”

উষ্ণতার কণ্ঠ শুনে তড়াক করে উঠে বসল উষসী।তারপর দরজা খুলে দিল। উষ্ণতা খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। উষসী ব্যস্ত হয়ে বলল,” তোমার কষ্ট করে আসার কি প্রয়োজন ছিল? আমাকে ডাকলেই হতো।”

উষ্ণতা শীতল হেসে বলল,” সমস্যা নেই। রাতে না খেয়ে ঘুমাতে হয় না। আগে খাওয়া শেষ কর তারপর কথা হবে। ”

উষসী নিঃশব্দে খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু করল। উষ্ণতা আরাম করে সোফায় বসেছে। নিজের উঁচু পেটের উপর হাত রেখে তাকিয়ে আছে ছোটবোনের দিকে।

“বিয়ের সময় আমি একদম তোর বয়সী ছিলাম। ”

উষসী খাওয়া থামিয়ে তাকাল। উষ্ণতা আনমনা হয়ে বলতে লাগল,”তোর মনে আছে কিভাবে বিয়েটা হয়েছিল আমাদের? তোর ডোনা আন্টি না থাকলে বোধ হয় কিছুই সম্ভব হতো না। হয়তো আমি বেঁচেও থাকতাম না আজ।”

আবার সেই বিষাদময় স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। উষসীর চোখ ছাপিয়ে জল নামল। নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে। তার জন্য উষ্ণতা নতুন করে আবারও কষ্ট পাচ্ছে! উষসী প্লেট রেখে ছুটে গেল আপুর কাছে। তাকে জড়িয়ে ধরে কুণ্ঠিত গলায় বলল,” আই এম স্যরি আপু। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।”

উষ্ণতা মৃদু হাসল। উষসীর মাথায় আলতো করে বিলি কেটে বলল,” তোর নিশ্চয়ই মনে আছে,সামাজিক ব্যবধানের কারণে কখনও তৃষাণকে নিজের কাছে ঘেঁষতে দেইনি আমি। ও আমার জন্য কি কি না করেছে… অথচ আমি সবসময় নিজেকে ওর থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম৷ কখনও ভাবিইনি আমাদের মিলন সম্ভব! কিন্তু তৃষাণ কখনও হার মানেনি। তার লিমিটলেস এফোর্ডের কারণেই আজ আমরা একসাথে। ”

উষসী কাঁদছে৷ উষ্ণতা তাকে টেনে তুলে সিরিয়াস গলায় বলল,” ইয়ামিনকে কতটুকু ভালোবাসিস?”

” জানি না। কিভাবে ও আমার মনের সাথে এতোটা জুড়ে গেল.. আমি ভাবতেও পারিনি। আমি ওকে কখনও ভুলতে পারব না৷ এর চেয়ে ম’রে যাওয়া সহজ মনে হয়।”

উষ্ণতা আলতো হাতে বোনের চোখ মুছে দিয়ে বলল,” তোকে ভুলতে কেউ বলেনি। ভালোবাসা ভুলে যাওয়ার ব্যাপার নয়। কিন্তু তোকে ট্রং হতে হবে। অনিশ্চয়তার দিকে যখন পা বাড়িয়েই ফেলেছিস তখন পরিণতির জন্যেও প্রস্তুত থাকতে হবে৷ তুই কি নিশ্চিত যে ইয়ামিনও তোর জন্য একই ভাবে এফোর্ড দিবে?”

উষসী অবাক হয়ে তাকাল। উষ্ণতা মৃদু হেসে বলল,” যদি তুই ওর কাছে যেতে চাস তাহলে আমরা কেউ তোকে আটকাবো না। কিন্তু যার কাছে যাচ্ছিস সে তোর ত্যাগের মূল্য দিতে পারবে তো? দিনশেষে আমাদের সবাইকে ছেড়ে সেই একটা মানুষের সাথে তুই সুখী হতে পারবি তো?”

উষসী মাথা নেড়ে বলল,” আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না আপু। ”

উষ্ণতা অকপটে বলল,”তাহলে ইয়ামিনকে ভুলতে হবে। এখানে কেউ তোর ফিলিংস বুঝবে না। তৃষাণ এই সম্পর্ক কখনোই মানবে না।”

উষসী আহত, ব্যথিত স্বরে জানতে চাইল,” আর তুমি? তুমিও কি মানবে না?”

উষ্ণতা গভীর শ্বাস নিয়ে বলল,” সত্যি বলতে আমি কখনও চাইনি এমন কিছু হোক।”

“আমি এখন কি করব আপু?”

” সম্পর্ক শুরুর আগে কি আমাকে প্রশ্ন করেছিলি যে কি করবি?”

” তুমিও কি মায়ের মতো আমার উপর রেগে আছো?”

উষ্ণতা হাসল। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” তোর উপর আমার কোনো রাগ নেই। আমার ছোট্ট উষসী এখন বড় হয়েছে। আমি জানি সে ভালো-মন্দ বুঝবে। আর দিনশেষে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিবে। তুই চাইলেই সবকিছু ঠিক করা সম্ভব। ভালোবাসা মানেই সেই মানুষটিকে যে-কোনো মূল্যে পাওয়া নয়। ভালোবাসা মানুষকে স্বার্থপরতা শেখায় না। আর ভালোবাসার জন্য যারা স্বার্থপর হতে পারে, তারা কখনও সুখী হয় না। এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লভ এন্ড ওয়ার…. কথাটা খুবই ভুল। তোর সামনে দুইটি পথ খোলা উষু। কি করবি তুই ভেবে দ্যাখ। কিন্তু মনে রাখিস, দু’টো অপশনের মধ্যে যেটা বেশি কঠিন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটাই সঠিক।”

উষসীর চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ে। উষ্ণতা উঠে চলে যাচ্ছে। উষসী অপরাধী স্বরে বলল,” বিশ্বাস করো আমি যদি আগে সব জানতাম তাহলে এমন সম্পর্কে জড়াতাম না।”

” জানি আমি সব। মা আমাকে বলেছে সুইজারল্যান্ডের ঘটনা।”

উষসী মাথা নিচু করে বসে রইল। উষ্ণতা আর কিছু না বলে বের হয়ে গেল।

___________________
ভোরের সোনালী উত্তাপ চোখে লাগতেই ইয়ামিন জেগে উঠল। গরম স্যান্ডউইচ আর কফির গন্ধে মো মো করছে সারাঘর। টমেটোর একটা তীব্র সুস্বাদু গন্ধ আর মাংসের ঝাল ঝাল স্মেল। ছোটবেলায় মা যখন স্যান্ডউইচ বানাতো এমনই সুঘ্রাণ আসতো। কিন্তু এখন সে রিসোর্টে আছে। মায়ের সেই স্যান্ডউইচ এখানে আসার কথা না! চোখ কচলে উঠে বসল সে। ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই বিস্মিত হলো।

মিসেস শিমলা টেবিলে প্রাতরাশ পরিবেশন করছেন। ইয়ামিন অবাক হয়ে উচ্চারণ করল,”মা তুমি এখানে কখন এলে?”

শিমলা আঁড়চোখে তাকালেন ছেলের দিকে। রুক্ষ স্বরে বললেন,” গতকালকের কথা তোমার কিছু মনে নেই নাকি?”

ইয়ামিন একটু মনে করার চেষ্টা করল। উষসী এসেছিল এইটুকু মনে আছে। তার ওরনাটা এখনও বিছানায় পড়ে আছে। ইশ, মা দেখে ফেলেনি তো! কি ভাববে তাহলে? ইয়ামিন ইতস্তত করে বলল,” মনে আছে কিছু কিছু… তুমি কখন এসেছিলে মা?”

শিমলা সেই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আক্ষেপের একটা ছোট্ট নিশ্বাস নিয়ে বললেন,” খেতে বসো।”

ইয়ামিনের খুব অদ্ভুত লাগছে। মা যখন রেগে থাকেন তখনি কেবল তাকে ‘তুমি’ করে বলেন। কিন্তু এই মুহূর্তে মা কেন রেগে আছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে না। উল্টো রেগে থাকার কথা ইয়ামিনের নিজের। কারণ সে রাগ করে ঘর ছেড়েছে। ভেবেছিল মা আসবে তাকে মানিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে। তা না, নিজেই রাগ দেখাচ্ছে!

ইয়ামিন স্যান্ডউইচ খেতে খেতে উষসীকে মেসেজ করল,” গুড মর্ণিং।”

উষসী অনলাইনে নেই। দুইঘণ্টা আগেও একটিভ ছিল। ইয়ামিন ভাবল একবার ফোন করবে। কিন্তু করল না। সে মনে হয় ঘুমাচ্ছে। বিরক্ত করে লাভ নেই।

ইয়ামিন খাওয়া শেষ করে কফিটা নিয়ে উঠতে নিচ্ছিল তখন শিমলা সাথে সাথেই বললেন,” বসো তোমার সাথে কথা আছে।”

ইয়ামিন বাধ্যের মতো আবারও বসে পড়ল। মায়ের কণ্ঠে অতিরিক্ত ঝাঁজ টের পাচ্ছে আজ। কি হয়েছে? একটু রসিকতার উদ্দেশ্যে বলল,” কি ব্যাপার? এতো রেগে আছো কেন? ইহতেশাম সাহেব কি তোমাকেও বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন নাকি?”

শিমলা চোখ বড় করে বললেন,” ফালতু কথা না, আমি একটা সিরিয়াস ডিসকাশন করার জন্য এসেছি।”

ইয়ামিন ভ্রু কুঁচকে বলল,” জামাই-বউ মিলে আমার লাইফটাকে জোক বানিয়ে এখন সিরিয়াস ডিসকাশন করতে চাও? ভালো!”

শিমলা উত্তপ্ত মেজাজটা গিলে নিতে চাইলেন।এই মুহূর্তে তিনি ঠান্ডা মাথায় থাকতে চান। এতোবড় একটা অঘটনের পর আর কোনো রিস্ক নেওয়া উচিৎ হবে না। তিনি শান্ত গলায় বললেন,” গতকাল ফাবিয়াহ এসেছিল এখানে। মনে আছে নিশ্চয়ই।”

” ফাবিয়াহ কে যেন?”

ইয়ামিন বিভ্রান্ত। শিমলা সশব্দে টেবিলে আঘাত করে বললেন,” ফাজলামি হচ্ছে?”

মায়ের রাগ দেখে ইয়ামিনের তৎক্ষণাৎ মনে পড়ল। আসলে নামটা এতো কঠিন যে বার-বার সে ভুলে যায়। এইবার অবশ্য মনে পড়েছে। কিন্তু হাসপাতালের পেশেন্ট এখানে কেন আসবে? সে নাকি মানসিকভাবে ভীষণ অসুস্থ!”

” ও কেন এসেছিল?’

” তোমার সাথে দেখা করতে। তোমাকে বোঝাতে। যেন তুমি আমার সাথে বাড়ি ফিরে চলো আর এইসব পাগলামি বন্ধ করো।”

ইয়ামিন বিরস মুখে বলল,” সে নিজেই একটা পাগল। আমাকে সে কি বুঝাবে? সু’ইসাইড কিভাবে করতে হয় সেটা?”

” তুমি ওর মানসিক অবস্থা নিয়ে মশকরা করছো ইয়ামিন?”

” আর কি বলব মা? সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ও দুইবার সু’ইসাইড করতে চলে গেছে। এই যুগেও মেয়েরা এতো সেন্সিটিভ হয়? আনবিলিভেবল!”

শিমলা তীব্র রোষপূর্ণ গলায় বললেন,” ফাবিয়াহ একটা সহজ-সরল ভালো মেয়ে। তোমার মতো উচ্ছন্নে যাওয়া বিপথগামী ছেলে না ও।”

ইয়ামিন বিক্ষুব্ধ হলো। মা-ও এখন তাকে পেশা নিয়ে খোঁটা দিচ্ছে। বাবার বিষাক্ত কথা হজম করা যায়। কারণ তিনি সবসময় ওরকম। কিন্তু মায়ের কথা সহ্য হচ্ছে না। ইয়ামিন উঠে দাঁড়াল। চেয়ারে ঝোলানো জ্যাকেটটা উঠিয়ে বলল,” বের হচ্ছি আমি।”

” আমার কথা এখনও শেষ হয়নি ইয়ামিন!” শিমলা গর্জন করলেন।

ইয়ামিন নিতান্ত অনাগ্রহী কণ্ঠে আওড়াল,” ওকে। শেষ করো।”

” তুমি ফাবিয়াহকে বিয়ে করবে। এবং সেটা এই মাসের মধ্যেই।”

” যদি না করি?”

শিমলা সর্বোচ্চ নিষ্ঠুর কণ্ঠে বললেন,” তাহলে আর কখনও আমাকে মা বলে ডাকবি না।”

ইয়ামিন বিস্মিত হয়ে তাকাল। হতভম্ব ভাব কাটতেই বলে উঠল,” তুমি কি চাও মা? এইসব কেন করছো? ওই লোকটার সাথে থাকতে থাকতে তুমিও উনার মতো হয়ে যাচ্ছো আসলে। আমার তোমাদের কাউকে দরকার নেই।”

অভিমানে কথাগুলো বলেই ইয়ামিন চলে যেতে নিচ্ছিল। শিমলা কাছে এসে তার হাত চেপে ধরলেন। গম্ভীর গলায় বললেন,” ওই লোকটা তোর বাবা। আর আমরা দু’জনেই তোর ভালো চাই। এতোবড় একটা অন্যায় করেও তুই কিভাবে সব ভুলে যেতে পারিস?”

” কি করেছি আমি? এইখানে আমার কি দোষ ছিল? তুমি জানো ওই ছবিগুলোর জন্য ফাবিয়াহর চেয়েও আমার বেশি ক্ষ’তি হয়েছে! ওকে পৃথিবীর কয়জন মানুষ চেনে? আমাকে সবাই চেনে মা। আমার এতোদিনের ক্লিন ইমেজে দাগ লেগে গেছে।”

শিমলা কাছে এসে বললেন,” আমি ছবির কথা বলছি না ইয়ামিন। গতকাল যা হয়েছিল সেই বিষয়ে বলছি।”

” গতকাল কি এমন হয়েছিল?”

শিমলা ইয়ামিনের কলার ধরে তাকে ঘরে টেনে আনলেন। বিছানার দিকে ইশারা করে বললেন,” ফাবিয়াহর ওরনা তোর বিছানায় কি করছে? এক্সপ্লেইন করতে পারবি আমাকে?”

শিমলা অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। ইয়ামিন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। শিমলা আর কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। ইয়ামিন কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়েই রইল। মা ঠিক কি বোঝাতে চাইলেন? সে কাছে গিয়ে ওরনাটা হাতে নিল। তারপর কি একটা ভেবে ওরনার ছবি তুলে উষসীকে মেসেঞ্জারে পাঠাল।

” এটা কি তোমার?”

কিছুক্ষণ পরেই রিপ্লাই এলো,” না তো! কার ওরনা এটা?”

ইয়ামিনের মাথায় বজ্রপাত হলো। এর মানে সত্যিই এটা ফাবিয়াহর ওরনা? কিন্তু এটা তার বিছানায় কিভাবে এলো? কি আশ্চর্য! সারারাত সে এই ওরনা গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়েছে ভেবেই কেমন গা গুলিয়ে উঠল। বমি আসতে চাইছে।

চলবে

#উষসী_হাসবে_বলে (৩২)
লিখা- Sidratul Muntaz

উষসীকে বের হতে দেখে ডোনা প্রশ্ন করলেন,” কোথায় যাচ্ছিস এতো সকাল সকাল?”

” ভার্সিটি যাচ্ছি। এখন কি এই জন্যেও আমাকে অনুমতি নিতে হবে?”

যুঁথি সকালের নাস্তা করছিলেন। উষসীকে দেখেই অসন্তুষ্ট হয়ে উঠে চলে গেলেন। মেয়ের সাথে তিনি কথা বলছেন না আজ দুইদিন হয়ে গেছে। ডোনা বললেন,” তোর জন্য কতগুলো মানুষ সাফার করছে। একটুও কি রিগ্রেট হয় না তোর?অন্তত বড়বোনটার কথা চিন্তা কর। মেয়েটা এমনিতেও অসুস্থ। তার উপর তুই রীতিমতো মানসিক টর্চার করছিস তাকে।”

” আমি কি ভার্সিটিও যেতে পারব না?”

” সেটা কথা না। কিন্তু তোকে ও যতবার দেখছে ততবার মনে পড়ে যাচ্ছে যে তুই কি করেছিস। উষ্ণতার অবস্থা কিন্তু খুবই খারাপ। সে ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। ”

উষসী ডাঁট কণ্ঠে বলল,” আমার এই বাড়িতে থাকা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তোমাদের? তাহলে বলে দিতে পারো। বের হয়ে যাবো।”

” বের হয়ে কোথায় যাবি?”

” যেখানে খুশি যাবো। তোমার দেখার দরকার কি?”

যুঁথি অন্যঘর থেকে বের হয়ে এলেন৷ তারপর সপাট করে উষসীর গালে চড় মা’রলেন।লজ্জায় আর বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উষসী। যুঁথি তিক্ত গলায় বললেন,” আমার দূর্ভাগ্য যে তোর মতো মেয়েকে জন্ম দিয়েছিলাম।”

ডোনা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,” আপা, কি করলেন এটা? এতোবড় মেয়ের গায়ে হাত তুললেন?”

উষসী টলমল চোখে ক্ষণকাল তাকিয়ে থেকে গটগট করে বের হয়ে এলো। একবার মন চাইল সত্যি কোথাও চলে যাবে আজ। হারিয়ে যাবে এমন কোথাও যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না তাকে। আচ্ছা, ভালোবাসা কি অনেক বড় অপরাধ? প্রেম কি কেউ করে না পৃথিবীতে? অবশ্য সে যাকে ভালোবেসেছে সে তো নিষিদ্ধ পুরুষ। কিন্তু উষসীর অবাধ্য মন শুধু তাকেই চায়৷ কি আশ্চর্য!

গেইট দিয়ে বের হতেই দেখল সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক আগন্তুক। উষসীকে দেখে সে ডোর খুলে দিয়ে বলল,” উঠুন, ম্যাডাম।”

উষসীর রিকশায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। গাড়িতে উঠতে মন চাইছে না। সে অবজ্ঞার স্বরে বলল,” রিকশায় চলে যাবো আমি। আপনি যান।”

সে এগোতে নিলেই লোকটি তার সামনে এসে পথরোধ করে দাঁড়াল। আন্তরিক স্বরে বলল,” আমাকে স্যার পাঠিয়েছে ম্যাডাম৷ এখন থেকে আপনাকে ভার্সিটি আনা-নেওয়া করার দায়িত্ব আমার উপর। শুধু ভার্সিটি না… আপনি যেখানেই যাবেন সব জায়গায় আপনাকে আমিই নিয়ে যাবো।”

উষসী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কি যেন ভেবে একটু উপরে তাকাল। ওইতো তৃষাণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এবার টু-শব্দটিও করল না উষসী। চুপচাপ গাড়িতে বসল।

ভার্সিটির মেইন গেইটেই দেখা হয়ে গেল যুথি, প্রীতি আর শম্পার সাথে। উষসীকে নামতে দেখে শম্পা সামনে এগিয়ে যেতে লাগল। তাদের মনোমালিন্য এখনও ঠিক হয়নি। প্রীতি বলল,” আর কতদিন এভাবে রেগে থাকবি উষু? এই বুড়ো বয়সে এসে কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করা মানায় না। স্যরি বলে দে শম্পাকে।”

উষসী বিস্মিত হয়ে বলল,” কিসের কারণে স্যরি বলব? যেখানে আমার কোনো দোষই নেই!”

প্রীতি নিরাশ দৃষ্টিতে তাকাল। সামান্য একটা বিষয় নিয়ে শুধু শুধু তাদের সার্কেলটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। এটা সে মানতে পারছে না। যুথি বলল,” আরে, এই ছেলেটা কে তোর সাথে?”

উষসী পেছনে ফিরে দেখল ড্রাইভার গাড়ি পার্ক করে পেছনেই আসছে। উষসী উপহাসের কণ্ঠে বলল,” বডিগার্ড! ”

প্রীতি আর যুথি আশ্চর্য হয়ে তাকাল। প্রীতি বলল, “হঠাৎ বডিগার্ড কেন? কেউ কি তোকে ডিস্টার্ব করছে?”

উষসী আক্ষেপের স্বরে বলল,” সেরকম হলে তো ঝামেলাই ছিল না। আসল কথা হচ্ছে আমি প্রেম করছি। প্রেম আটকাতে পাহারাদার রাখা হয়েছে। সে আমার আশেপাশে এলেও গুলি করে দেওয়া হবে।”

যুথি মুখে হাত রেখে বলল,” ও মাই গড, তোর দুলাভাই যে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের গ্যাংস্টার সেই কথা তো আগে জানতাম না!”

প্রীতি শব্দ করে হেসে উঠল৷ পর মুহূর্তেই আবার চিন্তিত হয়ে বলল,” কিন্তু ছেলেটা কে? আমাদের ইউনিভার্সিটির কেউ নাকি? এই… প্রীতম নাকি আবার!

উষসী মৃদু হাসল,” প্রীতম হলে তো ভালোই ছিল।”

” তোর ফ্যামিলি তো এতোটাও কনজার্ভেটিভ না। তোকে কত স্বাধীনতা দেয়! তাহলে প্রেমের বিষয়ে এমন করছে কেন? এই যুগে তো এটা খুব নরমাল।”

উষসী দাঁড়িয়ে পড়ল হঠাৎ। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পড়ল তার দুই সখীও। উষসী দু’জনের দিকে একবার করে চেয়ে ব্যথায় কাতর কণ্ঠে বলল,” আমার জন্য এবনরমাল। কারণ যাকে আমি ভালোবাসি… সে আমার নিষিদ্ধ পুরুষ!”

” নিষিদ্ধ পুরুষ?” যুথি আর প্রীতি একসঙ্গে শব্দটা উচ্চারণ করল। উষসী কিছু না বলেই সামনে হাঁটছে। পেছনে প্রীতি- যুথি ঠোঁট উল্টে একে-অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে।

সহসা একটি মেয়ে এসে চিৎকার করতে লাগল৷ সবাই লালমাটি ভবনে যাচ্ছে। সিংগার ইয়ামিন ইব্রাহীম এসেছে সেখানে। পেছনে থেকে যুথি আর প্রীতি প্রকান্ড এক চিৎকার দিয়ে ছুটতে লাগল। উষসীকে ঠেলে-ঠুলে তারা সামনে চলে যাচ্ছে। এদিকে উষসী কানে হাত রেখে স্তব্ধ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।

একটা অপরিচিত ছেলে তার কাছে এসে বলল,” তোমার কি মনে হয়? কথাটা সত্যি? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না!”

উষসী কোনো কথা বলল না। পেছন থেকে আরেকটা মেয়ে বলল,” লালমাটি ভবনে গিয়ে দেখে এলেই তো হয়!”

উৎসুক জনতারা হৈহৈ করে যেতে লাগল লালমাটি ভবনের দিকে। তবে অনেকেই পাত্তা দিল না। বলা নেই, কওয়া নেই, ইয়ামিন ইব্রাহীমের মতো স্টার তাদের ভার্সিটিতে গান গাইতে চলে আসবে; এ নিতান্তই রসিকতা!

কিন্তু ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেল লালমাটি ভবনে পৌঁছানোর পর। সকলে তাঁক লেগে গেল। শিক্ষার্থীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে সেলফি নেওয়ার লোভে। একবার ছুঁয়ে দেখার আকাঙ্খায়। সে এক উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত! উষসী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়। কিন্তু ধাক্কাধাক্কির কারণে ঠিকঠাক দাঁড়াতেও পারছে না। মনে হচ্ছে সারাদেশের মানুষ ভীড় করেছে এই ছোট্ট জায়গায়।

ইয়ামিন খুশি মনে গান শুরু করেছে,” যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়, তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়…
যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায় তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়!”

উল্লাসে চিৎকার করছে সবাই। গানটি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল জনপ্রিয়। প্রায় সবার মুখেই কখনও না কখনও এই গান শোনা যায়। প্রিয় শিল্পীর কণ্ঠে প্রিয় গান শুনে আপ্লুত, আনন্দিত সবাই!

উষসীই দাঁড়িয়ে আছে মুখ ভার করে। তার যন্ত্রণার মতো লাগছে। তার সেই তথাকথিত বডিগার্ডও পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে উষসীকে।

গান শেষ হতেই করতালির শব্দে মুখরিত হলো চারিপাশ। অনম মাইকের কাছে এসে সবার উদ্দেশ্যে বলল,” আজ ইয়ামিন ইব্রাহীম আপনাদের সবার কাছে একটা আগ্রহমূলক বিষয় কনফেস করবেন। এখানে আসার উপলক্ষ্য জানতে নিশ্চয়ই উদগ্রীব হয়ে আছেন সবাই?”

সকলে উচ্চস্বরে সম্মতি প্রকাশ করল। অনম হাসি মুখে ইয়ামিনের দিকে চাইল। তারপর বলল,” ব্যাপারটি স্যার নিজেই আপনাদের জানাবেন।”

ইয়ামিন তার হাতের গিটার নামিয়ে রাখছে। তার মুখে মৃদু হাসি। বেরিকেডের মতো চারপাশ থেকে ঘিরে রাখা হয়েছে যাতে নির্দিষ্ট সীমার ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে না পারে। ক্যামেরা ম্যান ভিডিও করছে। কেউ কেউ ফেসবুক লাইভেও চলে গেছে।

অনম তাকে ব্যাগ এনে দিল। ইয়ামিন ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিল একটু। তারপর মাইকের কাছে এসে বলল,” শুভ সকাল। আমি ইয়ামিন ইব্রাহীম। সবাই কেমন আছেন?”

” ভালোওওও।” তীব্র উচ্ছ্বাস নিয়ে চেঁচালো সবাই।

ইয়ামিন বলতে লাগল,” আজকের সকালটা খুব সুন্দর তাই না?”

” হ্যাঁএএএ!”

একটি মেয়ে আগ বাড়িয়ে বলল,” আপনি এসেছেন তাই আজকের সকাল আরও বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছে।”

সবাই বলল,” রাইইইট।” তারপর আবার হাত-তালি বাজতে লাগল।

ইয়ামিন একটু হাসল। তারপর বলল,” এই সুন্দর সকালে সবাইকে একটা গল্প বলব আমি। গল্পটা আমার জীবনের সাথে রিলেটেড। আসলে রিলেটেড কেন বলছি… এটা আমার জীবনেরই গল্প!”

উষসী মগ্ন হয়ে ইয়ামিনের কথা শুনছে। তার পাশেই একটা মেয়ে বলল,” উফ, কি মারডালা ভয়েস! আমি শেষ! ”

উষসীর শরীর জ্বালা করছে মেয়েদের হা-হুতাশ শুনে। ইয়ামিন হঠাৎ সকাল সকাল সভা বসালো কেন তাও উষসীর ভার্সিটিতে এসে? আর কোনো জায়গা কি ছিল না? শুধু শুধু উষসীকে যন্ত্রণা দেওয়া!

” আমি আমার জীবনে শুধু দু’টো জিনিসকে ভীষণ প্রায়োরিটি দিয়েছি। প্রথমটা আমার গিটার আর দ্বিতীয়টা আমার রঙ তুলি। ছোটবেলায় বাবা আমাকে শখ করে জলরঙের একটা সেট কিনে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আমার অনুরাগ। স্কেচ খুব ভালো করতাম বলে বাবা বেশ গর্ব করতেন। কিন্তু কখনও এসব নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার পরামর্শ দেননি আমাকে৷ তিনি চাইতেন আমি যেন আমার প্যাশনকে শুধু প্যাশন হিসেবেই রাখি। পেশা না বানিয়ে ফেলি! আফটার অল, তিনি খুবই সেন্সিটিভ মাইন্ডের মানুষ। খুবই ডিসিপ্লিন্ড লাইফ তার।

বিপরীত আমার মা। ঠিক আমার বেস্টফ্রেন্ড। ছোটবেলায় মায়ের একটা হারমোনিয়াম ছিল। তার গান শেখার খুব শখ। আমি ওই হারমোনিয়াম বাজাতে পারতাম না বলে মা আমাকে ভায়োলিন কিনে দিয়েছিল। এভাবেই সুরের জগতে প্রবেশ। ”

ইয়ামিন একটু থামল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,”আই এম স্যরি…আমার মনে হয় আমি মূল পয়েন্ট থেকে সরে আসছি।

মূল কথাটা আমার আগে বলা উচিৎ। আজ এখানে এভাবে আসার উদ্দেশ্য হলো একজন চিত্ররূপসী। যার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় সিলেটের একটা কনসার্টে।”

উষসী স্থির হয়ে গেল। তার হৃৎযন্ত্র একটা বীট মিস করল যেন। ইয়ামিন কি তারই কথা বলছে?

” প্র‍থম দেখাতেই আমার মনে হয়েছিল সে আমার চিত্রের অপসরী। ধীরে ধীরে আমাদের নানান ঘটনায় আরও দুইবার দেখা হলো। সুইজারল্যান্ডে কাজিনের বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে জানতে পারলাম সে আমার আত্মীয়। কি ভ’য়ংকর কো-ইন্সিডেন্ট তাই না? এরই মাঝে আমি তার সুন্দর মুখ কল্পনা করে অজস্র স্কেচ এঁকে ফেলেছি। একটা স্কেচ তো এক্সিবিশনেও গিয়েছিল। ‘জলপরী’ নাম! আপনারা দেখে থাকবেন।”

সবাই বিস্ময়ের স্বরে বলল,”ওয়াওওও।”

উষসীর শরীর কাঁপছে। লজ্জায় কেমন ক্রমশ গুটিয়ে যাচ্ছে সে। ইয়ামিন বলতে লাগল,” সত্যি বলতে আমি তার দিওয়ানা হয়েছি মূলত তার হাসির জন্য। প্রথমে সে একদম হাসতো না। একটা স্মরণীয় ঘটনার পর থেকে সে খুব হাসতে লাগল। আর আমি তার প্রেমে পড়তে লাগলাম।”

উষসী এবার নিজের চেহারা দুই হাত দিয়ে ঢেকে ফেলল। আরেকটু হলেই সে জ্ঞান হারাবে নিশ্চিত! ইয়ামিন ঘোর মাখা কণ্ঠ নিয়ে বলছে,” তাকে যতবার দেখতাম, মনে হতো শত-সহস্র বছর ধরেই আমি যেন খুঁজে যাচ্ছিলাম এই মায়া! আমার সব বিষণ্ণতা ধুঁয়ে-মুছে নিঃশেষ হয়ে যেতো।”

” কে সে?” একজন চেঁচিয়ে প্রশ্ন করল। তার সাথে তাল মিলিয়ে বাকিরাও প্রশ্ন করতে লাগল। জনতার তুমুল গর্জনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে খোলা প্রাঙ্গণে। ইয়ামিন নরম স্বরে বলল,”আমার গার্লফ্রেন্ড… লামিয়া ইমরোজ উষসী। এই ভার্সিটিরই ছাত্রী।”

এইটুকু শুনেই তব্দা খেয়ে গেল সবাই। শোরগোলের আওয়াজে টিকে থাকা মুশকিল। করতালির শব্দ কানে তালা লাগাচ্ছে। পেছন থেকে ইতোমধ্যে সিটি বাজাতে শুরু করেছে অনেকে। উষসীকে যারা চিনতো তারাও এখন বিভ্রান্ত। সত্যিই কি তাদের উষসীর কথা বলা হচ্ছে নাকি অন্যকেউ?

ইয়ামিন প্রসন্ন গলায় বলল,” সুর আর রঙের চেয়েও এখন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি হলো আমার উষসী আর তার হাসি। সে হাসবে বলে আমি এমন হাজারও পাগলামি সারাজীবন করে যেতে পারি। তার খুশির জন্য আমি এক পৃথিবী সুখ তার মুঠোয় এনে দিতে পারি। উষসী, আমি তোমাকে ভালোবাসি। চলো বিয়ে করি এবার! অনেক তো হলো, এবার সারাজীবনের জন্য তোমার হাত ধরতে চাই আমি। সেই অধিকার কি আমাকে দিবে?”

হুলুস্থুল বেঁধে গেল চারদিকে। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালটা অচিরেই চমৎকার হয়ে উঠেছে। উষসী যেন বিশ্বাস করতে পারছে না এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা।

ইয়ামিনকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেই প্রথমে একটা হট্টগোল বেঁধে যায়। একে একে সবাই জড়ো হতে থাকে। আর এখন মোটামুটি ভার্সিটির প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী চলে এসেছে। সঙ্গীতবিমুখী জনতারাও এসেছে অন্তত একবার ইয়ামিন ইব্রাহীমকে কাছ থেকে দেখবে বলে। এতো মানুষ- এর ভীড়ে ইয়ামিন তার প্রিয় মুখটি খুঁজেই পাচ্ছে না। যার জন্য এতো আয়োজন সে কেন এখনও সাড়া দিচ্ছে না?

চলবে